1. banglamailnews72@gmail.com : banglamailnews : Zakir Khan
শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৩১ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
# আহারে # খোরশেদ ।। সমাজে নতুন অপরাধী চক্র তৈরী হচ্ছে কিন্তু ভবিষ‍্যতে এদের রক্ষা করবে কে??।। – – – আশিক ফারুকী “অতঃপর” __ সালমা আক্তার বীরাঙ্গনা নই আমি মুক্তিযোদ্ধা – – – শাহনাজ পারভীন মিতা জলপাই রঙের স্বাধীনতা – – – আরিফুল হাসান প্লাস্টিকের উৎপাদন বন্ধ করতে হবে – উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ান হাসান – – – স্বাধীন আজম –   টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধি, স্বপ্নমায়া – – – – মাহজাবীন আহমেদ বুড়ি মরে গেল – – – মোঃ আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমাম প্রযুক্তির দুনিয়ায় শিক্ষার্থীদের এখন উন্নত জীবন গড়ার দারুণ সময়:– ————–টিপু সুলতান লেখক ও সমাজ চিন্তক ডায়াবেটিস নিয়ে সচেতনতাই পারে ডায়াবেটিস রোগ নির্নয় ও রোগের চিকিৎসা এবং সঠিক ব্যবস্থাপনা – – – ডা: সাদিয়া আফরিন 

# শ্রাবণ রাতের বর্ষণ # পর্বঃ ১১,পর্বঃ ১২,পর্বঃ ১৩,পর্বঃ ১৪ এবং পর্বঃ ১৫ ### ঈশানুর তাসমিয়া মীরা

  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২০
  • ২০৫ বার

 

#’পর্বঃ ১১

.

রাণী অমরার অগ্রে দাঁড়িয়ে আছেন সম্রাট রুদ্রদীপ। রাণী অমরা মুখ গম্ভীর করে রেখেছেন। তার পাশেই দাঁড়ানো রত্নমা। তার মুখেও বিরাজমান কেমন রাগী রাগী ভাব। যাতে বিন্দু মাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই রুদ্রের। থমথমে পরিবেশের ইতি টেনে রাণী অমরা এবার গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলেন,

—” এসব করার কারন কি রুদ্র? জানতে পারি?”

—” আমি শুধু ওর ভালোবাসার গভীরতা জানতে চেয়েছি মাতা। ও বলেছিল ও আমার জন্য সব কিছু করতে পারবে। অথচ সামান্য কেশ কাঁটা নিয়ে রাজদরবার ডেকে নিয়ে বসে আছে। ইহা কি পরীক্ষার ফলাফল নয় মা?”

রাণী অমরা মুখে আরও গাম্ভীর্য এঁটে নিলেন। খানিকটা সময় চুপ থেকে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে রইলেন। তার সন্তান তো ঠিকই বলছে। যদি তাকে ভালোবেসে সব করবে বলেছে রত্নমা তাহলে কেশ কাঁটায় এত উগ্য হয়ে উঠছে কেন? সামান্য কেশই তো! মৃত্যু তো চায় নি রুদ্র। তবুও এ ভাবনার পরপরই মনে হলো সবকিছু ওই চন্দ্রা কিংবা রুদ্রের দোষ। হয়তো চন্দ্রা রুদ্রের কানে বিষ ঢেলে দেওয়ায় রুদ্র সবার সঙ্গে এরুপ আচরণ করছে, নতুবা রুদ্রের মনের কোন এক জায়গায় দোষ আছে। ভেবেই আবারও বলে উঠলেন রাণী অমরা,

—” তুমি কি সবার সঙ্গে ওই যুবতীটির কারনে এরুপ ব্যবহার করছো রুদ্র? রত্নমার এত সৌম্য কেশ কেঁটে ফেললে তুমি? কাউকে আকর্ষণ করার ক্ষমতাই তো সে হারিয়ে ফেলেছে। তোমাকে আকর্ষণ করবে কিভাবে?”

রুদ্র ভ্রুকুটি করে থমথমে কণ্ঠে বললেন,

—” ওই যুবতী অর্থাৎ? চন্দ্রপ্রভা ওর নাম মাতা। আশা করি সেই নামেই ডাকবেন। এবং রত্নমা তো শুধু আমাকেই আকর্ষণ করবে তাই না? তাহলে অন্য কাউকে রুপের মাধ্যমে আকর্ষণ করার কথা আসছে কেন? আর তাছাড়া এই রুদ্রকে আকর্ষণ করতে হলে রুপ নয় গুণের প্রয়োজন মাতা। প্রয়োজন একজন রাজকুমারী থেকে রাণী হয়ে ওঠার অদম্য ইচ্ছে ও তা আমল করার জন্য প্রসংশনীয় কর্ম। সে যেকোনো রাজ্যের রাণীই হোক না কেন, নিজের দায়িত্বে পিছু হটবে না। তার থাকবে রাণীদের মতো তেজ আর জেদ। যা রত্নমার মধ্যে নেই। সে তো একজন বিশাল সম্রাজ্যের সম্রাটের সঙ্গে বিবাহের মাধ্যমে রাণী হতে চেয়েছে। এবং সারাদিবা-রাত্রি আয়েশ-আরামে কাটাতে! সুতরাং বলা যায়, রত্নমার আমাকে আকর্ষণ করবার মতো সামার্থ কোনোদিনই ছিল না। কেশ আছে বলেই কি, আর ছিল বলেই কি!”

রাণী অমরা ক্ষুণ্ণ হয়ে বললেন,

—” চন্দ্রপ্রভার কি এই গুণগুলো আছে?”

—” অবশ্যই! যদিও প্রথমে ওর রুপ দেখেই আমি ওর প্রেমে পরেছিলাম। এবং চন্দ্রা কিছুটা হলেও ভীতু। কিন্তু ওর তেজ-জেদ, নিজ রাজ্যের রাণী হয়ে উঠবার অদম্য ইচ্ছে, দায়িত্ব জ্ঞান ও আমার প্রতি কম আকর্ষণ দেখেই ওর প্রতি প্রেম থেকে ভালোবাসা জেগে উঠেছে আমার। চন্দ্রার যদি এখন আমি কেশও কেঁটে ফেলি তবুও ওর প্রতি বিন্দু মাত্র আকর্ষণ কমবে না আমার। কেননা আমি চন্দ্রার রুপের চেয়ে ওর ভেতরের সত্ত্বাকে বেশি ভালোবাসি মাতা।”

কথাগুলো শুনে লাভার আগুনে যেন জ্বলে উঠলো রত্নমা। শুধু হাত মুঠ করে দাঁড়িয়ে আছে সে। মাঝে মাঝে বিষাক্ত চাহনী দিয়ে রুদ্রকে দেখছে। সেটা নিত্যান্তই সবার অগোচড়ে। এদিকে রুদ্র কথা শেষ হতেই চলে যান কক্ষ থেকে। রাণী অমরা ওভাবেই বসে আছেন। রুদ্র কি বলেছেন তা বুঝবার চেষ্টায় আছেন তিনি। কেননা কথাগুলি বুঝেও যেন বুঝতে পারছেন না রাণী অমরা।

____________________

একাকিত্বের সঙ্গী আকাশের পানে চেয়ে আছে চন্দ্রা। বাহির থেকে দমকা হাওয়া মৃদু মৃদু তার শরীরও স্পর্শ করছে। শ্রাবণ মাসের এই আবহাওয়ায় এমন স্পর্শে অদ্ভুদ এক ভালো লাগা জেগে উঠছে চন্দ্রার। যা নিমিষেই হারিয়ে যায় পশ্চাৎ থেকে আসা রুদ্রের শান্ত কণ্ঠে,

—” আমার সঙ্গে ঘুরতে যাবে চন্দ্রা? কর্পনরাজ্যে!”

চন্দ্রা মহাবিরক্তি নিয়ে পশ্চাতে রুদ্রের পানে তাকান। রুদ্রের মুখে লেগে আছে মিষ্টি হাসি। বরাবরের মতো শান্ত স্বরে রুদ্র বলে উঠেন,

—” যাবে না আমার সঙ্গে?”

—” না!”

চন্দ্রার এক বাক্যের উত্তর। তবে উত্তরটা ঠিক পছন্দ হলো না রুদ্রর। তবুও বিরক্তি কিংবা রাগের ছিটেফোটাও প্রকাশ করলেন না রুদ্র। চন্দ্রার দিকে এগোতে এগোতে বলে উঠলেন,

—” যাবে না?”

রুদ্রের আগানো দেখে দেওয়ালের সঙ্গে কিছুটা ঠেঁসে দাঁড়ালেন চন্দ্রা। বিরক্ততে চোখ-মুখ কুঁচকে বললেন,

—” আপনি কি শুনতে পান নি? আমি বলেছি আমি যাবো না।”

—” হুম তাই তো।”

বলতে বলতেই চন্দ্রার একদম কাছে এসে দাঁড়ালেন রুদ্র। সঙ্গে সঙ্গে চন্দ্রা অনুভব করতে পারলেন রুদ্র নেশা করেছেন। মুখের আরও বিকৃতি করে মুখ ফিরিয়ে নিলেন চন্দ্রা। রাগী কণ্ঠে বলে উঠলেন,

—” আপনি নেশা করে এখানে মাতলামো করতে এসেছেন আমার সঙ্গে?”

রুদ্র ঘর কাঁপানো হাসি হাসলেন কিছুক্ষণ। পরক্ষণেই হাসি থামিয়ে বলে উঠলেন,

—” যদি তা করা যেতো প্রিয়তমা! কিন্তু জানো কি, তোমাকে দেখার পর থেকে নেশাও এই শরীরে কাজ করে না। মাতাল না হয়ে মাতলামো কিভাবে করি বলো তো?”

বলেই আবারও হাসলেন রুদ্র। হাত দিয়ে চন্দ্রার মুখ নিজ মুখের কাছে আনতেই চন্দ্রা চেঁচিয়ে উঠলেন,

—” আপনার মুখ দূরে সরান দয়া করে। বিশ্রি গন্ধে দম বন্ধ হয়ে আসছে আমার।”

রুদ্র ভ্রু ক্রুটি করে তাকিয়ে রইলেন চন্দ্রার পানে। তবে তা ক্ষণিকের জন্য। পরক্ষণেই চন্দ্রার মুখ নিজের মুখের অতি নিকটে এনে লম্বা একটা ফুঁ দিলেন। চন্দ্রা চোখ-মুখ শক্ত করে দম বন্ধ করে নিলেন সঙ্গে সঙ্গে। একটু পর রুদ্র সরে দাঁড়াতেই চন্দ্রা আবারও চেঁচিয়ে ওঠেন,

—” সমস্যা কি আপনার? নির্লজ্জের মতো এরুপ আচরণ কেন করছেন আমার সঙ্গে?”

রুদ্র দু’কদম এগিয় এসে বললেন,

—” করব না আর এখনের জন্য। শুধু বলো আমার সঙ্গে ঘুরতে বের হবে।”

—” কখনও না।”

—” তাহলে এই নির্লজ্জের নির্লজ্জতা সামলাও।”

বলেই এগিয়ে আসতে লাগলেন রুদ্র। চন্দ্রা ঘাবড়ে গেলেন। মদের ওমন বিষাক্ত ঘ্রাণ সহ্য করা অসম্ভব চন্দ্রা নিকটে। কি করবেন বুঝতে পারছেন না চন্দ্রা। এদিকে রুদ্র ক্রমশই এগিয়ে আসছে তার অগ্রে। তাই বাধ্য হয়ে চন্দ্রা শত দ্বিধার সঙ্গে বলে উঠলেন,

—” আমি আপনার সঙ্গে যেতে রাজি। তবুও অনুগ্রহ করে কাছে আসবেন না।”

রুদ্র বাঁকা হাসলেন। কিছু না বলেই চন্দ্রাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন। কানে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলেন,

—” তুমি হলে আমার সেই নেশা, যা থেকে নিজেকে দূরে রাখা অতি কষ্টদায়ক চন্দ্রপ্রভা। আর এই রুদ্রদীপ কখনও কোনো কষ্ট সহ্য করে না।”

থেমে থেমে আবারও বললেন রুদ্র,

—” তৈরি হয়ে নাও তাহলে। আমি খানিকবাদ পর আসছি।”

____________________

রত্নমা আকাশের পানে তাকিয়ে নিশব্দে কাঁদছে। ঠিক কাঁদছে বললে ভুল হবে। হিংসা আর রাগ দেখাতে না পেরে চোখ থেকে আপনা আপনি পানি পরছে তার। হঠাৎ ঘাড়ে কারো উষ্ণ নিশ্বাস অনুভব করতেই পেছনে ফিরে তাকায় সে। দেখতে পায় রুদ্র বাঁকা হেসে তার পশ্চাতে দাঁড়িয়ে আছে। কিছু না বলেই রত্নমার গাল স্পর্শ করতে লাগলেন রুদ্র। রত্নমা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল মাত্র। রুদ্রের ভাব গতি কিছুই তার আয়ত্বে নেই। একদমই নেই।

____________চলবে__________

Rehnuma Tasneem Islam, Aysha Siddika , Afrin Shuvra সহ সবার জন্যে রইল অবিরাম ভালুবাসা

 

 

 

 

 

#’পর্বঃ ১২

.

রত্নমার দিকে ক্রমশই এগিয়ে আসছেন রুদ্র। একসময় একদম কাছে এসে দাঁড়িয়ে রত্নমার ছোট ছোট চুলগুলোতে হাত বোলালেন তিনি। বাঁকা হেসে বললেন,

—” যে যাই বলুক! তোমাকে কিন্তু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কেশে দারুণ লাগছে। কামড়াতে ইচ্ছে করছে।”

রত্নমা চমকায়। এত ভালোবাসা! রুদ্র তার প্রতি হঠাৎ এত প্রেমময় বার্তা গাইছে কেন? সন্দিহান দৃষ্টিতে রুদ্রের পানে তাকালো রত্নমা। একটু আগেও যে কিনা তার গুণ নেই বলে তাকে অপমান করছিল, সে এখন তার তারিফ করছে? ব্যাপারটা ঠিক হজম হলো না রত্নমার। তবে রুদ্রও রত্নমাকে ভাববার কোনো প্রহর দিলেন না। একটানে নিজের অনেকটা কাছে এনে দাঁড় করালেন তাকে। বলা বাহুল্য, রত্নমাকে নিজের একদম কাছে আনলেও তার হাত স্পর্শ করা ছাড়া এক বিন্দু জায়গাও স্পর্শ হয় নি দু’জনের মাঝে। এতে যদিও কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই রত্নমার। সে তো রুদ্রের মতিগতি বুঝতে চাইছে। খুব করে চাইছে! তবে প্রতিবারের মতো সে এবারও ব্যর্থ। রুদ্রকে বোঝা যে খুব মুশকিল। রুদ্রের নেশাময় সেই চোখদু’টোর দিকে তাকাতেই রত্নমা অধিক আবেগী হয়ে উঠছে। সবকিছু যেন ধোঁয়াশা হয়ে গেছে। রুদ্রের প্রতি দুর্বল হওয়া ছাড়া আর কোনো দিক-বেদিক চিন্তা করার সময় নেই তার। রুদ্র যা বলছে সব সঠিক। সব! বাকি সবাই মিথ্যুক। মিথ্যাচার করছে তার সঙ্গে। রত্নমার এ ভাবনাটাকেই কাজে লাগালেন রুদ্র। প্রতিবারের মতো রত্নমার গাল স্পর্শ করে আলতো হাতে বোলাতে লাগলেন। মৃদু কণ্ঠে বলে উঠলেন,

—” মাতার অগ্রে তোমাকে ওমন কটু কথা বলায় তুমি কি রাগ করেছ রত্নমা?”

রত্নমা মাথা নাড়ায়। সে রাগ করে নি। অথচ একটু আগেও রাগে, অপমানে, হিংসায় জ্বলে পুড়ে যাচ্ছিল সে। আলবাদ যাচ্ছিল। আর এখন! এখন সব শান্ত! রত্নমার মাথা নাড়ানো দেখে রুদ্র হাসলেন। অতীব শান্ত কণ্ঠে বললেন,

—” তোমাকে একটা কথা বলার ছিল।”

—” বলুন।”

রুদ্র বলতে গিয়েও বলতে পারলেন না। রত্নমার একটু পাশে থাকা দর্পণে (আয়না) স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে কেউ দাঁড়িয়ে আছে তাদের পশ্চাতে। আর সে ‘কেউ’ আর কেউ নয় সয়ং চন্দ্রা। রুদ্র প্রথমে চমকে যান চন্দ্রাকে দেখে। কেননা চন্দ্রা নিজ কক্ষ থেকে কিভাবে বেরোলো? তাছাড়া যেভাবেই বেরিয়ে আসুক না কেন রত্নমার কক্ষে ঢোকার আগে তো দাসীদের তাদের জানান দেওয়ার কথা! পরক্ষণেই মনে হলো হয়তো কিরণের কাজ এটি। চন্দ্রার অতীব রুক্ষ আচরণের সঙ্গে না পেরে চন্দ্রাকে এখান অব্দি আনতে সাহায্য করেছে সে। এরুপ বেশ কয়েকবারই করতে চেয়েছে চন্দ্রা। রুদ্রের আদেশে কিরণ চন্দ্রাকে সাহায্য করে নি। শেষে রুদ্রই বলেছিল চন্দ্রা যদি অতি পাগলামো করে তাহলে তার কথা যেন কিরণ শোনে। কিন্তু চন্দ্রাকে কোনোরুপ একা না ছাঁড়ে। ভাবতেই আরশিতে(আয়নায়) দেওয়ালের ওপাশে লুকিয়ে থাকা চন্দ্রাকে আরো একবার দেখে নিলেন রুদ্র। কিছু একটা ভেবে বাঁকা হেসে রত্নমার অতি নিকটে এগিয়ে গেলেন। নিজের সাথে রত্নমাকে মিশিয়ে গালে স্পর্শ করতে লাগলেন গভীর ভাবে। রত্নমা রুদ্রের স্পর্শে আবেশে চোখ বন্ধ করে নিলো। চন্দ্রা এসব দেখতে পারছে না আর। নিজেরই কেমন গা ঘিনঘিন করছে। একটা মানুষ এতটা জঘন্য হয় কিভাবে? একবার এর কাছে তো একবার ওর কাছে। রুদ্র কি ক্লান্ত হন না এসবে? প্রশ্নটা বেশ ভাবায় চন্দ্রাকে। তবে এখন এসব কিছু নিয়ে ভাবলে চলবে না। চন্দ্রার মুখ্য লক্ষ হল রুদ্রের দুর্বলতা অথবা এমন কিছু তথ্য সংগ্রহ করা যার প্রতিদানে সে এই নরক থেকে বেরোতে পারবে। তাই ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও দেওয়ালের ওপাশে লুকিয়ে রুদ্র আর রত্নমার কথোপকথন শোনার জন্য অধীর আগ্রহে দাঁড়িয়ে আছে সে। কক্ষের বাহিরেই হয়তো দাঁড়িয়ে আছে কিরণ।

এদিকে রুদ্র রত্নমার গাল স্পর্শের পাশাপাশি আড়চোখে দর্পণের দিকে তাকাচ্ছেন। চন্দ্রার বিরক্তিমাখা মুখশ্রী বেশ উপভোগ করছেন রুদ্র। রত্নমাও যেন হারিয়ে যাচ্ছে রুদ্রের মাঝে। চোখ বন্ধ করে অনুভব করছে রুদ্রকে। তার সেই কাজে ব্যঘাত ঘটিয়ে রুদ্র মৃদু স্বরে বলে উঠলেন,

—” তোমার অবশিষ্ট কেশ যদি আমি কেটে ফেলি তাহলে কেমন হবে রত্নমা?”

রুদ্রের কথায় চমকে উঠল রত্নমা। দু’কদম পিছিয়ে গেলো। তা দেখে রুদ্র উচ্চস্বরে হেসে উঠল। আবারও রত্নমার কাছে এসে বলল,

—” ভয় পাচ্ছো কেন? ভালোবাসার মানুষকে ভয় পেতে নেই। এতে পাপ হয়। অধিক পাপ! যার শাস্তি আমি তোমাকে দিবো।”

রত্নমা ঠিক বুঝতে পারল না রুদ্রের কথা। সব কিছু কেমন উলোটপালোট হয়ে গেছে তার। অথচ তাকে এভাবে দেখে দিব্বি হাসছেন রুদ্র। রত্নমাকে হা করে থাকতে দেখে রুদ্র আবারও হাসলেন। হাত দিয়ে রত্নমার থুতনি ধরে মুখ বন্ধ করে দিলেন। ধীর কণ্ঠে বললেন,

—” আজ রাতে তৈরি তো তুমি রত্নমা?”

এ যেন না চাইতেও হাতে চাঁদ পাওয়ার মতো। কিন্তু রত্নমা এটা বুঝতে পারছে না হঠাৎ রুদ্রের এত পরিবর্তন কেন? সন্দেহ হতে গিয়েও কেন যেন সন্দেহ করতে পারছে না রত্নমা। এত দিনের অপেক্ষার পর যখন রুদ্রই নিজ থেকে তার কাছে আসছে তখন এত ভাবনার কিসের? এদিকে চন্দ্রা বারংবার রুদ্রের এসব বাজে কথা শুনে বিরক্তিতে মুখ কুঁচকে রেখেছেন। এখানে যে কোনো কাজের তথ্য জানা সম্ভব নয় তা বুঝে গেছেন ইতোমধ্যে। তাই রত্নমার কক্ষ থেকে বেরিয়েই কিরণকে নিয়ে নিজ কক্ষের দিকে অগ্রসর হোন চন্দ্রা। দর্পণে চন্দ্রার চলে যাওয়া দেখে রত্নমা থেকে দু’কদম দূরে এসে দাঁড়ান রুদ্র। বলে উঠেন,

—” তাহলে রাত্রিবেলা দেখা হচ্ছে তোমার সঙ্গে আমার।”

রত্নমা মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে উঠে,

—” জ্বী অবশ্যই রু…. সম্রাট!”

রুদ্র আড়চোখে একবার তাকান রত্নমার দিকে। পরক্ষণেই আবার বলে উঠেন,

—” রাত্রি বেলা আমার কক্ষে না চন্দ্রার কক্ষে আসবে রত্নমা। সাথে কিছু দাসীকে নিয়ে অধীক সংখ্যক ভালো ভালো অলংকার এবং বস্ত্র নিয়ে আসবে। এবং তা অবশ্যই একজন নারীর বিয়ের অলংকার ও পোশাক হতে হবে।”

রত্নমা ভ্রু কুঁচকে বলে,

—” একজন নারীর বিয়ের পোশাক ও অলংকার? কেন? তাছাড়া রাত্রে চন্দ্রার কক্ষে গিয়ে আমি কি করব? আমার তো তখন আপনার কক্ষে হওয়া উচিত। আপনাকে সঙ্গ দিতে!”

এবার রুদ্র বিরক্ত হলেন। বিরক্তিতে ডান ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলেন,

—” আমাকে সঙ্গ দিতে বলেছি আমি? শুধু রাত্রিবেলা দেখা হওয়ার কথা বলেছি। এত বেশি বোঝো কেন হাঁ?”

রত্নমা ঠিক বুঝলো না রুদ্রের কথা। অবুঝের মতো তাকিয়ে রইল রুদ্রের দিকে। রুদ্র থেমে থেমে আবারও বললেন,

—” তোমাকে তো একটা কথা বলা হয় নি। আগামীকাল আমার সঙ্গে চন্দ্রার বিবাহ হচ্ছে।”

ব্যাস, এতটুকু কথা যথেষ্ট ছিল রত্নমার অশান্ত মনটাকে মুহুর্তেই লাভার মতো জ্বলে উঠাবার জন্য। তবে রত্নমা চিৎকার করার আগেই তার মুখ চেপে ধরলেন রুদ্র। দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলেন,

—” ভুলেও এমন ভুল করবে না রত্নমা। নতুবা অনেকদিন হলো কারো গর্দান তলোয়াড় দ্বারা ক্ষত-বিক্ষত করি নি আমি। এতে আমার তলোয়াড়েরও মন অশান্ত হয়ে আছে। এমন না হয় তলোয়াড়কে শান্ত করতে তোমার গর্দান উড়িয়ে ফেলি আমি।”

রত্নমা ‘টু’ শব্দটিও আর করল না। ভয়-ভীতিতে আরষ্ঠ হয়ে রিতিমতো কাঁপতে লাগলো সে।

___________________

নিজ কক্ষে পায়চারী করছে চন্দ্রা। কিভাবে এখান থেকে মুক্তি পাবে সে চিন্তায় গভীর ভাবে মগ্ন সে। কখন থেকে যে রুদ্র এসে তার অগ্রে দাঁড়িয়ে আছে সে দিকে কোনো খেয়ালই নেই তার। হঠাৎ সামনে তাকাতেই চন্দ্রা চমকে যান। রুদ্র তার অগ্রে বুকে হাতে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে। ভ্রু দুটো কিঞ্চিত কুঁচকানো তার। চন্দ্রা তার দিকে তাকাতেই বাঁকা হাসলেন রুদ্র। এগিয়ে যেতে লাগলেন চন্দ্রার দিকে। চন্দ্রা শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইল মাত্র। রুদ্র চন্দ্রার অতি নিকটে এসে কানে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলেন,

—” এখনও তৈরি হও নি যে? আমার জন্য অপেক্ষা করছিলে বুঝি?”

চন্দ্রা বিরক্তিতে রুদ্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বলল,

—” এতটা নোংরা কেন আপনি? প্রথমে রত্নমা তারপর আমি! নির্লজ্জ! আপনাকে দেখতেই গা জ্বলে ওঠে আমার।”

রুদ্র বাঁকা হেসে বললেন,

—” কি করব বলো। একটায় পোষায় না আমার। এজন্যই তো তিনটে বিবাহ করলাম। এবং কালকে তোমাকে করব।”

এ কথার পিঠে চন্দ্রা আর জবাব দিলেন না। রুদ্র চন্দ্রার আরেকটু কাছে এসে বললেন,

—” রত্নমার কক্ষে কেন গিয়েছিলে তুমি? আমার সঙ্গে সাক্ষাত না করে আবার চলেও আসলে, রত্নমাকে আমার সঙ্গে দেখে বুকে জ্বালা হচ্ছিলো বুঝি?”

চন্দ্রা অবাক হলেন। বিস্ময় নিয়ে বললেন,

—” আপনি কিভাবে জানলেন আমি রত্নমার কক্ষে গিয়েছিলাম?”

—” অনেক ভাবে! প্রথমত, মনে রাখবে এ রাজ্যের সকল সদস্য আমার দাস। সে হিসেবে কিরণও কিন্তু। দ্বিতীয়ত, রত্নমার কক্ষের দর্পণে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল তোমায়। জানো চন্দ্রা, তুমি আসলে অনেক বোকা! আমি কক্ষে আসার সঙ্গে সঙ্গেই তো বললে- আমি নির্লজ্জ। একবার রত্নমাকে তো আরেকবার তোমাকে। এখানে তুমি কিভাবে বুঝলে আমি তোমার আগে রত্নমার কাছে গিয়েছিলাম। নিশ্চয়ই অন্যজন থেকে খবরাখবর সংগ্রহ করেছিলে নতুবা লুকিয়ে লুকিয়ে রত্নমার কক্ষে গিয়েছিলে, তাই না? আচ্ছা এত কষ্টের কি ছিল? আমাকে দেখতে ইচ্ছে করছিল বুঝি?”

এরুপ কথায় চন্দ্রা রেগে রুদ্রকে ধাক্কা মারতে চাইলেন। কিন্তু এক ফোঁটাও সরাতে পারলেন না তাকে। ব্যর্থ হয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলেন,

—” সরুন আমার কাছ থেকে।”

রুদ্র সরলেন না। বরং চন্দ্রার কপালে কপাল ঠেকিয়ে মৃদু কণ্ঠে বলে উঠলেন,

—” তৈরি হয়ে নাও জলদি। নতুবা এ নির্লজ্জ নির্লজ্জতার সীমা অতিক্রম করে ফেলবে। এবং তা তুমি করতে বাধ্য করবে।”

.

______________চলবে____________

দেড়ি হওয়ার জন্য অনেকগুলো সরি। প্রচুর ব্যস্ত ছিলাম আমি। ইনশাল্লাহ এখন থেকে প্রতিদিন নয়তো একদিন পরপর গল্প দেওয়ার চেষ্টা করব।

Nusrat Jahan Ira, Aysha Siddika, Afrin Shuvra সহ আরও অনকের কমেন্ট দারুণ থেকেও দারুণ ছিল

 

 

 

 

 

#’পর্বঃ ১৩

.

চন্দ্রা তৈরি হয়ে বসে আছে বহুক্ষণ। কিন্তু রুদ্রের আসার কোনো ঠিক-ঠিকানাই নেই। এদিকে অস্থিরতা বেড়ে চলেছে চন্দ্রার। মাথাটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। কিছুতেই রুদ্রের সঙ্গে বাহিরে বেরোতে ইচ্ছে করছে না। কিন্তু সে বাধ্য! কিছুক্ষণের মধ্যেই কিরণ এসে মাথা নত করে অভিবাদন জানায় চন্দ্রাকে। সঙ্গে সঙ্গে চন্দ্রার তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বলে উঠেন,

—” নিজের দায়িত্ব এভাবে পালোন করেছ তুমি? ঠিকই তো সম্রাটকে বলেছো আমি রত্নমার কক্ষে গিয়েছিলাম। আমার দাসী হওয়ার এই নমুনা তোমায়? জানো কিরণ, তুমি কখনও আমার কিরণের মতো হতে পারবে না। কখনও না!”

কিরণ মাথা আরও নত করে ফেলল লজ্জায়। প্রবল অপরাধবোধ নিয়ে বলে উঠল,

—” ক্ষমা করুন আমায় রাজকুমারী। আমি নিরুপায় ছিল। পশ্চাতে এমন হবে না আর। ক্ষমা করুন আমায়।”

চন্দ্রা হেসে বললেন,

—” তোমার ওপর বিশ্বাস করার আর ইচ্ছে নেই কিরণ। পরেরবার ক্ষমা করার প্রশ্ন আসছে না।”

কিরণ কেঁদে দিলো এবার। চন্দ্রার কাছে হাত জোড় করে বলে উঠল,

—” ক্ষমা করুণ আমায় রাজকুমারী। আমি সত্যি বলছি এমন ভুল আর হবে না। কিন্তু সম্রাটকেও আমি মিথ্যা বলতে পারবো না। আপনি আমার পরিস্থিতি বুঝুন রাজকুমারী। ক্ষমা করুন আমায়।”

চন্দ্রার এবার বেশ বিরক্ত হলেন। সাথে একটু হলেও মায়া কাজ করল কিরণের জন্য। তাই মনটা খানিকটা নরম করে কিছু বলতে যাবেন তার আগেই একটা পুরুষালী কণ্ঠ ভেসে উঠল কানে। রুদ্র হাতে হাত গুঁজে তাদের অগ্রে দাঁড়িয়ে আছেন। ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলেন তিনি,

—” কি ব্যাপারে ক্ষমা চাইছো কিরণ। রাজকুমারী চন্দ্রা রত্নমার কক্ষে গিয়েছিল সেই ব্যাপারে?”

বাঁকা হাসলেন রুদ্র। চোখের ইশারায় কিরণকে কক্ষের বাহিরে যেতে বলতেই সে আদেশ অনুযায়ী বের হয়ে গেল কক্ষে থেকে। রুদ্র এগিয়ে আসেন চন্দ্রার দিকে। চন্দ্রার পদ থেকে মাথা অব্দি একবার গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করলেন। ঠোঁটের ডান দিকের কোণায় হালকা হাসির রেখে ফুটিয়ে বলে উঠলেন,

—” এত সুন্দর করে সেজেছো যে? মৃত্যুর দুয়ারে দাঁড় করাতে চাইছো আমাকে? উফফ! আর কত ঘায়েল করবে চন্দ্রপ্রভা? আমার যে তোমাকে…!”

চোখ মুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছেন চন্দ্রা। রুদ্রের এরুপ কথার মাঝখানে বাঁধা দিয়ে বলে উঠলেন,

—” নোংরা কথা বন্ধ করুন। আপনি তৈরি হলে কোথায় নিতে চান নিয়ে চলুন।”

রুদ্র বুকের বা’পাশে হাত রেখে মৃদু স্বরে বলে উঠলেন,

—” উফফ! তোমার এ তেজ! এটাই তো চেয়েছিলাম আমি। তোমার এ তেজই তো আমাকে পাগল করার জন্যে যথেষ্ট!”

—” তাহলে পাগল হচ্ছেন না কেন? আপনাকে তো সুস্থই দেখতে লাগছে।”

রুদ্র হেসে উঠলেন। চন্দ্রার আরেকটু কাছে এসে বললেন,

—” তুমি দেখছি আমাকে খেয়ালও করো। তা বলো তো আমি দেখতে কিরুপ? সুদর্শন নিশ্চয়ই।”

—” অবশ্যই না সম্রাট। আপনি একজন নিষ্ঠুর, নির্লজ্জ, বেহায়া লোক। যাকে দু’চোখে দেখতে পারি না আমি।”

রুদ্র ভ্রু কুঁচকালেন। সন্দিহান দৃষ্টিতে চন্দ্রার দিকে তাকিয়ে বললেন,

—” তাই নাকি? কিন্তু আমি তো একজনকে দেখছি সে আমার দিকে বড় বড় চক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছে। গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে আমার সৌম্য মুখশ্রী।”

সঙ্গে সঙ্গে রুদ্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন চন্দ্রা। রুদ্র হাসলেন। তবে চন্দ্রা বেশ দৃঢ় কণ্ঠে বলে উঠলেন,

—” নিজের সৌন্দর্যের বর্ণনা নিজে করছেন। বাহ্ঃ!”

—” তাহলে তুমি মানছো আমি সুন্দর?”

এ কথার পিঠে আর কিছু বললেন না চন্দ্রা। তার বিরক্তি লাগছে। প্রচুর লাগছে! কোথাও যাওয়ার ইচ্ছেও মরে গেছে তার। বিরক্তিতে চোখ-মুখ কুঁচকে ফেলেছে সে। রুদ্র থেকে সরে দাঁড়িয়ে বলে উঠলেন চন্দ্রা,

—” আমি আপনার সঙ্গে কোথাও যাবো না। আমার ইচ্ছে করছে না। নিদ্রা পাচ্ছে প্রচুর।”

হাসি উবে গেল রুদ্রের। ভ্রু কুঁচকে বললেন,

—” তুমি কাকে মানা করছো জ্ঞাত আছে নিশ্চয়ই?”

—” আছে, কিন্তু আমি যেতে না চাইলে আপনি কি আমাকে জোড় করবেন? মনে রাখবেন আমি আপনার দাসী নই।”

প্রবল ক্ষোপের সঙ্গে বলে উঠলেন চন্দ্রা। রুদ্র চন্দ্রার চোখে চোখ রেখে চোয়াল শক্ত করে বলে উঠলেন,

—” তুমি আমার সম্রাজ্ঞী। আমার কথা মানতে বাধ্য।”

বলেই চন্দ্রাকে কাঁধে তুলে নিলেন রুদ্র। অগ্রসর হলেন রাজপ্রাসাদের বাগানের দিকে। আর চন্দ্রা, রুদ্র থেকে নিজেকে ছাঁড়ানোর জন্য লাগাতার হাত-পা ছোড়াছুড়ি করছে। কিন্তু এতে বিশেষ কোনো লাভ হচ্ছে না। রুদ্র আরও শক্ত করে নিজের বাঁধনে আবদ্ধ করে নিচ্ছেন চন্দ্রাকে।

_____________________

সাদা রঙের একটা ঘোড়ায় চন্দ্রাকে নিয়ে কর্পনরাজ্যের দিকে যাচ্ছেন রুদ্র। চন্দ্রা মুখ শক্ত করে বসে আছেন মাত্র। যা সহ্য হচ্ছে না রুদ্রের। রুদ্র ঘোড়ার শরীরে চাবুক মারতেই তার চলাচলের গতি আরও দ্রুত হয়। ফলে ভয় পেয়ে রুদ্রের হাত আকঁড়ে ধরেন চন্দ্রা। রুদ্র বাঁকা হেসে বলে উঠেন,

—” ভালো লাগছে চন্দ্রা। আরেকটু আকঁড়ে ধরো আমায়। চাইলে জড়িয়েও ধরতে পারো।”

চন্দ্রা বিরক্তি নিয়ে তাকান রুদ্রের দিকে। রুদ্র আবারও হাসেন। যা বিরক্তির শেষ প্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে চন্দ্রাকে। তবে নিরুত্তর চন্দ্রা। রুদ্রের সঙ্গে কথা বলতে মোটেও ইচ্ছে করছে না তার। কিছুক্ষণ চুপ থেকে রুদ্রই বলে উঠলেন এবার,

—” আগামীকাল আমাদের বিবাহ চন্দ্রা। তখন তোমাকে কে বাঁচাবে আমার হাত থেকে?”

চন্দ্রা কঠিন কণ্ঠে বলে উঠেন,

—” এ বিয়ে কখনোই হবে না। হতে দেবো না আমি।”

রুদ্র ভাবলেশহীন ভাবে বললেন,

—” সেটা তো সময়ই বলবে।”

—” কিভাবে বিবাহ করবেন আমায়? আমার তো কোনো দুর্বলতাও অবশিষ্ট নেই। যা দেখে ভয়ে আমি আপনাকে বিয়ে করব। এক আমার মাতা পিতা ছিলেন তাদেরও আপনি…”

চন্দ্রার কথা শেষ না হতেই রুদ্র বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলেন,

—” তোমাকে কতবার বলেছি আমি তোমার পিতা-মাতাকে হত্যা করি নি। উহু! এ কথাটা আর বলব না তোমায়। একদম প্রমাণ দেখিয়ে ছাঁড়বো। আর তা বিবাহের পরপরই। এবং হ্যাঁ, তোমার দুর্বলতা তো অবশ্যই আছে। একটু মনে করার চেষ্টা করো। অবশ্যই পেয়ে যাবে।”

রুদ্রের কথায় চন্দ্রা গভীর চিন্তায় মগ্ন হলেন। তার কি দুর্বলতা থাকতে পারে? পরক্ষণেই আবার চোয়াল শক্ত করে ফেললেন চন্দ্রা। যে করেই হোক এখান থেকে এখনই পালাতে হবে তার। যেহেতু রাজপ্রাসাদের বাহিরে সে, সেহেতু পালাতে অবশ্যই তত কষ্ট হবে না। এতে রুদ্রকেও বিবাহ করতে হবে না চন্দ্রার। কিন্তু বিপত্তি হচ্ছে সে পালাবে কিভাবে?

দেখতে দেখতে রুদ্রের ঘোড়া কর্পনরাজ্যের দুয়ারে এসে দাঁড় করানো হলো। রুদ্রের রাজপ্রাসাদের খানিকটা দূরেই ফুলে ঘেরা এই অপরুপ রাজ্যের অবস্থান। রাজ্যটির রুপে মুগ্ধ হয়ে চন্দ্রা এদিক-ওদিক তাকাচ্ছেন বারংবার। হঠাৎ রুদ্র চন্দ্রার অতি নিকটে এসে কানে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলেন,

—” এ রাজ্য থেকেও তুমি অধিক সুন্দর রাজকুমারী চন্দ্রপ্রভা। আর তোমার চেয়ে আমি! আমার দিকেও তো একবার প্রাণখুলে তাকাতে পারো। আমি রাগ করব না!”

.

____________চলবে__________

ছোট হওয়ার জন্য দুঃখিত। সময় কম থাকায় এর চেয়ে বেশি লিখতে পারি নি আজকে। আর হ্যাঁ, চন্দ্রার দুর্বলতা কি তা মনে আছে কি পাঠক/পাঠিকা?

Nahiyan Talukder, Jodha Akbar, Aysha Siddika, সহ আরও অনেকের মন্তব্য রুদ্রের সৌম্য রুপের মতো সৌম্য ছিল

 

 

 

 

#’পর্বঃ ১৪

.

সাদা, লাল, কমলা রঙের হরেক প্রজাতীর গোলাপ ফুলে ঘেরা এক বাগানে দাঁড়িয়ে আছেন চন্দ্রা এবং রুদ্র। তাদের অগ্রের বিশাল বড় এক পুকুর। সচ্ছ পানি তার। দমকা হওয়ায় পানির মাঝে কৃষ্ণচূড়া গাছ থেকে একটু পরপর কৃষ্ণচূড়া ফুল পরছে। ইহা এক মনোরম দৃশ্য। যা দেখে মনোমুগ্ধ রাজকুমারী চন্দ্রপ্রভা। কখন যে রুদ্র তার অতি নিকটে এসে পেছনে দাঁড়িয়েছেন বুঝতেই পারেন নি চন্দ্রা। ঘাড়ে কারো গরম নিশ্বাস পড়তেই চমকে উঠে দূরে সরে দাঁড়ান চন্দ্রা। রেগে রুদ্রর দিকে তাকাতেই হেসে ওঠেন রুদ্র। মৃদু স্বরে বলে উঠেন,

—” স্থানটা কিরুপ? পছন্দ হয়েছে রাজকুমারী?”

অতি ক্ষোপে চন্দ্রা একটা মিথ্যা বলে ফেললেন। অর্থাৎ বলে উঠলেন,

—” স্থানটা অতি বাজে। আমার পছন্দ হই নি।”

অথচ তার পছন্দ হয়েছে স্থানটা। শুধু কি পছন্দ? অধিক পছন্দ হয়েছে! এদিকে রুদ্র এক কদম কাছে এগিয়ে বললেন,

—” তাই নাকি? আমি তো দেখছিলাম একজন গভীরভাবে চারপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করছিল। তাকে কি আপনি দেখেছেন চন্দ্রা?”

—” আপনি এত নাটকীয় কেন বলুন তো সম্রাট?”

রুদ্র গর্ব করে বললেন,

—” প্রেয়সী অতি জেদী বলে! আচ্ছা আমাকে বিবাহ করলে এমন কি হবে চন্দ্রা? আমি তো অত খারাপ নই। দেখতে-শুনতে তো ভালোই। এটা আমি না সবাই বলে।”

নিজেকে আঙ্গুল তুলে দেখিয়ে বললেন রুদ্র। চন্দ্রা প্রথমে ভ্রু কুঁচকালেন। পরপরই স্বাভাবিক হয়ে পানির দিকে চেয়ে বলে উঠলেন,

—” আপনি ভেতর থেকে নয় বাহির থেকে সুন্দর সম্রাট। এই যে জল দেখছেন? তার মতো সচ্ছ নন আপনি। এটাই আপনাকে বিবাহ না করতে চাওয়ার মূল কারণ।”

রুদ্র তাচ্ছিল্যের সঙ্গে হাসলেন। পরক্ষণেই চোয়াল শক্ত করে চন্দ্রা অতি কাছে এসে বললেন,

—” আমি যেমনই হয়ে থাকি না কেন রাজকুমারী বিবাহ তো তোমাকে আমাকেই করতে হবে। এতে যেকোনো পন্থা ব্যবহার করতে রাজী আমি। সেটা যদি কারো মৃত্যুও হয় তাহলেও পিছু হটবো না আমি।”

চন্দ্রা ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নিলেন। রুদ্র থেকে দূরে সরে দাঁড়ালেন। তার মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুরছে- তাকে পালাতে হবে। যে করেই হোক!

ভেবেই ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও রুদ্রর কাছে এসে দাঁড়ালেন চন্দ্রা। মিনমিনিয়ে বলে উঠলেন,

—” আমার ক্ষুধা লেগেছে। আমি আহার করতে চাই।”

রুদ্র ভ্রু কুঁচকালেন। প্রথমে সন্দিহান দৃষ্টিতে চন্দ্রার দিকে তাকিয়ে তারপর বাঁকা হাসলেন রুদ্র। চন্দ্রার কানের কাছে ঝুঁকে ফিসফিসিয়ে বললেন,

—” পালাতে চাইছো আমার থেকে?”

চন্দ্রা চমকালেন। ভয় পেলেন প্রচুর। শুকনো ঢোক গিলে অনেকটা তোতলিয়ে বলে উঠলন,

—” আ-আমি কে-ক-ন পালাবো? তা-ছাড়া আপনি থা-থাকতে কিভাবে পালাবো স-সম্রাট?”

রুদ্র ডান ভ্রু কুঁচকে বললেন,

—” ঠিকই তো, তুমি পালাবে কিভাবে? যাই হোক, এই যে কৃষ্ণচূড়া গাছটা দেখছো এটার নিচে বসে থাকো। আমি আসছি তোমার জন্য কিছু আ….হা…র নিয়ে।”

‘আহার’ শব্দটা বেশ টেনে টেনে উচ্চারণ করলেন রুদ্র। পরক্ষণেই বাঁকা হেসে চলে গেলেন সেখান থেকে। চন্দ্রা নির্লিপ্ত ভাবে তাকিয়ে আছেন রুদ্রের যাওয়ার পথে। কেননা এহেন জায়গায় আহার কোত্থেকে আনতে গিয়েছেন রুদ্র? চন্দ্রা তো এমনি এমনি বলেছিল কথাটা। যদি কাজে লাগে! আর কাজেও লেগেছে। কিন্তু রুদ্রের কথাগুলো বেশ সন্দিহান ছিল। সে কি কোনো ভাবে বুঝে গেছে চন্দ্রা পালানোর পরিকল্পনা করছে? হয়তো না। নাহলে তাকে রেখে যেত কেন? এসব ভাবতেই চিন্তাটা কিছুটা হলেও কমলো চন্দ্রার। কিন্তু পরপরই চিন্তায় কপাল কুঁচকে এলো তার। সে পালাবেটা কিভাবে? কোন পন্থায়?

_____________________

প্রায় অনেক্ষণ কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচে বসে ছিলেন চন্দ্রা। পরিকল্পনা করলেন যেকরেই হোক তাকে রুদ্রের আসার আগে তার ঘোড়া নিয়ে পালাতে হবে। যেই ভাবা সেই কাজ! দ্রুত পদে কর্পনরাজ্যের মুখ্য দরজার কাছে এসে দাঁড়ালেন চন্দ্রা। কর্পনরাজ্য মূলত একটা হরেক রকমের ফুলের বাগান আর পুকুরের মনোরম স্থান। অনেক সুন্দর একটা স্থান বলা যায়। পেছন ফিরে কর্পনরাজ্যকে আরেকবার দেখে ঘোড়ার দিকে এগিয়ে যান চন্দ্রা। সাথে সাথে থমকে দাঁড়ান। বিস্ময়ে চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেছে তার। ঘোড়ার সঙ্গে হেলান দিয়ে আপেল খাচ্ছেন রুদ্র।(বিঃদ্রঃ আম্মুর কাছে জিজ্ঞেস করেছিলাম আগের দিনে আপেল ছিল নাকি? আম্মু বলল সারাজীবনই নাকি আপেল পাওয়া যায়৷ তাই আপেলই দিলাম এখানে।) চন্দ্রাকে দেখেই বাঁকা হেসে উচ্চস্বরে বলে উঠলেন,

—” তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম রাজকুমারী। এতক্ষণ লাগালে যে আসতে? কিভাবে পালাবে সেটা পরিকল্পনা করছিলে নিশ্চয়ই!”

চন্দ্রা রেগে চোখ-মুখ শক্ত করে আছেন। বুঝতে পারছেন রুদ্র তখনই বুঝে গিয়েছিলেন চন্দ্রার মনের কথা। অর্থাৎ সে যে পালানোর চেষ্টা করছেন তার পূর্বাভাস পেয়ে গিয়েছিলেন রুদ্র। চন্দ্রাকে রাগতে দেখে রুদ্র উচ্চস্বরে হেসে উঠলেন। পরক্ষণেই আপেলের পানে তাকিয়ে আফসোসের সঙ্গে বলে উঠলেন,

—” উফফ! চন্দ্রপ্রভা, এতক্ষণ কেন লাগালে পালাতে? দেখো তোমার জন্য আনা আপেলটা আমি নিজেই খেয়ে ফেলেছি। এখন তুমি কি আহার করবে বলো তো? আসলে আরেকটু আগে পালানো উচিত ছিল তোমার। তাহলে আপেলটা খেতে পারতে।”

রুদ্র যে চন্দ্রাকে খোঁচা দিয়ে এসব বলছেন তা ঢের ভাবে বুঝতে পারছেন চন্দ্রা। অতি মাত্রায় রেগে চন্দ্রা বলে উঠলেন,

—” দেখুন…”

রুদ্র হঠাৎ-ই গম্ভীর হয়ে উঠলেন। চন্দ্রার কথার মাঝে বাঁধা দিয়ে বলে উঠলেন,

—” দেখবো বিবাহের পর। আপাতত আমার সাথে রাজপ্রাসাদে যেতে হবে তোমার। এবং হ্যাঁ, মুখ থেকে একটা শব্দ বের করার সাহস দেখাবে না। তোমাকে কিছু বলছি না দেখে ভেবো না আমি রেগে নেই। শুধু রাগটাকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছি। নতুবা তোমার জায়গায় অন্য কেউ হলে তার গর্দান এতক্ষণে সহি-সালামত থাকতো না। রুদ্রের কবল থেকে পালানো এতই সহজ মনে হয় তোমার?”

রুদ্র কথা বাড়ালেন না আর। চন্দ্রাও নিশ্চুপ। কিছুসময় অতিবাহিত হতেই রুদ্র চন্দ্রার কাছে এসে তাকে কোলে তুলে নিলেন। চন্দ্রা বাঁধা দিলেন না। চন্দ্রাকে ঘোড়ায় বসিয়ে নিজেই বসে পরলেন ঘোড়ায়। অত:পর দ্রুত গতিতে ঘোড়ার মাধ্যমে ছুটতে লাগলেন রাজপ্রাসাদের উদ্দেশ্যে।

___________________

রাত্রিবেলা চন্দ্রা নিজ কক্ষে মুখ গোমড়া করে বসে ছিলেন। কেননা তিনি পালাতে পারেন নি। আর তাকে রুদ্রকে বিবাহ করতে হবে আগামীকালই। দীর্ঘশ্বাস ফেললেন চন্দ্রা। চোখে জল এসে হানা দিচ্ছে তার। নিজ মাতা-পিতার হত্যাকারীকে বিবাহ করতে হবে তার। ভাবতেই কষ্টের গহীন জোয়ারে আরও তীব্রভাবে বাসা বেঁধে নিলেন চন্দ্রা। হঠাৎ তার শিবিরে কিরণ এসে হাজির। মাথা নিচু করে বলে উঠে সে,

—” ক্ষমা করবেন রাজকুমারী। সম্রাট আপনার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন।”

চন্দ্রা তড়িৎ গতিতে চোখের পানিগুলো বাম হাতে মুছ ফেললেন। দীর্ঘশ্বাস ফেলে কিছু বলবেন তার আগেই রত্নমাকে নিয়ে সম্রাট রুদ্র তার কক্ষে এসে হাজির। সঙ্গে কিছু সংখ্যক দাসীও আছে। রুদ্র ছাড়া রত্নমাসহ সবার হাতে বিভিন্ন পোশাক ও অলংকার। যা দেখে বিস্মিত চন্দ্রা। কিন্তু রুদ্রের মুখে লেগে আছে হাসি আর রত্নমার মুখে কালো মেঘের ছায়া। বোঝাই যাচ্ছে সে আসতে চায় নি রুদ্রের সঙ্গে।

রুদ্র এক এক করে সব পোশাক ও অলংকার দেখাতে লাগলেন চন্দ্রাকে। কিন্তু সেদিকে বিন্দু মাত্র আগ্রহ নেই চন্দ্রার। আর সেই অনাগ্রকে যে রুদ্র পাত্তা দেবেন সেটা ধারণা করাও ভুল৷ রুদ্র রুদ্রের মতোই চন্দ্রার জন্য একটার পর একটা পোশাক বেছেই চলেছেন। একসময় চন্দ্রা বিরক্ত হয়ে বলে উঠেন,

—” এসব করে লাভ নেই সম্রাট। আমি আপনাকে বিবাহ করব না। প্রয়োজন হলে বিবাহের আসরে নিজের প্রাণ বিসর্জন দেবো।”

রুদ্র বিন্দু মাত্র রাগলেন না চন্দ্রার কথায়। উল্টো রহস্যময় হেসে চট করে চন্দ্রার গালে চুমু খেয়ে নিলেন। আকস্মিক ঘটনায় স্তব্ধ রুদ্ধবাক চন্দ্রা। দাসীগণ মাথা নিচু করে আছে। আর রত্নমা, তার হিংসা এবং রাগ যেন ক্রমশই বেড়ে চলেছে। যদি পারতো তাহলে চন্দ্রাকে এক্ষণি হত্যা করতো সে।

.

_____________চলব___________

গল্পের শেষে চলবে লেখাটা যে কি বিরক্তিকর । যাই হোক, পর পর তিনদিন গল্প পেলেন। অনুভূতি কি?

এবং হ্যাঁ,

Nusrat Jahan Ira, Nahiyan Talukder, Afrin Shuvra, Jodha Akbar, Israt Jahan Mita, Arrushi A, Tahsina Khan Saima, সহ এত্তগুলো পাঠকের জন্য রইল অবিরাম ভালোবাসা

 

 

 

 

 

#’পর্বঃ ১৫

.

পোশাক আর অলংকার বাছাই করা শেষ হতেই সম্রাট রুদ্র সকলকে আদেশ করেন কক্ষ থেকে বের হয়ে যেতে। কিন্তু দাসীগণ সবাই কক্ষ থেকে বের হলেও রত্নমা ঠায় দাঁড়িয়ে আছে নিজ জায়গায়। সেদিকে বিরক্তি নিয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছেন রুদ্র। তবে এতে বিন্দু মাত্র পাত্তা দিচ্ছে না রত্নমা। সে তার মতো করেই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। এবার বেশ রেগে গেলেন রুদ্র। ধমক দিয়ে বলে উঠলেন,

—” সমস্যা কি তোমার? আমি কক্ষ থেকে বের হতে বলেছি!”

রত্নমা মাথা তুলে তাকিয়ে বিদ্রুপ কণ্ঠে বলে উঠলেন,

—” আমি কেন যাবো সম্রাট? আমি তো আপনার সম্রাজ্ঞী।”

রুদ্র চোখ বন্ধ করে ফেললেন দ্রুত গতিতে। হাত মুঠো করে লম্বা একটা নিশ্বাস টেনে গম্ভীর থেকেও গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলেন,

—” আমাকে রাগাবে না রত্নমা। তুমি আমার সম্রাজ্ঞী নও। সে মর্যাদা আমি তোমাকে দি নি। রক্ষিতা রক্ষিতার মতো থাকবে। নিজের সীমা অতিক্রম করার চেষ্টা করবে না মোটেও। খারাপ কিছু হওয়ার আগেই কক্ষ থেকে বের হয়ে যাও, দ্রুত!”

রত্নমা তাও ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে রুদ্র আবারও ধমকে বলে উঠলেন,

—” কি হয়েছে কথা কানে যায় নি?”

রত্নমা কেঁদে উঠল এবার। ন্যাকা কান্না করে বলে উঠল,

—” আপনি এ মেয়ের অগ্রে আমাকে অপমান করছেন সম্রাট? এ সাধারণ মেয়ের জন্য?”

রুদ্র তাচ্ছিল্যের সঙ্গে হেসে উঠলেন এবার। পরপরই উচ্চস্বরে একজন প্রহরীকে ডেকে উঠলেন। প্রহরী এসেই মাথা নিচু করে অভিবাদন জানালো রুদ্রকে। রুদ্র কঠিন কণ্ঠে বলে উঠলেন,

—” এই নোংরা মহিলাকে আমার সামনে থেকে নিয়ে যাও।”

সাথে সাথে ‘না’ শব্দ করে চেঁচিয়ে উঠল রত্নমা। রুদ্র চোখ গরম করে রত্নমার দিকে তাকাতেই সে চুপসে গেল। ‘টু’ শব্দটিও করল না আর। কেননা রুদ্রকে দেখতে ভয়ংকর লাগছে। এখন কিছু বললে কিংবা করলে রুদ্র যে তাকে আস্ত রাখবে না সেটা রত্নমা দৃঢ় ভাবে জানে। চুপচাপ কক্ষ থেকে বেরিয়ে যেতে চাইলেই রুদ্র তাচ্ছিল্যের সঙ্গে হেসে উচ্চস্বরে বলে উঠলেন,

—” সাধারণ কে এবং অসাধারণ কে তা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছ এতক্ষণে।”

রত্নমা পিছনে ফিরে চন্দ্রার দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকালো একবার। পরপরই রাগে গজগজ করতে করতে বেরিয়ে গেল কক্ষ থেকে। রত্নমা বেরিয় যেতেই চন্দ্রার সামনে সটান হয়ে দাঁড়ান রুদ্র। চন্দ্রা এতক্ষণ নির্বাক দেখে যাচ্ছিল রুদ্র আর রত্নমার কান্ড। রুদ্র হঠাৎ করে চন্দ্রার অগ্রে দাঁড়াতেই চমকে যায় চন্দ্রা। পিছু হটতে নিলেই রুদ্র তার বাহু শক্ত করে ধরে ফেলে। এতে ক্রোধিত হয় চন্দ্রা। ক্রোধ মিশ্রিত কণ্ঠে বলে উঠে,

—” আমার হাত ছাড়ুন সম্রাট।”

—” কখনোই নয়!”

রুদ্রের কণ্ঠে কিছু একটা ছিল। যাতে বিস্মিত হয় চন্দ্রা। রুদ্রের পানে তাকাতেই দেখে রুদ্র নেশাভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। মুহুর্তেই অস্বস্থিতে পরে যায় চন্দ্রা। মাথা নিচু করে ফেলে তৎক্ষণাৎ। রুদ্র চন্দ্রার অবস্থা বুঝতে পেরে বাঁকা হাসেন। জানালার অগ্রে চন্দ্রাকে দাঁড় করিয়ে তার পশ্চাতে দাঁড়িয়ে তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরেন। শিউরে ওঠেন চন্দ্রা। নিজেকে ছাড়াবার চেষ্টা করতেই রুদ্র চন্দ্রাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরেন। শান্ত স্বরে বলে উঠেন,

—” উহু! নড়ো না। ভালো লাগছে। অনুভব করো আমাকে।”

চন্দ্রা কেন যেন আর নড়তে পারলো না। শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে। বেশ কষ্টে বলে উঠল,

—” আমাকে ছাড়তে বলেছি আপনাকে!”

—” আমি ছাড়বো না বলেছি।”

—” আমি আপনার প্রতি বিরক্ত সম্রাট।”

—” আর আমি অনুরক্ত।”

—” অসহ্য!”

—” উহু! সহ্যকর।”

___________________

দিবা হতেই রাজ্যের প্রায় অর্ধেক সংখ্যক দাস-দাসী এসে হাজির হয় চন্দ্রার কক্ষে। চন্দ্রা বিরক্তি প্রকাশ করেন এতে। নিদ্রা থেকে জাগ্রত হতেই এমন সব কান্ড প্রচন্ড বিরক্তি লাগছে তার। কোনো মতে গম্ভীর কণ্ঠে সকলকে আদেশ দিয়ে ওঠেন চন্দ্রা,

—” আমি একা থাকতে চাই। তোমরা এখান থেকে যেতে পারো।”

তবুও নড়ছে একজনও। সবাই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে৷ এতে আরো বিরক্ত হলেন চন্দ্রা। খানিকটা উচ্চস্বরে বললেন,

—” কি হলো?”

এবার আমতা আমতা করে কিরণ বলে উঠল,

—” আজ আপনার বিবাহ রাজকুমারী। আমরা আপনাকে তৈরি করতে এসেছি।”

চন্দ্রা হঠাৎ-ই চমকে ওঠে। তার তো জ্ঞাতই ছিল না আজ তার বিবাহ। অথচ সে ঘুমানোর আগেও পালানোর পরিকল্পনা করছিল। কিন্তু এখন কিভাবে পালাবে সে? এত লোকের অগ্রে? গুণে গুণে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ জন দাস-দাসী হবে। এদের মাঝে কি আদৌ পালানো সম্ভব? প্রশ্নটা নিজেকে নিজে করেও উত্তরটা মিললো না আর। আফসোসের সঙ্গে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো চন্দ্রার। পরপরই মুখশ্রী কঠিন করে চন্দ্রা কিরণের উদ্দেশ্যে বলে উঠেন,

—” তোমার সঙ্গে আমার কিছু কথা ছিল কিরণ।”

কিরণ অপ্রস্তুত হয়। নিজেকে সামলে নিয়ে আমতা আমতা করে বলে উঠে,

—” বলুন রাজকুমারী।”

চন্দ্রার কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে উঠেন,

—” আমি একান্তভাবে তোমার সঙ্গে কিছু কথা বলতে চাই। বাকি সকলকে কক্ষ থেকে বেরিয়ে যেতে বলো।”

কিরণ দ্রুত মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। পরক্ষণেই সকল দাস-দাসীকে কক্ষের বাহিরে পাঠিয়ে দিলো। এবার চন্দ্রা শয্যা থেকে উঠে দাঁড়ালেন। কিরণের অগ্রে গিয়ে কঠিন কণ্ঠে বলে উঠলেন,

—” তুমি আমার বিশ্বস্ত দাসী তাই না কিরণ?”

—” আজ্ঞে হ্যাঁ রাজকুমারী।”

—” আমার সকল কথা শুনবে? আমি যা বলল তা করতে পারবে?”

—” অবশ্যই রাজকুমারী। চাইলে আমার প্রাণও আপনার পদতলে বিছিয়ে দেবো।”

এরুপ কথায় বাঁকা হাসলেন চন্দ্রা। গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলেন,

—” আমি যা করতে বলব তাইই করতে হবে তোমার। বিনা সম্রাটকে জানিয়ে! পারবে?”

এবার অনেকটা চমকিত হয় কিরণ। কি বলবে তা সম্পর্কে অজ্ঞাত সে। কিরণের উত্তর না পেয়ে চন্দ্রা তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বলে উঠলেন,

—” দেখেছো কিরণ? বলেছিলাম না তুমি আমার বিশ্বস্ত, প্রাণপ্রিয় কিরণ কখনোই হতে পারবে না। তুমি আমার নয় তোমার সম্রাটের দাসী।”

কিরণ এবার কাতর কণ্ঠে বলে উঠল,

—” এভাবে বলবেন না রাজকুমারী। আমি অবশ্যই আপনার সমস্ত কথা শুনবো। বিনা….বিনা স..সম্রাটকে জানিয়ে।”

এ কথায় প্রসন্ন হলেন চন্দ্রা। লম্বা শ্বাস টেনে বলে উঠলেন,

—” আমাকে এ স্থান থেকে পালাতে সাহায্য করো। বিবাহের আগেই আমি এখান থেকে পালাতে চাই।”

চন্দ্রার কথায় দু কদম পিছিয়ে গেল কিরণ। চোখে জল এনে বলে উঠল,

—” দয়া করে এরুপ কথা বলবেন না রাজকুমারী। ইহা আমার দ্বারা সম্ভব নয়। সম্রাট জানলে আমাকেসহ আমার পরিবারেরও ক্ষতি করবেন।”

চন্দ্রা হতাশ কণ্ঠে বলে উঠলেন,

—” তাহলে তুমি আমাকে সাহায্য করবে না?”

কিরণ কোনোরুপ উত্তর দিতে পারলো না এবার। তবে পাশ থেকে কেউ একজন বলে উঠল,

—” কিরুপ সাহায্য চাই তোমার চন্দ্রা? পালাতে চাইছো নাকি? তাহলে বলো আমিই সাহায্য করছি। কি করবো সাহায্য?”

চন্দ্রা চমকে উঠে পাশে তাকাতেই দেখতে পান রুদ্র দাঁড়িয়ে আছেন। একেবারে বিয়ের পোশাক পরে আছেন তিনি। মাথায় পাগড়ী, কোমড়ে তলোয়াড় আর মুখে বাঁকা হাসি। চন্দ্রা মুখ ফিরিয়ে নিলেন আবার। রুদ্র চন্দ্রার কাছে এসে দাঁড়ালেন। চোখের ইশারায় কিরণকে যেতে বলতেই সে চলে যায় কক্ষ থেকে। রুদ্র এবার চন্দ্রার আরও কাছে এসে দাঁড়ান। কানে ফিসফিসিয়ে বলে ওঠেন,

—” উত্তর দিলে না যে? পালাতে সাহায্য করব আমি?”

চন্দ্রা প্রবল ক্রোধে বলে উঠেন,

—” আপনার সাহায্য চাই নি আমি। দয়া করে দূরে সরে দাঁড়ান।”

—” উহু, দাঁড়াবো না।”

বলেই রুদ্র এবার পাশ থেকে জড়িয়ে ধরলেন চন্দ্রাকে। শক্ত করে! চন্দ্রা বিরক্তি প্রকাশ করলেন। তবে নিজেকে ছাড়ানোর কোনোরুপ চেষ্টা করলেন না। রুদ্র শান্ত কণ্ঠে মৃদু ভাবে বলে উঠলেন,

—” কিছুক্ষণ পর তুমি চিরদিনের জন্য আমার হয়ে যাবে চন্দ্রপ্রভা। শুধুই আমার।”

—” আপনার দুঃস্বপ্ন এটা সম্রাট। আমি কখনোই আপনার হবো না।”

এমন কথায় রেগে যান রুদ্র। নিজেকে যথেষ্ট স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে লম্বা শ্বাস টেনে নিয়ে বলে উঠেন,

—” তাহলে তুমি আমাকে বিয়ে করতে চাও না?”

চন্দ্রার সোজাসাপ্টা উত্তর,

—” না!”

রুদ্র তাচ্ছিল্যের সঙ্গে হাসলেন এবার। চন্দ্রার কানে ঠোঁট লাগিয়ে মৃদু স্বরে বলে উঠেন,

—” তোমার রাজ্য কিন্তু এখন আমার দখলে চন্দ্রা। তোমার একটা ভুল সিদ্ধান্তের কারণে তারা কিন্তু কষ্ট পাবে। এবং হ্যাঁ, নিভৃতরাজ্যের বৃদ্ধ-বৃদ্ধার কথা স্মরণ আছে নিশ্চয়ই। যারা তোমাকে আশ্রয় দিয়েছিল! তারাও কিন্তু আমার কাছে বন্দী চন্দ্রা। তাদেরও ক্ষতি করতে দ্বিধাবোধ করব না আমি। এখন সিদ্ধান্ত তোমার। আমাকে বিয়ে করবে কি না?”

জলে চোখ ভরে এলো চন্দ্রার। বুক ফেঁটে কান্না আসতে চাইলো। তবুও সেটা অনেক কষ্টে দমন করলেন চন্দ্রা। কঠিনতার সঙ্গে কান্না জড়িত কণ্ঠে বলে উঠলেন,

—” আপনি অনেক নিষ্ঠুর, পাষাণ, অমানুষ। আপনি সম্রাট হওয়ার যোগ্য নন।”

রুদ্র এবারও নির্লজ্জের মতো হেসে বললেন,

—” আমার থেকে একথা আর কে বেশি জানবে চন্দ্রা? যাই হোক, আমার উত্তর কিন্তু ইহা নয়। দ্রুত উত্তরটা দাও নতুবা প্রহর যত অতিবাহিত হবে আমি বিভিন্ন ভয়ংকর পন্থা তাদের জন্য ততই প্রয়োগ করব।”

চন্দ্রা চুপ করে রইলেন। বার কয়েকবার শুকনো ঢোক গিললেন। চোখ থেকে দু’ফোটা জল গড়িয়ে পরার সাথে সাথে বলে উঠলেন চন্দ্রা,

—” আমি রাজী।”

চন্দ্রার এ কথায় হয়তো খুশি হয়েছেন রুদ্র। তবে প্রকাশ করলেন না কিছু৷ মুখ গম্ভীর রেখে চন্দ্রাকে ফিরালেন নিজের দিকে। দু’হাত দিয়ে চন্দ্রার দু’গালে গড়িতে পড়া জল মুছে দিলেন। চন্দ্রার মৃদু স্বরে বলে উঠেন,

—” আমাকে বিবাহ করলেও মন থেকে আমি কখনই আপনার হবো না রুদ্র। আপনি আমার পিতা-মাতার হত্যাকারী। নিষ্ঠুর, নির্দয় সম্রাট!”

রুদ্র দীর্ঘশ্বাস ফেলে চন্দ্রার কপালে কপাল ঠেকিয়ে শান্ত কণ্ঠে বলে উঠলেন,

—” তাহলে নিজের ভালোবাসা দিয়ে বদলে দাও এই আমিটাকে। কথা দিচ্ছি বদলে যাবো।”

চন্দ্রার কান্না জড়িত কণ্ঠে বললেন,

—” আর আমার পিতা-মাতা? তাকে ফেরত আনতে পারবেন আপনি?”

—” আমি তাদের হত্যা করিনি চন্দ্রা। প্রমাণটা বিয়ের পরেই দেবো তোমাকে।”

আর কোনো কথা হলো না দু’জনের মাঝে। শুধু শোনা গেল একে অপরের দীর্ঘশ্বাসের শব্দ।

____________________

সব রিতিনিতি মেনে বিবাহটা অবশেষে হয়েই গেল চন্দ্রা এবং রুদ্রের। যখন রুদ্র চন্দ্রার সিঁথিতে সিঁদুর পড়িয়ে দিচ্ছিলেন চন্দ্রার তখন কান্নায় ভেঙ্গে পরেছিলেন। রুদ্র সেদিকে মুখ শক্ত করে তাকিয়ে ছিলেন মাত্র। তবে কান্না মাঝেও একটা জিনিস খেয়াল করেছেন চন্দ্রা। উৎসবের কোথাও রত্নমাকে দেখতে পান নি তিনি। রুদ্রকে কয়েকবার জিজ্ঞেস করতে চেয়েছিলেন চন্দ্রা, কিন্তু তার আগেই রুদ্র বিবাহের পরপরই কয়েকজন সৈনিককে ডেকে আনেন উৎসবে। তাদের দেখে সবাই চমকিত হয়। কেননা সৈনিকের সঙ্গে রত্নমাও হাত-পা বাঁধা অবস্থায় আসছেন তাদের সঙ্গে। পোশাকের কিছু কিছু স্থান ছেঁড়া তার। বিষণ্ণতা ছেঁয়ে আছে পুরো মুখে। উপস্থিত সবার মুখে বিস্ময়ের ভাব। অথচ রুদ্রের মুখে বিরাট হাসি। রত্নমা চন্দ্রা ও রুদ্রের অগ্রে দাঁড়াতেই রুদ্র কঠিন কণ্ঠে বলে ওঠেন রত্নমাকে,

—” সত্যিটা কি তুমি এখন বলবে নাকি শাস্তি পাওয়ার জন্য কাল রাত্রির মতো তোমাকে আবারও কারাগারে পাঠাবো?”

রুদ্রের এরুপ কথায় খানিকটা কেঁপে উঠল রত্নমা। ভাঙ্গা গলায় চন্দ্রাকে বলে উঠল,

—” আমাকে ক্ষমা করবে চন্দ্রা। আমি মিথ্যা বলেছিলাম তোমাকে। তোমার পিতা-মাতা বেঁচে নেই সত্য, তবে তাদের সম্রাট হত্যা করেন নি।”

রত্নমা এতটুকু বলে থামলো। লম্বা একটা শ্বাস টেনে আবারও বলল,

—” তুমি যখন তোমার রাজ্য থেকে পালিয়ে গিয়েছিলে তখন যুদ্ধে তোমার পিতা তার একটি পা হারিয়ে ফেলেন। পায়ের অসহ্য যন্ত্রণায় তিনি একদিন পরই মারা যান। তোমার

পিতার মৃত্যু সহ্য করতে না পেরে পরে তোমার মাতাও মৃত্যু বরণ করেন….. চন্দ্রা! তোমার মাতা-পিতার মৃত্যুর পেছনে সম্রাটের কোনো দোষ ছিল না। তিনি নির্দোষ।”

চন্দ্রা অবাক হয়ে রুদ্রের পানে তাকালো। রুদ্র তারই দিকে বাঁকা হেসে তাকিয়ে আছেন। যেন তার খানিকটা বাদামী আর নীলাভ চোখ দু’টো ইশারায় বলছে- “আমি জিতে গেছি চন্দ্রা। তুমি হেরে গেছো এ রণক্ষেত্রে।” কিন্তু পরপরই রুদ্রের সারা মুখে কঠিনতা বিরাজ করে। রুদ্র রত্নমাকে ধমকে বলে উঠেন,

—” কেন করেছিলে তুমি এমন? সত্য বলবে নতুবা তোমার গির্দান কেটে দেবো আমি।”

রত্নমা আমতা আমতা করে বলল,

—” সত্যি বলছেন তো? আমাকে হত্যা করবেন না আপনি?”

—” একবার বলেছি আমি। শুনতে পাও নি?”

আবারও ধমকে উঠলেন রুদ্র। রত্নমা কিছুক্ষণ পরপর হাত কচলাচ্ছে ভয়ে। অবশেষে ভয় কে জয় করে মৃদু স্বরে সে বলে উঠল,

—” আমার শুরু থেকেই চন্দ্রাকে পছন্দ ছিল না। আমার মনে হচ্ছিল ও আমার কাছ থেকে আপনাকে ছিনিয়ে নেবে। তাই ওকে আপনার থেকে দূরে সরানোর চেষ্টা করতে থাকি আমি। এবং ওর পিতা-মাতাকে আপনি হত্যা করেছেন সেকথা নানাভাবে চন্দ্রাকে বিশ্বাস করানো চেষ্টা করি। পরিকল্পনা মতে চন্দ্রাও আমার কথা বিশ্বাস করে। ভেবেছিলাম চন্দ্রা আপনাকে ঘৃণা করলে আপনিও রেগে চন্দ্রাকে দূরে ঠেলে দেবেন। সেই সুযোগে আমি তাকে রাজ্য থেকে মুক্ত করার নামে ওকে হত্যা করব। কিন্তু……”

কথাটা শেষ করতে পারলো না রত্নমা। তার আগেই তার ছোট ছোট চুলের মাথাটি এবং শরীর দু’খন্ড হয়ে পরে গেল স্থলে। বিস্ময়ে চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেল সবার। রুদ্র বাঁকা হেসে রত্নমার অগ্রে হাঁটু গেড়ে বসে পরলেন। রত্নমার পোশাকে তলোয়াড়ে লেগে থাকা রক্ত মুছতে মুছতে ভাবলেশহীন ভাবে বলে উঠলেন,

—” দুঃখীত রত্নমা। রুদ্র তার কথা কখনোই রাখে না।”

.

____________চলবে_____________

Romana Akter Nishe, Nupur Aktar, Promi Montaha, সহ আরও অনেকের কমেন্ট দারুণ

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..