“যতদূর বাংলা ভাষা, ততদূর এই বাংলাদেশ”
জাতি সত্তার কবি ও বর্তমান বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক
মুহম্মদ নূরুল হুদা
আজ তাঁর ৭৩তম জন্মোৎসব
শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা।
জন্মঃ ৩০ সেপ্টেম্বর- ১৯৪৯ ইং
(কক্সবাজার)
সত্তর দশকের একজন বাংলাদেশী প্রথিতযশা কবি। একই সঙ্গে তিনি একজন ঔপন্যাসিক, সাহিত্য-সমালোচক ও অনুবাদক।
যারা মানুষটিকে খুব কাছ থেকে চিনেন এবং জানেন, তাদেরকে কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলার নেই।
তবে যারা এখনো কবির সান্নিধ্য লাভ করেননি, তাদের উদ্দেশে না বললেই নয়। কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা শুধু একজন কবিই নন, তিনি সাহিত্যের শিকড় ও শিক্ষকও বটে। সমকালীন বাঙালি কবিদের মধ্যে যার কবিতায় ছন্দ ও মাত্রার ব্যবহার,
বাংলা কবিতাকে বিশ্ব দরবারে অলংকৃত করে চলেছে।
এখনো যারা কবিতায় ছন্দ-মাত্রার ব্যবহার সঠিক ভাবে প্রয়োগ ঘটাতে সক্ষম নন তাদের অনুরোধ করব,
কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা নিয়মিত ছন্দের কলাকৌশল ও মাত্রার ব্যবহারের ক্লাস নিয়ে থাকেন, আপনারা কবির সাথে যোগাযোগ করে (গ্রুপ ভিত্তিক) সেটা রপ্ত করে নিতে পারেন। বাংলাদেশে একমাত্র কবি,
যিনি সৃজনশীল মন নিয়ে সাহিত্য চর্চার শিক্ষার্থীদের সঠিক শিক্ষা প্রদান করে সেবা করে থাকেন। তিনি মানুষ হিসেবে যতটা বড় মনের, ঠিক ততটাই সাহিত্যাঙ্গনে মঙ্গল চান নবীনদের পদচারণে।
বাংলার কবিতার এই জীবন্ত কিংবদন্তী কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা আমাদের জাতির অহংকার এবং বাংলা সাহিত্যের অলংকার।
তাই তো তিনি আজ আমাদের জাতি সত্তার কবি।
ব্যক্তি মুহম্মদ নূরুল হুদা বাস্তব জীবনে খুবই রসিক ও প্রাণবন্ত একজন মানুষ।
মহান আল্লাহ পাক কবিকে দীর্ঘজীবন দান করুক এবং আমাদের মাঝে শত বছর বাঁচিয়ে রাখুক।
আমি কবির একটি কাব্যগ্রন্থের প্রকাশক হতে পেরে গর্বিত।
২০১৯ একুশে গ্রন্থমেলা উপলক্ষ্যে বাসাপ বর্ণবিন্যাস থেকে প্রকাশিত হয়েছে, কবির কাব্যগ্রন্থ- “হাজার নদীর দেশ”।
বইটি সংগ্রহ করতে রকমারিতে সার্চ দিয়ে অর্ডার করুন।
তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা অর্ধ শতাধিক। ১৯৮৮ সালে বাংলা কবিতায় উল্লেখযোগ্য অবাদনের জন্য তাকে বাংলা একাডেমি পুরস্কার প্রদান করা হয়।
এছাড়াও তিনি বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
কবির সাহিত্যকর্মঃ
জন্মজাতি (১৯৯৪), মৈনপাহাড় (১৯৯৫)
ব্যাঙ কুমার, চাঁদের বুড়ো চাঁদের বাড়ি, ছোটদের বেগম রোকেয়া, ছোটদের মাইকেল মধুসূদন দত্ত, ছোটদের রবীন্দ্র জীবনী, ছোটদের রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ, দেখা হলে একা হয়ে যাই, রাজার পোশাক, রবীন্দ্র প্রকৃতি ও অন্যান্য, সাত্ ও অন্যান্য, সাত ভাই চম্পা, তুমি যদি জালদাস আমি জালদাসি, শুক্লা শাকুন্তালা, আমি একটি খাস প্রজাপাত্র চাই, শোভাজাত্রা দ্রাবিড়াভ প্রতি, মাটির নিচে কাট কয়লা হাজার বছর কাতর, আমরা তামাটে জাতি, বার বছরের গল্প, তেলাপোকা, স্বাধীন জাতির স্বাধীন পিতা, হুদা-কথা, আমিও রোহিঙ্গা শিশু, হাজার নদীর দেশ, কবিতার ভবিষ্যৎ ও অন্যান্য প্রসঙ্গ, কবিতার কৌশল, দুটি লাল পাখি ও সব্যসাচী
পুরস্কার ও সম্মাননাঃ
# যশোর সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার (১৯৮৩)
# আবুল হাসান কবিতা পুরস্কার (১৯৮৩)
# আলাওল পুরস্কার (১৯৮৫)
আওয়ামী শিল্প সংবর্ধনা (১৯৮৭)
# বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮৮)
# কক্সবাজার পদক (১৯৮৯)
# মহাদিগন্ত সহিত্য পু্রস্কার, কোলকাতা (২০০৭)
কবির বিখ্যাত কবিতাগুলির একটি আপনাদের জন্যঃ
যতদূর বাংলা ভাষা
কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা
যতদূর বাংলা ভাষা, ততদূর এই বাংলাদেশ।
দরিয়ানগরে জন্ম, পৃথিবীর সর্ব প্রান্ত আমার স্বদেশ।।
এ বাংলার হাটে মাঠে, ধানীরং কিষাণীর বাটে,
দিগন্তের মেঠোপথে, সাধু সন্ত অথবা বখাটে
নদী ও নারীর বাঁকে পাখপাখালির ঝাঁকে
হাজার বছর ধরে জীবনের আনন্দরা হাঁটে
শাম্পান ভাসায় তারা আঁশনাই দরিয়ার তরঙ্গে অশেষ–
যতদূর বাংলা ভাষা, ততদূর এই বাংলাদেশ।।
সাইবেরিয়ার শাদা বরফের টুকরো মুখে সিডনি টরেন্টো হয়ে
হাজার ডানার পাখি উড়ে যায় অতিদূর আমাজন বাঁকে,
বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে জগতের তিনভাগ জল খুঁটে খুঁটে
মাদাগাসকার ঘুরে এসে পলিস্রোতে তাহিতির ঘাটে
ভাটিয়ালী ভাওয়াইয়ার তাম্রবর্ণ সহোদর সহোদরা হাঁটে-
একতারা দোতারার সুরে সুরে আউলায় বাউলের আলুথালু কেশ–
যতদূর বাংলা ভাষা, ততদূর এই বাংলাদেশ।।
আমাকে চিনেছে লালকাঁকড়ার হানা, মালকাবানুর ডানা,
রূপচান্দা, লইট্টা আর ইলিশের কেউ,
উজান-ভাটির স্রোতে দরিয়ার মা-চিংড়ি, সূর্যাস্তের ঢেউ,
শক হূন আর্য আর অনার্যের পলল মানবস্রোতে
অনন্তর শান্তিবিশ্বে আমাকেই ডাকে-
সাদা-কালো-তামাটে মানুষ গায় মহুয়া মলুয়া পালা,
হাঁটে তারা মানবসাগরতীরে, গায়ে লাল-সবুজের বেশ —
যতদূর বাংলা ভাষা, ততদূর এই বাংলাদেশ।
আজ কবির ৭১তম জন্মোৎসবে কবির সুস্থ জীবন ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
__ মো. ওমর ফারুক
(সম্পাদক ও প্রকাশক)
__ বাসাপ বর্ণবিন্যাস
(শুদ্ধ শব্দের নান্দনিক গৃহ)
বাংলাবাজার, ঢাকা-১১০০
মুঠোফোনঃ ০১৭১২৯৯৭৩৩৩
Leave a Reply