1. banglamailnews72@gmail.com : banglamailnews : Zakir Khan
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:২৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
# আহারে # খোরশেদ ।। সমাজে নতুন অপরাধী চক্র তৈরী হচ্ছে কিন্তু ভবিষ‍্যতে এদের রক্ষা করবে কে??।। – – – আশিক ফারুকী “অতঃপর” __ সালমা আক্তার বীরাঙ্গনা নই আমি মুক্তিযোদ্ধা – – – শাহনাজ পারভীন মিতা জলপাই রঙের স্বাধীনতা – – – আরিফুল হাসান প্লাস্টিকের উৎপাদন বন্ধ করতে হবে – উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ান হাসান – – – স্বাধীন আজম –   টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধি, স্বপ্নমায়া – – – – মাহজাবীন আহমেদ বুড়ি মরে গেল – – – মোঃ আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমাম প্রযুক্তির দুনিয়ায় শিক্ষার্থীদের এখন উন্নত জীবন গড়ার দারুণ সময়:– ————–টিপু সুলতান লেখক ও সমাজ চিন্তক ডায়াবেটিস নিয়ে সচেতনতাই পারে ডায়াবেটিস রোগ নির্নয় ও রোগের চিকিৎসা এবং সঠিক ব্যবস্থাপনা – – – ডা: সাদিয়া আফরিন 

বঙ্গ সংস্কৃতির সেকাল — ডঃ অশোকা রায়

  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২ আগস্ট, ২০২১
  • ২০০ বার
পঞ্চাশ দশকের প্রায় মাঝামাঝি ।
দিন-ক্ষণ- সন অতশত মনে নেই। মনে আছে শুধু ফেলে আসা সুর আর ছন্দের রেশটুকু।
বঙ্গ সংস্কৃতি সম্মেলন; স্হান মার্কাস স্কোয়ার।
বাবার ফরমান, পিসিমা আসছেন লক্ষ্ণৌ থেকে সেযুগের কানাডিয়ান স্টিম ইঞ্জিনে টানা প্রেস্টিজিয়াস ডাউন পাঠান কোট এক্সপ্রেসে চেপে কলকাতায়। এখন অবশ্য পাঠানকোট এক্সপ্রেস কে প্রেস্টিজিয়াস ট্রেনের তালিকায় ব্রাত্য বলা যেতেই পারে। আরে, পাঠানকোট এক্সপ্রেস তো এখন তার নামটাই পাল্টে জম্মু তাওয়াই এক্সপ্রেস নাম নিয়েছে।মনে রাখতে হবে, যে সময়ের কথা বলছি,সেই সময়টা বহুবছর হলো আমরা ফেলে এসেছি। গঙ্গার জোয়ার- ভাঁটা কলকাতার বুকে অনেক পরিবর্তনের সাক্ষী থেকেছে। সে সব কথা না হয় থাক। মোদ্দা কথা, বাবার হুকুম জারি হলো, “পিসিমা কে শিয়ালদহ স্টেশন থেকে রিসিভ করে যত্ন সহকারে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব খোকা তোর”। ট্রেনের এ্যারাইভাল টাইম জানাতেও বাবার ভুল হলনা, “বিকেল সাড়ে চারটে, তুই বাপু একটু আগে ভাগে চলে যাস। ” পিতৃআজ্ঞা অগ্রাহ্য করার সাহস বিশেষ নেই। তাই সত্যি সত্যিই আমি আগে ভাগে শিয়ালদহ স্টেশনে হাজির। কিন্তু বিধি বাম। শুনলাম ট্রেন প্রায় ছয় ঘন্টা লেট। সে যুগের ছেলে হলেও ক্যাসাবিয়াঙ্কার মতো এতটা পিতৃ-আজ্ঞা পালনের মানসিকতা আমার নেই যে, স্টেশন চত্বরেই এতটা সময় কাটাবো।
হিসেব করে দেখলাম ট্রেন যতটাই মেক আপ করুক, এক- দেড় ঘণ্টার বেশি সে মেক আপ করতে পারবে না। কি করি, কি করি ভাব। কোথায় কাটাবো এত দীর্ঘ সময়? কোনো ব্যবস্হাই যে পছন্দ হচ্ছে না। ভাবনার মাঝেই কখন যেন পায়ে পায়ে পৌঁছে গেছি সুরেন্দ্রনাথ, বঙ্গবাসী কলেজ পেরিয়ে হ্যারিসন রোড ধরে কলেজ স্ট্রিট মার্কেটের চৌমাথায়, যা আজকাল বর্ণপরিচয় বিল্ডিং নামে পরিচিত। হয়তো ফুটপাথের বইস্টল গুলোতে পুরোনো বইপত্র ঘেঁটে কিছু সময় কাটানোর বাসনা ছিল। হঠাৎ দেখি, বরদা রঞ্জন চট্টরাজ উদ্বিগ্ন মুখে দাঁড়িয়ে। তার সবসময় পামঅলিভ পালিশ করা ব্যাকব্রাশ চুল গুলো কেমন যেন খাড়া মনে হচ্ছে না? মুখের চনমনে ভাব উড়ুক্কু। নাকের ডগায় চশমা প্রায় ঝুলে পড়েছে। বরদা রঞ্জনের এহেন বিধ্বস্ত ভাবের
কারণ জানতে আমি উৎসুক। এখানে বরদা রঞ্জনের পরিচয় দেয়া প্রয়োজন। বিদ্যাসাগর কলেজের জেনারেল সেক্রেটারি। পড়াশোনা ও বক্তিমেতে তুখোড়। যে কোন বিষয়ে তাৎক্ষণিক বক্তব্য পেশের দক্ষতা রয়েছে। এক কথায় তার ইম্প্রোভাইজেশনে সকলেই ইমপ্রেসড হয় সহজেই। বরদা রঞ্জন যেনো
যেনো হ্যামিলন বাঁশিওয়ালা। ফলে তার ফ্যান ফলোয়ার অনেক বেশি। আমি শ্রী সুররঞ্জন খাঁড়া বরদা রঞ্জনের গুণমুগ্ধ প্রধান চ্যালা।
বরদা রঞ্জন তখন স্নাতক স্তরে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। আমি প্রাক বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে ঐ একই বিদ্যাসাগর কলেজে। সে সময় শিক্ষা কাঠামোর স্তরবিন্যাসের প্রথম ধাপে স্কুল ফাইনাল, তারপর একে একে প্রি ইউনিভার্সিটি, স্নাতক, স্নাতকোত্তর, পি এইচ ডি, ডিলিট। এ প্রসঙ্গের আজকের লেখার সাথে বিশেষ সম্পর্ক নেই। কথায়- কথায় বলে ফেললাম। এই মুহূর্তে আমার ভাবনা বরদা রঞ্জন কে নিয়ে, যে আমায় সত্যিই ভালোবাসে। আমিও ওকে খুব ভালোবাসি। দুবছরের সিনিয়র, অথচ বরদা বলে ডাকি। আপত্তি নেই বরদার। একদিনই মাত্র আপত্তি প্রকাশ করেছিল, ” এই তুই আমায় দাদা বলিস না কেনো রে? ” আমি নির্বিকার চিত্তে বরদার হাতে ধরা চিনেবাদামের ঠোঙা থেকে একটা চিনেবাদাম নিয়ে খোলা ভাঙতে ভাঙতে বলি, ” বলি তো। ” ” কবে বলিস দাদা! ” ” কেনো, রোজই তো তোমাকে ডাকি বরদা বলে? বরদা- দাদা বললে কি খুব শ্রুতিমধুর হতো? ” হো হো হাসির সাথে বরদার বিশাল এক চাপড় আমার পিঠে। বুঝি, আমার জবাবে বরদা খুশ হুয়া। আজ আমার সহানুভূতির হাত বরদার পিঠে। ” কি হয়েছে বরদা, এরকম উদ্বিগ্ন হয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে যে? ” ” দ্যাখ না, মহা মুশকিলে পড়েছি। এক প্রখ্যাত শিল্পীর সাথে যে তবলিয়া সঙ্গত করবেন, তিনি শেষ মুহূর্তে খবর পাঠিয়েছেন, অসুস্থতার কারণে আসতে পারবেন না। অগত্যা কম নামী- দামি একজন তবলিয়া কে যোগাযোগ করলাম, এখানে দাঁড়াতে বললাম, সঙ্গে করে নিয়ে যাবো বলে। আসবেন কথা দিলেন। অথচ সময় অনেক ক্ষণ পেরিয়ে গেছে। কথা রাখলেন বলে তো মনে হলো না। আসলে কি জানিস, মানুষ যেই দেখে বিপাকে পড়েছে, ওমনি ভাঁও বাড়িয়ে দেয়। এরও হয়তো তেমন ধান্ধা। ভেবেছে পয়সা কড়ি বাড়িয়ে আবার ফোন করব। সে বান্দা আমি নই। অন্য কিছু ব্যবস্থা ঠিক হয়ে যাবে। নে চল দিকি আমার সাথে।”এই হচ্ছে বরদা রঞ্জন। ভাঙবে তবুও মচকাবে না। আমি বুঝতে পারি না, বরদার এসব শিল্পী, তবলিয়া নিয়ে মাথা ঘামাবার দরকার কি? কিন্তু বরদা যা চিন্তাগ্রস্ত, তাতে তাকে প্রশ্ন না করে অনুসরণ করাই শ্রেয় মনে হল। আর আমারো তো সময় কাটাবার সমস্যা। আর বরদার সঙ্গও আমার খুব প্রিয়। আমি বরদার সঙ্গে হাঁটতে শুরু করি।
কলেজ স্ট্রিট মার্কেটের বিল্ডিংটা দুভাগে বিভক্ত। মাঝখান দিয়ে ডাবপট্টির যে রাস্তাটা পূব থেকে পশ্চিমে সেন্ট্রাল এভেনিউ তে মিশেছে, তারই মাঝামাঝি ডানদিকে মার্কাস স্কোয়ারে এসে আমরা পৌঁছলাম। বঙ্গ সংস্কৃতি সম্মেলন চলছে, মনেই ছিল না। হাতের কাছে সময় কাটাবার উপাদান তো মজুত ছিল। বরদার সাথে দেখা না হলেও অসুবিধা কিছু ছিল না। বঙ্গ সংস্কৃতি সম্মেলনে প্রচুর ভিড় হতো বলে বাইরে মাইক ফিট করা থাকত। ফলে প্রবেশ না করতে পারা মানুষরাও অনুষ্ঠান শুনতে পারত। আমি জানতাম বরদা বঙ্গ সংস্কৃতি সম্মেলনে আয়োজকদের মধ্যে ছোটখাটো একজন হোমরাচোমরা। এখন জানলাম, বরদার ভাগে দায়িত্ব ছিল বিশিষ্ট বংশীবাদক পান্নালাল ঘোষ ও তাঁর তবলিয়া বিশ্বনাথ বসু কে হাজির করার। পান্নালাল ঘোষ কে নিয়ে সমস্যা নেই, বিশ্বনাথ বসুর গরহাজিরাই বরদার মাথা ব্যাথার কারণ। এদিকে বিকল্প তবলিয়া, যাকে বরদা যোগাযোগ করেছিল, সেও কলা দেখালো। সত্যি বরদার নাজেহাল অবস্হা। বরদা আমাকে বসতে বলে অদৃশ্য হয়েছে। আমিও চুপচাপ দুশ্চিন্তা নিয়ে অনুষ্ঠান শুনছি। মুহুর্তে আমার দুশ্চিন্তা উধাও, মঞ্চে অপূর্ব এক ভাওয়াইয়া গান,
” ইচ্ছা করে পরাণটারে গামছা দিয়া বান্ধি।
ইচ্ছা করে..
আইরন, বাইরন, কইলজাটারে
মশলা দিয়া রাঁধি।”
পরের গান,
“মন জানো না, তোমার ঘরে বসত করে কয় জনা … “
দুটো গানের সাথে ঢোলের যুগলবন্দী। মার্কাস স্কোয়ারের চারিদিক খোলা মঞ্চ পেরিয়ে আশেপাশের বাতাসে ছড়িয়েছে মূর্ছনা। কি ভালো লাগছে আমার। বরদা মঞ্চের পাশে বাঁশ আর কাপড়ের তৈরি গ্রীন রুমের পর্দা সরিয়ে বাইরে এলো, ” কি রে, কিছু খাবি? ” সে কথার উত্তর না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন আমার বরদা কে,
” বরদা, গায়কের নাম কি আব্বাস উদ্দিন আহমেদ, যিনি পল্লী গীতির প্রাণপুরুষ? আকাশবাণীর দৌলতে ওঁর বহু গান বহু বার শুনেছি। কানে লেগে আছে, “আল্লা মেঘ দে, পাণি দে, ছায়া দে রে তুই। ” ভেবেছিলাম বরদা আমার জ্ঞানের প্রশংসা করবে।বরদা আমার জানার ফানুসে পিন ফোটায়, “হ্যাঁ আব্বাস উদ্দিনের কথা শুনেছি। ভাওয়াইয়া ফোক সঙ ঘরানার সৃষ্টিকর্তা, যা রঙপুর,অবিভক্ত গোয়ালপাড়া, কুচবিহারে খুব জনপ্রিয়। তবে ইনি তিনি নন। ইনি হচ্ছেন আফতাব উদ্দিন। সঙ্গীত গুরু বাবা আলাউদ্দিন খাঁ সাহেবের ভাই। ফকির মানুষ ও সঙ্গীত সাধক। ” “আফতাব উদ্দিনের সাথে ঢোলক বাজালেন কে বরদা? মন যেনো ভরে গেল।” ” উনি হচ্ছেন বিখ্যাত ঢোলক বাদক শ্রী ক্ষীরোদ নট্ট। রাষ্ট্রপতির পুরস্কার পেয়েছেন। ” মনে মনে ভাবি, বরদার কাছ থেকে আজ কত কি জানলাম। অজ্ঞতা প্রকাশে লজ্জা কোথায়?
বরদা আবার অদৃশ্য। আবার মন দিই গান বাজনায়। মুগ্ধতার যেনো শেষ নেই। আসবেই তো মুগ্ধতা, যেমন গায়কের কন্ঠ মাধুর্য, ঠিক তেমনি ঢোলক বাদকের ছন্দ- মুন্সীয়ানা।
কিন্তু আরো চমক আজ ভগবান আমাকে দেবেন বলে যে ঠিক করে রেখেছেন। গান শেষে আফতাব উদ্দিন মঞ্চ ছেড়েছেন, ক্ষীরোদ নট্ট ছাড়বেন ছাড়বেন করছেন, এহেন সময়ে মঞ্চে বরদা। ক্ষীরোদ নট্টের কানে কানে কি বলল। শোনা গেল না ঠিক। কিন্তু ক্ষীরোদ নট্ট মাইক্রো ফোনে শোনা যাবে জেনেও স্বাভাবিক গলায় বললেন, ” নিশ্চয়ই। এ আমার সৌভাগ্য। ” মাইকে ঘোষণা হলো পরবর্তী অনুষ্টান, পান্নালাল ঘোষের বাঁশি।
মঞ্চে তখন এক অপূর্ব দৃশ্য। ক্ষীরোদ নট্ট পান্নালাল ঘোষের দুটি হাত নিজের করপুটে নিয়ে বিনীত স্বরে বলেন, ” আপনি কি আমাকে আপনার সাথে সঙ্গতের অনুমতি দেবেন? ” পান্নালাল ঘোষ ক্ষীরোদ নট্ট কে জড়িয়ে ধরেন,” এ তো আমার সৌভাগ্য। ” কৃতি মানুষের অহংকার নয়, বিনয়ই বড়ো গুণ। সমবেত
শ্রোতাদের অনন্য অনুভব।
পান্নালাল ঘোষের বাঁশি। অল্প একটু আলাপ সেরেই পিলু রাগের মুখরায় এসে পড়লেন পান্নালাল ঘোষ। ক্ষীরোদ নট্টের সুসমঞ্জস সঙ্গত। কেউ কাউকে ছাড়িয়ে যাওয়ার লড়াই নেই। এরপর পিলু রাগের বিস্তৃতি সঞ্চারিতে, তারও পরে দ্রুত লয়ে শ্রোতারা মাতোয়ারা। জবাবী অংশ যখন চলছে বাঁশি আর ঢোলের, শ্রোতাদের স্বতঃস্ফূর্ত বাহবা… ” জবাব নেই, বহুত খুব। “
বাঁশির রেশ মেলায়নি তখনো। অনুষ্ঠানের বিরতি খানিকটা। একটা গুঞ্জন মন্ডপে। গুঞ্জনের উৎস পরিষ্কার আমার কাছে। দেবব্রত বিশ্বাস আর মঞ্জুশ্রী চাকি সরকার ঢুকছেন যুগলে। তখন তাদের মাখোমাখো সম্পর্কের কথা মোটামুটি
মানুষজনদের জানা। ফলে তাঁদের পারফরম্যান্স সম্পর্কে আগ্রহ কম নয়। একে তো দুজনেই স্ব স্ব ক্ষেত্রে স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত। তার ওপরে ওঁদের নিয়ে গসিপ..চরম আগ্রহ তো যুগল বন্দী সম্পর্কে থাকা স্বাভাবিক। কিছুক্ষণ পরে মঞ্চে দেবব্রত বিশ্বাস হারমোনিয়াম বাজিয়ে উদাত্ত গলায় গাইলেন ” ফাগুন হাওয়ায় , হাওয়ায় করেছি যে দান। ” বেজে চলে মঞ্জুশ্রী চাকি সরকারের ঘুঙুর নিজের সৃজন ” নব নৃত্য ” র কোরিওগ্রাফি অনুসরণে। চমৎকার। ছন্দে ছন্দে ঘুঙুর এর শব্দে এ যেন এক অনন্য সৃষ্টি সুরের মায়া জালের।
এই অনুষ্ঠানের শেষে ঘড়ির কথা খেয়াল হয়। আটটা বাজতে যায় যে। কোথায় বরদা? ইতি-উতি আমার চোখ। ঐ যে কারোর সাথে কথা বলছে যেনো। হাত নাড়ি। লক্ষ্য করেছে সে। কাছে আসে। ” বরদা চলি এবার। আটটা বেজে গেছে। নটার মধ্যে স্টেশনে পৌঁছতে হবে।যদি মেক আপ করে নেয় ট্রেনটা অবিশ্বাস্য ভাবে…. আগেভাগে হাজিরা দেয়াই মঙ্গল |পিসিমার ট্রেন যদি ঢুকে যায়, বাবার পিটুনি থেকে স্বয়ং ব্রক্ষাও আমাকে আজ বাঁচাতে পারবেন না।”
বরদা ঠিক এই মুহূর্তে আমার চলে যাওয়া ঠিক বরদাস্ত করতে পারে না | কানে কানে বলে “জব্বর অনুষ্ঠান মিস করবি? শোন এ্যানাউন্সমেন্ট|” ক্যাপ্টেনের আদেশ… অমান্য করি কি করে? না, না করেও থেকে যাই কিছুক্ষণ |আর তাছাড়া আমি ফিরেজা বেগমের গানের বড়ো ফ্যান | স্টেজে ফিরেজা বেগম তাঁর গীতিকার, সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক ও গায়ক স্বামী কমল দাশগুপ্তকে নিয়ে গান ধরেছেন, ” মোরা আর জনমে হংস মিথুন ছিলাম,
ছিলাম নদীর চরে|
যুগল রূপে আবার এসেছি গো মাটির ঘরে ……. ” গান থেমেছে | পরবর্তী গানের প্রস্তুতি স্বামী – স্ত্রীর| শোনার ইচ্ছে ষোল আনা | কিন্তু পিসিমার ট্রেন শেয়ালদা পৌঁছে গেলে গঞ্জনা | তাই এক্ষুনি অনুষ্ঠান ছাড়ার পরিকল্পনা আমার | বরদা আর বাধা দিল না| বলল,
” একটু দেরিই হয়ে গেল তোর | কিন্তু আমি তো জানি ফিরোজা বেগমের গান শুনতে তুই পাগল |” আমি আর কথা বাড়াই না | ধন্যবাদটুকুও দেয়া হলো না বরদাকে |বাবার রক্ত চক্ষু অলক্ষ্যে চোখ রাঙাচ্ছে , আর প্রায় দৌড়চ্ছি আমি | বাসের জন্য অপেক্ষা করা মানে সময় নষ্ট |কলেজ স্ট্রিট থেকে শেয়ালদার দুরত্ব আর কতখানি! আমার মনে রসের ধারা | চোখে সুরের ঘোর, “আমায় ডুবাইলি রে, আমায় ভাসাইলি রে, অকূল দরিয়ায় বুঝি কূল নাই রে।”
31/7/2021.
রাত দশটা পঞ্চান্ন.
May be an image of 1 person

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..