প্রসূন বরাবর ই গম্ভীর,কেমন যেন খাপছাড়া,এলোমেলো। কবি মানুষ,তাই হয়তো এমন। সুস্মিতা তাই ভেবে নিয়ে ওর মনকে বুঝিয়ে নিয়েছে।এমন মানুষ তো ভাবের রাজ্যে থাকবেই,প্রকৃতিতে হারাবে,আবার মানবীতেও..অপেক্ষায় থাকা ছাড়া উপায় কী !!
তাদের প্রেমের সম্পর্ক আজ তিন বছর,প্রসূন ই এগিয়ে এসেছিলো তাঁর দিকে। সেটাও অবাক লাগে এখন সুস্মিতার,উদাসীন এই মানুষ বুঝি সত্যি ই কখনো তাকে দেখেছিলো! আবার সেটা তাকে জানিয়েওছিলো..কী ভাগ্য তার!!
এরপর বছর তিনেক এভাবেই কেটে গেলো,ভুলোমনা কবি,নিজের কথা ই ভুলে যায়। তাও ভালো,জগত টা লেখালিখি নিয়েই। সারাজীবন ই কি এমন ই উদাসীন থেকে যাবে তার মানুষ টা!!
সুস্মিতার খুব প্রিয় ছিপনৌকো..এলোমেলো বাতাস,এলোমেলো চুল..নদীর ঢেউ,আর সাথে প্রসূনের কবিতা..কিংবা তার গান..বেসুরো টা না হয় সুর খুঁজুক প্রসূনের কবিতার ছন্দে!!
আজ ও বের হয়েছে তারা, আজ অবশ্য প্রসূনের ইচ্ছেয়,আজ শুধু তারা দুজন..মাঝি ও নেই। প্রসূনের বন্ধু বললো,আজ নাকি প্রসূন বিয়ের কথা বলবে,শুনেই তো সুস্মিতা এলোমেলো। তার বাসায় ছ’মাস ধরে এত বলছে,সে বলেওছিলো প্রসূন কে। সময় চেয়েছে প্রসূন, বাসায় জানাতে নিষেধ করেছে।
প্রসূন আজ অবশ্য ই কাজ টা করবে,গত দু মাস ধরে ভাবছে। কিভাবে সুস্মিতা কে বলা যায়। এত আবেগী,উচ্ছল একটা মেয়ে,সহজ ভাবে নিবেনা কিছুই। যতই সে মায়া ছাড়াতে চায়,আরো আষ্টেপৃষ্ঠে আঁকড়ে ধরে মেয়ে টা।
সে দেশেই থাকতে চায়না,ইউ এস এ চলে যাবে,আপাতত মামার কাছে। তার পরিবার চায়,কোনভাবে সেখানে যদি স্থায়ী হওয়া যায়,তার নিজের ও তাই চাওয়া। অনেক রকম পরিকল্পনা মাথায় আসলেও,কিছুতেই সু্যোগ হচ্ছিলোনা।
সুযোগ ঈশ্বর ই করে দিলেন,গত বছর কবি সম্মেলনে,ফ্লোরিডায়। পরিচয় হলো শুভ্রার সাথে।ওখানে একটা সফটওয়্যার কোম্পানি তে আছে,পরিবারের সাথে থাকে,বিয়ে করেনি,অনেক বছর ধরেই তারা সেখানে। পরিবার বিয়ের জন্য বাঙালি ছেলে খুঁজছে। বাকি টা সময়ের ব্যাপার ছিলো মাত্র,দুজনের কাছে আসার। প্রসূন বরাবর ই পারে নিজের দিকে টানতে,আর এবার তো তার আগ্রহ ব্যাক্তিগত ই।
আর কত কবি কবি ভাব নিয়ে থাকা যায়,সুস্মিতা কে তার কখনোই তেমন ভালো লাগেনি। প্রয়োজন ছিলো,উচ্চবিত্ত পরিবারের একমাত্র মেয়ে। দেশে থাকার ইচ্ছে থাকলে তো সোনার ডিম পাড়া হাঁস সে।ইচ্ছে যে পালটে গেলো,এখন আর সুস্মিতাকে কি প্রয়োজন!!
আজ তাই ওকে সব বলে দিবে প্রসূন। খারাপ ই লাগছে তার..মেয়ে টা বড্ড বোকা,এই যে যখন তখন তার কাছে চলে আসে।কতটা কষ্ট যে পাবে, মেনে নিতে পারবে তো??
মেনে নিতে অনেক কষ্ট হয়েছে সুস্মিতার,যখন শুভ্রার কাছে প্রথম শুনেছিলো। শুভ্রা যে সুস্মিতার ছোট বেলার বান্ধবী,প্রসূন জানেনা তা। শেষ এক মাস ধরে নিজেকে বুঝিয়েছে,না,সে সব ক্ষমা করতে পারে,বিশ্বাসঘাতকতা নয়!!
গত এক মাস ধরে ইচ্ছে করেই অবুঝ,ছটফটে ছিলো সুস্মিতা। নিয়মিত ছিপনৌকোয় ঘুরেছে,তাই আজ নিজে থেকেই যখন প্রসূন বললো,”মাঝি থাকুক?নিজেরা ঘুরি?” সে বুঝে গিয়েছিলো আজ ই প্রসূন বলবে,আর আজ ই…..
এমনিতেই এলোমেলো বাতাস,ঝড় আসছে..একটা ছিপনৌকো উলটে যেতেই পারে।
সাঁতার না জানা,তার প্রিয় কবি,বড্ড দেখতে ইচ্ছে করে সুস্মিতার…মৃত্যুর অনুভূতি কবি জানেন কি!!
এ জাতীয় আরো খবর..
Leave a Reply