আজকে দোকান খানা একটু দেরি করেই বন্ধ করেছে মানিক মিয়া। হাতে থাকা টর্চ লাইট জালিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা হতে নিলে?পেছন থেকে কালাম ডেকে ওঠে।
,কি বেপারী, বাড়ি যাও নাকি?
,হ যায়বা নাকি?
,হ চল! রাত ত কম হয়লো না। পৌনে এগারটা বাজে। আজকে বউ ইচ্ছা মত বকব।
কালাম মিয়ার কথা হেসে ওঠল মানিক মিয়া। তারপর দুজন মিলে রওনা হলো বাড়ির উদ্দেশ্য।
কথা বলতে বলতে বড় রাস্তায় এসে পড়ল তারা। হঠাৎ কালাম মিয়া বলল,
,বেপারী, তুমি সামনে আগাও। আমি একটু নদীর পাড়ের ঐদিক থেকে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে আসি। বেশ জোড়েই বেগ দিয়েছে।
মানিক মিয়া হাতে থাকা টর্চ লাইট নিয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। নদীর পাড়ের ধারে বড় রাস্তা। শা,শা করে বাতাস বয়ছে। কাল মানিক মিয়ার বড় মেয়ে সফুরা আসবে তার জামাই নিয়ে। কাল তার অনেক কাজ। সকালেই ওঠে বাজারে যেতে হবে গরুর মাংসের জন্য। কাল সারাদিন দোকান বন্ধ থাকবে। তাই আজ দেরি করে বন্ধ করেছে। কাল কি কি করবে তা ভাবতে, ভাবতে মাঝ রাস্তা দিয়ে হাঁটছে মানিক মিয়া। রাস্তা টা শুনশান নিশাচর পাখিরা ডেকে ওঠছে। এখন এখান দিয়ে কেউ যাবে না। রাত একটা বাজলেই তাস খেলে বাড়ি ফিরবে কিছু লোক। আর নয়তো সবসময় নিরবই থাকে। হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ কিছু একটার সাথে ধাক্কা লেগে হোঁচট খেল মানিক মিয়া। হাতে থাকা টর্চ লাইট দিয়ে কিসের সাথে হোঁচট খেয়েছে তা দেখার জন্য লাইট নিচু করে ধরতেই চমকে ওঠল তিনি। রাস্তার মাঝখানে দু ভাগ হয়ে পড়ে আছে,তার মেয়ে সফুরা। চারিদিকে গলগল করে র ক্ত বয়ে যাচ্ছে। মুখের একপাশ থেঁতলে গেছে। চোখ দুটো দিয়ে তাকিয়ে আছে মানিক মিয়ার দিকে। মানিক মিয়া চমকে ওঠল। থরথর করে কাঁপতে লাগলো তার শরীর। এই শীতের মধ্যে তিনি টের পেল ওনি ঘামছে। মানিক মিয়া দু কদম পিছিয়ে গল।হঠাৎই লা শ টা শূন্য ভেসে ওঠল। আর্ত নাদ করে বলে ওঠল,
,আমাকে বাঁচাও বাবা। আমাকে বাঁচাও। ঐ ট্রাকটা আমাকে পিশে দিয়ে গেল বাবা। আমাকে বাঁচাও।
এটুকু শুনেই জ্ঞান হারালো মানিক মিয়া।
প্রকৃকিক কাজকর্ম শেষ করেই বাড়ির পথ ধরলো কালাম মিয়া। মানিক মিয়ার কাছে এসে থাকে এভাবে পড়ে থাকতে দেখে অবাক হলো কালাম মিয়া। শরীর ঝাঁকিয়ে দুবার ডাকলো। উত্তর না পেয়ে বুঝল। জ্ঞান হারিয়েছে। মানিক মিয়ার বাড়ি বেশি দূরে নয়। তাই মানিক মিয়াকে কাঁধে তুলে নিল কালাম।
সকা ল হতে জ্বর এসে ঝেকে ধরল মানিক মিয়াকে।
মানিক মিয়ার বউ তার মাথার মধ্যে পানি ঢালছে । মেয়েকে ফোন দিয়ে জানানো হয়েছে বাবার অসুস্থতার কথা। জামাই নিয়ে সফুরা রওনা হয়ে গেছে।
বাহির থেকে রমিজের ছোট ছেলের চিৎকার ভেসে আসছে। মানিক মিয়ার বউ বাহিরে গেল কি হয়েছে দেখার জন্য।
ছেলেটা হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,
,ও জেঠি তাড়াতাড়ি চল।বড় রাস্তায় সফুরা আপার লা শ পড়ে আছে। তার উপর দিয়ে ট্রাক গেছে। শরীর দু ভাগ হয়ে গেছে।
ছেলেটার কথা শেষ হতেই। বড় রাস্তার দিকে ছুট লাগায় মানিক মিয়া এবং তার স্ত্রী।
মানিক মিয়া তাকিয়ে দেখে, কাল রাতে যেই ঘটনাটা দেখেছিল। তার যেন পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। সফুরা তার চোখ দুটো বের করে তাকিয়ে আছে বাবার দিকে।
Leave a Reply