1. banglamailnews72@gmail.com : banglamailnews : Zakir Khan
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:১৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
# আহারে # খোরশেদ ।। সমাজে নতুন অপরাধী চক্র তৈরী হচ্ছে কিন্তু ভবিষ‍্যতে এদের রক্ষা করবে কে??।। – – – আশিক ফারুকী “অতঃপর” __ সালমা আক্তার বীরাঙ্গনা নই আমি মুক্তিযোদ্ধা – – – শাহনাজ পারভীন মিতা জলপাই রঙের স্বাধীনতা – – – আরিফুল হাসান প্লাস্টিকের উৎপাদন বন্ধ করতে হবে – উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ান হাসান – – – স্বাধীন আজম –   টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধি, স্বপ্নমায়া – – – – মাহজাবীন আহমেদ বুড়ি মরে গেল – – – মোঃ আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমাম প্রযুক্তির দুনিয়ায় শিক্ষার্থীদের এখন উন্নত জীবন গড়ার দারুণ সময়:– ————–টিপু সুলতান লেখক ও সমাজ চিন্তক ডায়াবেটিস নিয়ে সচেতনতাই পারে ডায়াবেটিস রোগ নির্নয় ও রোগের চিকিৎসা এবং সঠিক ব্যবস্থাপনা – – – ডা: সাদিয়া আফরিন 

#ছোট_গল্প # বোধ ### মাহবুবা_আরিফ_সুমি

  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ৭ জানুয়ারী, ২০২১
  • ৪৮২ বার

আমি আমার রসকষহীন কাঠখোট্টা টাইপ স্বামীর প্রতি কয়েকদিন হলো হঠাৎ করে তীব্র ভালোবাসা অনুভব করছি। আমার এই পরিবর্তন অবশ্য এমনিতে হয়নি। এর পেছনে অনেকটাই দায়ী সায়ান ভাই।
ঘটনা হলো, সায়ান ভাইয়ের একটা ভিডিও এবার থার্টি ফার্স্ট নাইটে নাকি ভাইরাল হয়েছে। ব্যাপারটা জানতে আমাকে একদমই কষ্ট করতে হয়নি। পুরো ঘটনা স্বয়ং সায়ান ভাইয়ের মুখেই শোনা। দুইদিন আগে তিনি আগ বাড়িয়ে উনার সেই ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি আমায় পাঠিয়ে হাসি হাসি মুখ করে ফোন করেছেন।
— হ্যালো সিমকি, কেমন আছ ?
— এই তো ভালো। আপনার কী খবর?
— আরে, শেষ মেশ তো ভাইরাল হয়ে গেলাম। কী এক অবস্থা.. । ভিডিও পাঠিয়েছি তোমার ম্যাসেঞ্জারে দেখে নিও।
আমি নির্লিপ্ত গলায় বললাম,
— হুম, দেখেছি আপনার সেই ভিডিও সকালে । ঘটনাটা কি ভাবী জানে ?
সায়ান ভাই শয়তানের মতো ফিচ ফিচ করে হেসে, জ্ঞানী জ্ঞানী গলায় বলল,
— আরে, তোমার ভাবী জানলেই বা কী ! আমি ওর ধার ধারি নাকি। বিয়ের আগে কোন ক্লিনিকে সে কয়বার বাচ্চা ফেলেছে সবই আমার জানা। আর আমরা হলাম মিডিয়ার মানুষ। কত কিছু হয়ে যায় এখানে। এটা তো সেই তুলনায় খুবই মামুলি একটা ব্যাপার।
— হুম, হতে পারে। মিডিয়া সম্বন্ধে আসলে খুব বেশি জ্ঞান নেই আমার। তবে আপনি তো আর নায়ক নন, বিখ্যাত কোন অভিনেতাও নন। দুই, একটা নাটক /সিনেমায় মাত্র কাজ করেছেন, তাও নায়কের বন্ধু বা ছোট খাট পার্শ্বচরিত্রে। আপনার ভাইরাল হবার প্রয়োজন পড়ল কেন বুঝলাম না।
সায়ান ভাই গলার স্বর নীচু করে প্রায় ফিসফিস করে বলল,
— আরে মাল খেয়ে টাল হয়েছিলাম তোমায় মিথ্যা বলব না। তবে বন্ধুরা মিলে প্ল্যান করেছিলাম আগে থেকেই এমন কিছু করার। একটাই তো মাত্র জীবন আমাদের, একে উপভোগ করতে হয় বুঝলা। আমরা এভাবেই করলাম, যাস্ট মজা করার জন্য আর কি। বুদ্ধি করে ভিডিওটা ঝাপসা করে দিয়েছি। তোমার ভাবী দেখলেও যেন চিনতে না পারে। প্রায় একই রকম, কাছাকাছি দেখতে কত মানুষই তো আছে পৃথিবীতে , কী বল..?
সায়ান ভাই আনন্দিত ভঙ্গিতে হাসতে লাগলেন।
— ভাবী না জানলেই বা কী ? পাপ যা করার তা তো করেই ফেলেছেন । যাক, কবরে নিজের সাথে কিছু তো নিতেই হয় তাই না ! ভালো, আপনি না হয় মরলে এইসব নিয়েই যাবেন সেখানে।
সায়ান ভাই উষ্ণ গলায় বলল,
— — কবরের ভয় দেখাচ্ছ নাকি ? সিমকি তুমি কিন্তু আমাকে পেইন দিচ্ছ। মনটা একটু উদার কর বুঝলা,স্মার্ট হও। নীতি শিক্ষা দিতে আইস না। আমি নিজে হলাম এইসব নীতি আদর্শের সংস্কারক। আমার সাথে হুজুরপানা বক্তৃতা দিবা না।
— আচ্ছা যান, আর দিব না। তবে, ভাবী যা ভুল করার বিয়ের আগে করেছেন আর আপনি,… বিয়ের পর নিজের স্ত্রীকে ধোকা দিয়েছেন এটা কিন্তু মিথ্যা না।
সায়ান ভাই বিরক্ত গলায় বলল,
— বন্ধুদের সাথে বাজি ধরে গিনিজের লং কিসের রেকর্ডটা ভাঙতে চেয়েছি, আরে তুমি তো মনে হয় পুরো ভিডিও দেখই নাই। এটায় খারাপ কী আছে ! তুমি পড়ে আছ ধোকাবোকা নিয়ে।…. কয় মিনিট কিস করতে পেরেছি তোমার মনে হয় ? ধারণা করে বল।
— মেয়েটা কে ? ভালোবাসেন তাকে ?
— আরে না। কিসব বল..! আমরা বন্ধু, কেবলমাত্র ফান করতে করেছি। মেয়েটা খুবই ভালো মনের তবে আমারই মতো একটু পাগলটাইপ ।
…আর আমার জীবনে তো সত্যিকারের ভালোবাসা সেই একজনই , তোমার ভাবী.. সবাই জানে। ফেসবুকে দেখ না আমাদের প্রেম !
— হুমম, তাতো রোজই দেখি। সায়ান ভাই রান্না করতে যেতে হবে রাখি এখন।
ফোন নামিয়ে রেখে আমি কিছুক্ষন চুপচাপ বসে রইলাম। সায়ান ভাই আমার দূর সম্পর্কের আত্মীয়। চিরকালই মেয়ে ঘেষা স্বভাবের মানুষ তিনি । উনি উনার সমস্ত মেধা মেয়েদের পটানোর কাজে চিরকাল ব্যয় করেছেন বলেই আমার বিশ্বাস। উনার নায়কোচিত চেহারা, হাবভাব আর মিস্টি কথার ফাঁদে কত মেয়ে যে পড়েছে তার ইয়ত্তা নেই। আমি কলেজে পড়ার সময় তিনি প্রায় রোজ আমার কলেজের গেটের সামনে নানা উছিলায় দাঁড়িয়ে থাকতেন । উনার কথাবার্তা আর হাবভাব দেখলে যে কেউ প্রথম প্রথম ভাবতে বাধ্য হবে উনি হয়তো তার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছেন। তবে আসল ব্যাপার মোটেও তা নয়। মেয়েদের সাথে উনার কথা বলার ধরনই বরাবর অমন ছিল। আমি নিজেও হয়ত ভুল বুঝে উনার কথার সেই ফাঁদে পা দিতাম যদি না বাবা সময় মতো আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলতেন।
সায়ান ভাই সে সময় বন্ধুদের সাথে বান্দরবান বেড়াতে গিয়েছিলেন। আমার বিয়ের দুই সপ্তাহ পর ফিরে এসে একদিন কাঁদো কাঁদো গলায় ফোন করে বললেন,
— সিমকি তুমি তো আমাকে বিরাট ছ্যাঁকা দিলা।
— আপনার সাথে তো প্রেমই হয় নাই, ছ্যাঁকের কথা আসছে কেন সায়ান ভাই?
—- তুমি আমাকে কিছু না বলে হুট করে বিয়ে করে ফেললা। একটু অপেক্ষা তো করতে পারতে। আমি প্রস্তাব পাঠাতাম। পরিবারে এই নিয়ে মাত্র কথা শুরু করেছিলাম।
— আমার বিয়ের কথা চলছে আপনি কিন্তু জানতেন সায়ান ভাই ..! অথচ, ফোন টোন বন্ধ করে বান্দরবান গিয়ে বসে রইলেন।
— ফোন কি আর এমনই এমনই বন্ধ করেছি নাকি? নারী জাতির ডিস্টার্বে বন্ধ করেছিলাম। এদের ফোনের জ্বালায় কোনখানে গিয়ে শান্তি নাই।
এদিকে বিরাট ক্ষতি হয়ে গেল আমার।
— আপনি তো চানই মেয়েরা আপনাকে ডিস্টার্ব করুক।
— আরে আমার চাওয়া না চাওয়া কিছু না। তবে বিয়ে যখন করেই ফেলেছ.. ভালো থাকো দোয়া করি। আমি তোমার শুভাকাঙ্ক্ষী হয়েই পাশে থাকব চিরকাল কথা দিলাম। এখন থেকে বন্ধুর মতো চলব আমরা।
সায়ান ভাই এরপর বেশ কিছুদিন বিরহের স্ট্যাটাস, গানটান পোস্ট করলেন ফেসবুকে। সেসব দেখে দেখে আমার ভেতরে কেমন যেন এক বিষন্নতা, হতাশা কাজ করতে শুরু করল। আমার স্বামী মুবিন ব্যাংকার। কাজ পাগল স্বল্পভাষী মানুষ, হাসতে জানে না বললেই চলে। সায়ান ভাইয়ের পাশে তাকে বড্ড রসকষহীন মানুষ বলে বোধ হতে লাগল আমার। বেঁটেখাটো সাধারণ চেহারার মুবিনের সাথে পাঁচ ফিট দশ ইঞ্চি উচ্চতার নায়কোচিত চেহারার সায়ান ভাইয়ের তুলনা করে নিজের অজান্তেই আমি গোপনে মাঝেমধ্যে দীর্ঘশ্বাস ফেলতে লাগলাম।
মাস ছয়েক পর একদিন ফোন করে সায়ান ভাই বললেন,
— ভাবছি অতীত ভুলে নতুন করে জীবন শুরু করব এবার । আর এর জন্য বিয়ের চেয়ে বড় ঔষধ আর নাই।
— বিয়ে ঠিক হয়েছে নাকি আপনার?
— হুম, আম্মা মেয়ে দেখে এসেছেন। কনের বাড়ি বিক্রমপুর। মেয়ে দেখতে ভালো তবে লেখাপড়া কম জানে। সেটা অবশ্য সমস্যা না। লেখাপড়া কম জানা মেয়েরা সংসারি হয়। চাকরি চাকরি করে লাফায় না।
— বাহ, ভালো তো, করে ফেলেন বিয়ে। আপনাদের দেশের বাড়িও তো শুনেছিলাম সেখানে। ভালোই হবে।
সায়ান ভাই মাসখানেকের মাথায় বিয়ে করলেন। উনার স্ত্রী নীলা হাসিখুশি বেশ ভালো মেয়ে। একটাই সমস্যা, কোন কথা ভেতরে আর কোন কথা বাহিরে বলতে হবে তা সে বুঝতে অক্ষম। মাস দুয়েকের মধ্যে বুঝলাম কিছু কিছু ব্যাপারে সায়ান ভাইয়ের চেয়েও তিনি আরও এক ধাপ উপরে। ফেসবুকে উনারা দুইজনই তাল হারিয়ে উনাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের এমন সব ছবি মাঝে মধ্যে আপলোড দেন যা দেখলে লজ্জায় কান লাল হয়ে যায়। আত্মীয় বলে সায়ান ভাইয়ের স্ত্রী নীলা ভাবীর সাথেও আমার টুকটাক কথাবার্তা হয় মাঝেমধ্যে । ভদ্রমহিলা স্বামীর গুন মুগ্ধ ভক্ত। সুযোগ পেলেই মুখ দিয়ে স্বামীর প্রশংসা ও তাদের প্রেমময় দাম্পত্য জীবন নিয়ে গল্পের তুবড়ি ছুটান। সায়ান ভাই আজ তাকে এই সারপ্রাইজ দেন তো কাল ডায়মন্ডের রিং কিনে দেন, পরশু বিদেশ ঘুরিয়ে আনেন।
ফেসবুকে তাদের ভালোবাসার সেসব কাহিনী দেখে দিনে দিনে তীব্র হীনমন্যতায় মুষড়ে পড়তে থাকি আমি। কী সৌভাগ্য নিলা ভাবীর। অমন রোমান্টিক স্বামী তার। তাদের সাথে নিজের জীবন তুলনা করে জীবনটা বড্ড ফ্যাকাসে, রঙহীন লাগতে থাকে আমার..!
সায়ান ভাইদের হাসিখুশি, রঙিন ভালোবাসাময় পৃথিবী অজান্তেই আমার শরীরে জ্বালা ধরায়। তুলনা করে করে স্বামীর প্রতি তীব্র ক্ষোভ অনুভব করি ভেতরে ভেতরে । বুকে পুষে রাখতে রাখতে সেটা মাঝেমধ্যেই ঝগড়াতে গড়ায়।
মুবিন মিনমিনে গলায় প্রতিবাদ করে বলে,
— কী আশ্চর্য সিমকি ! কেন তোমার ধারণা হলো আমি তোমায় ভালোবাসি না ?
আমি মুখ, চোখ লাল করে বলি,
— হ্যাঁ, ভালো তো বাসই না। কোনদিন আমায় সারপ্রাইজ দিয়েছ? খুশি করতে চেয়ে এনেছ কিছু? ফেসবুকে তো একদিনও আমায় ভালোবাসি বলে পোস্ট দিলেনা সায়ান ভাইয়ের মতোন ।
মুবিন অবাক হয়ে বলে,
— ফেসবুকে বলতে হবে কেন..?
— আরে তাহলে তো ভাবীর মতো লোকজনকে দেখিয়ে আমিও এইসব গল্প করতে পারতাম।
আমার রসকষহীন কাঠখোট্টা স্বামী আগের চেয়েও নির্লিপ্ত গলায় বলেন,
—ভালোবাসা লোকজনকে দেখাতে হবে কেন ? তাছাড়া, ভালোবাসা উপলব্ধির ব্যাপার। আর সবার প্রকাশ ধরনও এক নয়,একে বুঝতে হয় মন দিয়ে।
তার কথায় অবশ্য আমার তেমন কিছু পরিবর্তন হয় না।
আগের মতোই সায়ন ভাই আর নিলা ভাবীর পোস্টগুলো আমি তুমুল আগ্রহ নিয়ে দেখতে থাকি। লাভের লাভ আমার কাঠখোট্টা স্বামীর প্রতি প্রতিবারই আমার বিরক্তি আর হতাশার মাত্রা বাড়তেই থাকে ।
অবশেষে বিয়ের তিন বছর পর, এবার থার্টি ফার্স্ট নাইটে সায়ান ভাইয়ের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। তিনি নিজে সেই ভিডিও আমায় পাঠিয়েছেন।
আর নিউ ইয়ারের সপ্তাহ খানেক পর, ফেসবুক খুলতেই দেখি সায়ান ভাই আর ভাবীর ছবি। কোথায় যেন বেড়াতে গিয়ে উনারা দুইজন নৌকায় উঠে টাইটানিকের নায়ক, নায়িকার মতো পোজ দিয়ে হাত ধরাধরি করে দাঁড়িয়ে আছেন। দুইজনেরই চোখে বাহারী সানগ্লাস, মুখ ভর্তি একগাদা হাসি। সাথে ক্যাপশনে লেখা ” ভালোবাসি ভালোবাসি আমি তোমায় ভালোবাসি। দিয়েছি তোমায় আমার এই মন যতটা ভাবছ তারও বেশি”।
….প্রেমে অন্ধ কপোত-কপোতী।।
শত শত লাইক, অজস্র কমেন্টসের বন্যা হয়েছে তাতে।
আমি ভয়ানক বিতৃষ্ণা নিয়ে আজ সেই ছবি দেখছি। অন্যদিনের মতো তাদের এই ভালোবাসা আজ আমার হৃদয়ে জ্বালা ধরাচ্ছে না বরং আমার রসকষহীন কাঠখোট্টা টাইপ অতি সাধারণ স্বামীর প্রতি আমি হঠাৎ করে তীব্র ভালোবাসা অনুভব করতে শুরু করেছি ।
কী বোকাই না ছিলাম এতদিন।
যে মানুষ সজ্ঞানে হাসি মুখে ফান করার ছুতায় নিজের বিবেকবুদ্ধিকে বিসর্জন দিতে পারে, কাউকে ঠকাতে পারে… সে আর যাই পারুক কাউকে ভালোবাসতে পারে না.. আমি নিশ্চিত। আর তাদের অনুকরণেরও কিছু নেই।
আমার স্বামী ঠিকই বলে, ভালোবাসা আসলেই উপলব্ধির ব্যাপার।
সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ, অন্তত দেরিতে হলেও শেষ পর্যন্ত আমার সঠিক বোধটা উদয় হয়েছে।
~~

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..