১৬ই ডিসেম্বর বিজয়ের দিন। এই দিনে নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর বিজয় লাভ করে ছিলাম। কাশেমের তখন মাত্র সাত বছর বয়স। হঠাৎ দেশে যুদ্ধ শুরু হয়। তারা দুই ভাই এক বোন। তাঁর বাবা ছিলেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা। সে ফরিদপুর ভেদরগঞ্জ থানা তে চাকুরি জীবি ছিলেন। তখন কার দিনে হঠাৎ করে কলেরা আসে দেশে। তখন কাশেমের মা মারা জান। কাশেমের বোনের বয়স তিন মাস, আর ছোট ভাই এর বয়স পাঁচ বছর। কাশেমের সংসারে নেমে আসে কালো ছায়া। কাশেমের বাবা চাকুরি করেন অনেক দূরে। কাশেম ভেবে পাইনা কি করবেন। মা মারা গেছেন। ছোট ছোট ভাই বোন নিয়ে অসহায় অবস্থা। রান্না বান্না করতে পারেন না। ছোট বোন দুধের জন্য কান্না করে সারাক্ষণ। কাশেমের বোন কে সামলাতে পারে না। গ্রামের লোকজন শোনে ওদের দেখতে আসে। কিন্তু কেউ সাহায্য করে না। কাশেমের এক মামা ছিলেন ছোট্ট। সে তখন ওদের সাহায্য করেন। কাশেমের বাবা কে চিঠি দেন। যে আপা মারা গেছেন ,দোলাভাই আপনি তারাতাড়ি বাড়িতে আসেন। ছুটি নিয়ে বাড়ি আসেন। কাশেম পেরে উঠতে পারে না। আপনি তারাতাড়ি চলে আসেন। ওদিকে দেশে তুমুল আন্দোলন চলে ভাষার জন্য,মা মাতৃভূমির জন্য। কাশেমের বাবা ছুটি পাই না। সে সময় পাকিস্তানি সরকার ছিলেন। কাশেমের বাবা লুকিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যোগদান করেন। কিভাবে তারা শত্রুদের সাথে মোকাবিলা করবেন। পাকিস্তানি রা একের পর এক হামলা করতে শুরু করেন। এদিকে মুক্তিবাহিনী থেমে নেই তারাও মাঠে নেমে পরেছে গোপনে। দেশে তখন উত্তাল আন্দোলন ভাষার দাবিতে। ইয়াহিয়া ১৪৪ ধারা জারি করেন। কে শুনে কার কথা। রেডকোর্স ময়দানে ভাষণ দেন বঙ্গ বন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তোমাদের যার যা কিছু আছেন তা নিয়ে তোমরা নেমে পরো। এক ফাঁকে কাশেমের বাবা বাড়িতে আসেন। আরেক টা বিয়ে করেন। কাশেমদের দেখাশোনা করার জন্য। বাবা চলে যান ভেদরগঞ্জ থানাতে। এদিকে নেমে আসে সৎ মায়ের অত্যচার। খেতে দেন না, পড়তে দেন না। মেপে মেপে খাবার দেন তাদের। কাশেমের ভাই বোন কে মার ধর করেন কথায় কথায়। কাশেমের বাবা লুকিয়ে লুকিয়ে মুক্তিযোদ্ধা দের সাথে কাজ করে দেশের মানুষের জন্য। মিলিট্রারি বাহিনীর অত্যাচারে মাথা চারা দিয়ে উঠেন। যে ভাবে হোন শত্রুদের মোকাবেলা করতে হবে। তারা গোপনে সিদ্ধান্ত নেন ভেদরগঞ্জ থানা উড়িয়ে দিবেন। সেই দিন পাকিস্তানি বড় বড় মিলিট্রারি লোকজন থাকবেন। মিটিং করার জন্য। তখন কাশেমের বাবা মুক্তিযোদ্ধাদের বলেন। সব গোপন কথা যে মিলিট্রারি বাহিনী ১৫ তারিখে মিটিং করবে। আমরা তখন থানা উড়িয়ে দেব। যে কথা সেই কাজ। সব কিছু অকে ছিলো। মুক্তিযোদ্ধাদের ইশারা করে যে টাইম বোম ব্রাষ্ট করতে। কিন্তু এদিকে কাশেমের বাবা ফেঁসে যান। মিলিট্রারিদের হাতে, তাঁকে একটি কাজ দিয়ে বসেন। সে আর বের হতে পারেন না। মুক্তিযোদ্ধারা তখন থানা উড়িয়ে দেন। আর কাশেমের বাবা পাকিস্তানি মিলিট্রারিদের সাথে মারা যান ।সে দেশের জন্য জীবন দেন। এদিকে কাশেম ঢাকায় এসে ঘড়ির দোকানে কাজ নেন। তার পর গোপনে কাশেম মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করেন। তাদের খাবার জল এনে দেন। মুক্তিযুদ্ধ চারিদিকে শুরু হয়। জ্বালাও পুরাও শুরু হয়। মা বোনের আত্মচিৎকার চারিদিকে মুখরিত। বাঁচাও বাঁচাও কে শোনে কার কথা। ভংকর চারিদিক থমথমে পরিবেশ। ভংকর কালো রাত তুমুল যুদ্ধ। দেশ স্বাধীন হয়। একে একে সবাই দেশে আসেন। কাশেমের বাবা দেশে আসেন না। কাশেমের সৎ মা কেঁদে কেঁদে বুক ভাসান। স্বামি কেনো বাড়ি আসেন না। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন। কাশেমের বাবা মারা যান। তারা ফরিদপুর গিয়ে খবর নেন। সে কি বেঁচে আছেন নাকি মারা গেছেন। আর কোনো খবর পান নি। স্বাধীনতার ৩৮ বছর পর জানতে পারেন, সে মারা গেছেন তাকে গণকবর দেওয়া হয়েছে।ভেদরগঞ্জ থানাতে।
Leave a Reply