1. banglamailnews72@gmail.com : banglamailnews : Zakir Khan
মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:২২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
# মাহমুদা সুলতানা একা # কালো_মানিক বেসিনে গরম পানি ঢালার পূর্বে সতর্ক হোন!! ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড ———————————– অভিনন্দন – শুভ জন্মদিন অবন্তী দেব সিঁথি ————————— — মেসবা খান ঢাকায় অবস্থানরত জামিয়া গহরপুর সিলেট’র ফুযালা ও প্রাক্তনদের আয়োজনে ❝মাহফিলে নূর❞ অনুষ্ঠিত —— হজ্জ ২০২৫ ও ওমরাহ বুকিং চলছে – – মক্কা হুজুর হজ্জ কাফেলা সাউথ বাংলা ট্যুরিজম ————————— প্যারাডাইজ ইন্টারন্যাশনাল হাই স্কুল রম্য কবিতা – অবশেষে হেডমাস্টার – – কলমে – – – – – চৈতালী দাসমজুমদার আলহামদুলিল্লাহ বহু প্রতিক্ষিত স্বপ্ন বাস্তবায়নের উদ্যোগ, মানব সেবার লক্ষ্য ……. প্রস্তাবিত “জেড ওয়েল মেডিকেল কলেজ ও হসপিটাল লি:”

ছড়া কি শিশুসাহিত্য? – – – লুৎফর রহমান রিটন

  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২ জুলাই, ২০২৪
  • ১৩৭ বার
প্রতিটি শিল্প-মাধ্যমের একটা নিজস্ব ভাষা থাকে। সেই ‘নিজস্ব ভাষা’টাই তাকে স্বাতন্ত্র্য দেয়। অন্যদের থেকে আলাদা করে। শিল্প মাধ্যম ছড়ার ভাষাটাও তাই অন্য কারো সঙ্গে মেলে না। এমন কি মেলে না তার নিকটাত্মীয় কবিতার সঙ্গেও।
বাংলা ছড়াকে প্রথম মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছিলেন রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী। আজ থেকে একশ পঁচিশ বছর আগে বাংলা ১৩০৬ সালে যোগীন্দ্রনাথ সরকারের ‘খুকুমনির ছড়া’ শীর্ষক বইটির ভূমিকা লিখতে গিয়ে তিনিই প্রথম ‘ছড়াসাহিত্য’ শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। ছড়াকে প্রথম সাহিত্যের মর্যাদায় অভিষিক্ত করেছিলেন তিনি। ছড়াকে সাহিত্যের মর্যাদায় সমুন্নত রাখতে ছড়াকারদের চেষ্টার কমতি নেই। কখনো প্রবীনদের প্রদর্শিত পথে হেঁটে, কখনো প্রবীনদের প্রদর্শিত পথকে অস্বীকার করে নবীন ছড়াকাররা ছড়াকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। এবং এই এগিয়ে চলার পথটি দীর্ঘ। দীর্ঘ এই পথ পরিক্রমায় আমরা লক্ষ্য করি যে পালটে যাচ্ছে ‘ছড়ার ভাষা’।
শিশুর প্রথম পাঠ হচ্ছে ছড়া।
শিশুর পবিত্র মুখে কথা ফোটার শুরুতেই আধো আধো বোলে ওরা ছড়া আওড়ায়। বড়দের কাছ থেকে ছড়া শুনে শুনে অনায়াসে সেই ছড়াগুলো মুখস্থ করে ফেলে শিশুরা। বর্ণমালা চেনার আগেই মায়ের কথার মাধ্যমে কিংবা ছবির মাধ্যমে ছড়া ওদের চেনা হয়ে যায়। এককালে মুখে মুখে রচিত হতো ছড়া। মায়েরা তাদের ছোট্ট সোনামনিদের সঙ্গে খেলতে খেলতে মুখে মুখে ছড়া বানাতেন। ওদের খাওয়াতে কিংবা ঘুমপাড়াতেও মায়েরা ছড়া বলতেন। একালের আধুনিক মায়েরাও শিশুদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেন ছড়ার মাধ্যমেই। যুগ যুগ ধরে এভাবেই মা এবং শিশুর কথোপকথনের একটা কার্যকর মাধ্যম হিশেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে ছড়া। ছড়ার ভাষাটা এখানেই আর সব ভাষা থেকে স্বাতন্ত্র্য ও উজ্জ্বল।
ছড়ার ছন্দ দোলা একটি শিশুর মনোজগতকে রাঙিয়ে তোলে। ছড়াই পারে একটি শিশুর শৈশবকে বর্ণাঢ্য ও ছন্দময় করে তুলতে। শিশুর কল্পনাশক্তিকে প্রখর ও বিস্তারিত করতে। ছড়ার ছন্দ এবং মিল শিশুকে আকৃষ্ট করে বলেই শিশুরা প্রায়শঃ নিজেরাও ছড়া বানায় মুখে মুখে। ছড়া এবং ছবির মাধ্যমেই একটি শিশু প্রবেশ করে তার একান্ত নিজস্ব সৃজনশীলতার অপরূপ ভুবনে।
০২
ছড়ার দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় আমরা লক্ষ্য করি–আধুনিক কালে এসে সুকুমার রায় থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পর্যন্ত ছড়া হাস্যরস আর উদ্ভট চিত্রকল্পে আবদ্ধ ছিলো। অন্নদাশঙ্কর রায় এই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটালেন–‘তেলের শিশি ভাঙলো বলে খুকুর পরে রাগ করো/তোমরা যে সব বুড়ো খোকা/ভারত ভেঙে ভাগ করো/তার বেলা?’
সেই থেকে শুরু হলো ভিন্নতর যাত্রা, ছড়ার। আধুনিক কালের ছড়াকাররা অবলীলায় শামিল হলেন অন্নদাশঙ্করী ধারায়। আর সে কারণেই বাংলাদেশে আমরা দেখি–বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ-আন্দোলন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, বাহাত্তর তেহাত্তরের অরাজক পরিস্থিতি, চুয়াত্তরের পরিকল্পিত দুর্ভিক্ষ, পঁচাত্তরের জাতির জনক শেখ মুজিব হত্যা, সামরিক শাসন, জিয়ার শাসনামলে ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’এর আগমন, একাত্তরের ঘাতক দালাল রাজাকারদের পুনরুত্থান, সরকার ও রাষ্ট্রযন্ত্রে স্বাধীনতা বিরোধীদের সক্রিয় অবস্থান, তাদের মন্ত্রীত্বপ্রাপ্তি, ধর্ম নিয়ে রাজনীতি, জিয়া হত্যার পর নতুন রাজনৈতিক পরিস্থিতি, স্বৈরাচার এরশাদের আগমন, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, চুরাশির শিক্ষানীতি বিরোধী আন্দোলন, সাতাশির অবরোধ দিবসে বুকে পিঠে শ্লোগান লেখা শহিদ নূর হোসেন–‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক স্বৈরাচার নিপাত যাক’, এরশাদের পতন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আগমন, রাষ্ট্রক্ষমতায় বিএনপি, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃতি, খালেদার পতন, রাষ্ট্রক্ষমতায় শেখ হাসিনার আগমন, হাসিনার বিদায়, জামাত বিএনপি চারদলীয় জোটের ৪৭এর চেতনায় ফিরে যাওয়ার সংকল্প ও প্রত্যয়, তাদের রাষ্ট্রক্ষমতাপ্রাপ্তি, স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের বিপুল উত্থান ও নৃশংসতা, ধর্মান্ধ মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর উল্লাস, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনা বিনাশ, সংখ্যালঘুদের ওপর নৃশংস-ভয়াল-জঘন্য-কুৎসিত-অমানবিক নিপীড়ন, জরুরী অবস্থা জারী, সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আগমন, রাষ্ট্রক্ষমতায় শেখ হাসিনা, মুজিব হত্যার বিচার, একাত্তরের ঘাতক যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, রাজনৈতিক নেতা-মন্ত্রীদের চরিত্রপতনের দৃশ্যগুলো ঘটনাগুলো ছড়াকাররা তাঁদের ছড়ায় খুবই খুদে আয়তনে বিশাল ব্যাপ্তি নিয়ে ধরে রেখেছেন।
বাংলাদেশের ইতিহাস রচনায় এই টুকরো টুকরো দৃশ্যগুলো রীতিমতো ‘রাজসাক্ষী’র ভূমিকায় অবতীর্ণ।
ষাটের দশকে বক্তব্যপ্রধান রাজনৈতিক ছড়ায় ‘শাসক’ আর ‘শোষিত’ এই দুটি শ্রেণীকে বোঝাতে ছড়াকাররা ‘রাজা ও প্রজা’ শব্দ দুটি পুনঃপুন ব্যবহার করেছেন।
সত্তরেও এই ধারা প্রায় অক্ষুণ্ণ ছিলো। কিন্তু সত্তরের শেষে আশির শুরু থেকে রাজা-প্রজা নামক রূপক শব্দের চাইতে সরাসরি নাম ব্যবহারের প্রবণতা বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে মারাত্মক আকার ধারণ করে। এতে করে ছড়ার শিল্পগুণ বিনষ্ট হচ্ছে বলে কোনো কোনো সমালোচক ধারণা পোষণ করেন। কিন্তু আমার সমর্থন ও অবস্থান আগল ভাঙা তরুণদের পক্ষেই দৃশ্যমান। সময়ের প্রয়োজনে ছড়ার ভাষা তো পাল্টাবেই। সময়ের সঙ্গে ঐতিহ্যের নবায়ন যদি আধুনিকতা হয় তাহলে ছড়ার ভাষার এই পরিবর্তনকে মেনে নিতেই হবে আমাদের।
০৩
ছড়ার ভাষার শক্তি এবং দ্যুতিকে উপলব্ধি করেছিলেন বলেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কিংবা কাজী নজরুল ইসলামও উৎসাহী হয়েছিলেন ছড়া রচনায়। উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীপুত্র সুকুমার রায়, সুকুমারপুত্র সত্যজিৎ রায় অতঃপর অন্নদাশঙ্কর রায়–এই তিন রায়ের হাতে বাংলা ছড়া পেয়েছে ভিন্ন ভিন্ন মাত্রা। তবে, ছড়াকে একেবারেই অকল্পনীয় ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে গেছেন সত্যজিৎ রায়। ছড়ার ভেতরকার অমোঘ শক্তিকে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন তিনি। ছড়ার আঙ্গিকটাকে অনুসরণ করে ছড়ার ভাষাটাকে ব্যবহার করে তিনি নির্মাণ করেছিলেন অনন্যসাধারণ চলচ্চিত্র ‘হীরক রাজার দেশে’। আমরা জানি চলচ্চিত্রের রয়েছে নিজস্ব ভাষা। সেই ভাষার সঙ্গে ছড়ার ভাষাকে যুক্ত করেছেন সত্যজিৎ রায় তাঁর অপরূপ শৈল্পিক দক্ষতায়।
ছড়ার ভাষা দ্রুত কম্যুনিকেটিভ এবং স্মৃতিবান্ধব। আর তাই টিভি বিজ্ঞাপনে এবং জিঙ্গেলেও ছড়ার ব্যবহার আমরা লক্ষ্য করি।
০৪
সাহিত্যে শিল্পে একটি দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় ও প্রাকৃতিক চালচিত্র্যের প্রতিফলন ঘটে। সাহিত্যের অন্যান্য মাধ্যমের তুলনায় ছড়ায় এই প্রতিফলন অধিক স্বচ্ছ। আর সে কারণেই দেখি প্রাচীন ছড়ায় বাঁধা পড়ে আছে ইতিহাস। রচয়িতার নামটি হয়তো হারিয়ে গেছে কিন্তু টিকে আছে ছড়াটি। ধরা যাক এই ছড়াটির কথা—
‘খোকা ঘুমালো পাড়া জুড়ালো/বর্গী এলো দেশে,/বুলবুলিতে ধান খেয়েছে/খাজনা দেবো কিসে?/ধান ফুরালো পান ফুরালো খাজনার উপায় কী?/আর ক’টা দিন সবুর করো/রসুন বুনেছি।’
নবাব আলীবর্দী খাঁর শাসন আমলে, ১৭৪০ খৃস্টাব্দে বর্গী হামলার সময়ে রচিত হয়েছিলো ঐতিহাসিক এই ছড়াটি। বর্গী হামলার খবরের পাশাপাশি একই সঙ্গে ছড়াটি জানিয়ে দিচ্ছে তৎকালীন সামাজিক রাজনৈতিক অর্থনৈতিক সামর্থ আর অসামর্থের কথাও। গরিব অসহায় হতদরিদ্র প্রজা সব খুঁইয়েছে বর্গী হামলায়। উৎপাদিত শস্য-ধান-পান সবই ফুরিয়ে একেবারেই নিঃশ্ব প্রজা। কিন্তু তাতে কি? রাজা বা জমিদারকে(শাসক) খাজনা বা ট্যাক্স তো দিতেই হবে। নইলে পাইক পেয়াদা এসে ধরে নিয়ে যাবে। অমানুষিক নির্যাতন করবে। নিঃশ্ব প্রজা তাই পরবর্তী শস্য উৎপন্ন হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করার আকুল আবেদন জানাচ্ছে, কারণ সে রসুন বুনেছে। এই রসুন বিক্রি করে প্রাপ্ত টাকায় কিংবা সরাসরি রসুনগুলোই খাজনা হিশেবে সমর্পণ করবে সে। গরিব প্রজা খেতে পেলো কি পেলো না, উপোস দিলো কি দিলো না সেটা দেখা তো রাজা বা শাসকের কাজ নয়। তার দরকার খাজনা। –কী ভয়াবহ সমাজচিত্র!
এই ঘটনার প্রায় আড়াই শ বছর পরেও আমরা দেখি সত্যজিৎ রায়ের হীরক রাজার দেশের গরিব কৃষক অত্যাচারী রাজার নিষ্ঠুর নিপীড়নের শিকার হয়ে স্বীকার করছে—‘বাকি রাখা খাজনা/মোটে ভালো কাজ না/ভর পেট না-ও খাই/রাজ কর দেওয়া চাই/যায় যদি যাক প্রাণ/হীরকের রাজা ভগবান।’
আধুনিক বিশ্বে অত্যাচারের ধরণ পাল্টালেও শোষকের চরিত্র পাল্টায়নি। আর তাই আমরা দেখছি ছড়ার চরণ পাল্টালেও ধরণ(প্রেক্ষাপট)পাল্টায়নি।
০৫
সময়ের সাক্ষী ছড়া।
ক্ষুদ্রায়তনের একটি ছড়ার ছোট্ট ক্যানভাসে আঁকা থাকে হাজার বছরের ইতিহাসের বিপুল বিশাল অবিনাশী চিত্র। সাত পৃষ্ঠা লিখে যা বোঝানো হয় ছড়ায় সেটা সাত লাইনেই সম্ভব। আগেই বলেছি, ছড়া ছোট কিন্তু লক্ষ্যভেদি। ছোটগল্পের ক্ষেত্রে বলা হয়ে থাকে ‘গোস্পদে আকাশ দেখা’। ছড়ার ক্ষেত্রে ছোটগল্পের এই ক্ষমতাটির পাশাপাশি উল্টোটাও অর্থাৎ কিনা আকাশে গোস্পদের চিহ্নও অবলোকন করা সম্ভব। অর্থাৎ ছড়ার রয়েছে বহু দূর থেকে দেখা কিংবা একেবারে কাছে থেকে দেখার অদ্ভুত একটা ক্ষমতা। ছড়ার আছে খুবই পাওয়ারফুল একটা লেন্স। যা দিয়ে ‘জুম ইন জুম আউট’ করে আপনি অতীত বর্তমান এবং কখনো কখনো ভবিষ্যৎও দৃশ্যমান করে তুলতে পারেন।
২০০৭ সালে আমি বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার পাবার পর অভিনেতা আফজাল হোসেন আমাকে অভিনন্দন জানিয়ে ডান হাতের দুই আঙুলে ছোট্ট একটা স্পেস নির্দেশ করে বলেছিলেন—‘তুমি হচ্ছো সেই খেলোয়াড় যাকে খেলতে হয় এই এতোটুকুন একটা মাঠে। এবং এইটুকুন স্পেসেই তোমাকে তোমার যাবতীয় ক্ষমতা আর দক্ষতাকে প্রকাশ করতে হয়। খেলাটা সহজ নয়। সামান্য স্পেসে বড় খেলা দেখাতে হলে মারাত্মক স্কিল্ড হতে হয়। সেই কারণেই তুমি সবার থেকে আলাদা।’
অভিনেতা আফজাল হোসেনের কথাটা আমার পছন্দ হয়েছিলো। কারণ তিনি ছড়া সম্পর্কিত নিগুড় সত্যটিই উচ্চারণ করেছিলেন। ক্ষুদ্রায়তনে বিপুল শক্তির আধার—ছড়া। সমাজ-ইতিহাসের স্বরূপ আমরা প্রত্যক্ষ্য করি ছোট্ট ছড়ার বিশাল জানালা দিয়ে।
০৬
ছড়াকে শিশুসাহিত্য ভাবেন অনেকেই।
যুগ যুগ ধরে আমরা দেখেছি একেবারেই খুদে শিশুদের জন্যে পাঠ্য বর্ণিল ছড়ার বইতে প্রাচীন কিছু লোকছড়াকে অবলীলায় শিশুপাঠ্য ধরে নিয়ে দেদারসে মুদ্রণ ও প্রকাশ করা হয়েছে। সেই ধারাবাহিকতা আজও চলছে। ছড়াগুলো কালজয়ী।
কিছু ছড়া পুরনো হয় না কখনোই। কালকে সে জয় করতে পারে।
একটি কালজয়ী শিশুপাঠ্য ছড়ার মোড়কে লুকিয়ে থাকে পূর্ণবয়স্ক বা এডাল্টদের জন্যে গভীর বার্তা।
সেরকম একটি কালজয়ী ছড়ার কথা বলি—‘খোকন খোকন ডাক পাড়ি/খোকন গেলো কার বাড়ি?/আয় রে খোকন ঘরে আয়/দুধ মাখা ভাত কাকে খায়।’
আপাত দৃষ্টিতে ছড়াটা নিছক ছোটদের। কিন্তু একটু গভীরে প্রবেশ করলেই যে বক্তব্যটা দৃশ্যমান হয়ে ওঠে তাতে ছড়াটা আর ছোটদের থাকে না।
বর্তমানের কিংবা আগামী দিনের পাঠক নাম না জানা ছড়াকারের এই ছড়াটি পাঠ করে অনায়াসেই বুঝতে পারবে যে, ছড়ায় বর্ণিত এই খোকন সে নিজে।
যে মা তাকে ডাকছে, সেই মা হচ্ছে জননী জন্মভূমি।
যে দুধ মাখা ভাতের কথা বলা হয়েছে, সেই দুধ মাখা ভাত হচ্ছে তার দেশের সম্পদ।
যে কাকের কথা বলা হয়েছে সেই কাক হচ্ছে অপশক্তি আর অসুন্দরের প্রতীক।
সেই অপশক্তি আর অসুন্দরের হাত থেকে মা-কে রক্ষা করতে, দুধমাখা ভাতগুলো রক্ষা করতে সন্তানের প্রতি মায়ের আকুল আহবান হচ্ছে এই ছড়া।
দেশের দুর্যোগে দুঃসময়ে যুগে যুগে ছড়াকাররা ছড়ার ভাষায় এভাবেই ডাক দিয়ে যায়।
ইতিহাস সাক্ষী—ছড়াকার ডাক দিয়ে যায়।
০৭
অতঃপর আমরা এমত সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে–ছড়ামাত্রেই শিশুসাহিত্য নহে।
অটোয়া ৩০ জুন ২০২৪
May be an image of 1 person, dais and text

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..