1. banglamailnews72@gmail.com : banglamailnews : Zakir Khan
মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ০২:০৭ অপরাহ্ন

# বিষাক্ত_ভালোবাসা ### ®সাদিয়া

  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ২ এপ্রিল, ২০২১
  • ৩৬৩ বার

তূহা সাইক্রিয়াটিস্টের সামনে বসে আছে। তাকে অনেক কষ্টে জোর করেই এখানে আনা হয়েছে। ড: আদিয়াত খুব মনোযোগ দিয়ে তার সামনে বসে থাকা পেসেন্ট কে দেখছিল। মিষ্টি মন কারা একটা মুখ কে পাণ্ডুর দেখাচ্ছে। চোখের নিচে কালো দাগ পড়েছে, কপালের চামড়া অনেক গুলি ভাঁজ তুলে তূহা অস্থিরতা নিয়ে বসে আছে। তার দৃষ্টি এলোমেলো। আদিয়াত খুব ভালো করে সেগুলো খেয়াল করছিল।
পাশেই তূহার বাবা আছেন। উনার মুখের অবস্থা করুণ হয়তো মেয়ের মুখের হাসির সাথে উনিও নিষ্প্রাণ হয়ে গেছে। মুখের দিকে তাকানো দায়। ‘বাবারা তো শক্ত হয়। সব পরিস্থিতিতে তারা নিজেকে শক্ত রাখেন। কষ্টের ছাপ ভেতরে থাকলেও মুখে তার আঁচও আনেন না।’
কিন্তু এ ক্ষেত্রে একদম ভিন্ন দেখছে আদিয়াত। উনার মুখে একদম কষ্ট উপচে পড়ছে। মেয়েকে হয়তো তিনি ভীষণ ভালোবাসেন। আদিয়াত তূহার মার দিকে তাকাল। উনি তখনো কাঁদছেন। মেয়ের এই অবস্থার জন্যে হয়তো পরিবারটা একেবারে শেষ।
আদিয়াত এবার তূহার দিকে তাকাল। কোনো কারণে তার চোখ গুলি ফিরতে চাইছে না মেয়েটার উপর থেকে। ওখানে আটকে আছে। আজ এমন হওয়ার কারণ তার জানা নেই। সে টেবিলের উপর রাখা তূহার ফাইল দেখল।
কোমল কন্ঠে ডাকল “তূহা” এতে তূহা বিব্রত হয়। রেগেও যায় খানিক। চিৎকার করে বলে উঠে “একদম আমার নাম ধরে ডাকবি না। খুন করে ফেলব। আমি এখান থেকে যেতে চাই। বাবা আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাও। নিয়ে যাও এখান থেকে।”
হঠাৎ তূহার ব্যবহারে আদিয়াত খানিক অবাক হয়। বুঝার চেষ্টা করে তূহার সম্পর্কে। পাশে থাকা তার বাবার চোখ টলমল হয়ে উঠে। আদিয়াত চোখ দিয়ে আশ্বাস দেয় উনাকে।
আদিয়াত আবার ডাকল তূহা কে। আদিয়াত কে যা তা বলে বকা শুরু করল তূহা। আদিয়াত তূহার বাবা মা কে যেতে বলল। কিন্তু তারা দ্বিধায় আছেন। কারণ তূহা এখন অস্বাভাবিক যে কোনো অঘটন সে করতে পারে। আদিয়াত তখন বলল
“আপনারা যান। আমি একজন ডক্টর পেসেন্টের সাথে আমাকে একা কথা বলতে হবে। আমি সামলে নিব আপনারা যান।”
আদিয়াতের কথায় তূহার বাবা আজমী সাহেব ও মা রেহা বেগম বের হয়ে গেলেন। এদিকে তূহা বারবার না করছিল উনাদের যেতে। সে এখন আরো উত্তেজিত হয়ে উঠেছে।
রুমে শুধু আদিয়াত আর সে। আদিয়াতের দিকে তাকিয়ে সে তাকে দেখে হঠাৎ নিজের বুকের ওড়না খুলে ফেলল। বিদ্রূপের সুরে বলল “আমার শরীরই তো চাস তুই? নে দিলাম। সব ছেলেরা তো এটাই চায়। সেক্স ছাড়া তো কিছুই বুঝে না ছেলে রা তাই না? নে কুত্তার মতো ভোগ কর আমায়।” তূহার চোখ দিয়ে পানি পড়ছিল।
ঠিক কেমন অবস্থায় থাকলে একটা মেয়ে এমন বলতে পারে তা আদিয়াতের জানা নেই। কিন্তু তূহার করা কাজের জন্যে সে প্রচন্ড রেগে গেল। ইচ্ছা হচ্ছে কানের নিচে একটা চর বসাতে। কিন্তু সেই চরটা আদিয়াত টেবিলের উপর দিল। বেশ জোরে শব্দ হয়। ওড়নাটা তূহার দিকে দিয়ে সে বলতে লাগল “সব ছেলেরা দেহের পাগল হয় না। মাথায় গেঁথে রাখা ধারনা টা বদলাও। তুমি আসলে একদম সুস্থ। ইচ্ছা করে অসুস্থ হচ্ছো।”
আদিয়াতের ধমক সুরে কথা বলায় তূহা খানিক ভয়কে যায়। সামনের চুল ঠিক করতে করতে সে নিজেকে গুটিয়ে আনে। আদিয়াত তার সাথে সহজ হওয়ার জন্যে পানির গ্লাস টা এগিয়ে দেয়। তূহা চোখ তুলে আদিয়াত কে দেখল। সে ইশারা করল পানি টা নিতে।
আদিয়াতের ফোন বেজে উঠলে সে তূহা কে পানি টা খেয়ে নিতে বলে কল রিসিভ করল।
“ইয়ার তুই আসছিস তো?”
“ইয়ান আমি ব্যস্ত। পরে কথা বলব।”
“আরে তুই তো সারাদিনই ব্যস্ত। আমি কিন্তু এক সপ্তাহ আগে থেকেই বলেছিল আমি মেয়েটার সাথে দেখা করতে যাবো। আমাদের সাথে তুইও যাবি।”
“ওসব তোর নিত্যদিনের কাজ ইয়ান। ফোন রাখ আমি পেসেন্টের সামনে আছি।”
“দূর। পেসেন্ট পেসেন্ট। আর কত? ধ্যাত পাপা কে কত করে বলেছিলাম তোর সাথে ডাক্তারি টা পাশ করতে কিন্তু রাজিই হলো না। আমার নাকি তার ব্যবসা সামলাতে হবে।”
“এখন কি তুই ফোন টা রাখবি?”
“আগে বল মেল পেসেন্ট না ফিমেল পেসেন্ট?”
আদিয়াত “ফিমেল” বলেই ফোন রেখে দিল। ইয়ান বিরক্ত হয়ে গাড়ির উপর থেকে নেমে গেল। তাউসের পিঠ চাপড়ে পেকেট থেকে চিপস মুখে দিল।
“আউচ ইয়ান ইয়ার লাগে তোর হাতের চর। দিস না প্লিজ।”
“দূর রাখ তোর লাগালাগি। মেয়েটার সাথে দেখা না করলে শান্তি পাচ্ছি না।”
“ভাই এই পর্যন্ত হাজার হাজার মেয়ের সাথে দেখা করেছিস টাইম পাস করেছিস এবার একটা ধর আর আমায় মুক্তি দে। নয়তো তোকে সবাই ক্যারেক্টার লেস ডাকবে এরপর।”
“যেভাবে বলছিস মনে হচ্ছে তুই খুব ভদ্র সাধু। ফিটারে ভরে দুধ খাস। চল।”
ইয়ানের এমন কথায় তাউস মুটেও অবাক হয় না। কারন ও এমনই।
আদিয়াত তূহার পাশের চেয়ারে বসল। তাকে কাছে বসতে দেখে তূহা সরে যেতে চাইলে আদিয়াত তখন বলল
“ভয় নেই। আমি তোমাকে টাচ করবো না। টেনশন ফ্রী থাকতে পারো।”
তূহা কিছু বলল না।
“তূহা আমাকে তুমি তোমার ফ্রেন্ড ভাবতে পারো। আমার সাথে মন খুলে সব টা শেয়ার করো তুমি। তূহা তুমি কি দেখতে পাচ্ছো তোমার বাবা মা তোমার জন্যে কষ্ট পাচ্ছেন? তাদের মুখের দিকে কি তাকানো যাচ্ছে বলো? আমার সাথে শেয়ার করো চেঁপে না রেখে। হাল্কা হয়ে যাবে।” কথা শেষে আদিয়াত তূহার দিকে তাকিয়ে থাকে। তূহা হঠাৎ হুহু করে কেঁদে উঠল। এ যেন হঠাৎ গগন ফাটিয়ে বৃষ্টি আসার মতো। আদিয়াত কিছু বলল না বাঁধাও দিল না।
টানা ২০ মিনিট কেঁদে তূহা শান্ত হয়। ভেতর থেকে নিশ্বাস ছেড়ে দিয়ে চুপ করে বসল। নাক টেনে এক হাত দিয়ে চোখ মুছে নিল। আদিয়াত মুগ্ধ হয়ে দেখছে তূহা কে। মেয়েটার মাঝে সে কি খুঁজে পেয়েছে বুঝতে পারছে না। অদৃশ্য টান লাগছে। বৃষ্টি হয়ে যাওয়ার পর পরিবেশ টা যেমন লাগে তূহাকেও ঠিক তেমনি লাগছে এখন। একটা স্নিগ্ধ ভাব ভেসে উঠছে।
তূহা আবার একটু পানি খেলো। চোখের পাতা পড়ছে না তার। এক নজরে তাকিয়ে আছে। ভেতরে যে কত বড় কষ্টের পাহাড় তার বুকে পড়ে আছে তা কিভাবে সরাবে। বড় একটা নিশ্বাস ছেড়ে দিল তূহা। মুখে আবার ভীষণ বিষণ্ণতার মেঘ ছেয়ে গেছে। এবার সে তার কালো স্মৃতির পাতায় ডুব দিল..
May be an illustration of 1 person and text that says "বিষাক্ত ভালোবাসা সাদিয়া"

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..