জরিনার মা-
একটু নুন জল বাড়িয়ে দিও সাথে কাঁচা লঙ্কার ঝোল
আষাঢ় মাসের নতুন বানের আনবো ধরে রুই কাতলা আর শোল।
দু মূঠো জলভাত দু জনে খেয়ে চেটে পুটে নিয়েছি হাত,
হে প্রভু দিয়েছো তুমি মুখ দূটি ভরে অমৃতের যেনো স্বাদ।
এবার না হয় পাইনি সোনা গোলা শূন্য ধান,
ফের বছর ঘরে আনবো তুলে নতুন বরের পান।
হ্যা গো জরিনার বাপ-
ফের বছর যদি দেও কিনে মোরে লাল পাড়ের শাড়ি,
অনেক দিন হয় যাইনি গো আর আমার বাপের বাড়ি।
এ দোয়ার ও দোয়ার মা চাচীকে দেখবো ঘুরে ঘুরে,
কেমন আছো গো খেলার সাথী সখিনা বিবি ছোট্ট কুঁড়ে ঘরে।
পাশের বাড়ির নরেন বাবু বাজাইতেন কলের গান,
সে গান শোনে পরান জুড়াইয়া যাইতো উদোম গায়ের প্রান।
মামার বাড়িতে পরীর গল্পে রাত জাইগা হইত নিশি ভোর,
সখিনা বিবি যাইতে হবে বাড়ী তড়িগড়ি খোলে দাওনা দোর।
জরিনার মা-
চৈতে গেলো ক্ষেত পুড়ে ছাই জষ্ঠ্যে আগাম জল ,
সোনার ধান যে গেলো ডুবে হাতরে পাইনি তল।
ধান ক্ষেতের আইল ধরছি কষে বুকের পাঁজর ঠেলে
বানের পানি যায়নি রাখা ভরে গিয়েছে বিষম দরিয়ার জলে।
চাতাল থেকে আনছিলাম আমি আগাম ঋণের দেনা,
শোধিয়ে দিবো সব ঋন তোমার ঘরে তুলে পাকা সোনা।
শোধিতে দেনা এ কানি দু কানি বেচে আছে বাড়ী ভিটে,
পরের জমি চাষে উদর ভিজে জলে ললাটে ঘাম ঝরেছে ফেটে।
নাকের নোলক হাতের কাঁকন গলায় সোনার হার,
অভাবের তাড়নায় বন্ধকী সবি ফিরাতে পারি নাই আর।
ভেবো না তুমি জরিনার মা আমি যদি বেঁচে থাকি,
কানায় কানায় ভরিয়ে দিবো সোনার ফসলে মুঠো মুঠো শত আটি।
এবছর সে বছর করে পাইনি ফিরে আর সোনার ফসলের মাটি,
রোগে ভোগে শোকে জরিনার মা আজ ওপারে জরিনার বাবার সাথী।।
Leave a Reply