সৈয়দা আমাতুল ফাতেমা রোজ এবং খোকন মিলে অসাধারণ এক মন্ময় জুটিকে আমি চিনি এদেশে এসে।
তা প্রায় বছর তিনেক আগে থেকে।ডাউন টাউন থেকে দেড় ঘণ্টা ড্রাইভিং শেষে বন-অরণ্যে ঘেরা নিউমার্কেটে তাদের বসবাস।
২০১৯ সালে মৌ মধুবন্তীর বাসার নিমন্ত্রণেই ওদের সঙ্গে প্রথম দেখা। তারপর… মিউজিক পার্কের সবুজ আলোতে হাঁটাহাঁটি,গল্পে আরো কিছুটা সময় দেখেছি আমি প্রাণে-তরঙ্গ-তোলা এই রোজমনিকে। জীবনের নানা মাত্রিক প্রতিরোধ, সংকট ও সংক্ষোভ অতিক্রম করে অপরাজেয় জীবনকে কিভাবে তিমির বিনাশী সংরাগে সমুজ্জ্বল করে কাটাতে হয়—ভালোবাসায় উৎযাপন করতে হয় প্রতিটি অমূল্য মুহূর্তকে …সেই মন্ত্রটি ওদের দু’জনেরই বেশ
ভালোভাবে জানা। জীবনবাদী এই দম্পতিকে আমার ভীষণ পছন্দ।
এমন মানুষদেরকে কেউ ভালো না বেসে কি পারবে?
একমাত্র ভালোবাসাই টেনে নিতে পারে দুর্গম পথের ঠি কানায়। অন্য কিছু নয়।আত্মঘাতী ওমিক্রোনের ভীতি উজিয়ে তাই তো সকলেই চলে গেছিলাম ওদের ভালোবাসার নীড়ে।
ওদের অসাধারণ দু’জন সন্তান ইত্তেলা আলী, রাফিউল আলী অর্ণব—-ওদের সঙ্গে পরিচিত হলাম আজই প্রথম। ওদের মা রোজের মুখে গল্প শুনেছি এতদিন।
ইত্তেলার স্বামী মিঠুন রেজাকে দেখে মনে হলো—এই তরুণের বুকের মধ্যে সারাক্ষণ যেন বাংলাদেশই কথা বলে।
লাল সবুজের পতাকা হাতে চলা-ফেরা করে প্রবাসের এই পথে ও প্রান্তরে।
শিল্পী শান্তার হৃদয় উজার করা রবীন্দ্র সঙ্গীতের সুরে সুরে চমৎকার সঙ্গত দিয়েছে মিঠুন। রোজের বহুমুখী প্রতিভাধর কন্যা ইত্তেলা ও মিঠুন জুটির দ্বৈত নৃত্য দেখেও বিমোহিত ও মুগ্ধ হলাম।
রোজের প্রিয়দর্শিনী পুত্রবধূ সারাহ আহমেদ এবং পুত্র অর্ণবের অতিথি আপ্যায়ণ মনে রাখবার মতো।এই পরিবারের সকল সদস্য মিলেই আসাধারণ এক দীপ্তিময় আনন্দ সম্মিলন উপহার দিলো এই শীতের দেশের মননশীল ও মেধাবী আয়োজনের উষ্ণতা ছড়িয়ে।
প্রায় দুই বছর পরে এদেশে বসবাসকারী অনেক বাঙালি পরিবারের সঙ্গে দেখা হলো। ২০০৮ সালে রফিক আজাদ আর আমি দেখতে এসেছিলাম পুত্র অভিন্নকে,তখন সে ইয়র্কের স্যুলিখ বিজনেস স্কুলে তৃতীয় বর্ষের ছাত্র।
সে সময়ে কবি ফেরদৌস নাহার মিশুক মুনিরের বাসায় একটা দারুণ আড্ডার ব্যবস্থা করেছিলো।
মিশুক নিজহাতে সেদিন তার রফিক ভাইয়ের জন্যে অনন্য স্বাদের ইলিশ মাছ রান্না করেছিলো গোলআলু দিয়ে।মঞ্জিলার হাতের ঘনডালে শিশির জল মিলে মিশে একাকার হয়েছিলো।
কবি ফেরদৌস নাহার,লেখক জসীম মল্লিক, রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী কাঁকলি,রোজিনা করিম কনকসহ অনেকেই ছিলো সেই আড্ডায়।এতকাল পরে আবার কনক ও টোরির সঙ্গে দেখা হলো। কনকই মনে করিয়ে দিলো সেই আড্ডা প্রসঙ্গ।
মেয়েটি আগের মতোই প্রাণবন্ত রয়েছে।এছাড়া আরো দেখা হলো শারিয়া আইন বিশেষজ্ঞ, লেখক ও বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হাসান মাহমুদের সঙ্গে। টরন্টোর গত বইমেলার পরে হাসান মাহমুদের সঙ্গে দেখা হলো আজ।
সাংবাদিক ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব সুমন রহমান আর অধ্যাপক বন্যা রহমান জুটি নিপাট সজ্জন তারা। কবি ইকবাল হাসানের বাসায় তাদের সঙ্গে প্রথম পরিচয়।সাংবাদিক সুমন রহমান কবি রফিক আজাদের সঙ্গে বেশ ঘণিষ্ঠ যোগাযোগ রেখেছিলেন বাংলাদেশ ছাড়ার আগ পর্যন্ত।
ওদের সঙ্গে দেখা হলেই সেইসব গল্পে গল্পে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ি। আপনজন হিসেবেই আড্ডা শেষে তারা আমাকে কন্ডোতে পৌঁছে দিয়েছে বেশ ক’বার।
কোন ফাঁকে যে ওরা দুজনেই আমাকে কৃতজ্ঞতা পাশে আবদ্ধ করে ফেলেছে, বুঝতেই পারিনি।
এই দম্পতিও নিরিবিলি অঞ্চল নামে খ্যাত এই নিউমার্কেটের বন-অরণ্যে রোজের নিকট প্রতিবেশী।এছাড়া লেখক ও নাট্যকার আকতার হোসেন, লেখক ও সংগঠক তাসরিনা শিখা, কবি মৌ মধুবন্তী, কণ্ঠশিল্পী ফারহানা শান্তা, শাহানা চৌধুরী, লেখক তসলিমা হাসান, আবৃত্তি শিল্পী হিমাদ্রী রয়সহ আরো অনেকের সান্নিধ্যে অসাধারণ কিছু অনাবিল সময় কাটলো এই বিজয়ের মাসে।।
আবৃত্তি শিল্পী হিমাদ্রি রয়কে অন্তর্ময় ধন্যবাদ জানাই এজন্যে যে, অফিসের পরে সকল কাজের ক্লান্তি ভুলে সে আমাদের রথের সারথি হয়েছিলো শ্রীকৃষ্ণের মতোই।
কবি ইকবাল হাসান, তাসলিমা হাসান, দেলোয়ার এলাহী এবং পরিশেষে আমাকেও তুলে নিয়ে দেড় ঘণ্টার ড্রাইভিং শেষে অক্ষত অবস্থায় পৌঁছে দিয়েছে মনোরম সেই আড্ডা-ক্ষেত্রে।প্রবেশ পথেই শান্তার কণ্ঠ নিঃসৃত হয়ে ভেসে আসছিলো রবীন্দ্র সঙ্গীতের বেসামাল সুর ও বাণী।
আপ্লুত হতে হতে প্রবেশ করি মহানঅতিথি নীড়ে।
এই আয়োজনে সকলের আগ্রহের সূত্রটিকে নিজের অজান্তেই যেন ধরে বসে ছিলেন আলোকিত কবি আসাদ চৌধুরী।
যার উপস্থিতিতে এই প্রবাস ভূমিটুকু হয়ে ওঠে আপনবলয়।
খাবার-দাবার শেষে সাহানা চৌধুরীর শুভ জন্মদিনের কেক কেটে বাড়ি ফিরতে বেজে গেলো ১:২০ মিনিট।
ততক্ষণে অপেক্ষা শেষে আমার পুত্র অভিন্ন ঘুমের অতলে।বহুদিন পরে এ রকম দীর্ঘক্ষণ আড্ডা শেষে ঘরে ফেরার
সারাটি পথে রফিক আজাদও সঙ্গী হলেন আমাদের।
ইকবাল হাসান এবং দেলওয়ার এলাহীর স্মৃতিচারণ প্রসঙ্গে।
পরিশেষে ধন্যবাদ জানাই আলী আসগর খোকন এবং সৈয়দা আমাতুল ফাতেমা রোজের পরিবারকে।
বাংলাদেশের সঙ্গীত জগতের ধারায় বাংলা গানে নতুন এক মাত্রা যোগ করেছিলো বৃহত্তর ঢাকার বিক্রমপুরের মননশীল ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অনন্য এই আলী পরিবার।
এই ধারায় অবদান রেখেছে খোকনের পূর্বসূরী ওস্তাদ শের আলী মিয়া,ধীর আলী মিয়া,মনসুর আলী এবং আলাউদ্দিন আলী।
এই পরিবারের এক মেধাবী সন্তান আলী আসগর খোকন—তাকে এবং তার মর্মসহচরী সৈয়দা আমাতুল রোজকে জানাই অন্তর্ময় ধন্যবাদ।
৭/১২/২১
নিউমার্কেট, টরন্টো
Leave a Reply