কাঁপা কাঁপা হাতে ফোন নম্বরটা ডায়াল করলো শাইরা।রিং বাজছে।মনে একটা উৎকন্ঠা ভাব কাজ করছে।মনে হচ্ছে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।ওপাশ থেকে কেউ একজন ফোন তুললো।
“হ্যালো,আসসালামু আলাইকুম।আমি শাইরা সাইয়ারা বলছি।”
“ওয়াআলাইকুমুস সালাম।”
“আমি জনাব আনজুম চৌধুরী ফাউন্ডেশনে ডোনেট করার বিষয়ে কথা বলতে ফোন করেছি।”
“জ্বি বলুন।আমি ফাহমিন আনজুম চৌধুরী বলছি।”
নামটা শুনে শাইরা নড়ে উঠলো।সেই কন্ঠ!
“আমি আপনার ফেসবুক পেইজের ইনবক্সে মেসেজ দিয়েছিলাম যে,আমি আপনার ফাউন্ডেশনে অসহায় মানুষদের সাহায্য করার জন্য ডোনেট করতে চাই।তখন আপনার পেইজ থেকে রিপ্লাইয়ে একটি ফোন নম্বর দেওয়া হয় যোগাযোগ করার জন্য।”
“আপনি কি আমার এলাকার লোক?”
“উত্তরটা একই সাথে হ্যাঁ এবং না।আমার অরিজিন এই এলাকায় না।কিন্তু আমি এই এলাকায় থাকি এখন সেই হিসেবে হ্যাঁ।আসলে আমার নিজের বিজনেস আছে,সেই কারণেই আমার এখানে থাকা।”
“কিছু যদি মনে না করেন তাহলে একটা কথা জিজ্ঞেস করি?”
“অবশ্যই।”
“আপনি নিজের এলাকায় কেন ডোনেট করছেন না?”
“কারণ আমার এলাকায় আমার কেউই থাকে না এখন।তাই সেখানে যাওয়া হয় না।আর আমি মোটামুটি হ্যান্ডসাম একটা অ্যামাউন্ট ডোনেট করতে চাইছি।কিন্তু সেরকম Trustworthy কোনো ফাউন্ডেশন আমার জানা নেই।আর আপনার পেইজে অনেকদিন ধরেই আমার ফলো দেওয়া আছে।প্রায়ই দেখি আপনি আপনার ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে অসহায় মানুষকে সহায়তা করে আসছেন।তাই ভাবলাম আপনাদের সাথে যদি যোগাযোগ করে দেখা যায় এই বিষয়ে তাহলে ভালো হয়।আর আপনি এত ভালো একটা কাজের সাথে যুক্ত তাই মনে হলো আপনাদের ফাউন্ডেশনে ডোনেট করলে যাদের সাহায্য প্রয়োজন তারা সেটা যথাযথভাবে পাবে আর আপনাদের ফাউন্ডেশনকে অ্যাপ্রিশিয়েটও করা হবে।”
“ওয়েল,আপনার চিন্তাধারা খুবই ভালো।আই রিয়েলি অ্যাপ্রিশিয়েট ইট।আপনি যেহেতু বলছেন,একটা হ্যান্ডসাম অ্যামাউন্ট ডোনেট করবেন,তাই আমার মনে হয় আপনি যদি নিজে আমাদের ফাউন্ডেশনে এসে চেকটা দিয়ে গেলে ভালো হয়।”
“হ্যাঁ তাহলেতো খুব ভালো হয়।কিন্তু কবে আসলে ভালো হয়?”
“সেটা আপনিই বলুন।”
“আচ্ছা,আমি কাল মনে হয় পারবো না,একটা বিজনেস মিটিং আছে,পরশু পারবো মনে হয়।”
“ওকে,আপনি আমার পেইজের ইনবক্সে তাহলে কবে আসবেন ডেইটটা কনফার্ম করে দিয়েন।”
“ইয়াহ,শিওর।”
ফাহমিন আনজুম চৌধুরী,খুলনা-১ আসনের সাংসদ আনজুম চৌধুরীর জ্যেষ্ঠ পুত্র।ফাহমিন আনজুম চৌধুরী নিজেও একজন পলিটিক্যাল লিডার।কিন্তু সাংসদের ছেলে বলে যে উনি নিজেকে সাধারণ মানুষের থেকে আলাদা বলে ভাবেন কিংবা তিনি সাধারণের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে এমনটা নয়।বরং ফাহমিন আনজুম চৌধুরীকে দেখে শুধু তার নিজের এলাকার মানুষেরই নয়,সারা দেশের মানুষের এমপি পুত্রদের নিয়ে যে চিরাচরিত ধারণা ছিলো তা সম্পূর্ণ বদলে গেছে।
“শাইরা,ব্রেকফাস্ট করবি না?”শাইরার বেস্টফ্রেন্ড লামিসা জিজ্ঞেস করলো।
“হ্যাঁ,এক্ষুনি যাচ্ছি।বলতো আমি এতক্ষণ কার সাথে কথা বলছিলাম?”
“কার সাথে আবার?”
“মি:ফাহমিন আনজুম চৌধুরীর সাথে কথা বলছিলাম।”
“কোন ফাহমিন আনজুম চৌধুরী?”জিজ্ঞাসু চোখে শাইরার দিকে লামিসা তাকালো।
“পলিটিশিয়ান ফাহমিন আনজুম চৌধুরী,ইন ডিটেইল খুলনা-১ আসনের সাংসদ আনজুম চৌধুরীর জ্যেষ্ঠ পুত্র।”কথাগুলো নির্বিকারচিত্তে বললো শাইরা।যেন পলিটিক্যাল লিডার তাও ফাহমিন আনজুম চৌধুরীর মাপের লিডারের সাথে কথা বলা ডালভাত খাওয়ার মতো ব্যাপার।
শাইরার কথা শুনে চোখ বড় বড় হয়ে গেলো লামিসার।মেয়ে বলে কি?লাখো তরুণীর ক্রাশ,তরুণ,ড্যাশিং,স্মার্ট,স্পষ্টভাষী পলিটিক্যাল লিডারের সাথে কথা বলেও কোনো হেলদোল নেই শাইরার!
“শাইরা তুই উনার সাথে কথা বলেছিস?এত সহজে লাইন পেলি কিভাবে?”
”আরে আমি কি ফ্লার্ট করার জন্য ফোন করেছি নাকি তোদের মতো?আমি উনার পেইজের ইনবক্সে মেসেজ দিয়েছিলাম অসহায় মানুষের জন্য টাকা ডোনেট করতে।তখন একটা ফোন নম্বর দেওয়া হয়েছিলো যোগাযোগ করার জন্য।তাই ফোন করে এই ব্যাপারে কথা বলেছিলাম।”
“এটা কি ফাহমিন আনজুম চৌধুরীর পার্সোনাল ফোন নম্বর ছিলো?”
“জানি না তবে উনি নিশ্চয়ই উনার পার্সোনাল নম্বর জনগণকে এভাবে দিয়ে বেড়াবেন না।এটা হয়তো যারা ডোনেট করতে চায় তাদের সাথে যোগাযোগ করার জন্য নম্বর।”
“তাহলে কি উনি ফোনটা ধরতেন?”
“আরে সবসময় হয়তো ধরেন না।আজকে হয়তো ঐ সময় উনি ফ্রি ছিলেন,এটা নিয়েই কাজ করছিলেন তাই ফোন রিসিভ করেছেন।কিন্তু কি ব্যাপার বলতো?তুই উনার পার্সোনাল নম্বর জানার জন্য এতো কসরত করছিস কেন?”
লামিসা মুখে দুষ্টুমির হাসি ফুটিয়ে বললো,“বাব্বাহ্,উনার উপর কে ক্রাশ খায় নাই বল?সবাই তো উনার উপর ক্রাশ খায়।সবাই যোগাযোগ করার চেষ্টা করে।কিন্তু উনি পাত্তা দিলে তো?আর দেখ আজকে তোর সাথে কথা বললো।আমি তো ভাগে পেলাম না।”
“এই তুই অফ যা,ক্ষুধা লাগসে আমার।আমি গেলাম নিশাতের হাতের ইয়াম্মি তিরামিসু চিজ কেক টেস্ট করতে।”বলে শাইরা প্রায় উড়ে চলে গেলো।
“কি ব্রো?কার সাথে কথা।বলছিলি?”
“আরে সাদাফ তুই?কখন এলি?”
“এইতো তুই যখন মিষ্টি করে কার সাথে যেন কথা বলছিলি না তখন?আমি ঐ সময়ই এসেছি।”
“আরে তেমন কিছু না।একজন ফোন করেছিলো আমাদের ফাউন্ডেশনে টাকা ডোনেট করার বিষয়ে।তার সাথেই কথা বলছিলাম।”
“মেয়ে ছিলো না ছেলে?যদি মেয়ে হয়ে থাকে তাহলে বিবাহিত না অবিবাহিত?”
“ভাই তুই থামবি এবার?এতদিন পর আসলি আর সাথে সাথেই শুরু করে দিলি?”
“চল আজকে বের হবো বাইরে।নাকি আজকেও তোর জনসেবা করতে যাওয়া লাগবে?”
“এভাবে বলিস না।এটা জনগণের আমার প্রতি অধিকার।তাদের দরকারে আমি সবসময় ছুটে যাবো।”
“ঠিকআছে।আমি মজা করে বলেছিলাম,তুই সিরিয়াসলি নিয়ে নিছিস।”ফাহমিনের কাঁধে হাত রেখে সাদাফ ওকে নিয়ে বাইরে গেল।
শাইরা সাইয়ারা,স্মার্ট,ইয়াং,এনার্জিটিক,প্রানবন্ত একজন তরুণী।খুলনা ইউনিভার্সিটি থেকে ফার্মেসিতে অনার্স শেষ করে এখন মাস্টার্সে পড়ছে।আর পাশাপাশি শাইরা,লামিসা আর নিশাত তিন বান্ধবী মিলে নিটিং ওয়্যারের একটা বিজনেস করছে,সাথে একটা রেস্টুরেন্টের বিজনেসও আছে ওদের।পড়ালেখা শেষ করে চাকরি বা ব্যবসা করবো এটা ভেবে কেউই বসে থাকেনি।লামিসা আর নিশাত অবশ্য যমজ দুই বোন।কিন্তু দুজনেই শাইরার জানের জান দোস্ত।শাইরা খুলনার মেয়ে না হলেও লামিসা আর নিশাত খুলনারই মেয়ে।ওরা এখন যে বাড়িটাতে থাকছে সেটাও লামিসা-নিশাতেরই বাড়ি।ওদের যখন এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হয় তখন একটা রোড অ্যাক্সিডেন্টে ওদের মা-বাবা মারা যান।যদিও বাবা-মায়ের রেখে যাওয়া ব্যাংক-ব্যালেন্সের কারনে লামিসা-নিশাতের টাকা-পয়সার কোনো অভাব হয়নি কিন্তু বাবা-মায়ের ভালোবাসার প্রচন্ড অভাববোধ হয়েছে।তারপর খুলনা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েই শাইরার সাথে পরিচয়।শাইরারও কেউ নেই।তিনজনের জীবনের নিষ্ঠুর মিল,জীবনের সাথে একই রকম যুদ্ধ ওদের এক সুতোয় বেঁধে দিয়েছে।সেই থেকে তিনজন জীবনের সব অবস্থায়,সব পরিস্থিতিতে একসাথে থাকার প্রতিজ্ঞা করেছে।
শাইরা রাতের বেলা মি:ফাহমিন আনজুম চৌধুরীর পেইজের ইনবক্সে লিখে দিলো যে সে পরশু তাদের ফাউন্ডেশনে যাবে চেক দিয়ে আসতে।
সকাল সাড়ে ৯ টা বাজে।নিশাত এসে শাইরাকে ডাকছে,“এই শাইরা ওঠ।তুই না বলে আজকে কই যাবি?তোর না চেক দিতে ফাহমিন আনজুম চৌধুরীর ফাউন্ডেশনে যাওয়ার কথা?কখন যাবি তুই?রাতে?”
শাইরা ঘুমের মধ্যেই বলছে,“উম্,আরেকটু পরে উঠবো,জ্বালাইস না প্লিজ।একটু ঘুমাবো।”
ডাকাডাকিতে কাজ হচ্ছে না দেখে নিশাত শাইরাকে ঠ্যালা শুরু করলো।এবার শাইরা ধুপ করে উঠে বসলো।ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে সাড়ে ৯ টা বাজে।
“এই নিশাত??তুই আমাকে আরো আগে ডাকলি না কেন যে?আমার সাড়ে ১০ টা বাজে আমার অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়া আছে ফাহমিন আনজুম চৌধুরীর সাথে।এখন আমি কি করবো?”
“আপাতত বিছানায় বসে না চিল্লায়ে ফ্রেশ হয়ে নাশতা কর তাহলেই দেখবি দেরি হবে না।”
মুখে প্রশস্ত একটা হাসি ফুটিয়ে নিশাতের গলা জড়িয়ে ধরে ফ্রেশ হতে চলে গেল শাইরা।
শাইরা রেডি হচ্ছে বের হওয়ার জন্য।আর লামিসা ওর পাশে দাঁড়িয়ে দেখছে যে ও কিভাবে রেডি হচ্ছে।
“এই শাইরা,তুই এভাবে যাবি উনার সাথে দেখা করতে?”
“এই তোর কি মাথা ঠিক আছে নাকি নাই?”
“কেন আমি আবার কি করলাম?”
“আমি আনজুম চৌধুরী ফাউন্ডেশনে যাচ্ছি একটা কাজে।আমি কি সেখানে বিয়ে বাড়ির সাজে যাবো?”
“না মানে একটু সাজগোজ করে তো যাওয়াই যায়।”
“শোন প্রথমত আমার এই ধরনের অবান্তর জিনিসে বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই।আর দ্বিতীয়ত তুই যার কথা ভেবে ভেবে পাগল হয়ে যাচ্ছিস উনি হয়তো এখন ওখানে নেই।উনারা হচ্ছেন ব্যস্ত মানুষ,তোর মতো কি উনি সারাদিন একজায়গায় বসে থাকেন,আমার সাথে দেখা করার জন্য?”
“এমনে বলিস ক্যান?আমি কি তোর যন্ত্রণায় একটু ক্রাশও খেতে পারবো না?”লামিসা কাঁদো কাঁদো ভঙ্গিতে বললো।
“এই ন্যাকামি করিস নাতো,নিশাত অনেক ভালো রান্না করে,ওর খাবার খেলে আর ক্রাশ খাওয়ার দরকার নাই।”
নিশাত ঘরে ঢুকতে গিয়ে শুনলো ওর নামে কিছু বলা হচ্ছে।তাই নিশাত জিজ্ঞাসু চোখে প্রথমে ওদের দিকে তাকালো,তারপর জিজ্ঞেস করলো,“আমাকে নিয়ে কি বলা হচ্ছে শুনি?”
লামিসা ওকে দেখে আহ্লাদী সুরে বলতে লাগলো,“দেখ না আপি,শাইরাকে বললাম আজকে একটু সেজেগুজে যেতে।আর তাই আমাকে কতকিছু বললো।”
নিশাত শাইরার মাথা থেকে পা পর্যন্ত চোখ বুলিয়ে নিয়ে বললো,“কেন শাইরাকে তো ভালো লাগছে দেখতে সবসময়ের মতোই।মনে হচ্ছে মাত্র ফোটা গোলাপি কাঠগোলাপের মতো।”
“এরকম কুর্তি আর জিন্স তো ও প্রতিদিনই পরে,কেমন ফর্মাল লাগছে দেখতে।আমি হলে তো শাড়ি পরে সুন্দর করে সেজে তারপর যেতাম।”
লামিসার কথা শুনে হাসি পেলেও হাসার সময় নেই শাইরার।ও লামিসার মাথায় একটা টোকা দিয়ে,নিশাতের দিকে তাকিয়ে হেসে ইশারা করে বেরিয়ে গেল।ইশারার মানে হচ্ছে বাসায় ফিরে লামিসাকে দুজনে মিলে আচ্ছামতে পঁচানি দিবে।
শাইরা গাড়ি থেকে নামলো আনজুম চৌধুরী ফাউন্ডেশনের অফিসের সামনে।ভিতরে যেতে একটু কেমন যেন লাগছে।একটু নার্ভাস লাগছে।যত যাই হোক পলিটিক্যাল লিডার বলে কথা।শাইরা সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতেই ভিতরে গেল।
দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকতেই দেখলো পার্টি অফিসগুলো যেরকম হয় এই অফিসটাও অনেকটা সেরকমই।ওখানে একজনকে জিজ্ঞেস করলো শাইরা যে,টাকা ডোনেট করার ব্যাপারে কার সাথে কথা বলতে হবে?শাইরাকে পাশের ঘরটা দেখিয়ে দিলে,শাইরা ঐ ঘরের দিকে এগিয়ে গেল।দরজায় নক করে বললো,“মে আই কাম ইন স্যার?”
কেউ একজন চেয়ারে বসে অন্যদিকে ঘুরে পেপার পড়ছিলেন।শাইরার গলার আওয়াজ শুনে তাকালেন দরজার দিকে।শাইরাকে দেখে লোকটি কিছুক্ষণ অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।
শাইরাও লোকটির দিকে তাকিয়ে আছে।ব্যাপারটা খারাপ দেখা যায় তাই চোখ সরিয়ে নিলো শাইরা।মি:ফাহমিন আনজুম চৌধুরী!উনি নিজে এখানে!
(এখানে উল্লিখিত স্থান,কাল,চরিত্র সবই কাল্পনিক,এর সাথে বাস্তবের কোনো মিল নেই।)
শাইরা নিজের পরিচয় দিলো,“আমিই শাইরা সাইয়ারা।”
ফাহমিন শাইরাকে বসতে বললেন।
“জ্বি,আপনি টাকা ডোনেট করবেন?”জিজ্ঞাসু চোখে শাইরার দিকে তাকালেন উনি।
“জ্বি আমি।”শাইরা খুব স্মার্টলি ফাহমিনের প্রশ্নের উত্তর দিলো ফাহমিনের দিকে তাকিয়ে।কিন্তু প্রয়োজনের চেয়ে একটা কথাও বেশি বলেনি।
ফাহমিন আবার জিজ্ঞেস করলেন,“আপনি করেন কি?আই মিন আপনার পেশা কি জানতে পারি?”
“আমি বিজনেস করছি নিটিং ওয়্যারের।পাশাপাশি একটা রেস্টুরেন্টও আছে।আমি আর আমার দুই বান্ধবী মিলেই করছি।”
“দ্যাটস গ্রেট,আপনি কি স্টুডেন্ট এখনও?”
“জ্বি,খুলনা ইউনিভার্সিটিতে মাস্টার্স পড়ছি ফার্মেসি সাবজেক্টে।”
“বিজনেস করছেন কত বছর হলো?না মানে আমার প্রশ্নগুলো কঠিন ভাবে নেওয়ার কিছু নেই,এমনি জানতে চাইছিলাম আরকি।সাধারণত আমাদের দেশে মানুষ স্টুডেন্ট লাইফে বিজনেস করে অলরেডি এস্টাবলিশড এরকমটা সচরাচর দেখা যায় না।”
শাইরা একটু হেসে বললো,“আমি বুঝতে পারছি আপনি কি বলতে চেয়েছেন।হ্যাঁ এটা সত্যি অনেকেই পড়ালেখা শেষ করে চাকরি বা ব্যবসা করার কথা ভাবেন।হয়তো আমিও ভাবতাম কিন্তু আমার মা-বাবা কেউই বেঁচে নেই।তাই লেখাপড়া শেষ করে কিছু করবো এই আশায় বসে থাকিনি।যা পুঁজি ছিলো সব ব্যবসাতে খাটিয়েছি।আর সাড়ে চার বছরে যা করতে পেরেছি আলহামদুলিল্লাহ।”
“আপনার কাজের কথা শুনে খুব খুশি হলাম।আপনার মতো সবাই ভাবলে দেশে বেকারত্বের সমস্যা অনেক কমে যেত।”
“আপনার কাজগুলো দেখেও যদি সাধারণ মানুষ কিছুমাত্র শিখত তাহলেও দেশের চেহারা বদলে যেত।স্পেশালি আপনি করোনার সময়ে যেভাবে মানুষকে সাহায্য করতে ছুটে গেছেন তার প্রশংসা করার জন্য সম্ভবত ডিকশনারিতে শব্দ কম পড়বে।”
শাইরার কথা শুনে ফাহমিন সাথে সাথে দুদিকে মাথা নাড়া শুরু করলেন।
“না না,মিস শাইরা।আপনি এটা কিন্তু পুরোপুরি ঠিক বলেননি।কারণ আমার জায়গায় অন্য কেউ থাকলেও হয়তো এগুলোই করতো। তাছাড়া সাধারণ মানুষও আমাকে ডোনেট করে হেল্প করেছেন।তাদের হেল্প না পেলে আমার এতদূর আসাই হতো না।আর একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে মানুষের পাশে দাঁড়ানোটা আমার কর্তব্য।তবে আমি শুধু একজন রাজনীতিবিদ হিসেবেই নই বরং পাশাপাশি একজন মানুষ হিসেবেও মানুষের প্রয়োজনে তাদের পাশে ছুটে গিয়েছি।এবং আপনাদের সকলের দোয়া এবং মহান আল্লাহর ইচ্ছা থাকলে আমি ভবিষ্যতেও যাবো।”
“তা তো নিশ্চয়ই। আচ্ছা,আমি অলরেডি আপনার অনেক সময় নিয়ে নিয়েছি।এই নিন চেকটা।”
“দ্যাটস সো কাইন্ড অফ ইউ।থ্যাংকস ইন আ মিলিয়ন।”
“আমি আপনার ফাউন্ডেশনকে ফিউচারেও এভাবে ডোনেট করে হেল্প করতে চাই।”
“ইউ আর অলওয়েজ ওয়েলকাম।”
শাইরা তাড়াতাড়ি করে চলে এলো ওখান থেকে।কারণ আজ ওর খুব ইম্পরট্যান্ট একটা ডিল হ্যান্ডেল করতে হবে।এখানে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়ার পর সেই ডিলটা আজকে ঠিক করা হয়েছে।আর এমন একটা ডিল যেটা আজ ফাইনাল না করলে বড়সড় ক্ষতি হয়ে যাবে।তাই প্রায় দৌঁড়ে দৌঁড়ে গাড়ির কাছে গেল শাইরা। গাড়িতে উঠে বসে ফোন বের করতেই দেখে লামিসা চারবার ফোন করে ফেলেছে এরইমধ্যে।কিন্তু ফোন সাইলেন্ট করে রাখায় দেখেনি।শাইরা কলব্যাক করলো লামিসাকে।
ফোনটা রিসিভ করেই হরবর করে বললো লামিসা,“এই শাইরা,তোর কি ফাহমিন আনজুম চৌধুরীর সাথে দেখা হয়েছে?”
“হ্যাঁ,কেন?”
“এই তুই কি উনার ফাউন্ডেশন থেকে বের হয়ে গিয়েছিস?”
“হ্যাঁ মাত্রই বের হয়ে গাড়িতে উঠে বসলাম।কিন্তু হয়েছেটা কি বলবি তো?”
“আহ্,প্রশ্নের পিঠে প্রশ্ন করিস নাতো।যা বলছি জবাব দে।”
“লামিসা আমাকে কিছু জরুরি কাগজপত্র চেক করতে হবে।আমি বাসায় এসে কথা বলছি।এখন যদি সব বলে ফেলি তাহলে আমি বাসায় গেলে আর কিছু জানতে পারবি না।”
লামিসা আরো কিছুক্ষণ কথা বলতে চাইছিলো কিন্তু শাইরা ফোনটা কেটে দেওয়ায় সে বিরস মুখে বসে রইলো।
ফাহমিন বেশ অবাক হলেন শাইরা মেয়েটিকে দেখে।সচরাচর অন্য মেয়েদের মতো নয় সে।ফাহমিনকে কাজের জন্য প্রায়সময়ই নানা জায়গায় যেতে হয়,বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও যেতে হয় প্রায় প্রতিদিন। সেখানে যদি কোনো মেয়ে ফাহমিনকে দেখে তাহলে ছবি তোলার জন্য কত রিকোয়েস্ট করে,ফুল দেয়,কত সত্য-মিথ্যা কত প্রশংসা করে ফাহমিনের মন জয় করার চেষ্টা করে,আর সেখানে শাইরা তার সামনে এসে কি সাবলীল আর স্মার্টলি কথা বললো।এমনকি প্রয়োজনের বাইরে ফাহমিনের অতিরিক্ত প্রশংসা করেও কিছু বলেনি।ছবি তোলার জন্য গায়েপড়ে অনুরোধও করেনি।আবার মানুষের জন্যও কত মমতা!ফাহমিন যেন নিজমনেই মুচকি হাসলো।
শাইরা বাড়িতে পৌঁছেই নিশাতকে বললো গিজারটা অন করে দিতে।নভেম্বরর শুরু হলেও খুলনায় এ সময়টায় শীত একেবারে মন্দ থাকে না।বাইরে ছুটোছুটি করে এলেও বাসায় ঢুকতেই কেমন যেন শীত শীত লাগছে শাইরার।আলমারি থেকে জামাকাপড় বের করছে আর ঠিক তখনই শাইরার ঘরে ঢুকে লামিসা কিছু বলার জন্য মুখ খুলতেই শাইরা হাত তুলে লামিসাকে থামিয়ে দিলো।আর দুষ্টু হেসে বললো,“আমি জানিতো যে,তুমি কি জিজ্ঞেস করবে।কিন্তু দেখ ভাই,বাইরে থেকে আসলাম মাত্র,আমি জানি তুই কি জানতে চাইবি কিন্তু প্লিজ জিজ্ঞেস করিস না।আগে গোসল করে আসি,তারপর খেতে খেতে সব বলবো,ওখানে কি হয়েছে,কি হয়নি এক্কেবারে এ টু জেড।”
শাইরা তাড়াহুড়ো করে বলা কথাগুলো শুনে বেশ মজা লাগলো লামিসার।এই মেয়েটা এরকমই।এখনও ওর বাচ্চামি গেল না।
“কিরে ভাইয়া,তুই একা একা হাসছিস কেন?”
“কখন হাসলাম আমি?”
“তুই যখন মুচকি মুচকি হাসছিলি আমি তখনই দেখেছি।”
“তুই আসার আর সময় পাস না।”
“ও হ্যাঁ,এখন তো তোমার অফিসে আসতে আমার সমহ বুঝে আসা লাগবে।”
“মানে কি?”
“মানে হচ্ছে এখন তো তোমার মন ভালো করার জন্য অনেকেই অফিসে আসে।”
“এই কথার কি কোনো আগামাথা নাই তোর?”
“আছে আছে,এখন ঢং কইরো না,আমি সবই বুঝি।”
“কি বুঝিস তুই?”
“মেয়েটা কেরে?”
ফাহমিন অবাক হয়ে বললো,“কোন মেয়ে?”
“এহ্,ভাবটা দেখো না!মনে হয় কোনো মেয়েকে চিনেই না!একটু আগে তোর রুম থেকে যে কমবয়সী মেয়েটাকে বের হতে দেখলাম সে কে?”
এবার ফাহমিন হো হো করে হেসে বললো,“ওহ্,উনি?উনি হচ্ছেন মিস শাইরা সাইয়ারা। আমাদের ফাউন্ডেশনে টাকা ডোনেট করতে এসেছিলেন।”
“মিস নাকি মিসেস তুই জানলি কেমন করে?”
“আমি উনার সামনেই উনাকে ‘মিস শাইরা’ বলে অ্যাড্রেস করেছিলাম।তখন উনি কোনো আপত্তি করেননি।”
“বাব্বাহ্,মিস শাইরা সম্পর্কে খুটিনাটি সবই তো মনে রেখেছো।কি ব্যাপার তোমার হুম?”সাদাফ ভ্রু কুঁচকে ফাহমিনের দিকে তাকালো।
“কোনোই ব্যাপার নাই।এখন কি খালি ব্যাপার-স্যাপার জানতে চাওয়াই তোর স্বভাব হয়েছে?”
“যাই বলো না কেন,আমি কিন্তু তোমার হাসি দেখেই বুঝেছি যে তুমি শাইরাকে নিয়েই ভাবছিলে।অবশ্য মেয়েটা কিন্তু চিন্তা করার মতোই।তুই ভেবে দেখতে পারিস কিন্তু।”
ফাহমিন সাদাফের পাগলামি কথাবার্তা শুনে হাসতে হাসতে বললো,“তুই জীবনেও বদলাবি না।”
শাইরা,লামিসা আর নিশাত একসাথেই খেতে বসলো। এবার লামিসাই মৌনতা ভেঙে বললো,“অ্যাই শাইরা,এখন বল না কি হয়েছিলো?”
শাইরা বুঝতে পারছে যে,লামিসা আসলে কার কথা জানতে চাইছে তবুও শাইরা না বুঝতে পারার ভান করে বললো,“কোথায় কি হয়েছে?আর কারই বা কি হয়েছে?”
শাইরার দুষ্টুমি বুঝতে পারছে নিশাতও।সেও লামিসাকে ক্ষেপতে দেখে মজা পাচ্ছে।
“শাইরা তুই আমার সাথে মজা নিচ্ছিস না?এমন করিস ক্যান?বল না ফাহমিন আনজুম চৌধুরীর সাথে কি কথা বলেছিস তুই?”
“হুম,এইবার তুমি আসল কথায় এসেছো।ফাহমিন সাহেব তো আমার সাথে অনেক গল্প করেছেন।আমার সাথে ঘুরতেও যেতে বলেছিলেন, আমিই ব্যস্ততার কারণে যাইনি।আর বলেছেন,আপনার একটা পাগল টাইপের ফ্রেন্ড আছে না?লামিসা নামে?”
লামিসা এবার নাক-মুখ কুঁচকে বললো,“আমি পাগল না?আর তুই যে আমার ক্রাশের সাথে কথা বলে এসেছিস আমাকে না নিয়ে?এইটা কিছু হলো?শুধু আমিই তাকে দেখতেও পারলাম না আর কথাও বলতে পারলাম না।”
“ইশ্,তোদের এই এক সমস্যা। একটা লোকের ভালো কাজগুলোকে না দেখে খালি লুক দিয়ে বিচার করিস।”
“হ্যাঁ তুমি ভাগে পেয়েছো তো তাই বলছো।আমিতো ভাগে পেলাম না।”লামিসার মুখটা কাঁদো কাঁদো হয়ে গেল।
শাইরা কৌতুকের সুরে বললো,“এহ্,উনি কি খাবার নাকি যে তুই ভাগে পাবি?”
লামিসা বুঝলো যে,শাইরার সাথে কথায় পেরে উঠা অসম্ভব। তাই চুপ করে গেল ও।
শাইরা সান্ত্বনার সুরে বললো,“থাক বাচ্চাটা কাঁদে না।তোর সাথে উনার শীঘ্রই দেখা হবে,প্যারা নিস না।”
লামিসার চোখমুখ উজ্জ্বল করে বললো,“সত্যি!!কিন্তু কিভাবে?”
শাইরাও বড় বড় চোখ করে বললো,“ক্রমশ প্রকাশ্য!”বলেই রহস্যময়ী হাসি দিলো শাইরা।
এ জাতীয় আরো খবর..
Leave a Reply