এই করোনা ভাইরাস প্রতিটি মানুষকে নতুন করে জীবন চিনতে সাহায্য করল । সততা জীবনের মূল্যবোধের পথকে নিয়ন্ত্রণ করছে । প্রতিটি পদে পদে স্বাধীনতা হরণ ।এবার বাঙ্গালী শিখবে ।
বেশ কতদিন ধরে শরীর মন কোনটাই ভালো যাচ্ছে না মিলির । এতো বিপদের মধ্যে নিজেকে শক্ত রাখবার বহু চেষ্টা করছে ।
কোনদিন কোন তারিখ কি বার , কিছুই মনে থাকে না । আশ্চর্য এক সময় পার করছে পৃথিবীর মানুষ । শরীরটা কদিন ধরে বেশ গন্ডগোল করছে । পাত্তা দিচ্ছিলো না মিলি । হঠাৎ একটা ভয় শিরশির করে মেরুদন্ড বেয়ে শরীরের নীচের দিকে নামতে থাকে । কেমন অবশ করে দিতে থাকে সারা শরীর ।সকাল থেকে মাথা ব্যথাব্যথা ছিল, নাপা খেলো ।
ঘর অন্ধকার করে ঘুমাবার চেষ্টা তদবির করছে, কিন্ত বৃথাই চেষ্টা ।
অজানা ভয়ে শিরশির করে শরীর কেঁপেকেঁপে উঠছে ।
আস্তে করে পাশের রুমের দরজাটা খুললো মিলি । মনোযোগ দিয়ে ফাইল দেখছে। টিভি খোলা ।সারা ঘর এলো মেলো ।
জিজ্ঞাস্য চক্ষু মেলে কর্তা বললেন — কি , কিছু বলবে ?
কিছুক্ষণ চুপ করে দাড়িয়ে থেকে মিলি বলে,
ঃ — না তেমন কিছু না , এমনি এলাম ।
ছোট্ট কাজের মেয়ে সায়মাকে মিলি বললো — সায়মা কাছে আয় ,
ঃ—আমি ঘুমিয়ে গেলে তুই সবাইকে খাওয়াটা দিতে পারবি ? সব রেডি আছে রান্না ঘরে । দশটার দিকে দিয়ে দিবি ।
আমার শরীরটা খুব খারাপ লাগছে । যদি ঘুমিয়ে যাই আমায় ডাকিস না । কেমন পারি তো ?
সায়মা —- পারুম খালাম্মা। আপনে ঘুমান । আমি সব করতে পারুম । বাটিতে বাইড়া ওভেনে গরম কইরা দিলে তো হইব । ভাত তো গরম আছে ।
—- তোর খালুর দৈই চিড়েটা বাটিতে আছে সামনে দিস । নিজেই মাখিয়ে খাবে ।
ঃ—- পারুম, আপনে ঘুমান , এসি ছাইড়া দেই খালাম্মা ?
না না ঘুম হচ্ছে না , অথচ চোখ ভরা ঘুম। ক্লান্ত শরীর । ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে আসছে তারপরও ঘুমাতে পারছেনা মিলি । কেমন একটা অস্বস্তি ভাব । মনে হচ্ছে শরীর মন থেকে আলাদা হয়ে যাচ্ছে । সাত / পাঁচ ভাবনা। দপদপ করছে, আর ভয়ে কুকড়ে যাচ্ছে মিলি । চোখটা লেগে আসতেই শরীরের মধ্যে কেমন একটা ঝাঁকুনি দিয়ে ঘুমটা ভেঙে যাচ্ছে বার বার ।
শেষ পযর্ন্ত মিলি তার পাশের ঘরে এলো । এসি ছাড়া, আস্তে করে দরজাটা খুলতে ভিতরে থেকে রুবেলের প্রশ্নবোধক জিজ্ঞাস্য চাহনি!
ঃ—— কি ঘুম হলো না ?
মিলি ঃ ——না , পারছি না কেমন অস্বস্তি লাগছে । কি করি বলতো ?
কি হলো আমার ।
ঃ। — কিছু হয়নি , মন ঠান্ডা করে লম্বা একটা ঘুম দাও ঠিক হয়ে যাবে । ঃ— ভয়ভয় লাগছে কেন জানি না । আর ঘুমটাও ভেঙে যাচ্ছে বারবার ।
ঃ—-তুমি টি ভি ছেড়ে রেখেছো কেন ? সারাদিন কেন যে এতো বকবক শোন বুঝিনা । তোমার বিছানাটা তো আজকে ঝাড়তে দিলে না । ওঠো চাদরটা পাল্টেদি ।
অবাক দৃষ্টি মেলে জিজ্ঞাসা করে তুমি এখানে থাকবে নাকি ?
মিলি — কেন? এটা তো আমার বেডরুম, ঘর-বাড়ি- বিছানাও । শুধু কি তোমার একার ঘর ?
তা কেন হবে ? তুমি তো তোমার সুবিধার জন্য ও ঘরে গেছো । তোমার লেখালেখির সুবিধা জন্য ।
সেটা ঠিক তো সারাদিন এই শব্দ ।বাজারের মতো হট্টগোল ,একদম সহ্য হয় না ।
বেডরুম হবে শান্তির জায়গা ।শান্ত ছিমছাম, পরিষ্কার পরিছন্ন । তাতো না, রীতিমত অফিস । যাব না তো কি করবো । সারাদিন অসুরে মতো কাজকর্ম
করে একটু শান্তিতে ঘুমাতে হয় ভাই । দাস-দাসি তো কেউ নেই ।
ঃ। — না সেটা তো ঠিক আছে । কিন্তু দুরত্ব বজায় রাখার ব্যাপারটাও দেখতে হবে । সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। স্বাস্হ্য বিধি মেনে চলতে হবে ।
কলিজাটার মধ্যে কেমন যেন ঘা পড়ল মিলি । তাড়াতাড়ি মিলি নিজেকে সামলে নেয় ।বলে সেটা ঠিক আছে। কিন্তু এ ঘরেটা তো আমারও তাই স্মরণ করে দিলাম ।
ঃ——এ ঘরে সাউন্ড স্লিপ হবে না সেটা জানি বলে ও ঘরে ঘুমাই । কিন্তু ভয় লাগছে তাই এসেছিলাম । অনেক রাত হলো একটা ঘুমের ওষুধ দেবে ? খাবো। নিজে নিয়ে খেতে ভয় লাগছে ।
তুমি যদি বললো তবে খাবো ।
আবার ভয়ও করছে সকালে যদি উঠতে না পারি ।
ঘুম যদি আর না ভাঙে ?
ঃ —এখানেই থাকো তাহলে , খুব তো মাঝেমধ্যে ও ঘরে গিয়ে থাকো । বলো তোমার লেখালেখির অসুবিধা হয় ।
— তুমি সারারাত টিভি ছেড়ে রাখ এর মধ্যে কি ঘুমানো যায় ?
আচ্ছা এসো তুমি । আমি ওঘরে গিয়ে নামাজ পড়ছি ।
ঃ — না এখানে থাকা যাবে না ।এখানে এই রুমে সাউন্ড স্লিপ সম্ভব না ।
কি এক অভিমানে কথা আটকে গেলো মিলির। গলার কাছে দলা পাকানো কষ্ট গুলো গেলা যাচ্ছে না । জীবনটা কেন এমন হলো ? কেউ কারো না ।
তবে এটা ঠিক , এবার বন্ধু – বান্ধব, আত্মীয় – স্বজন , সন্তান – স্বামী- স্ত্রী সবার জন্য ভালো হলো ।কার অবস্থান সংসারে কতটুকু, এই করোনায় জীবন বোধটা ঠিক যার মতো সে বুঝে নেবে ।
ঘুমের ওষুধ খেয়ে এক সময় মিলি গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো ।
অনেক রাতে দেখে গায়ের মধ্যে কি খসখস করছে । ডিম লাইটের সবুজ বাতির মধ্যে তাকিয়ে দেখে কর্তা বাবু মাসারি টানিয়ে দিচ্ছেন । চোখটা ঘুমের ভানে বন্ধ করে রইল । কপালে হাত রেখে শরীরের তাপ পরীক্ষা করলেন । সায়মাকে দিয়ে দুটো রুটি আর একটা কলা বেড সাইট টেবিলে রেখে, পাতলা কম্বলটা পায়ের কাছে দিয়ে কিছুক্ষণ বসে রইলেন।
তারপর বললো — দরজাটা খোলা রাখিস সায়মা । তোর খালাম্মার শরীর খারাপ লাগলে আমাকে ডাকিস। আমি জেগে আছি ।
সায়মা বলে —- দরজা তো খোলা থাকে খালুজান ।
—- জানি তো , তারপরও বললাম । মনের ভুলে বন্ধ করিস না ।
কখন গভীর ঘুমের অতলে হারিয়ে গেছে মিলি । অনেক সকালে উঠে গেল । কেউ উঠে না এতো সকালে বাড়িতে ।
এক কাপ চা বানিয়ে তার শখের ছাদ বাগানে উঠে গেলো ।ফুল ফুটে আছে চারিদিকে ।এক ফালি সবুজ চোখে মুখে ঝাপটা দিয়ে যায় । ছাদের ফ্রেশ ঠান্ডা বাতাসটা খুব ভালো লাগছে । চারিদিক শান্ত । লক ডাউনের ভয়ে রাস্তায় গাড়ি, লোক চলাচল একদম বন্ধ প্রায় । ঢাকা শহর ভাবতে আশ্চর্য লাগে ।
মিলি শুধু ভাবছে, মা – বাবা , সন্তান তারপরও একজন আর একজনকে এভাবে আপন করে নেয় । জীবন একসময় একান্ত শুধু দুজনার হয়ে যায় ।একজন আর একজনের উপর নির্ভরশীল ।একান্ত আপনার মানুষ। চেহারা দেখে তার ভিতরটা বুঝে নেয়া যায় । মুখ ফুটে কিছু বলার দরকার হয়না । একে অপর কে প্রেম – ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখে । যতদিন বেঁচে থাকে ততদিন ।
কি নাম এর ? ভালোবাসা — মমত্ববোধ , প্রেম না কর্তব্য, না দায়িত্ব ?
ছাদে হাঁটে আর অনেকদিন পরে নিজের অজান্তে গলায় সুর বেজে ওঠে ।
——-
সখি ভাবনা কাহারে বলে
সখি যাতনা কাহারে বলে ,
তোমরা যে বলো দিবসও রজনী
ভালোবাসা …ভালোবাসা
সখি ভালোবাসা কারে কয়?
সেকি কেবলি যতনাময় ।
সেকি কেবলি চোখের জল
সেকি কেবলি দুঃখের শ্বাস
লোকে তবে করে কি সুখেরি তরে
এমনি দুঃখেরি বাস ।
৯/৯/২০২০ ,
ধানমন্ডি — ঢাকা ।
এ জাতীয় আরো খবর..
Leave a Reply