কোন নদীঘেঁষা কোন পাখিডাকা
কোন তরুঘেরা গেহে..
জন্ম নিলো সে পুতুল-বালিকা
সোনালি আবেশ দেহে!..
নাম রাখা হলো ‘রাতের সূর্য’, ডাকনাম হলো স্মৃতি
নানু ডাকে তাকে পরীবানু বলে
রূপের এমনই রীতি!
হাসিখুশি মেয়ে রূপের আলোয়
সারাবাড়ি রাখে ভরে..
ঘরের আঁধার এতো রূপ তার
রাখতে পারে না ধরে।..
কী করে থামাবে নিয়তির খেলা, খণ্ডাবে বিধিলেখা?
জননী হারিয়ে পিতাহীন মেয়ে হয়ে যায় খুবই একা।
ঠাইঁ হলো শেষে নানার বাড়িতে শৈশবে পেল দাগা
রূপের কারণে কিশোরী না হতে
শুরু হলো চোখে লাগা।
পরাগ ছড়িয়ে ফুটতে ফুটতে হয়ে ওঠে ফুরুফুরু
স্মৃতির ভেতরে হলো যে কীএক
প্রীতির আবেগ শুরু।
সেই আবেগের নিয়মের স্রোতে
গেল সে হঠাত ভেসে–
পুলকিত হিয়া প্রীতির বাঁধনে
আরেক হিয়াতে মেশে।
রাতের সূর্য– ‘শামসুন’ গেল দিনের আলোতে মিশে
গেঁয়োজীবনের সুর ছিঁড়ে পাখি
হারিয়ে ফেলল দিশে।
মেকি শহরের রঙের স্বপন হাতছানি দিলো তাকে
সুখের নেশায় রূপের পাখিনি
জড়ালো কুহকপাঁকে।..
স্মৃতি নাম তার বিস্মৃত হয়ে– হয়ে ওঠে পরীমনি–
নতুন নামের জাদুর আবেশে পেলো সে টাকার খনি।
মেকি স্বর্গের নীলতটিনীতে ভাসে পরী ডানা তুলে–
চিচিংফাঁকের মন্ত্রে সোনার দরোজাটা যায় খুলে।
গেঁয়োস্মৃতি ভুলে পরী উঠে দুলে
শতমাতালের সাথে..
সুখে ভরভর নদী তোলপাড় ঊর্মির সংঘাতে।..
‘আপনা মাংশে হরিণা বৈরী’ পরীর কী দোষ বলো
শতশয়তান ছোটে তার দিকে
চোখ করে টলোমলো!
হায় পরী শেষে এত সুখ আর
রাখতে পারে না বেঁধে..
নিয়মের ফেরে ধরা পড়ে গিয়ে
জেলে বসে মরে কেঁদে।
হায়রে আইন, অন্ধকানুন– পরীদেরই শুধু চেনে
তারা থাকে চামে যারা স্মৃতিদের
কোটি দিরহামে কেনে।
যারা স্মৃতিদের পরী করে তোলে
রূপের লোলুভ নেশায়–
যারা পরীদের পেলব জীবনে
বিষের পারদ মেশায়–
যারা রাতারাতি হয়ে ওঠে রাজা
রাষ্ট্রের টাকা মেরে–
যারা অপরাধ করেও বেড়ায়
বীরবেশে মাজা নেড়ে–
তাদের বেলায় রাষ্ট্র উদাস, আইন অন্ধ থাকে;
পরীদের সাথে খেলাশেষে ওরা
পরীদেরি বেঁধে রাখে!
পরী তুমি নারী; তারপর যদি হও মোহনীয়া রূপে
চতুর সমাজ ভোগ করে শেষে
তোমাকে ফেলবে কূপে!
অযথাই তুমি পরী হতে গেলে
হায় বোকা মেয়ে স্মৃতি–
বুঝলে না তুমি নারীর শাসনও নরের সংস্কৃতি!
————————–
ঢাকা> ০৬.০৮.২০২১
Leave a Reply