1. banglamailnews72@gmail.com : banglamailnews : Zakir Khan
বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১০:০৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
# আহারে # খোরশেদ ।। সমাজে নতুন অপরাধী চক্র তৈরী হচ্ছে কিন্তু ভবিষ‍্যতে এদের রক্ষা করবে কে??।। – – – আশিক ফারুকী “অতঃপর” __ সালমা আক্তার বীরাঙ্গনা নই আমি মুক্তিযোদ্ধা – – – শাহনাজ পারভীন মিতা জলপাই রঙের স্বাধীনতা – – – আরিফুল হাসান প্লাস্টিকের উৎপাদন বন্ধ করতে হবে – উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ান হাসান – – – স্বাধীন আজম –   টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধি, স্বপ্নমায়া – – – – মাহজাবীন আহমেদ বুড়ি মরে গেল – – – মোঃ আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমাম প্রযুক্তির দুনিয়ায় শিক্ষার্থীদের এখন উন্নত জীবন গড়ার দারুণ সময়:– ————–টিপু সুলতান লেখক ও সমাজ চিন্তক ডায়াবেটিস নিয়ে সচেতনতাই পারে ডায়াবেটিস রোগ নির্নয় ও রোগের চিকিৎসা এবং সঠিক ব্যবস্থাপনা – – – ডা: সাদিয়া আফরিন 

# গল্প # মানুষ বনাম কুকুর ### তামান্না চৌধুরী

  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২০
  • ৩৯০ বার
জীবনে প্রথম বারের মত বাংলাদেশে বেড়াতে যাচ্ছে পিংকী।সুদূর ইংল্যান্ডের লন্ডনে জন্ম ওর।নিজের দেশ বাংলাদেশকে নিয়ে পিংকীর অনেক গর্ব। মনে মনে চোখ বুজে কল্পনায় আঁকে সবুজ পাতার রংয়ে রঙিন বাংলাদেশের ম্যাপটা।ঋতুবৈচিত্রে ভরপুর দেশটার উত্তরে হিমালয়,পূর্বে আসাম-ত্রিপুরা, দক্ষিনে ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন আর সর্বদক্ষিনে নীল বঙ্গোপসাগর।
কিন্তু উইন্টার ভ্যাকেশনে, এদেশে পা রাখতেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো পিংকীর।এয়ারপোর্ট থেকে ওদের বহন কারী গাড়ীটা যখন চলার পথে পাশের আরেকটা গাড়ীর বাম্পারে একটু স্পর্শ লাগালো।পাশের গাড়ীর ড্রাইভার সামনের রাস্তা ব্লক করে গাড়ী থামিয়ে দিলো।তারপর অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করতে করতে গাড়ী খুলে ওদের গাড়ীর ড্রাইভারকে মারার জন্য তেড়ে এলো।রাস্তায় গাড়ী দুটো ঘিরে বেশ বড়সড় জটলা লেগে গেলো।কেউতো সে ঝগড়া থামাতে এলোই না বরং ভীড় জমিয়ে মজা দেখছিলো।কেউ কেউ আবার তরমুজের বিচির মতো দাঁত বের করে বিশ্রী ভাবে হাসছিলো আর ফ্যাল ফ্যাল করে দেখছিলো ও আর ওর বিদেশী মাকে।আর তা দেখে পিংকীর ভীষণ রাগ লাগছিলো।এটা কেমন কথা! অশ্লীল ভাষায় গালি গালাজ করা যেমন ভালো না,তেমনি সেটা মজা করে শোনা তো আরো খারাপ!দীর্ঘ সময় পর ট্রাফিক পুলিশ এসে সেই জটলা ভেংগে সরিয়ে দেবার পর,ওদের গাড়ী এবার দীর্ঘ ট্রাফিক জ্যামে পড়ল।পিংকী কি আর করে!গাড়ীর গ্লাস নামিয়ে পাশের রাস্তা দেখছিলো।এমন সময় এক অদ্ভুত দগদগে আগুনে পোড়া মুখে টাটকা রক্ত মাখানো এক ছেলে এলো ভিক্ষা চাইতে! পিংকী অনেক ভয় পেলো, কারণ ও জীবনে কখনো এমন কদাকার চেহারা দেখেনি! বাইরের একটা ডাস্টবিন থেকে বিকট গন্ধ আসছিলো।পিংকী চট করে গাড়ীর গ্লাস উঠিয়ে দিলো।কারা যেনো ডাস্টবিনে ময়লা না ফেলে ডাস্টবিনের আশেপাশে ময়লা ছড়িয়ে ফেলেছে! রাস্তার সবাই নাকে রুমাল গুজে চলাফেরা করছে!এমন সময় একটু দূরে ওর চোখে পড়লো একটা ছেলে ট্রাফিক আইল্যান্ডে ঐ ডাস্টবিনের পাশেই কাচুমাচু হয়ে ঘুমাচ্ছে! অনেক মাছি ছেলেটার মাথার কাছে উড়ছে!ঐ ডাস্টবিনের পাশেই একটা মহিলা মনে হয় ছেলের মা হবে!তার কোলে আরেকটা ছোট্ট বাচ্চা!মহিলাটা ডাস্টবিনের পাশে পড়ে থাকা একটা ফল তার কোলের বাচ্চাটাকে খাওয়াচ্ছে!পিংকী মনে মনে ভাবে, যদি এদেশের আইল্যান্ডে ফুলের গাছ না লাগিয়ে নানা রকম ফলের গাছ লাগানো হতো,কত ভালো হতো!গাছে গাছে পাকা ফল ঝুলে থাকতো!বাচ্চাটা তাজা পাকা ফল খেতে পারতো!আরো কিছুদূর যাবার পর পিংকী দেখলো একটা ছেলে একটা বিশাল বোঝা নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছে!ছেলেটা কোথায় যাচ্ছে ছেলেটা?যদি ছেলেটা ভারসাম্য রাখতে না পেরে পড়ে যায়!আর এতটুকু ছেলের মাথায় এত বড় বোঝা কেনো?পিংকী বুঝতে পারে না।শুধু ঐ ছেলেটাই নয়, পথের পাশে আরো ছেলেমেয়েকে ছেড়া নোংরা কাপড় পরে ইট ভাংতে,কাগজ ময়লা ঘেটে ঘেটে কুড়াতে দেখে অনেক কষ্ট পেলো!আচ্ছা ওরা স্কুলে যায় না?ড্রাইভার আংকেল বললো- ওরা তো খেতেই পায় না স্কুলে যাবে কি ভাবে?কেনো ওরা খেতে পায় না?পিংকীর এ প্রশ্নের জবাবে বাবা বললো -বাচ্চাগুলো ছোট থাকতেই নানা রকম কাজ করে তাদের বাবা মাকে সাহায্য করে।কারণ এদের বাবামায়ের আয় খুব কম।কারণ এদেশে সবাই চাকরী পায় না সহজে।পিংকী হতাশ হয়ে বলে ‘বাবা এদেশে৷ সব বাচ্চা স্কুলে গেলে, সবাই চাকরী পেলে কত মজা হতো তাই না?চাকরীটা যতই ছোট হোক না কেনো!নিজে আয় করে তা থেকে ইচ্ছা মত ব্যায় করতে পারতো! মা আর বাবা পেপারের হেডলাইনে চোখ বোলাতে বোলাতে ওর কথায় সায় দেন।
ওদের বাসায় কাজ করে জুলেখা,ওর সমবয়সী।খুব চটপটে স্মার্ট মেয়ে,অল্প কয়দিনেই পিংকীর বন্ধু হয়ে গিয়েছে।পিংকী ওর শর্টকাট নাম দিয়েছে জুলি একদিন জুলি পিংকীকে ওর বাড়ীতে নিয়ে গিয়েছিলো।অনেক বড় একটা জায়গা। অনেকগুলো ছোট ছোট জানালা বিহীন ঘুপচী ঘর।পুরো পরিবার থাকে এক একটা ঘুপচী ঘরে!বড়রা জোরসে শব্দে টিভি দেখছে।কেউ কেউ চুলায় রান্না দিয়ে সবজি কুটছে।তিন-চারটা মেয়ে লাইন করে একে অন্যের মাথার উকুন দেখছে।পিংকী এ রকম কান্ড ন্যাশনাল জিওগ্রাফি চ্যানেলে বানরদের করতে দেখেছিলো।মানুষের মাথায় আবার উকুন হয়?জুলি বললো,ওদের মাথায় এখানকার প্রত্যেকের মাথায় প্রচুর উকুন!খোলা এক চিলতে উঠানে বাচ্চারা সব খেলা আর মারামারিতে ব্যাস্ত!প্রায় সবারই নোংড়া এলোমেলো চুল!কারো পায়ে ছেঁড়া স্যান্ডেল!কারো শার্টের বোতাম নেই,কারো ঠোঁটের কোণায় ঘা আবার কারো নাক ভর্তি সর্দি! ওর বাড়ি ফেরার পথে বাচ্চা গুলি খেলা থামিয়ে ওর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে! ও গাড়ীতে ওঠার পরে সিট ব্যাগের পিছনে রাখা পকেট থেকে চকলেট বের করে ওদের সবাইকে দিলো।চকলেট পেয়ে কৃতঙ্গতার হাসি দিলো।পিংকীও ওদের দেখে হেসে হাত নেড়ে বিদায় জানালো।
এখন শীতের সময়।তাই দাদার অফিস থেকে দাওয়াত
পেলো পিকনিকের ।ছোটদের নানা রকম খেলার প্রতিযোগিতা ছিলো।চকলেট দৌড়,মার্বেল দৌড়।পিংকী চকলেট দৌড়ে প্রথম হলো।।বড়দের জন্যও ছিলো ক্রিকেট, মিউজিক্যাল চেয়ার,চোখ বেঁধে হাড়ি ভাঙা সহ মজার মজার ইভেন্ট।এখানে পিংকী অনেক বন্ধু পেয়েছে। সব চেয়ে মজার ব্যাপার হলো, ওর এখানকার সব বন্ধুদের নাম বিভিন্ন রঙের নামে! যেমন- কমলা, সবুজ,সোনালী আর ও পিংকী!দারুন মজা তাই না!সব রঙগুলো এক সাথে মজা করে এদিক ওদিক ঘুরতে লাগলো।হইচই করে ঘুরে বেড়ানোর পর দুপুরে সবাই মজা করে খেতে বসলো!কিন্তু খেতে বসার পর সারা দিনের আনন্দটাই যেনো মাটি হয়ে গেলো পিংকীর!অনেক খেলাধূলা আর ঘোরাঘুরির পর ক্ষিদেয় পেট চোঁ চোঁ করছিলো সবার। প্রায় গোগ্রাসে মজাদার খাবার সাবাড় করার শেষ পর্বে পিংকীর চোখ আটকে গেলো একটা ক্ষুধার্থ কুকুরের দিকে।কুকুরটা জিহবা বের করে করুণ চোখে চেয়ে আছে ওদের দিকে।পিংকী তাড়াতাড়ি নিজের প্লেটের বাড়তি হাড় মাংস চর্বি কুকুরটাকে দিয়ে দিলো।কুকুরটা গপ করে খেতে যাবে এমন সময়ই ঘটলো ঘটনাটা! ছোট ছোট তিন চারটা ছেলেমেয়ে হাতে পলিথিনের ব্যাগ নিয়ে কুকুরকে দেয়া সেই খাবার কেড়ে নেয়ার প্রতিযোগিতায় মেতে উঠলো।ওদের দুহাতে আধা খোলা স্বচ্ছ পলিথিন ব্যাগ গুলো দিয়ে স্পষ্ট উঁকি মারছে খাবারের উচ্ছিষ্টাংশ! কুকুরটা খাবার সংগ্রহের প্রতিযোগিতার জিততে না পেরে একটু দূরে গিয়ে বসলো। পিংকী একবার তাকায় কুকুরের দিকে আরেকবার ছেলেমেয়েদের চাহনীর দিকে।কুকুরটা তখনও বসে আছে ঐ একই ভংগিতে, জিহবা বাড়িয়ে! কুকুর আর ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের চাহনী পিংকীর কাছে মনে হলো একই!আজ বিংশ শতাব্দীতে এসে একটা কুকুর আর সৃষ্টির সেরা মানুষ গুলোর মধ্যে কোন পার্থক্য বের করতে পারছে না পিংকী? এরকম একটা পরিস্থিতির কখনো সম্মুখিন হতে হবে তা কখনো ভাবেনি ও। আশেপাশের গার্ডরা ছেলেমেয়ে গুলোকে গালিগালাজ করে, আবার কাউকে চড়থাপ্পড় মেরে তাড়াতে হিমশিম! কিন্তু….ঐ কুকুর টাকে গার্ডরা কেউই তাড়াচ্ছে না! তাহলে ঐ কুকুরটা থেকে ঐ গরীব বাচ্চাগুলোর মর্যাদা কম? ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবার পুরো পথেই গাড়ীতে ও স্পষ্ট মনে হচ্ছিলো বাচ্চাগুলো আর কুকুরের চাহনী!!

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..