অথচ কদিন আগেও কোথাও বেরোলেই ফুচকা, চটপটি না খেয়ে ঘরেই ফিরতাম না। পাড়ার, পুরো এলাকার এমনকি শহরের কমদামী থেকে নামীদামী বেশিরভাগ দোকানের চটপটি, ফুচকার স্বাদই আমার পরিচিত।
এমনকি গলির মোড়ে দাড়িয়ে ফুচকা, চাট বিক্রি করছে দেখলেও থমকে দাঁড়াতাম। আমার বর তো মহা বিরক্ত হয়ে বলতো এগুলো অস্বাস্থ্যকর, আমিও উৎসাহের সাথে বলতাম ডা. বলেছে ফুচকা খেতে পারবে, টক পানিটা না খেলেই হবে।
আমি খেতে ভালোবাসি বলেই যে শুধু ফুচকার দোকানে যেতাম এমনটা নয় কিন্তু। দামি দোকানগুলোর কথা আলাদা, তবে আমাদের এলাকার বেশ কিছু পুরনো চটপটির দোকান আছে যেগুলোর স্বাদ ওসব দামি দোকানের ফুচকাকে টেক্কা দিয়ে দেয়।
দামও ধনী, গরিব সকলের নাগালের মধ্যে।
আমি তো খেতে যেতামই, তবে খাবার চেয়েও বেশি যেতাম দেখতে।
বৃদ্ধ দাদি এসেছে তার ছোট নাতির হাত ধরে। কুচমুচে ফুচকায় টকঝাল মেখে মুখে পুরে দাদির মুখের ফোকলা দাঁতের যে হাসি, এর চেয়ে সুন্দর কোন দৃশ্য আমি এজীবনে দেখিনি।
সামর্থ্যবানরা হাসি মুখে খাচ্ছে কিন্তু পাশের বেঞ্চে বসে এক গরির মা একপ্লেট ফুচকা নিয়ে তার ছোট্ট ছেলেটার সাথে হাসিমুখে খাচ্ছে দেখে আমারও মুখে হাসি। বেশিরভাগ ফুচকাই মা তার ছেলেটাকে খাইয়ে দিচ্ছে হাসিমুখে, আমিও মুগ্ধ হয়েই দেখি হাসিমুখে।
কলেজ পড়ুয়া এক জুটি ফুচকা খাচ্ছে তার ঠিক পেছনের সারিতে ফুচকার প্লেট নিয়ে গার্মেন্টস কিংবা কারো বাসায় কাজ করে এমন এক জুটি বসে খাচ্ছে আর মুখে উচ্ছল হাসি ছড়িয়ে গল্প করছে। দেখে আমারও মুখে হাসি ছড়িয়ে পড়ে।
ছোট বাচ্চা কোলে এক মা এসেছে, নিজে খাচ্ছে ফুচকা, বাচ্চাটার হাতে এক্সট্রা শুকনো ফুচকা দিয়েছে, দুইচারটা দাঁত দিয়ে মুচমুচ করে খাচ্ছে আর কি হাসি, কি জানি কি স্বাদ সে বুঝলো কিন্তু তা দেখ আমার হাসি দুকান হলো।
নিজের খাবারের লোভ আমি ঠিক সামলাতে পারি, আসলে এমনসব হাসির গল্প দেখার লোভেই আমি ফুচকার দোকানে ছুটতাম।
Leave a Reply