গল্পটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে। ভালবাসা ও প্রতারণার গল্প।এক বিদেশী মেয়ে ও বাংলাদেশী ছেলেকে নিয়ে। গল্পের পাত্রীর নাম এখানে ঠিক আছে। কিন্তু পাত্র ও অন্যান্য নামগুলি কাল্পনিক। গল্পের কাহিনী ঠিক আছে, কিছু জায়গায় সামান্য পরিবর্তন আছে ও কল্পনার আশ্রয় নেয়া হয়েছে।মেয়েটির নাম তাতী গুয়েভারা।বাসায় তাকে এঐ নামে ডাকে।সুদুর ইকোয়েডর থেকে এসেছিল ভালবাসার টানে।সে একজন মনোবিজ্ঞানী।সরল ও এঐ ভাল মেয়েটি প্রতারিত হয়েছিল।আমি মেয়েটির অনুমতি নিয়েছি গল্পটি লেখার জন্য।তাতী অনুমতি দিয়েছে।তাতী আমাদের দেশের সবাই খারাপ না।এঐ পৃথিবীতে আসলে বেশিরভাগ সময় আসল ভালবাসার মুল্য নেই।আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত ও লজ্জিত তুমি প্রতারনার শিকার হওয়ায়।
নিলা ও তাতীর খুব ভালো সম্পর্ক ছিল।নিলা সম্পর্কে তাতীর খালাতো ননদ।নিলার কাছে তাতী বাংলা শিখতো।বাংলা ভাষার প্রতি তাতীর অগাধ টান।আসলে তাতী বাংলাদেশ এর বউ হয়ে এসেছে।তার স্বামীর বাড়ি এখানে।তাতীর চেষ্টা ছিল পুরোই বাঙ্গালী বউ হওয়ার। সেজন্য যা যা করা লাগে তা করার চেষ্টা করেছে।তাতী কে একমাত্র নিলা ই বুঝতো।ওর মুল্যায়ন নিলা ভালভাবে করতে পেরেছিল। অনেক দিন তাতীর সাথে নিলার যোগাযোগ নেই। ফেসবুকে তাতির সাথে বন্ধুত্ব থাকায় নিলা তাতীর ছবি দেখে।নিলা লজ্জায় ফোন দেয় না।কোন মুখে ফোন দিবে?তাতীর প্রতি যে অবিচার হয়েছে।
মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির দিন অনেক সময় প্রিয় জনের কথা মনে পড়ে।নিলা গান ছেড়ে দিল
আমার সারাটি দিন, মেঘলা আকাশ
বৃষ্টি তোমাকে দিলাম ।।
শুধু শ্রাবণ সন্ধ্যাটুকু তোমার কাছে চেয়ে নিলাম
আমার সারাটি দিন মেঘলা আকাশ
বৃষ্টি তোমাকে দিলাম
হৃদয়ের জানালায় চোখ মেলে রাখি
বাতাসের বাঁশিতে কান পেতে থাকি
হৃদয়ের জানালায় চোখ মেলে রাখি
বাতাসের বাঁশিতে কান পেতে থাকি
তাতেই কাছে ডেকে
মনের আঙিনা থেকে
বৃষ্টি তোমাকে তাই ফিরিয়ে দিলাম
আমার সারাটি দিন মেঘলা আকাশ বৃষ্টি তোমাকে দিলাম
তোমার হাতেই হোক রাত্রি রচনা
এ আমার স্বপ্ন সুখের ভাবনা
চেয়েছি পেতে যাকে চাইনা হারাতে তাকে
বৃষ্টি তোমাকে তাই ফিরে চাইলাম
আমার সারাটি দিন মেঘলা আকাশ বৃষ্টি তোমাকে দিলাম
শুধু শ্রাবণ সন্ধ্যাটুকু তোমার কাছে চেয়ে নিলাম
আমার সারাটি দিন মেঘলা আকাশ বৃষ্টি তোমাকে দিলাম
কেন জানি আজকে তাতীর কথা খুব মনে পড়ছে নিলার। নিলা ফোন দিল তাতী কে।
তাতী আধো আধো বাংলা শিখেছিল।নিলার ফোন পেয়ে তাতী অনেক খুশি হলো।
তাতী : ভাল আসি।তুমি কোমন আছো?আধো আধো বাংলায় বললো।হালকা সাউন্ড এ গান বাজছিল।তাতি বললো,খুব সুন্দর বাংলা গান।
নিলার খুব আগ্রহ জানার জন্য চারটা বছর হয়ে গেছে তাতী বাংলাদেশ থেকে চলে গেছে কিন্তু নাক ফুলটা এখনো খোলে নি।নিলার খুব আগ্রহ জানার জন্য তাতি কেন এখনো নাক ফুলটা খোলে নি।
নিলা : তাতী কিছু মনে করো না,নাক ফুলটা তুমি এখনো খোলনি কেন?
তাতী: কি মনো করবো বলো? শৈবাল আমার প্রথাম ও শেষ ভালবাসা।
নিলার খুব খারাপ লাগলো।এখনো প্রতারকের জন্য ভালবাসা আছে??
নিলার সাথে তাতীর আরো অনেক কথা হলো।নিলা জানতে চাইলো তাতীর বোনেরা ও মা বাবা কেমন আছে?তাতীরা তিন বোন।নিলার কাছেও তাতী জানতে চাইলো সবার কুশল।তাতি স্মরন করলো,নিলাদের বাসায় তাতী কিছুদিন ছিল।তখন কত মজা করেছে। ঘোরাঘুরি,খাওয়া দাওয়া। কিন্তু শশুর বাড়ি ছিল বিভিষিকাময়।
তাতীর ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল সুদুর ইকোয়েডর থেকে। একদিন তাতি ইনডিয়ান রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়েছে। সেখানে শৈবাল বসে খাচ্ছিল।তাতীকে দেখে বারবার ফলো করছিল।একটা সময় যেচে এসে কথা বললো। পরিচিত হলো।ফোন নাম্বার নিল।
তারপর থেকে তাতীর সাথে শৈবালের প্রায় ই ফোনে কথা হতো। শৈবালের পুরো নাম শৈবাল দাস। শৈবাল তার সুখ দুঃখ এর কথা বলতো।তাতী ওখানকার স্বচ্ছল ও শিক্ষিত পরিবারের মেয়ে।তাতীু ছিল ভিষন সরল। শৈবাল এর সব কথাই বিশ্বাস করতো।
এরপর শৈবাল ও তাতীর মধ্যে ভাল একটা বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে।তাতী চাকরি নিয়ে ভিষন ব্যসত থাকতো। শৈবাল শুধু তাতীর সাথে দেখা করতে চাইতো।মাঝে মাঝে বাইরে কোথাও বা রেস্টুরেন্টে দেখা হতো। শৈবাল একদিন হাসপাতালের ঠিকানা নিল।তাতী মুখে মুখে বললো। এরপর থেকে প্রায় প্রতিদিনই তাতীর অফিস ছুটির সময় শৈবাল গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে দেখা করার জন্য।তাতী মানা করে। তারপর ও শৈবাল যায়। আর প্রতিদিন ই তাতীকে শৈবাল ফোন দেয়। প্রতিদিন শৈবালের তাতীর সাথে কথা বলা চাইই চাই।
শৈবাল একদিন তাতীকে বলে,ভালবাসি।যদিও ঐ দেশে অন্য দেশের সমস্যা না। তারপর ও তাতী তার পরিবার কে ভালবাসে।তাতী বলে, আমার মা বাবা কষ্ট পাবে। তোমার সাথে বিয়ে দিতে চাইবে না। তারপরও শৈবাল বিভিন্ন ভাবে তাতীকে বিরক্ত করতে থাকে।তাতী এক সময় সাড়া দেয় শৈবাল এর প্রেমের ডাকে। প্রেম অনেক কিছুই মানে না।কখন কিভাবে হয়ে যায় কেউ জানে না।
দুজনের মধ্যে খুব ভালো সম্পর্ক হয়ে যায়।তাতীর মা বাবা, বোনদের সাথে তাতী শৈবালের পরিচয় করিয়ে দেয়।তাতীর মা,বাবা,বোনরা ব্যাপারটা পছন্দ করে না। তারপর ও তাতীর পছন্দ কে প্রাধান্য দেয়।
শৈবাল ছিল ইকোয়েডর এ অবৈধ অভিবাসী।তাতী আর শৈবালের বিয়ে হয়ে যায়। আইনগত ব্যাপারে যত ব্যবসথা করা লাগে,তাতী করে দিল। আপাতত তাতী ও শৈবাল তাতীর বাবা মায়ের সাথে ই থাকলো। শৈবাল এর জন্য যা যা করা লাগে তাতী সব করলো। এমন কি শৈবালের হাতে কোন ডলার ছিল না।তাতী সব দিল।এমন কি বাংলাদেশে শৈবাল এর বাবা,মা,ভাই,বোনের জন্য ও টাকা তাতি দিতে লাগলো।তাতী শৈবালকে ব্যবসা ধরাতে চাইলো।সেটার টাকাও তাতী দিল।
তাতীর একদিন সন্দেহ হলো শৈবাল কি আসলেই ব্যবসা করছে।শৈবালকে খুব ভালভাবে জিজ্ঞেস করলো। শৈবাল বললো,হ্যা।তাতী বিশ্বাস করলো।তাতিকে চাকরি নিয়ে খুব ব্যস্ত থাকতে হতো। কিন্তু কয়েক মাস হয়ে গেল শৈবাল ব্যবসা ধরেছে কিন্তু তাতীর জন্য সামান্য জিনিসও আনে না।তাতী শৈবালের এত ভালবাসার মানুষ অথচ তাতীর জন্য হাতে সামান্য কিছুও ওঠে না।এটা কি করে সম্ভব? আবার বাসায়ও দেরি করে ফেরে।তাই একদিন তাতী ঠিক করলো হাসপাতালে যাবে না।ছুটি নিবে। চুপিচুপি শৈবালের পিছু নিবে।তাতী তাইই করলো।
কিন্তু শৈবাল এর পিছু নিয়ে তাতী এ কি দেখতে পেল। শৈবাল কে কতটা বিশ্বাস করেছে। অথচ শৈবাল এত মিথ্যা কথা বলতে পারে।
তাতী দেখলো শৈবাল মদ আর জুয়ার নেশায় মত্ত। ওখানে অনেক মেয়েরাও আছে,যেখানে অনৈতিক কাজ চলে।অথচ তাতী কে বলতো,ব্যবসা করে।তাতীকে একটা টাকাও দিত না বরং টাকা নিত।টাকার কথা বললে,তাতী কে বলতো,ব্যবসাটা একটু দাঁড় করিয়ে নেই, তারপর তোমাকে টাকা দিব। তাতী নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না, শৈবাল এত মিথ্যা কথা বলেছে। তাতীর চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়লো।তাতী বাসায় চলে আসলো, শৈবাল কে কিছু না বলে।
সন্ধ্যার পরে শৈবাল বাসায় আসলো।তাতী ইচ্ছে করেই স্বাভাবিক আচরণ করার চেষ্টা করলো।তাতী শৈবাল কে বললো, সারাদিন কি করেছো? শৈবাল বললো,আরে বলো না কত্ত কাজ।ব্যবসা করা কি এত সোজা?তাতী মনে মনে হাসলো।কিছুই বললো না।
পরের দিন আবার তাতী ছুটি নিল।তাতী শৈবাল যেখানে যায় সেখানে গেল।আজকে তাতী ভেতরে গিয়ে শৈবাল এর শার্টের কলার ধরে টেনে উঠালো।বললো,এঐ তোমার ব্যবসা? শৈবাল বললো, আসলে তাতী আমি এখানে একটা কাজে এসেছিলাম।তাতী বললো,মনে করেছো আমি কিছুই বুঝি না।আমি গতকাল ও এসেছিলাম বলে তাতী বাসায় চলে আসলো।
তাতী শৈবাল কে কত সহায়তা করলো। শৈবাল অবৈধ অভিবাসী ছিল।তাতী আইনজীবী ধরে নিজের টাকায় শৈবাল কে সহায়তা করেছে। শৈবাল কে বিয়ে করেছে।তাই তো শৈবাল আজকে নিশ্চিন্তে চলাফেরা করতে পারছে।তাতীর আর কান্না বন্ধ হচ্ছে না।তাতী আবেগপ্রবণ মানুষ। অল্পতেই কেঁদে ফেলে।তাতী ঘর অন্ধকার করে শুয়ে রইলো।
শৈবাল বাসায় আসলো।তাতী কোন কথা বললো না। শৈবাল নিজেই খেয়ে নিল।তাতী এক ফোঁটা দানাপানি মুখে দিল না। শৈবাল তাতীর কাছে এসে ক্ষমা চাইলো।তাতী বললো, তোমার কোন ক্ষমা নেই। শৈবাল বারবার ক্ষমা চাইলো আর প্লিজ প্লিজ বললো।তাতী অনেক নরম মনের মেয়ে।তাতী শৈবাল কে ক্ষমা করে দিল। শৈবাল তাতীর হাত ধরে উঠালো খাবার খাওয়ার জন্য।
এভাবেই দিন কাটছিল।তাতী আর শৈবাল এর কাছে কোন ডলার ই পাচ্ছিল না। বরং নিয়েই যাচ্ছিল। শৈবাল তাতীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে গ্রামে পাকা বাড়ি বানালো।মা,বাবা,ভাই,বোনকেও টাকা পাঠাতে লাগলো।আর তাতীকে বললো, আমার ব্যবসাটা দাঁড়িয়ে গেলেই তোমার সব দেনা পাওনা পরিশোধ করে দিব।তাতী শৈবাল কে অনেক ভালবাসে তাই যা বলে তাই বিশ্বাস করতো। এমন কাচুমাচু হয়ে অভিনয় করে বলতো যে তাতী বিশ্বাস না করে পারতো না।
প্রতি সপ্তাহ শেষে ছুটির দিন তাতী আর শৈবাল ঘুরতে বের হতো। দুজনের দিন ভালোই কাটছিল। এদিকে শৈবাল এর বাবা অসুস্থ হলো। শৈবাল কে দেশে যেতে হবে।তাতীও সাথে যেতে চাইলো কিন্তু ছুটি মিললো না। শৈবাল বললো তাতীকে আমি আগে যাই ।তুমি পরে আসো।আর তাতীর কাছ থেকে টাকা নিল,বাবার চিকিৎসা করানোর জন্য।তাতী সবার জন্য কেনাকাটা করে দিল।
শৈবাল বাংলাদেশে আসলো।বাড়ির সবাই অনেক খুশি। শৈবাল সবার জন্য গিফট আনলো। শৈবাল এর বাবাকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করালো।
শৈবাল এর মা শৈবাল কে বললো,বাবা তোর জন্য পাত্রী দেখছি। একেকজন পাত্রীর বর্ননা দিল। শৈবাল চুপ করে রইলো। কিছুই বললো না।
৩য় পর্ব

সত্য ঘটনা অবলম্বনে)
শৈবাল এর মা শৈবাল এর জন্য খুশি মনে পাত্রী দেখতে লাগলো। শৈবাল ও তেমন কিছু বলে না। শৈবাল দেশের বাইরে থাকে তাই তার চাহিদা ও বেশি।তবে শৈবাল শৈবাল এর মাকে একদিন বললো,যে সে বিদেশে বিয়ে করেছে। শৈবাল এর মা বললো,বাদ দে এসব বিদেশীর কথা।ঐ রকম বিয়ে অনেকেই করে।এটা কোন ব্যাপার না।
এদিকে ইকোয়েডরে তাতী জোড় করে শৈবাল এর গ্রামের বাড়ির ঠিকানা রেখে দিয়েছিল। একদিন হঠাৎ বলা নেই,কওয়া নেই তাতী শৈবাল এর গ্রামের বাড়িতে এসে হাজির হলো। শৈবাল ভুত দেখার মতো চমকে উঠলো।তাতীকে বললো শৈবাল,তুমি তো আমাকে একবার ও জানালে না।তাতী বললো,আমি তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছি।তাতীর বাবা মা,বোনরা তাতীকে আসতে দিতে চায় নি।তাতী জোড় করে চলে আসছে শৈবালের প্রতি ভালবাসার টানে। ভালবাসা জাত, কুল,রীতি অনেক সময় অনেক কিছুই মানে না।
এদিকে তাতী সবার জন্য অনেক কিছুই নিয়ে এসেছে। আবার বললো,আমি তো শৈবাল কে সবার জন্য অনেক জিনিস কিনে দিয়েছিলাম।সবাই অবাক হয়ে বললো, শৈবাল তো বললো, শৈবাল কিনে নিয়ে এসেছে।তাতীর ভাবতেই অবাক লাগছিল, শৈবাল তাহলে এত মিথ্যা কথা বলে!!!!
এদিকে তাতী চলে আসায় শৈবাল এর মা পাত্রী দেখা বন্ধ করলো।আর মনে করলো,তাতী তো অনেক টাকার মালিক।ও থাকলে তো লস নাই। কিন্তু শর্ত দিল ইকোয়েডরে যেভাবে বিয়ে করেছে করেছে কিন্তু সনাতন রীতিতে এখানে আবার বিয়ে হতে হবে। আত্মীয় স্বজন কে দাওয়াত করবে।
এদিকে শৈবাল আবারো তাতীর কাছ থেকে টাকা নিতে লাগলো।তাতী শৈবাল কে বললো,আমি তো তোমাকে দেশে আসার সময় অনেক টাকা দিয়েছিলাম।ওগুলা কি করেছো? শৈবাল বললো,খরচ হয়ে গেছে।
শৈবাল তাতীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে বিয়ের জন্য শপিং করতে লাগলো।গায়ে হলুদ উপলক্ষে যাকে যাকে কাপড় দেয়া দরকার কিনতে লাগলো। বিয়ে উপলক্ষে খাওয়া থেকে শুরু করে সব হবে তাতীর টাকায়।
দেখতে দেখতে গায়ে হলুদ চলে আসলো। লম্বা, ফর্সা তাতী কে বাঙ্গালী সাজে অতুলনীয় লাগতে লাগলো।তাতী ও খুব উচ্ছসিত সনাতনী রীতি তে বিয়েতে। অনেক ধুমধাম করে গায়ে হলুদ হয়ে গেল।পরের দিন বিয়ে।
বিয়ে উপলক্ষে বাসার সামনে শামিয়ানা টানিয়, টেবিল চেয়ার দিয়ে।ডেকোরেশন থেকে সবকিছু এনে বেশ ভালো ই আয়োজন করা হলো।সেরা বাবুর্চি আনা হলো।
বিয়ে উপলক্ষে তাতীর নাক ফুরানো হলো।তাতী কে মুরুব্বিরা বললো, স্বামীর সন্মানারথে এটা কখনোই খুলবে না।তাতী পুরো পুরি বাঙ্গালী বধূ তে পরিনত হলো।সাত পাকে বাঁধা পড়লো।
তাতী কে কিছুদিন সবাই খুব আদর করলো। এদিকে তাতীর টাকা শেষ হয়ে আসছিল। শৈবাল দের বাসায় বাজার থেকে শুরু করে সব হচ্ছিল তাতীর টাকায়। শৈবাল প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে তাতীর ব্যাগ ধরে বসে থাকতো।তাতী ঘরের বিভিন্ন কাজ করাও শুরু করলো। শৈবাল এর মা চাইতো তাতী যাতে কাজ করে।তাতী ঝাল খেতে পারতো না।তাই নিজের রান্না টা নিজেই করছিল। এতকিছুর পরও যেন কারো মন জয় করতে পারছিল না। তাতী যা করেছে অনেক বাঙ্গালী মেয়েও তা করতো না। এদিকে তাতীর টাকা শেষ হয়ে আসছিল।তাতী কে শৈবাল এর পরিবার চাপ দিচ্ছিল,তাতী যাতে তার বাবা মায়ের কাছ থেকে টাকা নেয়ার ব্যবসথা করে। শৈবাল ও বৃলছিল।তাতী বললো, অসম্ভব। কারন তাতী তাদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে চলে আসছে। শৈবাল ও খারাপ ব্যবহার করতে লাগলো।হায় রে ভালবাসা।অথচ আগে তাতী কে কত সুন্দর সুন্দর কথা বলতো।
এদিকে ওরা তাতীর খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিল।একটা রুমে আটকে রাখলো।তাতী সারা দিন রাত তখন একা একা কাঁদতো। এদিকে শৈবাল এর কাকাতো ভাই অনুপম পেছনের জানালা দিয়ে তাতী কে খাবার এনে দিত। অনুপম কলেজে পড়ে।তাতী দিন দিন দুর্বল হয়ে যাচ্ছিল।
এদিকে তাতী তার বাবা মাকেও বলতে পারছিল না এসব কথা।ইকোয়েডর থেকে তাতীর বাবা মা,বোনরা ফোন দিলে তাতী বলতো,খুব ভালো আছে।অথচ তারপর ই ফোন রেখে অঝর ধারায় কাঁদতো।এভাবে পনেরোটা দিন তাতী বন্দী রইলো ঘরে। এদিকে অনুপম কে তাতীকে নিয়ে কথা উঠিয়ে দিল। বাংলাদেশ এর সংস্কৃতি তে যা হয়, সবচেয়ে সহজ হচ্ছে একটা মেয়ের চরিত্র নিয়ে কথা তুলে দেওয়া।সে কিছু করুক আর না করুক। অনুপম ছোট্ট একটা ছেলে।তাকে নিয়ে কথা বলতেও বাদ দিল না। অনুপম এক দুবেলা খাবার না দিলে তাতী মরেই যেত।
তাতী এদিকে হটাৎ বিদ্রোহী হয়ে উঠলো। শৈবাল কে ধরলো ঢাকা নিয়ে আসার জন্য। নীলাকে তাতীর খুব ভালো লেগেছিল। শৈবাল কে বললো,আমি নীলাদের বাসায় যাব। কয়েকদিন বেড়াবো। শৈবাল ও শৈবালের মা বাঁধা দিল।তাতী শুনলো না।তাতী বললো,আমাকে যেতে না দিলে আমি একাই চলে যাব। তখন শৈবাল রাজী হলো।বললো,ঠিক আছে চার পাঁচ দিনের জন্য যাব।তাতী সম্মতি দিল।
নীলাদের বাসায় আসার পর নীলাদের বাসার সবাই খুবই খুশি তাতীকে দেখে। খুবই আপ্যায়ন করতে লাগলো।তাতী মনে হয় জীবন ফিরে পেল।তাতী এদিকে বায়না ধরলো,তাতীকে সিলেট ও কক্সবাজার নিয়ে যেতে। শৈবাল বললো,তার কাছে টাকা নেই।সে পারবে না।তাতী শৈবাল কে বললো, তুমি না আমাকে এত ভালবাসো, আমার জন্য লোন করো।আমি আমার দেশে গিয়ে পরিশোধ করে দিব।তাতী এখন বুঝতে পারে তাতীর জীবনের ভুল। শৈবাল তো তাতীকে ভালবাসেনি।ভালবেসেছে তাতীর টাকা কে।টাকা না থাকলে তাতী কে আর শৈবাল দেখতে পারে না।
তাতী সব ঘটনা তাতীর বাবা মাকে খুলে বললো।তাতী সিদ্ধান্ত নিল আর এদেশে থাকবে না।তাতী জানে না এদেশে চাকরী পেতো কি না।তাতী একজন মনোবিজ্ঞানী। কারন তার খুবই আত্ম সন্মানে লাগছিল বাবা মায়ের কাছ থেকে টাকা নিতে। কিন্তু শৈবাল এর পরিবার ও শৈবাল তাতীর চাকরির ব্যাপারেও রাজী হয় নি।
তাতীর বাবা মা তাতীকে সাপোর্ট দিল। বাংলাদেশ এ হলে অনেক পরিবার ই সাপোর্ট দিত না।বলতো,তুমি এত বাঁধা দেয়া সত্ত্বেও নিজের ইচ্ছেই গিয়েছো।সরি, তোমাকে সাপোর্ট দিতে পারছি না। কিন্তু তাতীর বাবা মা তাতীকে সাপোর্ট দিল।বললো, তাড়াতাড়ি ডলার পাঠাবে।তাতী যাতে চলে আসে।
কিছুদিন পর তাতীকে ডলার পাঠালো তাতীর বাবা মা। শৈবাল তাতীকে বললো, কিছু ডলার দিতে। ভাঙ্গাবে। শৈবাল বললো,ঘুরতে বের হলে খরচ হয়। শৈবাল ডলার ভাঙ্গিয়ে নিজের জন্য আইফোন কিনে আনলো। নিজের জন্য আরো কাপড় চোপড় কিনে আনলো।অথচ তাতীর টাকায় তাতীর জন্য কিছুই আনলো না।তাতী মনে প্রচন্ড আঘাত পেল।এঐ কি শৈবাল এর ভালবাসা!!!তাতীর টাকায় পর্যন্ত তাতীর জন্য কিছুই আনলো না।তাতী এবার আরো শক্তভাবে ডিসিশন নিল,তাতী আর থাকবে না।
এ নিয়ে তাতীর শৈবাল এর সাথে অনেক ঝগড়াঝাটি হলো। এদিকে তাতীর বাবা মা ও বারবার বলছিল,তাতী কে চলে যাওয়ার জন্য।
তাতী আর শৈবাল এর কোন কথা শুনলো না।তাতী চলে গেল মনে অনেক কষ্ট নিয়ে।
শৈবাল বাড়ি চলে গেল। শৈবাল এর বাবা মা কিছুদিন যেতে না যেতেই শৈবাল কে আবার বিরক্ত করতে লাগলো পাত্রী দেখার জন্য। শৈবাল ও রাজী।এক ব্যবসায়ী পরিবারের মেয়ের কথা বললো শৈবাল এর মা।টাকা পয়সা ভালো ই আছে। সমস্ত ফার্নিচার আর নগদ টাকা দিয়ে দিবে।
ঐ দিকে তাতী নিজে মনোবিজ্ঞানী হয়েও পাগলের মতো হয়ে গেল। খাওয়া,ঘুম সবকিছু ই এলোমেলো হয়ে গেল। মনোবিজ্ঞানী হলে কি হবে,তাতী তো একজন মানুষ।তাতীর মনে প্রচন্ড কষ্ট। শৈবাল কে এত ভালবাসলো অথচ শৈবাল তাতী কে একটুও মূল্যায়ন করলো না।তাতীর দুঃখ শৈবাল এর পরিবার এর কেউ মূল্যায়ন করুক না করুক যদি শৈবাল একটু ভালবাসতো তবে তাতী শৈবাল এর জন্য যে কোন দুঃখ, কষ্ট সহ্য করতো।
চতুর্থ পর্ব :(সত্য ঘটনা অবলম্বনে)
আসলে বেশিরভাগ খারাপ মানুষ ই সত্যিকারের ভালবাসা পায়।সে ছেলেই হোক আর মেয়েই হোক।যাদের প্রকৃত ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্যতাই নেই,তারাই সত্যিকারের ভালবাসা পায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই।
এদিকে শৈবাল আরো বেশি ধুমধাম করে বিয়ে করলো। শৈবাল বেশি পড়াশুনা জানে না।এইচ,এস,সি পর্যন্ত পড়াশোনা। কিন্তু বিভিন্ন দেশে যাওয়ার জন্য অনর্গল ইংরেজি তে কথা বলতে পারে।বেশ কয়েকটা দেশে গিয়েছিল। কিন্তু কোথাও সুবিধা করতে পারেনি।কারন তার স্বভাব, চরিত্র ভাল না।কাজে একদম মন দিতে পারে না।যেই ছেলে নারীবাজী করে বেড়ায়,জুয়াড়ী সে কেমন করে উন্নতি করবে??শেষ পর্যন্ত ইকোয়েডর গিয়ে তাতীর সৌজন্য যা কিছু হয়েছে। সুন্দর একটা পাকা বাড়ি হয়েছে।এটাতে অনেক খরচ হয়েছে।পুরো টাকাটা তাতী দিয়েছিল।বাড়ির যত প্রয়োজনীয় ও শৌখিন জিনিসপত্র তাতী কিনে দিয়েছিল।
শৈবাল এর ঘরে কিনে দেয়া ফার্নিচার ছিল। আবার শশুর বাড়ি থেকে আরো ফার্নিচার ও নগদ পাঁচ লক্ষ টাকা নিল। শৈবাল দেশের বাইরে থাকে তাই শৈবাল এর বাবা মায়ের চাহিদা ও বেশি শৈবাল এর জন্য পাত্র হিসেবে।শৈবালের পরিবার পাত্রী পক্ষ কে বললো, শৈবাল বিয়ের কয়েক মাস পর পাত্রী কে দেশের বাইরে নিয়ে চলে যাবে। পাত্রী পড়ালেখায় তেমন ভাল না।কলেজে পড়ে। বাচ্চা একটা মেয়ে। অল্প বয়সী মেয়ে চটাং চটাং কথা বলে সবার মুখের উপর।আর মেয়ে পক্ষ নতুন টাকার মালিক।নতুন টাকা পয়সাওয়ালা মানুষেরা ধরা কে সরা জ্ঞান করে।আর পুরনো ধনী যদি রাস্তার ফকির ও হয়ে যায়,তার চলাফেরায় আভিজাত্য থাকে।
তাতী ছিল শান্ত,ধীর, স্থির,অমায়িক। মনোবিজ্ঞানে সর্বোচ্চ ডিগরিধারী।পি,এইচ,ডি করা। অনেক চেষ্টা করেছে মিলে মিশে চলার জন্য।পারেনি।ঘরের কাজগুলো পর্যন্ত করেছে,সবার মন জয়ের জন্য।তাতী পারে নি।
তাতী ইকোয়েডর ফিরে যাওয়ার পর ওর মা,বাবা,বোনেরা ওকে সহজেই গ্রহণ করলো।বার বার সবাই বললো,তুমি নতুন জীবন পেয়েছো।বাংলাদেশে অনেক সময় একটা মেয়ে জীবনে ভুল করলে বেশিরভাগ পরিবার ই সন্তান কে বুকে টেনে নিতে চায় না। অতিষ্ঠ জীবন আরো অতিষ্ঠ করে তোলে।আমরা বেশিরভাগ মুখে মুখে অসহায়ের পাশে থাকি,কাজে কর্মে নয়। অসহায় এঐজন্য আরো অসহায় হয়ে যায়। বিশেষ করে মেয়েরা।কি করবে তখন কুল,কিনারা পায় না। অনেক সময় দেখা যায় সুইসাইড করে। সুইসাইড কোন সমাধান নয়। নিজেকে শক্তভাবে তৈরি করে দাঁড়ানোটাই সমাধান। প্রতারক এর জন্য নিজের জীবনের ক্ষতি করা ঠিক নয়।
তাতী নতুন জীবন পেল ঠিকই কিন্তু মন বলে কথা।শরীরের অসুখ ঔষধ খেলে সেরে যায় কিন্তু মন সে তো কঠিন ব্যাপার।তাতী মনোবিজ্ঞানী হওয়া সত্ত্বেও সে এ ব্যাপারটা মেনে নিতে পারছে না কিছুতেই। খুবই কষ্ট হচ্ছে ও পাচ্ছে।তাতী ভাবতে পারছে না,তার মতো সহজ,সরল ভাল মেয়েটার কপালে এঐ দুর্গতি।তাতী আসলে প্রচন্ড আবেগপ্রবণ।ভালবাসার আবেগে ভেসে গিয়েছিল। প্রেম, ভালবাসা না কি জাত,কূল কিছুই মানে না।তাতীর ও মনে হয় তাই।তাই যদি না হতো বাংলাদেশ এর ছেলের সাথে কেন তাতীর সম্পর্ক হবে??
তাতী ঠিকমতো মাথা তুলতে পারে না। সারাক্ষণ কান্না আসতে থাকে।মা,বাবা,বোনরা তাতীকে সঙ্গ দেয়ার চেষ্টা করছে সারাক্ষণ।তাতী খেতে চায় না।জোড় করে খাওয়াচ্ছে।সবাই বুঝাচ্ছে, যা হয়েছে হয়েছে ভুলে যাও।তাতী বললো,ভুলে যাওয়া কিছুতেই সম্ভব না এঐ জীবনে।সবাই বুঝাচ্ছে নতুন করে জীবন শুরু করো।তাতী বললো, কিছুতেই না। শৈবাল খারাপ হতে পারে। কিন্তু সে আমার প্রথম ও শেষ ভালবাসা।সবাই বললো তাতীকে, তুমি তোমার নোজ পিনটা খুলে ফেলো।তাতী বললো,এটা আর কোনদিনই খুলবো না, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত না।
এদিকে শৈবাল এর বিয়ের খবর তাতী পেল।তাতী কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো।তাতীর মনে পড়লো এত এত ভালবাসার কথা, প্রতিশ্রুতির কথা যে শৈবাল বলতো তাহলে সবই মিছে। মানুষ কি করে এত সুন্দর অভিনয় করতে পারে,কথায় কথায় কাঁদতে পারে!!!!হায়রে মানুষ। এখন তাতীর ছেলেদের দেখলেই ভয় হয়।তাতীদের সংস্কৃতি পুরো ভিন্ন। কিন্তু কিছু কিছু চালচলন তার বাঙ্গালী মেয়েদের মতোই।তাতী তো শৈবালের কাছে ভালবাসা ছাড়া কিচ্ছু চায় নি।এত বড় প্রতারনা!!!তাতী মাথা ঘুরিয়ে পড়ে গেল।
বাসায় ডাকতার আসলো।বললো,লো প্রেসার। খাওয়া দাওয়া করতে হবে ঠিকমতো।একটু সুস্থ হলে বেড়াতে নিয়ে যেতে।ঘুরে আসলে মনটা ভাল লাগবে।
শৈবাল এর নতুন সংসারে নতুন বউ নিয়ে মাতামাতি। নতুন বউ ও কোন কথা ছেড়ে দিয়ে বলে না।এঐ নিয়ে সংসারে অশান্তি শুরু হয়ে যায়। শৈবাল এর মা বাবার মুখের উপর কথা বলে।
শৈবাল ও ঠিক মতো বাসায় ফেরে না।শশুর বাড়ি থেকে নগদ পাঁচ লক্ষ টাকা নিয়েছে।এক লক্ষ টাকা মা বাবার পিড়াপিড়িতে মা বাবাকে দিয়েছে।আর চার লক্ষ টাকা তো চরিত্রহীন শৈবাল এর উড়াতে হবে।
এদিকে শৈবাল বাসায় ফিরলেই শুরু হয়ে যায়,নতুন বউ নিয়ে বিচার আচার।এক সময় শৈবাল তার স্ত্রীর গায়ে হাত তুলে বসে।আর শৈবাল এর মা কথায় কথায় বলে ফেলে, শৈবাল এর আগের বিদেশী বউ অনেক ভালো ছিল।কাজ করতো, বেয়াদবি করতো না, অনেক শিক্ষিত ছিল।
এবার দ্বিতীয় স্ত্রী পরমা প্রচন্ড ক্ষেপে গেল।পুরো বাড়ি চেঁচামেচি করে মাথায় তুললো।বললো, আমাদের মিথ্যা বলা হয়েছে।কত বড় সাহস ও স্পর্ধা।আগের বিয়ে গোপন করা হয়েছে।আমি এটার শেষ দেখে ছাড়বো।
সাথে সাথে পরমা বাবার বাড়ি তে ফোন দিয়ে সব বললো।পরমার বাবা বললো,আমি এক্ষুনি আসছি।তুই চিন্তা করিস না।
পরমার বাবা এসে সবাইকে বকাবকি করে পরমাকে নিয়ে গেল। শৈবাল ও শৈবালের বাড়ির সবাই ঠ্যাকাতে চেষ্টা করলো। কিন্তু তারা কোন কথাই শুনলো না।না শোনাটাই স্বাভাবিক। এত বড় প্রতারনা!!!
এদিকে তাতীকে তাতীর বাবা,মা বোনেরা সবাই একসাথে সাত দিনের ছুটি নিয়ে সুন্দর একটা টুরিস্ট প্লেস এ বেড়াতে এলো। যতটুকু পারা যায় তাতীকে আনন্দে রাখার চেষ্টা করলো।কোন সুযোগ ই দিল না মন খারাপ করার।
তাতী বাংলাদেশ থেকে যাওয়ার পর খুবই অসুস্থ হয়ে গিয়েছিল। তারপর আবার শৈবাল এর বিয়ের খবর পেয়ে হাসতে, কাঁদতে ভুলে গিয়েছিল।
একদিন তাতীর ছোটবোন দেখলো তাতী খুব কাঁদছে।তাতীর ছোট বোন মা, বাবা ও তাতীর আরেক বোনকে দেখালো তাতী কাঁদছে।তাতীর মা বললো,তোমরা কেউ কাছে যেওনা।ওকে প্রান খুলে কেঁদে হালকা হতে দাও।ওর মনে কত কষ্ট। সবচেয়ে বড় কষ্ট প্রতারনার। প্রতারনার দায় ও কেন নিবে?? কিন্তু ওর সাথে ঘটেছে,এটা মুছে ফেলাটা খুবই কষ্টকর। অনেক সময় লাগবে।
দেখতে দেখতে তাতীদের বেড়ানোর এক সপ্তাহ শেষ হয়ে গেল।তাতী অনেক দিন পর হাসলো।তাতীর হাসি দেখে পরিবারের সবাই অনেক খুশি।তাতীর সাথে যেন পুরো পরিবার হাসলো।
তাতী ঠিক করলো চাকরি তে জয়েন করবে।মানবতার সেবায় এ জীবন উৎসর্গ করবে।
এদিকে শৈবাল এর শশুর ও স্ত্রী কেস দিয়েছে পুরো পরিবার এর নামে। কয়েকদিন পর পর হাজিরা দিতে হচ্ছে ওদের। খুবই খারাপ অবস্থা।
শৈবালের জেল হলো।উকিলের পিছনে পিছনে দৌড়াতে দৌড়াতে পুরো পরিবার এর খুব খারাপ দশা। এখন তাতীর কথা খুব মনে হলো শৈবাল এর।বিপদ থেকে উদ্ধার পেতে তো তাতীর কাছ থেকে টাকা নেয়া যায়।
শৈবাল কে বহু কষ্টে পনেরো দিন জেল খাটার পর জামিনে মুক্তি নিল। এদিকে শৈবাল তাতীকে মেসেজ এর পর মেসেজ পাঠাতে লাগলো।মাফ চাইলো বার বার।লিখলো,তাতী তোমাকে আমি ভালোবাসি। প্লিজ সহায়তা করো।তাতী সব ব্লক করে দিল। তারপর ফোন দিয়েই যেতে লাগলো শৈবাল।
পঞ্চম পর্ব ও শেষ পর্ব :(সত্য ঘটনা অবলম্বনে )
তারপর তাতী অনেক কষ্টে স্বাভাবিক জীবনে প্রবেশ করলো।তাতী এখন চাকরি আর বাসা এঐ দুই নিয়ে ব্যসত হয়ে গেল।তাতীর চাকরি ক্ষেত্রটা অনেক দূরে।আসা যাওয়া করতে অনেক সময় লেগে যায়।ছুটির দিনে বেড়াতে যাওয়া এটা একটা স্বভাবে পরিণত হলো।কখনো একা একা।কখনো মা বাবা,বোনদের সাথে।
এদিকে তাতীর বাবা মা চাপ দিতে লাগলো তাতী কে আবার বিয়ে করার জন্য বা কাউকে পছন্দ করার জন্য।তারা বললো, তোমার বয়স অল্প। তোমার সারা জীবন কি করে কাটবে??তাতী ভিনদেশী হলেও তাতীর পরিবারটা কিছুটা বাঙ্গালী পরিবারের মতো।
শৈবাল বিভিন্ন নাম্বার থেকে ফোনের পর ফোন দিতে লাগলো। তারপর বিভিন্ন সময়ে দু একজন বন্ধুকে দিয়েও তাতী কে ফোন দেওয়ালো।তাতীকে বুঝানোর চেষ্টা করলো।তাতী বলে দিল,আর কখনোই শৈবাল এর সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব না। কারন শৈবাল তাতীর সাথে প্রতারণা করেছে।তাতীর সহজ,সরল মন নিয়ে খেলেছে।তাতী কে কখনোই ভালবাসে নি।
তাতী পুলিশ স্টেশনে গেল। শৈবাল সম্পর্কে রিপোর্ট দিল। শৈবাল আর কোনদিনই তাতীর দেশে যেতে পারবে না। শৈবাল কে জানিয়ে দেয়া হলো। শৈবাল ওখানে গেলে সাথে সাথে এরেসট করা হবে।
তাতী তাতীর বাবা মা,বোনকে স্পষ্ট জানিয়ে দিল,আর কখনোই তাতী বিয়ে করবে না বা কারো সাথে সম্পর্ক করবে না।যতদিন বেঁচে থাকবে,একাই থাকবে।
তারপর তাতী ঠিক করলো একটা বাচ্চা দত্তক নিবে।তাতীর বাবা মা রাজী হলো।এক মাসের একটা ছেলে সন্তান কে তাতী দত্তক নিল।তাতী ঠিক করলো,তাকে নিয়েই সারাজীবন কাটিয়ে দিবে।
বাচ্চাটার হাসি, কান্না দেখে ও যতন করে তাতীর সময় কেটে যায়।তাতী যখন অফিসে যায় মায়ের কাছে বাচ্চাটাকে রেখে যায়।তাতী এখন খুবই ব্যসত।অফিস,বাসা, সন্তান আর কিছু সামাজিক কাজকর্ম নিয়ে।দম ফেলার সময় নেই।
জীবন নদীর মতো বয়ে যায়।এঐ জীবন নদীতে কখনো কান্না,কখনো হাসি এভাবেই তো প্রতিটি মানুষের জীবন কাটে।তাতীর বাসার সমস্ত ফোন নাম্বার পরিবর্তন করে ফেললো, শৈবাল যাতে আর ফোন দিতে না পারে।সরল তাতীর মতো কঠিন আর কেউ নেই।কেউ না বুঝে অপরাধ করলে ক্ষমা করা যায় কিন্তু বেঈমান কে কখনোই ক্ষমা করা যায় না।
এদিকে নারীবাজ,জুয়ারী শৈবাল এর জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠলো। শৈবাল এর বাড়িতে ও কেউ এখন শৈবাল কে দেখতে পারে না। তাতীর মতো অমূল্য রত্ন কে অবহেলা করার দায় শৈবাল এখন প্রতি পদে পদে ভোগ করছে। প্রকৃতি প্রতিশোধ নেয়। সৃষ্টি কর্তা কাউকেই ছেড়ে দেন না।আমরা হয়তো অনেক সময় অনেককিছুই ভুলে যাই কিন্তু সৃষ্টি কর্তা ঠিকই শাস্তি দিয়ে দেন।কাউকেই ছেড়ে দেন না। শুধু সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হয়।
তাতী এক সময় আস্তে আস্তে সব ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করে।তাতীর বাবা মা খুব চেষ্টা করে তাতীর নাক ফুলটা খুলে ফেলার জন্য।তাতীকে অনুরোধ করে খুলে ফেলতে।তাতী কিছুতেই রাজী হয় না।তাতী বলে, শৈবাল এর সাথে সম্পর্ক থাকুক আর না থাকুক এটা আমার ভালবাসার চিহ্ন।
আজ কত বছর হয়ে গেল,তাতীর শৈবাল এর সাথে কোন সম্পর্ক নেই। কিন্তু এঐ নাকফুল আর তাতী খুললো না।তাতী ঠিক করেছে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এটা পড়ে থাকবে।
শৈবাল এর সাথে তাতীর দেখা হয়েছিল ১ এপ্রিল। সেই দিনটি তাতী একা একাই স্মরন করে।তাতী ও শৈবাল বিয়ে করেছিল ১৪ ফেব্রুয়ারি।ভ্যালেনটাইন ডে তে।তাতী সেই দিনটিও স্মরন করে।এঐ দুটো দিন তাতী একটু অন্য রকম হয়ে যায়।কথা বলে কম, মাঝে মাঝে কান্না করে।তাতীর বাবা মা বুঝতে পারে। কিন্তু তাতী কে কিছু বলে না।তাতীর মা কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে এঐ ভেবে যে তাতী নতুন কাউকে গ্রহণ না করুক একা একা তো বাঁচতে শিখেছে।
তাতীর খালাতো ননদ নীলা একদিন তাতী কে ফোন দেয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাতীর সাথে নীলার বন্ধুত্ব আছে। হটাৎ নীলা একদিন তাতীকে ফোন দেয়।তাতী বলে, শৈবাল নীলার পরিবার সম্পর্কে তাতী কে ভুল বুঝিয়েছিল।নীলার পরিবার সম্পর্কে মিথ্যা কথা বলেছে।বলেছে,নীলার পরিবার খুব খারাপ।তারা তাতীর ভাল চায় না।এবার নীলা বুঝতে পারলো তাতীর নিরব থাকার কারন।
তাতী সব সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যখন ছবি দিতো,নীলা খেয়াল করতো তাতীর নাক ফুলটা তাতী খোলে নি শৈবাল এর সাথে বিচ্ছেদের পাঁচ ছয় বছর চলে যাওয়ার পর ও।তাতীকে নীলা জিজ্ঞেস করলো,তুমি নাক ফুলটা খোল নি কেন??তাতী বললো,এটা আমার ভালবাসার চিহ্ন। শৈবালের কাছ থেকে দূরে সরে গেলেও এটা খোলা সম্ভব না।কারন আমি শৈবাল কে মনে প্রাণে ভালবেসেছি। শৈবাল ই আমার প্রথম ও শেষ ভালবাসা।তবে বেইমান কে আমি কখনোই ক্ষমা করতে পারবো না।
নীলাকে তাতী বললো,তাতীর খুব ইচ্ছে তার বাবা মা,ভাই বোন ও পালিত সন্তান কে নিয়ে আবার কোন একদিন বাংলাদেশে বেড়াতে আসবে।তাতীর খুব শখ কক্সবাজার ও সিলেট যাওয়ার।নীলা বললো,তাতী তোমার যখন ই সময় ,সুযোগ হয় এসো।
নীলা তাতীকে বললো, আমার দেশের সবাই বেঈমান না।আমার দেশে সবাই শৈবাল না। আমার দেশেও খারাপ মানুষের পাশাপাশি ভাল মানুষ ও আছে।তাতী তুমি বেড়াতে এসো।
তাতী এত ব্যসততার মাঝেও মাঝে মাঝে উদাস হয়ে যায়।চোখের জল একাকার হয়ে যায়। মনের মধ্যে কখনো কখনো গোপন ব্যাথা বেজে ওঠে। মনে হয় যেন জীবনের ছন্দ হারিয়ে গেছে।
আজ ইকোয়েডরের আকাশে ঝড়ের আনাগোনা।একটু পরেই বৃষ্টি নামলো।তাতীর কান্নার জল আর বৃষ্টির জল যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে গেল।তাতীর চোখের জলে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে।
বাংলাদেশ এর আকাশেও আজকে ঝড়ের আনাগোনা। বৃষ্টি শুরু হলো।দুটো ভিন্ন দেশের মানুষ এর ভালবাসার গল্প।দেশ ভিন্ন, মানুষ ভিন্ন, সংস্কৃতি ভিন্ন। কিন্তু মন সে তো যে কোন জায়গায় ই বাঁধা পড়তে পারে। মানুষ এর মনের ব্যাপারটা বিশাল,আকাশের মতো?
এ জাতীয় আরো খবর..
Leave a Reply