আন্টি কে দেখছি ফোঁস ফোঁস করে কাঁদছে।কারন জানতে চাইতে-ই তিনি কান্নার প্রতি মনোযোগ আরো দুই গুন বাড়িয়ে দিলেন।এবার বিলাপ করতে লাগলেন-
দেশে কান্দে,
দশে কান্দে,
কান্দে আমার হিয়া,
তুমি থাকো কোন দুনিয়া।
জ্বী, আন্টি আসলে আমি এই মূহুর্তের ব্রেকিং নিউজ কিছুই জানি না। আন্টি দেশ -দশ কি বিষয় নিয়ে কাঁদছে?
যদিও আমার মোটেও কান্না পাচ্ছে না তারপরও কান্না কান্না ভাব চেহারায় ফুটাতে চাচ্ছি।
অপু বিশ্বাসের মতো এক টা মেয়ের সাথে সাকিব খান এইটা কি করল কও?
অপু আর আমার জীবনের দুঃখ একই,আমাদের কষ্টের জীবন,লেইখা শেষ করা যাইতো না।
সেদিন বাসা থেকে বের হতেই দেখলাম লাল আর কমলার মাঝা মাঝি একটা কটকটে রংয়ের লেহেঙ্গা,ভারী গহনা,মেকাপ নিয়ে বেশ দুঃখ-দুঃখ চেহার নিয়ে বের হচ্ছেন। আমাকে দেখে প্রাণ ফিরে পেলেন বলে মনেহলো।
তুমি ও একটা মেয়ে আমিও একটা মেয়ে তাই তুমিই আমার ছবি ভালো তুলতে পারবা। আন্টি ভারী মেকাপ-গেটাপ নিয়ে দু:খ ভরা মনে ছবি তুলতে চায়। কিন্তু তার ছেলেরা তা চায় না।
অবশেষে আমার তুলে দেয়া ছবি তার মনে ধরলো।
তিনি বললেন ছবির মতো ছবি একটা তুললেই হয়। সত্যি ছবিটা তে আন্টি যতটা দু:খী এক্সপ্রেশন দিয়েছেন তার চেয়ে দুই গুন দু:খী তাকে মনেহচ্ছে।
আমি বললাম, আন্টি এডিট করে দুই চোখে দুই ফোঁটা পানি দিয়ে দিলেই ছবি পারফেক্ট।
আমার দিকে গোল্লা-গোল্লা চোখে তাকিয়ে চলে গেলেন। তার এমন চাহনির কোন কারন আমি খুঁজে পাইনি।
তবে এটা বুঝতে পারলাম মানুষ সুখী হতে চায় আন্টি দুঃখ পেতে ভালোবাসে।
বেশ অনেকদিন আন্টির সাথে কোন দেখা নেই।
তবে ফেসবুকে তার দু:খ ভরা গানের কলি দিয়ে কমেন্টের কমতি নেই।
সব কিছুতেই দুঃখ খুঁজেপান।
বাচ্চা সহ এক লোকের ছবিতে তার কমেন্ট “তুমি নেংটা ছিলা ভালো ছিলা ভালো ছিলো শিশু কাল”।
এই কমেন্টে একটা এ্যাংরি রিয়েক্ট ছিলো আর ছিলো অগনিত হা..হা.. রিয়েক্ট।
এ্যাংরি রিয়েক্ট দিয়েছিলো ছবির লোক টি,হয়তো বেচারা বিরক্ত হয়েই দিয়ে ছিলো।
বার্থডের ছবিতেও তিনি দুঃখ খুঁজে পান।বেচারী বার্থডে গার্লের সারাদিনের আনন্দ, দুঃখে ভরিয়ে দিলেন আন্টি “জন্মিলে মরিতে হবে ” কমেন্টর মাধ্যমে।
তার দুঃখে ভরা গানের কলি শুধু এক মূহুর্তের সুখ নয় সারা জীবনের শান্তিও কেড়ে নিয়েছে পাশের ফ্ল্যাটের ভাইয়ের।
বেচারা ফেবুতে বিয়ের ছবি দিয়েছে।
কনে মিটিমিটি হাসছে পাশে ভাই বত্রিশ দন্ত প্রকাশ করে বিশ্বজয়ী বিকট হাসি দিয়ে পাশে বসে আছে।
এমন খুশি ভরা ছবিতেও আন্টি দুঃখ খুঁজে পেলেন “রঙ্গের দুনিয়া তোরে চাইনা,দিবা নিশি ভাবি যারে তারে যদি পাই না।”
ব্যাস,এরপর ভাইটির সাথে কি কি হয়েছে বলার অবকাশ রাখেনা। নাদুস-নুদুস ভাইটি কে প্রায়ই দেখি ওষ্ঠাগত প্রাণ নিয়ে অফিস যায় আর ভাবির বিকট শব্দে আশেপাশের ঘুম ভাঙ্গে।
আন্টি হয়তো বুঝতে পেরেছেন একটি কমেন্ট সারা জীবনের কান্না। তাই তিনি কমেন্ট করা প্রায় বন্ধ করে দিয়ে ফেবুতে দুঃখে ভরা গানের কলি স্ট্যাটাস দিতে লাগলেন।
একটা স্ট্যাটাস মনেআছে-
“এই পৃথিবীর পরে কত ফুল ফোঁটে আর ঝরে”।
কেউ একজন কমেন্ট করলো-
সারদিন ফেবুতে থাকলে এরচেয়ে ভালো কি আর হবে?
আন্টির উত্তর “বেয়াদব তুই কোনদিন মানুষ হতে পারবি না”।
সেই বেয়াদব মানুষ হয়েছে কি না জানি না।তবে আন্টির মতে, সেই বেয়াদবই আন্টি কে ভাইরাল করেছে।
একদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গলো আন্টির কান্নার শব্দে। তবে এই কান্নার স্বর টা ছিলো একটু অন্যরকম,আফসোস মেশানো কান্না।
বললাম আন্টি কি সমস্যা?
তার মোবাইলটা চোখের সামনে ধরলো,
ক্যাপশন-
“আরো বেশি কাঁদালে উড়াল দেবো আকাশে”।
নিচে আমার তোলে দেয়া ছবি, আমার কথা মতো দুই চোখে দুই ফোঁটা জল।
তবে ছবি টা জমিনে না আসমানে আবার পিছনে দুইটা বিশাল বাজ পাখির ডানা। ভাবতে লাগলাম ছবি তোলার সময় আন্টির ছিলো বাহারি রংয়ের চুড়ি আর মেহদী রাঙানো হাত, সেই হাত পালক সহ ডানা হলো কেমনে?
পরে বুঝলাম, এগুলো এডিট করা যায়।
ছবির এডিটর আপ্রাণ চেষ্টা করেছে ক্যাপশন সাথে কাজের মিল রাখতে।
বিভিন্ন পেইজে ভাইরাল হয়েছে ছবি তবে একটা ও কান্নার রিয়েক্ট নাই সব গুলাই হা..হা.রিয়েক্ট। আন্টির কান্নার কারন তিনি এতো কষ্টের একটা ছবি দিয়েছেন। এত কষ্টের গানের কলি ব্যাবহার করেছেন অথচ তার দু:খে কেউ দুঃখী হয়ে একটা সেড রিয়েক্ট দিলো না।
এ জাতীয় আরো খবর..
Leave a Reply