1. banglamailnews72@gmail.com : banglamailnews : Zakir Khan
শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৫৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
# আহারে # খোরশেদ ।। সমাজে নতুন অপরাধী চক্র তৈরী হচ্ছে কিন্তু ভবিষ‍্যতে এদের রক্ষা করবে কে??।। – – – আশিক ফারুকী “অতঃপর” __ সালমা আক্তার বীরাঙ্গনা নই আমি মুক্তিযোদ্ধা – – – শাহনাজ পারভীন মিতা জলপাই রঙের স্বাধীনতা – – – আরিফুল হাসান প্লাস্টিকের উৎপাদন বন্ধ করতে হবে – উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ান হাসান – – – স্বাধীন আজম –   টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধি, স্বপ্নমায়া – – – – মাহজাবীন আহমেদ বুড়ি মরে গেল – – – মোঃ আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমাম প্রযুক্তির দুনিয়ায় শিক্ষার্থীদের এখন উন্নত জীবন গড়ার দারুণ সময়:– ————–টিপু সুলতান লেখক ও সমাজ চিন্তক ডায়াবেটিস নিয়ে সচেতনতাই পারে ডায়াবেটিস রোগ নির্নয় ও রোগের চিকিৎসা এবং সঠিক ব্যবস্থাপনা – – – ডা: সাদিয়া আফরিন 

গল্পের নাম- # ইচ্ছের_উল্টোপিঠ – ক্যাটাগরি-# থ্রিলার + রোমান্টিক — পর্ব-#০১,#পর্ব_২,#পর্ব_৩,#পর্ব_৪ , #পর্ব_৫ , #পর্ব_৬ ,এবং #পর্ব_৭ — লেখনীতে – #আভা_ইসলাম_রাত্রি

  • আপডেট টাইম : রবিবার, ৪ জুলাই, ২০২১
  • ৪৮৭ বার
(১)
মধ্যরাত এখন। ” নিরবভূমি ” নামক সুবিশাল বাড়ির এক রূমে দুজন যুবক- যুবতী আদিম খেলায় মগ্ন হয়ে আছে। রাতের কতগুলো প্রহর কেটে যাওয়া পর তারা দুজনই ক্লান্ত হয়ে ফিনফিনে সাদা রংয়ের ব্লেনকেট গায়ে দিয়ে শুয়ে পড়ে। কিন্তু যুবকটার চোখে এই মুহূর্তে ঘুমের রেশ মাত্র নেই। সে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে আনমনে কি যেনো ভেবে যাচ্ছে। কিছুসময় পর পাশ ফিরে তার পাশে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে থাকা মেয়েটাকে একপলক দেখলো। তৎক্ষণাৎ ঘৃণায় তার সারা শরীর ” রি রি” করে উঠলো। বিদেশি এই মেয়েকে দেখে সম্পূর্ণ মেয়েজাতির উপর এক অদ্ভুত বিতৃষ্ণা জন্মাচ্ছে তার । ওর এতকালের জং পড়া মনে কি সব অদ্ভুত অদ্ভুত ভাবনা আসছে। আচ্ছা সব মেয়েরাই কি টাকার কাঙাল ? বস্তা ভরা টাকা পেলে এরা সবাই যেকোনো ছেলের সাথে শুতে দ্বিধাবোধ করেনা। এতোটা সস্তা এই মেয়েগুলো। ছি। মানুষ বলে মেয়েরা নাকি মায়ের জাত। তারা যদি মায়ের জাতই হতো তাহলে তাদের কি এই অধঃপতন হতো ? বরং ওরা থাকত সূর্যের মতো তেজস্বী। আত্মসম্মান হতো উত্তপ্ত লোহার ন্যায়। জুভান এসব উলটপালট ভেবেই নাক কুচকালো। রাতের আধার অনেকটাই কেটে গেছে। সাদা রঙের আকাশে একটু আকটু লালাভ আভা ছিটকে পড়ছে। আলো ফুটলেই জুভানের আবার স্টুডিওর উদ্দেশ্যে বেরোতে হবে। ফটোশুট আছে একটা। জুভান বিছানা ছেড়ে উঠে বসলো। পাশের ঘুমিয়ে থাকা মেয়েটাকে ঘুম থেকে উঠার তাগাদা দিয়ে হাঁটু অব্দি সাদা রঙের টাওয়েল জড়িয়ে সাওয়ার নিতে ওয়াস রুমে চলে গেলো।
প্রায় ঘণ্টাখানেক পর জুভান ওয়াশরুম থেকে বের হয়। ভিজে স্নিগ্ধ শরীর তার। অগোছালো চুলগুলোও থেকে টিপটপ পানি পড়ছে। পানির ফোঁটাগুলো তার গলা বেয়ে ক্রমশ নিচে গড়িয়ে পড়ছে। ফ্লোরে থাকা কালো রংয়ের কার্পেট একটু আকটু ভিজে গেছে তার শরীরের পানির ছিটের কারণে।
জুভান চুল ঝাড়তে ঝাড়তে চোখ মেলে বিছানার দিকে তাকায়। এখনো ওই বিদেশি মেয়েটা ঘুমিয়ে আছে। জুভান রেগে গেলো। কাজ শেষ হওয়া সত্বেও এসব বাজারি মেয়েদের নিজের বিছানার ঘুমিয়ে থাকা তার মোটেও পছন্দ না। জুভান রেগে এগিয়ে গিয়ে মেয়েটার গায়ে থেকে চট করে ব্ল্যাঙ্কেট টা সরিয়ে দিলো। সাথেসাথে মেয়েটা এক লাফ দিয়ে উঠে বসে আবার ব্ল্যাঙ্কেট টা নিজের গায়ে আবার জরিয়ে নেয়। খানিকটা ভরকে গিয়ে জুভানের দিকে অসহায় নজরে তাকালে জুভান সেসব তোয়াক্কা করে না। বরং সে আরো বেশি রেগে গিয়ে বলে,
” এতক্ষণ ধরে ঘুম থেকে উঠো নি কেনো ? আমার বাড়ী তোমার কাছে ঘুমানোর জায়গা লাগছে ? জাস্ট গেট লস্ট ফ্রম হেয়ার নাও। “
মেয়েটা জুভানের এতো রাগ দেখে একটু ভরকে গেলো। তবুও নিজের আহ্লাদী গলায় বললো,
” ওহ। কাম অন জুভান বেবস। লেটস এনজয় । হোয়াই শুড আই লিভ নাও ? সি, ইটস টু আর্লি। “
বলেই মেয়েটা থাই গ্লাসের দিকে ইশারা করল। থাই গ্লাস থেকে দেখা যাচ্ছে এখন ভোরের রং ফুটতে দেরি আছে। কিন্তু জুভান সেদিকে তাকালো না। কারন সে যেহেতু বলেছে তার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে মানে এক্ষণি বেরিয়ে যেতে হবে। এই নিয়ে আর কোনো অতিরিক্ত কথা সে মোটেও পছন্দ করবে না। জুভান তাই রেগে গেলো। চোখ কঠিন করে মেয়েটার কাছে গিয়ে ওর চুলের মুঠি শক্ত করে ধরলো। সঙ্গেসঙ্গে চুলের গুড়ির ব্যাথায় মেয়েটা ” ওহ ” করে উঠলো। জুভাণ সেসব পাত্তা না দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
” আমি যখন বলেছি চলে যেতে , তখন তোর সাহস কি করে হয় আমার মুখের উপর না বলার। বল ? কথা শুনাস আমাকে ? এই ইজহার জুভান মির্জা কে ? জানিস না আমি তোর কি হাল করতে পারি ? “
মেয়েটা ভয় পেয়ে গেল জুভানের এইরূপ দেখে। এইরকম কঠোর মানুষ সে এ জন্মে দুটো দেখেনি। কিন্তু যতটা ও জানতো জুভান একজন নরম মনের মানুষ। মিডিয়া আর নিউজ পেপারে এই ইজহার জুভান মির্জার উদারতা এর খুব প্রশংসা। তাহলে এই কোন লোক কে দেখছে ও ? জুভান আবার চুলের মুটি ধরে জোড়ে টান দিলে মেয়েটা ব্যথায় কুঁকড়ে উঠে। বিদেশি ওই মেয়ে বারবার হাত জোড় করে ক্ষমা চাইতে লাগলো। জুভান একটু পর নিজেই মেয়েটার চুল ছেড়ে দিল। মেয়েটা ওর থেকে ছাড়া পেয়ে চটজলদি কাপড় গায়ে দিয়ে জুভানের বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়।
জুভান মেয়েটার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বাকা হেসে বললো,
” সকল মিডিয়া সব গণমাধ্যম জানে আমি একজন হিরো। যার মনখুব বিশাল। কিন্তু কেউ টা জানে না যে সত্যিকার অর্থে আমি একজন ভিলেন। আর না তারা কখনো জানতে পারবে। কারন এই মির্জা যা লুকোতে চায় তা প্রকাশ করার সাধ্য কারোর নেই। কারোর না। ” “
বলেই বাম হাতের দুই আঙ্গুল দিয়ে নিজের কপাল চুলকালো জুভান।
_________________
” তারপর ? “
” তারপর আমি আর আপনি একসাথে হাঁটবো নদীর তীর ধরে। বাতাসে আমার চুল আপনার মুখের উপর পড়তেই আপনি মুগ্ধ হয়ে তাকাবেন। আর আমি সেই ভয়ংকর চাহনি উপেক্ষা করে আনমনে হাঁটতেই থাকবো। কখনোই থামবে না আমার এই পথচলা। কারণ আপনার এই ভয়ঙ্কর চাহনি আর যায় হোক আমি সহ্য করতে পারবো না কখনও। কখনোই না। বুঝলেন গায়ক মহাশয়? “
বলেই ঐশী খিলখিলিয়ে হেসে উঠল। হাসির প্রভাবে চঞ্চল হয়ে উঠলো ঐশীর ওই দু নয়ন।
” এই ঐশী , এই ? কি হয়েছে তোর ? এই ঐশী ? “
কারো হাকডাক শুনে ঐশী পিটপিট করে চোখ খুলল। ঘুম ভাঙ্গার সাথে সাথে ও দেখলো ওর মুখের উপর ঝুঁকে আছেন ঐশীর মা কাঞ্চনা আক্তার। মাকে এভাবে ডাকতে দেখে ঐশী যারপরনাই বিরক্ত হলো। ও নাক মুখ কুঁচকে বললো,
” ডাকলে কেনো ? কি সুন্দর স্বপ্ন দেখছিলাম। আমি শান্তিতে ঘুমালে তোমার ভালো লাগে না , তাইনা আম্মি ? “
ঐশীর মা রাগে ড্রয়ারের দিকে এগিয়ে গেলেন। কাপড় কয়েকটা হাতে নিয়ে ভাজ করতে করতে বললেন,
” না। ভালো লাগে না আমার। ঘুমিয়ে এরকম ফিসফিস করে হাসলে সেটা দেখতে কারোরই দেখতে ভালো লাগেনা। প্রতিদিন কি এমন স্বপ্ন দেখিস তুই যে এত হাসতে হয় তোকে ? বলতো একবার। “
ঐশী উত্তর দিলো না। কারন ওর মনটাই খারাপ হয়ে গেছ। এতক্ষণ যা দেখছিল সব স্বপ্ন ছিল ? ইসস বাস্তব হলে কি হতো তবে ? কি খুশি হতো তখন ঐশী। ভাবতেই রোমাঞ্চকর লাগছে ওর কাছে।
ঐশী মুখ গোমড়া করে ওয়াসরুমে চলে গেলো। ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে দেখে ওর ফোনে পাঁচটা কল। সব ওর সবচেয়ে কাছের বন্ধু জান্নাতের। ঐশী বিছানার উপর থেকে ফোন নিয়ে কল ঘুরালো। ওপাশ থেকে ফোন রিসিভ হলে ঐশী বলে,
” আজ হুট করে এত কল ? কিছু কি হইসে ? “
জান্নাত উচ্ছসিত গলায় বললো,
” আরে দোস্ত, একটা খুশির খবর আছে। শুনবি। “
ঐশী ফুস করে এক নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,
” না, বললেও তো তুই বলবিই। “
” আচ্ছা বাদ দে। শুন। একটা গানের রিয়েলিটি শো আছে। শুনছি সেই শোতে জাজ হিসেবে নাকি জুভান মির্জাও থাকবে। তোর তো গানের গলা ভালো। যাবি ওই শো তে ? “
ঐশী অবাক হলো। মির্জা !! ঐশী ঠোঁট কামড়ে বেশ কিছুক্ষন ভাবলো। অতঃপর বললো,
” বাবা রাজি হবে ? “
” তুই রাজি কিনা বল। তুই রাজি হলে আঙ্কেল এমনিই রাজি হয়ে যাবে। “
ঐশী বেশ খানিকটা ভেবে বললো,
” ঠিক আছে। “
জান্নাত শো এর ডিটেইলস বলে ফোন রেখে দিল। ঐশী ফোনটা বিছানার উপর রেখে দিয়ে ভাবলো , ও কি ঠিক কাজ করছে ? এভাবে একটা শো তে পার্টিসিপেট করা কি ওর উচিত হচ্ছে ?
কিন্তু কে জানত ঐশীর জীবন এই গানের রিয়েলিটি শো এর কারণে অন্য দিকে মোড় নিবে।
#চলবে কি ?
এতোটা বছর যার ভালোবাসা মনে লালন করেছিল আজ তাকে আরেকটা মডেলের সাথে খুব প্যাশনেটলি লিপ কিস করতে দেখে বুকটা ছেত করে উঠলো ঐশীর। শো তে এসেছিল ও। ভেবেছিল গানের তালে তালে এই জুভান মির্জা সম্পর্কে আরো জানতে পারবে। কিন্তু এতো বেশি যে জেনে যাবে সেটা ঐশী কল্পনাও করিনি। জীবনের সেরা অভিজ্ঞতা ছিল এটা। হুট করে সেই চুম্বনরত মডেল টা ঐশীকে লক্ষ্য করে। সাথেসাথে এক ছিটকে সরে আসে জুভানের থেকে। হয়তো নিজের ক্যারিয়ারের ভয় পাচ্ছে। কখন কি লিক হয়ে যায় বলা তো যায়না। ঐশী ব্যপারটা বুঝতে পেরে থতমত খেয়ে যায়।
নিজের কাজে বাঁধা পড়ায় জুভান খুব বিরক্ত হয়। মুখ থেকে বিরক্তিসূচক শব্দ বের করে বলে ,
” হোয়াটস রং ? “
মেয়েটা আঙুল দিয়ে ঐশীর দিকে ইশারা করে। ঐশী এতে বিব্রতবোধ করে। নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করতে গেলে জুভান তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে এবার মেয়েটার কাছে চলে আসে। ঐশীর দিকে তাকিয়ে বলে,
” শী ইজ জাস্ট অ্যা কন্টেস্টেন্ট। লেট মি ডো মাই ওয়ার্ক। ডোন্ট বোদার মি। “
বলেই জুভান আবার মেয়েটার ঠোঁট নিজের দখলে নিয়ে নেয়। যেনো ঐশীর উপস্থিতি এই স্থানে খুব নগণ্য। ঐশী পুরো ব্যাপারটাই খুব কষ্ট পায়। কেন পায় সে নিজেও জানে না । নিজেকে খুব কষ্টে সামলে নিয়ে সেই জায়গা ছেড়ে মেকআপ রুমে চলে এলো। টেবিল থেকে সাইড ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে গেল মেকআপ রুম থেকে। চুলোয় যাক এই শো। করবে না ও এই শো তে পার্টিসিপেট। রাগে দুঃখে কান্না আসছে ওর। কিন্তু কেনো আসছে জানেনা। ঐশী জানে সেলিব্রিটিদের ক্ষেত্রে এটা খুব স্বাভাবিক। ও কোথাকার এক সাধারণ মেয়ে। ওর দ্বারা জুভান মির্জার মতো এত বড় সেলিব্রেটি কে নিয়ে এসব চিন্তা মানায় না। একদমই না। কিন্তু মনের উপর তো কারো হাত নেয়। মন তো এক লাগামহীন পাখি । যখন তখন নিষিদ্ধ কারো জন্যে নিজের সূখ ডানা ঝাপটায়।
তবে ঐশীর মনে এক সন্দেহ এসেছে। ও তো এতদিন জানতো জুভান মির্জার মধ্যে মেয়ের কোনো নেশা নেই। সম্পূর্ণ পিউর একটা ছেলে। সবার থেকে আলাদা। তাহলে আজ এটা কি ছিল ? তাহলে মিডিয়াতে এই মির্জা সম্পর্কে যা বলা হয় সব মিথ্যা ? সব ? লাল হুড তোলা রিকশায় বসে এসব ভেবে অনবরত চোখের জল হাত দিয়ে মুছে যাচ্ছে ঐশী। রিক্সাওয়ালা লোকটা বারবার আড়চোখে তাকাচ্ছে ওর দিকে। হয়তো ভাবছে প্রত্যেকদিন একটা না একটা মেয়ে এই রিক্সায় বসে কেঁদে কেটে জোয়ার ভাসায়। আজকালকার ছেলেপুলের যে কি আবেগ। ভাবা যায় !!
_____________________
ঐশী বাড়িতে এসে দরজায় কলিং বেল বাজায়। তার মা কাঞ্চনা আক্তার রান্নাঘর থেকে আঁচলে হাত মুছতে মুছতে এসে দরজা খুলে দেন। কিন্তু ঐশীকে এরকম বিধ্বস্ত হতে দেখে তিনি একটু ভরকে যান। তবে সেটা বাইরে প্রকাশ না করে কাঠকাঠ গলায় বললেন,
” কি হয়েছে তোর ? এরকম পাগলের মত বাসায় আসলি কেনো ? শো শেষ ? মাত্রই তো গেলি। “
ঐশী এতগুলো প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে সোজা নিজের রুমে চলে এসে ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দিল। সাইড ব্যাগটা বিছানার ছুড়ে ফেলে দিয়ে বিছানার কোন গেশে বসে পড়লো। দুহাত দিয়ে মুখ ঢেকে কান্নার ফোয়ারা বইয়ে দিল ও। ও খুব ভালো করে বুঝতে পারছে এই মির্জা সাহেব একজন সেলিব্রেটি। তাকে মন প্রাণ দিয়ে চাইতে তো কোনো দোষ নেই। আজ জুভান কে এভাবে দেখে ঐশী সহ্য করতে পারেনি। একদমই সহ্য করতে পারে না সে জুভানকে অন্য করো সাথে।
কিছুসময় পর ঐশির ফোন বাজছে। ঐশী চোখ মুখ মুছে ফোন রিসিভ করে কানে লাগালো ওপাশ থেকে জান্নাত তরিগরী করে বলছে,
” এই কুত্তা কই তুই ? পুরো স্পট জুড়ে তোকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কই গিয়ে মরলি ? “
ঐশী থেমে থেমে বললো,
” বাসায় চলে এসেছি আমি। “
” মানে ? বাসায়? কেনো ? বারবার তোর কথা এনাওন্স করা হচ্ছে। আর তুই এখন বাসায় ? “
” আমি এই শো করবো না। আর প্লিজ কারণ জিজ্ঞেস করবি না। “
” মানে ? তুই ঠিক আছিস ? করবি না মানে ? হটাৎ কি হলো তোর ? “
” আমি বলছি করবো না মানে করবো না। এত প্রশ্নের তো কিছু দেখছি না আমি। “
জান্নাত আরো কিছু বলতে যাবে তার আগেই ঐশী ফোন কেটে দিয়ে ফোনটা বিছানায় ছুড়ে ফেলে দিল। কিছুই ভালো লাগছে না তার। সব কিছু দুর্বিষহ লাগছে। সব কিছু তছনছ করে দিতে মন চাইছে ওর। সব ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে।
______________________
” স্যার। আজকে কি কোনো মেয়ে পাঠাবো ? “
অ্যাসিস্ট্যান্ট শাহাদাতের কথা শুনে ভ্রু কুচকালো জুভান। ল্যাপটপের থেকে মুখ্ তুলে দেয়ালে রাখা নিজের বৃহৎ ফটোফ্রেমের দিকে তাকালো। গম্ভির গলায় বললো,
” হুম। পরশু আমার জন্যে প্লেনের টিকেট কেটে রেখো। ঢাকার বাড়িটায় যাবো। “
শাহাদাত তৎক্ষণাৎ মোবাইল ডাটা অন করে অন্য ফোন চেক করে নিল। নাহ। পায়নি সে। শাহাদাত ফোনটা টেবিলে রেখে দিয়ে বলে,
” স্যার , আগামি সাত দিন কোনো প্লেনের টিকেট নেই। ঈদের জন্যে সব বুক হয়ে গেছে। “
জুভান মুখ কুচকে ফেললো। একটাও টিকেট নেই। কেমন সিস্টেম এটা। সে বিরক্ত হয়ে বললো,
” ইটস আর্জেন্ট। “
শাহাদাত মাথা চুলকে বললো,
” স্যার। আই অ্যাম সরি। একটাও টিকেট খালি নেই। তবে আপনি বাসে যেতে পারেন। আজকাল ভালো বাস পাওয়া যায়। কোয়ালিটিও খুব ভালো। “
জুভান কোনো উপায় না পেয়ে বলে,
” ঠিক আছে। তবে খেয়াল রাখবে ভালো বাস কিন্তু। “
” জ্বী স্যার। অবশ্যই। “
জুভান অতিরিক্ত সময় ব্যয় না করে ফোন কেটে দিলো। এই লোকটি আসলেই এক্সট্রা কথা বলে। তবে সব কাজের ব্যাপারে সিরিয়াস। তাই তো এখনো জুভানের সাথে টিকে আছে। জুভান আবার ল্যাপটপে মন দিল। কয়েকদিন পর একটা বড় গানের প্রজেক্ট আছে। তাই এখন মন সৌর কাজ করতে হবে।
শাহাদাত নিজের কম্পিউটার দিয়ে ” লন্ডন এক্সপ্রেস ” বাসের একটা টিকেট কেটে ফেললো। আবার সেই বাসের ম্যানেজারের সাথেও কথা বলে নিল । যাতে তার স্যারের কোনো অসুবিধে না হয়। নাহলে দেখা যাবে সবকিছু বেঠিক পেয়ে স্যার মহাশয় তারই ঘাড় মটকে দিলো। অসম্ভব কিছু নয়।
” আন্টি , ঐশি কোথায় ? “
জান্নাতের প্রশ্নে ঐশীর মা চায়ের পাতিল টা চুলা থেকে নামিয়ে লিকার কাপে ঢেলে নেন। কাপ হাতে নিয়ে জান্নাতের দিকে ফিরে বললেন,
” রুমেই আছে। তোমাদের মধ্যে কিছু কি হয়েছে ? ভালো মনেই তো গেলো গানের শো তে। এরকম কান্না করতে করতে ফিরে এলো কেন জানিনা। “
” না আন্টি। আমার সাথে তো কোনো প্রবলেম হয়নি। ফোনও কেটে দিয়েছে আমার। ভাব বেড়ে গেছে উনার। “
বলেই রেগে দাত কাটলো জান্নাত। ঐশীর মা হেসে চায়ের কাপটা নিয়ে স্বামীর রুমে যেতে যেতে আবারও ফিরে তাকালেন। মৃদু হেসে বললেন,
” তোমাদের ব্যাপার তোমারই জানো। রুমেই আছে। দেখো রুম থেকে বের করতে পারো কিনা।”
বলেই তিনি রুমে চলে গেলেন। জান্নাত ঐশীর মা’র যাওয়ার পথপানে তাকিয়ে আবারও উষ্ণ নিঃশ্বাস ফেললো। এই ঐশী মেয়েটাকে এত বছরেও সে বুঝে উঠতে পারেনি। কখন একদম শান্ত ,মাটির মত। আবার কখন রণমূর্তি রোদ্রের ন্যায়। ভাবনার মধ্যে আবারও শুনা গেলো এক দীর্ঘশ্বাসের শব্দ। সাথে শুনা গেল কতগুলো পদধ্বনির শব্দ। জান্নাত গটগট পায়ে এগিয়ে গেলো ঐশীর রূমের দিকে।
রুমে প্রবেশ করতেই বাথরুম থেকে পানির আওয়াজ কানে আসলো জান্নাতের। এই মেয়েটা কি এই আসরের সময় গোসল করছে ? জান্নাত এগিয়ে গিয়ে বিছানায় বসলো। ঐশীর ফোনটা নিয়ে নড়াচড়া করতে করতে বারবার বাথরুমের দিকে তাকাতে লাগলো। না। আজ একটা বোঝাপড়া করতে হবে। ঐশীর জন্যেই তো শো এর পরিচালক ক্ষেপে গেছে ওর উপর। যা নয় তাই বলে বকেছে ওকে।
একটু পর ঐশী টাওয়েল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে বাথরুম থেকে বের হলো। বিছানার উপর জান্নাত কে বসে থাকতে দেখে বিন্দুমাত্র বিচলিত হয়না ঐশী। পরোয়া না করে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে মুখ ক্রিম দিলো। হাত পায়েও দিলো। অতঃপর শরীরে বডি মিস্ট দিয়ে ফিরলো জান্নাতের দিকে। চুলে বিদেশিদের মতো টাওয়েল পেচিয়ে জান্নাতের পাশে এসে বসলো। জান্নাত এখনও বেটে চোখে তাকিয়ে আছে ঐশীর দিকে। ঐশী জোড়ে এক হাফ ছেরে দিয়ে বললো,
” আমি শো তে কমফোর্ট ফিল করছিলাম না তাই চলে এসেছি। এছাড়া আর কিছু না। “
জান্নাত কিছুক্ষণ ঠোঁট কামড়ে ওর দিকে খানিক তাকিয়ে ধুম করে এক কিল বসিয়ে দিলো ঐশির পিঠে। ঐশী একটু পিছিয়ে গিয়ে নিজেকে সামলে নিলো। জান্নাত আরো গুটিকয়েক থাপ্পর বসিয়ে দিয়ে বললো,
” কুত্তা , হারামি , শয়তান ছেরি। তোর জন্যে ওই খাটাশ ব্যাটা আমারে যা নয় তাই বলেছে। আমি আনস্মার্ট , ক্ষেত। এসব মিডিয়া , শো আমার জন্যে নয়। আরো কত কি। সব তোর জন্যে। “
” আরে। আজব। আমার জন্যে তোকে বকতে যাবে কেন ? “
” আমি বলেছিলাম তুই আমার বেস্টি। তাই ফেঁসে গেছি ইয়ার । “
ঐশী জবাব দিল না। মাথা নীচু করে বসে রইল নীরব। জান্নাতের ঐশীর এই শান্ত রুপ সহ্য হলো না। হাত দিয়ে ধাক্কা দিয়ে বললো,
” কি হয়েছে তোর ? এত নীরব কেনো ? সত্যি করে বলতো শো’তে তোর সাথে আসলে কি হয়েছিল। “
ঐশী মন ভার করে মাথা ডানে বামে নাড়ল। যার উত্তর ” কিছু হয়নি। ” জান্নাত ঐশীর গালে হাত রাখলো। আদুরে গলায় বলল,
” কি হয়েছে বান্ধুপি। বল তো। “
ঐশী আর যায় হোক জান্নাতের কাছে কিছুই লুকায় না। এখন তো ওর মনে হয় ওর বাসর রাতের দিন যা যা হবে সবই এই অপদার্থ কে বলবে।আর রাখতে পারলো না। ঐশী পেটের মধ্যে গুজে রাখা কথাগুলো এক এক করে বললো জান্নাতকে।
সব শুনে জান্নাত খুব বেশি আফসোস করলো না। সে খুব স্বাভাবিক গলায় বললো,
” এটাই স্বাভাবিক। এসব নামিদামি লোকেরা বাইরে এক , আর ভিতরে এক। এরা কখনোই মিডিয়াতে নিজের আসল সত্য প্রকাশ করে না। আর তুই এটা নিয়ে এত মন খারাপ করিস না তো । আমি তোরে আমার বিটিএস এর মোস্ট হ্যান্ডসাম ” ভি ” কে তোরে দিয়া দিলাম। তুই এরে নিয়ে সুখে থাক। তাও ওই ক্যারেক্টারলেস মির্জা রে ভুইলা যা। “
ঐশী চোখ টিপে তাকালো জান্নাতের দিকে। জান্নাত ঐশীর তাকানো দেখে আমতা আমতা করে বলল,
” আচ্ছা। বাদ দে। ” ভি ” এর হাফ আমার। হাফ তোর। পুরোটা দেওয়া যাবে না কিন্তু। “
ঐশী জান্নাতের কথা শুনে এক হাফ ছেড়ে দিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিল। কি করবে ও ? এই মীর্জা ছাড়া ওর আর কারো কাছে মন বসে না। ঐ সাদা চামড়ার ছেলেদের কাছেও না। মন টা বারবার সেই গায়ক মহাশয়ের কাছেই আহত হয়। কি করবে ও ?
___________________
” আরে কেমন আছেন মিস্টার ? দিনকাল কেমন যাচ্ছে আপনার ? সব ঠিক আছে তো ? “
আজ হুট করে নিজের মুঠোফোনে মন্ত্রী সাহেদুল হকের কল দেখে চোখে মুখে খানিক বিস্ময় খেলে গেলো ঐশীর বাবা আশরাফুল হাবিবের। পেশায় তিনি একজন পুলিশ অফিসার। তবে আজ মন্ত্রীর কল করার ব্যাপারটা তার আন্দাজ করতে মোটেও কষ্ট হয়নি। তাই তিনিও ধারালো গলায় বললেন,
” হঠাৎ আমার ভালোমন্দ জানার আপনার এত ইচ্ছে হওয়ার কারণ জানতে পারি। “
সাহেদুল হক মুখের পানের লাল রঙা থুতু গাড়ির জানালা দিয়ে রাস্তায় ছুড়ে ফেললেন। মেকি হাসি হেসে বললেন,
” কি আর করার। আজকাল আপনার একেক কাজ আমাকে আপনার কথা স্মরণ করতে বাধ্য করে। আমার আর কি দোষ বলেন। “
আশরাফুল অতিমাত্রায় তেতে উঠলেন। তবে মুখে মধু রেখেই বললেন,
” এসব কথা বাদ দিয়ে মোদ্দাকথায় আসেন। “
” ঠিক বলেছেন। এসব ঘোরাফেরা কথা না বলাই ভালো। আপনার কাছে একটা মেমোরি আছে না ? ওটা আমার চাই যে। আসলে কি বলেন তো। আমার বিরুদ্ধে কারো কাছে কোনো প্রমাণ আছে। তাহলে আমি সেটা অক্ষত থাকতে দেই কিভাবে বলুন ত। দায়িত্ব আছে না একটা। “
আশরাফুল কঠিন গলায় বললেন,
” আপনি ভুল জায়গায় কল দিয়েছেন। আমি ঐ মেমোরি কার্ড কখনোই আপনাকে দিবো না। মরে গেলেও না। “
” আরে আপনি তো আমাকে পথ দেখিয়ে দিয়েছেন মশাই। তা মেমোরি দিবেন না যেহেতু তাহলে তো আপনার মরেই যাওয়াই ভালো। আর আপনার একটা যুবতী মেয়েও আছে শুনেছি। ওকেও একটু টেস্ট করা যাবে সেই সুবাদে। কি বলেন। “
সাহেদুল হকের কণ্ঠ কেমন হিংস্র শুনালো। আশরাফুল এতে একটু বিচলিত হলেন। তবুও অভয় গলায় বললেন,
” এসব ভয় অন্য জায়গায় দেখান। আমাকে না। “
” তাহলে। ওই কথাই রইলো। কাল তো হবে না। তাই পরশু আমরা আসছি আপনার বাসায়। দশ বারোজন হবে কিন্তু। খাতিরদারি যাতে ভালো হয়। নাহলে কিন্তু ঘেচাং। ঠিক আছে। “
আশরাফুল কিছু বলার আগেই ফোন কেটে গেলো। এসব কথা শুনে তিনি যে ভয় পাননি তা কিন্তু না। বেশ গায়েই লেগেছে কথাগুলো। নিজের জন্যে ভয় পাননা তিনি। কিন্তু জোয়ান মেয়ে তার। এসব কুৎসিত মানুষদের কোনো ভরসা নেই। যদি তার পবিত্র মেয়ের গায়ে আঁচড় লেগে যায় ? আতকে উঠলেন আশরাফুল। এসব ভাবতে ভাবতেই চায়ের কাপটা হাতে তুলে নেন তিনি। কিন্তু লক্ষ করেন চায়ের কাপটা মৃদু কাপছে। কিন্তু তার পরপরই উপলব্ধি করলেন চায়ের কাপ নয় বরং তার দুহাত মৃদুমন্দ কাপছে। তিনি আবারও কাপটা টেবিলে রেখে দিলেন। কপাল দুহাত দিয়ে ধরে চিন্তায় মগ্ন হলেন। মেয়েকে তার শহর থেকে দূরে কোথাও পাঠিয়ে দিতে হবে। খুব দূরে। এসব অমানুষদের হাতের নাগালের বাইরে। আর সেটা খুব শীঘ্রই।
বেলকনিতে দাড়িয়ে জিম করছে জুভান। হাতের বাহুগুলো ফুলে উঠছে জিম করার তালে তালে। বেশকিছু সময় পর জুভান হাপিয়ে উঠে। পুষ আপ করা বাদ দিয়ে বোতলে থেকে পানি খেতে খেতে ডিভানে এসে বসে। ফর্সা মুখ ঘামে লালরঙা হয়ে গিয়েছে। জুভান রেস্ট নিতে নিতে চোখ বুজে গা এলিয়ে দিল ডিভানে। কিন্তূ বন্ধ চোখে ভেসে উঠলো সেই মেয়ের ছবি। মেয়েটা তাকে কারো সাথে কিস করতে দেখে নিয়েছে। মেয়েটাকে দেখতে সহজ সরলই লেগেছে। মনে হয়না সেই কিসের ব্যাপারটা খুব একটা গুরুত্ব দিয়েছে। জুভান আরো কিছুসময় রেস্ট নিয়ে লাগেজ গুছাতে শুরু করলো। আজ আবার ঢাকার বাড়িতে যেতে হবে।
__________________
” বাবা, তুমি এসব কি বলছো ? আমি তোমাদের ছেড়ে কোথাও যাবো ? ঢাকার কিছুই আমি চিনি না। কোনো আত্মীয় নেই। কোথাও থাকবো আমি ? “
আশরাফুল হাবিব মেয়ের কথা শুনে কিছুটা কষ্ট পেলেন। আসলেই মেয়েকে এভাবে খোলা ময়দানে ছেড়ে দিতে তার একদমই মণ চাইছে না। কিন্তু মেয়ের নিরাপত্তার জন্যে এইটুকু আত্মত্যাগ তো করতেই হবে। আশরাফুল হাবিব তুলনামূলক জোরালো গলায় বললেন,
” দেখো ঐশী, আমি যা বলছি ভেবে চিন্তে বলছি। তাই তুমি আমার কথায় দ্বিতীয় কোনো কথা বলবে না। “
ঐশী র চোখে মুখে রাজ্যের বিস্ময়। কি বলছেন বাবা? এভাবে একা একা ঢাকায় যাওয়া ? ও তো নিতান্তই এক মেয়ে ? ঢাকার পরিবেশের সাথে কিভাবে মানিয়ে নিবে ? ঐশী মায়ের দিকে তাকিয়ে আবার করুন গলায় বললো,
” মা , দেখো না। বাবা কি বলে। আমি ঢাকা যাবো কেনো হুট করে। কিছু বলো তুমি। “
কাঞ্চনা আক্তার মুখ ঘুরিয়ে আঁচল দিয়ে চোখ মুছলেন। আবারো মেয়ের দিকে ফিরে বললেন,
” দেখ ঐশী। বাবা যা বলেছেন ভেবেই বলছেন। বাবা নিশ্চই তোমার মন্দ চাইবেন না। তাই যা বলছেন অমত করবে না তাতে। “
ঐশী আবারও কথা বলতে চাইলে আশরাফুল হাবিব কঠিন গলায় বললেন,
“মা ,আমার কসম দিয়ে বলছি। তুমি যাবে ঢাকাতে। “
ঐশী অবাক হয়ে তার বাবার দিকে তাকিয়ে রইলো। এ কোন বাবাকে দেখছে সে ? যে বাবা একটা মুহূর্তের জন্যে তাকে নিজের থেকে আলাদা করেনি। আজ সেই বাবাই তাকে একা একা শহর থেকে দূরে পাঠিয়ে দিচ্ছে। ঐশী চোখ মুছে বললো,
” ঠিক আছে যাবো আমি। তাও তোমরা খুশি থাকো। “
বলেই ঐশী চেয়ার থেকে উঠে হনহন করে বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে । অভিমানের পাহাড় জমেছে তার ছোট্ট মনে। নিজের বাবা মায়ের এই ব্যাপার তাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। কিন্তু এরকম কেনো হচ্ছে ?
___________________
” লন্ডন এক্সপ্রেস ” বাস স্টেশনের সামনে দাড়িয়ে আছে ঐশী। আশরাফুল হাবিব মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে নানা রকম আশ্বাস দিচ্ছেন। পারলে মেয়েকে নিজের বুকের ভিতর নিয়ে যান। তাও যদি এসব অমানুষের হাত থেকে মেয়েকে বাঁচাতে যেত ! ঐশী মন ভার করে সামনে তাকিয়ে আছে। এখন পর্যন্ত একটাও কথা বলেনি সে। বলবেও না। কেনো বলবে ? কোনো বাবা কি এমন করে নিজের মেয়ের সাথে ? আশরাফুল হাবিব মেয়ের মন বুঝতে পারলেন। পকেট থেকে নিজের ওয়ালেট বের করে ডেবিট কার্ড মেয়ের দিকে এগিয়ে বললেন
” মামনি? “
ঐশী মুখ ভার করে ফিরে তাকালো নিজের বাবার দিকে। আশরাফুল নিজের কার্ডটা ঐশীর দিকে এগিয়ে বললেন
” এই কার্ড আমার অনেক আগের। তোমার জন্যে একটু একটু করে টাকা জমিয়েছিলাম। এটা সেই টাকার কার্ড। কিন্তু মনে রেখো অকারণে এই টাকা খরচ করবে না। আজ থেকে তোমার অনেক কিছু সামলাতে হবে। তোমার জীবনের অনেক দেখা – অদেখা বিষয়ের মোকাবেলা করতে হবে। নিজে সৎ উপায়ে টাকা রোজগার করবে। কিন্তু যখন আর্থিকভাবে খুব বেশি ভেঙে পড়বে তখনই এই টাকা খরচ করো। “
ঐশী কিছুটা অবাক হয়ে কার্ডের দিকে তাকিয়ে আছে। এসব কথার মানে কি ? ঐশী হাজারখানেক দ্বিধা নিয়ে কার্ডটা হাতে নিল। বাবার দিকে ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে রইলো। যা হচ্ছে কিছুই মাথায় ঢুকছে না। কিন্তু এইটুকু আন্দাজ করতে পারছে , কিছু একটা মন্দ হচ্ছে। বাস এসে পড়েছে। ঐশী ভারী মন নিয়ে বাসের দিকে তাকালো। আশরাফুল হাবিব এবার মেয়ের গলায় একটা লকেট পরিয়ে দিলেন। ঐশী অবাক হয়ে গলায় হাত দিল। আশরাফুল লকেট পরিয়ে দিয়ে মেয়ের দিকে ফিরলেন। বললেন,
” এই লকেটে কিছু আছে। যেদিন তুমি তোমার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান কিছু হারিয়ে ফেলবে সেদিন তুমি এই লকেট খুলবে। সেদিনই তুমি তোমার সব উত্তর পেয়ে যাবে। কিন্তু খরবদার তার আগে কিন্তু এই লকেট খুলবে না। “
ঐশীর মনে হয় আজ শুধু অবাক হওয়ার দিন। একটার পর একটা চমক পেয়েই যাচ্ছে ও। কিন্তু মুখ স্বাভাবিক রেখে বললো,
” ঠিক আছে। “
বাস ছেড়ে দিবে আর কিছুসময়ের মধ্যে। আশরাফুল হাবিব মেয়ের কপালে চুমু দিয়ে বললেন
” বাবার খুব মনে পড়বে তার রাজকন্যার কথা। “
ঐশীও অভ্যাসবশত বাবার চুল এলোমেলো করে দিয়ে বললো,
” আমারও খুব মনে পড়বে তোমাদের কথা। “
আশরাফুল হাবিব লক্ষ করলেন তিনি অনেক ইমোশনাল হয়ে যাচ্ছেন। তাই সব বেঠিক হওয়ার আগেই ঐশীকে বাসে তুলে দিলেন। যতসময় বাস দেখা যায় ততক্ষণ তাকিয়ে রইলে ন একে অপরের দিকে। ঐশীর মত তার বাবারও চোখ ছলছল করছে। মন ভারী থেকে ভারী হচ্ছে। মনে হচ্ছে দিল ছিঁড়ে কেউ নিয়ে যাচ্ছে। মেয়ের অনিশ্চিত জীবনের কথা চিন্তা করে আশরাফুলের বুক ফেটে আসছে। এমনই ত হয় বাবারা। নিজের মৃত্যুর কথা পরোয়া না করে সারাটাজীবন সন্তানের কথা ভেবেই পার হয়ে যায়। কি অদ্ভুত না বাবারা ? তাইতো হুমায়ূন আহমেদ একটা কথা বলেছিলেন,
” পৃথিবীতে অনেক খারাপ মানুষ আছে। কিন্তু একটাও খারাপ বাবা নেই। “
_________________________
বাস চলমান। বিজ্ঞা নের আপেক্ষিক সূত্র অনুসারে গাড়ির পাশের গাছ, বাড়ি গুলো উল্টোদিকে গতিশীল। ঐশী নিজের ব্যাগ নিয়ে নিজের সিটের দিকে এগিয়ে গেলো। সিট পেয়েও গেলো ও। ওর সিট পড়েছে একটা ছেলের পাশে। ঐশী খুব একটা লক্ষ্য করলো না ছেলেটাকে। ব্যাগটা উপরের তাকে রেখে দিয়ে বসে পড়লো সিটে। বোতল থেকে পানি খেয়ে কানে হেডফোন গুঁজে গান শুনতে ব্যস্ত হয়ে গেলো। রাত হয়ে গেছে। ঐশীর আবার ট্রাভেল ঘুম পায় না। পাশের ছেলেটা কানে ইয়ারপড, মুখে মাস্ক ,আর মাথায় ক্যাপ দিয়ে সি টে গা এলিয়ে বসে আছে। ঐশী একটু অবাক হলো। এই ছেলের কি গরম লাগে না ? হুট করে ঐশীর নাকে কিছু পুড়ে যাওয়ার গন্ধ এলো। বাসেও ইতিমধ্যে হইচই শুরু হয়ে গেছে। কিছু কি পুড়ে গেল ? ঐশী ঘাবড়ে গেল।
ঐশী বাসের সামনে পিছনে , ডানে বামে তাকালো। কিন্তু কিছুই বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে। পাশের ছেলেটা খুব আরামসে সিটে গা এলিয়ে বসে আছে। যেন যা হচ্ছে তা নিয়ে তার কোনো মাথাব্যথা নেই। ঐশী বিরক্ত হলো। কোনো উপায় নেই পেয়ে পাশের বসা ছেলেকে মৃদু সুরে বলল,
” এক্সকিউজ মি ? “
ছেলেটা কি শুনলো ওর কথা? ঐশীর এভাবে যেচে পড়ে ডাকতে কেমন যেন বাঁধছে। কিন্তু উপায় নেই। বাসের দায়িত্বহীন ড্রাইভারদের অবহেলার কথা আজকাল প্রতিনিয়িত খবরে দেখাচ্ছে। ঐশী আবারও মুখ ঘুরিয়ে ছেলেটার দিকে তাকালো। ফোন স্ক্রল করছে। ঐশী এবার নিজেই উঠে এলো। বাসের ড্রাইভার এর কাছে এসে দেখলো ড্রাইভার আর হেলপার কিছু একটা কথা বলছে আর ড্রাইভ করছে। ঐশী ওদের দিকে তাকিয়ে বললো,
” এক্সকিউজ মি , আপনারা কি কোনো কিছু পোড়ার গন্ধ পাচ্ছেন। “
হেল্পার ঐশীর কথা শুনে আঙ্গুল উচিয়ে নিজের জোরালো গলায় বললো,
” জ্বী আমি তো সেই কখন থেকে পাচ্ছি। এই কাকু আমার কথার কোনো গুরুত্ব দিচ্ছে না। আমার মনে হয় ইঞ্জিনে কিছু হইসে। “
ঐশী সব শুনে কঠিন চোখে ড্রাইভারের দিকে তাকালো। ড্রাইভারটা দাঁত কেলিয়ে বললো,
” আসলে, আমার নাক বন্ধ ছিল। তাই গন পাই নাই। দাড়ান। আমি দেখতাছি। “
ঐশী ভ্রুকুটি করে নিজের সিটে এসে বসলো। ড্রাইভার রাস্তার এক সাইডে গাড়ি পার্ক করে বাস থেকে বেরিয়ে গেলো। একটু পর বাসের হেলপার বাসে উঠে এসে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল,
” সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি । আমাদের বাসের ইঞ্জিন পুড়ে গেছে। তাই বাস এখন আর গন্তব্যে পৌঁছাতে সক্ষম নয়। আমরা খুবই দুঃখিত। আপনারা সবাই নিজ নিজ ভাবে ঢাকায় ফিরে যান। এখান থেকে ঢাকা মাত্র দুই ঘণ্টার রাস্তা। তবে একটা উপায় আছে। আমাদের ঢাকার বাসগুলো অন ডিউটি আছে।আপনারা চাইলে আমরা ময়মনসিং থেকে আরেকটা বাস আনাতে পারি। তবে অনেক সময় লাগবে। ততসময়ে অন্য গাড়ি দিয়ে ঢাকা পৌঁছানো সম্ভব। আমরা আসলেই আমাদের সার্ভিস নিয়ে অত্যন্ত দুঃখিত। “
ঐশী ভ্রু উচু করে তাকালো। বাসের সবার চোখে মুখে বিরক্তি। কিন্তু ঐশীর চিন্তা ,ও একা একটা মেয়ে এতদূর যাবে কি করে ? ক্ষতি হলে ?
জুভান হেলপারের কথা শোনে ইয়ারপড খুলে মোবাইল থেকে চোখ তুলে তাকালো। ইঞ্জিন পুড়ে গেছে শুনে জুভানের চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো। এসব কিসের সার্ভিস ? আগে থেকে দেখে রাখবে না ? আজ ওই শাহাদাতের সাথে কড়া গলায় দুটো কথা না বললেই হচ্ছে না। জুভান নিজের ব্যাগ কাঁধে উঠিয়ে বাস থেকে নেমে গেলো। এক এক করে বাসের বাকি সবাই নেমে গেলো। ঐশী আর কোনো উপায় না পেয়ে নিজেও ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে গেলো বাস থেকে।
জুভান একটু দূরে হেঁটে যাচ্ছে। ঐশী আর কোনো উপায় নেই পেয়ে সাইড ব্যাগ শক্ত করে ধরে জুভানের পিছনে পিছনে হেঁটে এলো। জুভান ঐশীকে আসতে দেখে হাঁটা বন্ধ করে পিছন ফিরলো। সেদিনের মেয়েটা ওর পিছু পিছু আসছে কেনো ? ভ্রু কুঞ্চিত করে বললো,
” হোয়াই আর ইউ ফলোয়িং মি ? “
ঐশী জুভানের কথা শুনে থমকে গেলো। কি উত্তর দিবে ? ঐশী চোখ সরু করে এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে বললো,
” আপনি কি ঢাকা যাবেন ? “
ঐশীর কথা শুনে জুভানের কুঞ্চিত ভ্রু আরো কুঞ্চিত হয়ে গেলো। কেমন প্রশ্ন ? একসাথে ঢাকার বাসে উঠেছে তার মানেই ঢাকাই যাচ্ছে। জুভান কোমরে হাত ধরে বললো,
” হ্যাভ ইউ লস্টেড ? ঢাকার বাসে ছিলাম আমরা। “
ঐশী নিজের বোকামি বুঝতে পেরে জিভ কাটলো। জুবানকে এখনো দেখেনি ঐশী। মাস্ক পড়া , মাথায় আর্মিদের মত ক্যাপ। সর্বোপরি চেনা মুশকিল। ঐশীকে চুপ থাকতে দেখে জুভান কোনো রিয়েক্ট করলো না। পকেট থেকে ফোন বের করে কাকে যেনো কল দিল। ফোন রিসিভ হলে জুভান বলল,
” গাড়ি পাঠাও। আমি অ্যাড্রেস সেন্ড করছি। কুইক।”
” …..”
” কুইক। “
জুভান দ্বিতীয় কথা না বলে ফোন কেটে দিলো। ঐশী জুভানের দিকে অসহায় নজরে তাকালো। জুভান সেটা লক্ষ্য করে ফোনের দিকে তাকিয়েই বললো,
” কিছু বলার থাকলে বলো নাহলে গেট লস্ট । “
ঐশীর কিছুটা রাগ লাগলো। এমনভাবে কথা বলছে কেনো এই লোক ? এত ভাব কিসের ? পরক্ষণে ঐশী ভাবলো না তাকে মাথা গরম করলে চলবে না। এই লোকটাই এখন শেষ ভরসা। ঐশী জুভানের থেকে দূরত্ব রেখে আরো একটু সরে গেলো। ওর দিকে তাকিয়েই বললো,
” আমাকে লিফট দিবেন আপনার গাড়িতে ? “
জুভান ফোনের দিকে তাকিয়েই ভ্রু কুচকে ফেললো। লিফট ! জুভান ফোন অন রেখেই ঐশীর দিকে ফিরলো। বললো,
” ভয় করে না ? একটা অচেনা ছেলের কাছে লিফট চাইছ ? “
ঐশী কথাটা শুনে ভিতর ধক করে উঠল। আসলেই লিফট চাইছে তাও একটা অজানা ছেলের কাছে ! কেন ? সে জানে না। ঐশী নিজেকে সাহসী দেখাতে মাথা নেড়ে বলল,
” ভয় কেন পাবো ? আপনি বাঘ না ভাল্লুক। “
জুভান কিছুসময় ঐশীর দিকে তাকিয়ে আবারও ফোনের দিকে তাকালো । বললো,
” সেটা তোমরা মেয়েরাই ভালো জানো। “
ঐশী জুভানের কথা শুনে আক্রোশ নিয়ে বললো,
” কটা মেয়ের সাথে চলেছেন আপনি ? সব মেয়ে এক না। যেমন আমি। আমি আপনাদের মত ছেলেদের ভয় পাইনা। “
জুভানের হাসি পেলো ঐশীর কথা শুনে। কিন্তু হাসি ব্যাপারটা ওর ডিকশনারিতে নেই। তাই হাসি আটকে বললো,
” জাস্ট ফরগেট ইট। “
ঐশী পায়ের কাছে একটা কালো রঙের পাথর লাথি দিয়ে রাস্তার একটু দূরে সড়িয়ে বললো,
” আপনি ভালো আছেন। তাই সব ভেবেই লিফট চেয়েছি। নাহলে কি চাইতাম ? “
জুভান অবাক হলো। ফোন থেকে চোখ তুলে ঐশীর দিকে তাকালো। চমক কণ্ঠে বললো,
” আমি ভালো ! কে বলেছে তোমাকে ? “
” নাহলে মাঝরাত পর্যন্ত একটা মেয়ে আপনার পাশে বসেছিল। চাইলে তো অনেককিছু করতে পারতেন। যেমন হাতে টাচ করা , গায়ে এনিয়েবিনিয়ে হাত লাগানো। কিন্তু আপনি তো ফিরেও তাকান নি। তাই বুঝেছি।আর এই বাসে তো একটাই মেয়েও নাই। মাত্র একটা ছোট পিচ্ছি মেয়ে ছিল। যুবতী বলতে আমি একাই ছিলাম। তাই আর কাউকে বিশ্বাস না করে আপাতত আপনাকেই করলাম। “
জুভান বুঝতে পারলো মেয়েটা একটু বেশিই কথা বলে। সে এই কথার প্রতিউত্তর না করে আবারও ফোনে মশগুল হয়ে গেলো।
ঐশী সাইড ব্যাগ থেকে ফোন বের করে ওর বাবাকে কল দিল। কিন্তু বন্ধ দেখাচ্ছে। ঐশী প্রায় অনেকবার কল দিল। কিন্তু বারবার বন্ধ দেখাচ্ছে। ঐশী রাগে ফোনটা ঝট করে আবার ব্যাগে রেখে দিল। বুকে হাত গুটিয়ে মুখ ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। মনে মনে বুলি আওয়ারালো ” বাবা খুব খারাপ। খারাপ। খারাপ। “
গাড়ি এসে গেছে ওদের। জুভান পিছন সিটের দরজা খুলে বসে গেলো। ঐশী জুভানের দিকে তাকালো। জুভান ঐশীকে এখনো গাড়িতে উঠতে না দেখে বিরক্ত হয়ে বললো,
” হোয়াট ? সং এর মত দাঁড়িয়ে আছো কেন ? না গেলে বলো। আমি চলে যাচ্ছি। “
ঐশী চোখ নামিয়ে এদিক ওদিকে তাকিয়ে আবারও জুভানের দিকে তাকালো। ভয় ভয় গলায় বললো,
” আপনি কি সামনে বসবেন। একসাথে এভাবে পিছন সিটে …”
জুভান এক নিঃশ্বাস ফেলে পিছন সিটের দরজা খুলে সামনের সিটে এসে বসে গেল। ঐশী ব্যাগ শক্ত হাতে আকড়ে ধরে ধীরে ধীরে পিছনের সিটে এসে বসলো।
গাড়ি চলমান। গাড়ির ড্রাইভার একনজরে সামনে তাকিয়ে ড্রাইভ করছে। জুভান ফোন স্ক্রল করছে। ঐশী ব্যাগে সেফটিজোন হিসেবে একটা লাল মরিচ গুঁড়ো এর স্প্রে এনেছিল। সেটা ব্যাগ থেকে বের করে নিজের হাতে লুকিয়ে আকড়ে ধরলো। যতই হোক একটা ছেলেকে বিশ্বাস করা উচিত না। তাই এই ব্যবস্থা।
গাড়ি ঢাকার অনেকটাই কাছে চলে এসেছে। জুভানের মাস্ক পড়ায় গরম লাগছিলো। তাই সে মাস্ক খুলে এসির তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিল। ঐশী প্রথমে জুভানকে লক্ষ্য না করলেও এখন সামনে বসে থাকা এই চিরচেনা মির্জা কে দেখে চমকে যায়। কপাল ঘামতে থাকে।এই চরিত্রহীন মির্জার সাথে সে এতক্ষণ এতটা পথ পাড়ি দিয়েছে। আর ও চিনলই না ! কিভাবে ? ঐশী জুভানকে দেখে ভয় পেতে শুরু করে। কিছু ক্ষতি করবে না তো ? ঐশী মরিচ স্প্রে টা আরো জোরে আকড়ে ধরে চিৎকার দিয়ে বলে,
” স্টপ দা কার। আই সে স্টপ দা কার রাইট নাও। “
জুভান অবাক চোখে পিছন ফিরলো। ঐশী ভয়ে প্রায় কেঁদে দেওয়ার মত অবস্থা। জুভান ভাবছে , হটাৎ করে কি হলো এই মেয়ের ?

 

#পর্ব_৬

 

 

জুভান অবাক চোখে পিছন ফিরলো। ঐশী ভয়ে প্রায় কেঁদে দেওয়ার মতো অবস্থা। জুভান ভাবছে , হঠাৎ করে কি হলো এই মেয়ের ? ঐশী জুভানকে এরূপ তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে মরিচ স্প্রে টা জুভানের সামনে বের করে আবারও জোরালো গলায় বললো,

” কি হলো ? গাড়ি থামাতে বললাম না। থামাচ্ছেন না কেনো ? ”

জুভান ঐশীর পাগলামি দেখে ফুস করে এক নিঃশ্বাস ফেলে আবারও ঐশীর দিকে তাকালো। ঐশী বারবার ঢোক গিলছে আর ভয়ার্ত চোখে জুভানের দিকে তাকিয়ে আছে। জুভান এতে কোনো ভাবান্তর না করে ভ্রু আঁকাবাঁকা করে ফট করে ঐশীর হাত থেকে মরিচ স্প্রে টা নিজের হাতে নিয়ে নিল। ঐশী হঠাৎ এমন ব্যাবহার দেখে থমকে গেলো ? এখন কি হবে ? ওর একমাত্র সম্বল তো ওই মির্জা হাতিয়ে নিল। ঐশী মুখের লালা দিয়ে গলা একটু ভিজিয়ে সিটের একটুখানি পিছিয়ে গেল। জুভান স্প্রের বোতল একটু নেড়েচেড়ে আবারও ঐশীর দিকে তাকালো। ভ্রুকুটি করে বললো,

” লাল মরিচ শুধু ? নাকি আর কোনো মরিচ আছে এতে ? ”

ঐশী নাক ফুলিয়ে রাগ দেখিয়ে বললো,

” তাতে আপনার কি ? এক্ষুনি গাড়ি থামান। আমি নেমে যাবো। ”

জুভান প্রতিউত্তর না করে স্প্রে টা নিজের কাঁধ ব্যাগে রেখে দিল। এসব দেখে ঐশীর মন চাইলো এই মির্জা কে জাস্ট মেরে ফেলতে। কত সাহস ! ওর স্পেশাল থেরাপি টা নিয়ে নিল ? ঐশী মুখ ভরে শ্বাস নিয়ে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু লাভ বিশেষ হলো না। ঐশী রাগ দমন করতে না পেরে আবারও বললো,

” আপনার কি কান নেই ? কখন থেকে বলছি গাড়ি থামান। অথচ আপনি কানেই নিচ্ছেন না। আর আমার স্প্রে দিন। দিন বলছি। আমি নেমে যাবো। ”

জুভান ফোন স্ক্রল করছিল। ঐশীর কথা শুনে ফোনটা আবারও নিজের পকেটে রেখে দিল। ঐশীর দিকে ফিরে অতীব রাগী কণ্ঠে বললো,

” আর ইউ ম্যাড ? এই মধ্যরাতে, মাঝরাস্তায় তুমি গাড়ি থেকে নেমে যাবে ? চিনো কিছু ? জানো এই শহর সম্বন্ধে ? কোথ থেকে যে আসে এসব ডাফার । ডিসগাস্টিং । ”

বলেই জুভান বিরক্তি হেসে আবারও সামনে তাকালো। ঐশীর মনোভাব নিতান্তই তুচ্ছ করে আবারও ফোন স্ক্রল করতে মনোযোগ দিল। ঐশীর মাথা এবার আগুন হলো। জ্বলন্ত লাভা ফুটলো তার মগজে। সেই লাভার উত্তাপে এক অবিশ্বাস্য কাণ্ড করে বসলো ও । অত্যধিক ক্ষোভে চলন্ত গাড়ির দরজা খুলে নেমে যাওয়ার চেষ্টা করলো। কিন্তু জুভান সতর্ক হয়ে সাথেসাথে ঐশীর হাত ধরে হেচকা টান দিয়ে আবারও সিটে বসিয়ে দিল। চটজলদি এক হাত দিয়ে তাড়াতাড়ি করে দরজা আটকে দিল।

” ইউ মেড ” বলে ঐশীর এমন অবিশ্বাস্য ব্যবহারে ক্ষিপ্ত হয়ে জুভান রেগে থাপ্পড় লাগাতে হাত অগ্রসর করতেই ঐশী চোখ খিচে বন্ধ করে দিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো। কাদতে কাদতে বললো,

” আমি যাবো না আপনার সাথে। যা করার করে নিন। ”

ঐশীর কান্নার শব্দ খুব অসহায় হয়ে ভেসে আসলো জুভানের কানে। জুভান থমকে গিয়ে তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো ঐশীর দিকে। রাগ এখনো কমে নি। কিন্তু এই মেয়ের বুদ্ধিশুদ্ধি লোপ পাওয়ায় সেও হিতাহিত বিবেক কে প্রশ্রয় না দিয়ে ড্রাইভারকে বলে মাঝরাস্তায় গাড়ি থামিয়ে দিল। গাড়ি থামানোর প্রায় সঙ্গেসঙ্গে ঐশী দরজা খুলে গাড়ি থেকে নেমে হাঁটা ধরে। আর একবারও পিছন ফিরে তাকায় নি সে। ভয়ে এখনো বুকের ভিতর-টা তবলা বাজাচ্ছে। কপাল বেয়ে ঘাম চুঁইয়ে পড়ছে। মুখ লালাভ রং ধারণ করেছে। কিন্তু মনটা এখন শান্তি। ওই মির্জা থেকে তো নিজেকে বাঁচাতে পেরেছে। ভেবেই জয়ের হাসি হাসলো ঐশী। একটু পর পাশ দিয়ে জুভানের গাড়ি শো আওয়াজ করে সামনে এগিয়ে গেলো। ঐশী সেদিকে তাকিয়ে আবারও জিভ ঠোঁট ভেজালো। বাঁচা গেছে।

রাত কয়টা বেজে ঐশীর জানা নেই । একটা অতীব সত্যি বিষয় হলো , মানুষ মাত্রই অলস। সবসময় তার শুধু একটাই চাওয়া ” ইসস ! আরো সহজ উপায়ে যদি কাজটা করা যেত। ” কিন্তু সে এটা জানে না সেই তথাকথিত সহজ উপায় অবলম্বন করতে করতে সে নিজের ভাগ্যটাকেই সংকুচিত করে ফেলে । তেমনটাই করেছে ঐশী। সহজ উপায় স্বরূপ নিজের হাতঘড়ি- টায় একবার চোখ বুলালো। তিনটা দশ বাজে। ঐশী সময় দেখে এক ঢোক গিললো। কিন্ত তাতে কাজের কাজ কিছুই হলো না। গলা তবুও শুকনোই আছে। ঐশী চারপাশটায় একটু চোখ বুলালো। দুপাশে সারি সারি গাছ। অদূরে কয়েকটা মাটির ঘর দেখা যাচ্ছে। মাঝেমধ্যে ঝি ঝি পোকার পরিচিত শব্দ কানে আসছে। নিঃসন্দেহে এটা এক ভয়ঙ্কর পরিবেশ। আর ঐশী ভয়ও পাচ্ছে। ঐশী ভয়কে পাশ কাটিয়ে বিসমিল্লাহ বলে সাইড ব্যাগটা শক্ত করে ধরে হাঁটা শুরু করলো। ঢাকা খুব দূরে নয়। সেই আন্দাজ করে হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিলো ঐশী।

তিনটা ছেলে হেলেদুলে হাঁটছিলো রাস্তা ধরে। আজ জুয়া খেলে নেশাটা ভালই হয়েছে। মাথা চক্কর দিচ্ছে। কুচকুচে কালো রঙের ছেলে আকাশ দুলতে দুলতে বললো,

” মামা , আইজ খেললামও। আর গিললামও। এখন একটা মাইয়া পাইয়া গেলে তো রাতটাই ফুরফুরে হইয়া যাইবো। কি কস। ”

সজীব নামের ছেলেটা কোনো উত্তর না দিয়ে মাতাল গলায় গান ধরলো,

” মাই নাম ইজ শীলা , শীলা কি জাবানি।

বাহ। কিয়া জাবানি ! এমন জাবানি ওয়ালা মেয়ে মিলে গেলে তো মামা আমি বড়লোক হইয়া যাইতাম।ভাবতেই শরীর এখনই আনচান করতাছে। ”

দুজন যখন এক পৃথিবীতে মত্ত তখন হঠাৎ লিমন নামের ছেলেটা আঙ্গুল দিয়ে চাঁদের আবছা আলোয় ঐশীকে দেখিয়ে চমক গলায় বললো,

” মামা, ঐটা একটা মাইয়া না ? দেখতো।”

সজীব পিটপিট করে তাকালো। হেলে দুলে বললো,

” দূর বেটা। এহন এত রাইত্রে এহানে মাল আইবো কেমনে ? ”

মুখ দিয়ে বিষয়টাকে তাচ্ছিল্য করলেও আবারও সেদিকে তাকালো সজীব । কি হলো এটা ? সেকি ঠিক দেখলো ? একটা মেয়েই তো !

” হ মামা। মালই ত । ভালো করে চাইয়া দেখ। ”

আকাশের কথায় সজীব আর লিমন একটু নড়েচড়ে দাড়িয়ে মনোযোগ দিয়ে তাকাল।না। একটা মেয়েই। তারা অবাক হলো। বিস্মিতও হলো। তারা একবারও কল্পনাও করেনি এত রাতে এই যুবতী চাঁদ পেয়ে যাবে।

তিনজন একে ওপরের দিকে তাকিয়ে হেলেদুলে জোরে হাঁটতে লাগলো ঐশীর দিকে।

” এই আফা। আফা গো। ও আফা। দাড়ান একটু। ”

পিছন থেকে বিশ্রী কণ্ঠ শুনে সেদিকে ফিরে তাকালো ঐশী। ছেলে তিনটাকে দেখে থমকে গেলো। এই মাতাল ছেলেপুলে দেখে যা বুঝার বুঝে গেলো ঐশী। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে আবারও সমানে তাকিয়ে জোরে হাঁটা ধরলো। আল্লাহ ! আজ যে আর কত কিছু মোকাবেলা করতে হবে। একদিনে ঐশীর অনেক অভিজ্ঞতা হয়ে গেছে।

” আফা। ও আফা। আইজ যাইবেন আমাগো লগে ? টাকা দিমু। অনেক টাকা। ”

বলে ছেলেগুলো দৌড়ে ঐশীর পিছন পিছন আসতে আসতে লাগলো। ঐশী এবার দৌড় লাগালো। রাগে , ভয়ে রীতিমত কান্না করছে সে। স্পেশাল থেরাপি-টাও নাই। ওই শয়তান মির্জা-টা নিয়ে গেছে। এখন কি হবে ? ঐশী প্রাণপণে দৌড়াচ্ছে। ঐশীর চাওয়া , একবার শেষ রক্ষা হোক। এইবার ঐশী নিজের সম্মান রাখতে সক্ষম হোক।

কিন্তু বিধাতা মনে হয় ঐশীর চাওয়া রক্ষা করতে ইচ্ছুক নন। তাইতো ওই মাতাল ছেলেগুলো ঐশীকে খুব জলদি ধরে ফেললো। সজীব এগিয়ে এসে চোখ বুজে ঐশীর শরীরের ঘ্রাণ নিল। সঙ্গেসঙ্গে ঘৃণায় ঐশীর শরীর রি রি করে উঠলো। ছাড়া পাওয়ার জন্যে ছটফট করতে লাগলো ও । ছেলেগুলো একে একে ঐশীর দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। ঐশী ওদের এগুতে দেখে চোখ বন্ধ করে আল্লাহর নাম জপছে আর বারবার বাঁচার জন্যে ছটফট করছে।

” এই ধানিলঙ্কা মেয়েকে তোদের সাথে নিয়ে যা। যা টাকা লাগে আমি তোদের দিব। ”

হঠাৎ পুরুষালি কন্ঠ শুনে ছেলেগুলো ঐশীর থেকে মনোযোগ ছিন্ন করে পিছন ফিরল। আর ঐশী ? সে তো সেই দুর্বিষহ বাক্য শুনে ভয়ে ক্ষয়। আজই কি তার জীবনের সময়সীমা শেষ ? মজবুত ঐশী আজকের পরই কি দুর্বল হয়ে যাবে ?

#চলবে

 

 

( অনুগ্রহপূর্বক নিচের নোট পড়বেন। গুড নিউজ আছে । )
” যা না। নিয়ে যা ওকে। “
জুভান ভাবলেশহীনভাবে কথাটা বলে ধীরে ধীরে ছেলেগুলোর দিকে এগুলো। ছেলেগুলো চোখ পিটপিট করে তাকালো জুভানের দিকে। সন্দেহ গলায় বললো,
” তুই এরে বাঁচাইতে আহস নাই ? “
জুভান জিন্সের পকেটে দুহাত গুঁজে সোজা হয়ে দাড়াল। চারপাশটায় চোখ বুলিয়ে লম্বা করে শ্বাস নিয়ে বললো,
” না। “
ছেলে তিনটা সস্থির নিঃশ্বাস ফেলে ঐশীর দিকে এগোলো। ঐশী ততক্ষণে চোখ মেলে জুভানের দিকে তাকিয়েছে। এই মির্জা না চলে গিয়েছেন ? আবার আসলেন কখন ? আর এখন এসব কথা শুনে ওর বিশ্বাস হচ্ছে না এই মির্জা এতটা খারাপ ! ওকে এই মাতাল ছেলেগুলোর হাতে এত সহজে তুলে দিচ্ছে ? ঐশী কঠিন চোখে জুভানের দিকে তাকালো। জুভান ঐশীর চাহনি পাত্তা না দিয়ে শিস বাজিয়ে আবারও সামনে পা বাড়ালো। অদূরে গাড়ি দেখা যাচ্ছে ওর। সেদিকেই যাচ্ছে। ছেলেগুলো ঐশীর বিশ্রী হেসে ঐশীর শরীর থেকে ওড়না নিয়ে নিল। ঐশী থমকে উঠে চোখ বন্ধ করে আবারও ছটফট করতে লাগলো। এতে মনে হয় ওই মাতাল ছেলেপুলে খুব মজা পেলো। বাঁকা হেসে এবার তারা ঐশীর জামায় হাত বাড়ালো। ঐশীর চোখের জল নাকের জল মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। আজ কি ওর বাঁচার কোনো উপায় নেই ? ঐশী দূরে তাকিয়ে দেখলো জুভান গাড়িতে উঠে যাচ্ছে।এবার ও জোরে চিৎকার দিয়ে বললো
” গায়ক সাহেব… “
জুভান ফিরে তাকালো ঐশীর দিকে। ছেলেগুলো ঐশীর চিৎকারে হাত গুটিয়ে নিয়ে জুভানের দিকে তাকালো। জুভান ভ্রু বাকা করে বললো,
” সব জারিজুরি শেষ ? “
ঐশী অসহায় নজরে তাকালো জুভানের দিকে। জুভান হাসলো। দুনো হাত উচু করে আড়মোড়া ভাঙলো। সঙ্গেসঙ্গে ওর শরীর থেকে ” মরমর” শব্দ ভেসে এলো। জুভান গুনগুনিয়ে গান গাইতে গাইতে ঐশীর কাছে এসে দাড়ালো। ঐশীকে একটু লক্ষ্য করে আবারও ছেলেগুলোর দিকে তাকালো। তাচ্ছিল্য করে বললো,
” এতসময়ে জাস্ট ওড়না হাতিয়েছিস ? শেম অন ইউ গাইস ।”
ছেলেগুলো কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। যেনো নিজেদের অক্ষমতায় নিজেরাই লজ্জিত। আর ঐশী ? সে তো শুধু অবাক চোখে জুভানের দিকে তাকিয়ে আছে। মাথা ঘুরছে তার। এই গায়ক সাহেব কে এতটাও খারাপ ভাবে নি ও। জুভান সজীবের হাত থেকে ওড়না টা ফট করে নিয়ে নিল। ওরা এতে বোকার মত জুভানের দিকে তাকালো। জুভান বললো,
” মেয়েটার হাত ছাড়। আর আমার দিকে তাকা। দেখ আমি কিভাবে দু মিনিটে কাজ হাসিল করি। ওকে ? “
ছেলেগুলো অবুঝ হয়ে মাথা নাড়ালো। জুভান এগিয়ে এসে ঐশীর গায়ে ওড়না জড়িয়ে দিয়ে সরে এলো।
” নাও আই উইল প্লে দা গেম। রেডি গাইস ? “
ছেলেগুলো যেনো তুমুল উৎসাহ পেলো। সম্মতি জানাতে হুরহুর করে মাথা নাড়ল ওরা। ঐশী এসব দেখে ভরকে গেলো। জলদি মাথা নেড়ে কাদো কাদো গলায় বললো,
” প্লিজ… “
জুভান শুনে বাঁকা হাসলো। এগিয়ে এসে ঐশীর গায়ের ওড়না নিতে এলে হুট করে হাত ঘুরিয়ে সজীবের নাক বরাবর ঘুষি দিল। আচমকা আক্রমণে সজীব নাকে হাত দিয়ে খানিক পিছিয়ে গেলো। এবার জুভান ধীরে ধীরে নিজের রাগী রূপে এলো। একে একে তিনটাকেই মারতে লাগলো এলোপাতাড়ি। ছেলেগুলো হঠাৎ জুভানের এমন রূপ বদলানো দেখে থতমত খেয়ে গেলো। আকাশ নাকের রক্ত দেখে জুভানের দিকে তেড়ে আসলে জুভান ওর পায়ে লাথি দিয়ে রাস্তায় শুইয়ে দেয়। রাগে কাপতে কাপতে বলে,
” জানোয়ারের বাচ্চা , কুত্তার বাচ্চা , মেয়ে দেখলেই শয়তানি করতে মন চায়। তাইনা ? আজ তোদের সবগুলোর ওই মিশনটাই নষ্ট করে দিবো। কুত্তার বাচ্চা।”
বলেই আবারও এলপাথারি লাথি দিতে থাকে ওই মাতালদের। ঐশী একপাশে কাচুমাচু হয়ে দাড়িয়ে আছে। বেশ ভয় পেয়েছে মেয়েটা।
ছেলেপুলে যখন মাটিতে কাতরাতে ব্যস্ত তখন জুভান ঐশীর দিকে তাকিয়ে কটমট গলায় বললো,
” ঢাকা একা যেতে পারবে তো। ওকে তাহলে। আমি চলে যাচ্ছি। একা একা হেঁটে ছয় কিলোমিটার পাড়ি দিও। যত্তসব পাগলের দল। “
বলেই জুভান হেঁটে গিয়ে গাড়িতে উঠে গেলো। ঐশী যা ভয় পেয়েছে তাতে একা একা যাওয়ার সব শখ মিটে গেছে ওর। তাই চুপচাপ নিজের সাইড ব্যাগ আকড়ে ধরে গাড়ির কাছে এসে দাড়ালো।
জুভান ঐশীকে দেখে কিছু বলল না। এক তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে দরজা খুলে সামনের সিটে এসে বসলো। ঐশী চুপচাপ পিছন সিটে বসে দরজা আটকে দিল।
গাড়ি চলছে। জুভানের রাগ এখনো সপ্তমে চড়ে আছে। তাই তো এক হাত জানালায় রেখে বাইরে তাকিয়ে আছে। দৃষ্টি শূন্যে ভাসছে। চোখের নজর কঠিন। ঐশী নিজের ওড়নার শেষাংশ ধরে মাথা নিচু করে বসে আছে। একটু পর ঐশী মনে হলো ওর স্প্রে ত ওই মির্জার কাছে। তাই ও মাথা তুলে জুভানের দিকে তাকিয়ে বলল,
” আমার স্প্রে ? “
জুভান হিংস্র চোখে পিছন ফিরলো। ঐশীর দিকে তাকিয়ে কঠিন সুরে বলল,
” আমার উপর এপ্লাই করার জন্যে ? “
ঐশী এক ঢোক গিলল। আসলেই তো। যে ওকে এই ভয়ঙ্কর বিপদ থেকে রক্ষা করেছে তাকেই এখন ঠিকমত ভরসা করতে পারছে না। কেনো ? ঐশী কাচুমাচু গলায় বললো,
” আসলে আমি ইয়ে মানে.. “
” আমি কোনো মেয়ের সম্মতি ছাড়া তাকে ছুঁয়ে অব্দি দেখিনা। আমি কখনো কাউকে নিজের কাজের কৈফিয়ত দেইনা। কিন্তু আমার সামনে বসে থাকা এক মাথা মোটার জন্যে বলতে বাধ্য হলাম। রিডিকিউলাস । “
ঐশী সব শুনে উত্তর দিল না। আবারো জানালার দিকে তাকিয়ে তারা গুনতে মগ্ন হয়ে গেলো। জুভান এক উষ্ণ নিঃশ্বাস ফেলে ব্যাগ থেকে মরিচ স্প্রেটা নিয়ে সেটা ঐশীর দিকে বাড়িয়ে বলল,
” নাও। “
ঐশী জানালার থেকে মুখ সরিয়ে ঝট করে জুভানের হাত থেকে স্প্রে টা নিয়ে নিজের ব্যাগে রেখে দিল।
জুভান অবিশ্বাস্য নয়নে ঐশীর দিকে তাকিয়ে আবারও সামনে তাকালো। এই মেয়েটা কিসের তৈরি ? খোদা ! এত অবিশ্বাস কোথা থেকে আমদানি হয় !
______________________
ফজরের আজান দিচ্ছে। গাড়ি জুভানের বাড়ির সামনে এসে থামল। জুভান গাড়ি থেকে নামতে নামতে ড্রাইভারকে বললো,
” চাচা , আপনি এই মেয়েকে সেফলি ওর বাসায় পৌছে দিয়েন। “
বলেই ঐশীর দিকে ফিরল। ঐশী ততক্ষণে ঘুমে কাহিল। জুভানের রাগ লাগলো। সারারাত ওকে এত চিন্তায় ফেলে এখন নিশ্চিন্তে ঘুমানো হচ্ছে ! জুভান গাড়ির সিট থেকে পানির বোতল নিয়ে এক আজলা পানি ছিটিয়ে দিল ঐশীর চোখে মুখে। ঐশী ঠান্ডা পানির স্পর্শ পেয়ে হুড়মুড় করে উঠে বসলো। আদো আদো চোখে তাকালো জুভানের দিকে। জুভান হাত ঘড়ি দেখতে দেখতে বললো,
” অ্যাড্রেস বলো তোমার। ড্রাইভার চাচা পৌঁছে দিবেন। “
ঐশী কি বলবে এখন ? কোনো উত্তর যে নাই ওর কাছে। ঐশী কাচুমাচু গলায় বলল,
” আ.আমার ঢাকায় কোনো ঠিকানা নেই। “
” হোয়াট ? “
জুভান তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে বললো।
May be an image of 1 person and text

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..