অফিস থেকে ফিরতেই মা আমার বউয়ের নামে একগাদা অভিযোগ শুনিয়ে দিলেন। সারাদিন কাজকর্ম করে আমি ক্লান্ত।তবুও ধৈর্য নিয়ে শুনলাম উনি বললেন, “জুনায়েদ তোর বউ সারাদিন কাজকর্ম কিছুই করে না বসে থাকে। হুকুম করলে না শোনার ভান করে আয়না ধরে বসে থাকে। এখন বল,আমি এমতাবস্থায় কি করবো? বুড়ো বয়সে আমার পক্ষে কাজকর্ম করা সম্ভব না। হাপিয়ে যাচ্ছি, এমন চললে মৃত্যু অবধারিত। “
আম্মার কথা শুনে আমি ভ্রু কচকে বললাম,
> এসব কি কথা আম্মা,মরবেন কেনো? আপনি ঘরে জান আমি রুকুর সঙ্গে কথা বলবো।
আম্মাকে ঘরে পাঠিয়ে একরাশ বিরক্তি নিয়ে ঘরে এসে দেখি রুকু মুখের মধ্যে কি সব লাগিয়ে শুয়ে আছে। এই সময় সে খুব একটা কথা বলে না। মুখে টান পড়লে নাকি কি সব হবে। বাপের জন্মে দেখিনি বউয়ের জন্য দেখলাম। যাইহোক অফিসের ব্যাগটা রেখে বিরক্তি নিয়ে বললাম,
“বাড়ির কাজকর্ম ছেড়ে দিয়ে মুখের মধ্যে এসব নিয়ে বসে আছো। আম্মার বয়স হয়েছে। আমি চাইছি না উনি আর বাড়ির কাজকর্ম করুক”
> আমিও চাইনা কিন্তু আমি তো জমিদারদের বেটি। এখন তুমিই বলো জমিদারের বেটির কি আর কাজকর্ম করা সাজে? তাই জন্য নিজের একটু যত্ন নিচ্ছি। ভাবছি আগামীকাল শপিং করতে যাবো। হাজার দশেক টাকা রেখো।
রুরুর কথা শুনে আমি কেশে উঠে ভ্রু কুচকে চিন্তিত হয়ে বললাম,
> পাগল টাগল হয়েছো নাকি? জমিদারের বেটি মানে কি? তোমার বাবা তো প্রাইমারি স্কুলের মাস্টার,তিনি জমিদার হলেন কবে থেকে?
> আম্মা বলেছেন পাশের বাড়ির ভাবির কাছে।সেখান থেকে শুনেছি। ভাবলাম শাশুড়ি আম্মা কি আর এই বয়সে মিথ্যা বলবেন?
রুকুর কথা শুনে বুঝলাম ব্যাপারটা আসলে কি। আম্মা একটু খিটখিটে টাইপের। হয়তো ওর কাজ নিয়ে কারো সঙ্গে আলোচনা করেছে তাই জন্য রুকু আম্মাকে শাসন করতে এসব করছে। কিন্তু আম্মার তো বয়স হয়েছে। উনি কাজকর্ম করলে সত্যিই অসুস্থ হয়ে যাবে তাই রুকুর পাশে বসে ওর হাতটা ধরে বললাম,
“আমি যদি হঠাৎ মারা যায় তোমার কষ্ট হবে?
আমার কথাটা শোনামাত্র রুকুর চোখদুটো ছলছল করে উঠলো। ও মুখের আটা ময়দা নিয়েই আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“বাজে কথা বললে কিন্তু খুব খারাপ হবে। তোমার কিছু হলে আমি মরেই যাবো।”
“আম্মাও আমার বাবাকে প্রচন্ড ভালোবাসতেন। আমার বয়স যখন এগারো তখন বাবা সড়ক দুর্ঘটনাতে মারা গেলেন। আম্মাকে দেখেছি সারাক্ষণ কান্নাকাটি করতেন। ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করতেন না। আমাকে নিয়ে উনার দূরদর্শার শেষ ছিল না। স্বামী হারানোর শোক তারপর আবার একমাত্র ছেলেকে মানুষ করার দায়িত্ব। কি করবেন দিশেহারা অবস্থা। কোনো উপাই না পেয়ে সেলাইয়ের কাজ শুরু করলেন। মামা মামি চেয়েছিলেন আম্মাকে আবারও বিয়ে দিতে কিন্তু আম্মা করলেন না। বাবার স্মৃতি আর আমাকে আকড়ে ধরে লড়াই শুরু করলেন। একজন বিধবা মহিলার পক্ষে কতটা যন্ত্রণার একটু অনুভব করো বুঝবে আম্মার এমন খিটখিটে মেজাজের কারণ”
আমার কথা শুনে রুকু ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। ওকে কাঁদতে দেখে আমার খারাপ লাগলো তাই ওর চোখের পানি মুছিয়ে বললাম,
“কি করবে এখন ভেবে দেখো। জমিদারের বেটি হয়ে থাকবে নাকি আম্মার মেয়ে হবার চেষ্টা করবে?”
রুকু আমার দিকে তাকিয়ে চুপচাপ উঠে চলে গেল। আমি মলিন হেসে বাথরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে খাবার টেবিলে গিয়ে বসলাম।গিয়ে দেখি রুকু খুব যত্ন নিয়ে আম্মার প্লেটে খাবার দিচ্ছে আর বলছে,
> আম্মা আপনি কিন্তু ভারি আন্যায় করেছেন । আমি জমিদারের বেটি না আপনার বেটি। তাই কাজকর্ম না পারলে মানুষের কাছে বলবেন মিসেস জুবাইদা হকের বেটির কোনো গুণ নেই।
রুকুর কথা শুনে আম্মা হেসে উঠলেন। আমারও ঠোঁটে কোনে হাসি ফুটে উঠলো। পরিবারের শান্তি ফিরেছে এটাই অনেক। তবে ঝামেলা আছে। অবসরে এই শাশুড়ি বউমা মিলে আমাকে জব্দ করার নিত্য নতুন পরিকল্পনা শুরু করবে বুঝতে পারছি। বহুবার এমন হয়েছে। তবুও শান্তি জমিদারের বেটির ভুত তার মাথা থেকে নামানো গেছে।
এ জাতীয় আরো খবর..
Leave a Reply