কি ব্যাপার জলিল সাহেব, ভাবিকে দেখলাম হন্তদন্ত করে বেরিয়ে যেতে। হ্যাঁ ভাই ব্যাংকের চাকুরি তারপর সকালবেলা অফিস টাইমে লম্বা লম্বা সিগন্যাল পেরিয়ে যেতে হয়। সময়ের দরকার, তাই আরকি। রূপালীকে আজ গেটে এগিয়ে দিতে এসেছিলেন জলিল সাহেব। রূপালী বেরিয়ে গেলে দরজা খুলেই দাঁড়িয়ে ছিল যতক্ষণ দেখা গেল দাড়িয়েই রইল। মিস্টার ইমাম সাহেব পাশের ফ্ল্যাটের ভাড়াটে, ছেলেকে স্কুলে দিয়ে বাসায় ফিরলেন।
জলিল সাহেব ভালো বেতনের সরকারি চাকরি করেন ।সরকার থেকে সুযোগ সুবিধা ও ভালোই পান ।অফিস যাওয়ার গাড়ি ,সহ আরো অনেক কিছু। আজকাল সরকারি চাকরি পেলে আর কিছু লাগে না। একেবারে নিশ্চিত জীবন ।ঝড় ,বৃষ্টি ,তুফান হোক বেতন নির্দিষ্ট টাইমে ঢুকবেই। বিপদ হলো এই ছাপোষা ব্যবসায়ী আর বেসরকারি চাকরিজীবীদের। তাদের নুন আনতে পান্তা ফুরালেও, দেখার কেউ নেই। এটাই সিস্টেম হয়ে গেছে। কিছু বলাও মুশকিল পক্ষ-বিপক্ষ সুবিধা ,অসুবিধা কোন কিছুর তো আর কমতি নেই। একেবারে ভরপুর অবস্থা।
রুপালির চাকরি না করলেও চলে। ওর টাকায় সংসার চালাতে হয় এমন নয়। ওই এক কথা পড়াশোনা করেছি, আমিও মানুষ ।চাকরি করতে হবে ।তবে চাকরি চাকরি করে যে সংসারে খেয়াল নেই তা নয়। বেচারা চেষ্টা করে সবকিছু সামলে চলতে। কিন্তু তা করলে কি হয়? প্রপার সময় না দিলে কোন কিছুই ঠিক করে করা যায় না।
তাই মাঝে মাঝে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় রুপালি।
বাসায় একজন দেখাশোনা, একটু হেল্প করার মানুষ দরকার ।তাহলে যেন হাফ ছেড়ে বাচেঁ বেচারা ।কিন্তু জলিল সাহেব এর প্রয়োজন কোনদিন অনুভব করেননি। আসলে পুরুষ মানুষ তো সংসার চলছে, চাকরি চলছে।
চলছে তো সবই। তাই বাড়তি প্রয়োজন, বোঝার মত মানসিকতা কাজ করেনি ।
জলিল সাহেব আর রূপালী মানুষ হিসেবে খারাপ না। জলিল সাহেব একটু আরাম প্রিয় ।সংসারে খেয়াল দেয়াল কম ।সবকিছু রুপালীর উপর চাপিয়ে দিয়ে বাঁচতে চায়। তবে সে তার কাজে সিরিয়াস ।
রুপালিও সংসারের দায়-দায়িত্ব হাসি মুখে মেনে নেয় ।কিন্তু মাঝে মাঝে বিরক্ত হয়ে যায়। জলিল সাহেবের খামখেয়ালি যখন অতিরিক্ত মাত্রায় বেড়ে যায়।ঠিক অফিস যাওয়ার আগেই ঘুম থেকে উঠবে। কোনদিন এর অন্যথা হতে খুব বেশি দেখা যায়নি ।
প্রতিদিন ভোরে উঠে এক হাতে রান্নাবান্না করে, ঘর সামলে ,চাকরি করতে বের হন রূপালী। সে মনে করে মেয়েরা ঘরের কাজ করবে এটাই স্বাভাবিক ।চাকরিতো ইচ্ছা করে করে ।তাই এতে আমার কোন দায় নেই ।
জলীল সাহেবের এরকম আচরণে মাঝে মাঝে ক্ষেপে যান রুপালি আর ক্ষেপে গেলেই শুরু হয় যত অশান্তি।
জলিল সাহেব রাগারাগি একদমই পছন্দ করেন না। খোঁচা মেরে কথার আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করতে তার জুড়ি নেই ।সে প্রায় সময়ই শিক্ষিত মানুষ ,ভাষা কি? আচরণ এমন ! এ ধরনের কথার আঘাতে রুপালিকে আঘাত করেন ।
রূপালী গান শুনতে পছন্দ করেন ।এক সময় ভালো গাইতেও পারতেন ।কবিতা গল্পের বই পড়া তার শখ ছিল। কিন্তু মিস্টার জলিল সাহেবের মানসিকতার কাছে এসব যেন নিছক সময় নষ্ট।
সবকিছুই করো কোন মানা নেই তবে আমাকে কিছু বলো না ।এই টাইপের দায় সারা মানুষ জলিল সাহেব।
আশেপাশের ভাবিদের যখন দেখে কত রকম রান্না করে ভাইদের খাওয়াচ্ছেন। অফিসে লাঞ্চ পাঠাচ্ছেন। মনে মনে দুঃখই পান ।আমার কপাল,আমার কপালে ওই পোড়া ভাজি, আধা সিদ্ধ টেলটেলে ঝোলের তরকারি এটাই জীবন।
আর এদিকে রূপালি খুব সচেতন মানুষ ।তার ইমেজ খারাপ হোক সে কোনভাবেই সেটা হতে দিতে চায় না ।তাই ঘরে বাইরে সচেতনতার সাথে কাজ করেন ।
মাঝে মাঝে দুঃখ পান আফসোস করেন। তার কলিগ লিপির কি ভাগ্য! বাসায় পার্মানেন্ট কাজের লোক আছে। ঘুম থেকে উঠে রেডি হয়ে চলে আসেন। হাতের নখ গুলো দেখলেই বোঝা যায় ।
আর আমার হাতে হলুদ লবনের দাগ লেগে থাকে। আমারই যত পোড়া কপাল।
জলিল সাহেব আর রূপালী বসার ঘরে বসে টিভি দেখছেন। রাত এগারোটা হবে। হঠাৎ চিৎকারের শব্দ। এদিক ওদিক তাকিয়ে দরজা খুলে বাইরে এসে দেখে ইমাম সাহেবও দরজা খুলে দাঁড়িয়ে আছেন। কি হয়েছে ভাই? এমন চিৎকার কেন ?
কোন বাসা থেকে আসছে এমন চিৎকারের শব্দ।
আর বইলেন না ভাই ।
কি বলবো। আমার পাশের ফ্ল্যাটে এই ঘটনা ।স্বামী অফিস চলে যাওয়ার পরে, বউ সারাদিন tiktok করে ঘরে কোন খেয়াল নেই ,রান্নাবান্না ঠিক মত করে না ।এসব নিয়ে অশান্তি চলছিল বহুদিন ধরেই। এখন শুনছি সংসারই আর টিকবে না। তাই দুই পরিবারের লোকজন এসেছে।
পরের দিন দুপুর ২ টা। জলিল সাহেব অফিসে।
লাঞ্চ করবেন এমন সময় রুপালীর ফোন ।
কিগো! কি করছো তুমি ?এমন আহ্লাদে কথা শুনে জলিল সাহেব চমকে গেলেন। কি হলো রুপালীর।
আসোনা আজ একসাথে লাঞ্চ করি । জলিল সাহেব কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।আমার অফিস উত্তরা আর তোমার মতিঝিল ।কি করে?
আমি বনানী আসছি লিপির সাথে। ওর খুব মন খারাপ ।ওর হাজবেন্ড কোন মেয়ের সাথে কথা বলে সেটা লিপি ধরে ফেলেছে ।খুব কাদঁছিল ওকে বাসায় এগিয়ে দিয়ে এলাম। তাই ভাবলাম আজ একসাথে ফিরি।
ঠিক আছে তুমি ওখানেই অপেক্ষা করো ।আমি আরলি লিভ নিয়ে এক্ষুনি আসছি।
দুজনেই গাড়িতে চুপচাপ বসে আছে আর ভাবছে আমার এরকম কাঠ খোঁট্টা, বকবক করা হাজব্যান্ডই ভালো। জলিল সাহেব ভাবছেন, আমার পোড়া ভাজা আর আধো সিদ্ধ তরকারিই ভালো লাগে।
অজানা আনন্দে আজ দুজন বাসায় ফিরছেন।
“নির্ভেজাল জিনিস একটু স্বাদ কমই হয় তবে এর তৃপ্তি ভেজালের থেকে হাজারগুন বেশি।”
Leave a Reply