জ্ঞান ফিরতেই বুঝতে পারলাম চোখ কাপড় দিয়ে বাধাঁ এবং হাত-পা ও বাধাঁ। খুব রকমভাবে চেস্টা করেও পারলামনা নিজেকে মুক্ত করতে। হঠাৎ কারো কথার শব্দে জড়োসরো হয়ে বসলাম মুখটা না বাধাঁয় জোরে আওয়াজ দিয়ে বললাম,
“কে আছো আমায় ছেড়ে দাও।আমি মুক্তি চাই। কেনো করছো এমন? ছেড়ে দাও।”
কথাটা শেষ করতে না করতেই কারো পায়ের আওয়াজ আগের চেয়ে দ্রুতগতিতে বাড়তে লাগলো। এবার বুঝতে পারি সে আমার সামনে।তার উপস্থিতিটা টের পেলেও চোখ বাধাঁ থাকায় সে আসলে কে তা বুঝতে না পেরে বললাম, “কে তুমি? কি চাও আমার থেকে? আমি জানি এখানেই আছো তুমি।আমায় ছেড়ে দাও?
হঠাৎ তার পৈশাচিক হাসির সাথে সে বলে উঠলো,,”ছেড়ে দেবো? হাহাহা! প্রশ্নই ওঠেটা।ছেড়ে দেয়ার জন্যেতো তোমায় ৩ টা বছর এখানে এভাবে রেখে দিইনি…।”
এতক্ষণে বুঝে গেলাম ও একজন মেয়ে, এবার তার কথার মাঝেই বলে উঠলাম, কিহ? ৩টা বছর আমি এখানে বন্দি?আমি তোমার কি ক্ষতি করেছি যে এভাবে বন্দি করে রেখেছো?
মেয়েটি এবার রাগান্বিত হয়ে আমার মুখ চেপে বললো,”তুই আমার কি ক্ষতি করেছিস বর্তমানে নিজেও জানিসটা আয়াত। কেনোনা তোর অতীতের সব ভুলিয়ে দিয়েছি। এখানেই তোকে বাকিটা জীবন থাকতে হবে।” কথাটা বলেই এক ধাক্কায় ফেলে দিলো।
আমিও কান্না,রাগে বলে উঠলাম,”এভাবে আমি বাচঁতে চাইনা।আমায় মেরে ফেলো, একেবারে শেষ করে দাও।
পৈশাচিক হাসি দিয়ে মেয়েটা বললো,”তোমায় যে এভাবেই একটু একটু করে কস্ট দিয়ে মারবো বোনটি…। তুই যতো কস্ট পাবি আমার মনের জ্বালা ততই মিটবে…।” কথাটা বলেই রয়েল নামের একটা ছেলেকে ডাকলো বললো ইনজেকশনটা নিয়ে আয়।ও কিভাবে জেগে গেলো। এতদিনের প্ল্যান আমার নস্ট হলে তোদের জানে মেরে ফেলবো কামিনার দল…”
কথাগুলো শুনছিলাম মনোযোগ দিয়ে।এর মানে ওরা আমায় ইনজেকশন দিয়ে রেখে দিয়েছে গত ৩ বছর হলো।তবে আমি কে.. কি আমার ঠিকানা?
কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই মেয়েটাসহ ছেলেটা আমায় জোর করে ধরে ইনজেক্শন পুস করে একটু পর আমার আর কিছুই মনে থাকেনা।মাথা ভার হয়ে যায় এবং আমি পূর্বের মতোই জ্ঞান হারিয়ে সেখানেই পড়ে থাকি।
আমার যখন জ্ঞান ফিরলো তখন বুঝতে পারলাম এখন আর আমার আশে-পাশে কেউ নেই। আমি নিজেকে ছাড়ানোর চেস্টা করলাম পূনরায়। আমার এখান থেকে যেকোনো মূল্যে ছাড়া পেতেই হবে।(মনে মনে বলতে লাগলাম)
ওরা আমায় গত ৩ বছর এভাবেই রেখে দিতো।কিছু একটা দিতো যার ফলে আমি দূর্বল হয়ে যেতাম, জ্ঞান থাকতোনা।আর ১টা ডোজ শেষ হতে না হতেই আরেকটা দিতো যার ফলে আমার জ্ঞান ফিরতোনা সহজে।আর যখন ফিরতো তখন নিজেকে ছাড়ানোর মতো শক্তি আমার ছিলনা বা এখনো নেই। কেউ বা কারা আসতো আমায় খাবার খাইয়ে চলে যেতো।এই কয়েক বছরে ১ম ১ম নিজেকে ছাড়ানোর চেস্টা করলেও পরে আর শরীরের দূর্বলতার কাছে হার মেনে থেমে যাই। তবে আজ ব্যাতিক্রম ডোজের কাজ হয়তো শেষ হচ্ছে ওরা দিতে ভুলে গেছে হয়তো এর আগেও তাই হয়েছিল এবং ওই মহিলার সাথে কথা হলো পরিশেষে আমায় আবার ঔষুধ দিয়ে রাখা হয়।তবে এবার হতে দেয়া যাবেনা।ওরা আশার আগেই পালাতে হবে। এটাই হয়তো সুযোগ।( আনমনে কথাগুলো বিড়বিড় করে বলছিলাম)
আমার হাত-পা বেধে শুয়ে রাখায় খুব কস্ট করে বসে যাই। হাতটা পেছনে বাধা থাকায় কিছু করতে পারলামনা হাত দিয়ে।
“আমি জানিনা চারপাশে কোথায় কি আছে তোহ আমার আগে চোখটা খুলতে হবে। তবে কিভাবে? আল্লাহ সহায় হও বুদ্ধি দাও!”
ভাবতে ভাবতেই বুদ্ধি এলো,” আমিতো হাটু দিয়েই চোখটা খুলতে না পারলেও কোনোরকমভাবে সরাতেতো পারি..।” কথাটা ভাবতেই মনে আনন্দের বন্যা বয়ে গেলো।
এরপর খুব কস্ট করে হাটুঁ ভাজ করে বসে, হাটুঁ দিয়ে চোখের দিকে ঘোসলাম একটা সময় কাপড়টা পাতলা হওয়ায় সরে গেলো।যদিও পুরো না একটু তবে এটাই যথেস্ট।
চারিদিকে খুজে তেমন কিছুই পেলামনা। হঠাৎ খেয়াল করলাম দূরে একটা নোংরা কাচের গ্লাস পরে আছে। কিছুটা খুশি হলাম এরপরেই ভাবলাম কিভাবে এতদূর যাবো। এরপর ঠিক করলাম হামাগুড়ু,শুয়ে যেভাবে পারি যাবো।ঠিক তাই করলাম। এবার গ্লাসটা নিয়ে পা দিয়ে মেজেতে আঘাত করায় ভেঙে যায় আর আমার পাও কেটে যায়। এবার কাচের টুকরা ঠোটে নিয়ে পায়ের দড়ি কাটার চেস্টা করি। প্রায় ১ ঘন্টার মতো করতে করতে হয়ে যায়।
“নিজেকে মুক্ত পাখি মনে হচ্ছিল
ইচ্ছে করলো ডাবা ঝাপটিয়ে আকাশ ঘুরি।”
দারিয়ে পড়লাম এবং দেখলাম দিন আছে তো পেছন দিকে ঘুরে হাতের বাধন কেটে নিলাম।
এবার আমি সব বাধন থেকে মুক্ত। তবে দরজাতো বন্ধ। আমি কি এতো কাছে এসেও দূনিয়ার আলো দেখতে পাবোনা?
হঠাৎ কারো পায়ের শব্দে আমি শিহরিত। ভয়ে একাকার।”নাহ আমি বের হবো এখান থেকে,যেকোনো মূল্যে।”
আমি দরজার আড়ালে গিয়ে দাড়াই একটা কাঠ হাতে নিয়ে।যেই লোকটা দরজা খুলে ভেতরে আসে পেছন থেকে গিয়ে মাথায় আঘাত করি আর সাথে সাথেই রক্ত বের হয় এবং সে পড়ে যায়।আমি কিছুটা বিচলিত হয়ে যাই। এরপরেই সেখান থেকে বেরিয়ে পরি। “বাচাঁর এক নতুন অধ্যায়
খুজেঁ পেলাম এই দুনিয়ায়।”
বেরিয়ে দেখতে পেলাম একটা ঘন জঙ্গল, দিনের সূর্যের আলোয় চারদিকে খাখা রৌদ।
কোনো কিছু না ভেবে দৌড় শুরু করলাম।
“একবার যখন বেরিয়েছি কোনোভাবেই ধরা দেয়া চলবেনা”
প্রায় অনেকদূর হাঁটার পর দূর থেকে একটা রাস্তা দেখতে পেলাম। সেদিকেই হাঁটা শুরু করতে লাগলাম এবং একটা সময় পর রাস্তায় উঠলাম।”টানা ৩ বছর পর বাইরের হাওয়ায় আমি,সব জেনো নতুন লাগছে।”বলতে বলতেই রাস্তাই হাটছি।লোকজন কেমন অদ্ভুতভাবে আমায় দেখছে হঠাৎ আবার মাথা ঘুরে যায় আমার, চারদিকে অন্ধকার,ঝাপসা।
চোখ খুলেই দেখতে পেলাম একটা ঘরে আমি শুয়ে আছি,আর একটু দূরেই এক মহিলা ঘুরে দাড়িয়ে আছে।
“আমি কোথায়? কিভাবে এলাম? আর আপনি কে? আপনি ওই মহিলা যে আমায় আটকে রেখেছিলেন?”
মহিলাটি এবার ঘুরে আমার কথার জবাবে বললো,”শান্ত হও আমি তোমার কোনো ক্ষতি করতে আসিনি। আমি এই হসপিটালের নার্স আর তুমি ভয় পেয়োওনা এখানে তুমি নিরাপদ।”
কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনে তাকে প্রশ্ন করলাম,”কিন্তুু আমি এখানে আসলাম কিভাবে?”
নার্সটি বললো,”আমি রাস্তা দিয়ে আসছিলাম তখন দেখতে পেলাম তুমি দাঁড়িয়ে কেমন যেনো করছো এটা দেখে আমি থেমে যাই, তার একটু পর তুমি মাটিতে পড়ে যাও।সাথে সাথে আমিসহ ২/৩ জন লোক তোমার কাছে যাই।যেহেতু আমি এখানকার নার্স তাই তোমায় এখানেই নিয়ে আসি।”
“আপনি আজ না থাকলে কি যে হতো ধন্যবাদ নার্স আপু!”
নার্স আপুঃ হইছে আর কথা না,এমনিই তোমার রেস্ট দরকার।তোমার সাথে প্রয়োজনীয় কথা আছে তবে এখন না চলো তাড়াতাড়ী খেয়ে নাও এবং রেস্ট করো। একটু সুস্থ হও তারপর বাকি কথা।”
আমি বাধ্য মেয়ের মতো খাবার খেয়ে,ঔষুধ খেয়ে শুয়ে পড়ি। দূর্বল থাকায় একটুপরই ঘুমিয়ে যাই।
এভাবেই ২ দিন হসপিটালে ছিলাম। নার্স আপুর সেবায় এবং ডাক্তারদের চিকিৎসায় পুরো সুস্থ না হলেও কিছুটা সুস্থ আমি।
এখন সন্ধ্যা,,,
রুমে একা বালিশের সাথে ঘেসে বসে আছি।
হঠাৎ নার্স আপুর আগমন। সে এসেই আমায় দেখে মুচকি হাসি দিলো এবং উওরে আমিও একটু হাসলাম এবং নড়েচড়ে বসলাম।
নার্স আপুঃকি খবর ঘুম থেকে উঠলে কখন?
সেইতো দুপুরে খেয়া ঘুমিয়ে পড়েছিলে। এর
মধ্যে আমি ২ বার এসেছিলাম ঘুমিয়ে ছিলে
বলে ডাকিনি। এখন কেমন আছো?
আমিঃ ভালো। ধন্যবাদ নার্স আপু।
নার্স আপুঃ দূর পাগলী ধন্যবাদ কেনো?
আমিঃ এই যে উপকার করছো এতো..।
নার্স আপুঃ বাহ,,, বোন ও বলছো আবার কৃতজ্ঞতাও
প্রকাশ করছো?
আমিঃ বোনকে তুমি বলতে নেই, দূর দূর লাগে
এটা জানোনা??
নার্স আপুঃ হুমম তাওতো কথা,তবে যাই বলিস নামটা
কিন্তুু সেই,,, নার্স… আপু.. হাহাহা( ২জনেই
হেসে কুটিকুটি)
নার্স আপুঃ এই ২ দিন তেমন কিছু জানা হয়নি তোর
থেকে ভেবেছিলাম সুস্থ হ তারপর
বলবো…।
আমিঃ কি জিজ্ঞাসা করবা??
নার্স আপুঃ তোর নাম কি? কোথা থেকে এসেছিস
এগুলো কি কিছু মনে আছে তোর?
আমিঃ আমার নাম… আমি জানিনা তবে যেখানে
ছিলাম ওইখানে মহিলাটি বলেছিল আয়াত….।
নার্স আপুঃ তার মানে তোর নাম আয়াত….।
আয়াতঃ হয়তোবা জানিনা.
নার্স আপুঃ আচ্ছা তোর ঠিকানা কি তা কি জানিস?
আয়াতঃ নাহ,,, আমার কি ঠিকানা আমি তো
জানিনা…।আপু আমার সাথে এমন কেনো
হচ্ছে কেনো কিছু মনে করতে
পারছিনা???(উত্তেজিত হয়ে)
নার্স আপুঃ দেখ শান্ত হ, এমন করিস না( কাছে এসে
বুকে টেনে নিয়ে)। মূলতো তোকে একটা
বিশাক্ত ইনজেকশন এবং ড্রাকস দেয়া
হতো দিনে প্রায় কয়েকবার যার ফলে তুই
তোর অতীতসহ সব ভুলে গেছিসরে। তবে
চিন্তার কোনো কারণ নেই ধীরে ধীরে সুস্থ
হওয়া চান্স আছে। এটা যেকোনো সময়ই
হতে পারে হয় আজ নয় কাল বা ২/৩
বছর পর।সবই আল্লাহর ওপর নির্ভর
করছে।সে যখন চাইবে তখনই হবে।
আয়াতঃ আমি এখন কি করবো কোথায় থাকবো…?
নার্স আপুঃ বোন বলে যখন ডেকেছিস ফেলেতো দিতে
পারিনা..,যতদিন না তুই পরিবারের কাছে
ফিরে যেতে পারছিস ততদিন আমার
কাছেই থাকবি।
আয়াতঃ কেদেঁ ফেলি ( জড়িয়ে ধরি আপুকে)।
নার্স আপুঃ দূর পাগলী কাদসিস কেনো।থামনা!!
আচ্ছা শোন সব খুলে বলতো কিভাবে তুই
ওই রাস্তায় আসলি? এটা তো বুঝলাম কেউ
বা কারা তোকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল। কিছু
কি বলতে পারবি তাদের সম্পর্কে?
আয়াতঃ হ্যাঁ,,, একটু একটু শুনেছি যে আমায় নাকি ৩
বছর আটকে রাখা হয়। আর যে আটকে
রেখেছিল সে মহিলা ও বলেছিল যে
আমায়…..( সব কাহিনী বললো।পাঠকগণ
আগের কাহিনী পড়লে বুঝবেন)
নার্স আপুঃ কি খারাপ রে…। এরমানে তো ওরা তোকে
খুজছে…। তোকে গোপনে থাকতে হবেরে।
আর তোর নিজের প্রতি হওয়া অন্যায়ের
আয়াতঃ হ্যাঁ। অবশ্যই হবে আমিতো নিজের পরিচয়ই
জানিনা?
নার্সঃ আজ থেকে তুই আমার পরিচয়ে আমার বোন
হয়ে বাঁচবি আর আমার সাথেই থাকবি যতদিন
না নিজের বদলা নিচ্ছিস এবং পরিবারকে ফিরে
পাচ্ছিস…..
পরেরদিন সকালে যথারীতি বুয়ারা যা যা কাজ করে তাই করলাম। এবার সকলে এসেছে সকালের খাবার খেতে খাবার টেবিলে। সকলে বলতে সেইতো মামুনি, প্রিয়া। বাবা, আয়রা, ফুপি ওদের কাউকেই দেখতে পেলামনা বিশেষ করে আমার চোখতে খুজছে অন্য কাউকে তাই কৌতুহলী হয়ে জিগ্যেস করলাম,,,
আয়াতঃ আচ্ছা আপামনি এত্তো বড় বাড়ীতে কি আপনেরা একলাই থাকেন?
প্রিয়াঃ কেনো কি হইছে?( খেতে খেতে কিছুটা বিরক্ত হয়ে)
আয়াতঃ না না এমনি আর কি.. এত বড় বাড়ী কাল রাতের পর থেকে এহুনো তো কাউরে দেখলামনা তাই…( ভয়ে ভয়ে)
মামুনিঃ আরে না না আরো অনেকে আছে। আমার ১টা ছেলে, মেয়ে তোমার বড় সাহেব আর এই যে প্রিয়ার আম্মু।
আয়াতঃ ওহ আচ্ছা তা তারা এহুন কোনহানে?
মামুনিঃ তোমার বড় সাহেব আর আয়ান বিজনেসের জন্য দেশের বাইরে যায়। আয়রা মানে আমার মেয়ে পরিক্ষা শেষতো তাই ঘুরতে যায় আর প্রিয়ার আম্মু মানে আমার ননদ তার শশুড়বাড়ী যায়।
আয়াতঃ তা আপামনি গেলেননা কেন মায়ের লগে?
প্রিয়াঃ সেই কৈফত কি তোমায় দিতে হবে?
মামুনিঃ এভাবে বলছো কেনো ওতো এমনি জিগাইছে। আসলে কি প্রিয়া তেমন একটা বাইরে যাচ্ছে না কয়েকদিন হলো অসুস্থতো তাই।
প্রিয়াঃ এই মেয়ে তোমার নাম কি, পরিচয় কি সব বলো? কি এক হাত ঘোমটা দিয়ে থাকে ঘোমটা খোলো মুখ দেখবো? মামুনি কাল যে ওকে বাসায় ঢুকালে কিছু কি জানো ওর সম্পর্কে?
মামুনিঃ ওহ হ্যা তোমার নাম কি তাইতো জানিনা নাম কি?
আয়াতঃ আয়া,,,,,,,,,আয়না। আর ছোট আগে যে কাম করছি ওইহানেই ছিলাম। আমার কোনো পরিচয় নাই।
মামুনিঃ এভাবে তা মুখ ঢেকে থাকো কেনো?
আয়াত/আয়নাঃ আসলে আমি দেখতে অনেক খারাপতো তাই। ( ভয়ে বানিয়ে বললাম)
প্রিয়াঃ এটা কোনো কথা? এই যত খারাপ চেহারাই হোক ঘোমটা খোলো।
মামুনিঃ থাক ওকে জোর করিস নাতো যেভাবে ভালো লাগে থাকুক।
প্রিয়াঃ আচ্ছা যা মন চায় করো তোমার বাড়ী তোমার সংসার যাকে রাখার রাখো। আম্মু আসুক শুধু তারপর ওর পরিচয় কিভাবে বের করতে হয় দেখবে।( বলেই চলে যায়)
মামুনিঃ এতো রাগ করছিস কেনো?
এরপর মামুনি আমায় খাবার গুলো ভালোভাবে রেখে দিতে বললো এবং সারাদিনে যা যা কাজ আছে সব করলাম।
রাত ৪ টার দিকে
ড্রইং রুম থেকে অনেক জোরে জোরে ভাবি ভাবি বলে কেউ একজন চিল্লাছে তখন আমি আমার ঘরে।
আয়াত/আয়নাঃ ইসস কে রে কানের পোকা নরেচরে বসবো এর চিল্লানিতে( নিজে নিজেই বলতে লাগলাম)
এরপর গিয়ে দেখি ফুপি। ফুপিকে দেখে আমিতো মহাখুশি। কারণ উনি আয়ানের ফুপি হলেও আমাকেও নিজের ভাতিজি ভেবে অনেক ভালোবাসতেন। হঠাৎ খেয়াল করলাম মামুনি, প্রিয়াও এসেছে,,,
মামুনিঃ কি গো কি হইছে পুতুল এভাবে চিল্লাছিস কেনো?
ফুপিঃ ভাবি… তুমি কাকে বাসায় আনছো বলো? জানা নাই চেনা নাই চোর ডাকাতও তো হতে পারে। আমরাও কেউ ছিলাম না তোমার যদি কিছু হতো বলো নিজেকে কি ক্ষমা করতে পারতাম বলো?
মামুনিঃ আরে কি বলিস এসব আমি আবার কি করলাম?
ফুপিঃ তুমি নাকি কাকে বাসায় আনছো?
মামুনিঃ ওহ আয়নার কথা বলছিস? আরে ও অনেক ভালো রান্নার হাতও ভালো। সারাদিনে আমার ১টা কাজও করতে হয়নি সব ও করেছে।
ফুপিঃ তা না হয় বুঝলাম তবে ওর Bio নিছো?
মামুনিঃ বললো ও নাকি অনাথ ছোট থেকেই এক নার্সের বাসায় কাজ করছে ওখানেই ছিল।
ফুপিঃ তা হঠাৎ কি এমন হলো যে কাজ থেকে বাদ দিয়ে দিলো? ( আমাকে উদ্দেশ্য করে)
আয়াত/আয়নাঃ আর কইয়েননা আপা থুক্কু মেডাম ওই নার্স আপা নাকি আর আমারে রাখতে পারবোনা, এতদিন রাখছে তাই অনেক আর আমারও থাকার মন নাই মেডামের মাও বুড়ি হইয়া এখুন বড় জালায় খালি খ্যাট খ্যাট করে।
ফুপিঃ ওহ এই ব্যাপার। আচ্ছা শোনো কাল গিয়ে তার নামবার আনবে কথা বলবো তোমার সম্পর্কে সব জানবো তারপর পারমানেন্ট কাজ হবে তার আগে না।
আয়াত/আয়নাঃ আইচ্ছা।
মামুনিঃ ঠিক আছে আনবে যাও এবার গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো তোমার ভাইয়ারাও ল্যান্ড করছে আসছে যাও সবাই একসাথে খাওয়া হবে।
ফুপিঃ ওমা তাই ঠিক আছে যাচ্ছি।(বলে চলে যায়)
আমিও চলে যাই রান্নার কাজে আয়ানকে দেখবো আজ ৩ বছর পর। জানিনা নিজেকে সামলাতে পারবো কিনা ওকে দেখে। আচ্ছা আমি তো ওর কাছে মৃত তাইনা? ওর কি আমার কথা মনে আছে?
হঠাৎ গাড়ীর আওয়াজে ধ্যানে ফিরলাম। বুঝতে বাকি নেই যে ওরা চলে এসেছে। আমি আর সেখানে গেলামনা। কোন অধিকারে দেখা করতে যাবো আমিতো কাজের মেয়ে।
এরপর বাড়ীতে হইচই লেগে গেলো প্রিয়াতো আয়ান আয়ান বলতে বলতে ছুটে গেলো রান্নাঘর থেকে এসব দেখছিলাম গা জ্বলে যাচ্ছিল।
সবাই কিছুক্ষণ কথা বলে চলে গেলো ফ্রেস হতে এরপর আবার খাবার টেবিলে সবাই একসাথে।
বাবাঃ এই মেয়েটা কে?
প্রিয়াঃ নতুন বুয়া।
বাবাঃ তা কাজকর্ম কেমন করে? চলবে?
মামুনিঃ দৌড়বে। খুব ভালো কাজ করে আমায় তো কিছু করতেই দেয়না। আর খুব মিশুক ধরণের মেয়ে।
ফুপিঃ হ্যা কথা শুনে তো তাই মনে হয়। ভাইয়া কাল ওকে বলেছি আগে যে কাজ করতো তার সাথে কথা বলায়া দিতে।
বাবাঃ ভালো করেছিস।
এতক্ষণ সবাইকে পরিবেশনসহ আরো কাজ করছিলাম আর কথাগুলো শুনছিলাম।আর আড়চোখে আয়ানকে দেখছিলাম মনে হচ্ছে আমার মৃত্যু ওর কাছে কিছুই না দিব্যি সকলের সাথে হেসে কথা বলছে।
মোটামুটি সকলের মন জয় করতে পেরেছি বলে মনে হচ্ছে। এবার শুধু প্রিয়া আর আয়রা বাদ। আর আমি জানি ওদের দূর্বল জায়গাটা ঠিক কোথায়। আর কিভাবে মিশলে ওরা আমায় আপন ভাববে।
সবার খাবার শেষে একে একে সবাই উঠে গেলো আমিও খেয়ে সব পরিষ্কার করে শুতে গেলাম। তবে কেনো জানি ঘুম আসছে না আয়ানের কাছে যেতে ইচ্ছে করছে ওকে আবারও দেখতে ইচ্ছে করছে তাই ওর রুমের বাইরে গিয়ে দাড়াই।
“একি আয়ান কারো সাথে কথা বলছে তাহলে কি ওর রুমে কেউ”
আবারও কথার আওয়াজ “আয়ু কেনো ছেড়ে গেলে? জানো এই কয়েকদিন দেশের বাইরে ছিলাম কাজে ছিলাম ভালো ছিলো তবে আজ যখনই দেশের মাটিতে পা দিলাম মনটা আতকে উঠলো এই রুমে এই বাড়ীতে আমার থাকতে ইচ্ছে করেনা আয়ু। সবখানে যে তোমার সৃতি। জানো আমার খুব কস্ট হয় বুকে পাথর দিয়ে হাসিমুখে থাকতে। সকলে ভাবে আমি বদলে গেছি, তোমায় ভুলে গেছি তবে না।তোমায় ভোলা অসম্ভব। কেনো কেনো চলে গেলে এভাবে?”
সেখানে দাড়িয়ে থাকা আমার আর সম্ভব নয়। চোখে তরল কিছু অনুভব করলাম। হ্যাঁ আমার কান্না পাচ্ছে খুব। খুব ইচ্ছে হচ্ছে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বলি, ” আমি কোথাও যাইনি তোমার খুব কাছে আছি।” তবে তা সম্ভব নয়।সেখান থেকে কাঁদতে কাঁদতে এসে নিজের রুমে দরজা বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। আয়ানের সেই কথাগুলো তীরের মতো বুকে এসে লাগছিলো।
আর আমি কি না কি ভেবে বসেছিলাম।
এভাবে নিজে কথা বলতে বলতে কখন যে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম বুঝতেই পারিনি। সকালে উঠে আবার রান্না করে শুধু মামনিকে বলে বাকি সবাই ওঠার আগেই আমি অরিন আপুর বাসায় চলে এলাম। পুরো ঘটনা আপু এবং মাকে বললাম।
মাঃ দেখেছি কি বদমাইশ মেয়ে আমি নাকি খ্যাক খ্যাক করি, বুড়ি হয়ে গেছি?( আমার কান ধরে)
আয়াতঃ ইসস মা লাগছে ছাড়ো। এগুলোতো বানিয়ে বলেছি। তুমিতো আমার কিউট মা। (জরিয়ে ধরে)
মাঃ হয়েছে হয়েছে আর ভাব নিতে হবেনা তুই কথা বল আমি খাবার আনছি।
আয়াতঃ আরে না আমি খেয়ে এসেছি খাবোনা।(হাত ধরে)
মাঃ আপনি কি খেয়ে এসেছেন আর তারা আপনাকে কেমন যত্ন করেছে তা আমার জানা আছে। চুপচাপ বসে থাক ডাকলে ২জনে চলে আসবি।( চলে গেলো)
আপুঃ আচ্ছা এবার বল এদিকে আমায় কি করতে হবে?
আয়াতঃ আমার সাথে যেতে হবে।
আপুঃ আমিই???
আয়াতঃ হ্যাঁ।
আপুঃ যদি কোনো গন্ডগোল হয়ে যায়?
আয়াতঃ না কিচ্ছু হবেনা। তুমি শুধু আমার বানিয়ে বলা কথাগুলো বলবা।
আপুঃ আচ্ছা তা না হয় বলবো। সমস্যা নেই।
আয়াতঃ আর যে কাজটা দিয়েছিলাম তা কি হয়েছে?
আপুঃ হ্যাঁ হয়েছে। তবে আজ তোকে আমার সাথে সেখানে যেতে হবে।
আয়াতঃ আমাকে কেনো লাগবে? তুমি একা গেলেইতো হয়?
আপুঃ নাহ।ব্যাপারটা তোর তাই তোকেই যেতে হবে।
আয়াতঃ আচ্ছা আজ যখন বের হলামই আজই যাবো। এতো বের হলে সন্দেহ করবে সবাই।
ইতিমধ্যেই মায়ের ডাক পরলো,,,
৩জনে একসাথে খাবার খেলাম এবং বেরিয়ে পড়লাম আমাদের সিক্রেট কাজে। কাজ শেষ করে চলে গেলাম চৌধুরী বাড়ী মানে আয়ানের বাড়ীতে।
বাসার কলিংবেলে চাপ দিতেই ফুপি দরজা খুললো আমিও আমার ইন্টারন্যাশনাল Acting শুরু করে দিলাম।
আয়াত/ আয়নাঃ মেডাম এই দ্যাহেন কারে লইয়া আইছি।
ফুপিঃ কে এটা?
আয়াত/আয়নাঃ আরে!! ভুইলা গেলেন? যে আপার বাড়ীতে থাকছি, খাইছি হেই আপা।
ফুপিঃ ওহ! ভেতরে আসুন( আপুকে উদ্দেশ্য করে)
আমরা ভিতরে চলে যাই। আপুকে বসতে বলে ফুপি। মামুনি, প্রিয়া ওরাও চলে আসে।
ফুপিঃ আপনার পরিচয়?
অরিন আপুঃ জ্বিহ আমার নাম অরিন ইসলাম। আমি (…..) নার্সের জব করছি।
প্রিয়াঃ আয়না আপনার বাসায় থাকতো?
আপুঃ জ্বিহ
প্রিয়াঃ তা আর রাখলেন না কেনো?
আপুঃ কিছু সমস্যা ছিল তাই। তবে ও কাজ খুব ভালো পারে। ওর হাতের কাজ অনেক ভালো।যে কাজ করে তা পূর্ণ করেই করে।
প্রিয়াঃ আচ্ছা ও কি এভাবেই ১ হাত ঘোমটা দিয়ে থাকে?
আপুঃ জ্বিহ
কথা বলতে বলতেই আয়ান এবং বাবা চলে আসে। তারা এসে মামুনিকে বললে সে বলে আমি যেখানে কাজ করতাম সেই আপু। এরপর তারা নিজের রুমে চলে যেতে চাইলে ফুপি মানা করায় সেখানেই বসে এবং আপুর থেকে টুকিটাকি প্রশ্ন জানে।
ফুপিঃ আমাদের এখানে এভাবে ঘোমটা দিয়ে থাকা চলবে না। আমরা কাউকেই ভরসা পাইনা। এই মেয়ে ঘোমটা তোলো।
আয়াত/আয়নাঃ না মানে মেডাম…
প্রিয়াঃ যা বলা হইছে করো এতো মানে মানে করতে হবে না
অবশেষে অনেক জোরাজোরি করার পর,,,,
আয়াত/আয়নাঃ আমি আমার মুখ এখন দেখাতে রাজি তয় সবসময় এমনই থাকবো মেডাম
প্রিয়াঃ তোমার শর্ত আমাদের শুনতে হবে?
বাবাঃ আচ্ছা ও যা বলছে মেনে নাওতো
আয়ানঃ হ্যাঁ এই ঝামেলা ভালো লাগছে না আর শেষ করো তাড়াতাড়ি।
আমি ভয়ে ভয়ে ঘোমটা খুলে নিচের দিকে তাকিয়ে আছি।কিছুক্ষণ পর মাথা উচু করে সকলের দিকে তাকিয়ে দেখি সবাই তাকিয়ে আছে। আমিতো ভয়ে ঠান্ডা। তখনি ফুপি বললো,,
ফুপিঃ আচ্ছা হইছে যাও কাজ করো।
আয়াত/আয়নাঃ আচ্ছা (ঘোমটা দিয়ে মুখ ঢেকে চলে গেলাম কাজে)
আপুও বিদায় নিলো যে যে যার যার কাছে গেলো।
আয়াতঃ জানো কাল ঘোমটা খুলতে বলেছিলো। এত্ত পরিমাণ ভয় পাইছি ভেবেছিলাম হয়তো এখানেই শেষ।
আপুঃ কি বলিস। তাহলে তো যেকোনো দিন আবার ধরতে পারে তখন কি করবি?
আয়াতঃ জানিনা।
আপু: এই শোন আইডিয়া
আয়াতঃ কি??
আপুঃ আমার সাথে চল( হাত ধরে টানতে টানতে রাস্তার উলতো দিকে নিয়ে যায়)
এরপর আপুর এক বান্ধবির বাসায় নিয়ে যায়।আপুর নাম তিতলি। তাকে বলে,” আমার ফেসটা এমনভাবে মেকাপ করতে যেনো রিয়েল ফেস না বুঝা যায়।”
তিতলিঃ তুই যতো মেকাপই করিস না কেনো ফেস বুঝা যাবে। এমন হয় না।
আয়াতঃ একটা আইডিয়া আপু
তিতলিঃ কি বলো?
আয়াতঃ আমি যদি পুরো মুখে কাজল নেই এবং পাউডার দেই তাহলেতো সমস্যা নাই।
তিতলিঃ হ্যা করা যায়।
এরপর এই কৌশল অবলম্বন করলাম। আর সেটিংস স্প্রে দিলাম যেনো ওয়াটার প্রুভ হয়।
তারপর চলে এলাম বাসা।
আয়াতঃ হাহাহা আপু আজ সকলের মুখ দেখার মতো ছিলো।
আপুঃ একেই বলে কপাল
আয়াতঃ হুম আসলেই। আজ এভাবে না আসলে কি হতো বলোতো। এখানেই সব শেষ।
আপুর সাথে আরো কিছুক্ষণ কথা বলার পর ঘুমিয়ে পড়লাম।
হঠাৎ ভাবণার অবসান ঘটিয়ে প্রিয়ার ডাক,,,
প্রিয়াঃ আয়না এই আয়না কোথায় গেলি মুখতো শুকিয়ে কাঠ হবে হবে ভাব জলদি আয়
মামুনিঃ কি ব্যাপার আয়না ও এভাবে ডাকছে কেনো?
আয়রাঃ সত্যিতো আর ওর মুখে কি?
আয়াত/আয়নাঃ সুন্দর, রুপবতী হওয়ার এবং ছোট সাহেবের মন জয় করা ফেইসপ্যাক যা বর্তমানে শুকাইয়া গেছে তাই এহুন আমারে ডাকতেছে ঘইসা তোলার জন্যে
৩ জনে একসাথে হেসে উঠলাম। এরপর ওদের থেকে বিদায় নিয়ে প্রিয়ার কাছে এলাম।
আয়াত/আয়নাঃ আপা ডাকেন কেন কন?
প্রিয়াঃ এই এটা শুকিয়ে গেছে তুলে দে
আয়াত/আয়নাঃ আপা মুখ ধুইলেইতো হয় এডাও আমার তোলা লাগবো?
প্রিয়াঃ কথা বলিসনাতো কাজ কর। ওখান থেকে কাপড় নিয়ে পানি ভিজিয়ে মুখটা মুছে দে, কালকেই ম্যানিকিউ করিয়েছি হাতের শেফ নস্ট হবে।
আয়াত/আয়নাঃ নবাবজাদী। আগেও জ্বালাইছে এখনো জ্বালায় (মনে মনে)
কথা না বাড়ায়া প্রিয়ার কথামতো কাজ করলাম এবং তখনকার মতো বিদায় নিলাম। প্রিয়ার রুমের পাশেই ফুপির রুম তোহ তার রুমের সামনে দিয়ে আসতেই জোরে জোরে কথা বলার শব্দ শুনতে পেলাম।কৌতুহলী হয়ে দরজার কাছে গিয়ে দাড়াই। যদিও কাজটা ঠিকনা তবুও।
ফুপিঃ তোমাদের দিয়ে তো কিচ্চু হবেনা। এতো বললাম তবুও
ফোনের ওপারের লোকঃ,,,,,,,,,,,(কিছু একটা বললো)
ফুপিঃ হ্যাঁ পারোই শুধু বারবার এক কথা বলতে
“এই মেয়ে এখানে কি করো” এই কথাটা,শুনেই পেছনে তাকিয়ে দেখি আয়ান। আমারতো প্রাণ যায় যায় অবস্থা।
আয়ানঃ কি হলো জবাব দিচ্ছো না কেনো? এখানে কি করো?
আয়াত/আয়নাঃ ইয়ে মামে স্যার এই যে ফুলদানিটা মুছতে আসছিলাম তা কাপড় নাই তাই দাড়িয়ে ভাবছিলাম কোথায় কাপড় পাই।
আয়ানঃ সত্যি তো?
আয়াত/আয়নাঃ জ্বিহ
আয়ান আর কথা না বলে চলে গেলো। যদিও মনে হলো না যে সে কথাটা বিশ্বাস করলো তবুও আপাতত বাচঁলামতো। এরপর আমিও আমার কাজে চলে গেলাম।
রাতে,,,,
সবাই বসার রুমে বসে আড্ডা দিচ্ছিল।আমি রান্না ঘরে রাতের খাবার আয়োজনে ব্যস্ত। রান্নাঘর বসার রুমের পাশে হওয়ায় সকলের কথার আওয়াজ ঠিকই কানে আসছিলো। ইতিমধ্যে আয়ান এবং বাবাও অফিস থেকে চলে আসলো এবং আড্ডায় অংশ নিলো। সকলের কথার মাঝেই বাবা বলল,,,
বাবাঃ সকলকে একটা সুসংবাদ দেয়ার আছে
মামুনিঃ কি সুসংবাদ
বাবাঃ আন্দাজ করো তো কি?
আয়রাঃ বাবা বলে দাও না এতো ভাবতে পারবোনা
বাবাঃ আমরা যে প্রজেক্টটা হাতে নিয়েছিলাম এবং লন্ডন গিয়েছিলাম ডিল ফাইনাল করতে তারা আমাদের চুক্তিতে রাজি এবং তাও ৫ বছরের জন্যে।
ফুপিঃ বাহ! খুব ভালো খবর
বাবাঃ তা নয়তো কি।
আয়রাঃ বাবা এতো ভালো খবর এর জন্য আমাদের পার্টি চাই কি বলো প্রিয়া আপু?
প্রিয়াঃ হ্যাঁ মামু আমরা কোনো না শুনবো না পার্টি দিতেই হবে
বাবাঃ না না এখন কিছু হবে না।
মামুনিঃ একটা ছুতো পেলে হয় পার্টি পার্টি আর পার্টি
আয়রাঃ আমাদের দাবি মানতে হবে
প্রিয়াঃ মানতে হবে মানতে হবে
আয়রাঃ আমাদের দাবি মানতে…..
আয়ানঃ হইছে হইছে বাবা মেনে নাও ছোট্ট পার্টিইতো( আয়রাকে থামিয়ে দিয়)
বাবাঃ আচ্ছা ছেলে যখন বললো
আয়রাঃ Yahhhhooo!! Love you ভাইয়া ( জড়িয়ে ধরে)
আয়ানঃ হইছে হইছে
বাবাঃ তবে পরশু কাল একেবারেই সম্ভব না
আয়রাঃ Ok done. আমার কিপ্টা বাবা রাজি এটাই অনেক
বাবাঃ কি আমি কিপ্টা?
আয়রাঃ তা নয়তো কি
মামুনিঃ হইছে আর বাবার পেছনে লাগতে হবে না। সবাই ফ্রেস হয়ে খেতে আসো।
এরপর যে যে যার যার রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে রাতের খাবার খেয়ে ঘুমাতে গেলো।
আমার ঘুম আসছেনা ফুপির ওভাবে কথা কারো সাথে কথা বলাটা আমায় ভাবাচ্ছে। “আচ্ছা এখানে কি কেনো গন্ডোগোল আছে নাকি আমিই উল্টোপাল্টা ভাবছি?”
এইসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি নিজেই জানিনা।
এইসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি নিজেই জানিনা। (আগের পর্বের কিছু অংশ)।
সকাল হতে না হতেই যে যে যার যার কাছে লেগে পড়েছে কারণ কালকে পার্টি। পার্টিটা ছোট করে করার কথা ছিলো কিন্তুু আয়ানদের সাথে যাদের চুক্তি হয়েছে তারাও আসবে তাই বড়ভাবেই পার্টিটা করা হবে। আর তাই সকলেই কাজে ব্যাস্ত। আয়রা, প্রিয়া শপিং-এ গিয়েছে। ফুপি আর মামুনি মেনু ঠিক করছে আর বাবা আর আয়ান যাদেরকে ইনভাইট করা হবে তাদের লিস্ট তৈরী করছে। আর আমি..? আমিসহ আরো কয়েকজন পুরো বাড়ী পরিষ্কার করছি।
আয়রাঃ মামুনি আমরা চলে এসেছি(শপিং থেকে)
মামুনিঃ এতো দেরি হয়? কি এতো কিনলি? আক্কেল জ্ঞান নাই?
ফুপিঃ আরে ভাবি থাকনা বকা দিওনা একদিন বাচ্চারা মজা করবেই
আয়রাঃ মামুনি রাগ করোনা তোমার জন্য সুন্দর শাড়ী এনেছি দেখলেই মন ভালো হবে।
মামুনিঃ হইছে আমাকে ঘুষ দিতে হবেনা।
আয়রাঃ না না ঘুষ না সবার জন্যেই কিনেছি আমরা তাইনা প্রিয়া আপু?
প্রিয়াঃ হ্যাঁ তাইতো।
আয়রাঃ বাবা, ভাইয়া কোথায়? বাবা…. ভাইয়া…( ডাকতে লাগলো জোরে জোরে)
বাবাঃ কি হলো এভাবে ডাকছো কেনো?
আয়রাঃ এদিকে আসো দেখো তোমার আর ভাইয়ার জন্য কি সুন্দর কোট,শার্ট কিনেছি
বাবাঃ এগুলোর কি দরকার ছিল?
আয়রাঃ দরকার আছে নাও (বলে বাবা এবং আয়ানকে জামাটা দিয়ে দেয়।) মামুনি আর ফুপি তোমাদের জন্যে একরকম শাড়ী কিনেছি তোমরা তো শাড়ী ছাড়া কিছু পড়োনা এই নাও(ফুপি আর মামুনিকে উদ্দেশ্য করে দিলো)। আর….(একটা শাড়ী হাতে নিয়ে) এইটা আয়নার ও কই? আয়না এই আয়না .. (ডাকতে শুরু করলো)
আমি এতক্ষণ দুপুরের রান্নার ব্যবস্থা করছিলাম। আয়রার ডাকেই ওদের কাছে যাই।
আয়াত/আয়নাঃ হ্যাঁ ছোট আপা কন(শাড়ীর আচঁলে হাত মুছতে মুছতে)
আয়রাঃ এই নাও এটা তোমার ( শাড়ী এগিয়ে দিয়ে)
আয়াত/আয়নাঃ এটা কি? আমি কি করমু?( কিছুটা অভাক হয়ে)
আয়রাঃ কাল এটা পড়বা
আয়াত/আয়নাঃ আরে না না ছোট আপা আমার লাগতোনা আমার অনেক শাড়ী আছে একটা ওইখান থেকে পড়লেই হইবো
মামুনিঃ নাও না মেয়েটা শখ করে এনেছে নাও পড়ো।
ফুপিঃ ওর জন্যে আনার কি দরকার ছিলো?
বাবাঃ কি বলিস? বাড়ীর সবাই পড়বে আর ও পুরোনো জামা পড়বে। আমাদের সাথেইতো থাকে সদস্য হয়ে গেছে।
মামুনিঃ হ্যাঁ তাইতো। আমিতো তোমার মেয়ের কান্ড দেখে অভাক হচ্ছি, ঠিক খেয়াল করে নিয়ে এসেছে।
বাবাঃ হ্যাঁ, পুরো আমার আয়াত মার মতো…..
বাবার কথাটা বলতে সময় লাগলেও সকলের মুখের রিয়াকশন দিতে সময় লাগলো না। এক মুহুর্তে কেমন জানি সবাই চুপ,,,,
আয়ানঃ (কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে সেখান থেকে চলে গেলো)
মামুনিঃ তোমার কি কোনোদিনই আক্কেল, জ্ঞান হবেনা?? দিলেতো সকলের মন খারাপ করে?
ফুপিঃ হুম সেটাই
বাবাঃ কি করবো মুখ ফসকে বলে ফেলেছি।
আয়রাঃতবে বাবা কথাটা মিথ্যা বলেনি। এই কাজ আমি আপুর থেকেই শিখেছি (মন খারাপ করে)
মামুনিঃ আয়রা মুখে লাগাম দাও চুপ থাকো একটু। যাও নিজের ঘরে যাও গোসল দাও।
আয়রাঃ Ok
এরপর একে একে সবাই যার যার কাজে চলে যায়।
তবে এখনো আমি সেখানে দাঁড়িয়ে আছি। চোঁখ দিয়ে জল অনবরত গড়িয়ে পড়ছে।
এই বাড়ীর প্রত্যেকটা মানুষ আমায় মনে রেখেছে ঠিক তবে কেউ কারো সামনে বলতে পারেনা। মনে মনে সকলেই কস্ট পায়। আজ খুব ইচ্ছে হচ্ছে সকলকে বলে দেই আমি তোমাদের সামনে এখনো জীবিত আছি।
হঠাৎ মাথায় আসলো, “আচ্ছা আমি হয়তো ওদের কাছে মৃত তবে ওরা কি জানে কিভাবে আমি মারা গেছি? এটা জানাটা আমার খুব দরকার।
আয়াতঃ হ্যালো বলুন
বিপরীত লোকঃ……….
আয়াতঃ কি কিভাবে সম্ভব। আচ্ছা ঠিক আছে রাখুন।
নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না কথাগুলো শুনে।
আজ আর কেউ বেশী রাত জাগেনি। সবাই খেয়ে ঘুমোতে গেছে। আমিও শত ভাবণা নিয়ে ঘুমিয়ে যাই।
পরেরদিন সকাল থেকে প্রচুর কাজ থাকে বাড়ীতে কেউ কারো সাথে তেমন কথা বলেনা কাজের বিষয় ছাড়া।
বাবাঃ এই আয়ান এদিকে আসো…(আয়ানকে উদ্দেশ্য করে)
আয়ানঃ হুম বলো
বাবাঃ শোনো একটু পরই মিজান সাহেবরা চলে আসবে তুমি তাদের রিসিভ করবে।
আয়ানঃ Ok
বাবাঃ আর শোনো দেখবে কারো যেনো আপ্পায়নে ট্রুটি না থাকে। বিশেষ করে মিজান সাহেব। আর তার সাথে কিন্তুু তার ফ্যামিলিও আসবে।
আয়ানঃ আচ্ছা আচ্ছা সব দেখবো টেনশন করিওনা।
বাবাঃ( একটু হেসে চলে গেলো)
বর্তমানে পার্টিতে প্রায় সবাই চলে এসেছে মামুনি,ফুপি আগেই এসেছে। তবে প্রিয়া আর আয়রা ওপর তাদের থেকে একটু পর আসে কেনোনা তারা পার্লারে গিয়েছিল।
ইতিমধ্যেই মিজান সাহেবসহ তার ফ্যামিলি চলে আসে। আয়ান তাদের রিসিভ করে।
এরপর সকলে যার যার মতো কথা বলতে থাকে।
হঠাৎ খেয়াল করি ঝারবাতিটা নিচে পড়বে পড়বে অবস্থা আর নিচে দাঁড়িয়ে আছে আয়ান……
আয়াত/আয়নাঃ ছোট সাহেব সরে দাঁড়ান
আয়ানসহ সকলে আয়াতের দিকে তাকিয়ে আছে
আয়াতঃ সরে দাঁড়ান। (বলেই আয়ানকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো এবং নিজেও আয়ানের ওপর পড়ে গেলো)
ঝারবাতিটাও একটু পর নিচে পড়ে ভেঙে গেলো।
এক নিমেশে সবাই ভয়ে চুপ হয়ে গেলো। কেউ এখনো বুঝে উঠতে পারলোনা যে আসলে হলোটা কি?
আয়ানের ওপর এখনো আয়াত শুয়ে আছে আর আয়ান একবার ঝাড়বাতির দিকে তাকিয়ে আয়াতের দিকে অপলক দৃস্টিতে তাকিয়ে আছে।
আয়াত এবার নিজেকে সামলে নিয়ে উঠে দাড়ালো।
বাবাঃ এই তোরা ঠিক আছিস তো?
মামুনিঃ আয়ান বাবা তোর কোথাও লাগেনীতো?( আয়ানকে জড়িয়ে ধরে)
আয়ানঃ নাহ ঠিক আছি।
বাবাঃ ধন্যবাদ আমার ছেলেকে বাঁচিয়ে দেয়ার জন্যে( হাত জোর করে বলছে)
আয়াত/আয়নাঃ একি ছিঃছিঃ বাব,,,,, বড় সাহেব কি করছেন? আপনি আমার বড়।
মামুনিঃ তুমি আজ আমার ছেলের জীবন বাঁচিয়ে যে উপকার করেছো তা কোনোদিন ভুলবোনা।
আয়াত/আয়নাঃ এটা যে আমার দায়িত্ব ( মনে মনে)
ফুপিঃ একি কি হয়েছে আমার আয়ানের দেখি দেখি
বাবাঃ আর বলিস না ঝারবাতিটা যে কিভাবে পড়লো? সবতো ঠিকই ছিলো তবুও।
ফুপিঃ হায় হায় বলো কি? তুই ঠিক আছিসতো?
আয়ানঃ হ্যা ঠিক আছি।
বাবাঃ আমি সবার কাছে দুঃখিত। আনন্দমূখর সময়টা এভাবে নস্ট হওয়ার জন্য। আপনারা ভয় পাবেননা Enjoy করুন।
একটুপর বাবা সকলের উদ্দেশ্যে বলে,,,
বাবাঃ Ladies and Gentleman। আজকে এই পার্টিতে আপনাদের উপস্থিতিতে সত্যি আমি খুশি। আর এই ছোট্ট পার্টি দেয়ার উদ্দশ্যে হলো কয়েকদিন আগে এটা ডিল করার জন্য লন্ডন যাই কম বেশী অনেকে জানেন আর সেই ডিলটা কাল ফাইনাল হয়।আর আমার খুশিতে আপনাদের সামিল করতেই এই আয়োজন। আর আমি যার সাথে ডিল ফাইনাল করেছি তিনিও আজ এখানে উপস্থিত। মিজান স্যার আপনি আজ এসেছেন বলে খুব খুশি হয়েছি।
Thank you
মিজান স্যারঃ আরে আরে Mention not Mention not.
এরপর সকলে পার্টিতে আরো কিছুক্ষণ সময় কাটায় তারপর বেশী রাত হওয়ায় সবাই খেয়ে বিদায় নেয়।
বাসার সবাইও যে যে যার যার রুমে চলে যায়।
সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন আমি চলে চাই বাইরের রুমে যেখানে ঝারবাতি পড়ে সেখানে। বিষয়টা কেমন জানি খটকা লাগলো,”এত বড় একটা জিনিস কেউতো আর হ্যানো ত্যানো ভাবে বেধে রাখবেনা, বাধলে ভালো করেই বাধবে। তবে এই কাজটা হলো কিভাব?” কি জেনো ভেবে আমি যে দেয়ালে দড়িটা বাধানো ছিলো সেখানে চলে যাই। গিয়ে দেখি দড়িটা ছেড়া না । হঠাৎ পড়ে গেলেতো ছিড়বে তবে একটুও মনে হচ্ছেনা এটা ছেড়া। তার মানে কি কেউ ইচ্ছে করে? কে করলো এটা? আয়ানের ক্ষতি কে করতে চায়?
এসব ভাবতে ভাবতে কারো পায়ের আওয়াজ পেয়ে দৌড়ে ঘরে গিয়ে দরজা আটকে দেই।
তবে একটুপর,,,,,, দরজায় কেউ কড়া নারে,,,
(বিঃদ্রঃ পাঠক/পাঠিকা কি মনে হয় কে করলো এই কাজ? সকলের মন্তব্য আশা করছি)
এসব ভাবতে ভাবতে কারো পায়ের আওয়াজ পেয়ে দৌড়ে ঘরে গিয়ে দরজা আটকে দেই।
তবে একটুপর,,,,,, দরজায় কেউ কড়া নারে,,,(আগের পর্বের কিছু অংশ)। আমি কিছুটা ভয়ে ভয়েই বললাম,”কে কে বাইরে? বাইরে থেকে কোনো উওর পেলামনা।
বরাবরই আমি একটু ভীতু ধরণের মনে মনে ভাবলাম, “ভুত নয়তো?” এরপর ৩ বারের বেশী দরজায় কড়া নারলো, তখন Sure হলাম না ভুত না।
তবে এবার আরেক ভয় বিরাজ করলো, “কেউ দেখে ফেলেনিতো আমায়”
নাহ এবার আর দেরী না করে ঘোমটা দিয়ে দরজা খুলেই ফেললাম। তবে আমি দরজা খুলে পুরোপুরি অবাক তবুও নিজেকে সামলে বললাম,” ছোট সাহেব আপনি?আপনি এহানে এতো রাতে কি করেন?”
আয়ানঃ তুমি আয়াতের রুপ ধরে কেনো এসেছো বলো?
আয়নাঃ আমি কারো রুপ ধরিনি।
আয়ানঃ একদম মিথ্যা বলবে না। আমি এখনি মামুনি বাবাকে বলে তোমায় পুলিশে দেবো( বলেই যেতে নেয়)
আয়না/আয়াতঃ আয়ান,,,,,(হাতটা চেপে ধরে এবং ঘোমটা খোলে)
আয়ানঃ (ফিরে তাকিয়ে থাকে সেই মুখের দিকে)
আয়না/আয়াতঃ আমি বহুরুপি নই, আমিই তোমার আয়ু(কাঁদতে কাঁদতে)
আয়ানঃJust shut up your mouth. আমার আয়াত ৩ বছর আগে মারা গেছে। আমি নিজে তাকে কবর দিয়ে এসেছি।
আয়াতঃ মানুষ চোখে যা দেখে সবসময় তা কি সত্য হয়?
আয়ানঃ আমি নিজের চোখে দেখেছি আমার আয়াতকে। তুমি মিথ্যা বলছো।তুমি বহুরুপি
আয়াতঃ আচ্ছা মানলাম আমি বহুরুপি। আমি আয়াতের মুখ কপি করতে পারলেও শরীরতো হুবহু কপি করতে পারবোনা তাইনা?
আয়ানঃ হুম তো?
আয়াতঃ তোমার মনে আছে আমাদের যখনই দেখা হতো তখনই তুমি আমার কাঁধের এই তিলটায় কিস করতে। আর বলতে,”এই তিলটা আমার খুব পছন্দের”(হাত দিয়ে কাঁধের তিলটা দেখিয়ে)
Leave a Reply