সঙ সেজে সামনে দাঁড়িয়ে না থেকে সরে যাও।
আমার কথা শুনে মেয়টা মন খারাপ করে চলে গেছে।
এই মেয়ে সকাল সকাল আমার মেজাজটা খারাপ দিয়েছে।
কতবার বলেছি আমার সামনে না আসতে যদি একটু লজ্জা থাকতো।
সব সময় আমার পিছনে ঘুরঘুর না করলে এই মেয়ের পেটের ভাত হজম হয় না মনে হয়।
অফিসে যেতে রেডি হচ্ছি সেখানেও এই মেয়ের জন্য শান্তি নেয়।
সবেই আমার কপাল না হলে এই আপদ আমার জীবন জুটবে কেন?
যে আমি কখনো স্বপ্নেও কল্পনা করিনি এমন একটি মেয়ে আমার বৌ হয়ে আসতে পারে!
ছোট এই জীবনে আমার স্বপ্নতো বেশি ছিল না তাহলে আমার সাথে এমন হলো কেন?
জীবন সঙ্গী থেকেও কেন আমার জীবনটা শূন্যতায় ঘেরা?
কোথায় গেলে পূর্ণতা পাবো।
নিজের কাছে বারবার এই পর্যন্ত প্রশ্ন করেও এর সঠিক উত্তর পায়নি।
আমার তো স্বপ্ন বা ইচ্ছে ছিলো, সারাদিন অফিসে থেকে খেটেখুটে বাসায় এসে বৌয়ের মুখে অভিমানী কন্ঠে, এই তোমার আসার সময় হলো কথাটা শুনে অভিমানীর অভিমান ভাঙতে তাকে জাপটে ধরবো নিমেষেয় আমার সকল ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে।
কখনো বা ছুটির দিনে বৌয়ের সাথে দুষ্টুমি ও খুনসুটিতে মেতে উঠবো।
যার কথার ঝংকারে আমার হৃদয়ে কাঁপন ধরে যাবে।
চেয়েছি কি আর পেয়েছি এমন একজনকে যার মুখ থেকে আজ অবধি একটা শব্দ শুনতে পায়নি।
বৌয়ের সাথে কথা বলার ইচ্ছে যে আমার সারাজীবন অপূর্ণ রয়ে গেল।
সহধর্মিণীকে নিয়ে আমার ইচ্ছে স্বপ্নগুলো কখনো হয়তো পূর্ণতা পাবে না।
এমন জীবন সঙ্গীর থেকে একা থাকায় তো বেশ ভালো ছিলো।
ইস্ আমি এতোক্ষণ ধরে একা বক বক করে যাচ্ছি কিন্তু আমার পরিচয় তো এখনো আপনাদের দেওয়া হয়নি।
আমার নাম শাহেদ হাসান।
সবাই আমাকে সাহেদ বলেন।
মাস্টার্স শেষ করে ছয় মাস হল একটি প্রাইভেট ফার্মে জয়েন করেছি।
বেতন বেশি নাহলেও একটু কষ্ট করে আলহামদুলিল্লাহ ভালোয় চলে যায়।
বাবার নামঃ রশিদ মিয়া (মৃত)।
আমার বাবা আমরা ছোট থাকতেই মারা গেছেন ।
মায়ের নামঃশায়লা বানু।
আমরা দুই ভাই এক বোন ।
মা ছোট ভাইকে নিয়ে আমাদের দেশের বাড়িতে থাকেন।
ছোট ভাইয়ে নাম সবুজ।
ও এবার মেট্রিক পরীক্ষা দিয়েছে।
আর আমার ছোট বোনের নাম আলতা বানু।
ওর বিয়ে হয়ে গেছে।
ইন্টার পাশের পর মা আর দেরি করেননি ওকে বিয়ে দিতে।
আমার বোনের বিয়ে হয়েছে পাঁচ মাস হল।
বোন আমার বড় ঘরে স্বামী সংসার নিয়ে সুখেয় আছে।
ওরা সবাই গ্রামেই থাকে আর
আমি জীবিকার তাগিদে শহরে থাকি।
অবশ্য মা আর ছোট ভাইকে বাড়িতে থেকে শহরে আনতে চেয়েছিলাম কিন্তু মা বলছেন গ্রামে পড়াশোনায় খরচাপাতি কম তাই ওখানেই সবুজ কলেজ পাশ করুক।
এরপর না হয় দরকার হলে আমার ছোট ভাইকে নিয়ে শহরে এসে পরবেন।
আর আমাকে যেন একা থাকতে না হয় সেজন্য বৌ নামের এক বিশাল ঝামেলা আমার সাথে পাঠিয়েছেন।
ও আপনাদের ঝামেলার নামটা বলতেই তো ভুলে গেছি।
আপদটার নাম হচ্ছে রুপালী।
আপদ বলছি কেন তা একটু পরেই বুঝতে পারবেন।
এরমধ্যে টুং টাং শব্দ শুনি।
হঠাৎ চুড়ির টুং টাং শব্দ পেয়ে পিছনে ঘুরে দেখি আপদটার নাম নিতে না নিতে এসে হাজির।
অসহ্য একটা মেয়ে ওকে দেখলেই বিরক্তিকর মনে হয়।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও ওর দিকে তাকালাম।
তখন দেখি হাতে একটা কাগজের টুকরো নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
এখানে এসে এভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছো কেন?
আমাকে বিরক্ত না করলে তোমার চলছে না?
আমার কথা শুনে
রুপালী তার হাতে থাকা
কাগজের টুকরোটা আমাকে দেয়।
কাগজের ভাঁজ খুলে দেখি তাতে লেখা বাজার লাগবে আজকে রান্নার জন্য ফ্রিজে তেমন কিছুই নেয়।
আর দুপুরে জন্য রান্না করার চালও শেষ হয়ে গেছে ।
লেখা দেখে আমার মাথা গরম হয়ে গেলো।
রুপালীকে ধমকে বললাম , এই ফাজিল মেয়ে বাজার শেষ আগে বলোনি কেন?
আর আজকে রান্নার চাল যে শেষ সে কথা গতকাল বলা যেত না?
তুমি আসলেই একটা ঝামেলা ছাড়া আর কিছুই না।
সারাদিন বাসায় বসে থেকে কি আর করো যে সামান্য বাজারের কথা মনে থাকে না?
আমার কথা শুনে সে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
ওকে এভাবে দাঁড়ানো দেখেও আমার রাগের পরিমাণ একটুও কমেনি বরং আমি চিৎকার করে বললাম,এই মেয়ে তুমিই বল তো?
এখন আমি অফিসে যাব নাকি তোমাকে বাজার করে দিব?
আমার চিৎকার ও ধমকে বেশ ভয় পেয়েছে ।
তা ওকে দেখেয় মনে হচ্ছে।
ও ভয় পাচ্ছে তাতে আমার কী?
এই মেয়েটার জন্য আমার জীবনের সব রঙ ফিঁকে হয়ে গেছে।
আমি রাগে কাঁপছি,
রুপালী তা দেখে আমাকে হাত দিয়ে ইশারায় পানি লাগবে কিনা?
আর ইশারায় বলতে চেষ্টা করছে, বাজারের কথা গতকাল বলতে ভুলে গেছে তা বুঝাতে।
ধমক দিয়ে বলতে লাগলাম যেমন ভুলে গেছে তেমন দুপুরে আজ না খেয়ে থাকবে তাহলেই ঠিক হবে।
আমার এখন সময় নেয় বাজারে যেতে পারব না।
আমি অফিস থেকে আসার সময় বাজার করে নিয়ে আসব।
ততোক্ষণ না খেয়ে থাকলে এরপর আর ভুল হবে না।কথাটি বলে আমি অফিসে চলে এলাম।
থাক একদিন না খেয়ে তখন বুঝতে পারবে ।
এছাড়া এতো ভুলে গেলে সংসার চলবে কী করে।
অফিসে বসে কাজ করছি তখন মায়ের ফোন এলো ছোট ভাই কলেজে ভর্তি হবে তাই দুই একদিনের মধ্যে টাকা পাঠাতে বলছেন।
মায়ের কথায় বুঝতে পারলাম মা ভাইয়ের জন্য টাকা চেয়েছে ঠিক তবে আমি এই টাকা পাঠাতে গিয়ে এখানে কোন সমস্যায় পরবো কিনা তা ভেবে মায়ের কষ্ট হচ্ছে।
মা তো তাই সন্তানের কষ্ট টের পেয়ে যায়।
আমি ফোন কেটে দেবার আগ মুহূর্তে মা বললেন,
বড় খোকা আমি না হয় এখানে কারো কাছে থেকে টাকা ধার নেয়?
তখন আমি মা`কে বললাম,কারো কাছে থেকে টাকা ধার নেয়ার দরকার নেই।
এরপর মায়ের কথা শেষ করে ফোন রেখে দিয়েছি।
তারপর পকেটে থেকে মানিব্যাগ বের করলাম।
গুনে দেখিতো মানিব্যাগে কতো টাকা আছে ।
এমনিতেই মাসের শেষের দিকে হাতে বেশি টাকা থাকে না।
বেতন পেতে আরও ছয় সাত দিন বাকি আর পকেটে আছে মাত্র ছয় হাজার টাকা এর থেকে ভাইয়ের জন্য তিন হাজার পাঠিয়ে দিলে আর তিন হাজার টাকা থাকবে ।
এ টাকা দিয়ে চলতে হয়তো আমাকে এ কয়দিন একটু কষ্ট করতে হবে।
হেঁটে অফিসে আসতে হবে আজকাল রিকসা ওয়ালা মামারা যে ভাড়া চায় ।
তা আমাদের মতো সাধারণ মানুষের জন্য কষ্ট সাধ্য হয়ে যায়।
তবে তারাও কি করবে!
আজকাল মাছ মাংস থেকে তরি তরকারির বাজার যে চড়া ।
মধ্যম আয়ের মানুষের ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
নিম্ন আয়ের মানুষের তো আরও কষ্ট।
থাক কি আর করা কিছুদিন না হয় বাসা থেকে তাড়াতাড়ি অফিসের জন্য বের হবো।
তাহলে তো এ কয়দিন আর অফিসে আসতে রিক্সা দরকার হবে না হেঁটেই পৌঁছাতে পারব।
হিসাব করে দেখলাম ২৫ কেজি চালের বস্তা কিনতে গেলেও এক হাজারের বেশি টাকা খরচ হয়ে যাবে।
আর যে টাকা বাকি থাকবে তা দিয়ে তো এতো কিছু কেনা সম্ভব নয়।
আমাদের মধ্যবিত্তদের সব সময় হিসেবে করে চলতে হয়।
একটু হিসেবে গরমিল হলেয় বিপদে পড়তে হয়।
এসব চিন্তায় মাথা জেঁকে বসেছে।
নাহ্ এতো চিন্তা করে লাভ তো কিছুই হয় না উল্টো শরীর খারাপ করবে।
তখন ডাক্তারের কাছে যেতে টাকা কোথায় পাবো?
তার থেকে সব চিন্তা ঝেড়ে ফেলে দিলাম।
ভাবছি বাজার সদাই এখন সব কিনবো না।
আড়াই হাজার টাকার মধ্যেই সাত আঠ দিনের বাজার করা লাগবে ।
এ টাকায় যা পাব তাই নিতে হবে।
পরে বেতন পেলে না হয় মাসের বাজার একবারে করে ফেলবো।
অবশ্য এ কথা তো প্রতিমাসে চিন্তা করি কিন্তু টাকার সমস্যার কারণে মাসের বাজার একবারে করতে পারি না।
বারবার বলছি চিন্তা করে লাভ হবে না তবুও আমাদের মধ্যবিত্তের চিন্তা থেকে রেহাই নেই।
সব চিন্তা ভাবনা একদিকে রেখে অফিসের কাজে মনোযোগ দিতে চেষ্টা করলাম।
কিন্তু বেশিক্ষণ কাজে মনোযোগ দিতে পারলাম না।
মুখে যতো আপদ, ঝামেলা বলি না কেন?
কিন্তু বারবার মনে পড়ছে বেচারিকে আজ ক্ষুধায় কষ্ট করতে হবে।
তাছাড়া কষ্ট হলেও তো বলতে পারবে না কারণ ও তো বোবা।
তবে হ্যাঁ ও জন্ম থেকে বোবা নয় ওর বাবার কাছে বিয়ের পর শুনেছি ক্লাস সিক্সে থাকতে কি যেন একটা অসুখ হয়েছিল তারপর থেকে ও নাকি আর কথা বলতে পারে না ।
তবে শুনতে পারে । লিখতে ও পারে।
আচ্ছা আজকাল ওর কথা এতো ভাবতেছি কেন?
ওকে তো আমি ভালোবাসি না তবুও ওর কষ্ট হবে ভেবে আমার কষ্ট হচ্ছে কেন?
নাহ্ আর থাকতে পারছি না তাই আমার সহকর্মী রাব্বি ভাইয়ের কাছে থেকে ছুটি নিয়ে বাজারে গেলাম ।
রাব্বি ভাই আমাদের অফিসে আমার সিনিয়র।
বাজার থেকে সবকিছু কিনা কাটা করে বাসায় এসেছি।
বাসায় এসে বেল দিতে যাব এমন সময় দেখি দরজা খোলা!
এটা দেখে মেজাজটাই বিগড়ে গেছে।
দরজা খুলে রাখলে কখন কি বিপদ হবে তার খেয়াল আছে এই মেয়ের।
আজকে তো ওকে এর জন্য একটা শিক্ষা না দিলে হবে না।
কিন্তু আমি বাসায় না থাকা কালীন তো রুপালী কখনও দরজা খুলে রাখে না তাহলে আজ কি হল?
ওর কোন বিপদ হলো না তো?
এসব ভেবে তাড়াহুড়ো করে বাসার ভিতরে ঢুকে অবাক হয়ে গেলাম!
দরজার সামনেই বাজারে ব্যাগ রেখে রেখে চিন্তা করতে লাগলাম আমি ভুল দেখছি না তো?
হঠাৎ করে তিনি এই সময় এলো কি কারণে?
ড্রইং রুমে তিনি মানে আমার শ্বশুড় মশাই বসে আছেন।
শ্বশুড় মশাই এসেছেন কখন আমাকে তো ফোন করে বলেনি যে তিনি আজকে ঢাকায় আসবেন?
আর তার সামনে তো দেখছি বড় ঝুড়িতে বাজার রাখা।
অনেক রকম সবজি, কয়েক পদের মাছ,দুইতিন পদের ফল সাথে দেশি মুরগিও আছে।
আর তাকে দেখে মনে হচ্ছে তিনি এইমাত্র আসছে ।
রুপালী পানির গ্লাস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তার বাবার সামনে।
শ্বশুড়ের আনা এই সব বাজার সদাই দেখে রাগ উঠে যাচ্ছিল।
অনেক কষ্টে নিজের রাগকে সংযত করলাম যেহেতু রুপালীর বাবা সামনে বসে আছে।
নিশ্চই এই মেয়ে তার বাবাকে ম্যাসেজ করে দিয়েছে বাজার আনতে নাহলে হঠাৎ করে তিনি এ গুলো নিয়ে দেশে থেকে হাজির হবেন কেন?
তার বাবার মত আমার এতো টাকা পয়সা না থাকতে পারে ।
আমি গরীব হতে পারি তাই বলে কী ওকে কখনও খাবারে কষ্ট দিয়েছি?
যে তার বাবাকে দিয়ে দেশে থেকে বাজার আনাতে হবে।
এই মেয়ের তার বাবার কাছে আমাকে এভাবে ছোট করতে একটুও বিবেকে বাঁধলো না?
আজকে ওর একদিন কি আমার একদিন
আমি যখন এই সব ভাবছি ,
এরমধ্যে শ্বশুড় আমাকে দেখে বললেন,আরে শাহেদ যে তা বাবা তুমি এতো তাড়াতাড়ি বাসায় এসে পরেছো?
তার কথা শুনে আমি আসসালামু আলাইকুম বাবা।
জী , আজকে অফিসে কাজ ছিল না ।
তিনি আমার সালাম নিলেন ।
সে সময়ে তখন রুপালী শ্বশুড়ের কাছে পানির গ্লাস দিয়ে সামনের দিকে তাকালো।
দরজার কাছে বাজারের ব্যাগ পরে আছে তা হয়তো খেয়াল করেছে তাই সেখানে থেকে ব্যাগ নিয়ে রান্না ঘরে রেখে আমার জন্য লেবু পানি নিয়ে এলো।
আমি রুপালীর কাছে জিজ্ঞেস করলাম বাবাকে কিছু খেতে দিয়েছে কিনা?
শ্বশুড় আমার কথা শুনে সাথে সাথে বলে উঠলেন, আমি মাত্র এসেছি আগে একটু বিশ্রাম নিবো।
খাওয়া দাওয়া পরে হবে বাবা।
মনের রাগ মনে রেখে শ্বশুড়কে ফ্রেস হয়ে বিশ্রাম নিতে বলে রুপালীর সাথে কজে হাত লাগাচ্ছি ।
মুরব্বি মানুষ কতক্ষণ না খেয়ে থাকবে তাই আমি রুপালীকে রান্না করতে সহযোগিতা করলাম।
এ বাসায় দুইটা বেড রুম দুইটা বাথরুম, ছোট কিচেন ও ড্রইং ডাইনিং নিয়ে ছোট একটি ফ্লাটে থাকি আমরা।
এটা ভাড়া দিতে হয়না আমাদের অফিসে থেকে আমাদের থাকতে দিয়েছেন।
মানে আমার চাকরি যতদিন আছে এই ফ্লাটে ও ততদিন থাকতে পারবো।
তবে এটা আমাদের অফিসে থেকে থাকতে না দিলে কি করতাম আল্লাহ জানে?
কারণ এই ফ্লাটের ভাড়া মিনিমাম ১৫ হাজারের উপরে।
কা হাবিজাবি ভাবছি এর থেকে কাজে নজর দেয় রাত হয়ে যাচ্ছে।
রাতে খাবার পর আমি শুশুড়ের সাথে কথা বলে রুমে এসে দেখি রুপালী আমার পকেটে হাত দিচ্ছে এমনিতেই সকাল থেকেই ওর ওপরে রেগে ছিলাম পকেটে হাত দিতে দেখে আর সহ্য করতে পারলাম না ।
সাথে সাথে চাটাস করে দুই গালে পরপর দুটো চড় লাগিয়ে দিলাম।
দেখে মনে হলো-ফর্সা গালে আমার আঙ্গুলের ছাপ পড়ে গেছে ।
ওর গালে আমার আঙ্গুলের ছাপ দেখেও আমার রাগ বিন্দুমাত্র কমলো না ।
ওকে হাত মুচড়ে ধরে বললাম, একবেলা না খেলে তুই কি মরে যেতি ?
আমার অফিস থেকে বাসায় আসার এতো টুকু দেরি সহ্য হলো না তোর।
তা জমিদারের বেটি ক্ষুধা সহ্য করতে পারিস না তো আমার মতো গরীবের ঘরে এসেছিস কেন?
তোর বাবাকে দিয়ে দেশে থেকে বাজার এনে আমাকে ছোট করতে ভালো লাগে ?
তুই কোন সাহসে আমার পকেটে হাত দিয়েছিস?
এতো দিন তো প্রতিবন্ধী ছিল তার সাথে চোর হলি কবে থেকে?
আমার কথা শুনে রুপালী সবসময় যা করে এখনও তাই করল মানে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
আমার শ্বশুড় পাশের রুমে থাকায় আমি নিচু স্বরে ওকে বকা দিচ্ছিলাম ।
এজন্য এখানে কি হচ্ছে শুশুড় পাশের রুমে থেকেও এসব কিছুই বুঝতে পারেনি।
সারারাত রুপালী কেঁপে কেঁপে উঠছিল মনে হলো কান্না করছে।
একবার মনে হল ওকে কান্না করতে বারণ করি কিন্তু ওকে আমার পকেটে হাত দিতে দেখে ওর সাথে কথা বলার রুচি চলে গেছে।
পরেরদিন সকালে রুপালীর বাবা গ্রামে চলে গেলেন।
তাকে থাকতে বলেছিলাম কিন্তু তিনি থাকেননি।
তিনি বের হওয়ার পর আমিও চলে এলাম অফিসে।
অফিসে এসে মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে পারছি না ।
কেন যেন মনটা আনচান করছে।
কিছুক্ষণ পরপর কাজে থেকে মনটা সরে কালকে রাতের বিষয় গুলো আমার মাথায় জেঁকে বসেছে।
রাতে রুপালীর গায়ে হাত তুলেছি এজন্য কিছুটা খারাপ লাগছিল।
মনকে একথা বলে সান্ত্বনা দিতে চাইলাম , ওর সাহস বেশি হয়ে গেছে তা কমানোর জন্য চড়ের দরকার ছিল।
লাঞ্চ টাইমে সবাই লাঞ্চ করতে গেছে আমার যেতে ইচ্ছে করছে না।
আমি চেয়ারে বসে চোখ বুজে অতিতে ডুব দিলাম।
মাস্টার্স শেষ করে ভাগ্যে ভালো থাকায় এই কম্পানিতে চাকরি পেলাম।
চাকরি পাওয়ার এক মাসের মধ্যে আলতার বিয়ে ঠিক হয়।
আমার বোন আমার কাছে পরীর থেকেও সুন্দর শুধু কি ফর্সা হলেই সুন্দরী হয়।
কিন্তু গ্রামের মানুষ আমার বোনকে কালী ডাকে।
দেখতে শ্যামলা তাই সবাই বলে ওর ভালো জায়গায় বিয়ে হবে না।
এজন্য হঠাৎ করে একটা ভালো পাত্র পাওয়াতে আমিও এ বিয়েতে অমত করলাম না।
আরেকটি কথা বাবা মারা যাওয়ার পর আমার পড়া লেখা ও সংসার খরচের জন্য রুপালীর বাবার কাছে থেকে মোটা অংকের টাকা ধার নেন আমার মা ।
নতুন চাকরি, মাথায় পুরানো ঋণের বোঝা তার সাথে বোনের বিয়ে ।
সবমিলিয়ে বেশ চিন্তিত ছিলাম।
এরমধ্যে বিয়ের দু’দিন আগে আলতার হবু শুশুড় জানায় আলতা কে তাদের বাড়ির বৌ করতে হলে পাঁচ ভরি স্বর্ণালঙ্কার দিতে হবে ।
এই কথা শুনে চিন্তায় মাথা নষ্ট হওয়ার জোগাড়।
তাদের যদি চাওয়া পাওয়া ছিল তো আগে বলেনি কেন?
পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি তারা ভাবছে ভাই যেহেতু শহরে চাকরি করে তাহলে বোনকে তো সাজিয়ে দিবে তা আগে আর পরে বলার কি?
আমরা গরীব মানুষ ।
ঠিক মত তিন বেলা খেতে পেতাম না চাকরি পাওয়ার আগে।
এখন চাকরি পাওয়াতে আল্লাহর রহমতে মোটামুটি ভালোয় চলছিলো।
তবে পাঁচ ভরি স্বর্ণালঙ্কার এখন যে যে দাম এতো টাকা আমরা কোথায় পাব?
কে দিবে ?
একবার এই বিয়ে ভেঙে গেল বোনের গায়ে সারাজীবনের জন্য কলংল্কের দাগ লেগে যাবে।
কি করব কিছু ভেবে পাচ্ছিলাম না ।
তখন মা এসে বলল একমাত্র তুই পারবি তোর বোনকে সারাজীবনের কলংল্কের হাত থেকে রক্ষা করতে।
মায়ের কথায় আমি হতবাক হয়ে গেলাম।
মা`কে কোন রকমে বললাম আমার কাছে কোন টাকা নেয় তুমি তো তা জানো?
আমার কাছে টাকা থাকলে কি আমার জীবন থাকতে টাকার জন্য বোনের বিয়ে ভাঙতে দেয়।
মা বলল,তুই যদি রুপালীকে বিয়ে করিস তাহলে এই বিয়ের সব খরচ রুপালীর বাবা দিবেন। তিনি আমাকে বলেছেন আগের ঋণের বোঝাও মাফ হয়ে যাবে।
মা তুমি কি বলছ, সামান্য টাকার জন্য আমি একজন বাক প্রতিবন্ধীকে বিয়ে করতে পারবো না।
এ ছাড়া তুমি আমায় জীবন দিতে বললেও আমি পিছু হাঁটবোনা।
ঠিক আছে করিস না বিয়ে তোর বোন যখন মানুষের কথা সহ্য করতে না পেরে গলায় কলসি বেঁধে ডুবে মরবে।
তখন সবার জন্য ভালো হবে ।
মা এমন কথা তুমি বলতে পারলে?
সেদিন মায়ের কথা শুনে আমার আদরের বোনের মুখের দিকে চেয়ে রুপালীকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যায়।
সেদিন রুপালীর সাথে আমার বিয়ে হয়ে যায়।
এরপর আলতার বিয়ের সব খরচ আমার শ্বশুড় বহন করেন।
করবেন না কেন তার সাথে শর্ত তো এটাই ছিলো।
আমাদের বিয়ের কিছুদিন পর আস্তে আস্তে জানতে পারি আমার শ্বশুড় এতো বছর আমার লেখাপড়ার খরচ তার মেয়েকে বিয়ে করতে হবে এই শর্তে দিয়েছেন।
বিয়ের সম্পর্কে বুঝতে পারার পড়ে থেকে নিজের বৌ রূপে কোন বোবা মেয়েকে স্বপ্নেও কল্পনা করিনি।
তাই এমন একজনের সাথে বিয়ে হওয়াতে আজও আমি রুপালীকে মন থেকে মানতে পারছি না।
আমি জানি এই বিয়েতে মেয়েটির দোষ নেয় তবুও কেন যেন মেয়েটির সাথে মিশতে পারিনি।
আমাদের মধ্যে দেহের মিলন হলেও বিয়ের ছয়মাসে মনের মিলন আজও হয়নি।
চলবে –
এ জাতীয় আরো খবর..
Leave a Reply