মঙ্গল দ্বীপ জ্বেলে
অন্ধকারে দুচোখ আলোয় ভরো প্রভু
তবু যারা বিশ্বাস করেনা তুমি আছো
তাদের,,,
মধ্যরাতে গুণগুণ করে গাওয়া গানের শব্দে আমার ঘুম ভেঙে গেলো। কেউ গান গাইছে। খুব পরিচিত একটা কণ্ঠ। এতো রাতে বাসায় গান গাইছে কে? খুব মিষ্টি আর অলৌকিক সে গানের সুর। কিছুটা বিষাদগ্রস্ত সুর।
আমি চোখটা বন্ধ রেখেই বুঝতে চাইছিলাম কে গান গাইছে। আমার পাশের রুমে মা বাবা ঘুমাচ্ছে। আর অপরদিকে পাশাপাশি রুমে ভাইয়া আর বড় চাচা ঘুমিয়ে আছে। কাজের মেয়েটাও ছুটিতে আছে।
আর মা’তো গান গাইতেই জানেননা।
তাহলে!
আমি আড়মোড়া ভেঙে বিছানায় উঠে বসলাম। মনে হচ্ছে আমার রুমের লাগোয়া বাড়ান্দায় বসে কেউ গাইছে। আমি ঘুমের ঘোরেই এগিয়ে গেলাম বাড়ান্দায়। আমার রকিং চেয়ারটাতে বসে আছে একজন। পিঠে ছড়ানো লম্বা চুল। তিনি’ই গাইছেন এই গান। পায়ে পায়ে এগিয়ে গেলাম কাছে।
আর কাছে যেতেই তিনি আমার দিকে তাকালেন। আমার ভেতরটা ধ্বক করে উঠলো! মুন্নি আপু! এতো বছর পর মুন্নি আপু কোথা থেকে এলো?
আমি হতভম্ব হয়ে একটু জোরেই বললাম,
—–তুমি,,,!আপু! তুমি এতোদিন পর কোথা থেকে এলে?
আপু গান থামিয়ে দিলেন। আমার দিকে তাকিয়ে একটা শুকনা হাসি দিলেন। মলিন মুখে আপুর হাসিটাকে কেমন কান্নার মতো লাগলো আমার কাছে।
আমি কাছে গিয়ে আপুকে ছুঁয়ে দিতেই দেখলাম কোথাও কেউ নেই।
সকালে ঘুম থেকে উঠে আমি বুঝতে পারলাম না, রাতের ঘটনাটা স্বপ্ন ছিলো না সত্যি। যদি স্বপ্ন হয় তাহলে বলবো স্বপ্নটা ভয়াবহ রকম সত্যির মতোই ছিলো। পরদিন আমি সারাদিন ক্লাসে থাকলেও মন থেকে মুন্নি আপুকে একদম সড়াতে পারছিলাম না। আমার মনে হতে লাগলো মুন্নি আপু যেন এখনও রকিং চেয়ারে বসে গান গাইছেন।
সারাদিন আপুকেই ভেবেছি, সেদিন রাতে ঘুমানোর পর শেষরাতে হালকা পায়ে হাঁটার শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো। আমার রুমে কেউ একজন পা টিপেটিপে হাঁটছে। ড্রীমলাইটের মায়াবি আলোয় দেখলাম মুন্নি আপুকে। কি সুন্দর দেখতে আপু! আজও তার খুলা চুল পিঠে ছড়ানো। মনে হলো আপু চুপি চুপি আমার ঘরে কিছু খোঁজার চেষ্টা করছেন। আপুকে দেখেই আমি লাফ দিয়ে খাট থেকে নামলাম। আপু যেখানে দাড়িয়ে ছিলো সেখানে গেলাম।
ওমা! কেউ কোথাও কেউ নেই। আমি বাথরুম, বাড়ান্দায় খুঁজেও কোথাও তাকে পাইনি। কিন্তু আপুতো ঘরের কোনায় রাখা বড় বাক্সটার কাছেই ছিলেন! গেলেন কোথায়?
বাক্সটাতে গত সপ্তাহে আনা কঙ্কালটা আছে। এবছর মেডিকেলে ভর্তি হওয়ার পর বড় চাচা আমার জন্য কঙ্কালটা এনে দিয়েছেন।
বড়চাচার বন্ধুর মেয়ের ফাইনাল শেষ হয়েছে। কঙ্কালটার তার আর কোন দরকার নাই।
এদিকে আমি বুঝতে পারছিনা আমার চোখে কি ধান্দা লাগছে? এতো বছর পর কেন আমি আপুকে দেখছি?নাকি হঠাৎ করে অতিরিক্ত পড়ার চাপে মাথা এলোমেলো হয়ে গেছে? মাথায় যে কিছুই আসছেনা।
মুন্নি আপু ছিলেন আমাদের পাশের বাসার ভাড়াটিয়া। আপুর বাবা সরকারী চাকরি করতেন । এই কারনে তার বাবার আমাদের জেলায় পোস্টিং হয়েছিলো। তাই চাকরির সুত্রেই আপুদের পরিবার আমাদের পড়ায় ভাড়া বাসায় আসে। তারা থাকতো ঠিক আমাদের পাশের বাসায়। আমি তখন বেশ ছোট ছিলাম।
কিন্তু অল্প দিনেই মুন্নি আপুর মা আর আমার মায়ের বেশ ভালো সম্পর্ক হয়ে গিয়েছিলো। মুন্নি আপু খুব ভালো গান গাইতেন। নামকরা উস্তাদের কাছে ক্লাসিক্যাল মিউজিক শিখতেন।
মাথাভর্তি লম্বা চুলের আপু দেখতেও ছিলেন খুব সুন্দরী। তার একটাই স্বপ্ন ছিলো বড় হয়ে ডাক্তার হবেন।
আমি আপুকে খুবই পছন্দ করতাম। সুযোগ পেলেই আপুর সাথে সকাল দূপুর লেপ্টে থাকতাম। লেখাপড়ায় আপু খুব ভালো ছিলো।
আপু আর আমার ভাইয়া সায়েম এক স্কুলে না পড়লেও একই ক্লাসের স্টুডেন্ট ছিলো। ভাইয়া বিচিত্র কারনে আপুকে একদম পছন্দ করতো না। হয়তো আপু বেশি ভালো ছাত্রী ছিলো তাই। আপুর গানের আওয়াজ আসলেই বলতো,
–এই’রে ষাড়ের চেঁচানি শুরু হলো।
আম্মু পড়ালেখায় আপুর উদাহরণ দিলেই ভাইয়া রাগ করতো,বলতো
—-নেকা মেয়ে একটা। ভালোমানুষির চাদর গায়ে নেকেশ্বরী।
এসএসসিতে আপু খুব ভালো রেজাল্ট করলো। এবং খুব আশা নিয়ে আপু কলেজে ভর্তি হয়েছিলো।
আপু কলেজে ভর্তি হওয়ার কয়েকমাস পরেই ওদের পরিবারে নেমে এলো ভয়ংকর দুর্যোগ । মুন্নি আপুর বাবা হঠাৎ হার্ট এ্যাটাকে মারা গেলেন। ওদের পরিবারে নেমে এলো একটা বিপর্যয়।
মুন্নি আপুর বাবা খুব সৎ অফিসার ছিলেন।
এমন কোন জমানো অর্থ সম্পদ তাদের ছিলো না।
তাই আপুর মা তার বাবার অফিস থেকে পাওয়া অর্থ আর মাসিক পেনশনে শহরে বাসা ভাড়া দিয়ে থাকতে পারবেন না ভেবে তার দুই মেয়েকে নিয়ে গ্রামে চলে যাওয়াই উচিত মনে করলেন।
কিন্তু তখন আমার মা বাধা দিলেন। মা বললেন,
—-আপা মুন্নির কলেজটা শেষ হোক তখন আপনি যা ইচ্ছে করেন। গ্রামে চলে গেলে মেয়েটার ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যাবে। তা’না হলে এক কাজ করেন মুন্নিকে আমার কাছে রেখে যান। সোমার মতো ওকেও আমি সমান আদর করবো। আমি মুন্নির সকল দায়িত্ব নেবো।
কিন্তু মুন্নি আপুর মা তার মেয়েকে কারো কাছে রেখে যেতে চাইলেন না। মেয়ের নিরাপত্তার কথা ভেবে তিনি নিজেই ছোট এক রুমের একটা বাসা খুঁজতে লাগলেন।
আমাদের বাসার ছাদে দুটো ঘর ছিলো, মায়ের অনুরোধে ওরা সেই ঘরে নামমাত্র ভাড়ায় চলে এলেন।
মায়ের এই উদারতাকে বাবা ভালো চোখে দেখলেন না।বাবা বিষয়টা বেশি পছন্দ করলেন না। তিনি বললেন এতে নাকি আমাদের পরিবারের প্রাইভেসি নষ্ট হয়ে গেছে। ছেলেটা বড় হয়েছে এখন ওদের এত কাছে রাখা ঠিক নয়। ওদের মেয়েটাও বড় হয়েছে।
তাছাড়া তিনি ছাদে নিরিবিলিতে রাতে সিগারেট টানেন। এখন সময়ে অসময়ে ছাদেও যেতে পারবেন না।
আম্মু ওদের অভিভাবকহীন অসহায়ত্বের কথা বলে বাবাকে রাজি করালেন। বললেন,মাত্র দুটো বছর। দেখতে দেখতেই সময় চলে যাবে।
আমি তখন ক্লাস সেভেনে পড়ি। মায়ের অনুরোধে মুন্নি আপু তখন আমাকে সপ্তাহে তিনদিন পড়াতেন আর একদিন গানও শেখাতেন। আস্তে আস্তে আমাদের পাড়ায় প্রাইভেট টিচার হিসাবে মুন্নি আপুর খুব সুনাম হয়ে গেলো।
কিন্তু এভাবে সারাদিন প্রাইভেট পড়িয়ে নিজের পড়ায় অমনোযোগী হয়ে যান তিনি। সে বছর আপু এইচএসসি পরীক্ষা দিলেন কিন্তু আশানুরূপ রেজাল্ট করতে পারলেন না। রেজাল্টের পর তিনি খুব ভেঙে পরলেন।খাওয়াদাওয়া ছেড়ে দিলেন। মেডিকেলে ও চান্স পেলেন না।
তখন বড় চাচা অনেক আদর করে তাকে বুঝালেন যে ডাক্তার না হলেও তিনি একটা ভালো সাবজেক্টে যেন অনার্স পড়েন।
চাচার কথায় সরকারী কলেজে তিনি অনার্সে ভর্তি হয়ে গেলেন। আগের মতই প্রাইভেট পড়িয়ে নিজের ও সংসারের খরচে সহায়তা করতে লাগলেন।
অনার্সে ভর্তির বছরদেড়েক পরেই একদিন মুন্নি আপু কলেজ থেকে আচানক ভাবে আর বাড়ী ফিরলেন না। প্রথমে সবাই ভেবেছিলো কলেজ থেকে তিনি হয়তো কোন স্টুডেন্ট এর বাসায় চলে গেছেন। কিন্তু রাত পেরিয়ে দিন এলো একে একে সকল ছাত্র ছাত্রীর বাসায় খবর নেওয়া হলো কিন্তু মুন্নি আপু আর এলো না।
মুন্নিআপু যেন ভোজবাজীর মতো বাতাসে মিলিয়ে গেলো। সবাই মুন্নি আপুকে অনেক জায়গায় খুঁজ করলো। মুন্নি আপুর মা মেয়ের শোকে একদম ভেঙে পরলেন। যে ভাইয়া আপুকে নেকেশ্বরী বলতো সে ভাইয়াও তার বন্ধুদের নিয়ে অনেক খুঁজেছে।
আমার বড় চাচা সকল পত্রিকায় ছবিসহ নিখোঁজ সংবাদ ছাপালেন। বড় চাচা মুন্নি আপুকে খুব ভালোবাসতেন।
সবসময় আপুকে বলতেন
—-যদি আমি বিয়ে করতাম তাহলে তুই আমার মেয়ে হয়ে জন্মাতিস। আমি বিয়ে করিনি তাই তুই অন্য ঘরে জন্মেছিস।
তিনি সকল কাজ ফেলে আপুকে খুঁজে বেড়ান।
সারাজীবন রাজনীতি করা আমার বড়চাচা বিয়ে করেননি। এখন বেশ বয়স হয়ে গেছে তাই পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কিছুটা সময় কাটান বাকি সময় রাজনীতিতেই ব্যাস্ত থাকেন। মুন্নি আপুকে তিনি খুব স্নেহ করতেন। তাই মুন্নি আপুর অন্তর্ধানে আমাদের পরিবারে বড় চাচা সবচেয়ে বেশি ভেঙে পরলেন। তিনি সারাদিন নিজের ঘরে গুম হয়ে বসে থাকেন।
মুন্নি আপুর বিষয়ে তিনি সব সময় নিজেকেই দোষ দেন,বলেন –
—আমি কেন তখন শহরে ছিলাম না। যদি বাসায় থাকতাম তবে মুন্নিকে ঠিকই খুঁজে বের করতাম।
ঐ সময় বড় চাচা রাজনৈতিক কাজে ঢাকায় ছিলেন। সাতদিন পর বাড়ীতে এসে জানতে পারলেন আপুর কথা। বড় চাচা আপুকে খুঁজতে পীর ফকিরের কাছেও মাঝে মাঝে দৌড়ঝাঁপ করেছেন।
এক গণক আয়না পরীক্ষা দিয়ে বলেছেন, মুন্নি আপুকে নাকি কুমিল্লার ময়নামতিতে দেখা গেছে। গণক বললেন এক দুষ্ট জ্বিন আপুকে নিয়ে ময়নামতিতে রেখেছে। সে আপুকে বিয়ে করতে চায়। বড় চাচা আর আন্টি ছুটে গেলেন কুমিল্লায়। সেখানে আপুর ছবি সহ পোস্টার করে দেয়ালে দেয়ালে লাগিয়েছিলেন। মাঝে মাঝে বড়চাচা মধ্যরাতে ও মুন্নিরে তুই কই গেলিরে বলে চিৎকার কাঁদতেন।
বড়চাচা তার রাজনীতি করার সুবিধার জন্য শহরের পাশে আরেকটা বাড়ী করে থাকেন। সেখানে তার নেতা কর্মীদের নিয়ে মিটিং করেন। বিভিন্ন লোকাল কর্মসূচির বিষয়েও সেখানেই আলোচনা হয়।
কিন্তু মুন্নি আপু হারিয়ে যাওয়ার পর বড়চাচা ঐ বাসায় যাওয়া প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন। বাসাটা গত কয়েক বছর ধরে তালাবন্ধ ছিলো। এতদিন পর এখন আবার তিনি মাঝে মাঝে ঐ বাসায় গিয়ে থাকেন।
এতোবছর আগে হারিয়ে যাওয়া মুন্নি আপুকে আবার আমার ঘরে কেন দেখলাম? আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা। আমার মন বলছে আপু কোন বড় বিপদে পরেছে। আপুকে আমি খুবই ভালোবাসতাম তাই হয়তো আমার মনটা এমন অস্থির হচ্ছে।
সকালে নাশতার টেবিলে রুটি খেতে খেতে রাতে দেখা স্বপ্নের কথাটা বললাম,
——মা জানো গতকাল রাতে আমি মুন্নি আপুকে স্বপ্নে দেখেছি।
——মুন্নিকে! কি দেখলিরে সোমা? ইসরে! এত সুন্দর মেয়েটা কোথায় যে হারিয়ে গেলো।
মুন্নি আপুর কথা শুনার পর নাশতার টেবিলে কেমন নিরবতা নেমে এলো। বড় চাচা তাড়াতাড়ি অর্ধেক নাশতা করে তার প্রিয় পোচ ডিমটা ফেলেই চলে গেলেন রুমে। বাবাও কেমন আনমনা হয়ে গেলেন। ভাইয়াও কেমন ফ্যাকাশে হয়ে গেলো। বললো,
—–আবোলতাবোল চিন্তা বাদ দিয়ে পড়ালেখায় মন দে।
সকলের চা টেবিলে ঠান্ডা হয়ে গেলো।
আসলে মুন্নি আপুকে সবাই খুব ভালোবাসতো। হারিয়ে যাওয়ার পর আপুর মা পাগলের মতো রাতদিন মেয়েকে খুঁজেছেন।
তখন কতমানুষ যে কত কথা বলেছে তার ইয়ত্তা নেই।
কেউ বলেছে মেয়েকে কেউ কিডন্যাপ করেছে,তারপর খারাপ পাড়ায় বিক্রি করে দিয়েছে।
কেউ বলেছে মেয়ে এতদিন ডুবে ডুবে জল খেয়েছে, কোন প্রমিকের সাথে হয়তো পালিয়ে গেছে।
কেউ বলেছে ধরে নিয়ে ধর্ষণ ও হত্যা করে লাশ গুম করেছে।
সব কথা উপর বিশ্বাস করে পুলিশ মুন্নি আপুকে অনেক খুঁজেছে। বড় চাচাও নিজের কাজ ফেলে আন্টির সাথে অনেক খুঁজেছেন। বাবাও তার লোক দিয়ে অনেক খুঁজেছেন।
শেষ পর্যন্ত আপুকে কোথাও পাওয়া যায়নি। জলজ্যান্ত মেয়েটা যেন দিনের আলোয় হাওয়া হয়ে গেছে।
ছয়মাস অপেক্ষা করে আন্টি ওনার ছোট মেয়েকে নিয়ে গ্রামে চলে গেছেন।
তারপর থেকে প্রতিবছরই একবার তিনি আমাদের বাসায় আসেন। আপুর কথা বলে বলে কান্নাকাটি করেন। তিনিও ধরে নিয়েছেন আপু আর ফিরবে না।
আমরা সবাই যখন আপুকে ভুলে গেছি তখনই এই স্বপ্ন দেখা শুরু। বুঝতে পারিনা এগুলো স্বপ্ন নাকি হেলুসিনেশন। পরপর দুদিন আপুকে দেখেছি। আমার কেনজানি মনে হয় আপুকে আমি আবার দেখবো। আপু হয়তো আমাকে কিছু বলতে চায়।
আমার কথা সত্য প্রমাণ করে রাতে আবার তাকে দেখলাম। পড়ার টেবিলের পাশে কোন কিছুর আওয়াজে তাকিয়ে গেলাম,আমার ধারনা ঠিক মুন্নি আপু আমার বই খাতা দ্রুত হাতে সরিয়ে কিছু খুঁজছেন,মনে হয় জরুরী কিছু।
আমি আজ আর ভয় পেলাম না, তাকিয়ে রইলাম। হঠাৎ আমার দিকে তার চোখ পরতেই তিনি অপ্রস্তুত হাসি দিলেন,কান্নার মতো শব্দ করে বলতে লাগলেন “সো-মা-রে! আ-মি আ-মা-কে-ই খুঁ-জি-রে সো-মা আ-মা-কেই খু্ঁ-জি।”
আমি কিছু বলতে যাবো দেখি কোথাও কেউ নেই।
সকালে উঠে আমার মাথায় সবকিছু তালগোল পাকিয়ে গেলো। আমি জেগে স্বপ্ন দেখি নাকি ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখি! নাকি আমার অবচেতন মন মুন্নি আপুর অন্তর্ধানের বিষয়ে নতুন করে ভাবছে। কিছুই বুঝতে পারছি না।
ক্লাসে যাওয়ার জন্য ব্যাগ নিতেই চোখে পরলো কঙ্কালটা। আমি কালরাতে কঙ্কালটা বক্স থেকে বের করেছিলাম। আজ এই বিষয়ে একটা ক্লাস হওয়ার কথা।
আমি কঙ্কালটার দিকে তাকালাম,মনটা খারাপ হয়ে গেলো। রক্তমাংসের মানুষ থাকতে না জানি কেমন ছিলো সে। বয়স কত ছিলো তার? মনটাতে একটা অদ্ভুত অনুভূতি নিয়ে বাসা থেকে বের হলাম। যাওয়ার সময় মাকে বলে গেলাম আমার রুমে যেন বুয়া খালাকে কাজ করতে না পাঠায়। বিছানায় কঙ্কালটা দেখে ভয় পেয়ে শেষে আবার কাজ না ছেড়ে দেয়।
ক্লাস শেষে চলে গেলাম বড় খালার বাসায়। সেখানে সমবয়সী কাজিন সুচনা থাকে। ছোটবেলা থেকে সুচনা আর আমি এক সাথেই পড়েছি। ইন্টারমিডিয়েট এর পর সুচনা ভার্সিটিতে আমি মেডিকেলে।
ভাবছিলাম স্বপ্নের বিষয়টা নিয়ে ওর সাথে আলাপ করবো। কিন্তু ওদের বাসায় গিয়ে দেখি এলাহি কারবার! স্কুলের বান্ধবীদের সে আসতে বলেছে আড্ডা দিতে। আজ নাকি জম্পেস আড্ডা হবে। বাসায় মাকে ফোন করে বললাম ফিরতে দেড়ি হওয়ার কথা।
সন্ধ্যায় নতুন মুভি দেখবো সবাই।
রাতে শাহরুখ খানের “কাভি খুশি কাভি গাম” দেখতে দেখতে প্রায় এগারোটা বেজে গেলো। তারপর খেয়ে বাসায় ফিরতে ফিরতে অনেক বারোটা। বাসায় এসে রুমে ঢুকেই গুনগুনিয়ে গান শুনতে পেলাম। কি যেন একটা কষ্টের রাগ গাইছেন।
খোলা জানালা দিয়ে চাঁদের আলোয় বিছানায় মুন্নি আপু উপুর হয়ে শুয়ে গান গাইছে। আমার আওয়াজ পেতেই কেমন টেনে টেনে মৃদু গলায় ফিসফিস করে বললেন, —–ব-ড় চা–চা-! ব-ড় চা-চা!
লাইট জ্বালাতেই দেখলাম,কোথাও কেউ নেই। কঙ্কালটা বিছানায় পরে আছে।
মনটা খারাপ করে ঘুমাতে গেলাম। আমার কি কোন অসুখ হয়েছে? পাগল হয়ে কি যাচ্ছি? এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলাম। শেষরাতে স্বপ্নে দেখলাম মুন্নি আপু আমার পড়ার টেবিলে পা ঝুলিয়ে বসে আছে। আমাকে বলছে
—- সোমা তোর কি অনেক বুদ্ধি? একটা ক্লু দিলাম,
এবার তোর বুদ্ধি দিয়ে আমাকে একটু আলোয় নিয়ে আয়।
সকালে ঘুম থেকে উঠে ভাবতে বসলাম। কেন এমন হচ্ছে। মুন্নি আপু কি সত্যিই আমার কাছে আসে? আপুর কি হয়েছে? তাকে কি কেউ অন্ধকরে আটকে রেখেছে?
কেন আলোতে আনতে বললো? বড় চাচার কথা কি বললো? চাচার সাহায্য নেবো? ভাবতে ভাবতে কঙ্কালটাতে হাত দিলাম। মনের ভেতরে এক অদ্ভুত অনুভূতি! যেন আপনজন হারিয়ে যাওয়ার ব্যাথা মনে।
প্রতিটা হাড় খুব ভালো করে দেখছি। মনের ভেতরে একটা সন্দেহ এটা কি মুন্নি আপুর কঙ্কালল? আপু কি তাহলে মরে গেছে? নাহলে এতদিন হলো আপুকে স্বপ্নে দেখিনা,এখন কেন প্রতিদিনই দেখি?
অন্যদিন গুলোতে আমি ঘুমের ঘোরে দেখি কিন্তু আজ!
ভাবতে ভাবতেই নজরে এলো একটা পায়ের হাড়ে অসামঞ্জস্যতা।
বেঁচে থাকতে হয়তো কখনো তার পায়ের হাড়ে বড় ধরনের ফ্র্যাকচার হয়েছিলো।
আমার হঠাৎ মনে পরলো আপু নাইনে পড়ার সময় স্কুল থেকে ফেরার পথে রিক্সা থেকে পরে ডান পা ভেঙে ফেলেছিলো। ছয় সপ্তাহ পায়ে প্লাস্টার করে রেখেছিলো। অনেক কষ্ট হতো আপুর। প্লাস্টারের ভেতরে খুব চুলকাতো তাই আমাকে দিয়ে লম্বা চিকন কাঠি আনিয়েছিলো চুলকাতে।
আমি দেখলাম কঙ্কালটার ডান পায়ের হাড়েই সমস্যাটা।
আমি আর ভাবতে পারলাম না। চিৎকার করে কাঁদতে লাগলাম। আমার চিৎকার শুনে বাসার সবাই দৌড়ে এলো। সবাই হতভম্ব হয়ে জিজ্ঞাস করছে কেন কাঁদছি।
মা বললেন,—- কিরে শরীরে কোন সমস্যা? পেটে ব্যাথা?
ভাইয়া বললো,—নিশ্চই তেলাপোকা দেখে চিৎকার করেছিস?
আমি কথা বলতে পারছিলাম না। হেঁচকি তুলতে তুলতে বললাম,.
—–মা মুন্নি আপু! এই কঙ্কালটা মুন্নি আপুর। আমি জানি এটাই মুন্নি আপু বলে আমি হাউমাউ করে কেঁদে উঠলাম।
আমার কথায় ঘরে যেন বজ্রপাত হলো! বড় চাচা আমাকে ধমকে উঠে বললেন,
,— পাগল হয়ে গেলি নাকি! মুন্নির কঙ্কাল! বললেই হলো। সারারাত হরর সিনেমা দেখে আর দিনে কঙ্কাল নিয়ে গল্প বানাও। থাপ্পর দিলে ভূত চলে যাবে। মেডিকাল পড়ার কি দরকার? কঙ্কাল দেখে ভয় পাস
বলেই বড় চাচা হনহন করে নিজের রুমে চলে গেলেন।
——–যতসব আজব কথা! মুন্নি কি মরেছে নাকি যে এটা তার কঙ্কাল হবে! আমারতো মনে হয় সে কোন ধনী ছেলের সাথে পালিয়ে গেছে। কিছুটা তোতলাতে তোতলাতে ভাইয়া বললো।
আস্তে আস্তে সবাই চলে গেলো। শুধু মা বসে রইল বিছানায় অবিশ্বাসী চোখ দিয়ে কঙ্কালটা দেখছে। আমি মাকে প্রথম দিন থেকে সবকিছু খুলে বললাম। তারপর পায়ের হাড়টা দেখিয়ে মনে করিয়ে দিলাম আপুর পা ভাঙার কথা।
মা’র মুখেও কথা নেই, কেমন নির্বাক হয়ে বসে আছেন। পরম মমতা নিয়ে হাড়গুলোতে হাত বুলাচ্ছেন। তার চোখ দিয়ে অনবরত পানি পরছে।
——মা তুমি কি অবিশ্বাস করো আমাকে? আমি এত বছর আপুকে দেখিনি,এখন কেন প্রতিদিনই দেখছি?
মা ফিসফিস করে বললেন,
——এটা যদি মুন্নির কঙ্কাল হয় তাহলে তোর কাছে কিভাবে এলো? আর তোর বড় চাচার বন্ধুর মেয়ে এই কঙ্কাল কোথায় পেলো? তাহলে কি মুন্নি কোন এক্সিডেন্টে মারা গিয়েছিলো? তার লাশটাকি বেওয়ারিশ হয়ে রাস্তায় পরে ছিলো? শুনেছি বেওয়ারিশ লাশকে মেডিকেলের স্টুডেন্টদের জন্য রাখে। তারপর তাদের কঙ্কাল,,,,
বলেই মা কাঁদতে লাগলেন।
মায়ের কান্না দেখে আমিও ঠিক থাকতে পারলাম না। কাঁদতে লাগলাম।
সারাদিন কলেজে ভাবলাম,আমার মনে হচ্ছে আমাদের অতি কাছের কেউ আপুকে খুন করেছে। কে করলো কাজটা? ভাবতে লাগলাম! ভাইয়ার বন্ধু সজিব অনেকদিন আপুকে বিরক্ত করেছে। আপু শেষমেষ বিচারও দিয়েছিলো বড় চাচাকে। সেদিন বড় চাচা সবুজ ভাইকে অনেক বকেছিলো। সাথে ভাইয়াকেও।
সবুজ ভাইয়া কিছু করেনিতো?
কয়েকজনকে সন্দেহ হচ্ছে এরমধ্যে ভাইয়াও আছে।
আপু নিখোঁজ হওয়ার পর ভাইয়ার আচরণ ভাবতে লাগলাম। ভাইয়া কি নার্ভাস ছিলো?
ভাইয়া মুন্নি আপুকে একদম সহ্য করতে পারতো না। এমনতো হতে পারে বন্ধুদের নিয়ে,,,নাহ্! আমি আর ভাবতে পারছি না। মাথায় সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে
হঠাৎ বড় চাচার কথা মনে এলো। মুন্নি আপু ও বড়চাচার কথাই ফিসফাস করে বলেছিলেন। বড় চাচাকে বললে ভাইয়া সহ তার সকল বন্ধুদেরকে কাঁচা চিবিয়ে খাবে। কারন আপুকে তিনি আমার চেয়েও বেশি ভালোবাসতেন।
আপু হারিয়ে যাওয়ার পর ভাইয়া যথেষ্ট আপসেট ছিলো। বন্ধুদের নিয়ে অনেক জায়গায় খুঁজেছে। তাহলে কি সবকিছু ভাইয়ার অভিনয় ছিলো?
বাসায় গিয়ে কি আমি মাকে বলবো আমার সন্দেহের কথা?
মা’কি বিশ্বাস করবে তার ছেলে এমন ভয়ানক কাজ করেছে! জানি না আমি কিচ্ছু জানি না। ক্লাস শেষে বাসায় ফিরে দেখি ভাইয়ার ব্যাগ গোছানো,রাতের ট্রেনে চট্টগ্রাম যাবে। সেখান থেকে কক্সবাজার।
আমার হঠাৎ খুব রাগ হলো, আমি ভাইয়ার সামনে চলে গেলাম বললাম,
—তুই কক্সবাজার চলে গেলে মুন্নি আপুর অন্তর্ধান রহস্য কিভাবে করবো?
—–সেটা আমি কি জানি? আজাইরা যত ভেজাল তোর মাথায়। আমি গত সপ্তাহে টিকিট বুকিং করেছি। ফিরে এসে তোকে সময় দেবো।
——-না তুই যাবি না। আমি তাহলে বড় চাচাকে বলবো। তাহলে বুঝবি কত ধানে কত চাল।
——- যা যা চাচাকেই বল। আগে তুই চাচার কাছ থেকে জেনে নে এই কঙ্কাল তার বন্ধুর মেয়ে কোথায় পেলো। আগে সেটা জেনে তারপর রহস্য নিয়ে ভাবিস।
সত্যিইতো! এটাতো ভাবিনি। পরদিন সকালে চাচুর সেই বন্ধুর মেয়ের কাছে গেলাম। তিনি ইন্টার্ন শেষ করে ফেলেছেন।তার কাছে যা শুনলাম তাতে আমি অবাক!
তিনি বললেন, তার কঙ্কাল তিনি নিজেই কিনেছিলেন।এবং এখনও সেটা তার কাছেই আছে। তার কোন এক সিনিয়রের কাছ থেকে কিনেছিলেন। বিশ্বাস না হলে সিনিয়রের ফোন নাম্বার দেবেন ফোন করতে। আর কঙ্কাল দেখতে চাইলেও দেখাবেন।
আপুর কথা শোনে আমার মাথা ভোঁ ভোঁ করছে।
চাচু কেন এতবড় মিথ্যা কথা বললো!
বাসায় ফিরে চাচুকে ফোন দিয়ে কিছু জানিনা এমন ভাবে বললাম,তার বন্ধুর মেয়েকে কোথায় পাওয়া যাবে। কঙ্কালের বিষয়ে জানতে চাই।
কথা শেষ করার আগেই চাচু আমাকে গালাগালি করা শুরু করলেন। বললেন এই বিষয়টা নিয়ে যেন বেশি বাড়াবাড়ি না করি।
তারপর হঠাতই নরম গলায় বললেন,
——কি দরকার নদীর মরা নিজের ঘরে টেনে আনার? তোর কঙ্কালের দরকার ছিলো কঙ্কাল পেয়েছিস। কার কঙ্কাল কোথাকার কঙ্কাল এসব জেনে তোর কি দরকার। এতে তোর পড়ালেখার ক্ষতি হচ্ছে। তাছাড়া
এসব নিয়ে ঘাঁটাঘাটি করতে গেলে নিজের ঘরের মানুষই ফেঁসে যাবে।
——-তারমানে! তুমি ভাইয়াকে বাঁচাতে চাইছ? কেন? তুমি না আপুকে নিজের মেয়ে মনে করতে ? সবকিছু কি তাহলে মিছে? নিজের ভাইয়ের ছেলে অন্যায় করছে জেনেও চুপ থাকবে? আমি রাগে চিৎকার করে বললাম।
চাচু অবাক গলায় বললেন,
——সায়েম! ও হ্যাঁ ইয়াং পুলাপান একটু আধটু ভুল করেই। তুই কিছু বলিস না। ওকে আমি নিজ হাতে বিচার করবো।
——না আমি পুলিশের কাছে যাবো। তুমি এতদিন যখন বিচার করোনি আর কখনও করবেও না। আমি কালই পুলিশের কাছে যাবো।
——–সোমা তুই পুলিশের কাছে যাবি না। তাহলে আমার এতদিনের রেপুটেশন শেষ হয়ে যাবে।
আমি কালকে বিকালে ইন্ডিয়া যাবো, ফিরে আসি তারপর যা খুশি করিস।
চাচুর সাথে কথা বলতে বলতেই পিছনে ফিরে দেখি মা,তিনি ভয়ার্ত চোখে আমাকে দেখছেন। আমার আর চাচুর সব কথা শুনেছেন। তিনি বিশ্বাস করতে পারছেন না তার প্রাণপ্রিয় ছেলে এমন অন্যায় করেছে।
মা আর আমি কাঁদছিলাম। ভাইয়াকে মা ফোন করে সব বলেছে। বলেছে তাড়াতাড়ি সিলেটে চলে আসতে। পরদিন সকালেই ভাইয়া হাজির। মায়ের কান্নায় আর নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে সারারাত জার্নি করে চলে এসেছে।
মায়ের গা ছু্ঁয়ে বার বার বলছে,সে জানেনা মুন্নিকে কে মেরেছে। তবে কিছুটা আন্দাজ করতে পারে। তারপর
বিকালের ফ্লাইটে চাচু ইন্ডিয়া যাবে শোনে, ভাইয়া বের হয়ে গেলো তাড়াতাড়ি। ভাবলাম চাচুকে ছাড়া আসল খুনিকে ধরা যাবে না। পুলিশ চাচুর কথা আগে শুনবে।
তারপর,,,ঘন্টাদুয়েক পর খবর পেলাম, মুন্নি অন্তর্ধানের বিষয়ে বড় চাচুকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করতে থানায় নিয়ে গেছে। ভাইয়া পুলিশকে কি বলেছে কে জানে। পুলিশ চাচুকে এরেস্ট করে ফেলেছে।
পরদিন পত্রিকায় সাত বছর আগে নিখোঁজ হওয়া কলেজ ছাত্রী মুন্নিকে হত্যা ও গুম করার অপরাধে চাচুকে দোষি করে নানা রকম নিউজ ছেপেছে।
পুলিশ আমাদের বাসায় এসে কঙ্কালটা নিয়ে গেছে। এটাকে নাকি পরীক্ষা করে দেখবে কার কঙ্কাল।
চাচু ভাইয়াকে বাঁচাতে তার অপরাধ নিজের কাঁধে নিয়েছেন এটাই ছিলো আমাদের বিশ্বাস।
কিন্তু রিমান্ডে চাচু স্বিকার করেছেন নিজের অপরাধ।
ভাইয়া পুলিশকে শুধু এটাই বলেছে নিখোঁজ হওয়ার দিন সন্ধ্যায় মুন্নি আপুকে বড় চাচুর গাড়িতে তিনি দেখেছেন। এদিকে ঐদিনতো বড় চাচু ঢাকায় গিয়েছিলেন। সাতদিন ছিলেন সেখানে।
সায়েম নিজেও তখন কনফিউজড ছিলো বড় চাচুর বিষয়ে। কারন আসলেই ঐদিন বিকালে তার ঢাকা যাওয়ার কথা। তাহলে মুন্নিকে নিয়ে তিনি সন্ধ্যায় কোথায় গিয়েছিলেন?
শুধু একটা সুত্র ধরেই পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
বড়চাচু জবানবন্দীতে বলেছে,,,
“”সেদিন আমার ঢাকা যাওয়ার কথা ছিলো। বিকালে ঢাকার উদ্দ্যেশ্যে বের হয়েছি একটু দূরে দেখি মুন্নি রাস্তায় রিক্সার জন্য দাড়িয়ে আছে। আমি কাছে গিয়ে বললাম,
—– আয় তোকে বাসায় পৌছে দিই।
মুন্নি নির্দিধায় গাড়িতে উঠ এলো। হঠাৎ আমার মনে হলো আমার বাসায় একটা ফাইল ফেলে এসেছি। আমি গাড়ীটা ঘুরিয়ে বাসায় গেলাম। মুন্নিকে সোফায় বসিয়ে ভেতরে গেলাম।
তখনই হঠাৎ আমার মনে ইবলিশে হানা দিলো। ভাবলাম সবাই জানে আমি ঢাকা গেছি। সাতদিন যদি ওকে আমার কাছে রেখে দিই!কেউ জানতেও পারবেনা,,,
তারপর ওকে জুসের সাথে ঘুমের ঔষধ দিলাম। হাত পা বেঁধে,,,,আমার সকল অপূর্ণ ইচ্ছা পূরণ করলাম।
যখন ওর হুস এলো,আমি ওকে বললাম
——মা’রে,,,,যা হওয়ার হয়ে গেছে। কাউকে কিছু বলিস না। আমার সকল সম্পদ তোকে দিয়ে দেবো।
কিন্তু আমার এত আদরেও ওর মন গলেনি। চিৎকার করে বললো,
—-সবাইকে সব বলে দেবো।তোমাকে জেলের ভাত খাওয়াবো। পুলিশের কাছে যাবো। লুচ্চা,বদমাশ,,,
বিশ্বাস করুন আমি ওকে কিছুতেই মারতে চাইনি। ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়ে ঘুম পারিয়ে শুধু আদর করতাম।
আমার কাছে যাওয়ার পর কিছু খেতে দিলে থু করে ফেলে দিতো।
বলতো মরে গেলেও সে এখানের পানিও খাবে না।
একদিন জোর করে ওকে দুধ খাইয়েছিলাম। তারপর ওকে আটকে রেখে সাতদিন পর পরিস্থিতি দেখতে বাসায় গেলাম। সবাই জানলো আমি ঢাকা থেকে জরুরী মিটিং শেষ করে এসেছি ।
তারপর কয়েকদিন ওকে খুঁজেছি। পাঁচদিন পর বাসায় গিয়ে দেখি মুন্নি মরে গেছে। না খেতে খেতে সে মরে গেছে। আর আমিতো ওকে ঘুমে রেখে গিয়েছিলাম। গিয়ে মৃতই পেয়েছি। বিছানার পাশে একটা ছেঁড়া কাগজে লিখে গেছে
“আমি মরে গেলেও তোমার বিচার করবো। দেখে নিও বিচার করবই।”
সেদিনই রাতে আমি ওকে বাগানে কবর দিয়ে চলে এসেছিলাম।
তারপর থেকে আমি ঐ অভিশপ্ত বাড়ীতে যাওয়া ছেড়ে দিয়েছি। কিছুটা ভয় পেতাম রাতে। তাই ভাইয়ের মেয়ে সোমা মেডিকেলে ভর্তি হলে ওকে কঙ্কালটা এনে দিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম আমার বাড়ীটার শাপমুক্তি হয়েছে।
তারপর ফিসফিস করে বললো,—– কে জানতো মরে গিয়েও মানুষ বিচার করে,,,,!
Leave a Reply