বিবাহ, তিন অক্ষরের একটি অতি রহস্যময় শব্দ। করার আগে মনে হয়,না করলে বাঁচবো না, করার পরে লাগে,ক্যান যে করছিলাম,আল্লাহ আমারে উঠায়া নাও।
মজার কাহিনী হচ্ছে মোটামুটি ৯০% নরনারী এই ফিলিং এর মধ্যে দিয়ে যায়,অন্যকে যেতে দেখে। তারপরেও বিবাহের কথা শুনলেই আনন্দে,লজ্জায়,ভালোলাগায় লাল নিল বেগুনি বর্ণ ধারণ করে। আজিব না?
দাম্পত্য জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময় হচ্ছে প্রথম দুই বছর।
দাম্পত্য বিশারদরা এই সময়টায় নাম দিয়েছেন “হানিমুন পিরিয়ড”। এই সময় স্বামী বা স্ত্রী যা করে তাই অপরপক্ষের ভালো লাগে।
ভরা বর্ষার মাঝরাতে স্বামীকে ধাক্কা দিয়ে ঘুম থেকে উঠিয়ে যদি তার বৌ বলে,উঠোনা,ছাদে গিয়ে বৃষ্টিতে ভিজব।
স্বামীর মনে হবে,মাঝরাতে ছাদে উঠে বৃষ্টিতে দাপাদাপি করার থেকে গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজ পৃথিবীতে নাই। মাঝরাতে বউ এর হাত ধরে বৃষ্টিতে যে ভিজে নাই,তার মত হতভাগ্য দুনিয়ায় দুইটা নাই।
এই ঘটনাই ধরেন বিয়ের সাত বছর পরে ঘটল,সেই একই মানুষের রিয়েকশন হবে,এই মাঝরাতে কি আজাইরা ধং শুরু করলা?? ঘুমাও…..যত্তসব ফাইজলামি।
দুঃখজনক হইলেও সত্যি দুই বছরের মধ্যে এই ইনিশিয়াল ম্যাজিক শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে করে। কিন্তু আশার কথা হচ্ছে,এই দুই বছরের ইল্লজিক্যাল,তার ছিরা,বাঁধভাঙ্গা প্রেমের কারণেই তাদের মধ্যে একটা দীর্ঘস্থায়ী বিশ্বাস,আস্থা,আর নির্ভরশীলতার বন্ধন তৈরী হয়।
যে কারণে মানুষ বছরের পর বছর এই স্বামী স্ত্রী নামক পেইন নিয়া জীবন কাটায়,চরম দুর্যোগের মধ্যেও দুইজন দুইজনের হাত ধরে থাকে শক্ত করে…………………!!
এই সময়টাতেই আসলে স্বামীস্ত্রী একে অন্যের সাথে পরিচিত হয়। এর নাম দেয়া যেতে পারে”পরিচয় পর্ব”। হানিমুন পিরিয়ড শেষ হবার পরে স্বামী এবং স্ত্রী আবিস্কার করে,তার অর্ধাঙ্গ বা অর্ধাঙ্গিনীটা আসলে কোনো সুপার হিউম্যান বিং না,নিতান্তই সাধারণ একটা জীব।
স্ত্রী আবিষ্কার করে,তার স্বামী অফিস যাওয়ার আগে একঘন্টা বাথরুম অকুপাই করে রাখে। ভেজা টাওয়েল টা সবসময় বিছানার উপ্রে ছুড়ে ফেলে,রাতের বেলা উদ্ধারকারী জাহাজ হামজার সাইরেনের মত নাক ডাকে, এবং গাড়ি চালানোর সময় অনায়াসে অন্য লোক কে খা**র*লা বইলা গালি দিয়ে ফেলে।
আর স্বামীও রিয়েলাইজ করতে থাকে তার স্ত্রী যাকে সে একটা পরী ভাবছিলো, সে আসলে দোষ গুনে ভরা অতি সাধারণ একজন নারী।সে ও ছোটখাটো বিষয়ে মান অভিমান করে, ঝামেলা করে, নিজের দায়িত্ব ঠিক মত পালন করতে পারে না। ইত্যাদি ইত্যাদি ।
চ্যালেঞ্জ বিগিনস হিয়ার। ছোট খাটো অথবা মাঝারি সাইজের দোষ গুন সহ একটা মানুষকে আপন করে নেয়ার চ্যালেন্জ। অধিকাংশ মানুষই এই চ্যালেন্জ এ সাফল্যের সহিত কৃতকার্য হয়। তারা বুঝতে পারে এখন আর আমার বলে কিছু নাই,সবই আমাদের।
স্বামী বলসে- ওগো শুনছ ? ড্রয়ার থেকে আমার টাকাগুলো দাও।
বউ ঝামটা দিয়ে বলে-
আমার আবার কি? বল,আমাদের।
স্বামী বলে,ওহঃ সরি। আচ্ছা শোন, টাকার সাথে আমাদের জাঙ্গিয়াটাও দিও।
ঐরকম আর কি।
মানুষ সুপার ডুপার লেভেল এর অভিযোজন ক্ষমতা সম্পন্ন প্রাণী। প্রতিকুল পরিবেশে টিকে থাকায় এদের কোনো তুলনা নাই। সেই জন্যই হয়ত বিবাহ নামক এই ইনস্টিটিউশন ও বেঁচে আছে যুগ যুগ ধরে…………!!!
এই স্টেজটার নাম কি দিব? সংঘাত দ্য কনফ্লিক্ট”? অথবা “সংগ্রাম দ্য ওয়ার”? জলিল স্যারের সিনেমার নাম মনে হইতেসে? দাম্পত্য জীবন তো তাই, স্বামী স্ত্রী আজীবন “খোজ দ্য সার্চ”করেও “নিস্বার্থ ভালবাসা হোয়াট ইজ লাভ”এর দেখা পায়না।
এই পর্যায়ে এসে প্র্যাক্টিক্যাল লাইফটাই মুখ্য হয়ে উঠে,টাকা পয়সা,চাকরি বাকরি,লবন নাই,মরিচ শেষ,ভাত এত নরম হইসে কেন,ইলেক্ট্রিসিটির বিল কেন দেয়া হয়নাই,বুয়া আসে নাই,বাচ্চা কেন কোনো ভদ্রতা শিখতেসে না,সংসার কি শুধু আমার??জাতীয় বিষয়ে রুটিন ঝগড়া।
সময়টা ক্রুশিয়াল,এই সময় স্ত্রী টি তার বন্ধুবান্ধব,বিবাহের আগের হা হা হি হি জীবনটাকে মিস করতে শুরু করে,ঘন ঘন বাপের বাড়ি যাওয়ার প্রবণতাও দেখা দেয়।
আর স্বামীটি তার পুরনো ফ্রেন্ড সার্কেল এ নতুন করে এন্ট্রি নেয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে উভয়েই তার এক্স বিএফ বা গিএফ কে মিস করতে শুরু করে। কোনদিন হয়ত সন্ত্রস্ত মনে কাঁপা কাঁপা হাতে ফোন করে বলেও ফেলে,খুব জানতে ইচ্ছে করে,তুমি কি সেই আগের মতই আছ? নাকি অনেক খানি বদলে গেছো? খুউউ..উ ..উ..উব জানতে ইচ্ছে করে!!
এই জানতে ইচ্ছা করার সারাংশ হচ্ছে,আবার ডাকলে সাড়া দিবা নাকি বল।
সচেতন সেলফ ডিপেন্ডেন্ট বউরা রিয়েলাইজ করে তাদের কোন কোনো ব্রিদিং স্পেস নাই, they have been taken for granted. আর অচেতন বৌরা ধীরে ধীরে, রাশি,খেয়া পাতার নৌকা বা সাথ নিভানা সাথিয়া জাতীয় সিরিয়ালে আরো বেশি করে আসক্ত হতে থাকে।
স্বামী বেচারা মনে মনে গান গায়,আগে কি সুন্দর দিন কাটাতাম। আমি বেট ধরতে পারি,এই সময় পুরুষরা নিজের অজান্তেই মনে মনে যে কথাটা সর্বাধিক বার বলে তা হইলো,বিয়া মানুষ করে? লাইফ টা হেল করে ফেললো।
আর বউ রা ভাবে – শুধু আমি দেখেই এই লোকের সংসার করলাম।অন্য কেউ হলে কবেই চলে যেত।
এন্ড দ্য ওয়ার কন্টিনিউজ ফর লং n লং n লং……………….!!!
“এবারের সংগ্রাম,আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম,আমাদের মুক্তির সংগ্রাম”লেভেল পার হওয়ার পরে আসে চার নাম্বার ফেইজ। যুদ্ধ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে একসময় ঝামেলা মিটায় ফেলাই বুদ্ধিমানের কাজ মনে করে স্বামী স্ত্রী উভয়েই। জ্ঞানী গুনিরা এই এই স্টেজ এর নাম দিয়েছেন সমঝোতার স্টেজ।
এই ব্যবস্থায় যেইটা হয়,স্বামী স্ত্রীর মধ্যে যে দুর্বল সে আত্মসমর্পণ করে অপরজন একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে। আর লড়াই যদি সমানে সমান হয় তাইলে দুইজন “চারকোনা বিছানা আলোচনায়” বসে(বেশিরভাগ আলোচনা বেড রুমের বিছানাতেই হয়।
তাদের মধ্যে অলিখিত শান্তিচুক্তি হয়। ভবিষ্যতে সব কিছু,হিজ হিজ হুজ হুজ,হার হার হুর হুর। কেও কারো ব্যক্তিগত বিষয়ে নাক গলাইতে আসলে,নাসিকা যন্ত্র কর্তন করে হাতে ধরায় দেয়া হবে টাইপ চুক্তি। আধুনিক স্বামী স্ত্রীদের মধ্যে এই ব্যবস্থা অত্যন্ত জনপ্রিয়।
সংসারের রেসপনসিবিলিটি সমান ভাগে ভাগ হবে। বাচ্চাকে একজন স্কুলে ড্রপ করবে একজন পিক করবে। এর অন্যথা হইলে নিদেনপক্ষে তিনদিন আগে নোটিস দিতে হবে। এইভাবে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করার মাধ্যমে নিশ্চিত হয় ভবিষ্যতের পথ চলা।
কিন্তু প্যাথেটিক বিষয়টা হচ্ছে এই পর্যায়ে এসে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে রোমান্টিসিজমের মায়েরে বাপ হয়ে যায়। তারা নিজেদের সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম সব প্রেমানুভূতি গুলাকে গলা টিপে মেরে ফেলে। জীবন হয় প্রেমহীন মরুভূমির মত।
জনগণ বলে,এই সময় স্বামী স্ত্রী ভাই বোন হয়ে যায়। কথা মিথ্যা না। আচরণগত ভাবে তারা ভাই বোন তো হয়ই আমার মনে হয় তাদের চেহারাতেও কিছুটা সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়।
আমার মতে,বিবাহের এই স্টেজ টাই সবচেয়ে স্ট্রাগলিং। এই সময়ই মানুষ “একটু উষ্ণতার জন্য” এখানে ওখানে ট্রাই মারে যাকে আমরা এক কথায় “পরকীয়া”বলি……………..!!!
সমঝোতার পিরিয়ড টা সাধারণত আট থেকে দশ বছর ডিউরেশন এর হয়। যৌবনের সাথে এটি অঙ্গাঅঙ্গি ভাবে জড়িত। যৌবনে জোশ থাকে। নিজের প্রতি ভালবাসা বেশি থাকে। মোরওভার,অপরচুনিটিও বেশি থাকে। স্বামী স্ত্রী দুইজনেরি এটিটিউড থাকে,সংসার তুমি একা করনা, অতএব এত ভাব নেয়ার কিসু নাই।
এরপরে যে ফেইজটা আসে তার নাম “সহযোগিতা”।
স্বামী একদিন সকাল বেলা আয়নায় তাকিয়ে দেখে মাথার কালো চুলের ভিতর থেকে কিছু সাদা চুল হাই হেলো করছে। একদিন লাঞ্চ করার পর সে নিজেকে অফিসে সিটে বসে নাক ডেকে ঘুমানো অবস্থায় আবিষ্কার করে। অফিস থেকে ফিরার পর টায়ার্ড টায়ার্ড লাগে। সামান্য বুক ব্যথার আলামতও মনে হয় পাওয়া যায়।
রিয়েলাইজেসন হয়,হাতাহাতি বহুত হইসে এইবার শক্ত করে হাত ধরার টাইম।হালকা পাতলা খুনসুটি করার নারী জগতে বহুত পাওয়া যাবে। কিন্তু প্যারালাইসিস হয়ে বিছানায় ব্যাঁকা হয়ে পড়ে থাকলে এই বউ ছাড়া কেও উকি দিয়েও দেখবে না। তাই লাইনচ্যুত রেলগাড়ি আবার সু…….জা লাইনে।
অন্যদিকে,আমাদের দেশের মেয়েরা এমনিতেই ঘরকুনা। স্বামী যদি পাত্তা নাও দেয় তার সিরিয়াল দেখে অনায়াসে জীবন পার দিয়ে পারে। এদের অভিযোজন ক্ষমতা মাশাল্লাহ তেলাপোকার কাছাকাছি। যে অবস্থায় রাখেন এরা সেট হয়ে যায়। আর কমন বিষয় বাচ্চা কাচ্চা তো আছেই। সেই কারণে স্বামী এক পা বাড়ালে তারা দশ পা আগায়।
ফলাফল,মোটামুটি স্থিতিশীল একটা জীবন।
এই সময়টা দুইজনেরই কন্সেন্ট্রেশন থাকে,সন্তানের ভবিষ্যৎ এর দিকে,প্রফেশনাল এনগেজমেন্ট,অথবা অর্থনৈতিক অগ্রগতির দিকে। তাই নিজেদের ব্যাপারে ত্যানা প্যাচানোর অপশন ও কমে যায়।
তবে যত যাই বলেন,পুরুষমানুষের কোনো বিশ্বাস নাই। বাইরে যাই দেখাক,
তাদের মনের কথা কিন্তু- ভাগ্যবানের বউ মরে,অভাগার মরে গরু। এই প্রসঙ্গে একটা জোক বলে বিদায় হই।
একজন তার স্ত্রী প্রসঙ্গে বলল – My wife is an angel
শুনে, দ্বিতীয় জন দুঃখের সাথে উত্তর দিল – U are so lucky man. My one is still alive…….।
On a serious note, দাম্পত্যের আসলে কোন গ্রামার নাই। প্রত্যেক স্বামী স্ত্রীর কেমিস্ট্রি আলাদা। প্রতেকের কাছে সম্পর্কের সংজ্ঞা আলাদা।
তবে যে কোন স্টেজের দাম্পত্যের জন্য দুইটা কথা প্রযোজ্য
If you want your wife to be an angel, make the home heaven for her.
If you think yourself a Queen, Treat him like a King.
এ জাতীয় আরো খবর..
Leave a Reply