গত রাতেই বারোটার পর থেকে বিবাহের এক বছর পূর্তির সব আয়োজন শুরু হয়ে গেছে। সোহেল অফিস থেকে ফেরার পথে ফুল কেক, শাড়ি আরও অনেক কিছু নিয়ে এসেছে।
সোহেল খুব রোমান্টিক। কিছু বলতে হয় না, সব কিছু খুব সহজেই বুঝতে পারে। নাবিলা কি বলতে চায়, কি খেতে পছন্দ করে সব কিছু। খুব ভালো লাগে সোহেলের এ সব বিষয় গুলো। মাঝে মাঝে আবার অনেক কিছু অতিরিক্ত করে, তখন আবার একটু বিরক্তও লাগে। তারপরও নাবিলা খুব উপভোগ করে সব কিছু।
সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা খেয়ে রেডি হয়ে নিচ্ছে নাবিলা আর সোহেল। সারাদিন এক সাথে ঘুরবে, খাবে, রাত করে বাড়ি ফিরবে। সোহেল তৈরী হয়ে নাবিলার শাড়ির কুচি ঠিক করে দিচ্ছে। ও বরাবর এ কাজটা করে। আর এটা খুব ভালো লাগে নাবিলার।
দশটার মধ্যে বেড়িয়ে পড়ল তারা। টঙী আশুলিয়া গাজীপুর পেরিয়ে রাজেন্দ্রপুর এসে একটি রির্সোটে উঠল। খুব সুন্দর পরিবেশ। দুপুরের খাওয়ার পর্বটা এখানেই শেষ করে নিল।খাওয়া শেষ করে চারিদিকটা ঘুরে ঘুরে দেখছে ওরা। এত সুন্দর যে, ফিরে যেতে ইচ্ছে করছে না। গ্রামীণ পরিবেশের মাঝে আধুনিকতার ছোঁয়া।
এখানে বেশ ক’টা রির্সোট পাশাপাশি। অনেক পরিবারই দেখতে পেল তারা। কেউ একা ঘুরছে, কেউ বাচ্চাদের নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কেউ কেউ আবার ওদের মতো। খুব ভালো লাগছিল নাবিলা আর সোহেলের। ওরা দু’জন হাতধরে ঘুরছে, আর সব কিছু দেখছে।
নাবিলা – আমি একটু ওয়াশরুমে যাব
খুব কাছেই ছিল ওয়াশরুম। নাবিলাকে দিয়ে সোহেল পাশে একটি চেয়ারে এসে বসল।
সোহেলের চোখ ছানাবড়া। এ কাকে দেখছে সোহেল।
লতা?? এতদিন পরে, আবার একখানে??
সোহেল এড়িয়ে যেতে চাইল। নাবিলা এসে দেখলে অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে। দরকার কি। এসব ঝামেলার।
” না”
” কথা বলতে চাইছ না, মনে হয়, সব কিছু এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে??”
” আমি ভুলে গেছি নাকি তুমি ভুলে গিয়েছিলে?”
” আমি ভুল করেছিলাম, আমাকে মাফ কর”
” এখন অনেক দেরি হয়ে গেছে, আমি বিয়ে করেছি, আর এখানে আমার বউ নিয়ে এসেছি।আমাদের বিরক্ত না করলেই খুশি হব”
” বিয়ে করেছ, কবে? একটু তো জানাতে পারতে?”
বলে হঠাৎই লতা সোহেলের হাতটা ধরল।
“একি করছ? প্লিজ, ছাড়, বলে হাতটা সরিয়ে নিল সোহেল।
ততক্ষনে যা হবার তাই হল। নাবিলা এসে সব দেখল।
সোহেল পরিচয় করিয়ে দেবার আগেই লতা নিজেই পরিচয় করে নিল।
” আমি লতা, সোহেলের সাথে ইউনিভার্সিটিতে পড়তাম”
নাবিলা তেমন কিছু বলল না
“আচ্ছা, আসেন আমাদের সাথে বসেন, কথা বলি।”
” না না ঠিক আছে, আপনারা সময় কাটান, পরে কথা হবে “
টেবিলের দু’প্রান্তে নাবিলা আর সোহেল।
দুজনেই চুপচাপ। নাবিলা মাথা নিচু করে আছে।
সোহেল কিছু বলতে চাইছিল কিন্তু নাবিলা–
” চল, ফিরে যাই, ভালো লাগছে না”
” কেন, কিছুক্ষন আগেই তো বললে খুব ভালো লাগছে”
” কিছুক্ষন আগেও সব কিছু অন্য রকম ছিল, এখন সব কিছু এলোমেলো লাগছে। প্লিজ, বাসায় চল। আমার খুব খারাপ লাগছে”
“প্লিজ, আমাকে ভুল বুঝ না, প্রিয়। পুরো বিষয়টা আমাকে বলতে দাও। সব না শুনলে তুমিও কষ্ট পাবে। আমিও পাব, প্লিজ, প্লিজ “
” আমি কিছু শুনতে চাই না, এখন বাসায় চল, আর কোন কথা নয়।”
বলেই সোজা গাড়ির দিকে রওনা হল নাবিলা। উপায় না দেখে সোহেলও ওর পিছনে পিছনে হাঁটতে শুরু করল।
গাড়িতে সোহেল অনেক বুঝাতে চেষ্টা করল নাবিলাকে। নাবিলা একদম চুপচাপ ছিল। কান্নার শব্দ শুনছিল সোহেল।
সোহেলেরও খুব খারাপ লাগছিল, বাসায় গিয়ে যে কি হবে, তাই ভাবছিল সোহেল।
বাসায় এসে নাবিলা ব্যাগ গুছিয়ে নিল।
” একি করছ?? প্লিজ, জান, পুরো বিষয়টা একটু শোন, তারপর না হয়, চলে যেও। কিন্তু ভুল বুঝে এভাবে যেতে পারবে না, আমি তোমাকে যেতে দিব না “
” আমি কিছু শুনতে চাই না, যা দেখছি তাই যথেষ্ট “
” তুমি যা দেখছ, তা ঠিক না”
” কি ঠিক না, ও কেন তোমার হাত ধরবে”
” আমাকে বিশ্বাস কর, ওর সাথে আমার কোন রিলেশন নাই”
” এখন নাই কিন্তু আগে ছিল তো, কিন্তু এখন কেন হাত ধরবে, নিশ্চয়ই এখনও রিলেশন আছে, তা না হলে এভাবে হাত ধরবে কেন””
ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে নাবিলা। সোহেল ওকে জড়িয়ে ধরল
” আমি তোমাকে যেতে দিব না, আমি তোমাকেই ভালোবাসি, বিশ্বাস কর, আমার জীবনে এখন অন্য কেউ নেই, আর কোন দিন আসবেও না”
কান্না করতে করতে এক সময় অজ্ঞান হয়ে গেল নাবিলা। সোহেল তাড়াতাড়ি করে ডাক্তার নিয়ে এল।
ডাক্তার বলল, ” তেমন কিছু না, উনি মা হতে চলেছে, এখন পুরো রেস্টে থাকতে হবে। “
ডাক্তারকে বিদায় দিয়ে নাবিলাকে জড়িয়ে ধরে অনেক আদর করল, কিন্তু নাবিলা কিছুতেই সে বিষয়টা ভুলতে পারছে না।
” তোমাকে আমি যেতে দিলে তো, তুমি সারাজীবনের জন্য আমার। আর এখন তো আমি সব কিছু ছেড়ে দিব, চাকুরীটাও, আমি বাবা হতে চলেছি আর তুমি মা”
নাবিলা সোহেলের হাত সরিয়ে নিল।
” আমার ভালো লাগছে না, মার বাড়ি যাব, তুমি আমাকে মার বাড়ি দিয়ে এস”
” প্রশ্নই ওঠে না, এখন এ অবস্থাতে তোমাকে রেখে আসা।”
বলেই উঠে দাড়াল নাবিলা, কিন্তু আবার মাথা ঘুরে উঠল। সোহেল ধরে ফেলল নাবিলাকে।
” আমাকে ছাড়, আমার কিছু ভালো লাগে না, আমাকে একা থাকতে দাও”
বলেই আবারও কান্না শুরু করল নাবিলা।
” প্লিজ, এত কান্না করলে তো শরীর খারাপ করবে, আমি তোমাকে সব বলছি”
” আমি কিছু শুনতে চাই না “
” তোমাকে শুনতেই হবে, ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় ওর সাথে আমার একটা রিলেশন ছিল। খুব অল্প দিনের। মিথ্যে বলব না, আমারও ভালো লাগত ওকে। কিন্তু আমি বুঝতে পারিনি ও খুব বেশি দিন কারও সাথে রিলেশন করে না। আমিও ওর সেই ফাদে আটকে গিয়েছিলাম। কিন্তু বেশি দিন সে রিলেশন এগোতে পারেনি। আমি বুঝতে পেরে সরে এসেছি। পরে জানতে পারি, ওর অনেকের সাথেই রিলেশন। আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন। গল্পটা কিন্তু এখানেই শেষ, এতদিন পরে আজই ওর সাথে দেখা। ও যে কেন এমন করল, বুঝতে পারলাম না, আমি নিজেই খুব বিরক্ত “
” আমি আমার বাচ্চার মানে এই তোমাকে ধরে বলছি।”
নাবিলার পেটে হাত রাখল সোহেল।
” বিশ্বাস কর, ওর সাথে আমার কোন রিলেশন নাই, আমি তোমাকেই শুধু ভালোবাসি, আমার জীবনে আর কেউ নেই, কোন দিন আসবেও না “
নাবিলা সোহেলকে জড়িয়ে ধরে পাগলের মতো কান্না করতে শুরু করল।
” আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি। তুমি আমাকে ছেড়ে গেলে আমি মরে যাব, আমি বাঁচতে চাই, তোমার ভালোবাসার মাঝে।”
” আমি সারাজীবন তোমারই থাকব, ইনশাআল্লাহ, শুধু আমার উপর আস্হা রেখ। আমায় ভুল বুঝ না। তোমার কিছুতে খারাপ লাগলে আমাকে জিজ্ঞেস করবে। অকারণে ভুল বুঝবে না। তোমার অসন্মান হোক, এমন কিছু আমি কোন দিন করব না। বিশ্বাস রেখ, আমার উপর।”
নাবিলা সোহেলকে জড়িয়ে ধরল, সোহেলও।
এক সময় দুজন দুজনের ভালোবাসার মাঝে হারিয়ে গেল। সত্যিকারের ভালোবাসা গুলো এভাবেই ফিরে আসে। কখনও হারিয়ে যায় না।।
এ জাতীয় আরো খবর..
Leave a Reply