1. banglamailnews72@gmail.com : banglamailnews : Zakir Khan
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০১:২৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
# আহারে # খোরশেদ ।। সমাজে নতুন অপরাধী চক্র তৈরী হচ্ছে কিন্তু ভবিষ‍্যতে এদের রক্ষা করবে কে??।। – – – আশিক ফারুকী “অতঃপর” __ সালমা আক্তার বীরাঙ্গনা নই আমি মুক্তিযোদ্ধা – – – শাহনাজ পারভীন মিতা জলপাই রঙের স্বাধীনতা – – – আরিফুল হাসান প্লাস্টিকের উৎপাদন বন্ধ করতে হবে – উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ান হাসান – – – স্বাধীন আজম –   টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধি, স্বপ্নমায়া – – – – মাহজাবীন আহমেদ বুড়ি মরে গেল – – – মোঃ আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমাম প্রযুক্তির দুনিয়ায় শিক্ষার্থীদের এখন উন্নত জীবন গড়ার দারুণ সময়:– ————–টিপু সুলতান লেখক ও সমাজ চিন্তক ডায়াবেটিস নিয়ে সচেতনতাই পারে ডায়াবেটিস রোগ নির্নয় ও রোগের চিকিৎসা এবং সঠিক ব্যবস্থাপনা – – – ডা: সাদিয়া আফরিন 

দীপের চোখে জল (উপন্যাস থেকে) — ৪র্থ পর্ব,৫ম পর্ব , ৬ষ্ঠ পর্ব এবং ৭ম পর্ব — বুলবুল

  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১
  • ৬২৯ বার
৪র্থ পর্ব
দীপ , জেলা সদরে গেটের পাশের লেকে ভাসমান পদ্মগুলো এখনো কি আগের মতই আছে? অনেক দিন হলো লেকের পাড়ে বেড়াতে যাওয়া হয় না। লেকের স্বচ্ছ জলে ভাসমান পদ্মপাতা, বালিহাঁসের ঝাঁক আর বসার জায়গা নরম সবুজের বিছানা যেনো একি সুতোয় গাঁথা।এক অনাবিল শান্তি সুখের ছোঁয়া। সবুজ ঘাস যেনো নরম তুলতুলে মাদুর বিছিয়ে রেখেছে পুরো লেকের পাড় জুড়ে অতিথিদের সাদরে আমন্ত্রণের জন্যে।
রিয়ার বাসার সামনে ফুল বাগানের কথা তোমার মনে আছে কি? দুষ্টুমির ছলে আমি শিরীন রিয়া তোমাকে কতো জ্বালাতাম। বাগানটিতে কি আগের মতো সুন্দর সুন্দর ফুল ফোটে ?গোলাপ রজনীগন্ধা হাসনাহেনা গাঁদা ফুল।
– অনেক দিন হলো , ঐ পথে যাওয়া হয় না।
– কেনো দীপ ? বসন্তে ফুল ফোটে আর শ্রাবণের বৃষ্টির ছোঁয়ায় ঝড়ে পড়ে এমন তো নয়।
– তা অবশ্য ভেবে দেখেনি। তোমার শরীরের যে অবস্থা এতো কথা কি না বললেই নয়।
– ও সব আমি জানি, দীপ বুকের মাঝে জমে থাকা কথা গুলো বলতে দাও। মেঘের ঘনঘটায় বৃষ্টি তো কেউ থামিয়ে দিতে পারেনা। বৃষ্টি তার আপন গতিতেই ঝড়ে পড়ে।
– নিশো, এটি প্রকৃতির নিয়ম। বিধাতার বিধান।
– তাই যদি হয়, তাহলে আমরা যারা রোগে ভোগে দুঃখ যন্ত্রনায় ছটফট করে মৃত্যু কূপের দিকে যাচ্ছি,এটা কি,
প্রকৃতির নিয়ম নাকি বিধাতার বিধান?
দীপ কি আর বলবে, কিছু কিছু কথা আছে তার কোন জবাব না দিয়ে নিরবে শোনতে হয়। মৃত্যু চিরন্তন সত্য, দুই দিন আগে আর পরে প্রত্যেকের জীবনেই ঘটবে।
মানুষ মাত্রই তার জীবন নিয়ে স্বপ্ন বুনে।নিশো এর ব্যতিক্রম নয়।সে নিজেকে নিয়ে স্বপ্ন বুনেছিল কিন্তু আজ তার কঠিন বাস্তবতায় জীবন মরুভূমির মরীচিকার মতো মনে হচ্ছে। দীপ বুঝতে পেরে নিশো কে বলে,তোমার যা বলতে ইচ্ছে করে বলতে পারো আমি শোনবো ।
– দীপ তুমি যদি কখনো লেকের পাড়ে বেড়াতে যাও তবে দেখবে বিন্দু বিন্দু স্বচ্ছ জল যেনো স্বর্গ হতে বৃষ্টির ছোঁয়ায় পদ্মপাতায় এসে পড়েছে। বালিহাঁসের ঝাঁক দল বেঁধে ভেসে বেড়ানো আর পানকৌড়ির ডুব সাঁতার কি যে মনোরম দৃশ্য,মন ছুঁয়ে যায়।
লেকের পাড়ের একটি স্বরনীয় ঘটনা যা না বললেই নয়।
মনে হলে হাসি চেপে রাখাই মুশকিল। মনে করে কত যে নিরলে একা একাই হাসি। হাসি আর কান্নার জল দুটোই
মনের খোরাক ।হাসির পরে মন শান্ত হয় আবার দুঃখ বেদনায় কান্নার পরে মন হাল্কা হয়ে শান্ত হয়।হ্যা, তোমাকে যা বলতে চেয়েছি – আমি শিরীন দুজনে লেকের পাড়ে বসে গল্প করছি । কি যেনো মনে করে দুজনেই হেসে লুটোপুটি হঠাৎ শিরীন পা ফসকে লেকে পাড়ে যায়। আহা কি যে অবস্থা। ধরে তুলতে তুলতেই ভেজা কাকের মতো । শিরীন লজ্জায় জড়োসড়ো কিযে করি বুঝতে পাচ্ছিনা। ভেজা জামা কাপড় গায়ে অদ্যপৃষ্ঠে চেপে ধরেছে। কোনো ভাবে রিক্সায় উঠে শিরীন কে নিয়ে সোজা বাসায় চলে আসি। সময় চলে যায় কিন্তু স্মৃতি গুলো মনে থাকে।
– দীপ কে নিরব দেখে নিশো বললো, আমার কথা শোনতে খারাপ লাগছে ?
– খারাপ লাগবে কেনো, ভালো লাগছে।আর ভালো লাগছে বলেই নিরবে তোমার কথা শোনছি।
– অ তাই ,
রিয়ার বাসার সামনে যে ফুলের বাগান দেখেছো,সে বাগানের ফুল তোলা কঠোর নিষেধাজ্ঞা ছিল।
রিয়ার দাদিমা প্রতিদিন সকালে ফুল দিয়ে তাদের দেবতা কে পূজো দিতো। তুমি দেখেছো কি না জানি না। ছোট্ট একটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রাখা ছিল। সাইনবোর্ডে লেখা ছিলো ফুলে হাত দেয়া নিষেধ। এতো সুন্দর সুন্দর ফুল দেখে লোভ সামলানো কঠিন।
একমাত্র রিয়ার দাদিমার চোখ ফাঁকি দিতে পারলেই হলো। খুব সাবধানে লুকিয়ে লুকিয়ে বাগানে ঢোকে তারপর ইচ্ছে মতো তোলে নিয়ে আসতে হবে। কিন্তু সমস্যা হলো, ফুল বাগানটি ঘরের জানালা সাথে। দাদিমা জানালার পাশে বসেই প্রায় সময় পান চিবোতেন ।যত মুশকিল ওখানে।
তাই বুঝে শোনে কাজ করতে হয়। একবার তো আমি গোলাপ ফুল ছিঁড়তে গিয়ে হাতে নাতে ধরা। এখন যাবে
কোথায়, কথায় বলে ,যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই রাত হয়। শিরীন কে পাহারায় রেখেছিলাম। তুই একটু দেখবি, কেউ দেখার আগে থেকেই সংকেত দিবি। কিন্তু দাদিমা কে দেখে শিরীন নিজেকে আড়াল করতে সে কি না দৌড়ে হাওয়া হয়ে যায়। লজ্জা ভয়ে , কি যে বলবো। তারপর তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে হাতে গোলাপের কাঁটার আঘাতে রক্তের বন্যা। কি অদ্ভুত ব্যাপার যে মানুষটির জন্যে এতো লুকোচুরি সে কি না ঘরে বসিয়ে ঔষধ পথ্য দিয়ে সেবিকার মতো সেবা করলেন আর বললেন, ফুল নিবে তো নে। তোকে মানা করেছে কে? আবার ব্যথা পেলে কেনো। বুঝলাম কঠিন মানুষটির ভেতরে সুন্দর একটি মন আছে।
দাদিমা আরো বললেন, ফুল হলো পবিত্র।এই পবিত্র ফুল দিয়ে দেবতা কে পূজো দিয়ে নিবেদন করতে হয়। দেবতা সন্তুষ্ট হলে জীবন হয় সুখের আর শান্তিময় ,বুঝলে।
নিশোর মতো ঐ বয়সের মেয়েরা কি এতো‌শত বুঝে।
তারা বুঝে যাকে ভালো লাগে তাকে ফুল‌ দেয়া আনন্দের। হোক প্রিয় বিন্ধবী না হয় বন্ধু। নিশো বুঝে আর না বুঝে দাদিমার কথায় মাথা নাড়িয়ে সায় দেয়। তারপর আবার দাদিমা বললেন, আমি বুঝি তোদের মন ফুলের মতন পবিত্র। পবিত্র মনই পবিত্র ফুল ভালোবাসে।আরে বোকা,ফুল যদি সবাই তুলে নিয়ে যায়,তবে বাগানের সৌন্দর্য কি থাকে ? আর আমি দেবতা কে পূজো দিবো কি দিয়ে? তাই একটু কড়াকড়ি নিষেধ করি। তোর যখন লাগবে আমাকে বলবি।
নিশোর যখন সুযোগ এলো তখন বিধিবাম। রোগে ভুগে অসহায় দিনলিপির সাথে বসবাস।
ফুল তো প্রতিদিনই ফুটে। আর দাদিমা তার দেবতা কে প্রতিদিন ফুল দিয়ে পূজো দেয়। হয়তোবা এতে তার দেবতা খুশি হয়ে তার জীবনকে সুখ, শান্তিতে ভরে দেয়।
কিন্তু নিশোর বুকের মধ্যে জমানো স্বপ্নের ফুল গুলো শুকনো পাতার মতো ঝরে পড়ে। কাউকে দেবার মতো সময় পেলো না।
– দুঃখ বেদনা হাঁসি কান্না জীবনের অলংকার,তাই না দীপ,? যা জীবন কে সাজিয়ে রাঙিয়ে তোলে। তবে অল্প সুখ আনন্দের। বেশি সুখ সবার সয়না । হারানোর ভয় থাকে। তুমি আমার কাছে যে সময়টুকু আছো তা অল্প হলেও আমার জন্যে অনেক আনন্দের এবং সুখের।
-সত্যি বলতে কি,নিশো তোমার কথা গুলো শুনে মনে হলো কোন স্বপ্ন পরীর গল্প শোনছি। চমৎকার কথামালায় ছন্দে কাব্যে মিলন মেলা, কোথা থেকে এসব শিখলে?
– দীপ জীবনের গল্প জীবন থেকে নেয়া হয় কোনো পুঁথি পাঠ থেকে নয়।
তোমাকে আমি প্রথম দেখি তোমার কলেজের অনুষ্ঠানে।
সাথে ছিলো শিরীন শারমিন রিয়া।সে দিন তোমার চমৎকার উপস্থাপনায় ভাষার শৈলী মুগ্ধ না হয়ে পারে নি।
শিরীনের পরিচয়ে পরিচিত সেই মূহূর্তের দিনটি আজো মনে পরে।
কলেজের‌ খেলার মাঠের পাশেই ফসলের মাঠ। দখিনা বাতাসে সবুজ সোনালী ধানের ঢেউ খেলে কি যে অপরুপ দৃশ্য, মাঠের পূর্ব কোণে কৃষ্ণচূড়ার লাল আগুন ফাগুনের শিহরণ আর মেয়েদের হলুদ রঙের শাড়ী পড়া দেখে মনে হলো বসন্ত বরণ । কোনোটিই চোখ এড়িয়ে যায় নি, মুগ্ধ নয়নে দেখে আনন্দ পেয়েছি।
নিশোর শরীরের ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। কন্ঠস্বর ভারী হয়ে কথা থেমে আসছে।
নিশো ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে রাত অনেক হয়েছে। ঘড়ির কাঁটা বিরামহীন বয়ে চলছে। কিন্তু নিশোর দেহ ঘড়িটা আর চলছে না। দীপ চলে যাবে,
নিশোর সাথে থাকবে রুগ্ন জীর্ণশীর্ণ শরীরে নির্ঘুম রাত আর দীপের পাশে থাকার সময়টুকুর স্মৃতি।
জীবন তো একদিন চলতে চলতে ফুরিয়ে যাবে। একজন মানুষ তো আর চিরদিন বেঁচে থাকে না। কিন্তু মানুষ বেঁচে থাকে কর্মে, গল্পে না হয় কাব্যে। না হয় বিরহ বেদনার অশ্রু হয়ে হাজারো বুকের মাঝে।
নিশোর অবস্থা নিশোর মায়ের কাছে থেকে জেনে
দীপ বিশ্বাস করতে পারছেনা ,এই অসময়ে নিশোকে সুন্দর মায়াময় পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে।
নিশোর সাথে দীপের ভালো বন্ধুত্বের যেমন সম্পর্ক তেমনি আছে খুনসুটি আর ভালো লাগার মূহূর্তের স্মৃতি । শান্তনা দেবার মতো কোনো ভাষা নেই।
নেই হাতে ধরে অন্য কোন গ্রহে চলে যাবার শক্তি। যেখানে দুঃখ বেদনা থাকবে না,থাকবে বেঁচে থাকার স্বপ্ন আর অনন্ত জীবন। তবে নিশো বেঁচে না থাকলেও দীপের হৃদয়ের কুটিরে অনন্তকাল বেঁচে থাকবে ছোট্ট একটি নাম-নিশো।
চলবে,,,,
May be an image of 4 people, including Md Shahidul Islam Talukder, people standing and indoor
৫ম পর্ব
পৃথিবীর বাহিরে‌ অন্য কোন গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব আছে কি ? অথবা মানুষের মতো কোনো বুদ্ধিমান প্রাণী উপস্থিতি এখনো তার সঠিক বাস্তব প্রমাণিত সত্য কারোর পক্ষে উপস্থাপন করা সম্ভব হয়নি। তবে কল্পনা প্রবল মানুষ কল্পনার মাধুরী মিশিয়ে অনেক কল্প কাহিনী গল্প নাটক উপন্যাস এমনকি নানা দেশে নানা ভাষায় সল্প , পূর্ণ দৈর্ঘ্য ছায়া চিত্র তৈরি করে চলেছে।
তবে বিজ্ঞানীরা বসে নেই, তার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন গ্রহ থেকে গ্রহে প্রাণের সন্ধানে। তাদের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির কলাকৌশলের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বিজ্ঞানের উৎকর্ষের উন্নতির শিখরে কোন এক সময় সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হবে ।
নিশোর অসুখে‌ মন মগজে না না চিন্তা কল্পনার জাল বুনে । কখন যে কি চিন্তা কল্পনা এসে মাথার মধ্যে ঘুরপাক খায় তার কোন ইয়ত্তা নেই। নিশোর মনের ভাবনা মানুষকে নিয়ে। মানুষের জন্ম মৃত্যু চিরন্তন সত্য ঘটনা আর মৃত্যুর পরের জীবন ।
মানুষ মরে গেলে দেহ পচে একসময় মাটিতে মিশে যায়। কিন্তু মানুষ যে শক্তি বলে চলাচল করে সে শক্তি কোথায় যায়,?সে শক্তি কোন এক মহাশক্তির আশ্রয়ে চলে যায় অবিনশ্বর সত্ত্বা । তা হতে পারে মহাবিশ্বের অন্য কোন গ্রহে। শক্তির কোন বিনাশ নাই একথা বিজ্ঞান মতেই সত্য।
আমারা ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখি। কতো জানা-অজানা জায়গায় চলে যাই, কতো চেন অচেনা মানুষের দেখা হয়, কথা হয় । অথচ আমাদের আস্ত শরীরটা বিছানায় যেখানে ছিল সেখানেই আছে।
তাহলে অবশ্যই আমাদের সূক্ষ্ম আর একটি দেহ আছে। যে দেহটাকে ইথারিক বডি বললে হয়তো ভূল হবে না। সে সূক্ষ্ম দেহটা এই জড়দেহে আবদ্ধ হয়ে আছে । জড় দেহ থেকে মৃত্যু নামক চিরন্তন সত্যি ঘটনার মধ্য দিয়ে মুক্ত হয়ে নিজের উৎসস্থলে ফিরে যায় । আর সে উৎসস্থল অন্য কোন গ্রহে , এমনটিই যৌক্তিক।
নিশোর ধারণা-
তার পূর্ব পুরুষ আত্মীয় স্বজন আর বাবা অন্য কোন গ্রহে আছে । সে মৃত্যু পরে সেখানেই তাদের সাথে মিলিত হবে। সে মনে করে ,আমি যখন মারা যাবো হয়তো এখানে মা ভাই আত্মীয় স্বজনদের হারাবো কিন্তু আমি আমার বাবা কে কাছে পাবো।
বাবার আদর মমতা জড়ানো ভালোবাসা সেই ছোট্ট বেলায় হারিয়েছি । ঝাঁপসা কিছু কিছু স্মৃতি এখনো বুকে আকড়ে ধরে আছি। রাতে ঘুমানোর আগে বাবার মুখে থেকে হিরন দেশের পরীর গল্প শোনে শোনে বুকে মাথা গুঁজে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছি বলতেই পারবোনা।
– মা মা অ মা। একটু এদিকে এসো।
– কি বলিস ?
– কি আর বলবো । আজকাল তোমাকে তো কোন কথাই বলা যায়না। আঁচল দিয়ে মুখটি আড়াল করে চোখ দুইটা মুছো । শোন মা পৃথিবীতে কোনো মানুষই চিরদিন বেঁচে থাকবে না। আমি তুমি আমরা কেউ না।
সেই কবেই বাবাকে হারিয়েছি তো আমারা অনেকেই এখনো বেঁচে আছি । ক্ষণিকের একটুখানি কষ্ট লেগেছে। আবার ভূলে গেছি । কেউ কাউকে মনে রাখেনা । সময় চলে যায় নদীর স্রোত একদিন থেমে যায় আর আমরা ভূলে যাই ।
কয়দিন হলো কেনো যেনো বাবার কবর খুবই দেখতে ইচ্ছে করছে । তোমাকে বলবো ভাবছিলাম কিন্তু অন্য ভাবনায় সব ভূলে যাই । তবে ভূলে যাওয়া মানুষ গুলোর দুঃখ বোধ কম থাকে।
এদিকে নিশোর মা চোখের পানিতে বুক ভিজে যায়। নিঃশব্দ বিরহের কান্না । সে কিনা বুকে বাসা বেঁধেছে নিশোর বাবা কে হারিয়ে । এ কান্নার জল কখনো শেষ হবে না । দু’টো সন্তান কে বুকে জড়িয়ে বেঁচে আছে। তিনি জানেন নিশো আর কয়েক দিনের অতিথি।নিশো মায়ের চোখের মণি । চোখের মণি হারিয়ে অন্ধ হয়ে আর কতদিন বেঁচে থাকতে হবে।
– মা তোমাকে আগেই বলেছিলাম তুমি কাঁদবে না । কিন্তু মনে রাখনি । শোন, মা আমি যদি মরে যাই তবে আমাকে বাবার পাশেই কবর দিবে । আমি মরে গেলেও মনে হবে আমি যেনো বাবার বুকে মাথা গুঁজে ঘুমিয়ে আছি।
শোন মা‌, ভাইয়া কে আমার কবরের পাশে একটা
কৃষ্ণচূড়া গাছ লাগাতে বলবে । ফের বসন্তে ফুল ফোটবে
পাখিরা কোলাহল করবে । লাল পাড়ের হলুদ শাড়ি মতো বাসন্তী রঙের পরশ আমার আত্মাকে শীতল করবে ।আর আমার দেহের প্রতি টি অনু কণা ফুলের পাপড়ি হয়ে ফোটে উঠবে।
আমার হাসি আনন্দ আর ভালোবাসার স্বপ্ন গুলো ফুলের সুবাসে মিশে চারপাশে আবেশ ছড়িয়ে দিবে।
আমার বুকে জমিনো দুঃখ বেদনার অশ্রু বৃষ্টির ছোঁয়ায় ঝড়ে পড়বে। আপন মনে কথা গুলো বলতে বলতে
নিশো মায়ের দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে –
এই যে আবার তুমি কাঁদছো । বলো,আর কতো বার তোমাকে বারণ করবো। তুমি কাঁদবে না।
– তোরা আমাকে আর কতো কাদাবি । আর কতো কাঁদলে চোখের পানি ঝড়লে আল্লাহ আমাকে তুলে নিবে। আমার বুকে আর সয়না। বুকটা কিসে যেনো ছিঁড়ে খুঁড়ে খাচ্ছে । কবে যে সে খাওয়া শেষ হবে ।
– এই দেখো একদম মুখে তালা দিলাম । কোন কথা বলবো না। তবু তুমি আর কেঁদো না মা ।
কালু চাচা নিশোকে ছোট বেলা থেকেই কোলে কাঁধে করে বড় করেছেন । নিজের মেয়ের মতোই দেখেন। আত্মার একটা টান থেকেই কালূ চাচা নিশোর খোঁজ খবর নেয় । সুযোগ পেলেই নিশোর পাশে বসে নানা কথা বলে । আজও সেই সুযোগে নিশো কালু চাচার সাথে কথা বলছে।
কালু চাচা, তোমার কি মনে হয়, পৃথিবীর বাইরে অন্য কোথাও পশু পাখি প্রাণী আছে?
– হ একদম ঠিক কথা ,হুনছিলাম আছে।
– কোথায় ?
– পরীস্থানে । ঐ খানে শুধু পরীরা থাহে। মাঝে মাঝে হঠাৎ কইরা আমাগো দেশের ছোট ছোট সুন্দর ছেলে মেয়েদের
তুইলা হেগরে দেশে লইয়া যায়।
– তাই ?
– হ ।
– চাচা তোমাকে কি কখনো পরীরা তাদের দেশে নিয়েছিলো?
– তা অবশ্য নেয়নি । তয় আমার চেহারা সুন্দর খুবসুরত ছিল । মা সব সময় হাতের কাছেই রাখছে ,জিন পরীরা যেনো আমারে না নিতে পারে । আর তাবীজ কবজ তো ছিলই । দাদন ফকির আমাগো বান্ধা কবিরাজ । তার পানি পড়া ঝাড়ফুঁক কোনো কিছুই বাদ যায়নি।
– চমৎকার চাচা । তুমি তাহলে সুন্দর ছিলে ?
– হ , ছোট কালে ছিলাম।
– তাহলে তোমার নাম কালু কি করে হলো?
– এ আর এক কাহিনী ।
– কাহিনী? বলো শোনি।
– আমার বড় পাঁচ বোন, তার পরে একটা ভাই হইছিলো।
ভাইটা দেখতে খুব সুন্দর ছিল । মায়ে বাপে আদর কইরা নাম রাখছিলো সুরুতমিয়া । কিন্তু কলেরা রোগে সেই ভাইটা মারা যায়। মা বাবা বোনেরা সেই ভাইয়ের শোকে পাগল হয়ে গেছিলো।
– পরে আমার যখন জন্ম হয় , তখন দাদন ফকির আমার নাম রাখে কালু। এই দেখুন আমার কানে এহনো ফুটা আছে । এই কানের ফুটাতে সোনার দুল ছিল। আমার নানী দিছিলো । মারে নানী কইছিলো,মইল্যাদের কানে সোনার দুল পরন লাগে। আমার জন্মের আগেই ভাই মারা যায় তারপর আমার জন্ম হইছে । এইজন্য আমি হইলাম গিয়া মইল্যা কালু।
কালু চাচা নিশোর বাবার ব্যবসার কর্মচারী । বাসার বাজার ফুট ফরাইশ আগের মতই করে । বিশ্বস্ত,সরল মানুষ। সরল মানুষ গুলোর মায়া মমতা ভালোবাসা একটু বেশি হয় । অন্য কর্মচারীরা খবর না রাখলেও কালু চাচা ভূলে যায় নি । সেই আগের মতই রয়েছে।
কিন্তু সমস্যা হলো সখিনা বিবি আর কালু চাচা দুই জনের
ঝগড়া বিবাদ । দুজনেই সম পদ মর্যাদার মানুষ। ছোট খাটো বিষয় নিয়েই দুজনের মধ্যে খুনছুটি লেগেই থাকে । সুযোগ পেলেই হলো- কেউ কাউকে ছাড় দেয়না- কালু চাচা বাজার নিয়ে বাসায় ফিরছে।
সখিনা বিবি মাছ তরিতরকারি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে ।
– নাহ,কালু চাচা আইজও তুমি পঁচা মাছ বাজার থাইকা নিয়া আইছো।
– কি কইলি ফুকলা বুড়ি, আমি বাজার থাইকা পঁচা মাছ নিয়া আইছি।
– যতবড় মুখ না ততবড় কথা । তুই আমারে ফুকলা বুড়ি কইছস । আমারে তুই চিনস ,আমি হাইলাম জহুর সরদারের মাইয়া , হ্যা।
-খু-ব চিনি।
– খু-ব চিনি, কইলাম আর হইলো।
আরে তোরা এখন থাম।
-ঠিক আছে খালাম্মা, আপনি কইছেন তাই কালু চাচা পার পাইলো । নইলে আইজকা দেইখা দিতাম।
ঝগড়া বিবাদ থামলে নিশো সখিনা বিবি কে ডেকে কাছে এনে বলে-
– সখিনা বিবি তোমার বাবা তাহলে সরদার ছিল?
– হ বুবু , আমার বাপে বন্দর ঘাটের কুলি সরদার আছিল।
খুবই খানদানি কুলি সরদার আছিল । নাম জহুরউদ্দিন মানুষে ডাকতো জহুর সরদার । ইয়া বড় গোঁফ লম্বা চুল একদম সিংহের মত শক্তিশালী মানুষ। মানুষে যেমন ভয় পাইছে তেমন ইজ্জত দিছে।
বাবা আমারে কিযে আদর করছে বইলা কইয়া বুঝানো যাবো না। বন্দরে যখন আমি যাইতাম খাজা মিষ্টি রসগোল্লার হাঁড়ি পুরোটাই সামনে এনে দিতো কিযে মজা লাগছে ! এহনো মনে হইলে জিভে পানি চইল্যা আসে।
ঔ সময়ে চার আনা দিয়া আয়না চিরুনি আলতা কিনা দিছিল । আমি সারাদিন সাজূগোজু করে থাকতাম । খুবই সুন্দরী দেখা যাইতো।
– তো তোমাকে দেখে কেউ পছন্দ করে নাই।
– পছন্দ করে নাই , অনেকেই পছন্দ করেছে । কিন্তু বাবার ডরে ভয়ে কেউ মুখ খুলে কিছু বলে নাই।
কু নজর দিলে তো আর রক্ষা নাই। চোখ দুইডা তুইলা যমুনা নদীতে ছুড়ে ফেলবো।
– তোমাকে বিয়ে দিয়েছিল কেমন ঘরে ?
– সে অনেক কথা।
– আচ্ছা, বলো শোনি।
– বাবা আমারে বড় ঘর , ধনী দেইখা বিয়া দিছিল। আমার বিয়ার পর কপালে সুখ হয়নি।
– কেনো ?
– শোনতে যখন চাও বলি বুবু –
আমার স্বামী দেখতে খুবই খুবসুরত ছিল। উঁচা লম্বায় সুঠাম দেহের মানুষ, মিঠা মিঠা কথা কইতো আর যাত্রা পালা গানে ফুর্তি করতো , কোন কাম কাজ করতো না।‌ আলসে ছিল । ঘরে বইসা খাওন আর খাওন । জমিজমা বেইচা খাইতে খাইতে একদিন সব শেষ । আছে শুধু ভিটেমাটি।
– আচ্ছা তুমি কখনো পালা গান যাত্রা দেখতে যাও নি?
– হ বুবু দেখতে গেছিলাম । আল্লাহ রে কি যে কমু , এক্কেবারে ঠাসা দুঃখের কথা । মইরা গেলেও ভূলবো না।
-বলো শোনি।
– বলছি বুবু , তোমার কাছে কইয়া বুকটারে একটু খালি করি । অনেক দিন হয় কাউরে কইনা । কমু কার কাছে ,কে শোনবে আমার মতো গরীব দুঃখী মানুষের কথা। কেউ শোনবেনা। সবাই আমার কাম দেখে, আমার বুকের মধ্যে দুঃখ ব্যাথা আছে , তা কেউ‌ দেখে না।
হ বুবু যে কথা কইতে চাইছিলাম –
আমি সবার সামনে মাটিতে পা মুরাইয়া একদম গাইরা বইছি। পালা গান,নাচ গান হইল কি যে ,বে শরম মহিলা বেটিরা দেখলাম মাজা দোলাইয়া নাচলো গো , লজ্জা সরম ছাড়া বেহায়া ছুকরি । এই পঁচা যাত্রা গান কি লাইগা দেখবার আহে ?
একবার মনে হইলো বাড়িতে চইল্যা যাই । আবার ভাবলাম সোয়ামী নিয়া আইছে না বইলা যাওন ঠিক হবো না। কিছু কাল পরে নিজ চোখে দেইখা বিশ্বাস হইতেছে না। রাজার মতো সাজ পোশাক পরা মানুষটা আমার সোয়ামি । সোনায় জড়ানো পোশাক জুতা , মাথায় সোনার তাজ সোনার সিংহাসন। দিব্বি রাজাবাদশাহ নবাব শাহানশাহ। কিযে খুবছুরত কিযে সুন্দর লাগছে বইলা বুঝানো যাবে না।
একটু পরেই চোখ দুইডা কপালে উপরে উইঠা গেল। দুইডা চোখে আন্ধার কইরা ঝাঁপসা মতোন দেহি,।
কি কমু‌ দুঃখের কথা, আমার সোয়ামি রে গেইসা একবারে জড়াইয়া ধইরা কোন কার এক বেটি রাণীর মতন কইরা চিয়ারে বইসা রইলো।
দেইখা বুকটা ধড়াস কইরা ফাইটা চৌচির হবার মতন হইল। মাথায় একটা চক্কর মারলো দাঁত শক্ত কইরা কামড়ে ধইরা মাটিতে বইসা রইলাম।
– তারপর ?
– তারপর, বাড়িতে চইল্যা যাই। বাড়িতে যাইয়া কয়দিন আর তার লগে কোন কথা বার্তা কই নাই। তয় আমার সোয়ামি আমারে কইছে ওসব কিছুই না,রঙ্গ মঞ্চের অভিনয়। রঙ্গ মঞ্চের অভিনয় সত্যি না।
আবার এই কথাও কইছে এই দুনিয়াটা একটা রঙ্গ মঞ্চ।
এখানে আমারা সবাই এক জন আরেক জন রে লইয়া
অভিনয় করতাছি । মইরা গেলে সবার খেলা সাঙ্গ, ভঙ্গ হইবো। কেউ কারো আপন না।
দুঃখ বেদনা হাঁসি কান্না মোহ মায়া এসব মিলেই জীবন।আর জীবনের চলার পথ হচ্ছে লোকাল বাসের যাত্রীর মতো। কেউ সিট পায় আবার কেউ দাঁড়িয়ে যায়।
গাড়ী একই কিন্তু যাত্রীর স্টেশন ভিন্ন ভিন্ন। কেউ উঠে আবার কেউবা নেমে যায়। মৃত্যু নামক হিমশীতল পরশে জীবন নামের গাড়ী থেকে‌ কেউ বিদায় নেয় আবার নতুন কেউ আগমন করে।
চলবে,,,
May be an image of 3 people, including Md Shahidul Islam Talukder, people standing and indoor
৬ষ্ঠপর্ব
বাংলা নববর্ষ বাঙালী জাতির যেমন নব চেতনা জাগরণ ঘটে বৃক্ষ তরুলতায় পত্র পল্লবে নতুনের আগমনী বার্তা চোখে অনাবিল শান্তির শীতল পরশে হৃদেয়ে শিহরন জাগে৷
দোকানী ব্যবসায়ী নতুন বর্ষের হালখাতায় নানা রঙে নানা বর্ণের দাওয়াত কার্ডের আয়োজন চলে আবার নতুন বর্ষ বরনে বিভিন্ন সংগঠন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্ব স্ব আয়োজনে নতুন রঙে সাজে ৷
ক্ষুদ্র কুটির শিল্প তাদের তৈরী বাহারী পণ্য খোলা মাঠে . রাস্তার ধারে পশরা সাজিয়ে বসে ৷
শিশু কিশোর তরুণ তরুণী নব দম্পত্তি সবাই নতুন সাজে বেড়ানোর আনন্দে ছুটে চলে বিভিন্ন মেলায় ৷ কেউ খুশিতে মেতে উঠে খেলায় কেউ আবার নাগর দোলায় । বাদ যায়না বুড়া-বুড়ি ৷
বিন্নি ধানের খৈ ওখরা মোওয়া চিনি সাজের ঘোড়া মিষ্টির হাড়ি ফিন্নি-পায়েশে নতুন জামাই আদর। ধনী গরীব আর নানা ধর্মের বর্ণের মানুষগুলো একাকারে মিশে যায় ৷ এ যেনো চিরচেনা বাঙালী জাতির ঐতিহ্য বিনে সূতার মালার বন্ধন ৷
প্রতি বছরের মত এবছর উদিচী শিল্পী গোষ্ঠী সত্যেন সেন সঙ্গীত বিদ্যালয় নববর্ষ উদযাপনে “এসো হে বৈশাখ ” অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে৷ অণুষ্ঠানটি এবারও শহীদ মিনারের পাদদেশে অনুষ্ঠিত হবে ৷ মূল দায়িত্বে স্বপন সহাযোগিতায় দীপ নিশোর ভাই সজল আর তমা রায় I
তমা বিটিভি নতুন কূড়ির সঙ্গীত শিল্পী সুরেলা কন্ঠ ৷ সজল ভালোই গায় ৷ দীপের উপস্থাপনা সুন্দর কিন্তু গানের গলা বেস্বরা’৷ তারপরও মাঝো মধ্যে সবার সাথে গলা মিলিয়ে দু চারটি গান গাইতে হয় ।
তমা আর সজলের ভাব কমবেশী সবার নজর কাড়ে। জাতপাতের গন্ধ আছে চাইলেই সব সম্ভব হয়না। কিন্তু মন যে মানে না মানা। ফাক ফোকর পেলেই দুজনে গল্প জুড়ে দেয় ৷ সেজন্য কেউ কেউ বাকা নজরে দেখে আবার কেউ মজা করে ৷ এতে সজল তমা তেমন গায় মাখে না৷
অরণ্য সজলের ভালো বন্ধু ‘সময় সময় টিপনি কাটে গানে গানে দুজনকে নিয়ে মজা করে – অ .মালা পড়াবো কার গলে –
– তমা . দে আমার গলে পড়িয়ে দে ৷
– আমি যদি ‘তোর গলে পড়ে দেই সজলের মালার কি হবে ‘রে-
– ওসব নিয়ে তোকে ভাবতে হবেনা ৷ সজলের মালা গঙ্গার জলে পুজো দিবে। গঙ্গা দেবী নজর দিলে ওর ভাগ্য সুপ্রসন্ন হবে তারপর স্বর্গে গিয়ে অনন্তকাল দুজনে এক সাথে থাকবো জাতপাতের গন্ধ আর থাকবে না. I মামলা চুকে যাবে | কি বলিস?
– কি আর বলবো . কাব্য কথা আর বাস্তবা এক নয় ‘ ৷ কখনো কখনো পাহাড় সমান বাধা হয়ে দাড়ায় I
যে আগুনে রান্না হয় ‘সেই আগুনেই হাত পুডে।
যে আগুনে ফিন্নি-পায়েশ রান্না করে তৃপ্তি দেয় সেই আগুনেই পুড়ে যন্ত্রনা দেয় | যে প্রেম ভালোবাসা শন্তি সুখ দেয় সেই প্রেম ভালোবাসা আবার বুকে আগুন জ্বেলে পুড়ে ছাড়খাড় করে দেয় ৷
ভালোবাসার স্বপ্ন গুলো যেমন আনন্দের ‘বিরহ তেমন বেদনার৷ সিদ্ধান্ত তোদের ‘আবেগ কখনো কখনো চিতার কাষ্ঠ সাজায় আর ব্যর্থ প্রেম আগুন জ্বেলে বুকের ভিতর অজ্ঞার কালো কয়লা জনম ভর তুষের আগুনের মত দিকি দিকি জ্বলে l না মুখ খুলে বলা যায়, না বুক চিড়ে দেখানো যায় |
– তমা কথা না বলে নিঃশব্দে চলে যায়।
দীপ কণ্ঠ সাজানোর চিন্তা করে সা রে গা মা পা ধা নি সা গলা ছেড়ে গাইতে থাকে ৷ একে তো বেস্বরা কন্ঠ তার মধ্যে সা_ রে গা মা – সাজ সকালে কার শুনাতে ভালো লাগে ৷ পাশের বাসার খালাম্মা দীপকে ইঙ্গিত করে বলে অজকাল তাহলে সকালে আল্লাহর নাম না নিয়ে তোমার সুরলা কন্ঠের সা রে গা মা শুনাবো কি বলো?
কথা গুলো দীপের কান পর্যন্ত পৌছায়। দীপ লজ্জিত ভাবলো এসব এখানে আর চলবে না। দীপ স্বপন ভাইকে সব খোলে বলে ৷ স্বপন ভাই আনন্দ চক্রবর্তী ওস্তাদের কথা বলে তার কাছে তালিম নিলে ভালো হবে।
আনন্দ চক্রবর্তী দীপের পূর্ব পরিচিত এবং ভালো সর্ম্পক আছে। সত্যেনসেন সঙ্গীত বিদ্যালয়ে দুই তিন বছরের যাতায়াত ‘পরিচিতি সেই তখন থেকেই ৷
আনন্দ চক্রবর্তী দীপকে সানন্দে গ্রহণ করে তিনি জানেন দীপ ভালো ছেলে ৷ দীপ বাসায় এসে সঙ্গীত চর্চা করলে ভালোই হবে । তাছাড়া নিজের ছেলেটা দীপের কাছে গণিত বিজ্ঞান শিখতে পারবে ৷ দীপের কথা শুনে ওস্তাদজির মা বেশ খুশি হয় ৷ নিজের ছেলে সব সময় গান নিয়ে থাকে নাতি চঞ্চলের লেখা পড়ার খবর কে রাখে ৷
ওস্তাদজি দীপকে বলেন -তোমার জন্যে আমার দোয়ার সব সময় খোলা ৷ সকাল বিকেল আর সন্ধ্যে যে কোন সময় আমার বাসায় সঙ্গীত চর্চা করতে পারো ৷
– ঠিক আছে ওস্তাদজি . আগামীকালই আসবো ৷
ওস্তাদজি ‘নজরুল সঙ্গীত প্রিয় একজন প্রতিযসা সঙ্গীত গুরু I সঙ্গীত অঙ্গনে সকলের প্রিয় মুখ ৷ সঙ্গীতের নাড়ী নক্ষত্র সুর আর যন্ত্রের যাদুকর হারমনিয়াম তবলা যন্ত্রগুলো যেনো তার কন্ঠের ভাষা বুঝে। তাল লয় ছন্দ সুরের ধারা এক অসাধারণ সঙ্গীতের ধনাগার ৷
দোষ গুন বলতে একটিই নজরুল সঙ্গীত তার ধ্যানজ্ঞান অন্য কোন সঙ্গীত পছন্দ নয় ৷ তার হারমনিয়াম তবলা শুধু নজরুলের গান গায় ৷ তিনি নজরুল গুনগ্রাহী নজরুল প্রেমিক একজন নজরুল সঙ্গীত সাধক ৷
যৌবনের শুরুতেই সঙ্গীতের প্রেমে পড়ে ওপারে ভারতে মিয়া তানসেন সঙ্গীতবিদ্যালায়ে চলে যান পরিবারকে না বলে অনেকটা চুপিসারে ৷ বাবা মায়ের একমাত্র পুত্র সন্তান জানাজানি হলে যেতে নাও দিতে পারে সেজন্যে পালিয়ে চুপিসারে চলে যাওয়া ৷ তবে যাবার সময় পত্র লিখে রেখে যান ৷
প্রথম প্রথম একটু কষ্ট হয়েছে ৷ থাকা খাবার দাবার নতুন জায়গা অপরিচিত লোকজন । টাকা পরসা যা নিয়েছিল
কয়দিন যেতে না যেতেই শেষ ৷ পরে একটি টি স্টলে বয়ের চাকরি মাঝো মধ্যে বাবা দেশে থেকে কিছু টাকা পাঠাতেন বেশ ভালোই চলছিল ৷
টি স্টলে নির্ধারিত সময় পরে সঙ্গীত বিদ্যালয়ে গিয়ে নিজের সাধনায় রত থেকে উচ্চাঙ্গ এবং ক্লাসিক্যাল সঙ্গীতে তালিম নিতেন ৷
সুরেলা কন্ঠ বাচন ভঙ্গী আকর্ষনীয় চেহারা অনেকের নজরে আসে ৷ পরে একজন দূর আত্মীয় মাসির ভাইয়ের সহযোগিতায় তানসেন সঙ্গীত বিদ্যালয়ে ছোট একটি চাকুরি জুটে যায় । স্বপ্ন পুরন এখন হাতের মুঠোয় ৷ সুনামধন্য প্রখ্যাত অনেক গুনি শিল্পি সঙ্গীত গুরুর সানিধ্যে থেকে নিজেকে সঙ্গীত সুধার পিপাসা পূরণ করা এখন সময়ের ব্যাপার I
কানন দেবী চেহারার লাবন্যতা আকষণীয় ফিগার কলিকাতা থেকে সেও এসেছে সঙ্গীতে তালিমের জন্যে ৷
চেনা জানা ভালো লাগা আর সময়ের দাবী ভালোবাসা কিন্তু ভাগ্যদেবী সুপ্রসন্ন হয়নি তাই হৃদয়ের কোঠরিতে জেগে আছে একটি ছবি একটি নাম কানন দেবী ৷
কত যে কথা কত যে স্মৃতি কত যে গান দুটি হৃদয়ের ডোরে বেঁধেছিল আশা আর স্বপ্ন আর ভালোবাসায় দু জন দুজনাকে নিয়ে ৷
নিরবে আজো ভালোবাসার বেদিতে পুম্প পূজো ছায়া পড়ে ৷ কখনো মনের অজান্তে গানের সুরে বেজে উঠে- –
কত দিন দেখিনি তোমায় –
তবু মনে পড়ে তব মুখ খানি –
দীপ ওস্তাদজির বাসায় গেটে লক করলে চঞ্চল গেট খুলে দেয় ৷ চঞ্চল ওস্তাদজির ছেলে তাকে আগে থেকেই দীপ চিনে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে চঞ্চল ওস্তাদজির সাথে যেতো ৷ দীপকে দেখে চঞ্চল বলে – আদাব দীপ দা ৷৷
ভিতরে এসো ৷ তুমি আসবে বাবা আগেই বলেছে ৷
– তাই ৷
– হ্যা ৷
ওস্তাদজির মা- কে রে চঞ্চল ?
-কে আবার দীপ দা এসেছে।
– ওকে ভিতরে নিয়ে এসো ৷
– চলো দীপ দা ৷
দীপ ভিতরে যেতেই দেখে ঘরের দরজার ওস্তাদজির মা ধান দুর্বা ফুল চন্দন চাটাই বাতি ঢালা সাজিয়ে দাড়িয়ে আছেন৷
দীপ ওস্তাদজির মায়ের সামনে যেতেই তিনি ধান দুর্বা ফুল দিয়ে মাথার ছিটিয়ে কপালে চন্দনের টিপ দিয়ে ঢালায় রাখা চাটাই বাতি মুখের সামনে ঘুড়িয়ে ওলো ধ্বনি দেয় ৷
দীপ মুসলিম ঘরের সন্তান বিষয়টি তার জীবনে প্রথম ৷ তার কাছে কৌতহলী এক নতুন অভিজ্ঞতা।
দীপ ভেতরে ড্রইং রুমে বসে চা বিস্কুট খায় আর
ভাবে .বয়স যাই হোক ছোট বেলা থেকেই অনেক সোনাতন ধর্মের মানুষের বাসা বাড়ীতে যাতায়াত আছে অনেকের সাথে বন্ধুত্ব সখ্যতাও আছে এমনাতো কখনো কোন দিন হয়নি ।আজ এমনটি হলো ‘ ?
ভাবনার মাঝেই চঞ্চল আর দিদিমা ড্রইং রুমে এসে বলেন –
– কি দীপ ? ভাবনায় ফেলে দিয়েছি তাই না ?
– না. তা অবশ্য না ৷ তবে আমার জীবনে এটাই প্রথম ঘটনা ৷ এর আগে কখনো এমনটি হয়নি ৷
– শোন, বাংলা নববর্ষ শুরু হতে চলেছে পুরাতন কে ঝেড়ে ফেলে নতুন কে বরণ করার সময় এসেছে ৷
তাই আজ তোমাকে নতুনের জয় ধ্বনি দিয়ে বরণ করলাম আর আর্শিবাদ করে ঘরে তুলে নিলাম ৷ঈশ্বর তোমার মঙ্গল করুন তুমি যেনো শত বর্ষ আয়ু পেয়ে মানুষের কল্যাণ করতে পারো ,বুঝলে ৷
– দীপ মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলে ৷
ভালোবাসার কোন জাত নাই। চাঁদের জোছনা যেমন সবার বাগানে আলোর স্নিগ্নতা ছড়ায় ফুলের গন্ধ যেমন সবার হৃদয় ছুয়ে যায় নির্মল পবিত্র ভালোবাসাও তেমন হৃদয়ের গভীরে স্পন্দন যা বুকের মাঝে শিহরন জাগে দোলা দিয়ে সেতু বন্ধন তৈরী করে।৷
করিম চাচা সহজ সরল মানুষ সঙ্গীত বিদ্যালয় তালা খোলা আর একটু ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার পরিছন্ন রাখা তার চাকুরী । যৌবন কালে কালু গাজীর পালা গান করতেন ‘ সেজন্যে তার নাম ডাক কদর ছিলো ৷
সিনেমা টেলিভিশন যুগে আস্তে আস্তে কালু গাজীর পালাগান পুরাতন জিনিস পত্রের মত আজ অবহেলিত I এক সময় সবাই ভুলে যায় ৷ যৌবন কালের সেই ধারও আর নেই।
বেঁচে থাকতে হলে কিছু একটা করতে হয়। তাই এ কাজটুকুই তার বেঁচে থাকার অবলম্বন ৷ ছোট বেলা থেকেই গান বাজনা ভালো লাগে তাই এ সঙ্গীত বিদ্যালয় তার মনের খোরাকের জায়গা ৷
করিম চাচা সবার প্রিয় মানুষ চা পান যার যেটা চাই অল্প সময়ে হাজির । দুঃখী মানুষ কিন্তু মুখে সব সময় হাসি লেগে থাকে ৷ কেউ জিজ্ঞাসা করলে বলে – মুখের হাসি টুকুই সম্বল ৷ মুখের হাসি দিয়া বুকের দুঃখ ব্যথা ঢাইকা রাখছি ৷
দীপ’ করিম চাচাকে জিজ্ঞাস করে – চাচা . কিসের জন্যে তোমার এত দুঃখ ব্যাথা ‘?
-কি আর বলবো বাবা ৷ আমি গরীব দুঃখী মানুষ
দুঃখ বেদনা যন্ত্রণার কথা শুনে কি হবে?
এসব তো আমাদের জীবন সঙ্গী ৷ রাইতে যেমন জোনাই পোঁকা মিটি মিটি বাতি জ্বলে ঝি ঝি যেমন বুকের ব্যথা নিয়া রাত জাইগা করুন সুরে গান করে তেমনি আমাদের মত দুঃখী মানুষের বুকের মধ্যে দুঃখ বেদনার জ্বালা গুলো জ্বলে আর চিম চিম কইরা বাজে ৷
কান পাতলেও শুনা যায় না আর চোখ থাকলেও দেখান যায় না।
বাড়ী ছিলো ঘর ছিলো হালের গরু আর ফসলের জমি ‘ সুখের সংসার সবই ছিলো ৷ সর্বনাশা যমুনা নদী সব কাইড়া নিয়া নি:স্ব কইরা গেছে ৷
আমাদের চোখে কোন পানি নাই ৷ আমাদের চোখের পানি যমুনার বুকে ভাসাইয়া দিছি ৷ যমুনা সেই পানি সাগরে নিয়া গেছে ৷ আমাদের মত সব দুঃখী মানুষের চোখের নোনা পানি সাগরে গিয়া সাগরের পানি লোনা হইছে ৷
যেই দিন আমার ঘরটা ভাইঙ্গা নেয় হেই দিন খুব কানছিলাম ৷ কইছিলাম যমুনারে তোর দোহাই লাগে আমার আর ময়নার ভালোবাসার ঘরটা তুই ভাইঙ্গা নিস না ৷ আমার কান্দন শুনে নাই. I ঘরের খুটি আমি আর ময়না খুব শক্ত কইরা বুকে আগলে ধরছিলাম. রাখতে পারি নাই।
আমি যখন পালাগান করতাম পাশের গ্রামের ময়না বিবি আমারে দেইখা পছন্দ করে ৷ একদিন ময়না আমারে আড়ালে ডাইকা নিয়া একটা কাগজে লেখা আমার হাতে দেয় ৷ আমরা দুইজনেই পাঠশালা পাশ করছি ৷ ভাঙ্গা ভাঙ্গা হাতের লেখা দেইখা বুকের মধ্যে দুক দুক দুক দুক করতে লাগলো ‘ ৷
কি আর কমু কয় দিন যে লেখাটা পড়ছি আর রাইতে দেখতে দেখতে কল্পনায় রাইত পোহাইয়া ভোর হইছে ।
তারপর স্বপ্ন পুরণ হয় ‘ ময়না বিবিরে বউ কইরা ঘরে আনি ৷ কিযে আনন্দের দিন আছিলো ৷
বাজার থাইকা আলতা স্নো পাউডার নতুন জামা কাপড় আইনা দিতাম ৷ কি যে সুন্দর লাগতো একদম পরির মতো করে সাজগোজ করতো । কথা গুলো বলতে বলতে করিম চাচার চোখ দুটি আনন্দে চকচক করে উঠে ৷
আমাগেো দুই জনের সেই সুখ বেশি দিন সয় নাই ৷
যমুনা আমার বাড়ী নিলো ঘর নিলো সহায় সম্বল সব কাইরা নিলো ৷ তারপর রেলস্টেশনে দুচালা টিনের জুপড়ি ঘরে ভাড়া কইরা দুই জনে হাড়ি পাতিল থালা বাসন নিয়া আবার সংসার পাতি ৷
দিনে রিক্সা চালাইয়া যা আয় হইতো তা দিয়া দুই জনের পেট ভালোই চলছিল ৷ রাইতে খাইয়া দাইয়া গল্প কইরা ঘুমাইয়া যাইতাম ৷ ভালোবাসার কুড়ে ঘরেও আনন্দ সুখ আছিলো ৷
– সেই সুখ ও বেশি দিন কপালে সয় নাই ৷ রিক্সা চালিয়ে যা আয় হইতো তা দিয়া তিন বেলা আহার জুইটা যাইত। কিন্তু কিছু দিন যাইতে না যাইতেই ময়না বিবির কঠিন অসুখ হইল ৷ ঔষধ পথ্য ডাক্তারের ভিজিট এর জন্যে পরিশ্রম বাড়াইয়া দেই ৷ একটু বাড়তি আয়ে কিছু দিন ভালোই চইলা যায় ৷
দিন যায় ময়নার অসুখ বাড়তে থাকে ঔষধ পথ্যের দাম আর কুলাইতে পারিনা ৷ জ্বর এতো বাইড়া যায় যে ময়না আমারে কাম্বল দিয়া শক্ত কইরা বুকে চাইপা ধরতে কয়’ | আমি ময়না রে শক্ত কইরা বুকের মধ্যে চাইপা ধরি ৷
ময়না ভয় পায় আর কয়.তুমি আমারে শক্ত কইরা ধরো আমি জানি কোথায় উইড়া যাইতাছি ৷ আমি আরো শক্ত কইরা বুকে চাইপা ধরি ৷ ময়নার কথা অন্তে আস্তে থাইমা যায় একটু পর কোন সারা শব্দ না পাইয়া মুখটা ভালো কইরা চাইয়া দেহি মুখে কথা নাই , নাকে নিশ্বাস ও নাই।
ময়না ময়না করে ডাকি কোন সারা শব্দ নাই – আমার ময়না পাখি আমারে ফাঁকি দিয়া উইড়া গেছে ৷ আমার ময়না রে বুকে জড়াইয়া চিৎকার দিয়া অজ্ঞান হইয়া যাই ৷ আশে পাশের মানুষ আইসা আমারে মাথায় পানি দিয়া ঠিক ঠাক করে ৷
ময়নারে সাদা কাপড় পড়াইয়া দোলানায় চড়াইয়া কান্দে কইরা কবরে নিয়া যাই ৷ কবরে নামাই শেষ বার আমার ময়নার মুখটা একটু দেইখা নেই ৷ হঠাৎ দুই ফোটা চোখের পানি ময়নার কাপনের কাপড়ে পড়ে। মাটি দিয়া সোনা মুখটা ঢাইকা দিয়া চইলা আসি ৷
যেই ঘরে আমার ময়না নাই হেই ঘরে আমি থাকি কেমনে ৷ সব কিছু মানুষেরে দিয়া চইলা আইছি ৷
একদিন রাইতে ঘুমাইয়া স্বপ্নে দেখি ময়না আমারে কইতাছে তোমার চোখের দুই ফোটা পানি ফুলের গন্ধের সাথে মিশা তোমার গায়ের গন্ধ আমাকে বেহেস্তের শান্তি দেয় আর বললো সে আমার জন্যে অপেক্ষায় আছে ৷ সময় হলে যেনো আমি তার কাছে চইলা যাই ৷
আমার যেখানে ঘর বাড়ী ছিলো এখন আবার সেখানে চর পড়ছে ৷ মানুষ ঘর বাড়ী বানাইয়া জমিতে ফসল বুনছে ৷ অনেকেই সুখের সংসার পাতছে ৷
আমি একবার গেছিলাম ‘ ৷ যমুনা নদীরে কইলাম তুই তো আমার বাড়ী ঘরের ভিটামাটিতে আবার চর ফিরাইয়া দিলি ‘তুই কি আমার সুখের সংসার আমার সোনামুখ ময়নারে ফিরাইয়া দিতে পারবি ? পারবি না l
প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে দু:খ বেদনা থাকে কারো চোখে জল ঝড়ে আবার কেউ হাসিতে আড়াল করে ৷
কখনো চৈতের খড়তাপে সুকোমল হৃদয়ের ভালোবাসার স্বপ্ন ধূসর হয়ে যায় আবার কখনো কালবৈশাখী ঝড়ে ভেঙ্গে যায় স্বপ্নের সাজানো বাসর ৷
চলবে –
May be an image of Md Shahidul Islam Talukder, standing, outdoors and text that says "Camera"
৭ম পর্ব
শুক্রবার // শরৎকাল
মেঘলা আকাশ , মাথার উপর মেঘের ভেলা সাদা কাশফুলের পাঁপড়ি মেখে পাল উড়িয়ে ভেসে চলছে। মেঘের ফাকে ফাকে সূর্যের লোকচোরি খেলা ৷ সকালে পাগলা হাওয়ার সাথে একটু গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে পত্র পল্লব ধরনীর ধুলী কণায় শীতল পরশের আবেশ I
প্রতিদিনের মত আজও কলেজে যেতে একটু পায়ে হেটে বাস স্টেশনে যেতেই রাস্তায় কমলার সাথে দীপের দেখা-
– কোথায় যাচ্ছ ?
– খালাম্মার বাসায় ।
– ‌বিকেলে‌ আমাদের এ দিকে আসবে তো।
– কাজ যখন করি যাইতে তো হবেই ।
– ঠিক আছে, তাহলে তখন কথা হবে।
গরীব ঘরের মেয়ে , কথাবার্তায় কাজেকর্মে আচার আচরণে ভালোই । ঘরের কাজ যেমন দক্ষতার সাথে করে তেমনি বিশ্বস্ত। যখন যে পরিবারে কাজ করে সে পরিবারের মানুষই যেনো তার আপনজন।তাঁরাও কমলাকে সেভাবেই দেখে ।
প্রত্যেক মানুষ তার নিজের জীবনকে সুখী সুন্দর আর আনন্দময় করতে চায়। তবে ব্যতিক্রম কিছু কিছু ঘটনা সবার জীবনেই ঘটে। সমাজে বহুরূপী ছদ্ধবেশী মানুষ তো আছেই। লোভ লালসা,না না জাত বে জাতের বিষবৃক্ষ ছায়াদানের ছলনায় প্রতারণার ফাঁদ ছায়ার মতো আমাদের পিছে লেগেই আছে। তার সুযোগ সন্ধানী হিংস্র থাবা প্রত্যেকের জীবনেই কমবেশি কোন না কোন ভাবে আঁচ লাগে।
অল্প বয়সে বাবা কে হারিয়ে লেখা পড়া পাঠশালা পর্যন্তই ইতি টানতে হয়েছে। তার বিয়ে হয়েছে সেই বয়সেই । বয়য় তখন কতো আর হবে? বড়জোর তেরো চৌদ্দ। অভাবী ঘরের মেয়েদের এই তো অনেক। অতি উৎসাহী প্রতিবেশী আত্বীয় স্বজনের মতামত ফেলে দেবার মতো নয়।
ছেলে কেমন তা দেখার এতো সময় কোথায়? পাত্র পেয়েছো তো ভাগ্যিস ভালো। জলদি বিয়ে দিয়ে দাও।
পাড়ার উঠতি বয়সী ছেলেদের নজর তো আর কালো ধলা বুঝে না।
কথায় বলে না, যৌবনে কাক দেখতেও সুন্দরী । কখন কি হয় বলা তো যায় না। তাছাড়া শুভ কাজে দেরি করেতে নেই । যতো শিঘ্রই হয় ততই মঙ্গল।
গ্রাম চাচা পাঁচ হাজার টাকা দেনমোহর ধার্য করেন, দুই হাজার টাকা নগদ বুঝাইয়া দিয়া তিন হাজার টাকা বাকি রাখিয়া কমলার কাছে শুভ বিবাহের পয়গাম প্রেরণ-
তিন কবুল শর্ত পূরণ কদমা বাতাসা বিতরণ । শুরু হয় নতুন দাম্পত্য জীবন।
গরীবের আবার মঙ্গল অমঙ্গল। বিয়ের পর ভালোই চলছিলো।এক অভাবী ঘর ছেড়ে আরেক অভাবী ঘর সংসারের জীবন। স্বামী শহরে রিকশা চালায়।বছর কয়েক যেতে না যেতেই শহরে অন্য একটি মেয়েকে বিয়ে করে সংসার পেতেছে।
বাড়িতে বউ বাচ্চার খবর এখন আর নেয় না। বাচ্চা ছেলেটি দিন দিন বড় হচ্ছে, । তার তো চাহিদা আছে। নিজের পেট পীঠো আছে, শুধু ধার দেনার চাল পানি খেয়ে ঘরে বসে জীবন চলেনা। কিছু একটা করতে হবে।
অন্য কোন উপায় না পেয়ে শহরে ঝিয়ের কাজ করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন নিয়ে বুকের ধন ছোট ছেলেটি মায়ের কাছে রেখে চলে এসেছে।
রান্নাবান্না করা বাসনকোসন, কাপড় চোপড় ‌ধৌত করা বাসাবাড়িতে ঝাড়ু আর ধোয়া মোছা। এসব কাজে কমলার এখন আর খারাপ লাগে না। কয়েক বাসাবাড়ি
মিলে সকাল বিকাল কাজ করে মাস শেষে আয় রোজগার ভালোই হয়।
নতুন টাকা পেলে সেগুলো খরচ না করে যতনে রেখে দেয়। মাঝে মধ্যে জমানো নতুন টাকা গুলো দেখে আর গন্ধ শুঁকে নেয় । নতুন টাকার গন্ধ কমলার কাছে ভালো লাগে। জীবনে কখনো এতো টাকা হাতিয়ে দেখেনি। না বাবা মায়ের ঘরে,না স্বামীর ঘরে। টাকার গন্ধ আর টাকা হাতিয়ে যে আনন্দ তা দুঃখ বেদনা ভুলে কমলা সুখের স্বপ্ন বুনে।
ঠিকানা বলতে ভাড়া করা দু চালা টিনের ঘর। সকালে কাজে চলে যায় ফিরতে কখনো কখনো বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যার ছায়া নেমে আসে। রাতের খাবার নিজের বাসায় খেয়ে নেয়। সকল দুপুরে কাজের মধ্যে অন্য বাসা বাড়িতেই খাবার হয়ে যায়। .
তেমন বাড়তি খরচ হয় না বললেই চলে। কোনো সময় আবার দু এক বসা বাড়ি থেকে বারতি তরিতরকারি পিঁয়াজ মরিচ তেল মশলা , কখনো আবার মাছ মাংস দিয়ে দেয়। পুরো মাস এভাবেই চলে ।
নিজের খাবার নিয়ে এতো ভাবে না। গ্রামের বাড়িতে খেয়ে না খেয়ে উপোস থাকতে হয়েছে । তার চেয়ে এখন অনেক ভালো আছে । নিজের স্বাধীন ভাবে কাজ করে খেয়ে বেঁচে থাকার আনন্দই আলাদা।
রকি ছেলে এতোটুকু বয়সেই দুষ্টের শিরোমণি।সব সময় হাতের কাছে যা পায় তাই ছুড়ে মারে।সুযোগ পেলেই গায়ে চিমটি কাটে।
অনেক সময় কষে চড় মারতে ইচ্ছে করে ছোট বলে কিছু বলা হয়না। কিন্তু বাপটা কমলা কে দেখলেই কেমন যেনো ড্যাপ ড্যাব কইরা চাইয়া থাকে।
দিন যায় লোকটি স্বভাব আচরণ সন্দেহজনক মনে হতে থাকে। পেটের দায়ে কাজ করে খেতে এসেছি। নিজেকে বিকিয়ে দিতে নয়। কমলা কাজটা ছেড়ে দেয়।
রকির মা অনেক চেষ্টা করেও কমলা কে রাখতে পারে নাই। জানতে চায় কেনো সে চলে যাবে? কিন্তু কমলা কোন কথা বলে না। সে ভাবে বলে কি হবে।নিজের বুঝ আর বুদ্ধি নিয়ে চালাই ভালো।
স্বামীর কথা এখন আর ভাবে না। ভাবনা এখন শুধুই ছেলেটাকে নিয়ে । ছেলেকে মানুষের মতো মানুষ করা। কমলা অন্য আর দশজনের মতোই ভাগ্য বিশ্বাস করে । শরীর গতর খাটিয়ে কাজ করে বেঁচে থাকা গরীব মানুষের তাকদির ভাগ্য বিধাতার হাতে থাকে । আজকের দরিদ্র অভাবী জীবন তার কপালেরই লিখন।
একবার মোল্লা বাড়ির খালাম্মা কমলাকে জিঙ্ঘাসা কিরেন ,
– শবে বরাতের রাতে নামাজ কলাম পড়ে কি দোয়া করিস নি?
– কমলার সোজাসাপ্টা জবাব -না।
– কেনো রে?
– কেনো আবার । ও সব কইরা কি হইবে? গরীবের আবার শবে বরাত ।
– আরে বোকা, তুই জানিস না! এটা হচ্ছে ভাগ্য রজনী।এই রাতে মানুষ সহ সকল প্রাণীর ভাগ্য লিখন হয়। আগামী এক বছরের প্রতিটি প্রাণীর তকদির জন্ম
হায়াত মওত রিজেক ধন দৌলত সবাই লিখন হয়।
এতো সুন্দর একটা রজনী তুই হেলায় হারালি।
– শোনেন খালাম্মা, সারারাত জাইগা দোয়া কালাম জপতফ কইরা যখন ভোর হইবে তখন আল্লাহ তাআলা তকদির লেখক ফেরেস্তাকে ডাইকা কইবো অ অমুক ফেরেস্তা তোমার কি সবার ভাগ্য লেখা হইছে? তখন তকদির লেখক ফেরেস্তা কইবো,হ্ আল্লাহ তাআলা সবার ভাগ্যে লেখা হইছে। তাহলে কমলার তকদিরে এ বছর কি লেইখাছো?
ওহে দয়াময়, সবার ভাগ্য লেখার পরে মোল্লা বাড়ির সকলের ভাগ্য লিখি, এরপর আরশ মৌলায় দেখতে পাইলাম গত বার যা ছিলো এবারেও কমলার তকদিরে তাই আছে। মোল্লা বাড়ির ঝিয়ের কাজ ।
আমার মতো গরীবের ভাগ্য যদি বদলায় তাহলে ধনী বড়লোকের বাসাবাড়িতে কাজ করবে কে ?
– তুই আস্ত একটা পাগলের মতো কথা বললি।
– হ খালাম্মা, আমরা গরীব মানুষ। আমাদের কথা পাগলের মতো মনে হবে। গরীব মানুষের কথার দাম কেউ দেয়,? দেয় না। আমি যতটুকু জানি আল্লাহ তাআলা আমাদের জন্মের আগেই তকদির লেইখা দেন । আমার কর্ম আমার ধর্ম আমার জীবন আমার মরণ।
অভাবের তাড়নায় লেখাপড়া তেমন করতে না পারলেও পাঠশালা পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি। হাতের কাছে বই পাইলে পইড়া নেই । আমার বই পড়তে ভালো লাগে। কিন্তু ভাগ্য বিধাতা কপালে লেখা পড়া রাখে নাই। তাই হয় নাই।
কাজ করে দুবেলা দুমুঠো খাইয়া পইড়া বাইচা আছি এই তো অনেক।
আমি হতদরিদ্র মেয়ে মানুষ, স্বামী থাইকাও নাই ।
দুঃখ যাতনা আমাদের পরম আত্মীয়ের মতো না চাইতেই সব সময়ই পাশে থাকে। তারপরও বুঝি দুনিয়াটা চিরস্থায়ী নয়।
কেউ এখানে চিরদিন বাইচা থাকে না। সামান্য অল্প কয় দিনের জিন্দিগি । নিঃ .শ্বাস প্রশ্বাস থাইমা গেলে চোখ দুইটা বন্ধ হইয়া যাবো। মরনের পরে ধনী গরীব আপনি আমি একই ঠিকানায় চলে যাবো । এই হলো দুই দিনের দুনিয়া ।
আপনাদের ঘরে আমার রুটিরুজি । আপনি আমার মায়ের মতো আপনজন। আমার মতো মূর্খের মুখে এসব কথা বলা বেয়াদবি । তাই বলছি ,মাফ কইরা দিয়েন খালাম্মা।
– শোন ,‌ অনেক কথাই বললি। বলছি না ,সবই খারাপ বলেছিস । তগদির বলতে শুধু মাত্র ধনদৌলত না। সুখ শান্তি হাসি আনন্দ জীবনের নিরাপত্তা সুস্থ দেহ ও মন এবং পরকালে মুক্তি দোজখ বেহেস্ত এসবই তগদির।
খালাম্মা ভালো মানুষ। জীবনের অনেক ঘটনাই কমলা কে বলেন।সময় সময় মাথায় তেল দিয়ে মালিশ করে দেয়। কাজের ফাঁকে ফাঁকে জীবনের না না ঘটনা অসম্ভব সুন্দর কথা গুলো গুছিয়ে চমৎকার করে বলেন।
খালাম্মা আজকে জীবনের ফেলে আসা অতীতের স্মৃতি বিজড়িত কিছু ঘটনা বলেন-
সে সময় ছোটবেলায় মেয়েদের বিয়ে হয়ে যেতো। লেখা পড়া বলতে যা বুঝায় তা এখনকার মতো ছিলো না। এই বড়জোড় সিপারা কায়দা নামায কোরআন কালাম। ঘরে বসে কিছু বাংলা বর্ণমালা পরিচয়। হাজী বাড়ির মেয়ে , বাপ চাচারা ছিলেন মৌলভি মৌলানা খানদানি বংশ ।
বাড়ির পাশেই পাঠশালা পড়তে যাওয়া একদম নিষেধ । তারপরও নিজের ইচ্ছা চেষ্টায় কিছু পাঠ শিখে নিয়েছি ।মেয়েদের একা বাড়ির বাইরে যাওয়া বারন ছিলো । বাপ চাচা কে খুব ভয় পেতাম।
গল্পের বই পড়তে ইচ্ছে হতো। ইচ্ছে হলেই তো আর হবে না , ওসব বই বাড়ির আঙিনায় আনার সাহস কারো ছিলনা । কি আর করা, বড়দের কাছ থেকেই শোনতে হতো না না দেশ দুনিয়ার গল্প কাহিনী।
বড় চাচা জাহাজে করে হজ্বে যাবেন। ছয়মাস আগে থেকেই সব কিছু গুছানো হলো ,জমি সম্পত্তি সবার হক বুঝিয়ে দিলেন।আর যদি ফিরে আসা না হয়।
ছয় মাসের পথ, আত্মীয় স্বজন বাড়িতে এসে ভীড় করছে । সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সেই যে তিনি হজ্বে চলে গেলেন আর ফিরে আসেনি।
চাচা হজ্বে যাবার আগেই আমার বিয়ে হয় , বিয়েও হয় ধনী ঘরে । বিয়েতে পাড়া গায়ের মানুষ আত্মীয় স্বজন খুশিতে আনন্দে কয়েক দিন মেতে ছিল। সে কিযে আনন্দ বলে বূঝানো যাবে না।
আমার শশুর অনেক ধনী ‌ নামীদামী মানুষ ছিলেন। আমাকে হাতির পিঠে করে নিয়ে যান। শত শত মানুষ রাস্তায় দুই পাশে দাঁড়িয়ে দেখছিল।
আমার অনেক সময় হাসি পেতো। কেনো জানিস, লোকজন রাস্তার মাঝে মাঝে কলাগাছ দিয়ে গেট সাজিয়ে রেখেছিল । হাতী এক একটা করে সাজানো গেট ভেঙ্গে খেয়ে ফেলেছে । অবশ্য আমার শশুর সবাই কে সম্মানী দিয়েছেন ।
আমি বাবার খুবই আদুরে মেয়ে ছিলাম। ছোট ভাইটি ছিলো চোখের মণি।সব সময়ই তাকে নিজের হাতে খাইয়ে দিতাম। একই বিছানায় ঘুমাতাম ।গল্প বলা খেলা আর খুনসুটি বিনা সুতার মালার মতো জড়ানো জীবন।
মা বাবা একমাত্র ভাই পরিবার রেখে নতুন অপরিচিত জায়গায় যাওয়া কত যে কষ্টের বেদনার সে কথা কি বলবো। বিদায় বেলায় বাবা আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে হাউ মাউ করে কেঁদে ছিল, আজো সেই মূহূর্তের স্মৃতি গুলো ভূলিনি ।
নিশোর অবস্থা দেখে দীপের মাথায় ভাবনাগুলো জালের মতো চেপে ধরেছে। মানুষ মানুষের জন্যে আর জীবন জীবনের জন্যে এ গান যেনো প্রতিনিয়ত তার বুকের ভেতর বেজে ওঠে। অহর্নিশি কি যেনো এক মায়ার বাঁধনে বাঁধা পড়েছে।
প্রতি মাসে নিশোর রক্ত নিতে হয়। ভালো রক্তের ডোনার খুবই প্রয়োজন।
কমলা কাজের মেয়ে হলেও পরিচ্ছন্ন গোছালো ভালো মেয়ে। বাসাবাড়িতে ঝিয়ের কাজের সুবাদে কমলার সাথে দীপের পরিচয়।
দীপ কমলা কে তার রক্তের গ্রুপ কি জানতে চায়।
কমলা গ্রামের মানুষ কখনো রক্তের গ্রুপ জানার প্রয়োজন পড়ে নি। দীপ কমলার কথায় বুঝতে পেরে তাকে রক্তের গ্রুপ পরীক্ষার কথা বলে।
– কমলা, তোমার যেহেতু রক্তের গ্রুপ জানা নেই, তুমি চাইলে পরীক্ষা করে নিতে পারো। রক্তের গ্রুপ প্রত্যেকের জানা থাকা দরকার। ।
যে কোনো সময় তোমার নিকট জনের প্রয়োজন হতে পারে । এমনকি তোমার নিজের জন্যেও। ঘটনা বহুল জীবনে যে কোন সময় দূর্ঘটনা ঘটে যাওয়া অসম্ভব নয়। কখন ‌কার জীবনে কি ঘটে তা বলা যায়না। তোমার যদি কোন আপত্তি না থাকে তাহলে আমি তোমার রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করে দিতে পারি।
নিশোর অসুখের কথা তুমি তো আগেই জেনেছো। তার প্রতি মাসেই রক্ত নিতে হয়। তোমার রক্তের গ্রুপ নিশোর রক্তের গ্রুপের মিল হলে তুমি তার উপকার করতে পারতে। ভেবো না,ভয়ের কিছু নেই। শুধু তোমার সদিচ্ছা যথেষ্ট।
একজন সুস্থ মানুষ প্রতি তিন মাস পর পর রক্ত দিতে পারে। এতে করে যে রক্ত দেয় তার কোন ক্ষতি হয়না এমন কি কোন অসুবিধা হয়না।
তবে একজন মুমূর্ষু রোগী সে রক্তে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখে।
কমলা দীপের কথা বুঝতে পারে রক্ত শুধু নিজের জন্যেই
নয়, অন্যের বেঁচে থাকার জন্যেও প্রয়োজন। তাই সে আপত্তি না করে দীপ কে বলে-
– আমার রক্ত আপনি পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। প্রয়োজন হলে অন্যের জন্যেও নিতে পারেন আমার কোনো আপত্তি নাই।
– তবে-
– তবে কি?
– বলছিলাম আমরা গরীব মানুষ। গায়ের রং ময়লা কালো। আমার মতো কালো গরীবের রক্ত কোন ধনী সুন্দর মানুষের কি কাজে আসবে?
– কি বললে?
রক্তে ধনী গরীব সুন্দর কালো এ সবের মধ্যে সম্পর্ক কি? রক্ত সবার একই। ধনী গরীব আর অপরূপ সুন্দরী এতে কি আসে যায় ? এ সবই বাহিরের বিষয়।
ভেতরে সবার একই। কোনো পার্থক্য নেই।
– একটি ঘটনা বলছি-
বেশি দিন হয়নি, বাসা বাড়িতে কাজ সাইরা আমার বাসায় ফিরছিলাম। একটু বেলা পইরা গেছে তাই তড়িগড়ি
পথ চলতে সরু রাস্তায় অনিচ্ছাকৃতভাবে হঠাৎ এক ভদ্রলোকের গায়ের সাথে আমার গায়ের আচর লাগে ।ভদ্রলোকটি আমার গায়ের অবস্থা দেইখা রেগে মেগে পায়ের জুতা দিয়া আমাকে মারতে আসে।
অবস্থা বেগতিক দেইখা বললাম, সাহেব আমাকে পায়ের জুতা দিয়া পেটান আর লাঠি পেটান এতে আমার ‌মতো গরীবের মান ইজ্জতের কি আর আসে যাবে । তবে আপনার গায়ে অমন ধবধবে সাদা পাজামা পাঞ্জাবী জুতার ময়লা লাগতে পারে। তাছাড়া ময়লা জুতা হাতে নেয়া কোনো ভদ্র মানুষের শোভা পায় না।
আপনি যে সাদা ধবধবে পোশাক পরেছেন তা হয়তোবা আমাকেও একদিন পরতে হবে।সে ধবধবে পোশাকটি হইবে শেষ বিদায়ের কাফনের কাপড়। সেদিন চোখ দুইটা বন্ধ হয়ে যাইবে আর শক্তিশালী হাত দুইটা অচল হইয়া পড়বে। লোকটি আমার কথা শুনে থ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। আমিও কথা না বাড়াইয়া চইলা আসি।
– তোমার কথা গুলো চমৎকার বলতে হবে।
– চমৎকার কি না তা ভাবি নাই। গরীবের প্রতি এমন আচরণ মেনে নিতে পারি নাই বলে ভেতর থেকে কেমনে যেনো কথা গুলা বাইরইয়া আইলো।
– দীপ বলে শোন,কাগজ যতই চকচকে হোক , কাগজে তৈরি টাকার মতো মূল্যবান হয়না।
আর অমানুষ যতই চকচকে সুন্দর পোশাক পরেনা কেনো কখনো মানুষ হয়না।
শুধু কাগজে সার্টিফিকেট, সম্পদের প্রাচুর্য হলেই হয় না।
মানুষ হলো বিবেকবোধ সম্পন্ন একটি পরিপূর্ণ জীব সত্তা।
কমলা বুঝে , তবে অন্যকে নিয়ে তার কোন ভাবনা নেই। তাই সে বলে-
আমরা গরীব , ধনীর ধন দৌলত আর ভদ্রলোকের বেশভূষা নিয়ে ভাবি না । আমরা জানি,কাজ কইরা বাইচা থাকাই আমাদের জীবন।
বাবা মারা যাবার সময় আমার হাত ধরে কইছিলো মারে তোর জন্যে কিছু্ই কইরা যাইতে পারলাম না ৷ গরীব মানুষ হইয়া বাইচা থাকাই অনেক কষ্টের। চৈতের দুপুরে চলতি – পথে কাঠ ফাটা রৈদে বটবৃক্ষের ছায়া না থাকলে যেমন কষ্ট হয় তেমনি বাবা না থাকলে জীবনের চলতে পথে কষ্ট হয় ৷ জীবনের আকা বাকা পথে সাবধানে পা ফেলিয়া চলিস’ | কথা গুলা বলতে বলতে আস্তে আস্তে বাবার চোখ মুখ বন্ধ হইয়া গেলো ”
দীপ কমলার কথার শেষে নিশোর কথায় ফিরে এসে বলে-
-আগামীকাল রক্ত পরীক্ষার জন্যে তোমাকে সেবা ক্লিনিকে আসতে হবে ,মনে থাকবে তো।
– কমলা মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলে।
– তাহলে সকাল সকাল এসো।
কমলা তার কাজে চলে যায়।
জীবন তো একটাই কিন্তু শিক্ষা প্রতি পদে পদে।
মৃত্যু মানেই দুঃখ বেদনা আর কান্নার অবিনাশি সুর ৷ চিরন্তন বাস্তব চিত্রনাট্যের অবসান ৷
চলবে-
May be an image of 2 people, including Md Shahidul Islam Talukder and people standing

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..