“এই, এই প্রহেলি, তোমার চুলে এতো কিসের গন্ধ। সম্পূর্ণ ঘর ছড়িয়ে গেছে। কেমন একটা উদ্ভট, বাজে গন্ধ!
কথাগুলো একপ্রকার বিরক্ত হয়েই বললাম।বউ আমার বিকেলের নাস্তা তৈরি করছিলো।বারান্দায় এসে হকচকানো চেহারা বানিয়ে বলল,
-সায়েদ, এটা তো আমলকী তেলের ঘ্রাণ!
-ঘ্রাণ! ঘ্রাণ মাই ফুট। কি বাজে গন্ধ! এমন গন্ধ মাখা তেল মাথায় কেন নেও? ছেহ্।
প্রহেলিকা এবার থমকে দাঁড়ালো।স্বামী তার এসব বলে কী!অবশ্য না বলা-ই বা কী আছে!সুগন্ধি তেল তার একদমই পছন্দ নয়। স্ত্রী বা কী করতে পারে, চুলে তেল না দিয়ে তো থাকা যায় না!
– নেই কেন মানে? মাথায় তেল না নিয়ে থাকা যায়?
– হ্যাঁ, তো মাথায় নেও তেল। সমস্যা কী!চুলে না নিলেই হয়।তুমি জানো না, এমন গন্ধ আমার একদমই সহ্য হয় না!সারা বাড়ি তেলের গন্ধে থাকা যাচ্ছে না!
-আশ্চর্য সায়েদ! তুমি এমন ব্যবহার করছ কেন? তুমি বুঝ না, মাথায় তেল নিলে চুলে এমনি ছড়িয়ে যায়।
– প্রহেলি, এতে না বুঝার কি আছে! আমি তো আর আবাল ছেলে নই। এই তেল না নিলেই তো হয়।যত্তসব।
প্রহেলিকা এবার তেজ দেখিয়ে বলল,
-এই শুন, এই তেল নিয়েই না তোমার বউয়ের এড সুন্দর চুল হয়েছে। মনে করো, লম্বা চুল দেখেই হুমড়ি খেয়ে পরেছিলে বিয়ে করার জন্য!
সায়েদ এবার একটু বেশি চটে গেল। নিজের বউ তাকে টিজ করে কথা বলছে।
-এই এই কি বলছ এসব। ভদ্র হয়ে কথা বলো। আর তাছাড়া, এই লম্বা চুল দিয়ে হবেটা কী শুনি?
-কী হবে মানে?
– হ্যাঁ, কী হবে? কি করবা ঐ চুল দিয়ে? ঐ তো পাশের বাসার ভাবীর কি সুন্দর ছোট চুল। দেখতেও তো সুন্দর দেখা যায়।
– কী!কী বললা তুমি।আবার বলো? হুহ্, তোমার ঐ পাশের বাসার সুন্দরী ভাবীও আহ্লাদ করে ন্যাকা সুরে বলে, ভাবী আপনার মাথার চুল মাশাল্লাহ কত লম্বা। এমন চুল কজনের আছে। আমার চুল তো ঘাড় থেকে নামতেই চায় না!
প্রহেলির চড়া কথায় সায়েদ এবার দমে গিয়ে বলল,
– আমি তো সামান্য একটা কথা বললাম, তুমি এই নিয়ে এভাবে কথা বাড়াবে! আমি কথা বললেই দোষ!
– হ্যাঁ, দোষই তো। তুমি সব সময় কেন পাশের বাসার ভাবীকে নিয়ে টানাটানি করো শুনি!
-লও, ঠেলা। এতেও দোষ। আচ্ছা আমি না বুঝিনা তোমরা মেয়েরা কি জিনিস দিয়ে তৈরি!
-এই এই, কথা একদম ঘুরাবা না। কি বলতে চাও, স্পষ্ট বলো, তোমার এই ঘুরানো পেচানো কথা আমার বহু জানা আছে!
– শুনো বউ তোমাকে বুঝানো ক্ষমতা আমার নাই। এখানে শালীকা টানলে কিছুই বলতা না, পাশের একজনকে টানলেই দোষ!
– বাহ্,এখন আমার বোনকেও নিয়ে যুক্তি শুনাবা!
সায়েদ এবার প্রহেলির হাত ধরে নরম সুরে বলল,
-দেখো, প্রহেলি। আমরা খামোখা কথা বাড়াচ্ছি। শুরু তো হয়েছে তেল নিয়ে, আমরা তেল নিয়েই থাকি!
-হ্যাঁ, ঘুরেফিরে তো আমার তেলের পিছনেই লাগো তুমি।বুঝি না আমি!
-তো তুমি বুঝো না, আমি লেখক মানুষ। নিজের বউ নিয়ে দুটো মিষ্টি কথা লিখব৷ সে উপায় রেখেছ তুমি!
– তা লিখবে কীভাবে? বউয়ের দিকে নজর দিলে না লিখতে পারবে!
– এই ছোট বিষয়েও ঝগড়া শুরু করলে! হায়রে শখের বউ, তুমিই বলে দাও কি লিখব আমি, আমার বউয়ের চুলে আমলকী তেলের গন্ধ।
বউ কটকটিয়ে তাকালেই বলি, সরি ঘ্রাণ!
– লিখলেই বা কী দোষ!
– কিহ্! এসব লিখব। প্রকাশক আমায় বরণ করে নিবে ভাবছ!
বউ এবার সামনে এসে টেবিলে ধপাৎ করে চায়ের কাপটা রেখে কাঁদোকাঁদো সুরে বলল,
– হ্যাঁ৷ যত দোষ তো আমার!আমার তো কোনো যোগ্যতাই নাই তোমার বউ হওয়ার। তা তোমার গ্রুপে এমন কোনো মেয়ে দেখাতে পারবে তোমার বউয়ের মত!
– ওহ হো! এটাই বাকী ছিলো এখন। সামান্য একটা কথা বুঝতে চাও না, আবার গ্রুপের মেয়েদের টানছ!
– আমি না তুমি টানছ। তুমি সব সময় আমার সাথে এমন করো!
-করি মানে, কী করি!
বউ এবার নাক টানছে। বউটা এমনি। বেশী কথা বলতে পারে না। তার আগেই চোখের জলে ভেসে যায়। ন্যাকা কান্নায় একবারে ঘর ভাসিয়ে দিবে!হায়রে শখের বউ!
সায়েদ স্থীর হয়ে বলল,
– প্রহেলি, তুমি বুঝ না কেন? আমার চারপাশে কাব্যিক দৃষ্টিকোণ প্রকাশ না হলে আমি লিখব কেমন মনে!
– ওহ্, বুঝেছি, সুন্দরী বউ পেয়েও প্রশান্তি মেলেনি! গ্রুপের মেয়েদেরও চাই!
-হায়রে বউ, তোমার থেকে তো আমার গ্রুপের মেয়েরা আমায় ভালো বুঝে!প্লিজ, দয়া করে আর কথা বাড়িও না তো!
-হ্যাঁ, হ্যাঁ, জানি জানি। সব জানি। লেখালেখি তো নয়। গ্রুপের মেয়েদের ভালোবাসা পাওয়া আসল কাহিনি। বিয়ের আগেই যত ভালোবাসা দেখাতে।এখন তো পুরোনো হয়ে গেছি, তাই না! যাও না, গ্রুপের মেয়েদের গিয়ে বিয়ে করো।
সায়েদ ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে রইল। অবস্থা বেগতিক দেখে হতভম্ব হয় বলল,
– আর কতক্ষণ ঝগড়া করবে!
বউ আমার আবার ন্যাকা কান্না করে বলল,
– ঝগড়া তো সব সময় আমিই করি। আর তুমি বসে বসে গেলো!
বউ বারান্দা থেকে রুমে চলে গেল। সায়েদের মাথা এখন প্রচণ্ড গরম হয়ে আছে!ঝগড়া করতে একদমই পছন্দ করে না!
-হায়রে বউ। বিয়ের আগে কিল্লাই বুঝি নাই, বিয়ের পর বউরা তেল নিয়েও ঝগড়া করে। কিল্লাই বুঝি নাই!
বলো আল্লাহ!
বউ ঘর থেকে বলল,
– তা যাও না, গ্রুপের মেয়েদের বিয়ে করে নিয়ে আসো। দেখব কেমন মাথায় তুলে রাখে হুহ্!
– হ্যাঁ, করবই তো। গ্রুপের সেরা সুন্দরীকে বিয়ে করে আনব।এমনিতে দুই তিনটা বিয়ে না করলে লেখক হওয়া যায় না!
সন্ধ্যা সাতটা বাজে,
বউয়ের আর সারা-শব্দ পাইনি। আমিও আর ঘরে ঢুকিনি। মাথা এখন ঠাণ্ডা, সুন্দর পরিবেশ।লেখায় মনোনিবেশ করা যাক।
বউ দেখি পাশে এসে বসল হঠাৎ। বউ কিন্তু আমার খারাপ না, নম্রভদ্র, সুন্দরী। তবে মাথায় তেল না ছাড়া নিয়েই যত কেচাল!
ও মা, বউ দেখি কান্না করে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে!এই কান্না যে ন্যাকামী কান্না নয়, বুঝাই যাচ্ছে।
-এই বউ, কাঁদছো কেন?
বউ আমার কান্নার বেগ বাড়িয়ে দিয়ে বুকে ঝাপটে পড়ল।
-তুমি সত্যি ই গ্রুপের কাউকে বিয়ে করবে।
বউ আমার ভয় পেয়েছে।আহ্, কি শান্তি! খুশি না হয়ে পারা যায়। ঔষধে যে কাজ করেছে।
বউকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
– ধূর, বোকা মেয়ে।আমি তো এমনিই বলেছি।
– তাহলে যে বললা, ওরা তোমাকে আমার থেকে বেশী ভালোবাসে!
– হায়রে বউ, ওরা তো আমার গল্পকে ভালোবাসে। আর এই বউটা যে আমার আমিকে ভালোবাসে।
-সত্যি তো।
-সত্যি, এই আমার একমাত্র বউয়ের কছম।
বউয়ের চুল থেকে এত সুন্দর স্মেল আসছে কেন?
এই পাগলী মাথায় স্যাম্পু করলে কেন?
বউ নাক টেনে টেনে বলে,
– বারে নাহলে যে বলতে, এই সরো সরো, তোমার চুলের তেলে আমার পাঠিকার দেয়া শার্টটা নষ্ট হয়ে যাবে।
– হা হা হা, হায়রে বউ। যাও, আর কখনো কিছু বলব না, শুধু ঐ তেলের গন্ধ যেন আমার নাক পর্যন্ত না আসে!
বউ চিমটি কেটে বলল,
– ওটা তেলের ঘ্রাণ!
-আউচ।আচ্ছা , ঘ্রাণ!
মনে মনে বললাম, ঘ্রাণ না ছাই, কি বিচ্ছ্রি গন্ধ! ওয়াক।
নেহাৎ বউটাকে ভালোবাসি! তাই এবারের মত ঝগড়ায় গলা গুটিয়ে নিলাম!
এ জাতীয় আরো খবর..
Leave a Reply