1. banglamailnews72@gmail.com : banglamailnews : Zakir Khan
শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১০:২৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
# আহারে # খোরশেদ ।। সমাজে নতুন অপরাধী চক্র তৈরী হচ্ছে কিন্তু ভবিষ‍্যতে এদের রক্ষা করবে কে??।। – – – আশিক ফারুকী “অতঃপর” __ সালমা আক্তার বীরাঙ্গনা নই আমি মুক্তিযোদ্ধা – – – শাহনাজ পারভীন মিতা জলপাই রঙের স্বাধীনতা – – – আরিফুল হাসান প্লাস্টিকের উৎপাদন বন্ধ করতে হবে – উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ান হাসান – – – স্বাধীন আজম –   টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধি, স্বপ্নমায়া – – – – মাহজাবীন আহমেদ বুড়ি মরে গেল – – – মোঃ আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমাম প্রযুক্তির দুনিয়ায় শিক্ষার্থীদের এখন উন্নত জীবন গড়ার দারুণ সময়:– ————–টিপু সুলতান লেখক ও সমাজ চিন্তক ডায়াবেটিস নিয়ে সচেতনতাই পারে ডায়াবেটিস রোগ নির্নয় ও রোগের চিকিৎসা এবং সঠিক ব্যবস্থাপনা – – – ডা: সাদিয়া আফরিন 

প্রিয় শ্রাবণী # (পর্ব-১) ### ইসরাত জাহান তানজিলা

  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১০ এপ্রিল, ২০২১
  • ২০৫ বার
কাল শ্রাবণীর বিয়ে। একদম সাদামাটা ভাবে বিয়ে। এ বাসার সবচে অপ্রিয়, অনাদৃত প্রাণীটি হলো শ্রাবণী। শ্রাবণীর বয়স যখন সাড়ে তিন বছর তখন শ্রাবণীর মা শ্রাবণীর বাবাকে ফেলে অন্য আরেক জনের হাত ধরে চলে যায়। শ্রাবণীর দুর্দশার শুরু তখন থেকেই। শ্রাবণীর মা চলে যাওয়ার ছয় মাসের মাথায়ই শ্রাবণীর বাবা সেলিম হোসেন দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সেলিম হোসেনের দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম পারভীন বেগম। পারভীন বেগমের গলায় বিষাক্ত কাঁটার ন্যায় বিঁধে আছে শ্রাবণী। অন্যদিকে সেলিম হোসেনও পুরোপুরি উদাসীন শ্রাবণীর ব্যাপারে।
দেখতে অসম্ভব সুন্দরী শ্রাবণী। ভীষণ ফর্সা, গোলগাল স্নিগ্ধ মুখ তার। মাথা ভরতি কোঁকড়ানো লম্বা চুল।‌ সৃষ্টিকর্তা বোধ হয় শ্রাবণীর রূপের ব্যাপারে কোনো কার্পণ্য করেনি। শ্রাবণীর বয়স ষোলো ছুঁয়েছে। এসএসসি দিয়েছে এবার। মানুষের নিজের অসুন্দর চেহারা নিয়ে দুঃখ থাকে। কিন্তু শ্রাবণীর দুঃখ তার সুন্দর চেহারা নিয়ে। মাঝে মাঝে নিজের চেহারাটাকে এসিড মেরে পুড়ে ফেলতে ইচ্ছে করে শ্রাবণীর। এই সুন্দর চেহারাই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে শ্রাবণীর জন্য। এলাকার বখাটে গুলোর নজর সবার আগে শ্রাবণীর দিকে। স্কুলের দুই-চারটা বিবাহিত শিক্ষকেরও কু নজর ছিলো শ্রাবণীর দিকে। বাসে, অটোতে বয়স্ক লোক গুলোও চোখ দিয়ে গিলে খায় শ্রাবণীকে। সুযোগ হলে কেউ কেউ গায়ে নোংরা স্পর্শও করে। দেখতে সুন্দরী হওয়ার দরুন ক্লাস সিক্স-সেভেন থেকেই শ্রাবণীর জন্য বিয়ের প্রস্তাব আসা শুরু করেছে। শ্রাবণীর বয়সটা সংখ্যায় ষোলো হলেও সৎ মায়ের সংসারে অভাব অনটনে বেড়ে ওঠার বিচিত্র অভিজ্ঞতা শ্রাবণীর বয়সটা দ্বিগুণ করে তুলেছে।
সেলিম হোসেনের সাথে শ্রাবণীকে নিয়ে রোজ রোজই ঝগড়া হয় পারভীন বেগমের। ঝগড়াঝাঁটি এ বাসায় রোজকার নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। পারভীন বেগম বলেছে শ্রাবণীর পেছনে আর এক পয়সাও খরচা করতে পারবেন না। শ্রাবণীর জন্য দিন দিন সংসারে অভাব বাড়ছে। তাঁর ছেলে-মেয়ে গুলো ভালো ভাবে খেতে, পরতে পারছে না। কেন সেলিম হোসেন এখনো বিদায় করছে না শ্রাবণীকে এই সংসার থেকে? শ্রাবণী এই সংসারে উটকো যন্ত্রণা। বয়স তো কম হয়নি শ্রাবণীর। এসএসসি দিয়েছে। মেয়ে মানুষ এরচে বেশি লেখাপড়া করে কি হবে? এখনো কেন বিয়ে দিচ্ছে না শ্রাবণীকে? কলেজে ভর্তি করানোর টাকা কোথায় পাবে? এবার যদি শ্রাবণীকে বিয়ে না দিয়ে কলেজে ভর্তি করায় তাহলে পারভীন বেগম এ সংসার ছেড়ে চলে যাবেন। নিত্য নিত্য পারভীন বেগমের এমন হুমকি চলাকালীন সময়েই হঠাৎ শ্রাবণীর জন্য একটা ভালো প্রস্তাব পেয়ে গেল সেলিম হোসেন। তাই ধারদেনা করে মেয়ের বিয়ে দিচ্ছেন। সংসারে শ্রাবণীকে নিয়ে তৈরি হওয়া এই অশান্তি থেকে রেহাই চান তিনি। তাছাড়া সুন্দরী মেয়ে ঘরে রাখা বিপদের। এ বয়সে মেয়েদের চোখ ঘোলা হয়ে যায়। সবকিছু রঙিন, চকচকে দেখে। মেয়ে যদি কোনো বখাটের পাল্লায় পড়ে রাতের আঁধারে মায়ের মত পালিয়ে যায়? তখন মানসম্মান যাবে। মেয়ে দেখতে তো হুবহু মায়ের মত হয়েছে। চরিত্রটাও যদি সেরকম হয়? সুন্দরী মেয়ে নিয়ে অত শঙ্কার ভিতরে সেলিম হোসেন থাকতে চায় না। তাছাড়া শ্রাবণীকে কলেজে ভর্তি করানোর ইচ্ছে তারও নেই। বিয়ে দিতে পারলেই বেঁচে যায়। সেলিম হোসেনের আরো দুইটা সন্তান আছে। শ্রাবণীর সৎ ভাই-বোন। নীলা আর তুহিন। পারভীন বেগম আর সেলিম হোসেন তাদের লেখাপড়া আর ভবিষ্যতের চিন্তায় উদ্বিগ্ন। সেলিম হোসেনের ইনকাম অতি সামান্য। সে ইনকাম দিয়ে সংসার চালানো, তিন ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ দেওয়া মুশকিলের। পারভীন বেগমের ধারণা শ্রাবণীকে বিয়ে দিয়ে বিদায় করতে পারলেই সংসারের সকল ঝামেলা-ঝঞ্ঝাট, অভাব-অনটন দূর হয়ে যাবে। মেয়ে সুন্দরী হওয়ার দরুন পাত্রপক্ষকে কোনো রকম যৌতুক দিতে হবে না। যৌতুক না দিতে হলেও মেয়ের বিয়েতে আরো কত খরচ আছে। বরপক্ষকে খাওয়ার জন্য বিশাল আয়োজন করতে হবে। কত ভালো ঘরে বিয়ে হবে মেয়ের।
যে লোকটার সাথে শ্রাবণীর বিয়ে ঠিক হয়েছে সে লোকটার বয়স চৌত্রিশ। নাম পাবেল আহমেদ। লোকটার সাথে শ্রাবণীর বয়সের ব্যবধান আঠারো। পাবেল আহমেদ লেখাপড়া শেষ করেছেন অনেক আছে। চাকরিবাকরি কিছুই করছেন না, বেকার। তবে পুরোপুরি বেকার বলা যাচ্ছে না। রাজনীতি করে নাকি। বড় বড় নেতাদের সাথে ঘোরাফেরা করেন। তবে পাবেল আহমেদের বাবার বিশাল ব্যবসা আছে। আর পাবেল আহমেদ বাবার একমাত্র সন্তান। ভবিষ্যতে এই বিশাল ব্যবসা‌ কিংবা বাপের সমস্ত সম্পত্তির মালিক পাবেল আহমেদই। পাবেল আহমেদের মানেই হলো শ্রাবণীর, এই হিসেবেই বেকার ছেলের কাছে মেয়ের বিয়ে দিতে কোনো রকম আপত্তি করছেন না সেলিম হোসেন। সেলিম হোসেন শুনেছেন ছেলের একটু বাজে স্বভাব আছে। মদ, গাঁজা, সিগারেট খায় নাকি। সে নিয়েও তেমন কোনো আপত্তি নেই সেলিম হোসেনের। আজকালকার ছেলে একটু এমন হবেই। বিয়ের পর শ্রাবণী সব ছাড়িয়ে একদম সাংসারিক করে ফেলবে। আশেপাশের লোকজন বলছে ছেলের বয়সটা একটু বেশি। ছেলে আগে বিয়েসাদি করেনি তো? সেলিম হোসেন সেসব কথাও গুরুত্ব দিচ্ছেন না। চৌত্রিশ বছর বয়স। কত আর বেশি? ছেলের বাবাকে বয়স নিয়ে জিজ্ঞেস করতেই তিনি বললেন,
–‘ছেলে লেখাপড়া করেছে, রাজনীতি করছে এসবে বয়স কেটে গেছে। তাছাড়া আজকালকার ছেলেরা তাড়াতাড়ি বিয়ে করে নিজের স্বাধীনতা নষ্ট করতে চায় না।’
____________
অনেকক্ষণ ধরে নিঃশব্দে কাঁদছে শ্রাবণী। ফর্সা গাল দুটো লালচে হয়ে গেছে। চোখ গুলোও ফুলে গেছে। মাথার দুই পাশের রগ গুলো দপদপ করছে। দুই দিন ধরে কিছু খাচ্ছে না। সেদিকে কারো খেয়াল নেই। শরীরটা নিস্তেজ হয়ে আসছে ক্রমশ। এ বাসার কারো মুখের উপর কিছু বলার সাহস শ্রাবণীর নেই। সবার সব সিদ্ধান্ত মুখ বুজে মেনে নিয়েছে সারাজীবন। শ্রাবণীর চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। পৃথিবীটা বড্ড বিষাদময় লাগছে। এ বাসা ছেড়ে পালিয়ে চলে যেতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু কোথায় যাবে? নিজেকে ভীষণ একা মনে হচ্ছে। একাকীত্ব, অসহায়ত্ব গ্রাস করে ফেলছে শ্রাবণী। নিজের যন্ত্রণার, একাকীত্বের গল্প গুলো বলার মত কেউ নেই। নিজের ইচ্ছা অনিচ্ছা, অভিমান, অভিযোগ কখনো মুখ ফুটে প্রকাশ করতে পারেনি। আজও পারছে না। সেলিম হোসেনের মুখের উপর বলতে পারছে না, বাবা এ বিয়েটা ভেঙে দেও। আমি কলেজে ভর্তি হবো। লেখাপড়া করবো। শ্রাবণীর এই কথা গুলো শোনার মত কেউ নেই। হাত ধরে একটু প্রবোধ দেওয়ার মতও কেউ নেই। শ্রাবণী হঠাৎ গলা ছেড়ে চিৎকার করে কেঁদে ওঠল। শ্রাবণীর চিৎকার শুনে পাশের রুম থেকে পারভীন বেগম ছুটে আসেন। কাল বিয়ে। বাসায় ঢের কাজ। সবকিছু গোছগাছ করা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন পারভীন বেগম। পারভীন বেগমকে দেখে শ্রাবণী কান্না থামানোর চেষ্টা করে। এরকম পাষণ্ড মানুষকে কান্না দেখিয়ে লাভ নেই। এরা কখনো শ্রাবণীর কান্নার গুরুত্ব দেয়নি। শ্রাবণী কান্না চাপিয়ে থমথমে মুখে বসে রইল। দৃষ্টি ফ্লোরের দিকে নিবদ্ধ। পারভীন বেগম শ্রাবণীর দিকে এক নজর তাকিয়ে বলল,
–‘কি হয়েছে তোর? অযথা চিৎকার চেঁচামেচি করছিস কেন? মরছে কেউ? সকাল থেকে ফোঁস ফোঁস করে কাঁদতেছিস। দুনিয়াতে আর কোনো মেয়ের বিয়ে হয় না নাকি? তোকে ঘরে রেখে খুঁটি দিবো? এসব ন্যাকামি বাদ দিয়ে কাজ কর। একদম হাত-পা তুলে সকাল থেকে বসে আছিস। মা তো অন্য লোকের হাত ধরে ভাগাইছে। আপদ আমার মাথায় চাপিয়ে দিয়ে গেছে।’
শ্রাবণী নীরব হয়ে রইল। কোনো প্রত্যুত্তর করলো না। পারভীন বেগম কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে রুম থেকে চলে গেলেন। শ্রাবণীর চোখ থেকে নিভৃতে আবার জল গড়াচ্ছে। বুকের ভিতর উথালপাথাল কষ্ট ঢেউ খেলছে! সমস্ত দুঃখ নিজের মনেই চাপিয়ে রাখলো।
কাল বিয়ে। অথচ বাড়িতে কোনো শোরগোল নেই। আত্মীয় স্বজনের হৈহুল্লোড়, হৈচৈ নেই। কেবল ছোট একটা সাউন্ড বক্সে পুরানো হিন্দি গান গুলো বাজছে একের পর এক। শ্রাবণীর ছোট ভাই তুহিন পাশের বাসার নীতুলের কাছ থেকে চেয়ে এনেছে বক্সটি। পুরানো সাউন্ড বক্স। শব্দ এবাসা থেকে ওবাসা অবধিও পৌঁছায় না। তবুও তুহিন সকাল থেকে সেটাই বাজাচ্ছে মহা উৎসাহে। দুপুর গড়ালেও তার উৎসাহে এখনো ভাটা পড়েনি। আত্মীয় স্বজন এখনো কেউ আসেনি। সেলিম হোসেন সবাইকে বিয়ের দিন সকালে আসতে বলেছে। আর আত্মীয় স্বজন বলতেও তেমন কেউই না। শ্রাবণীর তিন ফুফু আর দুই চাচা। এর বাইরে সেলিম হোসেনের পরিচিতি দুই চার জন লোক ছাড়া আর কাউকেই বলা হয়নি। আত্মীয় স্বজন আগে আগে আসলে বাড়তি খাওয়া-দাওয়ার খরচ। তাছাড়া শ্রাবণীদের দুই রুমের বাসা। রুম গুলোও ছোট ছোট একদম। থাকার জায়গা নিয়েও সমস্যা।
সারারাত শ্রাবণীর ঘুম হলো না। রাত পোহালেই বিয়ে- এই ভাবনাটা শ্রাবণীকে ঘুমাতে দিলো না। সকাল হতেই ভীষণ মাথা ব্যথা শুরু হলো। শ্রাবণী মাথার উপর বালিশ চেপে শুয়ে রইল। রুমের বাইরে শ্রাবণীর বড় ফুফুর গলার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। বড় ফুফু এসে গেছে বোধ হয়। শ্রাবণী বিছানা ছেড়ে ওঠল না। ইচ্ছে করছে না। কিছুক্ষণ পরই শ্রাবণীর দরজায় কেউ কড়া নাড়লো। ক্লান্ত শরীর নিয়ে দরজা খুলতেই শ্রাবণী দেখল অজ্ঞাত এক যুকব দাঁড়িয়ে আছে দরজার সামনে। কাঁধে বড়সড় সাইজের একটা ব্যাগ। শ্রাবণী ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল চমকে গিয়ে। চেনা চেনা লাগছে যুবককে। কিন্তু ঠিক মনে করতে পারছে না। শ্রাবণী কিছু বলার আগেই যুবকটি বলে ওঠল,
–‘এত বড়ো হয়ে গেছিস শ্রাবণী! কত ছোট দেখেছিলাম তোকে। তখন বোধ হয় তুই ফাইভে পড়তিস। আমায় চিনতে পারছিস না?’
–‘যাইফ ভাই আপনি?’
–‘হ্যাঁ। তুই নাকি ছাত্রী হিসেবে খুব ভালো। কিন্তু তোর স্মৃতিশক্তি এতো খারাপ কেন?’
কথাটা বলতে বলতে শ্রাবণীকে পাশ কাটিয়ে রুমে ঢুকলো যাইফ। কাঁধের ব্যাগটা টেবিলের উপর রাখলো। তারপর শ্রাবণীর দিকে তাকিয়ে বলল,
–‘চেহারা এমন দেখাচ্ছে কেন তোর? বিয়েতে রাজি না না-কি?’
শ্রাবণী সন্তপর্ণে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস গোপন করে দরজার সামনে থেকে খাটের দিকে এগিয়ে গেল। যাইফের কথার উত্তর দিলো না। যাইফকে শ্রাবণী অনেক আগে দেখেছে। চেহারাও পরিষ্কার মনে নেই। তবে এইটুকু মনে আছে যে তখন যাইফের মুখে এমন চাপদাঁড়ি ছিলো না। যাইফের মা বছরান্তে একবার আসলেও যাইফ তেমন আসে না। পাঁচ বছর পর এসেছে এবার।
–‘রাতে বাসে ঘুম হয়নি। বাসে ঘুমাতে পারিনা আমি। ঘুমে চোখ জ্বলে যাচ্ছে। তোদের দুই রুমের মুরগির খোপের মত একটা বাসা। তোর বাবা এত কিপ্টামি করে কেন? বাসা বড় করে না কেন? মেয়ের জামাই এসে ঘুমাবে কোথায়? ওই রুম ভরতি মানুষ, হাউকাউ, চেঁচামেচি। আমি এখানে একটু ঘুমাবো। এই রুমে কাউকে আসতে দিস না।’
শ্রাবণী হ্যাঁ সূচক ভঙ্গিতে মাথা ঝাঁকালো কেবল। যাইফ খাটে শুয়ে পড়েছে। শ্রাবণী খাট থেকে উঠে চেয়ারে বসল। এর ভিতর যাইফ বলল,
–‘তুই কিসে পড়িস? এসএসসি দিয়েছিস?’
–‘হ্যাঁ।’
–‘এত অল্প বয়সে তোর বিয়ে দিচ্ছে কেন? প্রেম ট্রেম করে ধরা খেয়েছিস নাকি?’
শ্রাবণী নিতান্তই স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই বলল,
–‘না।’
–‘তোকে দেখে তো মনে হচ্ছে তুই দুই-তিন দিনের না খাওয়া। তুই কি বিয়েতে রাজি না?’
শ্রাবণী এবারও স্বাভাবিক গলায় বলল,
–‘না রাজি না। যে লোকের সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে সে আমার থেকে আঠারো বছরের বড়।’
যাইফ এবার চমকে গেল। এতক্ষণ যে হাসিঠাট্টার ভঙ্গিতে কথা বলছিল সেই ভঙ্গিটাও বদলে গেল মুহুর্তে। উদ্বিগ্ন হয়ে বলল,
–‘দুপুরে বরযাত্রী এসে পড়বে। বিয়ে হয়ে যাবে। রাজি না তো সেটা সবাইকে বলছিস না কেন? এভাবে বসে আছিস কেন? আঠারো বছরের বড় একটা লোকের সাথে কেন বিয়ে দিচ্ছে তোকে? কি অদ্ভুত!’
শ্রাবণীর গলা ধরে আসলো। কান্না পাচ্ছে ভীষণ। বলল,
–‘আমার কথা শোনার কেউ নেই যাইফ ভাই।’
–‘তুই একটা কাজ কর। তুই পালিয়ে যা।’
শ্রাবণী আঁতকে ওঠে বলল,
–‘কি বলছেন? আমি কোথায় পালিয়ে যাবো?’
–‘তুই পালিয়ে যেতে চাইলে আমি ব্যবস্থা করে দিতে পারি। তোর থাকা-খাওয়া, এভরিথিং।’
–‘না, না আমায় দিয়ে এসব হবে না। বাবা আমায় খুন করে ফেলবে।’
–‘তো তুই ওই বুড়ো লোকের সংসার করবি? বিয়ে, সংসার এসবের বয়স হয়েছে তোর?’
শ্রাবণীর চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। কোনো কথা বলছে না। যাইফ বলল,
–‘আচ্ছা তোর বয়স আঠারো হয়েছে?’
–‘না।’
এর ভিতর পারভীন বেগম আসলো হুট করে। যাইফের সাথে শ্রাবণীর কথা আর এগোয়নি। গোসল দিয়ে দ্রুত রেডি হতে বললো শ্রাবণীকে। অগত্যা শ্রাবণী কাপড়চোপড় নিয়ে বাথরুমে ঢুকলো। বরযাত্রী আসার সময় হয়ে গেছে। বউ সাজানো হলো শ্রাবণীকে। অসম্ভব মিষ্টি লাগছে শ্রাবণীকে দেখতে। এই সংসারের সবার অপ্রিয় শ্রাবণী চলে যাবে। নিত্য আর ঝগড়া হবে না শ্রাবণীকে নিয়ে। নিজের চিরপরিচিত রুমটা, রুমের সামনে বারান্দাটা, বাসার দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা শিমুল গাছটা সবকিছুর জন্য মায়া হচ্ছে শ্রাবণীর। মনের ভিতর অন্য আরেক ভয়ও উঁকি দিচ্ছে শ্রাবণীর। স্বামী নামক মানুষটা কেমন হবে? শ্রাবণী কি হতে পারবে আদৌ কারো প্রিয়?
__________________
(চলবে)

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..