1. banglamailnews72@gmail.com : banglamailnews : Zakir Khan
মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:১৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
# মাহমুদা সুলতানা একা # কালো_মানিক বেসিনে গরম পানি ঢালার পূর্বে সতর্ক হোন!! ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড ———————————– অভিনন্দন – শুভ জন্মদিন অবন্তী দেব সিঁথি ————————— — মেসবা খান ঢাকায় অবস্থানরত জামিয়া গহরপুর সিলেট’র ফুযালা ও প্রাক্তনদের আয়োজনে ❝মাহফিলে নূর❞ অনুষ্ঠিত —— হজ্জ ২০২৫ ও ওমরাহ বুকিং চলছে – – মক্কা হুজুর হজ্জ কাফেলা সাউথ বাংলা ট্যুরিজম ————————— প্যারাডাইজ ইন্টারন্যাশনাল হাই স্কুল রম্য কবিতা – অবশেষে হেডমাস্টার – – কলমে – – – – – চৈতালী দাসমজুমদার আলহামদুলিল্লাহ বহু প্রতিক্ষিত স্বপ্ন বাস্তবায়নের উদ্যোগ, মানব সেবার লক্ষ্য ……. প্রস্তাবিত “জেড ওয়েল মেডিকেল কলেজ ও হসপিটাল লি:”

# ব্ল্যাকমেইল (সব পর্ব একসাথে) – – – লেখা: আফরিন শোভা

  • আপডেট টাইম : শনিবার, ৩ আগস্ট, ২০২৪
  • ১২৯ বার
ফোনের কর্কশ রিংটোনে মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যায় রিদিমার। ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে দ্রুত গতিতে বলতে থাকে, “ম্যাডাম সুইসাইড কেইস, আর্জেন্ট আপনাকে আসতে হবে…”
– ওকে, এড্রেস টেক্সট করুন।
– জ্বি ম্যাডাম, গাড়ি ও পাঠিয়ে দিচ্ছি।
কল কেটে ঘড়ি দেখলো রাত সাড়ে তিনটা প্রায়। ঘন্টা খানেক হলো ঘুমিয়েছে মাত্র। কাঁচা ঘুমেই উঠতে হলো, ডিউটি বলে কথা। রিসেন্ট একটা জটিল কেইস সলভ করে টায়ার্ড হয়ে গিয়েছিল রিদিমা। ভেবেছিলো একটা মাস অন্তত ছুটি নিবে সে। কিন্তু তা আর বোধ হয় হলো না। ডিফেন্স জবের এই এক প্রবলেম!!
হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে দ্রুত রেডি হয়ে নিলো সে। ততক্ষণে থানা থেকে গাড়ি চলে ও এসেছে।
ক্রাইম স্পটে পৌঁছাতে পৌঁছাতে ভোর হয়ে গেলো। ভোরের আলো ফুটেছে সবে। আগে থেকেই স্পটে থাকা পুলিশ অফিসারেরা জায়গাটাকে সিল্ড করে রেখেছে। রিদিমা স্পটে পৌঁছে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে চারপাশটা। এরপর তার এসিসটেন্টকে জিগ্যেস করলেন,
– ডেডবডি হসপিটালে পাঠানো হয়েছে??
– জ্বি ম্যাডাম, আপনাকে কল দেয়ার কিছুক্ষণ পরেই পাঠিয়ে দিয়েছি।
– গুড, হসপিটাল থেকে কোন মেসেজ আসলে আমাকে ইনফর্ম করবেন।
– Certainly, Madam.
– ভিক্টিমের ব্যাপারে কি কি জানলেন?
– মেয়েটার নাম নিশা। বয়স ২৫ থেকে ৩০ এর মধ্যে। ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে সুইসাইড করেছে ম্যাডাম। প্রায় আড়াইটার দিকে বাড়ির দারোয়ান ভারী কিছু একটা পড়ার অনেক জোরে শব্দ পান। উনি টর্চ নিয়ে খুঁজতে খুঁজতে বাড়ির পেছনের এই জায়গাটায় উনার লাশ দেখতে পান। তারপর আমাদেরকে কল করেন।
– মেয়েটার পরিবারের সাথে কথা বলতে চাই।
পাশে দাঁড়ানো এক মহিলা তখন হাত দিয়ে সামনে দেখিয়ে দিলেন।
– ওই যে ওনার বোন আর বোন জামাই ওখানে দাঁড়ানো। উনারা যমজ বোন, একই রকম দেখতে।
রিদিমা সামনে এগিয়ে গেলো। ভিক্টিমের বোন তার স্বামীকে জড়িয়ে ধরে বুকফাটা আর্তনাদ করেই যাচ্ছেন। তার সুদর্শন স্বামী মাথায় হাত বুলিয়ে স্বান্তনা দিয়ে যাচ্ছে।
– আমি ইন্সপেক্টর রিদিমা আফরোজ, ক্রাইম ব্রাঞ্চ।
– হ্যালো ম্যাডাম, আমি রেদোয়ান হাসান, ভিক্টিম সম্পর্কে আমার শালী হয়। নাম নিশা। আর ইনি আমার স্ত্রী, দিশা।
– ওয়েল, নিশার সুইসাইড সম্পর্কে কি মনে হয় আপনাদের?? উনি কি ম্যারিড?? নাকি কোন রিলেশনে ছিলেন??
– না নিশা আনম্যারিড ছিল। আর কারো সাথে রিলেশনে ও ছিল না সম্ভবত। অন্তত আমরা তাই জানি।
– ম্যাডাম দিশার সাথে কথা বলতে চাচ্ছিলাম, যদিও এই মুহূর্তে কথা বলাটা খুবই কঠিন, কিন্তু তদন্তের স্বার্থে কিছু জানার ছিল।
দিশা কান্না থামাতে ই পারছেনা, হেঁচকি তুলছে বারবার। রেদোয়ান বাঁধা দিয়ে বললো,
– ম্যাডাম, দিশা এখন কথা বলার মত অবস্থাতে নেই। আপনি আমাকে জিগ্যেস করতে পারেন।
– ঠিক আছে। তাহলে আপনিই বলুন নিশা কি আপনাদের সাথে ই থাকতো?
– জ্বি ম্যাডাম গত দেড় দুই বছর ধরে ও আমাদের সাথেই থাকছে।
– কোন অস্বাভাবিক আচরণ কি ধরতে পেরেছিলেন?
– বেশ কিছু দিন ধরে ডিপ্রেসড ছিল, তবে এরকম একটা কিছু ঘটাবে তা ভুলেও ভাবতে পারিনি।
– উনাদের ফ্যামিলির আর কেউ আছেন?
– জ্বি আমার শ্বশুর শাশুড়ি কে খবর পাঠানো হয়েছে, আশা করি বিকেলের মধ্যেই উনারা চলে আসবেন।
– আপনারা বাসায় কে কে থাকেন?
– আমি, আমার স্ত্রী দিশা, দিশার যমজ বোন নিশা আর আমাদের দেড় বছরের মেয়ে। ব্যস এই কয়জনই।
– কোন কাজের লোক নেই আপনাদের?
– একজন ছুটা বুয়া আছেন, টুকটাক কাজ করে দিয়ে চলে যায়।
– ঘটনার সময় আপনারা কে কোথায় ছিলেন?
– আমি ব্যাংকে জব করি, তো কালকে অফিস ছুটির পর অনেক রাত পর্যন্ত আমাদের আর্জেন্ট মিটিং ছিল। আমি ১১ টার পরে বাসায় আসি। এত টায়ার্ড ছিলাম যে বিছানায় শোয়ার সাথে সাথে ই ঘুমিয়ে গেছি। দিশাও সারাদিন আমাদের বেবিকে নিয়ে বিজি থাকে, সে ও টায়ার্ড ছিল অনেক। ইনফ্যাক্ট আমরা দুজনই কাল রাতে জলদিই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। আর নিশা ওর রুম থেকেই বেশি একটা বেরোতো না। কিছু একটা নিয়ে ডিপ্রেসড ছিল খুব। তো গভীর রাতে দারোয়ান ইন্টারকমে ফোন দিয়ে জানালো আমাদের ফ্ল্যাটের এক মহিলা সুইসাইড করেছে। এরপর নিচে এসে দেখি নিশা পড়ে আছে। সত্যি এতটা শকড হয়েছিলাম কি বলবো!! এরকম কিছু একটা করবে ও এটা আমরা কখনো ভাবতেই পারিনি। আমার স্ত্রী দিশা বেশি হার্ট হয়েছে, ও স্বাভাবিক হতেই পারছে না।
রিদিমা তার এসিস্ট্যান্টকে ইশারায় বলে দারোয়ান কে জিগ্যেস করতে আর রেজিস্টার খাতা চেক করতে রেদোয়ান সাহেব কাল রাতে কয়টায় এসেছে।
– নিশা করতো টা কি?? পড়ালেখা, জব নাকি সারাদিন বাসায়ই থাকতো?
– কয়েক মাস হলো একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি তে এক্সিকিউটিভ হিসেবে জয়েন করেছে।
– অফিসের কোন ইস্যু তে কি সে ডিপ্রেসড ছিল??
– হতে পারে।
কান্না জড়ানো কন্ঠে এই প্রথম কথা বললো দিশা।
– অফিসে নাকি কাজের খুব প্রেশার ছিল কয়েক দিন ধরে। কি একটা প্রজেক্টের কাজে নাকি ভুল করেছিল। টাইমলি সাবমিট করতে পারেনি। এজন্য ওর বস অনেক রাগারাগি করেছিলেন, অফিস থেকে বের করে দিবেন এমনটাও বলেছিলেন। ও বলছিলো আমাকে সেদিন। এজন্যই হয়তো কয়েকদিন ধরে ডিপ্রেসড ছিল। ও যদি আমাকে আরো কিছু শেয়ার করতো তাহলে হয়তো আজকের এই দিনটা দেখা লাগতো না।
বলে আবারো হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল।
রিদিমা ক্রাইম স্পট ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো। এসিস্ট্যান্ট জিতু এসে পাশে দাঁড়ালো,
– এনি ক্লু?
– নো ম্যাডাম। রেজিস্টার চেক করেছি। রেদোয়ান সাহেব সত্যিই বলছেন। উনি রাত ১১.১৭ তে রেজিস্টারে সাইন করেছেন।
– হুম সুইসাইডের কারণ ডিপ্রেশন ও হতে পারে। তাকে হয়তো অফিসে খুব বাজে ভাবে অপমান করা হয়েছে যেটা উনি নিতে পারেননি। … উনার অফিসে ও ইনভেস্টিগেশন শুরু করুন। কি হয়েছিল সেখানে জানতে হবে। হয়তো ঘটনার সূত্রপাত সেখানেই।
(২)
– রেদোয়ান সাহেবের ফ্ল্যাট কোন ফ্লোরে?
– টপ ফ্লোরে ম্যাডাম।
দশতলা বিল্ডিং এর ছাদে ক্লু খোঁজার ফাঁকে জানতে চাইলো রিদিমা। সাথে বিল্ডিং এর কেয়ারটেকার ও আছে।
– ছাদে এত কাগজের টুকরো, চকলেটের প্যাকেট, রঙিন কাগজ…এমন নোংরা হয়ে আছে কেন??
– ম্যাডাম কালকে আমাদের ছয়তালার এক স্যারের বাচ্চার জন্মদিন ছিল। রাত আটটা পর্যন্ত অনুষ্ঠান হয়েছে ছাদে। এজন্য এত ময়লা। আমি এখুনি পরিষ্কার করে দিচ্ছি ম্যাডাম।
– খবরদার কিচ্ছুতে হাত দিবেন না একদম। যেটা যেমন আছে পড়ে থাকুক, ধরবেন না। জিতু, এই জায়গাটা ভালোমতো চেক করুন, যেগুলো তে সন্দেহ হবে সব ক্লু হিসেবে কালেক্ট করুন।
– জ্বি ম্যাডাম।
– কেয়ারটেকার সাহেব, কালকের পার্টিতে রেদোয়ান সাহেবের ফ্যামিলি কি এসেছিলো?
– জ্বি না ম্যাডাম, উনাদের বাসার কাউকে দেখি নাই।
আপনাদের ছাদের রেলিং গুলো সুন্দর। এত উঁচু উঁচু রেলিং ঢাকা শহরের ছাদ গুলোতে প্রায় দেখা যায় না বললেই চলে। এখনও অনেক ছাদে রেলিং থাকে না।
– জ্বি ম্যাডাম, আমাদের এপার্টমেন্টের সোসাইটি অনেক স্ট্রিক্ট। বাচ্চারা ছাদে খেলে তো তাই এক পূর্ন বয়স্ক মানুষের সমান করে রেলিং দেয়া হয়েছে।
রিদিমা রেলিং এর কাছে এসে দাঁড়ায়, একজন পূর্নবয়স্ক মানুষের বুক সমান রেলিং। ছোটবেলায় সে রেলিং ছাড়া ছাদে উঠতে অনেক ভয় পেতো। এই ছাদটা বাচ্চাদের জন্য নিঃসন্দেহে অনেক নিরাপদ।
রিদিমা টিম নিয়ে রেদোয়ান সাহেবের বাসায় এসে দেখে তার শ্বশুর শাশুড়ি সহ শ্বশুর বাড়ির আরো লোক চলে এসেছেন। দিশা তার মাকে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কাঁদছে। তার মাও চিৎকার করে বিলাপ করে কাঁদছে। এই হৃদয় বিদারক দৃশ্য রিদিমা সহ্য করতে না পেরে ঘরের অন্য কোণায় চলে গেলো। দেয়ালে অনেক গুলো ছবি টাঙানো।
কোনটায় দিশা আর তার স্বামীর কাপল ছবি, কোনটায় দুই যমজ বোনের হাস্যোজ্জ্বল ছবি, আবার তাদের একমাত্র কন্যাকে নিয়েও তোলা ছবি। রিদিমা প্রতিটি ছবি আগ্রহ নিয়ে দেখছে, বিশেষ করে দিশা আর রেদোয়ানের কাপল পিকচার গুলি। এতটা সুদর্শন আর বেশ লম্বা ফিটফাট একজন পুরুষ।
– এটা আমাদের হানিমুনের ছবি। বান্দরবানে।
পেছন থেকে রেদোয়ান বলে উঠলো। হঠাৎ করে রিদিমা অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। হেসে বলে উঠলো,
– সবাই হানিমুনে কক্সবাজার যায় আপনারা বান্দরবান কেন?
– কারণ দিশা সমুদ্র ভয় পায়, সাঁতার জানে না তো!!
– আপনার যা হাইট, আপনার তো ডিফেন্সে জব করা উচিত।
– সবাই তাই বলে। কিন্তু ডিফেন্সে জব করলে তো বউয়ের থেকে দূরে থাকতে হবে, তাই আর ওই পথে যাওয়া হয়নি।
– বাব্বাহ, এত কেয়ার করেন বউকে?? লাভ ম্যারেজ নাকি??
– একদম। চার বছরের রিলেশন ছিল আমাদের। প্রণয় থেকে পরিণয়।
আরো কিছু জিগ্যেস করতে যাবে এমন সময় ভেতর থেকে এক পুলিশ সদস্য রিদিমা কে ডেকে বলে,
– ম্যাডাম, বালিশের তলা থেকে একটা সুইসাইড নোট পেয়েছি।
রিদিমা জলদি হাতে নিয়ে পড়া শুরু করে,
“প্রিয় বাবা – মা,
আমি তোমাদের মনের মত আদর্শ সন্তান হতে পারিনি। সবকিছু তে আমি ব্যর্থ। মানসিক যন্ত্রনা আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। আমি আর নিতে পারছিনা। সব কিছু থেকে মুক্তি নিয়ে গেলাম। আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়।
ইতি
তোমাদের হতভাগী কন্যা
নিশা”
চিঠিটা নিশার বাবা মাকে দেখানো হলো। তারা কান্নায় ভেঙে পড়লো। কিন্তু তারা নিশ্চিত করলেন এই হ্যান্ড রাইটিং নিশার ই। বোন দিশাও কনফার্ম করলেন এই হাতের লেখা তার বোন নিশারই।
কি এমন ডিপ্রেশন ছিল মেয়েটার যে এত বড় একটা ডিসিশন নিতে হলো??
নিশার অফিসে পাঠানো হয়েছিল যে টিম কে তাদের ফোন দিলো রিদিমা।
– কোন ক্লু পেলেন?
– জ্বি ম্যাডাম,অনেক ইন্টারেস্টিং কিছু ক্লু পেয়েছি। মোর দ্যান আওয়ার ইমাজিনেশন।
– এক্সপ্লেইন ..
– ম্যাডাম, মিস নিশার বস সেদিন প্রজেক্ট রিপোর্ট নিয়ে অনেক বাজে কথা বলেছেন উনাকে। চাকরি থেকে বের করে দিবেন বলে সবার সামনে অনেক অপমান করেছেন। সেদিন খুব কান্নাকাটি ও করেছিল মিস নিশা। এটা অফিসের ৯০% মানুষই স্বীকার করেছেন। আর এর থেকে ও বড় একটা ইনফরমেশন আছে। ওইটাই মিস নিশার ডিপ্রেশনের কারণ হবে বলে আমার ১০০% ধারণা ম্যাডাম। ম্যাটার টা এত সিরিয়াস যে ….
– ভাই কি জি বাংলা বা স্টার জলসার সিরিয়াল দেখেন??
– জ্বি ম্যাডাম?? জ্বি না ম্যাডাম!!
– তাইলে এতো প্যাঁচাচ্ছেন ক্যান রে ভাই?? আপনারে পাঠাইছি ই তো ইনফরমেশন কালেক্ট করার জন্য। তা না আপনি ইন্ডিয়ান সিরিয়ালের মতো ত্যানা পেঁচায়েই যাচ্ছেন। ঝেড়ে কাশতে পারেন না!!!
ধমক খেয়ে বেচারা পুলিশ সদস্য থতমত খেয়ে গেলো।
– সরি ম্যাডাম। ইয়ে মানে ম্যাটার হচ্ছে, গত মাসে মিস নিশা তার এক অফিস কলিগ দ্বারা সেক্সুয়াল হ্যারেসড হয়েছে, সেটা সে তার বসকে জানানোর পর থেকেই ওই লোকটা নাকি থ্রেট দিচ্ছিলো।
– হুম, মারাত্মক ব্যাপার। বস আর চামচা দুইটা কেই উঠান। ডিরেক্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো তে নিয়ে আসুন। তারপর দেখছি দুটোকে আমি!!
বাচ্চার কান্নার আওয়াজে ফিরে তাকালো রিদিমা। একটানা কাঁদছে দিশা রেদোয়ান দম্পতির বাচ্চাটা। রিদিমা কোলে নিতে গেলে আসলো না। পেছন থেকে দিশার মা বলে উঠলেন,
– আমার নাতনী টা সবার কোলে যায় না রে মা। খালি মাম্মাম আর রহিমা খালা, এছাড়া আর কারো কোলে যায় না।
– রহিমা খালা কে?
– এই বাসার বুয়া। সে বাচ্চাটা হওয়ার আগে থেকেই দিশার দেখাশোনা করতো আর বাচ্চা টা হওয়ার পর থেকেই তার কোলেই তো বড় হতে লাগলো। আমার নাতনী আর কারো কোলে যায় না।
– কিন্তু আমি তো সকাল থেকে এরকম কাউকে দেখিনি। যতদূর জানি এ বাসায় একটা ছুটা বুয়া ছাড়া আর কোন কাজের লোক নেই।
– ছুটা বুয়া?? রহিমা তো এই বাসাতেই থাকতো। গতবার আসার পর ও তো দেখলাম। কিন্তু আজকে তো দেখতেছি না।
বাচ্চাটাকে তার বাবা এসে কোলে করে নিয়ে গেলো। দিশাকে ঘুমের ওষুধ দেয়া হয়েছে, বোনের মৃত্যু সে কোনভাবেই মেনে নিতে পারছে না।
রিদিমা ব্যস্ত হয়ে গেলো নিশার বাবা মায়ের স্টেটমেন্ট নিতে। সে তার ফোনেই রেকর্ড করে চলেছে,
– আপনাদের মেয়ে দিশা নিশার কথা বলুন আমাদের। দুই যমজ বোনের মধ্যে তো অনেক মিল তাই না?? যেমনটা সাধারণত হয়।
– কোন মিলই নাই আমার দুই মেয়ের মধ্যে। (বাবা বলতে লাগলেন) একজন আগুন আরেকজন পানি। একজনের পাহাড় ভালো লাগে অন্য জনের সমুদ্র। একজনের রাত ভালো লাগে, আরেকজনের দিন। একজন উত্তর মেরু আরেকজন দক্ষিণ মেরু।
– তার মানে দুই বোনের মধ্যে লাগালাগি ছিল?
– না এরকম কোন কিছু হবার সম্ভাবনা দেখিনা, দিশা লক্ষ্মী একটা মেয়ে, আর নিশা যেখানে যাবে একটা ঝামেলা বাঁধাবেই। আর দিশা সেটা সমাধানের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করবে। নিশা প্রতিশোধ পরায়ণ আর দিশা ক্ষমাশীল। একবার কিশোরি বেলায় নিশা রাগের মাথায় দিশাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় সিঁড়ি থেকে। পড়ে গিয়ে মেয়েটার একটা দাঁত ভেঙে যায়। কিন্তু ও তবুও বোনকে মাফ করে দেয়। কিন্তু নিশা মাফ করতে পারে না। ও খুবই জিদ্দি।
– নিশা কি এর আগেও এরকম সুইসাইড এটেম্পট নিয়েছিল? নাকি এবারই প্রথম?
– কয়েক বছর আগে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছিল নিশা। রাগের মাথায় বাম হাতের শিরা কেটে ফেলেছিলো। কোন একটা ছেলেকে নাকি ভালোবেসে ধোঁকা খেয়েছিল। আর এডিক্টেড তো ছিলোই!!
– এডিক্টেড মানে? ড্রাগ এডিক্টেড?
– হ্যাঁ রে মা। রিহ্যাবেও ছিল কয়েক বছর। এটার জন্য ও সে দিশাকে দায়ী করে। ভাবে দিশাই ওকে জোর করে রিহ্যাবে পাঠিয়েছে। যেখানে দিশার কোন হাতই নেই। আমরা নিরুপায় হয়ে বাধ্য হয়ে ওকে রিহ্যাবে পাঠাই। আমাদের জীবনটা ও নরক বানিয়ে দিয়েছিলো। মেয়েটা এখন নেই বলতেও কষ্ট হচ্ছে, কি করবো বাবা তো!! সবাই বলতো আপনার তো ছেলে নেই, আপনার এত জায়গা সম্পত্তি কি করবেন? আমি বলতাম ছেলে নেই তো কি হয়েছে? আমার দুইটা হীরের টুকরো মেয়ে আছে না!! ওরা দেইখো সেই যোগ্য হয়ে উঠবে। দিশা ঠিকই আমার আশা পূরণ করলো নিশা নয়। ক্লাসে সবসময় ফার্স্ট হতো দিশা। বামহাতি হয়েও সবচেয়ে সুন্দর হাতের লেখা ছিল ওর।
নিশার ও ভালো গুণ ছিল। সে সুইমিং এ খুব ভালো ছিল। কিন্তু ড্রাগ এডিকশন তার সব মেধা নষ্ট করে দিলো।
– আর আপনার মেয়ে জামাই রেদোয়ান? সে কেমন?
– রেদোয়ান নম্র ভদ্র একটা ছেলে। দিশা রেদোয়ান দুজন দুজনকে ভালোবেসে বিয়ে করেছে। ছেলেটা অতটা ধনী পরিবারের নয় কিন্তু ভদ্র মার্জিত। ইনকাম কম কিন্তু তবুও সৎ। তার এই সততা দেখেই মুগ্ধ হয়েছিলাম। নিশার জন্য ও এরকম ভালো একটা ছেলে খুঁজছিলাম কিন্তু ওর নেশাগ্রস্ত হওয়ার কথা শুনে আর ওর রূঢ় ব্যবহারে কোন ভদ্র পরিবারের ছেলে রাজি হয়নি। এটার জন্য ও সে দিশাকে দায়ী করে। ও বেচারি বোনের জন্য কেঁদে কেঁদে অস্থির। কিন্তু তবুও নিশার মন মানে না। সে তো রেদোয়ান কে দু চক্ষে সহ্য করতে পারতো না। কিন্তু যখন রাগের মাথায় ঘর থেকে বের করে দিলাম, তখন সেই বোন দুলাভাই ই আশ্রয় দিলো, জব খুঁজে দিলো। তবুও মেয়েটা রাগের বশে নিজের জীবনটা ই কেড়ে নিলো!!
বলে চশমা খুলে চোখ মুছতে লাগলেন।
সেদিনের মতো ওই বিল্ডিং এর সবার স্টেটমেন্ট নিয়ে বিদায় নিল রিদিমা টিম। এরপর গেল ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো তে। সেখানে গিয়ে সাসপেক্ট দের স্টেটমেন্ট নিয়ে বাসায় চলে গেল রিদিমা। মাথাটা আর কাজ করছে না। বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে পরে না হয় বসবে আবার।
(৩)
– জিতু, পোস্টমর্টেম রিপোর্ট আসেনি এখনো?
– ম্যাডাম আমি ফরেনসিকে কথা বলেছিলাম। উনার জানালেন খুব বাজে ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বডিটার। দশতলার ছাদ থেকে পড়ে শরীরের হাড়গুলো প্রায় গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে গেছে। একটু টাইম লাগবে ওভারঅল রিপোর্ট আসতে।
– ওকে, রিপোর্ট আসলে আমাকে ফরওয়ার্ড করে দিবেন।
– শিওর ম্যাডাম। ম্যাডাম, একটা কথা ছিল। ভিক্টিমের মা খুব কান্নাকাটি করলেন সেদিন। বললেন তাদের মেয়ের বডি যেন আমরা পোস্টমর্টেম না করি, তারা খুবই ধার্মিক পরিবার। তার মেয়ের ডেডবডি যেন কাটাকুটি না করেই ফেরত দেই। জলদি তারা দাফন করতে চাচ্ছেন। আমি বলেছি, সরি, এটা তো এখন পুলিশ কেইস মানে অপঘাতে মৃত্যু তাই পোস্টমর্টেম ছাড়া দেয়া যাবে না। ঠিক বলেছিনা ম্যাডাম??
– গুড, প্রফেশনালি আনসারড। বাই দ্য ওয়ে, মিস নিশার সেলফোন টা কিন্তু আমরা পাইনি। সব জিনিস গুলি চেক করলাম বাট সেলফোন ইজ মিসিং।
– জ্বি ম্যাডাম, উনার রুম তন্নতন্ন করে খুঁজেও সেলফোন টা পাইনি। সেলফোন টা পেলে কেইস টা সলভ করা ইজি হয়ে যেতো। নিশা কি নিয়ে এতটা ডিপ্রেসড ছিলেন তা ফাইন্ড আউট করা যেতো।
– হুম এক কাজ করুন, সাইবার ইন্টেলিজেন্স ফোর্সকে নম্বর টা সেন্ড করে লোকেশন ট্রেস করতে বলুন। তারপর আপডেট আমাকে জানান।
– ম্যাডাম কি কোথাও যাচ্ছেন?
– হ্যাঁ, আমার বান্ধবীর মেয়ের প্রথম জন্মদিন আজকে। ইনভাইট করলো। তাই শপিং এ যাবো কিছু গিফট কেনার জন্য। আর্জেন্ট কিছু হলে ইনফরম করবেন সমস্যা নেই।
গিফট শপে ঢুকে বাচ্চাদের খেলনা দেখতে লাগলো রিদিমা। একটা বড় ক্যান্ডি ডল ওর খুব পছন্দ হয়ে গেলো। কারণ ছোট বেলায় ওর ও ক্যান্ডি ডলের খুব শখ ছিল। পুতুল কেনা হয়ে গেলে আরো কিছু টুকটাক কেনাকাটা করে তিনতলার রেলিং ধরে ফোনে কথা বলছে রিদিমা। পাশেই এস্কেলেটর। ছুটির দিন হওয়ায় তীব্র ভীড়। কয়েকজনের ধাক্কায় হাত থেকে পুতুল টা তিনতলা থেকে শপিংমলের গ্রাউন্ড ফ্লোরে পড়ে গেলো। রিদিমা ফোন কানে থেকে নামিয়ে একটানা পড়ে যাওয়া পুতুলটার দিকে তাকিয়ে থাকলো। মিনিট পাঁচেক পর হুঁশ ফিরলে তার এসিস্ট্যান্ট কে ফোন দিলো,
– জিতু, নিশার ষ্পটের ডেডবডির ছবিগুলো পাঠান তো আবার।
এত ইম্পরট্যান্ট একটা জিনিস কিভাবে মিস করে গেলো ভাবতেই রিদিমার নিজের উপর খুব রাগ হলো।
(৪)
আগেরদিন ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো তে স্টেটমেন্ট নেয়ার ভিডিও ফুটেজ অন করে আবার রিপিট নোট নিচ্ছে রিদিমা। সেখানে প্রথমে নিশার বস মিস্টার হেদায়েতের সাথে কথোপকথন হচ্ছে।
– শুনেছি কয়েকদিন আগে আপনি মিস নিশাকে খুব বাজে ভাষায় আক্রমণ করেছিলেন সবার সামনে, ইজ ইট ট্রু??
মিস্টার হেদায়েত অপ্রস্তুত হয়ে গেলেন।
– না মানে ম্যাডাম, আমার অনেক ইম্পরট্যান্ট একটা প্রজেক্ট, কোটি টাকার ইনভেস্টমেন্ট, মিস নিশা ডিলে করার কারণে হাতছাড়া হয়ে গেলো, স্বভাবতই মাথা গরম হয়ে ছিল সেদিন, আই জাস্ট লস্ট মাই টেম্পার। ম্যাডাম বিশ্বাস করুন ওই পরিস্থিতিতে থাকলে আপনিও সেইম কাজ করতেন।
– আপনি তাকে চাকরিচ্যুত করার হুমকি ও দিয়েছিলেন সেদিন, রাইট??
– বললাম তো ম্যাডাম, মাথা গরম ছিল সেদিন, কি বলতে কি বলেছি..!!
– এবং আপনার সেই কটুক্তি মেয়েটি নিতে পারেনি, তার দিন কয়েক পরেই সে সুইসাইড করতে বাধ্য হয়, কতটা ডিপ্রেসড ছিল মেয়েটা, ভাবুন একবার!!
হেদায়েত সাহেব মাথা নিচু করে থাকেন।
এবার দ্বিতীয় সাসপেক্টের পালা।
– তো মিস্টার মোশাররফ, পারভেজ মোশাররফ, তাই না??
– জ্বি না, ম্যাডাম, পলাশ মোশাররফ।
– ওই একই হলো। তা আপনি এত ঘামছেন কেন? নার্ভাস??
– না না না ম্যাডাম, আমি ঠিক আছি।
– ইনভেস্টিগেশন তো শুরুই করিনি এখনও তার আগেই ঘেমে ভিজে গেলে চলবে?? ঘাম মুছুন, অনেক কিছু জানার আছে আমাদের।
বলে টিস্যু বক্স এগিয়ে দিলো পলাশের সামনে। পলাশ তড়িঘড়ি করে চার পাঁচটা টিস্যু নিয়ে মুছতে লাগলো।
– প্রথম প্রশ্ন, আপনি নিশাকে বিরক্ত করতেন কেন??
– জ্বি না ম্যাডাম, আমি নিশা ম্যাডাম কে অনেক সম্মান করতাম। বিরক্ত করার প্রশ্ন ই আসে না।
– টোটালি রং। আপনার বিরুদ্ধে সেক্সুয়াল হ্যারেসম্যান্টের অভিযোগ আনা হয়েছে এবং আপনার অফিসের প্রায় সবাই আপনার বিরুদ্ধে স্টেটমেন্ট দিয়েছে।
– ইয়ে মানে ম্যাডাম, নিশা ম্যাডাম কে আমার ভালো লাগতো অনেক। উনাকে একদিন একা পেয়ে প্রপোজড করেছিলাম, উনি এটাকে ভুল বুঝে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। আমি নির্দোষ ম্যাডাম।
– ওকে, ফাইন। আমি যতটুকু জেনেছি আপনার সম্পর্কে, আপনি ম্যারিড এবং আপনার সাড়ে তিন বছরের একটা বেবি ও আছে, রাইট??
পলাশ মাথা নিচু করে থাকে।
– কতটা ঘৃণ্য চরিত্রের মানুষ আপনারা!! ঘরে বউ বাচ্চা থাকা সত্ত্বেও বাইরে মেয়েদের প্রপোজ করে বেড়ান আবার বুক ফুলিয়ে দাবিও করেন আমি নির্দোষ!! বাহ দারুণ!! না জানি কতটা মেন্টালি টর্চারে রেখে ছিলেন মিস নিশাকে যে মেয়েটা সুইসাইড করতে বাধ্য হয়েছে। যেহেতু আপনার বিরুদ্ধে আমাদের কাছে স্ট্রং কোনো প্রমাণ নেই তাই আজকের মতো ছেড়ে দিলাম কিন্তু ভুলেও শহর ছেড়ে পালানোর কথা মাথাতেও আনবেন না। আন্ডারসটুড??
(৫)
পরদিন সন্ধ্যায় ইনভেস্টিগেশনে গেলে রেদোয়ান আর দিশাকে পাওয়া গেলো না। নাতনী কে কোলে নিয়ে দিশার মা বললেন,
– দিশা কে নিয়ে রেদোয়ান বাইরে ঘুরতে গেছে। বলেছে পুলিশ আসলে তার পার্সোনাল নাম্বারে যোগাযোগ করতে।
হঠাৎ বাচ্চাটা চিৎকার করে কেঁদে উঠলো, “বাতিস তুতু, বাতিস তুতু”
– ওকে নেয়নি?
– জ্বর তো, তাই দেইনি, আর নাতনী টাও অনেক দিন পর আমাকে পেয়ে কোল থেকে নামতেই চায়না, কান্নাকাটি করে, তাই আর দেইনি।
– কিন্তু বাচ্চাটা একটানা কেঁদেই যাচ্ছে, ও চাইছে টা কি?
– কি জানি রে মা, ওর এসব আধো আধো বোল আমি বুঝি না। ওর মা আর রহিমা খালাই শুধু এসব বোঝে।
– এই রহিমা খালাকে কোথায় পাওয়া যাবে বলুন তো? থাকে কোথায় সে? একবার ও দেখলাম না। চাকরি ছেড়ে দিয়েছে নাকি?
– আমি তো বলতে পারবো না রে মা। গতবার ও তো দেখলাম। তবে কোথায় থাকে এটা হয়তো বাড়ির দারোয়ান বলতে পারবে। তার কাছে বাড়ির সব বুয়াদের ঠিকানা আর ফোন নম্বর থাকে।
– রিশাদ, দেখুন তো ডিটেইলস পান কিনা! আমি এদিকে রেদোয়ান সাহেবের সাথে কথা বলছি।
ফোন দেয়ার প্রায় সাথে সাথে ই রেদোয়ান ফোন রিসিভ করলো। জানতে চাইলে বললো,
– দিশা মানসিক ভাবে একেবারেই ভেঙে পড়েছে, তাই ভাবলাম ওকে নিয়ে বাইরে থেকে ঘুরে গেলে ওর মনটাও ফ্রেশ হবে কিন্তু বাইরে এসে হঠাৎ ও অসুস্থ হয়ে পড়েছে, হসপিটালে নিয়ে যাচ্ছি।
দিশাকে হসপিটালে ভর্তি করানো হলো। রিদিমা টিম নিয়ে ছুটে গেলো হসপিটালে।
– ইজ এভরিথিং ওকে ডক্টর?
– নো নট এট অল…ফুড পয়জনিং। আপাতত কয়েকটা দিন হাসপাতালেই থাকতে হবে।
– ওকে প্লিজ টাইম টু টাইম আপডেট জানাবেন আমাকে।
– শিওর।
(৬)
– ম্যাডাম, সাইবার ইন্টিলিজেন্স টিম মিস নিশার ফোন টা ট্রেস করতে পেরেছে, প্রায় অাধঘন্টার মতো অন ছিল। তাতেই কাজ হয়ে গেছে। চোরও ধরা পড়েছে। ব্যুরো তে আনা হচ্ছে তাকে।
– ওকে, আনা হলে ইনফর্ম মি।
ব্যুরো তে চোরকে আনা হলে রিদিমা অবাক হয়ে গেলো।
– আরে এতো নিশার অফিসের পিয়ন বাবলু। তার মানে ফোনটা অফিস থেকে চুরি হয়েছে!! আর আমরা সারা বাড়ি তন্নতন্ন করে খুঁজলাম…. তারপর বাবলু সাহেব, এভাবেই সিনিয়রদের ফোন গায়েব করে দাও!! কোম্পানি কি এজন্যই বেতন দেয় তোমাকে?? কতজনের ফোন চুরি করেছো এভাবে??
– বিশ্বাস করেন ম্যাডাম, আঁই জীবনে ও কারো হোন চুরি হরি ন, এই এক্কানা পরথম।
– তো নিশা ম্যাডামের সাথে তোমার কি এমন শত্রুতা যে তারটাই বেছে বেছে চুরি করতে হলো।
বাবলু চুপ করে থাকে, কিছু বলে না।
– দুই চারটা না লাগালে মুখ থেকে বের হবে না কিছু।
বলে এসিসটেন্ট কে ইশারা করে রিদিমা।
উত্তম মধ্যম দেয়ার পর কাঁদতে কাঁদতে বাবলু বলে,
– আঁই কিছু জানি ন, ছার কইচ্ছে।
– কোন স্যার?? পলাশ স্যার??
– জে না, বড় ছার।
– বড় স্যারের সাথে নিশা ম্যাডামের কি এমন শত্রুতা যে অফিস পিয়ন দ্বারা তার ফোন চুরি করানো হলো?
এসিস্ট্যান্ট রিশাদ বললো, “ম্যাডাম, মিস্টার হেদায়েত কে তাহলে জিজ্ঞাসাবাদ করি? “
– না পরে, তার আগে মোবাইল টা ঘেঁটে ক্লু বের করার চেষ্টা করুন। বলা তো যায় না, কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে না আবার কেউটে সাপ বের হয়ে যায়!!
(৭ )
দিন দুয়েক পর, কিছু তথ্য নেয়ার জন্য সন্ধ্যায় রিদিমা টিম নিশার বাসায় আসার পর দেখতে পায় তারা পারিবারিক কোন সিরিয়াস মিটিং করছে।
– ম্যাডাম দিশা, শরীর কেমন এখন?
– ফিলিং বেটার, থ্যাংকস।
এরপর দিশার বাবা মায়ের দিকে ঘুরে বলতে লাগলো,
– আপনাদের মেয়ে মিস নিশার চুরি যাওয়া ফোনটি আমরা উদ্ধার করেছি, সেটা জানাতে আর কিছু ইনফরমেশন কালেক্ট করতে আমাদের এখানে আসা। কিন্তু আপনারা মনে হচ্ছে কোন ইম্পরট্যান্ট কিছু নিয়ে ব্যস্ত।
– হ্যাঁ, ইম্পরট্যান্ট ই বটে। উনি আমাদের পারিবারিক ল ইয়ার। আমার সব জায়গা সম্পত্তি আমার বড় মেয়ে দিশার নামে দিয়েছি। ওইটা নিয়েই কাজ করছিলাম আর কি!!
দিশার বাবা বললেন।
– এটা কেমন কথা আন্কেল!! আমি সত্যিই খুব অবাক হচ্ছি আপনাদের কাজকর্ম দেখে। আপনার মেয়ে নিশা মারা গেছে এক সপ্তাহ ও হয়নি। আর এর মধ্যে ই আপনারা জায়গা সম্পত্তি ভাগ বাটোয়ারা করছেন!! কেমন বিবেক আপনাদের!!
– তুমি হয়তো ঠিকই বলেছো মা, কিন্তু এটা আমাদের আজকালকার ডিসিশন না। কয়েকমাস ধরেই আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি। এই মাসেই ফাইনাল হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখনো ফাইনাল হয়নি, কিছু পরিবর্তন হবে।
– কিছু মনে না করলে আমি কি দলিলটা দেখতে পারি??
– অবশ্যই।
– এই দলিলটা যখন রেডি করছিলেন তখন নিশা জীবিত ছিলেন তাই না?? অথচ তাকে সম্পত্তির মাত্র থারটি পারসেন্ট দেয়া হচ্ছে!! আপনার তো দুই মেয়ে, সমান করে দেয়া উচিত ছিল না আপনার?
– আসলে কি বলবো মা, লজ্জার ব্যাপার। আমি তো পুরো সম্পত্তি ই দিশার নামে করে দিচ্ছিলাম। নিশাকে আমরা কিছু ই দিতে চাইনি। হ্যাঁ, নিশা আমারই মেয়ে কিন্তু ওর উচ্ছৃঙ্খল জীবন যাপনের জন্য ওকে ওয়ারিশ নামা থেকে বাদ দিয়েছি। জানি এটা আইনের বিপরীতে, কিন্তু আমি কখোনোই চাইনি আমার তিল তিল করে কষ্ট জমানো সম্পদ ও নেশা করে নষ্ট করুক। তাই আমি পুরোটা দিশার নামে দিয়েছি কিন্তু ও ঘোর আপত্তি জানায়, ও চায় ওর বোনেরও সমান অংশীদারিত্ব থাকুক। তাই আমি ওকে সমান না হোক, তিরিশ পার্সেন্ট দিয়ে অংশীদার করেছিলাম। আর এখন তো নিশা আমাদের মাঝে নেই। তাই উকিল ডেকে দলিলটা সংশোধন করে পুরোটা দিশার নামে দিচ্ছি।
– কিছু মনে করবেন না আন্কেল, আপনি মুরুব্বি মানুষ, আমি আপনার সাথে কথা বাড়াবো না, কিন্তু আমার মনে হয় আপনাদের প্যারেন্টিং এ ভুল আছে। হয়তো নিশা এসব জানার পরই চরম ডিপ্রেশনে চলে গেছে, আপনারা খেয়ালই রাখেন নি। আপনারা হয়তো এটাও জানেন না যে আপনাদের মেয়ে নিশা ঘরে বাইরে কতটা মেন্টালি প্রেশারে ছিল।
রিদিমা আরো কিছু বলতে যাবে, তখনই দিশার বাচ্চাটা চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করে, “বাতিস তুতু, বাতিস তুতু”
বলে হাত পা ছুঁড়াছুঁড়ি করতে থাকে। কারো কোলে সে থাকে না, দিশা ওকে থামাতে আপ্রাণ চেষ্টা করছে, কিছুতেই থামাতে পারছে না। ওর বাবা কাছে যেতেই আরো জোরে কান্না করতে থাকে। বাবা মা মিলেও বাচ্চাটাকে শান্ত করতে পারছে না।
– কি বলছে ও?? কি চাইছে??
– জানি না, ম্যাডাম। বাচ্চাটা নতুন নতুন শব্দ শিখেছে কয়েকটা, ওর কথা না বুঝলেই এমন জিদ দেখায়। এত জিদ্দি হয়েছে না মেয়েটা।
– আমি আগেই বলছিলাম তোর মেয়েটার উপর বদনজর লাগছে, সবার কোলে দিস না। এখন দেখ খালি ভয় পায়!! মুরুব্বিদের কথা তো শুনবা না।
– একটু দেখো না আম্মা থামাতে পারো কিনা, পুরো নানার মত জিদ্দি হয়েছে।
– তোর মেয়েকে থামানো আমার পক্ষে সম্ভব?? একমাত্র রহিমা খালার কোলেই ও চুপচাপ বসে থাকে। কি যে জাদু জানে মহিলাটা!!
“রহিমা খালা.. ” বলে বিড়বিড় করতে করতে বাইরে চলে আসে রিদিমা।
-রিশাদ, এই রহিমা খালাকে না খুঁজতে বলেছিলাম। কাজ কদ্দুর?
– দারোয়ানের কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে লোক পাঠিয়েছিলাম কিন্তু তারা এই নামে কাউকে পায়নি। আমরা ফোন নম্বর ট্রেস করার চেষ্টা করছি ম্যাডাম।
– ভালো কথা, নিশার ফোন ঘেঁটে কিছু পেয়েছেন? কিছু সাসপেশিয়াস?
– জ্বি ম্যাডাম, অনেক গুলো হুমকি ধমকিওয়ালা মেসেজ, যার প্রায় সবগুলোই পলাশ মোশাররফের নম্বর থেকে এসেছে।
– হুম, আমাদের একবার ব্যুরো যাওয়া লাগবে।
ব্যুরোতে বসে রিদিমা তার টিম নিয়ে মেসেজ গুলো চেক করতে লাগলো।
– নাজনীন, এসব মেসেজ ছাড়া আর কিছু কি পেয়েছো?
– ম্যাডাম, পুরো মোবাইল ঘেঁটে এসব হুমকি ভরা মেসেজ ছাড়া তেমন কিছু পাইনি। তবে একটা হিডেন ফাইল আছে পাসওয়ার্ড প্রটেক্টেড। জিতু ভাইয়া আনলক করার ট্রাই করছে।
– বেশিরভাগ মেসেজ ই “দেখে নেব” “আমাকে থামাতে পারবেন না” “আমার কথা না মানলে বলে দেবো সবাইকে ” এই টাইপের। আবার কিছু মেসেজে টাকা চাওয়ার ও ইঙ্গিত আছে। “আর দুই বাড়িয়ে দেন ম্যাডাম, এত অল্প তে আর মুখ বন্ধ রাখতে পারছি না।” প্রায় প্রতিদিন ই এই ধরণের মেসেজ পাঠিয়েছে পলাশ নিশাকে। কিছু একটা নিয়ে ব্ল্যাক মেইল করছিলো হয়তো। কিন্তু সেই কিছু একটা কি?
তড়িঘড়ি করে রুমে ঢুকলো রিশাদ।
– ম্যাডাম, অফিসের আশেপাশে আমাদের কিছু সোর্স লাগিয়েছিলাম। কিছু ইনফরমেশন হাতে এসেছে। আশেপাশের এলাকার সিসিটিভির ফুটেজ ও এনেছি। এইযে, এই লোকটাকে বেশ কিছু দিন ধরেই অফিসের আশেপাশে দেখা যাচ্ছিলো। এই দুইটা স্ট্রিট ভিউ দেখুন ম্যাডাম, লোকটা নিশার পিছু নিচ্ছে। আমাদের সোর্স গোপন সূত্র থেকে জানিয়েছে, নিশা সুইসাইডের সপ্তাহ খানেক আগে তার উপর এই লোকটা হামলা চালায়। এলাকার মানুষ ধাওয়া দিলে লোকটা পালিয়ে যায়। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে এলাকাবাসী লোকটা কে শনাক্ত করে। আজকে বিকেলে পুলিশের হাতে সে ধরা পড়ে। তাকে এখানে নিয়ে আসা হচ্ছে ম্যাডাম।
– গুড জব রিশাদ, আপনার দায়িত্ববোধের প্রশংসা করতে হয়! সাসপেক্ট সবগুলো কে হাজির করুন, অনেক প্রশ্নের জবাব চাই আমার।
(৮)
– জনাব হেদায়েত সাহেব, আপনি একজন এতবড় কোম্পানির এমডি হয়ে সামান্য একজন কর্মচারীর মোবাইল কেন চুরি করলেন?
– কি হাস্যকর কথা বলছেন ম্যাডাম, আমি কেন আমার কর্মচারীদের মোবাইল চুরি করবো বলুন তো? আমার কি ফোনের অভাব!!
– এক্সেক্টলি এই কথাটাই জানতে চাচ্ছি আমরা। কি এমন ব্যাপার হলো যে নিশার ফোন টা আপনি চুরি করালেন?? এখন প্লিজ বলবেন না আপনি এই ব্যাপারে কিছুই জানেন না। আপনার অফিসের পিয়ন বাবলু আমাদেরকে স্টেটমেন্ট দিয়েছে এই বলে যে, আপনার নির্দেশেই সে নিশার ফোনটা চুরি করে।
– ও বাবলুর কথা বলছেন? ও শালা একটা মাতাল, গাঁজাখোর। ওকে চাকরিচ্যুত করেছি বলে ও আমার নামে যা তা বলছে। আর এর আগেও অনেক বার সে অফিসের অনেকের ফোন চুরি করেছে। এ জন্যই তো বের করে দিয়েছি। তাই তো এসব আজেবাজে কথা ছড়াচ্ছে আমার নামে বদনাম করার জন্য।
– আচ্ছা তাই নাকি!! তবে এই লোকটাকে দেখুন। মাহমুদ, একজন ভাড়াটে খুনি, যাকে আপনি আট লক্ষ টাকায় হায়ার করেছেন নিশাকে মারার জন্য। একজন সামান্য বেতনের কর্মচারী কে খুন করার জন্য আট লক্ষ টাকায় খুনি ভাড়া করার কারণটা কি হতে পারে?? আপনার কোটি টাকার প্রজেক্ট লস নাকি অন্য কিছু??
হেদায়েত মাথা নিচু করে থাকে, কোন প্রতিউত্তর করে না।
– নাকি কোন অ-শ্লীল ভিডিও?
হেদায়েত এবার ঘামতে শুরু করে।
– আহা, নার্ভাস হবেন না। ওকে ফাইন, আমিই বলছি ব্যাপারটা কি হয়েছে। নিশার মোবাইল ঘেঁটে আমরা একটা পাসওয়ার্ড প্রটেক্টেড ফাইল পাই, যেটা আনলক করার পর আমরা সেখানে একটা ভিডিও দেখতে পাই। যেখানে আপনাদের মানে নিশা আর আপনার কিছু আপত্তিকর মুহুর্তের দৃশ্যধারণ করা হয়েছে হিডেন ক্যামে। আর কিছু কি বলার দরকার আছে? নাকি আপনি কিছু বলবেন?
– নিশা আমাকে ব্ল্যাক মেইল করছিল। ও আমার সাথে শুরু থেকেই প্রেমের অভিনয় করে। আমরা রিসোর্টে যাই, ও কখন যেন হিডেন ক্যাম সেট করে রেখেছিল আমি টেরই পাইনি। ও ওই ভিডিও দেখিয়ে আমাকে ব্ল্যাক মেইল করতে থাকে। প্রতি মাসে ওকে লাখ লাখ টাকা ব্যাংকে ট্রান্সফার করতে করতে আমি ফতুর হয়ে যাচ্ছিলাম। ওকে চাকরিচ্যুত করার ও চেষ্টা করি কিন্তু ও আরো বেশি ব্ল্যাক মেইল করতে থাকে। একদিন প্রেগন্যান্সি রিপোর্ট নিয়ে এসে বলে ও নাকি অন্তঃসত্ত্বা, ওকে চাকরিচ্যুত করলে ও সবাই কে বলে দিবে ওর পেটের সন্তান আমার। আমার তো ঘরে বউ বাচ্চা আছে, আমি কি করে এই অন্যায় আবদার মেনে নিই।
– ওহো, তাই তো, কি সাধু পুরুষ আপনারা!! অপকর্ম করার সময় আপনাদের তখন আর বউ বাচ্চার কথা মনে পড়ে না। কি মহাপুরুষ একেকজন!!…তারপর কি করেছিলেন?
– আমি নিশাকে অনেক টাকার অফার দিয়ে ভিডিও টা চাই, কিন্তু সে কিছুতেই ভিডিও টা দেবে না। এরপর আমি বাবলুকে দিয়ে মোবাইল টা চুরি করাই। ওই শালা আরেক বাটপার। ও সন্দেহ করে মোবাইলে কিছু আছে। এর বিনিময়ে ও আমার কাছে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে। আমার মাথায় আগুন ধরে যায়। বুঝলাম, নিশাকে শেষ করতে না পারলে আমার এই বিপদ শেষ হবে না।
– তারপর আপনি ভাড়াটে খুনি মাহমুদ কে হায়ার করলেন নিশাকে মারার জন্য।
তারপর পলাশ সাহেব, আপনি তো হেদায়েত সাহেবের পার্সোনাল সেক্রেটারি, আপনি কেন নিশাকে হুমকি দিচ্ছিলেন, ব্ল্যাক মেইল করছিলেন?
– ওই রিসোর্টের কাহিনী আমি জানতাম। এমডি স্যার আমাকে চুপ থাকতে বলেন বিনিময়ে তিনি লাখ খানেক টাকা আমাকে বখশিশ দেন। ওকে মারার বুদ্ধিটা আমিই দেই। কিন্তু যখন এই প্ল্যানটা ও ফেইল হলো তখন স্যার আর আমি মিলে ওকে মেন্টালি প্রেশার দেই যাতে ও ডিপ্রেসড হয়ে নিজেই নিজেকে শেষ করে দেয়। স্যার ও চাচ্ছিলেন না বাচ্চার ব্যাপারটা সামনে আসুক। নিশা ও সুইসাইড করলো, আমরা শান্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। সব প্ল্যান মতোই হচ্ছিলো। কিন্তু ওই পিয়ন বাবলুটাই ফোন অন করে মোবাইল ঘাটাঘাটি করতে গিয়ে সব প্ল্যান নষ্ট করে দিলো।
– হুম আসলেই, বাবলু ফোন অন করাতে ই আপনাদের শয়তানি কর্মকাণ্ড অফ হয়ে গেলো। এবার চৌদ্দ শিকের পিছে বসে ব্ল্যাক মেইল করার প্ল্যান করতে থাকুন।
– ম্যাডাম, রহিমা খালার ফোন লোকেশন ট্রেসড।
বান্দরবানের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘাপটি মেরে ছিলেন রহিমা খালা আর তার ছেলে আজমল।
(৯)
– চলুন দিশা ম্যাডাম, একটা ছোট্ট ভিডিও ক্লিপ দেখাই।
একটা সিসিটিভি ফুটেজ, যেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে দিশা ব্যাংকের কাউন্টার থেকে ক্যাশ টাকা তুলছে।
– ও হ্যাঁ, হ্যাঁ, টাকা তুলতে গিয়েছিলাম ব্যাংকে। হাত একদম খালি তো!!
– কিন্তু ওই একাউন্ট তো আপনার নামে না, নিশার নামে। নিশার ব্যাংক একাউন্ট, চেকের সিগনেচার ও সেইম।
বিস্ফোরিত নেত্রে দিশার বাবা মা তাকিয়ে আছেন।
– ও হ্যাঁ, আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম, আপনি তো নিশার হ্যান্ড রাইটিং নকল করতে পারতেন। ছোটবেলায় ওর হোমওয়ার্ক ও নাকি করে দিতেন কারণ নিশা তো পড়ালেখায় ফাঁকিবাজ ছিল। এসবই আপনার পরিবারের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য। তবে আপনি যে নিশার সাইন ও নকল করতে পারেন এটা হয়তো কেউ জানতো না।
দিশা চুপ করে থাকে। আবারো বলতে শুরু করে রিদিমা,
– সামান্য ২৫ লাখ টাকার জন্য বোনকে সরিয়ে দিলেন?? নাকি অন্য কোনো ইস্যু ছিল? পথের কাঁটা সরিয়ে দেয়াই ভালো, কি বলেন?
দিশা চিৎকার করে ওঠে, ” শুনুন ম্যাডাম, আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে, সেই তখন থেকেই উল্টোপাল্টা বলেই যাচ্ছেন।”
– ওয়েল আমার ভুল হতেই পারে কিন্তু পোস্টমর্টেম রিপোর্ট তো ভুল হতে পারে না, তাইনা? পোস্টমর্টেম রিপোর্ট অনুযায়ী, ভিক্টিম তিনমাসের প্রেগন্যান্ট ছিল। যেটা মিস্টার হেদায়াতকে দেয়া প্রেগন্যান্সি রিপোর্টের সাথে হুবহু মিলে যায়। কিন্তু অবাকের বিষয় হচ্ছে, নিশার গর্ভে থাকা ভ্রুণের সাথে মিস্টার হেদায়েতের ডিএনএ ম্যাচ হয়নি। তখনই সন্দেহ করেছিলাম পেছনে তৃতীয় কোন পক্ষ আছে। এরপর যখন রহিমা খালার কাছে নিশা আর রেদোয়ানের পরকীয়ার কথা জানতে পারি তখন রেদোয়ানের ডিএনএ ম্যাচ করাই। এবং আমাদের আন্দাজ সত্য প্রমাণ করে পেটের বাচ্চার সাথে রেদোয়ানের ডিএনএ ফুললি ম্যাচড হয়ে যায়। এখন প্লিজ আবার জিগ্যেস করবেন না আপনার ডিএনএ স্যাম্পল কোথায় পেয়েছি!! শিক্ষিত লোক আপনারা, আশা করি বিস্তারিত না বললেও চলবে।
ভালোই গেইম খেললেন, সাথে এক ঢিলে দুই তিন পাখি ও মারা হয়ে গেলো। কেউ ঘুণাক্ষরেও টের পেল না। প্রথমে নিশাকে সরিয়ে দিয়ে নিশার হ্যান্ড রাইটিং নকল করে সুইসাইড নোট লিখলেন, কেউ ধরতেও পারলো না। তারপর প্ল্যান মত বাকি কাজ করতে লাগলেন। তার আগে সরিয়ে দিলেন রহিমা খালাকে যিনি সবার আগে আপনার বোন আর রেদোয়ান সাহেবের পরকিয়া সম্পর্কে জেনে গিয়েছিলেন।
– কি সব ফালতু কথা বলছেন!
– রহিমা খালা এখন আমাদের নিয়াপত্তায় আছেন। পুরো ঘটনা তিনি নিজ মুখে আমাদের বিস্তারিত বলেছেন। কিভাবে আপনার অগোচরে নিশা আর রেদোয়ান অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত হতেন, হাতেনাতে একদিন ধরা ও পড়লেন রহিমা খালার হাতে। আপনি পরিবারের সম্মান বাঁচানোর জন্য উল্টো তাকেই ভয় দেখিয়ে তাকে আর তার ছেলেকে শহর ছাড়া করলেন। প্রত্যক্ষ সাক্ষী বলতে তো এই একজনই ছিল তাই না??
আমার প্রথম দিকে অল্প অল্প খটকা লাগতো। নিশা সম্পর্কে কিছু জানতে চাইলে অসুস্থতার বাহানায় ঘরে দরজা লাগিয়ে বসে থাকতেন। যাতে আমাদের এক্সট্রা জেরার মুখে না পড়তে হয়।
দ্বিতীয়ত, পোস্টমর্টেম রিপোর্ট অনুযায়ী, ভিক্টিমকে প্রথমে ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো হয় পরে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। নিশা তো ঘুমের ওষুধ খেতো না, ঘুমের ওষুধ খেতেন আপনি। এরপর মৃতদেহ কে দশ তলার ছাদ থেকে ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই কেউ যদি লাফ দেয় উপর থেকে তার মুখসহ শরীর চিৎ হয়ে থাকবে, কিন্তু ভিকটিমের বডি উপুড় হওয়া ছিল। যার মানে হলো সে নিজে লাফ দেয়নি তাকে ফেলে দেয়া হয়েছে। আর তৃতীয়ত, ভিকটিমের যেই হাইট তার পক্ষে কখোনো ওই উঁচু দেয়ালে চড়ে লাফ দেয়া পসিবল না, যদি না কোন লম্বা চওড়া শক্তিশালী পুরুষ তাকে তুলে নিয়ে ফেলে না দেয়। ওহ ভালো কথা, রেদোয়ান সাহেব, আপনার হাইট যেন কত??
– দেখুন এভাবে আন্দাজে কথা বলে অযথাই আমাকে ফাঁসাচ্ছেন!!
– এতগুলো প্রমাণ দেয়ার পর ও বলছেন অযথা!! ওয়েল, ছাদের রেলিং এর কিনারে আমরা আপনার ব্যবহৃত সিগারেটের টুকরো পেয়েছি যেগুলোর সাথে আপনার ঘরে থাকা এশ ট্রের সিগারেটের টুকরোর সাথে ম্যাচ হয়েছে আর এই ইমপরটেড ব্র্যান্ড আপনি ছাড়া এই বিল্ডিং এর কেউ ব্যবহার করে না। আর এটা আগে পড়ে থাকার ও সম্ভাবনা নেই কারণ আপনাদের কমিটি বলেছে তারা প্রতিদিন নিয়ম করে ছাদ ঝাড় দিয়ে পরিষ্কার করে শুধুমাত্র জন্মদিনের পার্টির পরের দিন ছাড়া কারণ সেটা আমরা রেস্ট্রিকটেড করে রেখেছিলাম আর জন্মদিনের পার্টি শেষ হয় নয়টার মধ্যে এবং পার্টিতে তো আপনি ছিলেনই না। আপনি বাসায় এসেছিলেন ই অনেক রাতে। সিগারেটের টুকরো ওখানে গেলো কি করে? আর খুনের মোটিভ তো আপনার ছিলই, ডিএনএ রিপোর্ট কি মিথ্যে কথা বলে??
রেদোয়ান চুপ করে থাকে।
– আর রইলো আপনাদের এই ম্যাসেঞ্জারের কনভার্সেশনের স্ক্রিনশট। স্বামী স্ত্রীর ব্যক্তিগত কনভার্সেশন বলে আমরা প্রথম দিকে এতটা গুরুত্ব দেইনি। কিন্তু রহিমা খালার স্টেটমেন্টের পর আমরা ভালো করে ঘেঁটে দেখলাম, আর এই মেসেজ গুলো পেলাম। যেখানে আকারে ইঙ্গিতে নিশাকে মেরে ফেলার প্ল্যান করছিলেন। “জেনে গেছে মেবি। ঝামেলা করছে খুব। আমি আসা পর্যন্ত ঘুম পাড়িয়ে রাখো। তারপর দেখা যাবে”
আর তাই দিশা তার ঘুমের ওষুধ কোন খাবার বা লিকুইডের মধ্যে দিয়ে নিশাকে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখে আপনি আসা পর্যন্ত। এরপর আপনি এলেন, শ্বাসরোধে হত্যা করলেন এরপর ছাদে নিয়ে গিয়ে উপর থেকে ছুঁড়ে ফেললেন। টপ ফ্লোরে ফ্ল্যাট হওয়ায় সুবিধেই হয়েছিল আপনার। টেনশনে একের পর এক সিগারেট ফুঁকছিলেন, যেটা আপনার স্বভাব ছিল। টেনশনে পড়লে নাকি আপনি একের পর এক সিগারেট শেষ করেন!! রহিমা খালার কাছ থেকে জানলাম। সেই সিগারেটের টুকরোই পেলাম ছাদ থেকে।
রেদোয়ান একদম চুপসে গেলো।
– চলুন শেষ একটা ম্যাজিক দেখাই। আপনাদের বিয়ের পরের ছবিতে আপনার গলায় R লেখা একটা লকেট ওয়ালা চেইন দেখেছিলাম, প্রায় অনেক ছবিতেই দেখেছি লকেট টা, কিন্তু এতদিন ইনভেস্টিগেশনে আসলাম আপনার গলায় দেখলাম না তো!! কিন্তু দিশার লাশের হাতের মুঠোয় আপনার ওই লকেট চেইনের ছেঁড়া অংশ পেয়েছি। ভিক্টিম বাঁচার জন্য যখন ছটফট করছিল তখন সে আঁকড়ে ধরে চেইন এবং সেটা ছিঁড়ে তার হাতের মুঠোয় থেকে যায়। তাড়াহুড়োয় আপনারাও সেটা খেয়াল করেনি।
তো রেদোয়ান সাহেব ধরা তো পড়েই গেলেন, এবার তো সত্যটা বলুন।
রেদোয়ান আমতা আমতা করে বলতে শুরু করে,
– দিশা যখন সাত মাসের প্রেগন্যান্ট তখন থেকে নিশা থাকে আমাদের বাসায়। দিশাকে তখন চাইলেও নিজের মত করে পেতাম না। তখন নিশার সাথে আমার সখ্যতা গড়ে ওঠে। আমরা গভীর সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ি। বাচ্চার জন্ম হওয়ার পর দিশা বাচ্চাকেই সময় বেশি দেয়। আর ওর সৌন্দর্য ও আগের মত ছিল না। ও নিজেকে মেইনটেইন করার টাইম ও পেতো না, সারাক্ষণ বাচ্চা নিয়ে থাকে, আমি কোন আকর্ষণ ই পেতাম না। নিশার প্রতি আকৃষ্ট হই আমি। ধীরে ধীরে আমাদের সম্পর্ক প্রগাঢ় হতে থাকে।
– দিশা তো আপনাকে অন্ধের মত বিশ্বাস করতো। তবে ধরা পড়লেন কিভাবে? রহিমা খালা বলে দিয়েছে?
– হ্যাঁ, যেদিন রহিমা খালার হাতে ধরা পড়লাম, তাকে ভয় দেখিয়ে চুপ করিয়ে দিলাম। কিন্তু সে দিশাকে সব বলে দেয়। মাসখানেক আগে নিশা জানায় সে অন্তঃসত্ত্বা, এরপর সে বিয়ের জন্য চাপ দেয়। কিন্তু আমি ওকে বিয়ে করতে চাইনি ও শুধু আমার টাইম পাস ছিল আর কিছু না। আর তাছাড়া ও সম্পত্তির ভাগ ও পাবে না ওকে বিয়ে করা আমার জন্য লস ছাড়া আর কিছুই না। কিন্তু নিশা আমাকে কনটিনিয়াসলি বিয়ের জন্য প্রেশার দিয়েই যাচ্ছিলো। উপায় না পেয়ে দিশাকেই সব খুলে বলি, হাত পা ধরে মাফ চাই। দিশা রেগে গেলে ও আমাকে ক্ষমা করে দেয়।
– কিন্তু দিশা ম্যাডাম প্রতারক স্বামীকে ক্ষমা করে দিলেও প্রতারক বোনকে ক্ষমা করেননি। উল্টো তাকে খুন করার প্ল্যান করেন, রাইট?
– না, আমি খুন করতে চাইনি। রহিমা খালা আমাকে সব বলে দেয়। আমি অনেক কষ্ট পাই, ভেঙে পড়ি কিন্তু নিজের সংসার ভাঙতে চাইনি। কোন মেয়েই নিজের সংসার ভাঙতে চায় না। আমার ছোট একটা বাচ্চা আছে। রেদোয়ান কে সম্পত্তির ভাগ দেয়ার লোভ দেখিয়ে নিশাকে ছাড়তে বলি। ও রাজি হয়ে যায়। রহিমা খালা আর তার ছেলেকে ভয় দেখিয়ে শহর থেকে বের করে দেই, ফ্যামিলির রেপুটেশন নষ্ট করতে চাইনি। নিশা কে ঘর থেকে বের করে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু রেদোয়ান বাধা দেয়। কারণ গোপনসূত্রে ও জানতে পেরেছিলো নিশা ওর বস হেদায়েত সাহেবকে কোন এক কারণে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা হাতাচ্ছে। তাই আমরা অন্য প্ল্যান করি।
– কি ছিল সেই প্ল্যান রেদোয়ান সাহেব?
– আমি নিশাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ওকে ব্ল্যাকমেইল করে ওর কাছ থেকে টাকা নিতে চাইছিলাম। মূলতঃ ওর ব্যাংকের চেক বই টা। কারণ দিশা বলেছিলো ও নিশার সাইন নকল করতে পারে। কিন্তু নিশা সন্দেহ করতে থাকে। বিয়ের জন্য আমাকে সেইদিন সে থ্রেট দেয়, সবাইকে বলে দিবে বাচ্চার বাবা আমিই। তাই আমি ডিসাইড করি ওকেই সরিয়ে দিবো, গলার কাঁটা হয়ে ছিল। আমি জানতাম দিশা আমাকে অনেক ভালোবাসে, সংসার টেকানোর জন্য ও সব করতে রাজি, যা বলবো ও তাই করবে। আমাকে ওর প্রয়োজন আর আমার টাকা প্রয়োজন। আমার কথামতো দিশা ওকে শরবতের সাথে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দেয়। আমি বাসায় এসে ওকে আমার ডিসিশন জানাই। দিশা রাজি হয় না। পরে যখন ওকে বলি নিশা সবাইকে বলে দিবে বাচ্চার বাবা আমি, ওকে বিয়ে করতেই হবে আমার। তখন অনিচ্ছাসত্ত্বেও সে আমাকে কো-অপারেট করে। বালিশ চাপা দেয়ার সময় ধস্তাধস্তি তে কখন যেন আমার গলার চেইন ছিঁড়ে যায়, আমি বলতে পারি না। ভুল টা এখানেই ছিল আমার।
– ভুল তো আপনার অনেক কিছুতেই ছিল রেদোয়ান সাহেব!! লোভে পড়ে মানুষ অনেক ভুলই করে। নিশা ব্ল্যাকমেইল করছিলো তার বসকে, আপনি আবার ব্ল্যাকমেইল করছিলেন নিশাকে। ভালই ব্ল্যাকমেইল ব্ল্যাকমেইল খেলা খেলছিলেন আপনারা। অন্যকে ঠকালে নিজের ও ঠকতে হয়, এটা সবাই ভুলে যায়।
আর ম্যাডাম দিশা, সবচেয়ে বড় ভুল তো করলেন আপনি, এক প্রতারককে আগলে রেখে, তাকে সহযোগিতা করে নিজেও অপরাধীর খাতায় নাম লেখালেন। যেই সন্তানের জন্য এতকিছু করলেন, বলতে পারেন সেই সন্তানের ভবিষ্যৎ কি?
যেই বিষয়টা পারিবারিকভাবে বৈধভাবে সমাধা করতে পারতেন, সেটা শেষ করলেন অবৈধভাবে। আশা করি আদালত আপনাদের সঠিক বিচারটাই করবে।
নিয়ে যাও এদের, অনেক হয়েছে ড্রামা।
– এক মিনিট মা, আমার কিছু জিজ্ঞেস করার ছিল ওর কাছে।
নির্মম সত্য জানার পর কাঠ হয়ে গিয়েছিলেন দিশার বাবা মা। টলমলে চোখে দিশার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো।
– নিশা তো তোর আপন বোন ছিল তাই না?? কিভাবে পারলি নিজের বোনের সাথে এমন জঘন্য কাজ টা করতে? মানছি ও যা করেছে অন্যায় করেছে।
– ও আমার বোন না, ও আমার সবচেয়ে বড় শত্রু ছিল।
(রাগে ফেটে পড়লো দিশা)
ও আমার সবকিছু কেড়ে নিয়েছিলো।
– তুই আমাদের কাছে আসতে পারতি, আমরা বসে একটা সমাধান করতে পারতাম। তা না করে তুই একটা প্রতারককে সাহায্য করলি, আমাদের জানালি ও না। অথচ কতটা গর্ব করতাম তোকে নিয়ে।
বলে বৃদ্ধ লোকটি চশমা খুলে চোখ মুছতে লাগলেন।
(১০)
এক মাস পর। আদালত চত্বরে রিদিমার সাথে দিশার পরিবারের দেখা। দিশার বাচ্চাটা পরম যত্নে নানা নানীর কাছেই বড় হতে লাগলো। তার নামেই সব জায়গা সম্পত্তি লিখে দেয়ার কথা ভাবছে তার নানা। রহিমা খালা তাদের সাথেই থাকেন, তার ছেলেকে এই বাড়িতেই কেয়ারটেকারের চাকরি দেয়া হয়েছে। তবুও সব কিছুর মাঝেই অনেক বড় শূন্যতা। কিছু মানুষের লোভ আর ক্ষোভের কারণে এক নিষ্পাপ শিশু অকালেই হারালো তার মা বাবা কে, বৃদ্ধ পিতা মাতা হারালো বৃদ্ধ বয়সে আকঁড়ে বেঁচে থাকার শেষ অবলম্বন কে। শৃঙ্খলিত জীবন আর সঠিক প্যারেন্টিং ই পারে একটা মানুষের সুস্থভাবে বিকশিত করতে। উচ্ছৃঙ্খল জীবন কখনো কাম্য নয়।
(সমাপ্ত)

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..