বেশ দায়িত্ববান ছেলে শুভ।
স্যারের সাথে তর্কে জড়িয়ে
স্কুল যাওয়া বন্ধ করেছে বছর খানেক হলো তবু বাড়িতে কাওকে জানায়নি।
দায়িত্ববান বলেই স্কুলের মাইনেটা অবশ্য
বাবার কাছ থেকে ঠিকই নিয়ে গেছে।
হাজার হোক বাড়ির বড় ছেলে সে!
ওমন একটু আধটু ছেলেমানুষি করতেই পারে!
বন্ধুদের সাথে সিগারেট ফুকে, এডাল্ট মুভি দেখে আর গার্লফ্রেন্ডের সাথে ডেটে গিয়ে ভালোই যাচ্ছিল তার দিনকাল।
হঠাৎ একদিন মধ্যবিত্ত বাবা মার কাছে খবরটা যায় পৌঁছে।
যাহোক বংশের প্রদীপ তো!
অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে মাধ্যমিকটা এক ধাক্কায় পার করিয়ে দেয় তার পরিবার।
অবশ্য বাবাটা তার বড্ড সেকেলে!
ব্যথা সইতে না পেরে মস্তিষ্কের রক্তক্ষরনে হলেন পক্ষাঘাতগ্রস্ত।
দায়িত্ববান বলেই উচ্চমাধ্যমিকে শুভ জড়িয়ে গেল ছাত্র রাজনীতিতে।
বংশ রক্ষায় মধ্যবিত্ত পরিবার এবারো জমি বেচে দায়িত্ববান ছেলেকে পাঠালেন বিলেতে।
হাফ ছেড়ে বাচলেন বাবা, ভাবলেন সংসারের হাল ধরলে ছেলে যাবে ঠিক হয়ে।
বছর কয়েক পরেই দায়িত্ববান ছেলেটি তার ফেলে যাওয়া গার্লফ্রেন্ডকে বিয়ে করার জন্য উঠে পড়ে লাগলো।
যদিও বিয়েটা সে আগেই রেখেছিল সেরে!
বিলেতি ছেলে বলে কথা!
আত্নীয় পরিজন সবাই গেল মেয়ের বাড়ি নিয়ে প্রস্তাবখানা।
যাচ্ছেতাই অপমান করে ফিরিয়ে দিলেন মেয়ের বাবা, বললেন-
“বিলেতের ট্যাক্সি ড্রাইভারের সাথে দেবোনা মেয়ের বিয়ে!”
লজ্জায় অপমানে প্রথমে শুভর মা, কদিন বাদে তার বাবা হলেন হৃদরোগে আক্রান্ত!
ভারী দায়িত্ববান ছেলে শুভ!
চিকিৎসার জন্য ধারকৃত সব টাকা চুকিয়ে দিল সে।
শর্ত একটাই “বিয়ে করবে ঐ মেয়েকেই!”
অবশেষে ধুমধাম করেই বিয়ে হলো তার।
দায়িত্ববান ছেলে এবার বউ নিয়ে হলো প্রবাসী।
পেছনে পড়ে রইলো সেকেলে মা, বোন আর বাবাটি!
দায়িত্ববান ছেলে বলে কথা!
বারো মাসের ছ মাসই ধরেনা সে ফোন।
বাকি ছ মাস টাকা পাঠিয়ে বলে “আমি কি টাকা বানানোর মেশিন?”
নাতি নাতনিগুলোকে নিয়ে খেলবার ভারী শখ তার বাবার!
দায়িত্ববান শুভ বলে, “ওরা এবার দেশে গিয়ে থাকবে নানুর বাড়ি, আর দয়া করে দিয়ো না ঐ বস্তা পচা কাপড় চোপড়, খেলনা আর গাড়ি!”
শুভর স্ত্রীও বেশ দায়িত্ববান।
বারবার মনে করিয়ে দেয় তার স্বামীর টাকায় চলছে শুভর পরিবারের আহার!
বংশের একমাত্র কর্ণধার সে।
বাবা মা তাই চুপচাপ হজম করে নেন হাজারো লাঞ্চনা আর অপবাদ।
পারিবারিক যে কোন অনুষ্ঠানে অবশ্য দায়িত্ববান শুভ সম্মানের খাতিরে টাকার সাথে পাঠিয়ে দেয় তার পরিবারে খাম ভর্তি অপমান।
দিন যায়, যায় রাত।
দায়িত্ববান শুভর বাবা কবরে গিয়ে এখন অপেক্ষায় আছেন তার স্ত্রীর আগমনের।
যা হোক বংশের প্রদীপ তো রইলো জগতে!
মৃত্যুবার্ষিকীগুলো হবে ঢাক ঢোল পিটিয়ে!
ভাগ্যিস দায়িত্ববান শুভ আর তার স্ত্রী ছিল,
নইলে ভিখিরির দেশে এতো লোক খাওয়ানো কি সম্ভব হতো?
বাবার বানানো বাড়িটি এবার দায়িত্বের সাথেই সামলাবে শুভ।
আরে বাবা, বংশের একমাত্র দায়িত্ববান ছেলে যে সে!
Leave a Reply