২০২১সালঃ
রুদ্র পথের মাঝে অসহায়ের মতো বসে আছে।আশেপাশে কেউ নেই।তার বুকে মাথা ঠেকিয়ে আছে শুভা।দেখে বুঝা যাচ্ছে শুভার শরীরে প্রাণ নেই।মেয়েটার চোখ এখনো আধা খোলা।বেঁচে থাকার আকুতি নিয়ে মরে গেছে শুভা।
২০১০ সালঃ
রুদ্র রুটিনের দিকে তাকিয়ে আছে।দুপুর ১২টা বাজে।এখন তার বাংলা বইয়ে চোখ বুলানোর কথা।কিন্তু সে রুটিনের দিকে তাকিয়ে বসে আছে।যে কেউ বলে দিবে তার রুটিনে মন নেই।
তানিয়া রুমে এসে ছেলের দিকে তাকিয়ে বুঝে ফেলে কিছু হয়েছে ছেলের।
“তোর কি হয়েছে বল তো?”
মায়ের কথায় রুদ্রর ধ্যান ভাঙ্গে।
“না আম্মা,কিছু না।”
“তোর কিছু হয়েছে।আজ নাস্তা করার সময়ও অন্যমনস্ক ছিলি।”
“না আম্মা,পরীক্ষা তো সামনে….
” মিথ্যে বলিস না।তোর অনেক পরীক্ষা দেখেছি আমি।কখনো এরকম দেখিনি।”
“যাও তো আম্মা।আমি পড়বো।”
“দুপুর বেলা আর পড়তে হবে না।উঠে গোসল করে নে।”
রুদ্র মাকে এড়াতে তাড়াতাড়ি গোসলে চলে যায়।
তানিয়া চিন্তিত হয়ে তাকিয়ে থাকে ছেলের চলে যাওয়ার পথে।দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়ায় সে।
রুদ্র আজ চুল স্পাইক করেছে।নিতান্ত ভদ্র নম্র ছেলের শার্টের প্রথম কয়টা বোতাম খোলা।
কোচিং এর সবাই হা করে তাকিয়ে আছে।নতুন রুদ্রকে দেখছে সবাই।
শোভন খোঁচা মেরে বলল,
“কিরে নায়ক,প্রেমে পড়েছিস নাকি?”
রুদ্র লজ্জায় লাল হয়ে শার্টের বোতাম আটকে বসে পড়লো।রুদ্রর ভালো বন্ধু বলতে একজনই আছে।প্লাবন।প্লাবনের কাছে সে তার সবকিছু খুলে বলতে পারে।কিন্তু আজ পারছে না।প্লাবন অনেক কথা বলে।সে তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে কথা বলে যাচ্ছে।রুদ্র থামিয়ে দেয়।
“শুন, কথা আছে তোর সাথে।”
“হ্যাঁ বল।”
“কোচিং শেষে থাকিস।”
“আচ্ছা।কিন্তু কি কথা?”
“পরে বলবো।”
ক্লাস শেষে রুদ্র প্লাবনের হাত ধরে রাখলো।কারণ প্রতিদিনই প্লাবন ক্লাস শেষে উধাও হয়ে যায়।
আজ উধাও হতে দেয়া যাবেনা!
“ইশ,এভাবে কেউ হাত ধরে?ব্যথা লাগে রুদ্র!”
“তোর বিশ্বাস নাই।তুই গায়েব হয়ে যাবি।কিন্তু আজ তোর সাথে ইম্পর্ট্যান্ট কথা আছে।আজ গায়েব হতে দিবো না।”
প্লাবন মুখ কালো করে চুপচাপ রুদ্রর হাতে বন্দী হয়ে থাকে।প্রতিদিন ক্লাস শেষে সিগারেটের ধোঁয়া উড়াতে গায়েব হয় সে।এটা রুদ্র জানলে খুব ঝামেলা করবে।রুদ্রকে সে ভয় পায়।রুদ্র ভালো ছাত্র।তাকে প্লাবনের বাবা-মা খুব বেশিই পছন্দ করে।যার কারণে রুদ্রর সব কথা শুনে তারা।
প্লাবনের প্রতিদিন গায়েব হওয়া নিয়ে যখন তার বাবা-মা শুনে তখন মুখে বলদের মতো একটা হাসি দিয়ে কেটে পড়ে সে।
আজ মনে হয় আর সিগারেটের ধোঁয়া উড়ানো হবে না।
রুদ্র প্লাবনকে নিয়ে “মাধবী ক্যাফে”-তে বসে।মাধবী ক্যাফে এলাকার বিখ্যাত ক্যাফে।এখানে সব ধরণের ফাস্টফুড আইটেম পাওয়া যায়।তবে রুদ্র ফাস্টফুড পছন্দ করে না।তাই প্লাবন অবাক হয় রুদ্রর ক্যাফেতে যাওয়া দেখে।
” তোর কি হয়েছে বল তো?চুলে স্পাইক,শার্টের বোতাম খোলা,হাতা গোটানো তার উপর তুই ক্যাফেতে!তোর কি হয়েছে?”
“সেটা বলতেই তো এখানে আনলাম তোকে।”
“তাড়াতাড়ি বল।আমার তর সইছে না।প্রেমে পড়েছিস নাকি?”
রুদ্রর ফর্সা গাল লাল টুকটুকে হয়ে উঠে।লজ্জিত কন্ঠে বলল,
“আরে সেরকম কিছু না।মানে হয়েছে কি শুন….
দুদিন আগে রুদ্রর চাচাতো ভাইয়ের বিয়ে ছিলো।রুদ্র ভার্সিটি এডমিশনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। তার কোনো ভাবেই বিয়েতে যাওয়ার ইচ্ছে ছিলো না।তানিয়া অনেকটা জোর করে রুদ্রকে নিয়ে যায় বিয়েতে।রুদ্র সেখানে গিয়ে এক কর্ণারে একটা চেয়ার নিয়ে বসে থাকে।চারদিকে তাকায় আর মনে মনে নিজের মাকে কথা শুনায় বিয়েতে জোর করে আনার জন্য।
হঠাৎ চারদিকে হৈ হুল্লোড় শুরু হয়।একটা মেয়ের গলার আওয়াজ শুনা যায়।মেয়েটা রিতীমত কাঁদছে।রুদ্র এগিয়ে যায়।বিশাল ভিড়ের মধ্যে যাওয়া দুঃসাধ্য ব্যাপার।তাও রুদ্র ঠেলেঠুলে ভেতরে যায়।গিয়ে দেখে একটা মেয়ে,সালোয়ার কামিজ পরা।আনুমানিক বয়স ১৫/১৬ হবে।লম্বা চুল এলোমেলো হয়ে ছড়িয়ে আছে।
” আপনি বলেছেন এসএসসি পরীক্ষা শেষ হলে আমাকে বিয়ে করবেন।আমি এসএসসি শেষ করলাম।আপনি কোনো যোগাযোগ করলেন না।আজ শুনি আপনার বিয়ে।তিন বছরের সম্পর্কের কি কোনো দাম নাই আপনার কাছে?আমি কি মানুষ না?আমার কি কোনো এক্সপেকটেশন নাই?এনগেজমেন্ট করলেন।আমার ফ্যামিলিতে বললেন, শুভাকে ছাড়া বাঁচবো না।আর এখন আরেকটা মেয়েকে বিয়ে করছেন!”
মেয়েটা এসব রুদ্রর চাচাতো ভাইকে উদ্দেশ্য করে বলছিলো।রুদ্র মেয়েটার কান্নায় ভেজা চোখ দেখে কয়েক মুহুর্তের জন্য থমকে দাঁড়ায়।এই চোখে চেয়ে জীবন বাজি রাখা যায়!
রুদ্রর কাজিন শাহিন মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে।তার সদ্য বিয়ে করা বউ কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান প্রায়।শাহিনের মা-বাবা দুজনই অবাক।ছেলে এরকম কাজ করে রেখেছে তারা কখনো ভাবেনি পর্যন্ত।শাহিনের বাবা ব্যাপারটা সমাধান করতে এগিয়ে যায়।
“দেখো মা,যা হওয়ার হয়ে গেছে।তুমি বাসায় যাও।”
“কি বললেন এটা আপনি! আমাকে নিজের মেয়ে ভেবে দেখেন তো একবার।তখন মেয়ের বাবা হিসেবে কি বলবেন বলুন।”
শাহিনের বাবা চুপ হয়ে যায়।মেয়েটা সেখান থেকে চলে যায়।রেখে যায় রুদ্র বুকের ধুকপুক আওয়াজ আর আনন্দে ঘেরা বিয়ে বাড়ির নীরব চেহারা।
প্লাবন সব শুনে আশাহত হয়।
“শেষে একটা খেয়ে দেয়া মেয়ের প্রেমে পড়েছিস?”
রুদ্র তড়িৎ গতিতে উঠে দাঁড়ায়।গলা চড়িয়ে বলে,
“তোদের মতো ছেলেদের কারণেই কিছু মেয়ের এই দুর্দশা! “
(চলবে)
Leave a Reply