1. banglamailnews72@gmail.com : banglamailnews : Zakir Khan
মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৪৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
# মাহমুদা সুলতানা একা # কালো_মানিক বেসিনে গরম পানি ঢালার পূর্বে সতর্ক হোন!! ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড ———————————– অভিনন্দন – শুভ জন্মদিন অবন্তী দেব সিঁথি ————————— — মেসবা খান ঢাকায় অবস্থানরত জামিয়া গহরপুর সিলেট’র ফুযালা ও প্রাক্তনদের আয়োজনে ❝মাহফিলে নূর❞ অনুষ্ঠিত —— হজ্জ ২০২৫ ও ওমরাহ বুকিং চলছে – – মক্কা হুজুর হজ্জ কাফেলা সাউথ বাংলা ট্যুরিজম ————————— প্যারাডাইজ ইন্টারন্যাশনাল হাই স্কুল রম্য কবিতা – অবশেষে হেডমাস্টার – – কলমে – – – – – চৈতালী দাসমজুমদার আলহামদুলিল্লাহ বহু প্রতিক্ষিত স্বপ্ন বাস্তবায়নের উদ্যোগ, মানব সেবার লক্ষ্য ……. প্রস্তাবিত “জেড ওয়েল মেডিকেল কলেজ ও হসপিটাল লি:”

সুফিয়া কামালের সঙ্গে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সেই অপরূপ সন্ধ্যার গল্পটা ### লুৎফর রহমান রিটন

  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২০
  • ২৫৮ বার
কবি সুফিয়া কামালকে আমি খালা সম্বোধন করতাম।
আমার স্কুলের পাঠ্যবইতে তখন খালার কবিতা। পাঠ্যবইয়ের পাতায় মুদ্রিত কবিতার কোনো কবির সঙ্গে দেখা হওয়ার যে রোমাঞ্চ, কথা বলার যে রোমাঞ্চ, সেই রোমাঞ্চ ছাপিয়ে কবির একান্ত ব্যক্তিগত সান্নিধ্যের অংশী হবার গৌরব আমি অর্জন করে ফেলেছিলাম সেই ছোট্ট বয়েসে। তাঁর আদর, তাঁর স্নেহ এবং শাসন আমার এই জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি।
ছেলেবেলায় কচি-কাঁচার মেলার সঙ্গে জড়িত ছিলাম। সুফিয়া কামাল ছিলেন কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলার উপদেষ্টা। সুফিয়া কামালের বাড়ির আঙিনায় মাদুর পেতে সভা করে কচি-কাঁচার মেলার জন্ম। দাদাভাই রোকনুজ্জামান খানের হাত ধরে আমার কচি-কাঁচার মেলায় আসা। আর কচি-কাঁচার মেলায় এসে ছায়া পেলাম, আদর পেলাম, স্নেহ পেলাম অনেক বড় বড় মানুষের। কবি সুফিয়া কামাল, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন—এঁরা সবাই ছিলেন মেলার উপদেষ্টা। খালার বিশেষ স্নেহ পাবার সৌভাগ্যটি অর্জন করি আমি তখনই। কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলার হয়ে খালার সঙ্গে কতো জায়গায়ই-না গিয়েছি! টাঙ্গাইল, লাকসাম, চাঁদপুর, মতলব, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট—বাংলাদেশের এরকম অনেক অঞ্চলেই কবি সুফিয়া কামালের সফরসঙ্গী হবার দুর্লভ সুযোগ আমার শৈশবকে সোনার আলোয় ভরিয়ে দিয়েছিলো। আমার শৈশবের সোনালি অধ্যায়ের স্বর্ণোজ্জ্বল নাম—কবি সুফিয়া কামাল। মাতৃরূপিনী সুফিয়া কামালের স্নেহের পরশে কেটেছে আমার শৈশব-কৈশোর আর নতুন যৌবনের ঝলমলে দিনগুলো।
তখন কী আর জানতাম আমি ছড়াকার হবো! ইচ্ছে ছিলো শিল্পী হবার। জয়নুল আবেদিনের মতো বড় শিল্পী। কচি-কাঁচার মেলার ছবি আঁকার ক্লাশে ইজেলে দাঁড়িয়ে ছবি আঁকার সময় জয়নুল আবেদিন যখন হাত চালালেন, বললেন—এইভাবে আঁকবা, এইভাবে রঙ মিশাইবা তারপর এইভাবে তুলি চালাইবা—তখনই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমাকে শিল্পী হতে হবে। জয়নুল আবেদিনের মতো বড় শিল্পী। কিন্তুনা আমি শিল্পী হতে পারিনি। হয়েছি ছড়াকার। ১৯৮৯ সালে রাশেদ হোসেনের সম্পাদনায় ‘বাংলাদেশের সুনির্বাচিত ছড়া’ প্রকাশিত হলো যখন, তখন আমার সতীর্থ এবং অগ্রজবন্ধুদের অনেকেই এমনকি প্রবীণদের কেউ কেউ আমাকে রীতিমতো ঈর্ষা করতে শুরু করলেন। কারণ সেই সংকলনে প্রিয় ছড়াকারের তালিকার ঘরে কবি সুফিয়া কামাল শুধু একটি নামই লিখেছিলেন আর সেই নামটি ছিলো আমার! এই বিরল প্রাপ্তি শিল্পী হতে না পারার বেদনা ভোলাতে কতো যে শক্তি দিয়েছিলো আমাকে!
১৯৯৯ সালে খালাকে নিয়ে একটা ছড়া লিখেছিলাম। ছড়াটা আমার ‘হিপ হিপ হুররে’ নামের বইতে আছে।
সুফিয়া কামাল
লুৎফর রহমান রিটন
দস্যুরা হানা দেয়
চারিদিকে রব ওঠে—সামাল সামাল,
ভয় নেই ভয় নেই
আমাদের সাথে আছে সুফিয়া কামাল।
দেশে মহাদুর্যোগ
রাজপথে গুলি খায় দস্যি-দামাল,
মায়ের মমতা নিয়ে
মিছিলের পুরোভাগে সুফিয়া কামাল।’
০২
আমার পত্রিকা ছোটদের কাগজের জন্যে লেখা চেয়েছিলাম খালার কাছে। ১৯৯৬ সালে। খালা আমাকে দু’টো ছড়া দিয়েছিলেন একসঙ্গে। তার মধ্যে একটি ছড়া তিনি লিখেছিলেন আমাকে নিয়ে! কী বিস্ময়! সে এক অনন্য প্রাপ্তি ছিলো আমার জীবনে। ছড়া দু’টো প্রকাশিত হয়েছিলো পাশাপাশি দুই পৃষ্ঠাব্যাপি–শিল্পী হাশেম খানের চমৎকার ইলাস্ট্রশনসহ। ছড়াটা এখানে তুলে দিচ্ছি–
”রিটনকে
সুফিয়া কামাল
রিটন হলো মস্ত ছড়াকার
আমার কাছে ছড়া চায় আবার
ছোটদের কাগজের জন্য
লিখতে কি পারি আমি অন্য–
কোনো কাগজেতে আর?
রিটনই সবচেয়ে বড় ছড়াকার
সে-ই হোক ছোটদের জন্য–
লেখক অনন্য।
০৬.০৩.১৯৯৬”
[ ছোটদের কাগজ মার্চ ১৯৯৬ সংখ্যায় ছাপা হয়েছিলো ছড়াটা।]
০৩
একবার, চট্টগ্রাম-সিলেট কিংবা লাকশাম কোথাও যাচ্ছি দাদাভাই আর সুফিয়া কামালের সঙ্গে। মাঝপথে একটা স্টেশনে ট্রেনটা দাঁড়িয়ে থাকলো মিনিট কুড়ি। দাদাভাই স্টেশনে নেমে গেলেন কি একটা কাজে। আমাকে বললেন–খালার সঙ্গে থেকো। তুমি আবার নেমে যেও না খালাকে একলা রেখে।
জানালার কাছে বসে আছি। আমার পাশে খালা। স্টেশনে চলমান মানুষজন একজন দু’জন করে জানালার কাছে এসে দাঁড়ান। উঁকিঝুঁকি মেরে একটু দেখতে চান। খালাকে চিনে ফেলেছেন তাঁরা।
ভিড়ের মানুষদের ভালোবাসার প্রতিউত্তরে খালা একবার দু’বার হাত নেড়ে তাঁর ভালোবাসা জানিয়েছেন। কিন্তু ভিড় কিছুতেই কমছে। বাড়তেই থাকে। এরমধ্যে ভিড়ের একজন আমাকে জিজ্ঞেস করলেন–তিনি কি তোমার মা হন?
এক মুহূর্তে দেরি না করে আমি বলেছিলাম–হ্যাঁ, মা হন।
খালাম্মা শুনে ফেলেছিলেন। শুনে মিষ্টি একটা হাসিতে আদর করে দিয়েছিলেন মাথায় চুলে হাত বুলিয়ে।
০৪
সেবার গেছি কক্সবাজারে দাদাভাই আর খালার সঙ্গে। মোটামুটি সাত আটজনের একটা দল। তখন মাত্র একটা কি দু’টো রেস্ট হাউস, পর্যটনের। আমরা যেটায় উঠেছি শৈবাল অথবা অন্য কোনো নাম ছিলো তার। বিস্তীর্ণ এলাকা জুরে ছিলো তার অবস্থান।
দুপুরে পৌঁছে বিশাল একটা খাওয়া দাওয়া হলো। তারপর রেস্ট নেবার পালা। পাশাপাশি অনেক গুলো কক্ষে অল্প কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে দাদাভাইয়ের নেতৃত্বে আমরা গেলাম সী বিচে। খালা মানে কবি সুফিয়া কামালকে বিশ্রামে রেখে। খুব মজা করলাম আমরা সী বিচে। সৈকতে লাফালাম। লোনা পানিতে ঝাঁপালাম। সৈকতের বালুতে কাঁকড়াগুলোকে দৌড়ের ওপর রেখে রীতিমতো ত্রাসের সৃষ্টি করলাম কাঁকড়ামহলে। ঝিনুকের একটা মালা কিনলাম আমি শার্লির জন্যে। মেয়েটা আমাকে খুব ভালোবাসে।
সন্ধ্যার খানিক আগে আমরা ফিরে এলাম শৈবাল-এ। গাড়ি থেকে নেমে যে যার রুমের দিকে গেলাম পরিচ্ছন্নতা অভিযানে শামিল হতে।
কিছুক্ষণ পরে দাদাভাই আমাকে ডেকে বললেন–দেখো কী কাণ্ড! খালার কষ্ট হবে ভেবে তাঁকে রেখেই আমরা চলে গেছি। খালা তো ভীষণ রেগে আছেন। কোনো কথাই বলা যাচ্ছে না তাঁকে। তোমাকে খুব আদর করেন খালা। দেখো তো খালার মান ভাঙাতে পারো কী না।
পায়ে পায়ে আমি ঢুকলাম খালার কক্ষে। আমার দিকে একবার চেয়ে খালা তাঁর দৃষ্টি প্রসারিত করলেন জানালায়। দূরবর্তী বিচটার দিকে। আমি বললাম–খালা…
আমাকে হাত ইশারায় থামিয়ে দিলেন তিনি–কোনো কথা বলিস না। আমাকে রেখেই তোরা চলে গেলি! একবারও ভাবলি না আমারও সমুদ্র দেখতে ইচ্ছে করতে পারে! আমি কি এতোটাই বুড়ো হয়ে গেছি যে আমাকে সী বিচে নেয়া যায় না! তোরা নিজেরা নিজেরা দেখলি! খালার কথা তোদের মনেই হলো না!
খালার কণ্ঠে সমুদ্র সমান অভিমান। খালা যেনো এক চঞ্চল কিশোরী!
আমি খালার দু’টো হাত ধরে দাঁড় করালাম–চলেন খালা আবার আমরা সী বিচে যাবো আপনার সঙ্গে।
অভিমানী মুখে খালা বাঁধা দিতে চাইলেন–না না। দরকার নেই। যাবো না আমি তোদের সঙ্গে। তোরা কেউ ভালোবাসিস না আমাকে!
খালাকে টানতে টানতে আমি নিয়ে এলাম বারান্দায়–দাদাভাই চলেন খালাকে নিয়ে আবার আমরা সী বিচে যাবো।
একটা অপরাধীর ভঙ্গিতে কেমন একটা ধরা পড়া কিশোরের মতো কাঁচুমাচু অবস্থায় বেরিয়ে এলেন দাদাভাই। আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি একটা হাসি উপহার দিলেন। সেই হাসির অনুবাদ–শাবাশ!
হইচই করতে করতে আমরা সী বিচে গেলাম। সী বিচের ঝিনুক-সামগ্রীর দোকানগুলোয় ততোক্ষণে জ্বলে উঠেছে আলো। সন্ধ্যার সমুদ্রের সৌন্দর্য্যটাও দুর্দান্ত। আমার হাত ধরে সী বিচে হাঁটলেন খালা। সমুদ্রের শেষ সীমানাটা দেখা যাচ্ছে না অন্ধকার বলে। একটা শোঁ শোঁ গর্জন কেমন একটা মায়াময় পরিবেশের সৃষ্টি করেছে। আলো আঁধারীর সেই পরিবেশটা শুধু মায়াময় নয়, কেমন রহস্যময়ও।
আমি এমন জায়গায় দাঁড় করালাম খালাকে যাতে সমুদ্রের ঢেউ এসে আছড়ে পড়ে তাঁর পায়ে। শাড়িটা সামান্য ওপরে তুলে ঢেউয়ের ঝাপটায় পা ভেজালেন খালা। একবার দু’বার বারবার। তাঁর শাদা সুতি শাড়ির আঁচলটা উড়ছিলো সমুদ্রের লোনা হাওয়ায়। খালাকে মনে হচ্ছিলো একটা পরী।
শাদা ডানাওয়ালা একটা পরী। খানিক আগে খুব অভিমান করেছিলো পরীটা। কিন্তু এখন সব অভিমান ভুলে গেছে সমুদ্রের জল ঢেউ আর হাওয়ার জাদুতে।
অটোয়া ২১ নভেম্বর ২০২০
[ক্যাপশন/ তাঁর ধানমণ্ডির বাসভবন ‘সাঁঝের মায়া’য় কবি সুফিয়া কামালের সঙ্গে তখনকার তরুণ ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটন। আলোকচিত্র/ বাতেন সিরাজ। সময়কাল ১৯৮৮]
Image may contain: 2 people, people sitting and wedding

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..