1. banglamailnews72@gmail.com : banglamailnews : Zakir Khan
শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
# আহারে # খোরশেদ ।। সমাজে নতুন অপরাধী চক্র তৈরী হচ্ছে কিন্তু ভবিষ‍্যতে এদের রক্ষা করবে কে??।। – – – আশিক ফারুকী “অতঃপর” __ সালমা আক্তার বীরাঙ্গনা নই আমি মুক্তিযোদ্ধা – – – শাহনাজ পারভীন মিতা জলপাই রঙের স্বাধীনতা – – – আরিফুল হাসান প্লাস্টিকের উৎপাদন বন্ধ করতে হবে – উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ান হাসান – – – স্বাধীন আজম –   টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধি, স্বপ্নমায়া – – – – মাহজাবীন আহমেদ বুড়ি মরে গেল – – – মোঃ আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমাম প্রযুক্তির দুনিয়ায় শিক্ষার্থীদের এখন উন্নত জীবন গড়ার দারুণ সময়:– ————–টিপু সুলতান লেখক ও সমাজ চিন্তক ডায়াবেটিস নিয়ে সচেতনতাই পারে ডায়াবেটিস রোগ নির্নয় ও রোগের চিকিৎসা এবং সঠিক ব্যবস্থাপনা – – – ডা: সাদিয়া আফরিন 

# প্রতিশোধ # তাসনীম_নিশাত — পর্ব:০১

  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১০ জুলাই, ২০২১
  • ২২৩ বার
চারিদিকে রক্তের গন্ধ! এর মধ্যেই আরফানকে ফেলে রাখা হয়েছে। হুশ ফিরে এলে প্রথমেই সে নিজেকে আবিষ্কার করল এক বদ্ধ ঘরে। নাহ! একবারের অন্ধকার না। কোথা থেকে যেন অল্প স্বল্প আলো আসছে। আলোর উৎস খুঁজে পেল না সে। অথবা খোঁজার চেষ্টা করল না। জ্ঞান হারাবার পূর্বের কথা মনে করার চেষ্টা করল সে। পারলো না। কিচ্ছু মনে করতে পারছে না শুধু একটি মুখ ছাড়া। কার মুখ? মনে করতে পারলো না! মাথার পিছনে ব্যাথা অনুভব করলো। চিনচিন ব্যথাটা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। মাথায় হাত দিয়ে উঠে বসল আরফান। মনে পড়লো জ্ঞান হারাবার পূর্ব মুহূর্তে কেউ একজন লাঠি দিয়ে দুবার জোড়ে আঘাত করেছিল। কে মারলো?
তার থেকে বড় কথা! সিনেমা সিরিয়াল গুলোতে সবসময়ই দেখায় মাথার পেছনে একবার আঘাত করলেই খলনায়কের মৃত্যু ঘটে!
তাহলে দু বার আঘাত পেয়েও সে মরলো না কেন? টিভিতে কি ভুল দেখায় তাহলে! এখন এই অবস্থায় তার টিভি সিরিয়াল আর সিনেমার কথা মনে পড়ছে কেন? ভাবতে পারলো না আরফান।
মাথা ব্যথার সাথে বদ্ধ ঘরের রক্তের বিশ্রী গন্ধে বমি পাচ্ছে তার। অন্ধকার ঘর! কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না! পরিবেশটা অসহ্য! গড়গড় করে বমি করলো আরফান। দুবার বমি শেষে নেতিয়ে পড়লো শরীর! চোখ বুজে এলো। ঘুম ঘুম ভাব হচ্ছে! চোখ বুজতেই মায়ের মুখটি সামনে এলো।
উঠে বসলো সে। তড়িৎ বেগে মনে পড়লো সবকিছু। মনে পড়লো মাকে, আদরের বোন আর…. অত্যন্ত কাছের মানুষটিকে, যার সাথে কদিন পরই বিয়ের কথা! এতক্ষণে মনে হল হুশ ফিরে রাইমার মুখখানাই আবছাভাবে মনে পড়েছিল! রাইমা তার বাগদত্তা!
আরফান ভাবলো, কোথায় সবাই? আর সে-ই বা এখানে কেন! আর এক মুহূর্ত এখানে থাকা যাবে না তার। বের হয়ে যেতে হবে যে কোন উপায়ে। খুঁজে বের করতে হবে সবাইকে। ওরা সবাই কি পালাতে পেরেছিল শেষ পর্যন্ত!
মৃত বাবার দেয়া নাম আরফান। সার্টিফিকেট নেইম আলাদা হলেও আরফান নামেই জনসম্মুখে পরিচিত। বেসরকারি একটি ফার্মে ম্যানেজার হিসেবে নিযুক্ত সে।
অন্ধকার হাতড়িয়ে একটা ছোট জানালা আবিষ্কার করলো সে। অনেক পুরোনো জানালা। তারই ছোট ছোট ফুঁটো দিয়ে বাইরের আলো আসছিল। আরফান জানালা খুলে দিল। ক্যাঁচক্যাঁচ শব্দে জানালা খুলে গেল। বদ্ধ ঘরের মধ্যে প্রবেশ করলো বিশুদ্ধ বাতাস! জানালা খোলার শব্দে একটি কাঠবিড়ালি ছুটে পালালো। জানালার বাইরে একটি গাছের পল খাচ্ছিল কাঠবিড়ালিটি। শব্দ পেয়ে বাইরে তাকাতেই ঘন জঙ্গল দেখতে পেল আরফান। অবাক হল। এই জঙ্গলের মধ্যে এই বাড়িটি কার! তাকে এখানে আনা হয়েছে কেন? ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় জানান দিল ঘোর বিপদে আছে সে। হয়ত তার কাছের মানুষ গুলোও!
জানালা থেকে সরে এসে ঘরের ভিতরে নজর দিল সে। রক্তের গন্ধের উৎস খুঁজে পেল! চমকে উঠলো।সাড়ি করে নিথর তিনটি দেহ পড়ে আছে। কে এরা! চেনা যাচ্ছে না! লাশগুলোর কাছে গেল আরফান। প্রথম দুজনকে চিনতে পারল না। সবগুলো লাশেরই চোখগুলো খুবলে তুলে ফেলা হয়েছে ! রক্তে মাখামাখি হয়ে আছে চেহারা। চেহারা দেখে চেনার উপায় নেই। তবে তিনজনই মেয়ে! তিন নম্বর লাশের দিকে তাকিয়েও চিনতে পারলো না! কিন্তু জামার দিকে তাকিয়ে চোখ আটকে গেল।
আরিফা! আরিফা আজ এই জামা পড়েই কলেজে গিয়েছিল। গত ঈদে আরফানই তাকে কিনে দিয়েছিল জামাটি! পড়নের শার্ট খুলে মুখে জমে থাকা আঠালো রক্ত মুছে দেয়ার বৃথা চেষ্টা করল আরফান। মুখের দিকে তাকিয়ে চিনতে পারল পরিচিত মুখটি! স্তব্ধ হয়ে গেল আরফান। লাশটিকে জাপটে জড়িয়ে ধরলো নিজের বুকে। আর আদরের ছোট বোনটি ভাইয়ের বুকের মাঝে চুপচাপ ঘুমিয়ে থাকলো!
দিশেহারা আরফান হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়লো। বদ্ধ ঘর থেকে বের হওয়ার চিন্তা হারিয়ে ফেললো। ঘরের বাহিরে কারোর পায়ের শব্দ হচ্ছে। কেউ আসছে! চট করে তার মাথায় আসলো, তাকেও মেরে ফেলা হবে। সেই প্রস্তুতি নিয়েই কেউ আসছে!
দ্রুত ভাবতে থাকলো আরফান। খট করে দরজায় শব্দ হল। তব্দা মেরে পড়ে থাকলো সে। দেখে যেন মনে হল চারটা লাশ পড়ে আছে!
দরজা ভেজিয়ে দিয়ে ভিতরে কেউ একজন প্রবেশ করলো। নিশ্বাস বন্ধ করে পড়ে থাকলো আরফান। চোখ খোলার সাহস পেল না।
বাহিরে থেকে পুরুষালী একটি কণ্ঠ পাওয়া গেল,“ নতুন মালটা আছে না ডেড”?
“দেখে মনে হয় ডেড”! মিহি চিকন সুরেলা ছন্দে কোন এক নারী কণ্ঠ উত্তর করলো।
আরফান বুঝতে পারলো ভিতরের আগন্তুক একজন মেয়ে। কণ্ঠটা শুনে চেনা মনে হল তার! হ্যাঁ, চিনেছে সে। তার অফিসের নতুন পিএ মেয়েটার কণ্ঠ, যে ক’দিন ধরেই লাইন মারার চেষ্টা করছিল। নাম বোধ হয় সুস্মিতা! সবকিছু কি কোন ষড়যন্ত্রের অংশ ছিল!
ধমকানোর শব্দে ভাবনায় ছেদ পড়লো আরফানের। পুরুষালী কণ্ঠটি ধমকে বলছে মেয়েটিকে,“দেখে মনে হয় দিয়ে কাজ নাই, মরছে কিনা তাই দেখো”!
সাড়া না দিয়ে আরফানের কাছে এল মেয়েটি। গায়ে হাত দিয়ে দেখে জানাল, “মরে গেছে! আপনি ম্যাডামকে আসতে বলেন। যান”!
আরফান যারপরনাই অবাক হল। মেয়েটি গায়ে হাত দিয়ে দেখার পরেও কেন বললো যে মারা গিয়েছে? “মরা লাশ দিয়া মেডামের কাজ কি”! বিরবির করতে করতে লোকটি দরজা থেকে সরে গেল। পুরুষ লোকটির চলে যাওয়ার শব্দ পেল আরফান।
মেয়েটি ফিসফিসিয়ে উচ্চারণ করল,
“আরফান ভাই পালান। সামনে আপনার বিপদ”!
আরফান উঠে বসে বসলো। কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই পুনরায় সুস্মিতা একটানা বলতে থাকল,
“আমি জানি আপনার অনেক কিছু জানার আছে। কিন্তু এখন সেই সময় নেই। আপনার পরিবার নিয়ে চিন্তা করবেন না। তারা ভাল আছে। শুধু আরিফাকে বাঁচাতে পারিনি আমি….সরি”! বলতে বলতেই চোখে পানি এল সুস্মিতার।
আরফান পুরো কথা শোনার জন্য তার পানেই চেয়ে থাকল। চোখ মুছে আবার বলল সুস্মিতা, “আপনি অনেক দূরে চলে যান আরফান ভাই। এশহরে থাকলে বাঁচতে পারবেন না।
এখান থেকে বেড়োনোর উপায় আমি করে দিচ্ছি। আপনি উঠুন, আর দেরি করবেন না”।
এরপরে দুই বছর কেটে গিয়েছে। সেদিন আরফান পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল উত্তরবঙ্গের এক জেলায়। ঢাকা শহর ছেড়ে এত দূর যাওয়া এবং সেখানে রীতিমতো বসবাস শুরু করার মতো টাকাপয়সা সাথে ছিল না তার। সে ব্যবস্থাও সুস্মিতা করে দিয়েছিল। নগদ কিছু টাকা আর তারই হারিয়ে যাওয়া এটিএম কার্ডটি হাতে গুজে দিয়েছিল। সাথে একটি মোবাইল ফোন দিয়ে বলেছিল, “এখানের নাম্বারটি সবসময় সচল রাখবেন। আর হুটহাট আমাকে কল দিবেন না। প্রয়োজন মত আমিই কল করে নিবো”।
এরপর নিজের নাম্বারটি ফোনে সেইভ করে দিয়ে বিদায় নিয়েছিল।
আরফান চুপচাপ সুস্মিতার কথামত সব দায়িত্ব পালন করেছিল।
সিগারেট হাতে আনমনে আরফানকে ভাবনায় মশগুল থাকতে দেখে সুস্মিতা পিছন থেকে তাকে জড়িয়ে ধরল। বাধা দিল না আরফান। প্রশ্ন করল সুস্মিতা, “কি ভাবছিলে, পুরোনো দিনের কথা বুঝি”?
ম্লান হেসে সুস্মিতার মুখোমুখি হলো আরফান। তার কাঁধে হাত তুলে বলল, “প্রতিশোধ নেয়া বাকি আছে যে”!
উত্তর করলো সুস্মিতা, “প্রতিশোধের অপেক্ষায়ই তো দিন গুনছি! এরপরেই তো আমাদের সুখের একটা সংসার হবে।
—————————————————————-
গত দেড় বছর যাবত বিদেশে পালিয়ে রয়েছে রাইমা চৌধুরী, বাংলাদেশের নামকরা একজন সিরিয়াল কিলার! শুধু খুন করেই ক্ষান্ত হন না তিনি। লাশের চোখ গুলো খুবলে বের করে নেন। আর লাশের রক্ত বিশেষ প্রক্রিয়ায় বের করে তা দিয়ে রক্তস্নান করেন।
তিনবছর আগে তাকে একজন অজ্ঞাত ব্যক্তি একটি পরিবারের খুনের দায়িত্ব দিয়েছিল। আর সেই দায়িত্ব নেয়াই কাল হয়েছে রাইমার জন্য। খুবই সুক্ষ্ম পরিকল্পনা ছিল তার। তারপরেও তার হাত ফসকে পালিয়ে বেঁচে ছিল আরফান নামের ছেলেটি এবং তার পরিবার।
আরফানের সাথে প্রথম দেখা হওয়া, হঠাৎ সামনে এসে পড়া, এলো চুলে তাকে মুগ্ধ করা সবটাই প্লানের অংশ ছিল রাইমার। প্রথম কিছু দিন আরফানকে বেগে আনতে প্রচুর কসরত করতে হয়েছে রাইমাকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সফল হয়েছিল রাইমা। আরফান প্রেমে পড়েছিল তার। মারাত্মক ভাবে ভালোবেসে ফেলেছিল। আরফানই প্রথম বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল তাকে। এতে যেন শিকার নিজে থেকেই হাতে ধরা দিয়েছিল রাইমার।
চলবে…

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..