মাঝরাতে ঘুমের মধ্যে কারো ভারী নিঃশ্বাস মুখে পড়ায় ঘুমটা ভেঙে গেলো। অন্ধকার ঘরে কাউকে দেখা যাচ্ছে না কিন্তু আমি অনুভব করতে পারছি আমার বিছানার পাশে কেউ দাঁড়িয়ে আছে আর তারই ভারী নিঃশাস আমার মুখের উপর এসে পড়ছে।আমি হাত বাড়িয়ে টেবিল ল্যাম্প জ্বালাতেই দেখলাম ঈতাস ভাই আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমার নিজের ভাইয়ের বন্ধু আর আমার একমাত্র ক্রাশ ঈতাস ভাই।এই মধ্যরাতে আমার ঘরে ঈতাস ভাইকে দেখে চমকে উঠলাম আমি।মনের মধ্যে একটা ভয় কাজ করছে।ক্রাশ হোক আর যাই হোক এভাবে মধ্যরাতে একটা মেয়ের ঘরে কোনো পুরুষ ঢুকলে ভয় পাওয়াটাই স্বাভাবিক। আমি ঢোক গিলে বললাম,
“ঈতাস ভাই আপনি আমার ঘরে তাও এতো রাতে?”
“তোর সাথে দেখা করতে আসলাম রে ঈশিকা,তোকে হাজার দেখলেও যেনো দেখার সাধ মেটে না।তাই তোকে দেখতে এলাম।”
ঈতাস ভাইয়ের কথা শুনে আমি বিছানা থেকে নিচে নামলাম তারপর বললাম,
“কি বলছেন এসব। আপনি ঠিক আছেন তো?”
“তোকে ছাড়া কি আমি কখনো ঠিক থাকতে পারি বল, তোর জন্যই তো এখানে আসা আমার।”
আমি লাইট জ্বালিয়ে দিয়ে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত ৩.২১ বাজে। আমার এখন একপ্রকার রাগই হচ্ছে। তোর যখন এসব কথা বলারই শখ তাহলে সকালে বল এতরাতে এসব বলার মানেটা কি।কোনোরকমে নিজের রাগটাকে কন্ট্রোল করলাম তারপর ঈতাস ভাইকে কিছু বলতে যাবো তখনি আমার মনে পড়লো, আজকে আমাদের বাসায় এসে সন্ধ্যায় ছাদ থেকে নামতে গিয়ে ঈতাস ভাইয়ের পা মচকে যায়,যার কারণে আজ রাতে ঈতাস ভাই আমাদের বাড়িতে থেকে যায়। ঈতাস ভাই তো একা একা হাঁটতে পারবেনা তাহলে এখানে এলো কি করে। আমার চোখ দরজায় যেতেই আমি দেখতে পেলাম ঘরের দরজা বন্ধ। আমি তো ঘরের দরজা বন্ধ করে ঘুমাই তাহলে ঈতাস ভাই এখানে এলো কি করে? আমি ঈতাস ভাইয়ের দিকে ঘুরতেই দেখি কেউ নেই। আমার এখন একটু ভয় হতে লাগলো,তবুও নিজের মনের ভুল ভেবে আবার বিছানার দিকে যেতেই দেখলাম জানালার কাছে ঈতাস ভাই সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি জোরে একটা চিৎকার দিলাম তারপর দৌড়ে দরজার ছিটকিনি খুলে ঘর থেকে বের হয়ে এসে আমার ভাইয়ের ঘরের দরজা ধাক্কাতে লাগলাম, ভাইয়া দরজা খুলে দিলো।এদিকে চেঁচামেচির আওয়াজ শুনে মা-বাবাও বেরিয়ে এলো।মা এগিয়ে এসে আমাকে সোফায় বসালো।ঈতাস ভাই আমার ভাইয়ার কাঁধে হাত রেখে খোঁড়াতে খোঁড়াতে বাইরে এসে আমার সামনের সোফায় বসলো। ঈতাস ভাইকে দেখে আমি আবারও ভয় পেলাম, তারপর বললাম,
“আপনি আমার ঘরে কিভাবে গেলেন, ঘরের দরজা তো বন্ধ ছিলো?”
ঈতাস ভাই অবাক হয়ে বললেন,
“পাগল হয়ে গেছিস তুই ঈশিকা,কি বলছিস এসব?বন্ধ দরজা দিয়ে আমি কিভাবে ঢুকবো আর সব থেকে বড় কথা যেখানে আমার পায়ের এই অবস্থা, সেখানে দরজা খোলা থাকলেও আমার পক্ষে যাওয়া সম্ভব না।”
আমি সব খুলে বলতেই আমাকে সবাই বললো আমি নাকি স্বপ্ন দেখেছি।জানালার কাছে আবারও দেখেছি সেটা বললেও কেউ বিশ্বাস বললো আমার নাকি ভ্রম হয়েছে। মা এবার আমার পাশে গিয়ে ঘুমালো। কিন্তু আমি যে স্পষ্ট দেখলাম ওটা ঈতাস ভাই-ই ছিলো,আচ্ছা মেনেই নিলাম ওটা ঈতাস ভাই না, কিন্তু ঈতাস ভাই যদি না হয়ে থাকে তাহলে কে?
এ জাতীয় আরো খবর..
Leave a Reply