1. banglamailnews72@gmail.com : banglamailnews : Zakir Khan
শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১০:১৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
# আহারে # খোরশেদ ।। সমাজে নতুন অপরাধী চক্র তৈরী হচ্ছে কিন্তু ভবিষ‍্যতে এদের রক্ষা করবে কে??।। – – – আশিক ফারুকী “অতঃপর” __ সালমা আক্তার বীরাঙ্গনা নই আমি মুক্তিযোদ্ধা – – – শাহনাজ পারভীন মিতা জলপাই রঙের স্বাধীনতা – – – আরিফুল হাসান প্লাস্টিকের উৎপাদন বন্ধ করতে হবে – উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ান হাসান – – – স্বাধীন আজম –   টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধি, স্বপ্নমায়া – – – – মাহজাবীন আহমেদ বুড়ি মরে গেল – – – মোঃ আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমাম প্রযুক্তির দুনিয়ায় শিক্ষার্থীদের এখন উন্নত জীবন গড়ার দারুণ সময়:– ————–টিপু সুলতান লেখক ও সমাজ চিন্তক ডায়াবেটিস নিয়ে সচেতনতাই পারে ডায়াবেটিস রোগ নির্নয় ও রোগের চিকিৎসা এবং সঠিক ব্যবস্থাপনা – – – ডা: সাদিয়া আফরিন 

জ্যোৎস্না # ১ম_পর্ব # ©তাসমিমা ইয়াসমিন

  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১০ এপ্রিল, ২০২১
  • ২৫৮ বার
নিজের ভালোবাসার মানুষের বিয়ে নিজের চোখের সামনে দেখতে হবে আবার তার জন্য আমাকে ঘটা করে দাওয়াত করা হয়েছে। অভিকে আমি ভালোবাসি, শুধু ভালোবাসি বললে ভুল হবে ভীষণ রকম ভালোবাসি। অভিও হয়তোবা আমাকে ভালোবাসে কিন্তু অভিও যেমন জানে আমিও তেমন জানি অভির সাথে আমার বিয়ে হওয়া কখনোই সম্ভব নয়। তারজন্য সবচেয়ে বড় দুইটা কারণ হলো অভিদের মত আমরা এতটা বড়লোক নই আর আমি শহুরে মেয়েদের মত স্মার্ট, কুল টাইপ সুন্দরীও নই। একবার তাকিয়ে আরেকবার চোখ ফেরানোর মত কিছু নেই আমার মাঝে। অভির বাবা মানলেও অভির মা কখনো মানবেনা আমাকে। সেই আমি কেন অভির মত স্মার্ট, ড্যাসিং আর বড়লোক বাবার একমাত্র ছেলের প্রেমে পড়তে গেলাম মাঝেমধ্যে শুধু তাই ভাবি। অভির যে মেয়ের সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে বাবার কাছে শুনেছি সেই মেয়ে পুতুলের মত সুন্দর, তার বাবার বড় বিজনেস। বড়লোক বাবার একমাত্র মেয়ে। সবথেকে বড় অবাক করা বিষয় অভি বিয়েতে রাজি হয়ে গেছে।
.
.
অভি আমার ছোটো চাচার ছেলে সেই সুবাদে ছোটোবেলা থেকেই একসাথে বড় হওয়া। আমরা গ্রামে থাকতাম আর অভিরা শহরে থাকতো। মাঝেমধ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমাদের দেখা হতো। একবার অভিরা গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে আসলো উদ্দেশ্য ছিলো ছোটোফুপুর বিয়ে। আমি তখন ক্লাস নাইনে পড়ি। মহা ধুমধাম করে ছোটো ফুপুর বিয়ে হলেও আমি একবাড়িতে থেকেও সেখানে এটেন্ড করতে পারলাম না কারণ আমার ভীষণ জ্বর ছিলো। ওদিকে বাবা- মা, বড়আপা সবাই ছোটো ফুপুর বিয়ে নিয়ে ব্যস্ত। আমার দিকে কারোর খেয়াল নেই। অভি তখন পুরোটা সময় আমার সাথে রইলো। মাথায় পানি দিয়ে দিলো, গ্রামের কাঁচা রাস্তায় অনেক দূর সাইকেল চালিয়ে গিয়ে প্যারাসিটামল এনে দিলো, তিন বেলা খাবার এনে খাইয়ে দিলো। যথারিতি ফুপুর বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হলো আর উনি চলে গেলেন। তারপর এলো সব মেহমানদের সাথে অভিদের যাওয়ার পালা। যাওয়ার সময় অভি আমাকে একটা বই গিফট করলো। হুমায়ুন আহমেদের নবনী। বইয়ের ভাজে একটা চিরকুট পেলাম। সেখানে লেখা ছিলো, “তোর যতবার জ্বর হবে আমাকে কি তোর কপালে হাত দিয়ে জ্বর মাপার অধিকার দিবি শুভ্রতা।” তারপর আমার কি হলো আমি নিজেই জানিনা। অভিরা এর আগে বহুবার গ্রামে এসেছে, থেকেছে চলে গিয়েছে। ঐবারের মত শূণ্যতা কখনো আসেনি। পড়াশোনায় মন বসাতে পারছিলাম না, কাজ করতে পারছিলাম না, খেতে বসেও অস্থির লাগতো, ঘুম আসতো না। বারবার মনে হচ্ছিলো সামথিং ওয়াজ রঙ। কারণ খুঁজে পেয়ে আমি নিজেই অবাক। আমি অভিকে ভীষণ মিস করছি। অভি আমার কৈশোরের পছন্দ ছিলো। একটা সময়ে অভিকে আমি ভীষণরকম ভালোবেসে ফেললাম। একপাক্ষিক ভালোবাসাও বলা যেতে পারে। তারপর অভির সাথে আমার যতটুকু কথা হয়েছে সব ফরমাল। যতবার দেখা হয়েছে কেমন আছো পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিলো। অভি হয়তো কখনো বুঝতেও পারেনি ওর মুখ থেকে কেমন আছো শব্দটা শোনার জন্য আমি কতটা ব্যাকুল হয়ে থাকতাম।
.
.
“সবকিছু গুছিয়ে নিয়েছিস মা? বিকেলেই কিন্তু ট্রেন।” আম্মার ডাকে আমার হুশ ফিরলো।
“জ্বী মা। সব গুছিয়ে নিয়েছি।” আমার পার্সোনাল ডায়েরিটাও ব্যাগে ভরে নিলাম। এখানে অভির চিরকুটটাও যত্ন করে রেখে দিয়েছি।
মা আমার পাশে বসে মাথায় হাত রেখে বললেন, “কিরে শুভ্র মা মন খারাপ নাকি।” মা আদর করে আমাকে শুভ্র বলে ডাকেন। আমি চুপ করে রইলাম। মা বললেন, “মন খারাপ করিস না মা। আল্লাহ এক জীবনে সবার সব ইচ্ছা পূরণ করেন না। এটাই জগতের নিয়ম। তবে যদি ধৈর্য ধরে থাকিস যা নেন তার থেকেও আল্লাহ উত্তম কিছু দেন।”
মাকে আমি কখনোই কিছু বলি না কিন্তু উনি আমার মুখ দেখেই কিভাবে কিভাবে যেন সবকিছু বুঝে যান। মা হলে বুঝি এমনই হয়।
অভির প্রতি একরাশ অভিমান নিয়েই আমি ব্যাগ গুছিয়ে ফেললাম।
.
.
“ভাইয়া ভাইয়া দেখতো কাকে বেশি সুন্দর লাগছে?” হুড়মুড় করে অভির ঘরে ঢুকে যায় ইরা আর মীরা। দুজনেই শাড়ি পরেছে, চোখে কাজল দিয়েছে, চুলে হাতখোপা করেছে। সবচেয়ে বড় কথা সবসময় ওয়েস্টার্ন পরা মেয়েদুটো সুন্দর করে শাড়ি পরেছে। যদিও কারো ঠিকমতো কুচি দেয়াই হয়নি। দু বোনকেই অভি খুবই ভালোবাসে। অভি দুজনের দিকে তাকিয়ে বললো, “বরাবরের মতই দুজনকে সুন্দর লাগছে।”
মিরা ফিক করে হেসে বললো, “বরাবর কিভাবে হয়? আগে তো শাড়ি পরি নি ভাইয়া। এই প্রথমবার।”
ইরা বললো, “শুধু সুন্দর বললে হবে না ভাইয়া। বলতে হবে তোমাকে কাকে বেশি সুন্দর লাগছে? আমাকে না মীরাকে?”
এখন হয়েছে আরেক জ্বালা। একজনকে বেশী সুন্দর বললে আরেকজন রাগ করবে। অভি দুজনার দিকে তাকিয়ে বললো, “আমার দুবোনকেই পরীর মত লাগছে।” তখন অভির রুমে অভির মা এসে বললেন, “ইরা মিরা বাইরে যাও। অভির সাথে আমার কথা আছে।”
“ক্যাফেতে গিয়ে কিছুক্ষণ ঘুরে আসো অভি।” অভির মা বললো।
“শুধু শুধু ক্যাফেতে যাবো কেন আম্মু?” অভি প্রশ্ন করলো।
“শুধু শুধু না। প্রিতী আসবে। গিয়ে ওর সাথে দেখা করে এসো। বিয়ের আগে দুজন দুজনকে একটু জানলে, চিনলে। দুজনের সাথে দুজন একটু সহজ হলে আরকি।”
“আম্মু দুদিন পরেই তো বিয়ে। মেহমানরা সবাই আসতে শুরু করেছে। এখন কি দেখা করাটা খুব দরকার?”
“এত কথা বলো কেন অভি? অভির আম্মু রেগে গেলেন।” তুমি তো কোনো কাজ করছো না। যাও পাঞ্জাবী পরে ভদ্র ছেলের মতো প্রিতীর সাথে দেখা করে এসো।
.
.
“মিট মাই কাজিন শায়লা আপু।” ইরা বললো।
শায়লা নামের মেয়েটা ঠোঁটে লিপ্সটিক ঘষতে ঘষতে বললো, “ইরা তোকে কতবার বলেছি না শায়লা না বলতে। আই এম শিলা।”
মিরা ফিক করে হেসে বললো, “শিলা কি জাওয়্যানি।”
শায়লা রাগের দৃষ্টিতে মিরার দিকে তাকালো।
শায়লা মেয়েটা দেখতে খুব সুন্দর। কোমর সমান স্ট্রেইট করা চুল। নখের নেইলপালিশ মিররের মত ঝকমকে। গোলাপি রঙের পোশাকে চমৎকার মানিয়েছে। গালদুটো দিয়েও গোলাপি আভা ছড়াচ্ছে। আমার দিকে তাকিয়ে বললো “হ্যালো।”
আমিও হেসে বললাম আমি শুভ্রতাম
শায়লা আবার লিপ্সটিক দেয়ায় মনযোগী হলো।
ইরা আমাকে ইশারায় বুঝালো এ মেয়ের মাথার তার ছিড়া। আমার হাত টেনে রুমের বাহিরে এনে বললো, “ছোটো খালার মেয়ে শায়লাপু। ভয়ংকর কথা কি জানো, এই মেয়ে ভাইয়ার জন্য সুইসাইড এটেম্পট করেছিলো।”
আমি চোখ কপালে তুলে বললাম, “কী বলিস।”
ইরা সহজ ভঙ্গিতে বললো, “হ্যাঁ সত্যি কথা। ভাইয়া শুধু বলেছিলো শায়লা তোকে শাড়িতে সুন্দর লাগে না। তুই কখনো শাড়ি পরে আমার সামনে আসবি না।”
“তাহলে এখন যে নাচতে নাচতে অভির বিয়ে খেতে এলো।” আমি জিজ্ঞেস করলাম।
“আসলে শায়লাপু এই কাজ করার পরে ভাইয়া একদিন ওকে নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিলো। তারপর স্বাভাবিক হয়ে গেছে। তবে বলা যায়না কখন কি করে। মাথার কোনো ঠিক নেই।”
ইরার কথায় আমার কিঞ্চিত রাগ হলো। অভি আসলে চায় কাকে।
.
.
ছাদের এক কোনে দাঁড়িয়ে আছি। লাল, নীল, সবুজ, হলুদসহ নানা রংয়ের মরিচ বাতি জ্বলছে। অভিদের বাড়িতে এসেছি সন্ধ্যায়। ঘরভর্তি মেহমান। আম্মা অভির আম্মুর সাথে কাজে ব্যস্ত হয়ে গেলেন। আমি সারাঘর খুঁজেও অভিকে কোথাও পাইনি। ইরা আর মিরার সাথে কিছুক্ষন আড্ডা দিয়ে ছাদে এলাম। হঠাৎ নিঃশব্দে কেউ পেছন থেকে আমার কোমর জড়িয়ে ধরলো। মুখ না ঘুরিয়েও আমি বুঝেছিলাম অভি এসেছে। অভির পারফিউমের কড়া গন্ধ আমার নাকে এসে লাগছিলো। হালকাভাবে অভির হাতটা সরিয়ে দিয়ে ওর দিকে ঘুরলাম। পরনে থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট আর ব্লাক টিশার্ট। অগোছালো চুলগুলো কপালে লেপ্টে আছে কানে হেডফোন গোঁজা। আমি স্মিত হেসে বললাম, “কংগ্রাচুলেশনস।”
অভি প্রতিউত্তরে একটা হাসি দিয়ে বললো, “কিসের জন্য।”
“এমা কেন, আপনার বিয়ে যে।” আমি বললাম।
“বিয়ে তো আমার আগেই হয়েছে তোমার সঙ্গে শুভ্রতা। যদিও কেউ জানেনা।” অভি বললো।
আমি ঠান্ডা গলায় বললাম “আপনার তাহলে মনে আছে? মনে করে ভালো করেছেন। আমি ডিভোর্স পেপারে সই করে দেবো যখন বলবেন তখন।”
চলবে…

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..