নারীরা বলেন, যখন হজ অথবা উমরা করতে মদিনায় যাই মনে হয় হারামে গিয়ে নামাজ পড়া, ইবাদত করা এটাই জীবন। ফাঁকে ফাঁকে খাওয়া হয়। মানে খাওয়া-দাওয়াকে গুরুত্ব কম দেয়া হয়। আবার ঘরে ফিরে এলে মনে হয় খাওয়া-দাওয়া কেন্দ্র করেই জীবন আবর্তিত হয়।
যেহেতু আমি ইংল্যান্ডে থাকি নানাদেশের দ্বীনি ঘরানার মানুষ দেখি, ভাই, ইন্ডিয়ান মুসলমানরা আমাদের বাঙালিদের খাবারের আয়োজন দেখলে অবাক হয়! আমরা এত পদ রান্না করি দেখে হতবাক হয়। বাঙালিরা গুজরাতি মুসলমানের বলে কিপটেমি করে, অথচ ওদের ব্যাপারে প্রসিদ্ধ হলো যখন ওরা দান করে পকেটে যা আছে সব বের করে দেয়, কখনো দেখে না কত দিলো! তাহলে ওরা শুধু খাবারের বেলায় কন্ট্রোল করে।
আমাদের এলাকায় অনেক বছর ধরে সপ্তাহে একদিন তিন ধরনের তালীম হয় মহিলাদের। একটা ইংলিশে, একটা উর্দু, একটা বাংলা। তালিম এমন সময় হয়, যখন বাচ্চারা স্কুলে চলে যায়। উর্দু ইংলিশ তালীমে মহিলারা থাকলেও বাঙালি তালীমে একজন দুজন তিনজন এমন আসে। অথচ শতশত মহিলা এই শহরে। দাওয়াত দিলে বলে রান্না। আসলেই রান্নার কাজ থাকে তাদের!
একটি মধ্যবিত্ত সমাজের সাধারণ চিত্র হলো, রান্নার কাজ। আপনি রান্না করুন, রান্না ভালো করুন, কিন্তু রান্নাই হবে প্রধান গুণ এটা কেমন কথা! রান্না প্রধান কাজও নয়। রান্না করুন, তিনচারটা পদ রান্না না করে একটা পদ রান্না করুন, দুইটা পদ রান্না করুন সারাদিনের জন্য, কতক্ষণ লাগে একঘন্টাও তো লাগে না। প্রয়োজনীয় রান্নাবান্না কাজও ইবাদত। কিন্তু সারাদিন মুখরোচক খাবার তৈরির জন্য রান্নাঘরে পড়ে থাকা তো উচিত না।
এই ব্যাপারে মেয়েদের চেয়ে পুরুষের বেশি মনোযোগ দেয়া উচিত। পুরুষরা যদি বায়না কম করে, ক্ষেত্রবিশেষ অতিরিক্ত রান্নাবান্না করতে নিষেধ করে, ঘুরেফিরে পুরুষেরই লাভ। মেয়েদের কাজের ঝামেলাও কমবে, স্বামীকে আরও সময় দিতে পারবে। দেখা যায় সারাদিন রান্না করে পুরুষ যখন ঘরে আসে নারী তখন একটু উৎসাহ উদ্দীপনা দেখাবে তা নয়, সে থাকে টায়ার্ড! [এটা আমার দেখা-শোনা, থেকে বলা] অন্যথায় কারও ওয়াইফ এমন অতিমানবি হতে পারে যে মুখরোচক খাবার তৈরি করবে সারাদিন লাগিয়ে, বাচ্চাদের দেখাশোনা করবে, সংসারের অন্যান্য কাজও করবে তারপরও সে কখনোই টায়ার্ড ফিল করবে না। এতে আমার বলার কিছু নেই।
আর আপনারা যারা আমার ঘরের খাবার তৈরির ব্যাপারে আগ্রহ জানাচ্ছেন, যে কমেন্টগুলো ডিলিট করেছি, তাদের বলছি আমার স্বামী ভিন্ন প্রজাতির মানুষ। উনাকে দিলে খান, না দিলে কিচ্ছু বলেন না, নিজে কিছু বানিয়ে খেয়ে নেন। এগারো বছরের সংসার জীবনে আজ পর্যন্ত কখনো বলেননি, রান্না করোনি কেন? এই কারণে আমি নিজেই আগবেড়ে তার পছন্দের খাবার রান্না করে রাখার চেষ্টা করি। আর আমি প্রতিদিন রান্না করি না। যখন জরুরত পড়ে রান্না করি। রান্নার পেছনে আমার এত সময় নষ্ট হয় না। আমার স্বামী রান্নার পেছনে সময় দেয়ার চেয়ে তার এবং তার বাচ্চাদের পাশে বসে থাকলেই অধিক আনন্দবোধ করেন। বাচ্চাদের ওইসময় অনেক কিছু শেখানো যায়, নিজেও শেখা যায়। যদি সারাক্ষণ রান্নাঘরে থাকতাম তাহলে এই যে ফেসবুকে লম্বা লম্বা পোস্ট লেখি এগুলো লেখারও সময় পেতাম না। [তবে বোনদের এটা মনে করা উচিত নয় যে, সকলের স্বামী এমন হবেন, যার স্বামী খাবারের প্রতি গুরুত্ব বেশি তার জন্য মুখরোচক রান্না করাটাই নিজের ও সংসারের জন্য মঙ্গল, পোস্টটা সেইসব ভাইদের জন্য যারা খাবারকে এত গুরুত্ব দিচ্ছেন।]
Leave a Reply