1. banglamailnews72@gmail.com : banglamailnews : Zakir Khan
শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:০৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
# আহারে # খোরশেদ ।। সমাজে নতুন অপরাধী চক্র তৈরী হচ্ছে কিন্তু ভবিষ‍্যতে এদের রক্ষা করবে কে??।। – – – আশিক ফারুকী “অতঃপর” __ সালমা আক্তার বীরাঙ্গনা নই আমি মুক্তিযোদ্ধা – – – শাহনাজ পারভীন মিতা জলপাই রঙের স্বাধীনতা – – – আরিফুল হাসান প্লাস্টিকের উৎপাদন বন্ধ করতে হবে – উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ান হাসান – – – স্বাধীন আজম –   টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধি, স্বপ্নমায়া – – – – মাহজাবীন আহমেদ বুড়ি মরে গেল – – – মোঃ আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমাম প্রযুক্তির দুনিয়ায় শিক্ষার্থীদের এখন উন্নত জীবন গড়ার দারুণ সময়:– ————–টিপু সুলতান লেখক ও সমাজ চিন্তক ডায়াবেটিস নিয়ে সচেতনতাই পারে ডায়াবেটিস রোগ নির্নয় ও রোগের চিকিৎসা এবং সঠিক ব্যবস্থাপনা – – – ডা: সাদিয়া আফরিন 

# ওহে_প্রিয় # জান্নাতুল_নাঈমা # পর্ব_১ এবং পর্ব_২

  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২৪ মে, ২০২১
  • ৪০৩ বার
-‘আমি আমার শশুর বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছি। আমার স্বামীকে হসপিটালাইজেশন করা হয়েছে। আজ রাতেই তাঁর অপারেশন। অপারেশন শেষে জ্ঞান ফিরতেও বেশ অনেকটা সময় লাগবে৷ এতো বড় সুযোগ আমি আর কখনোই পাবো না। তাই এই সুযোগ টা হাতছাড়া করতে চাইনা৷ খুব ভোরে এ শহড় ছেড়েও চলে যাবো। ঝড়,বৃষ্টি শুরু না হলে এতোক্ষণে আমি শহড়ের বাইরেও চলে যেতাম৷ প্লিজ ম্যাম আজকের রাতটা আপনার বাসায় জায়গা দিন আমায়৷ আপনি ছাড়া কেউ আমায় বাঁচাতে পারবেনা। কেউ পারবেনা আমাকে এই ভয়ংকর পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করতে’।
ভার্সিটির প্রফেসর সালমা রহমান সাবার পা জরিয়ে কাঁদতে কাঁদতে কথা গুলো বললো আহি। ওয়াইফ অফ হ্যাভেন তালুকদার। এলাকার সাবেক সংসদ সদস্য হুমায়ুন তালুকদার এর একমাএ পুএবধূ মিসেস আহিয়ানা আহি। সালমা রহমান সাবা ভ্রু কুঁচকে সন্দেহী চোখে তাকালো আহির দিকে। আহি অসম্ভব সুন্দরী একটা মেয়ে। ভার্সিটির সবচেয়ে সুন্দরী মেয়েদের তালিকা করা হলে প্রথম সাড়িতেই হবে তাঁর স্থান৷ বলিউডের নব্বই দশকের হিরোইন দিব্যা ভারতীর সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা যায় আহিকে। অমায়িক এই সুন্দরীর হাজব্যান্ড অবশ্যই বেশ সুদর্শন হওয়া উচিত ছিলো। কিন্তু নাহ তা হয়নি।
এ পৃথিবীটা বড়ই অদ্ভুত সেই সাথে অদ্ভুত এ পৃথিবীর নিয়মগুলো। তা না হলে কি আহির মতো চাঁদ সুন্দরীর কপালে জোটে কৃষ্ণবর্নের হ্যাভেন তালুকদারের মতো স্বামী?
ভার্সিটিতে প্রায় অনেক স্টুডেন্টকেই হ্যাভেন আর আহিকে নিয়ে কানাঘুষা করতে শুনা যায়। কেউ বলে, আহিকে হ্যাভেন ক্ষমতার জোরে তুলে এনে বিয়ে করেছে। পাওয়ার আছে বলেই না কুৎসিত দেখতে হলেও বউ পেয়েছে চাঁদ সুন্দরী।
আবার কেউ কেউ বলে, আহির পরিবার অত্যন্ত দারিদ্র্য। যার ফলে অর্থ,সম্পদ আর ক্ষমতার লোভেই আহির বাবা,মা হ্যাভেন তালুকদারের হাতে মেয়েকে তুলে দিয়েছেন। কেউ বলে, হ্যাভেন আর আহির দাম্পত্য জীবন খুবই সুখের। কেউ বলে, তাঁদের দাম্পত্য জীবন খুবই দুঃখের। কেউ বলে তাঁরা একে অপরকে পাগলের মতো ভালোবাসে। কেউ বলে, হ্যাভেন শুধু সৌন্দর্যের পূজারী। আর আহি উপায় না থাকায় এক বুক যন্ত্রণা নিয়ে, বিতৃষ্ণা নিয়ে প্রতিনিয়ত অভিনয় করে যাচ্ছে। কিন্তু ভিতরের সত্যি টা হয়তো আহি আর হ্যাভেনই সঠিকভাবে বলতে পারবে। এই দম্পতি যে ভীষণ রহস্যে ঘেরা তা বুঝতে আর বাকি নেই সাবার।
এক স্টুডেন্টের মুখে শুনেছিলো, হ্যাভেন তালুকদারের উপরও যেমন কালো ভিতরও তেমনই কালো। তাঁর জীবনে আলোর ছিটেফোঁটাও নেই। কিন্তু কোথায় এমন বউ যার ঘরে আছে তাঁর জীবনে অন্ধকার থাকার প্রশ্ন আসে কোথায় থেকে? নাকি আহি তাঁকে মন থেকে স্বামী হিসেবে মেনে নিতে পারেনি? এজন্যই কি স্বামীকে মৃত্যুশয্যায় রেখে বাসা থেকে পালিয়ে এসেছে সে?
আহির দিকে এক ধ্যানে চেয়ে আছে সাবা। মেয়েটার ভয়েস কখনো এমন স্পষ্ট ভাবে শুনেনি সে। ভার্সিটিতে সবসময় মাথা নিচু করে স্বামীর হাত ধরে যায়। ক্লাসে চুপ করে বসে আবার চুপ করে মাথা নিচু করেই বেরিয়ে যায়। তাদের স্বামী-স্ত্রীর সামনে পিছনে সবসময় কমপক্ষে সাত,আটজন করে ছেলেরা থাকে। মেয়েটাকে কখনো কোন বান্ধবী বা বন্ধুর সাথে মিশতে দেখেনি। প্রয়োজনও কি পড়ে না? পড়লেই বা কি? শহড়ের নামকরা নেতার পুএবধূ, নামকরা নেতার বউ। তাঁদের কেই সাধারণ মানুষের প্রয়োজন পড়ে সচরাচর। সাধারণ মানুষ কে তাঁরা বড়সড় স্বার্থ ছাড়া স্মরণ করে না।
.
এ বছর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন হ্যাভেন তালুকদার। তারুণ্যের বিজয়ে দলীয় কার্যালয়ে নতুন এমপিকে স্বাগত জানাতে চলছিলো ফুলের শুভেচ্ছা ও মিষ্টি বিতরণের উৎসব। উৎসব পালন করে রাত আটটার দিকে নিজ বাড়ি ফেরে হ্যাভেন।
নিয়ম করে রোজ বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় স্ত্রীর কপালে ভালোবাসার গভীর চুম্বন একে দেয় হ্যাভেন। এবং বাড়িতে প্রবেশ করার সময়ও সদর দরজায় দাঁড়িয়ে সর্বপ্রথম স্ত্রীর কপালে চুম্বন একে ভেতরে প্রবেশ করে। আজো তাঁর ব্যাতিক্রম করে নি। কিন্তু সে সময়ই পিছন থেকে পরপর তিনটে গুলি এসে লাগে তাঁর পিঠে। আহত অবস্থায়ই স্ত্রী কে জরিয়ে ধরে হ্যাভেন। কঠিন কন্ঠে বলে,
-‘আমি যদি আজ এ মূহুর্তে মারা যাই তাহলে তোমার পড়াশোনা আজ এ মূহুর্ত থেকেই বন্ধ। এ বাড়ির চৌকাঠে পা দেওয়ার সাহসও কোনদিন করবে না তুমি। তোমার দেহ,মন শুধুই আমার। আমার জিনিসে আমি কাউকে ভাগ বসাতে দেইনি মৃত্যুর পরও দেবো না। তুমি শুধু এক আমারই’।
আহি হ্যাভেনকে দুহাতে ধরে কেঁদে ফেললো। হ্যাভেন ঢলে পড়লো তাঁর বুকে। হ্যাভেনের মা, বোন আর ভাইরা এগিয়ে আসতে নিতেই হাত ওঠিয়ে বললো,
-‘উহুম কেউ এগোবে না এটা যদি আমার শেষ সময় হয়,যদি এ সময়ের নিঃশ্বাসটুকুই হয় আমার শেষ নিঃশ্বাস তো সেটুকু সময়, সেটুকু শ্বাস আমি আমার প্রিয়তমার বক্ষঃস্থলে মাথা রেখে নিতে চাই। প্রিয়তমার বক্ষঃস্থলে কান পেতে শুনতে চাই তাঁর বিধ্বস্ত হৃদয়ে আমার নামটি। অনুভব করতে চাই আমার প্রিয়তমার আমার প্রতি সকল বিতৃষ্ণাকে, সকল ঘৃনাকে, সকল ভয় কে’। বলতে বলতে নেতিয়ে পড়লো আহির বুকে।
হ্যাভেনের মা রুবিনা তালুকদার মেঝেতে বসেই হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করে। হেভেনের দুই ভাইই বাড়ির বাইরে শত্রুর অনুসন্ধান করতে গেছে। দ্রুত এম্বুলেন্সও এসে পড়ে। তখনো জ্ঞান হারায়নি হ্যাভেন। অমন আহত অবস্থায়ও স্ত্রীকে দুহাতে জরিয়ে ভালোবাসার স্পর্শ দিতে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে সে। সে মূহুর্তেও আহি অনুভব করে লোকটা মেন্টালি সিক। বাড়ির সকলে মাথা নিচু করে ছিলো, হ্যাভেন যখন দূর্বল মাথাটা উচিয়ে কাঁপা হাতে আহির দুগালে স্পর্শ করে তাঁর ওষ্ঠদ্বয়ে নিজের ওষ্ঠদয় মিলিত করতে উদ্যত হয় আহি তখন নিচু স্বরে বলে,-‘আপনি ওনাদের অনুমতি দিন আপনাকে নিয়ে যেতে। আপনার চিকিৎসা প্রয়োজন, প্লিজ পাগলামি করবেন না’।
হ্যাভেন তখন ক্ষিপ্ত হয়ে আঁকড়ে ধরে তাঁর ওষ্ঠদয়। উপস্থিত সকলেই মাথা নিচু করেই ছিলো। লজ্জায়,ভয়ে কেউ চোখ তুলে তাকানোর সাহস করেনি। একসময় হ্যাভেনের অনুমতি পেয়েই তাকে এম্বুল্যান্স করে নিয়ে যাওয়া হয় হসপিটালে।
বাড়ির সকলের মধ্যে সৃষ্টি হয় আতঙ্ক, গুরুতর আহত অবস্থায়ই হ্যাভেনকে ঢাকা মেডিকেল হসপিটালে ভর্তি করানো হয়। বাংলাদেশে সংসদ সদস্যদের সাথে সাধারণত: পুলিশ সদস্য দেহরক্ষী হিসেবে থাকে। তবে পুলিশ সুপার আশরাফুল ইসলাম জানিয়েছেন, বাসায় হ্যাভেন তালুকদার দেহরক্ষী রাখতেন না। বাসার বাইরে গেলেই শুধুমাত্র দেহরক্ষী নিয়ে যাবে বলেছিলেন তিনি।
সকলেই হ্যাভেনকে নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে। তালুকদার বাড়িতে রুবিনা, আহি আর কাজের কটা মেয়ে ছাড়া কেউ ছিলোনা৷ তাঁদের বাড়ির বউদের বাইরে যাওয়ার নিয়ম নেই। স্পেশালি আহির তো আরোই না। মৃত্যুশয্যায় থেকেও হ্যাভেন কড়াভাবে বলে গেছে আহি যেনো রুম ছেড়ে নিচেও না আসে। সকলেই যখন আতঙ্কের মধ্যে আহি তখন মুক্তির পথে পা বাড়ায়। হ্যাঁ মুক্তি, মুক্তি চায় সে। হ্যাভেন নামক আতঙ্ক থেকে মুক্তি পেতেই বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। পুরো বাড়িতে পুলিশ গার্ডে থাকবে জানামাএই তাঁরা আসার আগেই পালায় আহি।
ঝড়,বৃষ্টির রাতে বের হয়ে কোথায় যাবে বুঝে ওঠতে পারেনা৷ কিন্তু তাঁকে তো পালাতেই হবে। যতো যাইহোক না কেনো মৃত্যু কে বেছে নেবে তবুও আর তালুকদার বাড়ি ফিরবে না সে। এমন একটা বাড়ি তালুকদার বাড়ি যেখানে না শান্তিতে বাঁচা যায় আর না শান্তিতে মরা যায়। একদিন হ্যাভেনই আহিকে সাবা ম্যামের বাসা চিনিয়েছিলো। আর আজ এই বিপদে সেই চেনাটাই কাজে লেগে গেলো। কলিং বেল বাজানোর পর দরজা খুলতেই সাবাকে দেখে আহি আতঙ্কিত গলায় আশ্রয় চায়।
.
যেখানে এমপির বাড়ির প্রতিটি সদস্য হসপিটাল রয়েছে৷ এলাকায় প্রায় ধ্বংস লীলা চলছে। সেখানে এমপির স্ত্রী আহিয়ানা আহি বাড়ি থেকে পালিয়েছে শহড় ছেড়ে চলে যাবে বলে? এতো এতো ভাবনায় মাথা ধরে গেলো সাবার। এদের নিয়ে শুরু থেকেই কৌতুহল ছিলো তাঁর আজ যেনো তা দ্বিগুণ মাএায় বেড়ে গেলো। ধীরস্থির ভাবে আহিকে নিয়ে সোফায় বসালো সাবা। এক গ্লাস পানি ভরে আহির সামনে ধরতেই আহি গ্লাস নিয়ে ঢকঢক করে পানি খেয়ে নিলো।
মেয়েটার চোখে মুখে মারাত্মক ভয় দেখতে পাচ্ছে সাবা৷ ফুলের মতো মেয়েটার জীবন কি ভীষণ জটিলতায় ঘেরা? সাবা আর চুপ থাকতে পারলো না প্রশ্ন করলো,-‘স্বামীকে মৃত্যুশয্যায় রেখে এভাবে পালাচ্ছো কেনো আহি’?
হাউমাউ করে কেঁদে ওঠলো আহি। ভয়ে কাঁপছে মেয়েটা। কাঁপা গলায়ই বললো,-‘কাউকে বলবেন না প্লিজ ম্যাম। আপনি আমাকে সাহায্য করুন আপনি ছাড়া কেউ নেই আমাকে সাহায্য করার’।
-‘কিন্তু তোমার স্বামীর হাত কতোটা লম্বা তা আশা করি তুমি জানো? যদি সে তোমায় খুঁজে বের করে কি হবে’?
-‘প্রাণে মারবেনা ম্যাম। যদি তাই হতো আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহারটাই আমাকে দেওয়া হতো’।বলেই অঝড়ে কাঁদতে লাগলো।
সাবার মনে হাজারো প্রশ্ন ওকি বুকি করছে। অতিরিক্ত উত্তেজনায় তাঁরও গলা শুকিয়ে গেলো। নিজেকে কিছুটা দমিয়ে সে বললো,
-‘তুমি কি জানো বিয়ের পর হাজব্যান্ডের থেকে পারমিশন না নিয়ে এভাবে হাজব্যান্ডের বাসা থেকে বের হওয়া উচিত নয়। আর তুমি যা বলছো এটা ঘোর অন্যায়, পাপ’।
-‘নাহ অন্যায় নয়, পাপ নয় বরং দিনের পর দিন আমার সাথেই অন্যায় হচ্ছে, পাপ হচ্ছে’।
-‘কি করে বিশ্বাস করবো? তোমার শশুড় বাড়ির প্রতিটি ব্যাক্তিই খুব সম্মানীয় এবং আদর্শবান। দেশ এবং জনগণের পরম বন্ধু তাঁরা তাঁদের সাথে তুমিও তো অন্যায় করতে পারো’?
-‘আমি অন্যায় করছিনা। আমি বাঁচতে চাই, আমি প্রাণখুলে নিঃশ্বাস নিতে চাই, আমি শান্তিতে ঘুমাতে চাই। দম বন্ধ করা জীবন কাটাতে আর ভালো লাগেনা আমার ম্যাম, আর ভালো লাগেনা ‘।
-‘তুমি কি কোনভাবে জোর জুলুমের শিকার আহি। যদি তাই হয় তাহলে সবটা খুলে বলো আমায়। আমি তোমায় সাহায্য করবো’।
সাবার দিকে তাকালো আহি। বললো,-‘যেখানে নিজের বাবা,মা’ই এসব থেকে বাঁচাতে পারেনি সেখানে আপনি কিভাবে পারবেন ম্যাম’?
-‘সবটা বলো আমায় তোমাদের বিয়েটা কিভাবে হয়েছিলো সত্যি কি জোর করে নাকি তোমার বাবা,মা টাকার লোভে পড়ে বিয়ে দিয়েছেন তোমায়’?
-‘হ্যাঁ জোর করে, এই বিয়েতে আমার মতই ছিলোনা। জোর করে তুলে এনে বিয়ে করেছেন ওনি আমায়। গতো দেরবছরে যা যা ঘটেছে সবটাই জোর,জবরদস্তি করে। বৈধভাবে দিনের পর দিন ধর্ষিত হচ্ছি আমি। দিনের পর দিন রোবটের মতোন জীবন পার করে যাচ্ছি। আমি ক্লান্ত ম্যাম খুব ক্লান্ত আমি’।
-‘কিভাবে হলো দেখা তোমাদের? কি করে নজরে পড়লে ওর? বিয়ের বয়স বছরখানেক হওয়ার পরও কেনো মেনে নিতে পারছোনা? বউ করে যখন ঘরে তুলেছেই তাহলে কিসের এতো জোর জুলুম? নাকি তুমিই তাঁকে মেনে নিতে পারোনি স্বামী হিসেবে’?
-‘কি করে পারবো ম্যাম? আপনি হলে পারতেন? যদি আজ আমার জায়গায় আপনি থাকতেন পারতেন মেনে নিতে’?
সাবা চুপ হয়ে গেলো। মলিন চোখ, মুখে চেয়ে রইলো আহির বিধ্বস্ত মুখপানে। মলিন হাসলো আহিও। বলতে শুরু করলো তাঁর জীবনে শুরু হওয়া কালো অধ্যায়ের গল্পঃ
___________________________
২০১৮ সালের ১৪ই এপ্রিল ছিলো সেদিন। বান্ধবী দের সাথে মেলায় গিয়েছিলাম। ছোট বোনের জন্য পতুল কিনবো বলে কয়েকটা দোকানে ঘুরছিলাম। হঠাৎ বান্ধবী মিনা বললো,-‘দেখ দেখ ছেলেটা কি লম্বা পুরাই রিত্তিক রওশান সামনে পিছে এতো ছেলে কেনোরে এ কোন নেতা নাকি’?
ওর বলা কথাটা শুনে ওর ইশারা করা হাতকে অনুসরণ করে তাকাতেই দেখতে পেলাম মাঠের মাঝখানে গোল করে অনেক ছেলেরা দাঁড়িয়ে আছে। তাঁদের মাঝখানে রয়েছে কৃষ্ণবর্ণের একজন অপরিচিত পুরুষ।
লম্বাচওড়া পুরুষটির গায়ের রং কালো হলেও চেহারায় বিশেষ মাধুর্য রয়েছে। ভাবমূর্তি দেখে বোঝাই যাচ্ছিলো বড়সড় কোন নেতা হবে। আমি মুচকি হেসে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে আবারো পুতুল দেখায় মনোযোগ দিলাম। কিন্তু আমার বান্ধবী রা ছিলো প্রচন্ড দুষ্টু প্রকৃতির। ওরা সেই পুরুষ টিকে নিয়েই গবেষণা করতে থাকলো। মিনা তাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ আর আঁখি নাক ছিটকালো বললো,
-‘উমহ কি ঢং কালার কালা চোখে আবার কালা চশমা দিছে বিশ্রি দেখা যাইতাছে ব্যাটারে। নেতার খ্যাতা পুড়ি এমন কাইলারে ক্যাডায় নেতা মানে হুহ’।
ওদের কথা শুনে আমি বললাম,
-‘ইশ এভাবে বলিসনা কালো হলেও ওনার মধ্যে অন্যরকম একটা সৌন্দর্য রয়েছে। এভাবে নিন্দা করিস না। বলা তো যায় না ওনার মতো দেখতে বর যদি তোর কপালে জোটে’?
-‘ওবাবা কি ব্যাপার আহি? লোকটার জন্য দেখছি তোর হেব্বি দরদ। শেষমেশ এই কাইলা ভূতকেই তোর মনে ধরলো? ওকে জানু তোমার মনের কথা আমি দায়িত্ব নিয়ে ওনাকে জানিয়ে দিচ্ছি ‘ বলেই আঁখি দৌড়ে ছেলেগুলোর কাছে চলে গেলো। আমি আর মিনা তো ভয়ে শেষ। এই মেয়ে সবসময় কোন না কোন অঘটন ঘটিয়েই ছাড়ে। কোন ভয়ডর নেই এই মেয়ের মনে। কলেজে, পাড়ায় যেমন সাহস দেখায় সেদিনও মেলায় সাহস দেখিয়ে ফান করতে যায়। আর ফাঁসিয়ে দেয় আমাকে।
ভীরের ভিতর ঢুকে এক দমে বলে,
-‘ভাইয়া ভাইয়া আপনাকে দেখে আমার বান্ধবী হেব্বি ক্রাশ খাইছে বলছে আপনার মধ্যেও নাকি অন্যরকম একটা সৌন্দর্য আছে। আপনি কি’ বাকি কথা বলতে দেয়নি, মিনা ভীড় থেকে টেনে নিয়ে আসে আঁখি কে। আমিও চোখ রাঙিয়ে ওর হাত টেনে নিয়ে বকতে শুরু করি। আমরা তিনজনের কেউ আর পিছন দিক তাকাইনি। তাকালে হয়তো দেখতে পেতাম প্রায় দশ বারোজন ছেলে পিছু নিয়েছে আমাদের।
মিনা বলে-‘আরে আখি তোর মাথা খারাপ হয়েছে আমাদের আহি খাবে ঐ ছেলেকে দেখে ক্রাশ? আমি ক্রাশ খেয়েছি বলে আহিও খাবে নাকি। কোথায় আহি কোথায় ঐ ছেলে। আহির পাশে ওকে আদেও মানাবে? আহিকে ঐ ছেলের পাশে কেমন লাগবে জানিস বাঁদরের গলায় মুক্তোর মালা’ বলেই খিলখিল করে হাসতে লাগলো। আবারো বললো,’বুঝলি না তো মানে ঐ ছেলে বাঁদর আর আমাদের আহি মুক্তোর মালা ‘।
মিনার ঐ একটা কথাটাই আমার জীবনে কাল হয়ে দাঁড়ালো।
পিছন থেকে একটি পুরুষালী কন্ঠ ভেসে এলো,
-‘তাই নাকি তাহলে তো মুক্তোর মালা গলায় পড়তেই হয়’।
আমরা তিনজনই স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম৷ পিছন ঘুরে যেই দশ,বারো জন ছেলে দেখলাম অমনি তিনজনই তিনজনের হাত চেপে ধরে দিলাম দৌড়।কিন্তু বাড়ি ঢুকতেই আরেক দফা স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম। আমাদের ওঠানে সেই দশ,বারো জন পুরুষ চেয়ারে বসে আছে। একপাশে আট টা বাইক আমার সাথে তখন মিনা,বা আঁখি কেউ ছিলোনা৷ ভয়ে দুরুদুরু বুকে এগিয়ে গেলাম ঘরের দিকে। আমার বাবা, আর মায়ের করুন মুখের দিকে তাকাতেই ভয়ে শিউরে ওঠলাম। ছোট বোন দৌড়ে এসে জিগ্যেস করলো,
-‘আপু আমার পুতুল কোথায়’?
আমি কোন উত্তর না দিয়ে মায়ের কাছে গিয়ে কাঁপা গলায় প্রশ্ন করলাম,
-‘ আম্মু এরা এখানে কেনো? আমার নামে বিচার দিতে এসেছে’?
আম্মু তখন আমাকে জরিয়ে ধরে কেঁদে ফেললেন। আর জানালেন ওখানে যারা বসে আছে তাঁরা শহড়ের নামকরা নেতার চ্যালা,ফ্যালা। এবং একজন নামকরা নেতা হুমায়ুন তালুকদারের বড় ছেলে হ্যাভেন তালুকদার। তাঁরা এসেছে আমার জন্য বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে। আর পাএ হিসেবে হ্যাভেন তালুকদার কে গ্রহণ করে নিতে। আম্মুর কথা শুনে আমার বুক কেঁপে
ওঠলো। আমি উত্তেজিত হয়ে বলে ফেললাম,
-‘অসম্ভব ‘।
তখনি রুমে ঢুকলেন হ্যাভেন তালুকদার। মেলায় দেখা সেই কৃষ্ণবর্ণের অপরিচিত পুরুষটি। তাঁকে দেখেই আমি রেগে বললাম,
-‘এটা কি ধরনের অসভ্যতামো? কারো রুমে ঢুকতে হলে নক করে পারমিশন নিয়ে ঢুকতে হয় তা কি আপনি জানেন না ‘?
আম্মু তখন আমার হাত চেপে ধরলো। আতঙ্কিত হয়ে বললো,-‘ চুপ কর আহি চুপ কর। বাবা বসো তুমি কিছু মনে করো না মেয়ে আমার বুঝতে পারেনি ভুল করে ফেলেছে’।
আমি অবাক হয়ে তাকালাম মায়ের দিকে। হ্যাভেন তখন মুচকি হেসে বললো,
-‘ আই লাইক ইট শাশুড়ী মা। ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড আমি কি আমার হবু বউয়ের সাথে আলাদা কথা বলতে পারি? যদি মাইন্ড করেন তাহলে আই এম এক্সট্রিমলি সরি শাশুড়ী মা আপনি এবার আসতে পারেন ‘ বলেই আম্মুকে দরজার দিকে ইশারা করলো।
সে মূহুর্তেই আমি বুঝে গেলাম লোকটা অসভ্যের সর্বোচ্চ পর্যায়ে অবস্থান করছে, বেয়াদবের চরম সীমানায় পৌঁছে গেছে।
আমার বাবা, মা নিরীহ মানুষ। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার আমাদের। এলাকায় বড় বড় নেতা ঢুকেছে এতেই এলাকার মানুষের ভয়ের শেষ নেই। তাঁরা নিজ ঘরে চোরের মতো বসে আছে। কেউ এগিয়ে আসেনি আমাদের সাহায্য করতে। বাবা, মা, বোন ওঠানে মাথা নিচু করে বসে ছিলো। আর রুমের ভিতর ছিলাম আমি আর হ্যাভেন। আম্মু বের হওয়ার সাথে সাথেই দরজা লাগিয়ে দেয় হ্যাভেন। ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে যায়। আমার সেই ভয়ার্ত মুখ দেখে হোহো করে হেসে ওঠে হ্যাভেন কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,
-‘ আই লাইক ইট’।
গা ঘিনঘিন করে ওঠে আমার। দুহাতে নিজের কাপড় খামচে ধরি। হ্যাভেন অসভ্যের মতো আমার আশে,পাশে ঘুরতে থাকে। একসময় বিছানায় পায়ের ওপর পা তুলে বসে। আমি ঠায় দাঁড়িয়েই আছি। সে আমার দিকে বিশ্রি নজর বুলাতে থাকে আর বলে,
-‘অশুভ তিথি তে জন্ম আমার। আমার সান্নিধ্যে এলে সকল শুভ হয়ে যায় অশুভ। সকল সুন্দর হয়ে যায় অসুন্দর। সকল ভালো হয়ে যায় খারাপ। সব ঠিক হয়ে যায় বেঠিক। আমার উপস্থিতি সকলের জন্য হয়ে ওঠে শ্বাসরুদ্ধকর। আমার আমিকে না গ্রহণ করা যায়, না বর্জন করা যায়৷ সেই আমি কে স্বামীর স্থান দিতে হবে তোমায়। স্বামী মানে বোঝোতো তোমার আমার ধর্মে বলা আছে আল্লাহর পর যদি কাউকে সেজদা করা জায়েজ হতো তাহলে স্ত্রীকে বলা হতো নিজ স্বামীকে সেজদা করতে। তোমার সেই অমূল্য মানুষ টি হবো আমি। তোমার সারা অঙ্গের নামকরণ হবে আমার নামে। তোমার প্রতিটা নিঃশ্বাস সঞ্চালন করবে আমার নামে। তোমার ধ্যান হবে আমি তোমার জ্ঞান হবে আমি৷ তুমি পুরোটাই হবে আমিময়’।
চলবে..
✖কার্টেসী ছাড়া কপি নিষেধ ✖
চলে এলাম নতুন গল্প নিয়ে প্রথম পার্টে সকলের ভালো সাড়া পেলে নেক্সট পার্ট দ্রুত লিখবো।
.
আশ্চর্যের শেষ পযার্য়ে চলে যাই আমি। বিরক্তি তে চোখ,মুখ কুঁচকে ফেলি। ছোট বেলা থেকেই যে কেউ প্রথম দর্শনেই সুন্দরী বলে আখ্যায়িত করে। ক্লাস সিক্স থেকেই আমার জন্য বিয়ের প্রস্তাব আসতে শুরু করে। পড়াশোনায় ভালো বলে মা চাইতেন আমি পড়াশোনা করি। তাই বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এলে বাবা কিছু না বললেও মা সরাসরি না করে দিতেন।
মেট্রিক পাশ করার পর থেকে শুরু হয় অত্যাচার৷ সকাল-বিকাল বাড়িতে ঘটক আসা যাওয়া করতো। ছেলের মা,বাবা লোভ দেখাতো। ভরী ভরী স্বর্ণ দিয়ে সাজিয়ে নিবে, রাজরানী করে রাখবে। বিয়ের পর পড়াশোনাও করাবে। আমাদের পারিবারিক অবস্থার উন্নতি করে দেবে এই সেই নানা রকমের লোভ দেখাতো। আমার বাবা লোভে পড়লেও মা কখনো এসবে মন দিতো না৷ কারণ আমার মায়ের বড় বোনের শশুড় বাড়ির লোকও নাকি এমন অনেক ভালো মানুষী দেখিয়ে বাড়ির বউ করেছিলো। কিন্তু খালার সেখানে সুখ হয়নি। পড়াশোনাও করায়নি যার ফলে এখন অবদি শশুড় বাড়ির অত্যাচারে ভুগছে। আগে শশুড়-শাশুড়ী আর এখন ছেলে বউয়ের অত্যাচার সহ্য করছে। এসব দেখেই মা আমাকে আর ছোট বোনকে সব সময় বলতো আহি আমি তোদের উচ্চ শিক্ষিত করবো। আমি যদি মারা যাই তাহলে অনাকে তুই মানুষের মতো মানুষ করবি। তোরা দুবোন নিজের পায়ে দাঁড়াবি। কখনোই অন্যের ওপর ভরসা করবি না। কখনো অন্যের কাছে মাথা নত করে জীবন পার করবি না।
সেই মায়ের মেয়ে আমি সদ্য আঠারো তে পা দিয়েছি তখন৷ আমি বরাবরই প্রচন্ড সাহসী। পড়াশোনা করে শিক্ষিত হচ্ছি কোন অন্যায়ের কাছে মাথা নত করার জন্য নয়। তাছাড়া মানুষ বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে ভদ্রভাবে, সভ্যতা বজায় রেখে। অথচ ঐ মানুষ টা গুন্ডা,মস্তানদের মতো আচরণ করছে। কথার মাঝেই পাওয়ার দেখাচ্ছে। বিয়ে তো পুতুল খেলা নয়, বিয়ে মামাবাড়ির আবদারও নয়, এভাবে অসভ্যের মতো বিয়ের প্রস্তাব দিলে কোন মেয়ে রাজি হবে? যেখানে বিয়ের জন্য মানসিকভাবেও প্রস্তুত নই আমি। তাই ত্যাজি গলায় বললাম,
-‘ বিয়ে কোন ছেলেখেলা নয়। আপনি বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন এতে কোন ভুল নেই কিন্তু আপনার প্রস্তাবের ধরনটা খুবই বাজে। তাই আপনার প্রস্তাব গ্রহণ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয় ‘।
কথাটা বলা মাএই ওনি ভয়ংকর এক হাসি দিলেন। সেই হাসিতে বিরক্ত যতোটা না হয়েছিলাম তাঁর থেকেও ভয় পেয়েছিলাম দ্বিগুণ। কিন্তু সে ভয়টা ওনাকে বুঝতে না দিয়ে অপমানের সুরে বললাম,
-‘এবার আপনি আসতে পারেন’।
কথাটা বলে আমি যেই দরজা খুলতে যাবো অমনি ওনি আমার হাত টেনে ধরলেন। আমার মেজাজ গরম হয়ে গেলো। অচেনা একজন পুরুষ মানুষ এভাবে আমাকে স্পর্শ করবে আর আমি সেটা মেনে নেবো? পিছন ঘুরে ঠাশ করে এক থাপ্পড় লাগিয়ে দিলাম গালে। রাগান্বিত গলায় বললাম,
-‘ডোন্ট টাচ মি। নেতা হন আর যাই হন না কেনো আমি ভয় পাই না আপনাকে। মেয়েদের শরীরে বিনা পারমিশনে স্পর্শ করার শাস্তি এটাই। আপনি নেতা বলে অন্যান্য মেয়েরা খাতির যত্ন করলেও এই আহি সেটা করবে না’।
ওনি আমার হাতটা ছেড়ে দিলেন। ওনার চোখ,মুখ ভয়ংকর আকার ধারণ করলো। রক্তিম চোখে আমার দিকে তাকালেন ওনি। ওনার সেই চাহনীতে অন্তর আত্মা কেঁপে ওঠলো আমার। নিজেকে স্ট্রং রেখে শুকনো এক ঢোক গিলে যেই চলে যাবো তখনি ওনি হিংস্র গলায় বললো,
-‘ আই ডোন্ট লাইক ইট’ বলেই আমাকে খুব হিংস্র ভাবে শূন্যিতে তুলে ওনার কাঁধে তুলে নিয়ে ঘর থেকে বের হলো। প্রথমে আমি বুঝে ওঠতে পারছিলাম না ঠিক কি ঘটলো। যখন বুঝলাম তখন লজ্জায় মরে যেতে মন চাচ্ছিলো। চিল্লাতে শুরু করলাম। দুহাতে সমান তালে কিল,ঘুষি দিতে শুরু করলাম। কিন্তু এতে ওনি বিন্দু পরিমাণ রেসপন্সও করলেন না। সকলের সামনে নিয়ে গিয়ে গলা উঁচিয়ে বললেন,
-‘ আমার বউকে আমি নিয়ে গেলাম। তোরা আমার শশুড়, শাশুড়ী আর শালিকাকে যত্ন সহকারে আমার রাজ্যে নিয়ে যাবি ‘।
আমার বাবা ভয়ে দুহাত জোর করে কেঁদে ফেলে। বলে,
-‘ বাবা গো আমরা ছোটখাটো মানুষ। আমাদের কাছে জীবনের থেকেও সম্মানের মূল্য অনেক বেশী। এভাবে আমার মেয়েটাকে নিয়ে যেও না। তাহলে যে লোক সমাজে মুখ দেখাতে পারবো না’।
ওনি তখন বিশ্রি ভাবে হাসতে থাকে আর বলে,
-‘ আহ শশুর মশাই! মুখ দেখাতে না পারলে ঘরে শুয়ে-বসে আরাম করবেন। কি দরকার এমন চাঁদ মুখখানা সমাজকে দেখানোর? আমার শাশুড়ীর জিনিস অন্য কেউ কেনো দেখবে শশুর মশাই? ইটস ভেরী বেড ‘৷
আমার বাবা ওনার দু’পা আঁকড়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে। মা আঁচলে মুখ গুঁজে কাঁদছিলো তখন। ভয়ে ছোট বোনও কান্না শুরু করে। আমি ওনার থেকে ছুটার চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম কিন্তু পারছিলাম না৷ বাবার থেকে পা ছুটিয়ে ওনি আবারো বিশ্রিভাবে হাসতে শুরু করে আর বলে,
-‘ আই ডোন্ট লাইক ইট শশুড় মশাই। বয়স হয়েছে আপনার এতো উত্তেজিত হবেন না। লোকের কাছে মুখ দেখানোর প্রয়োজন যাতে না পড়ে সেই ব্যবস্থা আমি করে দিব৷ বাজারঘাট, সংসার কোন কিছু নিয়ে চিন্তা করতে হবে না৷ মেয়ে জামাই আছে তো এতো চাপ নিচ্ছেন কেনো? এতো চাপ নিবেন না। এ বয়সে এতো চাপ নিলে তো স্ট্রোক করে মরে যাবেন আর আমার শাশুড়ী মা হয়ে যাবে বিধবা। আমি কিন্তু বিধবা শাশুড়ী এলাও করবো না ‘ বলেই চোখ মেরে আমাকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়৷
পুরো এলাকার মানুষ দূর থেকে তামাশা দেখে। কেউ এগিয়ে আসে না আমাকে ঐ হিংস্র মানুষটার থেকে রক্ষা করতে৷ হাত, পা ছুঁড়াছুঁড়ি করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যাই আমি। বুঝে যাই বিশ্রিভাবে ফেঁসে গেছি আমি। না গায়ের জোর না ক্ষমতার জোর কোনটাই নেই আমার। এই লোকটার সাথে পারবো না আমি। আমাকে অন্যভাবে কিছু করতে হবে। আইনের সহায়তা নিতে হবে। এলাকার সবাই চোখ থাকতে অন্ধ মুখ থাকতে বোবা হয়ে রইলো। যার কেউ নেই তাঁর আল্লাহ আছে দেশের আইন এতোটাও দূর্বল নয় আইনের সহায়তা নিলে নিশ্চয়ই এই লোকটার কঠিন শাস্তি হবে।
_____________________________
সারারাত নজর বন্দি করে রাখা হয় আমাকে। সকাল হতেই হ্যাভেন তালুকদারের মা আসে আমার কাছে। আমার শাশুড়ী মা রুবিনা তালুকদার। দূর্বল চোখ, মুখে তাকাই ওনার দিকে লম্বাচওড়া, ধবধবে সাদা চামড়ার মহিলা তিনি। পড়নে জামদানী শাড়ি, গা ভর্তি স্বর্নের অলংকার। বাঙালিভাবে শাড়ি পড়ায়, অমন ভারী গহনা পড়ায় মনে হচ্ছিল বহুযুগ আগের সময়ের জমিদার গিন্নি। আমার কাছে এসে আমার চিবুকে হাত রেখে মিষ্টি করে হেসে বললেন,
-‘মাশাআল্লাহ ‘।
তাঁর গলা থেকে একটি হাড় খুলেও আমাকে পড়িয়ে দিলেন। বললেন,
-‘ আমি তোমার শাশুড়ী মা ‘।
তখনি আমি চিনতে পারি ওনি হ্যাভেনের মা। ওনাকে দেখে আমি কেমন যেনো ভরসা পেলাম। কান্নামিশ্রিত গলায় বলে ওঠলাম,
-‘ আন্টি আপনার ছেলে আমাকে জোর করে তুলে এনেছে। প্লিজ আপনি আমাকে বাঁচান ‘।
আমার কথা শুনে ওনার মুখটা ছোট হয়ে গেলো কেমন। আমাকে ইশারা করে চুপ করতে বললো। তারপর নিজের মতো হেসে হেসে কিছুক্ষণ কথা বলে চলে গেলেন৷ আমি বুঝলাম আমাকে বাঁচানোর মতো কেউ নেই এখানে। ঠিক সময় সকালের খাবার দেওয়া হলো আমাকে। কিন্তু আমি খাবার মুখে তোলা তো দূরের কথা ছুঁয়েও দেখলাম না। দুপুর গড়াতে না গড়াতেই একদল মেয়ে এসে শাড়ী, গয়না পড়িয়ে দিলো। আমার নিষেধ তাঁরা শুনলো না। আমি যে একজন মানুষ সেটাই বোধ হয় সকলে ভুলে গেলো। পুতুল মনে করে নিজেদের ইচ্ছে অনুযায়ী সাজিয়ে গুছিয়ে চলে গেলো তাঁরা।
.
ঘন্টাখানিক পর বর বেশে রুমে এলো হ্যাভেন। ওনাকে দেখে রাগে আমার শরীর কাঁপছিলো। কিন্তু আমি ওনাকে রাগ না দেখিয়ে অনুরোধের কন্ঠে বললাম,
-‘প্লিজ আমার এতো বড় সর্বনাশ করবেন না’।
-‘যার জীবনের পুরোটা জুরেই সর্বনাশের খেলা তাঁকে তুমি সর্বনাশ করতে নিষেধ করছো? আই লাইক ইট’।
আমি ডুঁকরে কেঁদে ওঠলাম। আমার কান্নার শব্দে ওনি বিরক্ত হয়ে টানা সুরে বললেন,
-‘ আই ডোন্ট লাইক ইট ‘।
.
কবুল বলার সময় যখন আমি কবুল বলছিলাম না তখন ওনি আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললেন,
-‘ আমার শশুড়-শাশুড়ী মা বোধ হয় বড্ড কষ্টে আছে ডিয়ার! উপস সাথে আবার পুচকে শালিকা ‘।
হুহু করে কেঁদে ওঠলাম আমি। সকলের সামনেই চিৎকার করে বললাম,
-‘ আমার মা বাবা কোথায়? কোথায় আমার বোন। কি করেছেন আপনি ওদের সাথে ‘?
আমার উঁচু গলা শুনে এক ভারী গম্ভীর পুরুষালি কন্ঠস্বর ভেসে এলো,
-‘ আহ রুবিনা নতুন বউ কে বলে দাও এ বাড়ির বউরা এমন গলা উঁচু করে কথা বলে না ‘।
কন্ঠস্বর টা ছিলো আমার শশুর হুমায়ুন তালুকদারের। তখনো আমি ও বাড়ির কাউকে দেখিনি এক আমার শাশুড়ী আর হ্যাভেন ছাড়া। আমার শশুরের কথা শুনে আমার শাশুড়ী মা আমার গা ঘেষে বসলেন। মিনতির সুরে বললেন,
-‘ বউ মা কবুল বলো ‘।
-‘ আমি আমার বাবা,মায়ের কাছে যাবো ‘।
হ্যাভেন তখন আবারো ফিসফিস করে বললো,
-‘ তিন কবুল না বললে এ জীবনে আর বাবা,মা, বোনের মুখ দেখা হবে না ‘।
-‘ আমি আপনাকে পুলিশে দেবো। দেশে আইন-কানুন আছে এভাবে আপনি আমাদের মতো অসহায়দের ওপর জোর জবরদস্তি করতে পারেন না। একটা সুযোগ জাষ্ট একটা সুযোগ পাই ছাড়বোনা আমি আপনাকে’।
-‘ চোখ তুলে একবার আশেপাশে চেয়ে তো দেখো পুলিশ কাকুরাও উপস্থিত রয়েছে এখানে’।
আমি চমকে আশেপাশে তাকাতেই দেখি পুরো ড্রয়িং রুম জুরে গিজগিজে মানুষ। এতো মানুষের ভীড়ে দুজন পুলিশকেও দেখতে পেলাম। যারা ড্রিংক করছে একপাশে দাঁড়িয়ে। কাল থেকে না খেয়ে ছিলাম সারাদিন মুখে একটা দানাও তুলিনি। তারওপর এভাবে মানসিক টর্চার করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে শরীর ছেড়ে দিলাম আমি। হ্যাভেন নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো আমায়। জ্ঞান হারিয়েছি কিনা দেখতেই আমার মুখের দিকে ঝুঁকে এলো। আমার চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝড়ছে। দূর্বলতায় নেতিয়ে পড়েছিলাম কিন্তু জ্ঞান হারাইনি। তা দেখে বাঁকা হেসে কাজি সাহেবকে ইশারা করলো হ্যাভেন। আবারো চারদিক থেকে ধ্বনি উচ্চারিত হলো, -‘বলো মা কবুল’।
.
অঢেল অনীহা নিয়ে হ্যাভেন তালুকদারের নামে তিন কবুল বলি আমি। ঐ তিন কবুল আমার কাছে মৃত্যুদন্ড থেকেও কঠিন ছিলো। আর হ্যাভেনের কাছে ছিলো আমাকে সম্পূর্ণ ভাবে তাঁর আয়ত্তে নেওয়ার মূলমন্ত্র।
কবুল বলার পর পরই মা, বাবা, বোনকে নিয়ে আসা হয়। তিনজনের মুখে দুঃখের লেশমাত্র নেই। কিন্তু ওদের দেখে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠি আমি। আমার মা আমার পাশে এসে বসে। হ্যাভেন ওঠে যায় আমার পাশ থেকে। মা আমার হাত চেপে ধরে বলে,
-‘আহি মা যা হয়েছে, হয়েছে সবটা মেনে নে তুই৷ দেখবি খুব সুখী হবি। এ বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষই ভীষণ ভালোরে মা ‘।
আমি ছলছল চোখে তাকাই মায়ের মুখের দিকে। ভাঙা আওয়াজে বলি,
-‘ মেনে নেওয়ার মতো কিছু ঘটেছে আম্মু? এমন বিকৃত মস্তিষ্কের একটা মানুষ কে কি করে স্বামী হিসেবে মেনে নেবো আমি। এ বাড়ির মানুষ যদি ভালোই হয় এমন অন্যায়কে কি করে মেনে নিচ্ছে তাঁরা ‘?
অসহায় মুখে তাকায় মা কিছু বলতে নিবে তখনি একটি মেয়ে এসে আমাকে চেপে ধরে। বলে,
-‘ ভাবি ও ভাবি আমার সুন্দরী ভাবি এদিকে তাকাও দেখো আমি তোমার একমাএ ননদিনী হিয়া ‘।
হ্যাভেনের ছোট বোন হিয়া এসে আমার সাথে পরিচিত হয়। একে একে ও বাড়ির সকলের সাথেই পরিচয় করানো হয় আমাকে। হ্যাভেনের দুটো কাজিন নাম হ্যারি আর হিরা। সম্পর্কে আমার দেবর তাঁরা। শশুর শাশুড়ী, দেবর,ননদ,চাচা শশুর সকলের সাথেই পরিচয় হয়। আমার চাচি শাশুড়ী নাকি অনেক বছর হলো পরোলোকগমন করেছেন৷ সকলের সাথে পরিচয় পর্ব শেষে হিয়া আমাকে হ্যাভেনের রুমে নিয়ে যায়। রুমে ঢুকেই গা ঘিনঘিন করে ওঠে আমার। পুরো রুম ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। বিছানায় গোলাপের পাপড়ি দিয়ে ইংলিশে লিখা ছিলো – এংরি বার্ড হ্যাভেন ম্যারিড উইথ সুইট বার্ড।
হিয়া আমাকে কাবার্ড দেখিয়ে বললো,
-‘ওখানে তোমার সব প্রয়োজনীয় জিনিস রাখা হয়েছে যাও যা লাগে নিয়ে বাথরুম গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও নয়তো আমার দাদানের পেট খারাপ হয়ে যাবে’ বলেই মুচকি হেসে বেরিয়ে গেলো।
আমার কান দিয়ে গরম ধোঁয়া বের হচ্ছিল তখন। শরীরে কাটা দিচ্ছিলো কেমন। যে বিয়েটাই আমি মন থেকে গ্রহণ করিনি যে মানুষ টাকেই স্বামী হিসেবে গ্রহণ করিনি তাঁর সাথে কি করে ভাবতেই গা শিউরে ওঠলো। কিন্তু লোকটা যে পরিমাণের অসভ্য,ইতর আমি কি এই জঘন্য ইতরের থেকে রেহাই পাবো?
.
ফ্রেশ হয়ে বাথরুম থেকে বের হতেই দেখি হ্যাভেন বিছানায় শুয়ে আছে হাঁটুর ওপর এক পা রাখা। গুনগুন করে গান গাইছে পড়নে সাদা টিশার্ট কালো ট্রাউজার।
আমি কখনো বাহ্যিক সৌন্দর্য কে গুরুত্ব দেইনি। কিন্তু সেদিন সে মূহুর্তে মনে হলো ঐ লোকটার মতো কুৎসিত দেখতে এ দুনিয়ায় আর একটা মানবও নেই। সত্যি বলতে ওর স্বভাব, আচরণে তিক্ত হয়ে এমন ধারনা আপনাআপনিই চলে আসে আমার মনে। আমাকে দেখেই ওনি চট করে ওঠে বসে। বিশ্রিভাবে চেয়ে বিশ্রি একটা হাসি দিয়ে আমার কাছে এগিয়ে আসে। আমি দু পা পিছিয়ে যাই। তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলি,
-‘ একদম কাছে আসার চেষ্টা করবেন না। কোন মেয়ে কে জোর করে বিয়ে করে রেপ করাকে পুরুষত্ব বলে না মি.হ্যাভেন তালুকদার ‘।
-‘ আমার নিয়মে তো এটা লিখা নেই সুন্দরী। বরং লিখা আছে এতো সুন্দরী বউকে বিয়ে করে রেপ না করলে বউ ভাববে আমি কা পুরুষ কিচ্ছু পারিনা আমি ‘।
বলেই বিশ্রি ভাবে আমাকে স্পর্শ করতে আসে। আমি পিছাতে পিছাতে একদম দেয়ালের সাথে মিশে যাওয়ার উপক্রম। সামনের এই জঘন্য মানুষ জঘন্য স্পর্শ থেকে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করি। কিন্তু পারিনা। লোকটা আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,
-‘ কে বলেছিলো এতো সৌন্দর্যের অধিকারীনি হয়ে এ পৃথিবীর বুকে জন্মাতে? তোমার এই সকল সৌন্দর্য হ্যাভেন তালুকদারের নামে উৎসর্গ করার জন্য প্রস্তুত হও সুন্দরী ‘।
চলবে…।
✖কার্টেসী ছাড়া কপি নিষেধ ✖
হ্যাভেন চরিএটি অবশ্যই ভালো নজরে দেখবে না কেউ যেহেতু সে একটা মেয়েকে ক্ষমতার জোরে বিয়ে করছে। তাই বলে সে কোন হাদিস জানবে না তা তো হতে পারেনা। আমরা অনেক হাদিস জানি কিন্তু তা কি সবাই মানি? সমাজে এমন অনেক মানুষ আছে যারা নিজেদের স্বার্থে হাদিস ব্যবহার করে ধরে নিন হ্যাভেন সেই মানুষ দের মধ্যে একজন। আবার এটা বলবেন না হাদিস মানলে একটা মানবে কেনো? এখানে চরিএটাই নেগেটিভ। নেগেটিভ চরিএ ভালো না লাগলে ইগনোর করুন৷ আর হ্যাঁ হাদিসে রয়েছে আল্লাহর পর দুনিয়াতে কাউকে সেজদা করা জায়েজ হলে স্ত্রী কে বলা হতো স্বামীকে সেজদা করতে। হ্যাভেন নিজের স্বার্থে সেটাই বলেছে। হ্যাপি রিডিং।
May be an image of outdoors and text

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..