1. banglamailnews72@gmail.com : banglamailnews : Zakir Khan
শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
# আহারে # খোরশেদ ।। সমাজে নতুন অপরাধী চক্র তৈরী হচ্ছে কিন্তু ভবিষ‍্যতে এদের রক্ষা করবে কে??।। – – – আশিক ফারুকী “অতঃপর” __ সালমা আক্তার বীরাঙ্গনা নই আমি মুক্তিযোদ্ধা – – – শাহনাজ পারভীন মিতা জলপাই রঙের স্বাধীনতা – – – আরিফুল হাসান প্লাস্টিকের উৎপাদন বন্ধ করতে হবে – উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ান হাসান – – – স্বাধীন আজম –   টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধি, স্বপ্নমায়া – – – – মাহজাবীন আহমেদ বুড়ি মরে গেল – – – মোঃ আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমাম প্রযুক্তির দুনিয়ায় শিক্ষার্থীদের এখন উন্নত জীবন গড়ার দারুণ সময়:– ————–টিপু সুলতান লেখক ও সমাজ চিন্তক ডায়াবেটিস নিয়ে সচেতনতাই পারে ডায়াবেটিস রোগ নির্নয় ও রোগের চিকিৎসা এবং সঠিক ব্যবস্থাপনা – – – ডা: সাদিয়া আফরিন 

# দুইজন_নিঃসঙ্গ_মানুষ # বড়_গল্প – প্রথম পর্ব ও ২য়_পর্ব # লেখাঃসুরাইয়া_শারমিন

  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ৪ আগস্ট, ২০২২
  • ১৭৮ বার
সুরাইয়া খানম তাঁর বাসার কাছের ছোট পার্ক’টিতে গত সাতদিন থেকে বিকেল বেলা হাঁটতে আসে। তাঁর বয়স উনষাট বছর। তার বয়সী মানুষেরা সাধারণত একা-একা হাঁটতে আসে না, তাঁরা আসে সাধারণত দুই একজন বান্ধবী বা প্রতিবেশি নিয়ে। তাঁর না আছে বাসার কাছে কোন বন্ধু, না আছে পাশের ফ্ল্যাটের কোন সম বয়সী প্রতিবেশি,যার সাথে তার অন্তরঙ্গ সম্পর্ক আছে।
সারাজীবন সুরাইয়া খানমকে নিজের কাজ, একহাতে ছেলে মানুষ করা, অফিস নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়েছে। তার কখনো বন্ধু-বান্ধব বা প্রতিবেশির সাথে মেশার সুযোগটাই হয় নাই। তাঁকে সবাই কেমন জানি এড়িয়ে চলে। সবার ধারণা তিনি অমিশুক এবং একটু অহংকারী। আসলে কি সে তা? তার তো মনে হয়, তাঁর সাথে প্রয়োজন ছাড়া কেউ কখনো বন্ধুর মতো মিশতে আসে নাই, বা তাঁর ভালো লাগা-মন্দ লাগা নিয়ে কেউ কখনো তাঁকে বুঝতে চায় নাই। তার কাছে সবাই আসে নিজ-নিজ প্রয়োজনে। কেউ কখনো তার পাশে এসে দাঁড়ায় নাই বন্ধু হয়ে, বরং এমন হয়েছে তাঁকে তার বন্ধুরা এক সময় এড়িয়ে চলতে শুরু করে।তাঁকে কোন বন্ধুদের আড্ডায়, বা পারিবারিক অনুষ্ঠানে ডাকতো না!কিন্তু কেন? তার হাসবেন্ড নাই বলে? সে সুন্দরী অল্প বয়সে বিধবা হয়েছে বলে? নাকি তার প্রতি তার বন্ধুূূদের হাসবেন্ডের অহেতুক সহমর্মিতা দেখানোটা তাদের বন্ধুরা, অন্য ভাবে নিতো?
সে নিজেও তো একদম পছন্দ করতো না, তাঁকে কেউ সহমর্মিতা দেখাক বা আহা-উঁহু করাটা।
নাকি তার কঠিন ব্যক্তিত্ব তাঁকে একা করে রেখেছে?
সুরাইয়া খানম গত তিনদিন থেকে লক্ষ্য করছে একজন ভদ্রলোক, পার্কের ভেতরে কোনের দিকের সিমেন্টের বেঞ্চে চুপচাপ বসে থাকে। বয়স কত হবে বড়জোড় বায়ান্ন থেকে পঞ্চান্ন এর বেশি হবে বলে মনে হয় না। এই বয়সে মানুষ থাকে চটপটে, তারা পার্কে আসে হেঁটে ঘাম ঝাড়াতে, যাতে করে শরীরে মেদ জমতে না পারে।আর এই লোক এক কোনে বসে থাকে আর কি যে এত ভাবে!
আজ লোকটাকে দেখে সুরাইয়া খানমের মনের মধ্যে একটা ভাবনা এসে ভর করলো, তা হলো, লোকটা কোন কারণে গভীর ডিপ্রেশনে আছে, এই মানুষ গুলো হঠাৎ করে কোন অঘটন ঘটিয়ে ফেলে। তিনি সব সময়ই একটু অন্য ধাঁচের মানুষ তার ভেতরে জড়তা কম। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, আজ উনি লোকটার সাথে নিজে থেকে কথা বলবে, তার হাঁটা শেষ হলেই। কিন্তু কি বলবে?
-আপনি একা-একা পার্কে বসে থাকেন কেন? আপনার কি সমস্যা?
তারপর এই লোক যদি উল্টো তাঁকে প্রশ্ন করে,
“আমি পার্কে বসে থাকবো নাকি হাঁটব, আমার যা খুশি আমি করবো? আপনি আমাকে কেন ডিস্টার্ব করছেন?”
এসব ভাবতে-ভাবতেই তিনি লক্ষ করলেন লোকটার চোখ থেকে অনবরত পানি পড়ছে, একটা বয়স্ক লোক পার্কে বসে কাঁদছে!এটা কোন স্বাভাবিক ঘটনা না।
তিনি আর এক মিনিট সময়ও নষ্ট না করে, লোকটার পাশে গিয়ে বেঞ্চে বসে পড়লেন।লোকটি তারাতাড়ি উঠে যেতে নিলে, তিনি বললেন,
– প্লিজ আপনি উঠে যাবেন না। আপনি বসেন।
লোকটি অবাক হয়ে আবার বসে পড়লো।
– আমি সুরাইয়া খানম। আমার বাসা চার নম্বর রোডে।
– অহ্।
– আমি কি আপনার সাথে একটু কথা বলতে পারি?
– আপনি আমাকে চিনেন? না মানে আপনি কি রেবেকার পরিচিত কেউ? আমি ঠিক আপনাকে চিনতে পারছি না।
– না আমি রেবেকা নামের কাউকে চিনি না। রেবেকা কে?
– রেবেকা আমার স্ত্রী।
– ওহ্।উনি ভালো আছেন?
– জানি না।
– মানে, আপনারা কি এক সাথে থাকেন না?
– রেবেকা মারা গিয়েছে তিন মাস হলো।
– আমি খুবই দুঃখিত। কিছু মনে করবেন না প্লীজ।
– না, ঠিক আছে। আমি এখন উঠবো।
সুরাইয়া খানমের যে কি হলো, সে তখন তার স্বাভাব বিরুদ্ধ আচরণ করে বসলো এবং ভদ্রলোকে বলল,
– আরে বসেন। আপনার সাথে পরিচিত হই আর আপনার স্ত্রী রেবেকার কি হয়েছিল? উনি কি অসুস্থ ছিলেন? কি ভাবে এত অল্প বয়সে উনি চলে গেলেন? আমাকে বলেন।আমি শুনি রেবেকার কথা। আর কথা বললে মন হালকা হয়?
ভদ্রলোক বেশ অবাক হলো সুরাইয়া খানমের আচরণে! অপরিচিত কেউ তো আজ-কাল কারো সাথে এত আন্তরিক ভাবে কথা বলে না!
– আমি মনিরুল ইসলাম। পাঁচ নম্বর রোডে থাকি। রেবেকা মারা গিয়েছে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে। এখনতো একটা-ই রোগ মনে হচ্ছে দুনিয়া জুড়ে। যে কেউ মারা গেলে জিজ্ঞেস করবেন কি হয়েছিল?বলবে, ক্যান্সার!
– আমি খুবই দুঃখিত। তবে আমার হাসবেন্ড মারা গিয়েছে পয়ত্রিশ বছর বয়সে হার্ট অ্যাটাকএ।
– আমি দুঃখিত।
সেদিন অনেকক্ষন সময় ধরে মনিরুল ইসলাম, তার স্ত্রীর কথা বলেন, সুরাইয়া খানমের সাথে। রেবেকাকে নিয়ে কথা বলতে তার ভালো লাগছিলো। দিনের আলো ফুরিয়ে এলে সুরাইয়া খানম আর মনিরুল ইসলাম এক সাথে পার্ক থেকে বের হয়ে আসেন এবং যে যার বাড়ির পথে চলে যায়। কিন্তু তাদের দু’জনের মধ্যে এই অল্প সময়ে একটা বন্ধুত্ব পূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায়,
যা তারা টের পেয়েছিলো কিছু দিনের মধ্যে।
পরের দিন যথারীতি সুরাইয়া খানম আর মনিরুল ইসলাম দুইজনই পার্কে আসেন। আজ সুরাইয়া খানম মনিরুল ইসলামকে তার সাথে হাঁটার সঙ্গী হতে বলেন। মনিরুল ইসলাম হাঁটার সঙ্গী হয় না, তবে অপেক্ষা করতে থাকেন কখন সুরাইয়া খানমের হাঁটা শেষ হবে এবং ওনারা গত কালের মতো গল্প করবেন। আজ উনি উদাস হয়ে বসে নাই আজ উনি অপেক্ষা করছেন একজন মানুষের সাথে গল্প করার জন্য। আসলে গল্প না, তার স্ত্রী রেবেকাকে নিয়ে কথা বলার জন্য।
রেবেকা মারা যাওয়ার পর থেকে কি এক শূন্যতা মনে হয় পৃথিবীটা শূন্য হয়ে গেছে।
রেবাকা মারা যাওয়ার পর থেকে সে লক্ষ্য করেছে, একজন মানুষের মৃত্যুতে কোন কিছু আঁটকে থাকে না সব কিছু একদম স্বভাবিক ভাবে চলে। মনিরুল ইসলাম সব চাইতে বেশি অবাক হচ্ছে, তার একমাত্র মেয়ের আচরণে। তাদের একমাত্র মেয়ে রুহীর বিয়ে হয়েছে মাত্র এক বছর আগে। মেয়েটাকে একদিন না দেখে থাকতে পারতো না রেবেকা। প্রতিদিন সকাল-বিকাল নিয়ম করে মেয়ের খোঁজ-খবর করতো। প্রায় প্রতি সপ্তাহে নিয়ম করে মেয়ে- মেয়ে জামাইকে দাওয়াত করা, তারপর মেয়ের কাছে তার শ্বশুর বাড়ির জন্য খাবার পাঠিয়ে দিত। এছাড়াও কোন বিশেষ নাস্তা বানালে তার সাথে আরো কিছু খাবার কিনে ড্রাইভারকে দিয়ে পাঠিয়ে দিত। অথচ সেই মেয়ে এখন বাবা-র বাড়িতে আসে,এসেই মায়ের আলমারির চাবি চায়, তারপর রাবেকার আলমারি থেকে এটা-সেটা নিয়ে যায়,তাঁকে কিছু জিজ্ঞেসও করে না। আজ মেয়ে এসে তার কাছে জানতে চায় মায়ের গয়না কোথায়? তা। সে অবাক হয়, তার আর রাবেকার মেয়ে কেন এমন হবে?
আজ একটা কারণে তার মনটা খুবই খারাপ।
রাবেকার গহনার বাক্স থেকে তার একটা ডায়মন্ডের রিং নাই। যেটা সে রাবেকাকে কিনে দিয়েছিলো রাবেকা মারা যাওয়ার মাত্র আটাশ দিন আগে। সেদিন ছিলো তাদের বিবাহবার্ষিকী। সেই সময় রুহী গিয়েছিলো নেপাল। তার হাসবেন্ড আর তাদের বন্ধুদের সাথে মিলে তাদের নাকি বহুদিন আগেই এই প্রোগ্রাম করা ছিলো।
সেই বার রাবেকা সত্যি খুবই অবাক হয়েছিলো রুহীর আচরণে। কারণ রাবেকা তখন অনেক সিক, মাত্র তার রেডিও থেরাপি শেষ হয়েছে। সেদিন সে, রাবেকার জন্য একটা ডায়মন্ডের রিং, সাথে রাবেকার পছন্দের বেলীফুলের মালা আর একটা হালকা গোলাপি মধ্যে সোনালী জরি পার তাঁতের শাড়ি কিনেছিল।সেদিন রাবেকা বেশ কিছু সময় একা ছিল বাসায়।রাবেকা তাঁকে একা রেখে বাহিরে এত সময় থাকাতে একটু অভিমান করে ছিল, অথচ সে যখন রাবেকাকে উপহার গুলো দেয়, রাবেকার চোখেমুখে কি যে খুশি দেখেছিল সে,তারপর অনেকদিন পর তাকে জড়িয়ে ধরে অনেক ক্ষন দাঁড়িয়ে ছিল রাবেকা।
রাবেকা অনেক খুশি হয়েছিলো, সেই খুশিতে অঝোরে কান্নাও করছিলো, আর বলছিলো একা থাকতে তোমার অনেক কষ্ট হবে নাই না?
মনিরুল ইসলামের ভাবনার মধ্যেই, সুরাইয়া খানম চলে আসলেন পার্কে। আজ সুরাইয়া খানম পার্কে এসে, না হেঁটেই বসে পড়লেন মনিরুল ইসলামের পাশে।
সুরাইয়া খানমের চোখেমুখে একটা ক্লান্ত ভাব। একটু যেন অন্যমনস্ক হয়ে আছেন। মনিরুল ইসলাম সুরাইয়া খানমকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
– আপা আজ হাঁটবেন না?
– না, মেজাজ খারাপ হয়ে আছে
– ওহ্
– আপনি কেমন আছেন?
– ভালো
– মুখ দেখেতো মনে হচ্ছে, খুবই আপসেট হয়ে আছেন।
– আপনার জন্য অপেক্ষা করছিলাম, এখনতো আমার মন খুলে কথা বলার মতো কেউ নাই। আপনার সাথে কথা বলতে আমার খুবই ভালো লাগে।
এই কথা শুনে, সুরাইয়া খানমের চোখে একটা হাসি খেলে গেলো, তখন সে বলল,
– মনিরুল সাহেব, বহুদিন পর কেউ আমাকে বলল, আমার সাথে কথা বলতে ভালো লাগছে। আমার সাথে কেউ কখনো স্বার্থ ছাড়া কথা বলে না। শুধু প্রয়োজনীয় কথা শুনতে-শুনতে,আর অন্যেদের প্রয়োজন মিটাতে- মেটাতে আমি ক্লান্ত হয়ে গেছি!
মনিরুল ইসলাম তখন বলে,
– আপনার কি মন খারাপ?
– না, বলেন, আপনার কি হয়েছে? এত মনমরা হয়ে বসে ছিলেন কেন?
– একটা বিষয় নিয়ে আপনার সাথে একটু পরামর্শ করা দরকার।
এই কথা বলে মনিরুল ইসলাম তার মেয়ে রুহীর ইদানীংকার আচরণের কথা বলল।
আর রেবেকার জুয়েলারি বক্স থেকে ডায়মন্ডের রিং হারিয়ে যাওয়ার কথাও বলল, তারপর চুপ করে রইল।
তখন সুরাইয়া খানম মনিরুল ইসলামকে বলল,
-ডায়মন্ডের রিং আপনার মেয়ে রুহী নিয়ে গেছে। মা’য়ের গহনায় মেয়ের অধিকার সবার আগে তাই।
রুহী আসলে একধরনের নিরাপত্তা হীনতায় ভোগছে। তার ধারণা, আপনি কিছু দিন পরে বিয়ে করবেন, এবং তার মা’য়ের সব কিছু অন্য একজন মহিলা এসে দখল করে নিবে। তখন হয়ত তার মায়ের গহনা আর সে পাবে না। এটা আমাদের সমাজে একটা বাস্তব চিত্র।
তখন মনিরুল ইসলাম তখন বলল,
– আমারও এমনটাই মনে হচ্ছিল। কিন্তু আমাদের একমাত্র সন্তান সে তার মায়ের মৃত্যু শোক করার চাইতে, গয়নার দখল নিয়ে ভাবছে কেন? আমাদের সব কিছু তো আমার সন্তান রুহী পাবে। আর আমার বিয়ে করার কোন প্রশ্নই আসে না। রেবেকা মারা না গিয়ে যদি আমি মারা যেতাম, তখন কি রেবেকা বিয়ে করত? কখনই না।
তাহলে আমি কেন আবার বিয়ে করতে যাবো এই বয়সে?
সুরাইয়া খানম তখন মুখটিপে হাসতে লাগলো, যেন খুবই মজা পেয়েছে এই কথা শুনে।মনিরুল ইসলাম তা দেখে একটু করুণ চাহনি দিয়ে বলল,
– আপনি হাসছেন কেন?আমি কি কোন মজার কথা বলেছি?
– আরে না, তা না, আমি হাসছি অন্য কারণে।
– কারণটা জানতে পারি?
– না,আরেকদিন বলব।
তারপর সুরাইয়া খানম বলল,
– আপনি রেবেকা মারা যাওয়ার পরে, আপনার কোন আত্মীয় বা বন্ধুর মুখ থেকে এমন কোন কিছু কি শোনেন নাই?
– কি শুনি নাই? বুঝতে পারছি না
– এই ধরেন,যেমন, “রেবেকা মারা গিয়েছে। আর তোমার তো কোন ছেলে সন্তান নাই যে, তাকে বিয়ে দিয়ে একটা বউ ঘরে আনবে। যে তোমার সংসার দেখবে। একমাত্র মেয়ে তারও বিয়ে দিয়ে দিয়েছো, এখন একা-একা কি ভাবে থাকবে? সংসারে মেয়ে মানুষ না থাকলে কি চলে? মানুষ চলে গেলেও জীবন তো থেমে থাকে না! কি চিন্তা করলে? কি ভাবে চলবে তোমার সংসার?
মনিরুল ইসলাম এবার হেসে ফেলে, আর সঙ্গে-সঙ্গে এতক্ষনের ভাব-গম্ভীর পরিবেশটা হালকা হয়ে যায়।তারা বেশ সহজ ভাবে কথা বলতে থাকে।
মনিরুল ইসলাম তখন বলে,
– আর বলবেন না, আমার এক কাজিন সেদিন আমাকে কল দিয়েছিলো, প্রথমে, রেবেকা কত ভালো মেয়ে ছিলো, তার গুণের কথা বলল।তারপর, এই-সেই কথা বলার পরে, আমাকে এমন কিছু কথা বলে যার সারমর্ম হলো, আমার বিয়ে।
এইটুকু বলে মনিরুল ইসলাম একটু লাজুক হাসি দেয়।
সুরাইয়া খানম তখন বলেন,
– পাত্রী কি দেখা শুরু হয়েছে নাকি?
– কি যে বলেন!আমি তো, শায়লা মানে, আমার সেই কাজিনের কথা শুনে রাগ করে ফোন রেখে দেই , আর আমি পরিস্কার করে বলে দিয়েছি, আর কখনো আমাকে এই সব হাবিজাবি বলার জন্য যেন কল না দেয়।
– আসলে আমাদের সমাজের মানুষ গুলো বড় বিচিত্র! এখানে কারো কোন একান্ত বিষয় নিয়ে যে কেউ নাক গলাতে বা পরামর্শ দিতে, একটুও দ্বিধা করে না। আমি বা আমরা কি চাই, আমার জীবন আমি কি ভাবে যাপন করতে চাই, সেই মতামত কেউ জানতেও চায় না।
– একদম ঠিক বলছেন।
– মনিরুল সাহেব শোনেন, আপনার মেয়েকে নিয়ে এত অস্হির হবেন না। আপনার মেয়েকে হয়তো বা কেউ পরামর্শ দিয়েছে,তার মায়ের সব কিছু তার। এতএব সে যেন তা সময়, থাকতেই বুঝে নেয়।তাই আপনার মেয়ে আপনার কষ্টের ভাগ না নিতে চাইলেও, আপনার দেওয়া তার মায়ের ছোট-খাটো জাগতিক সম্পদের ভাগ কাউকে দিবে না, এটাই তার, তার মা’য়ের প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। এটা করেই সে বুঝাতে চাইছে সে তার মা’কে অনেক ভালোবাসে।
সে ভুলে যাচ্ছে তার বাবাকে এখন তার, অনেক সাপোর্ট দিতে হবে।সে তার মা’কে হারিয়েছে কিন্তু তার বাবা তার সুখ-দুঃখের সাথীকে হারিয়েছে। তার কষ্ট অন্য রকম, মায়ের মৃত্যু মানে বাবা-র সাথে দুরত্ব তৈরি হওয়া না। বরং একটা পরিবারের কেউ চলে গেলে সেই পরিবারের সবাইকে নতুন করে সম্পর্ক গুলো নিয়ে আরো সচেতন হতে হয়।কয়দিনের দুনিয়া এটা চোখে আঙুল দিয়ে মৃত ব্যক্তি দেখিয়ে দেয় কিন্তু আমরা তারপরেও শুধু মাত্র আমাদের জাগতিক মোহ এবং আমার সব চাই নিয়ে পরে থাকি।
– হয়তোবা আপনার কথা ঠিক। কিন্তু আমার অসম্ভব মন খারাপ হয়, রুহীর আচরণে। আমি চাই আমার মেয়েটা আমার কাছে এসে দুইটা দিন থাকবে। আমরা বাপ-মেয়ে সারাদিন রেবাকাকে নিয়ে গল্প করবো। মেয়েকে আমি বলব, রেবেকা কি ভাবে ওর যত্ন করতো।
আমার সারাক্ষণ শুধু রেবেকাকে নিয়ে কথা বলতে মন চায়।
– আপনি আমার সাথে রেবেকার গল্প করতে পারেন, আমি শোনব। কারণ আমি আসলে জানিই না। সংসার পুরাতন হলে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের ভালোবাসা গুলো কেমন হয়। আমার হাসবেন্ড যখন মারা যায় তখন আমার বয়স আসলে ত্রিশ বছরও হয় নাই। আমি তাঁকে হারিয়ে সব চাইতে বেশি কষ্ট অনুভব করতাম,তার সঙ্গ না পাওয়ার জন্য। কি যে কষ্ট হতো একেক সময়, মনে হতো একজন সঙ্গী থাকা খুবই দরকার।
– তা হলে বিয়ে করলেন না কেন?
– মেয়ে মানুষের জীবন এত সহজ না। আমি আমার হাসবেন্ড’কে যথেষ্ট পরিমানে ভালোবাসতাম। তারচাইতে বড় কথা ছিলো, আমার একমাত্র ছেলে আমি তাঁকে কোন অবস্থাতেও মা হারা করতে চাই নাই। একজন বিধবা মানুষকে সন্তান সহ সংসারে কেউ গ্রহন করতে চায় না। তারপরে আমার ছেলের দাদার বাড়ি যথেষ্ট পরিমানে ধনী এবং নামি-দামি পরিবার। তারা কেন তাদের নাতিকে দিবে, অন্য কোন মানুষের আশ্রয়ে বড় হতে? আমি যদি তখন বিয়ে করতাম, তা হলে আমার সন্তান তার বাবা-মা দু’জনকেই হারাতো একসাথে।
আমি তো মা হয়ে তা চাইতে পারি না।আমার নিজের কিছু চাহিদার কারণে। আর আমাদের সমাজে নারীর চাওয়া-পাওয়া নিয়ে ভাবে না।
– তা অবশ্য ঠিক। আজকে আপনার মনটা খুবই খারাপ ছিলো, যখন পার্কে আসলেন তখন লক্ষ করেছিলাম। কি হয়েছে আমাকে বলা যাবে?
– আজকে আমি যখন বাসা থেকে বের হচ্ছিলাম তখন আমার ছেলের বউ রিশা আমাকে একটা কথা বলল, কথাটা শোনার পর থেকে খুবই মেজাজ খারাপ হয়েছিলো তবে এখন মেজাজ খারাপ ভাবটা কমেছে।
– কি বলেছে বলা যাবে?
– রিশা জানতে চেয়েছে? “মা আপনি কি কারো সাথে পার্কে বসে গল্প করেন?”
এই কথা শুনে মনিরুল ইসলাম অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সুরাইয়া খানমের মুখের দিকে।আর ভাবছে সুরাইয়া খানমের সাথে তার পরিচয় মাত্র এক সপ্তাহের। আর উনি তো তার সাথে পরিচয় হওয়ার আগে থেকেই পার্কে হাঁটতে আসেন, আর এই কথা কেউ না কেউ সুরাইয়া খানমের ছেলের বউকে বলেছে! মানুষের মন এত ছোট হয় কিভাবে? তাহলে কি তার মেয়ে রুহীকেও কেউ বলেছে সে পার্কে এসে, একজন মহিলার সাথে গল্প করার জন্য!
– আপনি কি নিয়ে ভাবছেন?
– আপা আমি খুবই দুঃখিত, আমার সাথে কথা বলা নিয়ে আপনাকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরতে হয়েছে বলে।
– কি বলেন এসব আবোলতাবোল?শোনেন মনিরুল আমি অনেক কঠিন এবং খুবই সাহসী একজন মানুষ। আমি আমার হাসবেন্ডের মৃত্যুর পরে আমাদের সমাজের মানুষের এত আসল-নকল, নোংরা এবং স্বার্থপর আচরণ দেখেছি। এবং তা মোকাবিলা করে আমার এমন একটা অবস্থান বানিয়েছি যে, এখন আর কে কি বলল বা ভাবলো তা নিয়ে কোন মাথা ঘামাই না।তবে আমি রিশা’র মতো আধুনিক একটা মেয়ের মধ্যে এমন ছোট মানসিকতা দেখে অবাক হয়েছি।
আসলে শুধু মাত্র আধুনিক পোশাক পড়লেই মানুষ আধুনিক হয় না।
যদিও আমি ইদানীং আমার ছেলের আচরণেও কিছু নতুন জিনিস দেখছি যা আমাকে বেশ আহত করছে।
– আপা কিছু মনে না করলে একটা কথা বলি?
– বলেন?
– আপা আপনার জীবনের গল্প শুনতে চাই।
– আজ না আজ সন্ধ্যা হয়ে আসছে চলেন একটু হাঁটি। তারপর বাসায় চলে যাই।আগামীকাল বলব আমার জীবনের গল্প।
আগামী পর্বে শেষ

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..