জয় বাংলা ,জয় বাংলা
হটাৎ ভেসে এলো চিৎকার দূর থেকে,
তবে কী বিজয় হয়েছে
বাংলাদেশ কী আজ স্বাধীন!
আমি শেফালি , ডাক নাম শেফা
ইন্টারমিডিয়েট প্রথম বর্ষ,
ডাকাবুকো সাহসী মেয়ে আমি
বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ডাকে মিছিলে স্লোগানে।
মা রাগ করেন কিন্তু আমি বাপ সোহাগী
সেই আমি আজ পাকহানাদারদের বন্দীশিবিরে!
মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস বন্দী
পাকশিবির থেকে শিবিরে।
রাতে রাতে হাত বদল হয়েছি
ধর্ষণ নির্যাতন পাকবাহিনীর চরম নিষ্ঠুরতায়।
এখন আমাদের নিয়ে এসেছে এই বাংকারে
সূর্যের আলো যেখানে পৌঁছায় না,
কী নির্মম নির্যাতন ছয়টি মেয়ের উপর
দিনের পর দিন।
শয়তানেরা আমাদের গায়ের বস্ত্র
খুলে নিয়ে করেছে বিবস্ত্র,
লজ্জায় অপমানে একই চাদরে
শরীর ঢেকে রাখি সারাদিন ।
হটাৎ জয়বাংলা ধ্বনি শুনে
মনের ভিতর উদ্বেল আলোর ঝলকানি,
দেশ কী তবে স্বাধীন হয়েছে!
আমার বাবা ,সে কী বেঁচে আছে!
আর যে ভাইটি যুদ্ধে গিয়েছিলো
বাবা মাকে না জানিয়ে
সে কেমন আছে !
ফিরেছে কী যুদ্ধের রনাঙ্গন থেকে
মা আর সোনালী ,তারা কেমন আছে!
মুহূর্তে এলোমেলো ভাবনা বুকের ভিতর
চোখের জল সব শুকিয়ে গেছে,
এখন মাছের মত মরা চোখ আমাদের।
এমন সময় একটি কন্ঠ ভেসে এলো
কোই হে ,বাহার আও
ভয় পেয়ে গেলাম আমরা
কার কন্ঠস্বর এ!
আবার বললো ,ডরো মাত মাইজি
বাহার আও ।
তারপর চিরদিনের সাহসী মেয়ে এই আমি
বেরিয়ে এলাম সর্বপ্রথম,
কিন্তু লজ্জায় থমকে দাঁড়ালাম
ওই নরপশু পাকহানাদার আমাদের বিবস্ত্র করেছে।
রাতের পর রাত এক নরক যন্ত্রনা !
দরজা খুলে আলোকরেখায় দাঁড়ানো
এক লম্বা বুদ্ধিদীপ্ত সুন্দর নওজোয়ান ,
মাথায় পাগড়ী বাঁধা সবুজ রঙের।
তখন সেই লম্বা পাহাড়ের মত নওজোয়ান
মাথার পাগড়ী খুলে দিলো তার,
লজ্জা নিবারনের জন্য আমার
মনে হলো বুকের রক্ত ঢাকলাম সবুজে
বাংলার মানচিত্র আমি
স্বাধীন বাংলাদেশ।
তখন আমি জানালাম বাকী পাঁচজনের কথা
তখন কিছু লুঙ্গী শার্ট জোগাড় করে,
একে একে লজ্জা নিবারন হলো সবার
কত দিন কত রাত পর,
সূর্যের আলো দেখলাম
চোখ ঝলসে গেলো ,
অন্ধকার গুহা থেকে আলোয় এলাম।
অন্ধকার গুহায় কত ভেবেছি
কেনো ভাইয়ের মত
আমিও মুক্তিযুদ্ধে গেলাম না,
তাহলে তো হয়ত শহীদ হতাম
বীরাঙ্গনা হতাম না !
স্বাধীন দেশ আমাদের ,
খেতাব দিলো বীরাঙ্গনা
আর যে ফারুক,
আমায় তুলে দিয়েছিলো পাকবাহিনীর ক্যাম্পে !
শত্রুদের হাতে , সেই রাজাকার আলবদর
আজ একজন জজ
মুক্তিযোদ্ধার খেতাব এখন তার ঝুলিতে।
হে ,স্বাধীন দেশ
আমার প্রিয় স্বাধীনতা,
আমি বীরাঙ্গনা নই,আমিও একজন মুক্তিযোদ্ধা ।
দেশের জন্য দিয়েছি সম্ভ্রম,
দিয়েছি নারীত্ব বিসর্জন;
রক্ত মাংসে চোখের জলে এনেছি স্বাধীনতা ।
*আমি বীরাঙ্গনা বলছি – নীলিমা ইব্রাহিম , ছায়া অবলম্বনে লেখা ।
Leave a Reply