1. banglamailnews72@gmail.com : banglamailnews : Zakir Khan
শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫১ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
# আহারে # খোরশেদ ।। সমাজে নতুন অপরাধী চক্র তৈরী হচ্ছে কিন্তু ভবিষ‍্যতে এদের রক্ষা করবে কে??।। – – – আশিক ফারুকী “অতঃপর” __ সালমা আক্তার বীরাঙ্গনা নই আমি মুক্তিযোদ্ধা – – – শাহনাজ পারভীন মিতা জলপাই রঙের স্বাধীনতা – – – আরিফুল হাসান প্লাস্টিকের উৎপাদন বন্ধ করতে হবে – উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ান হাসান – – – স্বাধীন আজম –   টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধি, স্বপ্নমায়া – – – – মাহজাবীন আহমেদ বুড়ি মরে গেল – – – মোঃ আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমাম প্রযুক্তির দুনিয়ায় শিক্ষার্থীদের এখন উন্নত জীবন গড়ার দারুণ সময়:– ————–টিপু সুলতান লেখক ও সমাজ চিন্তক ডায়াবেটিস নিয়ে সচেতনতাই পারে ডায়াবেটিস রোগ নির্নয় ও রোগের চিকিৎসা এবং সঠিক ব্যবস্থাপনা – – – ডা: সাদিয়া আফরিন 

আমাদের ব্যালকনিতে চড়ুই পাখিদের রেস্তোরাঁ — লুৎফর রহমান রিটন

  • আপডেট টাইম : বুধবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২১
  • ১৬৫ বার
পৃথিবীর বহু দেশ ঘুরে কয়েকটা জিনিসের রূপ-রস-গন্ধের মিল পেলাম হুবহু। যেমন সব্জির মধ্যে টমাটো-ঢেরশ। মাছের মধ্যে চিংড়ি। ফলের মধ্যে কলা-কমলা। প্রাণিদের মধ্যে বেড়াল। আর পাখিদের মধ্যে চড়ুই। মনে হয় পৃথিবীর সব দেশেই এরা এক ও অভিন্ন।
ছেলেবেলায় সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে আসা বাংলায় অনুবাদ করা দুর্দান্ত কিছু বই পড়েছিলাম। মনে আছে সবচে বেশি পড়েছিলাম ননী ভৌমিকের অনুবাদ করা বই।
বর্ণালি সেই ছেলেবেলাতেই আমি জানতাম ননী ভৌমিক পশ্চিম বঙ্গের। অরুণ সোমও তাই। আর হায়াৎ মামুদ, দ্বিজেন শর্মা আমাদের দেশের অর্থাৎ বাংলাদেশের। প্রগতি আর রাদুগা থেকে প্রকাশিত বইগুলোর দাম ছিলো অবিশ্বাস্য রকমের কম। বলতে গেলে বিনে পয়সায় পাওয়া যেতো শৈশব রাঙিয়ে দেয়া বইগুলো। ছাপা ও বাঁধাই ছিলো অভাবনীয় দৃষ্টিনন্দন আর মজবুত। এই দলের অনেক বইয়ের ভিড়ে একটা বই এখনও চোখে লেগে আছে তার প্রচ্ছদের কারণে। বইয়ের নাম ‘চড়ুইছানা’। লেখক ম্যাক্সিম গোর্কি। অনুবাদ হায়াৎ মামুদ। দুর্দান্ত কয়েকটা চড়ুই পাখি ছিলো প্রচ্ছদে। ওরা ডানা ঝাঁপটাচ্ছিলো নানান ভঙ্গিমায়। সেই ছেলেবেলায় খুব অবাক হয়ে লক্ষ্য করেছিলাম–আমাদের বাংলাদেশের চড়ুইদের সঙ্গে সোভিয়েত ইউনিয়নের চড়ুইদের কোনো পার্থক্য নেই। দেখতে ওরা হুবহু একই রকমের।
কানাডার চড়ুইগুলোও দেখতে একেবারে বাংলাদেশের চড়ুইদেরই কার্বন কপি যেনো বা।
০২
চড়ুই পাখিদের জন্যে একটা রেস্তোরাঁ খুলেছে শার্লি, আমাদের ব্যালকনিতে। সকাল-দুপুর এবং বিকেল, তিনবেলাতেই ওরা আসে। কখনো একা আসে। কখনো দলবেঁধে,দু’তিনজন কিংবা তারও বেশি, একসঙ্গে।
ছোট্ট এই পাখিগুলোর জন্যে শার্লি আইসক্রিমের দু’টো খুদে প্লাস্টিক কন্টেইনারের একটায় চাল আরেকটায় পানি রেখে দেয় নিয়ম করে।
আমাদের ব্যালকনির রেলিং-এর ওপর পার্ক থেকে কুড়িয়ে আনা একটা গাছের ডালের সঙ্গে কাপড়ের টুকরোয় বেঁধে দিয়েছে সে কন্টেইনার দু’টোকে। যাতে প্রবল বাতাস চাল-জল সমেত কন্টেইনার দু’টোকে উড়িয়ে নিয়ে না যায়। আয়োজনটা দেখতে খুব মামুলি আর গরিবি হলেও খাদ্য আর পানীয়ের যোগান সেখানে অফুরান।
চাল-পানি ফুরিয়ে গেলে সে রিফিল করে দেয় দ্রুত। ঘুমের অষুধের প্রকোপে একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠতে বেশ দেরি হলো শার্লির। এগারোটা-বারোটার দিকে হন্তদন্ত হয়ে সে এলো জানালার কাছে। আগের রাতে সে চড়ুইদের চাল-পানির কন্টেইনার দু’টোকে ধুয়ে-মুছে ক্লিন করার জন্যে ঘরে নিয়ে এসেছিলো। কিন্তু ক্লিন করার পর সেটা আর সেট করা হয়নি কার্ণিশের ওপর। ভেবেছিলো সকালে করবে। কিন্তু সকালে সে তো জাগতেই পারলো না। ফলে বিপত্তি যা ঘটার ঘটলোই। শার্লি আমাকে দেখালো–দেখ দেখ কী কান্ড! আহারে নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে। দেখলাম–একটা চড়ুই কার্ণিশের ওপর দাঁড়িয়ে খুব অবাক করা দৃষ্টিতে ডানে বাঁয়ে মাথা ঘোরাচ্ছে–আরে এইখানেই তো ছিলো! গেলো কোথায়! আমাদের চাল-পানির কৌটো দু’টো চুরি করলো কে? আন্টি তুমি কই?
জানালার গ্লাসের এপারে শার্লিকে দেখে ছোট্ট চড়ুইটা অতি দ্রুত গতিতে চিড়িক পিড়িক করতে করতে ল্যাজ নাড়াতে লাগলো। অর্থাৎ কী না–আমার ব্রেকফাস্ট কই আন্টি!!
শার্লি খুব দ্রুততায় জল-চালের কন্টেইনার দু’টোকে ফের জুড়ে দিলো মরা ডালের সঙ্গে। কিন্তু ততোক্ষণে হতাশ আর অভিমানী চড়ুইটা চলে গেছে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রথমে একজন তারপর একজন একজন করে আরো চারজন মোট পাঁচটা চড়ুই এসে হাজির। ক্ষুধার্ত ওরা ঝাঁপিয়ে পড়লো চালের কন্টেইনারের সমনে। তারপর কুট্টুস কুট্টুস করে ছোট্ট এইটুকুন ঠোঁটে একটি একটি চালের দানা খেতে শুরু করলো। ওদের মধ্যে সবার আগে যে এসেছে সে খানিকটা বেশি শক্তিশালী। কিছুটা বদরাগীও।
গুন্ডামি শুরু করলো সে রীতিমতো। চাল খেতে আসা প্রত্যেকটা চড়ুইকে সে আক্রমন করতে থাকলো। ঠুঁকড়ে খামচে একাকার করে ফেললো। রীতিমতো ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করলো সে। ওর মারপিটে অস্থির সবাই।
জানালার এপাশে দাঁড়িয়ে আমি যতোই বলি–ওরে হারামজাদা এগুলো তোর একার জন্যে নয়। ওদেরকে মারিস না।
কিন্তু সে নাছোরবান্দা। এগুলোর ভাগ সে কাউকে দেবে না।
সমস্ত জল-চাল সে একাই খাবে।
সম্পদের ওপর এরকম দখলদারিত্বের বিষয়টা সে সম্ভবত এডপ্ট করেছে মানুষের কাছ থেকে।
নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে বাকি চড়ুইগুলো মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে থাকে কার্ণিশের ওপর। হঠাৎ নতুন আরেকটা তরুণ চড়ুইয়ের আগমন ঘটলো। গুন্ডাটা ওর ওপরে হামলে পড়তেই বিপুল বিক্রমে চিড়িক পিড়িক করতে করতে রুখে দাঁড়ালো সে গুন্ডাটাকে। অদূরে দাঁড়িয়ে থাকা বঞ্চিত বাকি চড়ুইগুলোও এবার শামিল হলো সম্মিলিত আক্রমনে।
মুহূর্তেই পালটে গেলো পরিস্থিতি। পড়ি মরি গুন্ডাটা পালিয়ে গেলো লেজ গুটিয়ে।
মুগ্ধ দৃষ্টিতে আমি অবলোকন করলাম ছোট্ট এইটুকুন চড়ুই পাখিদের একতার শক্তি।
০৩
সিজনের প্রথম স্নো ফল হলো অটোয়ায়, কাল বিকেল থেকে। ওয়েদার ফোরকাস্টে দেখেছি সারারাত স্নো পড়বে কুড়ি সেন্টিমিটার অবয়বে। রাত দেড়টার পর ঘরের আলো নিভিয়ে জানালায় দাঁড়িয়ে অটোয়ার অন্যরকম সৌন্দর্য্যে অভিভূত হলাম। নরম বরফ কুচির আবরণে অটোয়া যেনো বা শুভ্রসফেদ চাদরে ঢাকা ঘুমন্ত এক নগরী। আমাদের লিভিং রুমের দু’দিকেই বিশাল দু’টো জানালা। উইন্ডো ব্লাইন্ড টেনে রেখেছি যাতে বহু দূরের সবকিছুই গোচরে আসে দৃষ্টির। আকাশটা গ্লুমি। মেঘলা মেঘলা। মাঠের ওপর, রাস্তার ওপর, বাড়িগুলোর ছাদের ওপর, গাছের ন্যাড়া ডালের ওপর, খোলা উন্মুক্ত আকাশের নিচে পার্ক করে রাখা সারি সারি গাড়িগুলোর ওপর শাদা বরফের আস্তরণ। বরফের সেই আস্তরণের অদ্ভুৎ আলোর রিফ্লেকশন ফিরে এসেছে আকাশের দিকে ফ্লাড লাইটের আলোর মতোন। চারিদিকে একটা স্বপ্নময় আর রহস্যময় নিঝুম পরিবেশ। রূপকথার গল্পের মতো।
সকালে ঘুম ভাঙলে রাতের কুড়ি সেন্টিমিটার বরফের নমুনা দেখলাম।
ব্যালকনির জানালায় চোখে রেখে দেখি কার্ণিশের ওপর দুই-তিন ইঞ্চি উঁচু বরফের স্তুপ। চড়ুইপাখির রেস্তোরাঁটা ঢাকা পড়েছে বরফের নিচ। চালের ছোট্ট কন্টেইনারের মুখের ওপরটা উঁচু হয়ে আছে কোন্‌ আইসক্রিমের মতো। একটা বিস্মিত চড়ুই ওটার সামনে দাঁড়িয়ে আছে হতাশ ভঙ্গিতে। ওর ব্রেকফাস্ট টাইম পেরিয়ে যাচ্ছে কিন্তু আন্টি তো খাবারগুলোর ঠিকমতো দেখভাল করেনি! ক্ষুধার্ত চড়ুইটা কন্টেইনারের ওপরের বরফের কুচিতে টুক টুক করে ঠোকর বসাতে থাকলো। সে বুঝে গেছে বরফ পেরোতে পারলেই মিলবে সকালের নাস্তা। এইটুকুন খুদে ঠোঁট দিয়ে বিরামহীন ঠোকর মারতে মারতে ঠিকই সে বের করে ফেললো নাস্তার আইটেম।
প্রবল ঠান্ডায় চালগুলো নিশ্চয়ই পাথরের মতো শক্ত হয়ে গেছে। আমি তাই দ্রুত এক কাপ চাল নিয়ে ব্যালকনিতে এলাম। সঙ্গে একটা চামচ। চামচ দিয়ে ঠুকে ঠুকে বরফের কোন্‌ আইসক্রিমটাকে ভেঙে ফেললাম। কার্ণিশের কিছু অংশ ক্লিন করে ওদের দাঁড়াবার জায়গাটাকেও উদ্ধার করলাম বরফের কবল থেকে।
অবশেষে মুক্ত হলো চড়ুই পাখিদের রেস্তোরাঁটা।
মাত্র মিনিট দুইয়ের এই অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে হাতে গ্লোভস পড়তে ভুলে গিয়েছিলাম। ফলে এখন পস্তাচ্ছি। কারণ প্রচণ্ড ঠান্ডায় হাতের আঙুলগুলোর ডগা ব্যথা করছে। ভাগ্যিস জ্যাকেটটা গায়ে চড়াতে ভুলিনি!
আচ্ছা, চড়ুই পাখিদের তো শীতের জ্যাকেট নেই। ওদের কি ঠান্ডা লাগে না!
ঠান্ডায় জমে গেলে ওদের দুই পায়ের আঙুলেও কি ব্যথা হয়!
অটোয়া ২৩ নভেম্বর ২০২০
picture source : internet
May be an image of bird and nature

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..