আমার মতো অবুঝ মায়েদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা।
আমি আবার বেশি কথাবলা পছন্দ করি না,
সে কারণে প্যাচাল না-পেড়ে আসলকথায় আসি।
ঘরে যাদের তের-চৌদ্দ বছরের পুত্র আছে তারাই জানে কী প্যারা ! দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টাও যদি গেইম খেলতে দেয়া হয় তবুও তাদের মন ভরে না। আমার ছেলেকে গত আট/নয়মাস আগে তার ক্লাস এবং বিনোদনের জন্য শর্তসাপেক্ষে একখানা Gaming Laptop কিনে দিয়েছিলাম। করোনার কারনে তাদের আরো সুবিধা হয়েছে। কোথাও বের হতে না-পারায় দিনরাত চোখ দুটো হয় মোবাইলে না-হয় কম্পিউটারের মনিটরে , চোখের পলক ফেলারও সময় নেই তাদের। নাওয়া-খাওয়া, পড়াশুনা, ঘুম ইত্যাদিতে অনিয়ম হচ্ছিল, আর মায়ের গলা ভাঙছিলো চিৎকার করে। এমন অবস্থা তার যে Laptop দু-বার নিয়ে লুকিয়ে রেখেছিলাম কিছুদিনের জন্য, কিন্তু সে কথা শুনবে বলায় তাকে আবার দিয়ে দিই। ঘটনার দিন তার স্কুল ছুটি, সে সকাল থেকে গেইম খেলা শুরু করছে, ছুটির দিন বলে কথা, একটা কথাও তার কানঅবধি পৌঁছাতে পারছিলাম না, তারপর বাসার কাজে আবার বাইরে যেতে হবে। এদিকে আমার মাথার মগজ তো ফুটছে
। ছেলেকে বললাম খেলে নে মনের মতো, আমি বাইরে থেকে এসে তোর Laptop আছাড় দিয়ে ভাঙবো, অন্যকথা না শুনলেও এ কথা তার কানে খুব ভালোভাবে পৌছেছিল । তারপর আমার প্রাণপ্রিয় স্বামীকে নিয়ে বেরিয়ে গেলাম।
ঘণ্টা দুয়েক পর বাসায় ফিরে যা দেখলাম তা ইতিহাস হয়ে রবে আমার জীবনে। সারা ঘরময় কম্পিউটারের Parts ছড়ানো ছিটানো, আমি হা-করে দাড়িয়ে থাকলাম, কী করবো কী বলবো বুঝতেই পারছিলাম না। নীরবতা ভেঙে চিৎকার দিলাম কী করেছো এগুলো! !? পুত্র আমার খুবই শান্তকণ্ঠে জবাব দিলো – “তুমি বলেছিলে বাসায় ফিরে আমার ল্যাপটপ ভেঙে ফেলবে আর ভেঙে ফেললে সব কিছু নষ্ট হয়ে যেত সে কারনে আমি সব parts খুলে বাপির ( বাবার) কম্পিউটার upgrade করেছি”।
বেশকিছুদিন আগেই সে তার বাবার কম্পিউটারটি আলাদা আলাদা করে parts কিনে assemble করেছিল। আমি হাত উঠিয়েছিলাম ছেলের দিকে যাবার আগেই ছেলের বাপে আমার হাতখান ধরে বললো শান্ত হও, এতটুকু ছেলের creativity দেখো আমি তো অবাক হয়ে যাচ্ছি এটা দেখে। আর দোষ তোমারও আছে ওকে কেন বললে ল্যাপট্প ভেঙে ফেলবে, ছোট মানুষ সে তো বুঝতে পারেনি যে তুমি ভয় দেখাতে এটা বলেছো।
ও আল্লাহ-গো আল্লাহ, তারপর কয়েক রাত আমার হঠাৎ হঠাৎ ঘুম ভেঙে যেত এই কষ্টে । দয়াকরে আর উপদেশ বাণী দিবেন না কেউ, অনেক শুনেছি। তবে উপরের ঘটনা হতে দুটি শিক্ষা পেয়েছি –
*আমাদের সন্তানদেরকে ভয় দেখানোর জন্য এমন কিছু বলা উচিত নয় যা আমরা কখনই করবো না
।
*আর আমার বরের ভাষ্যমতে মাঝেমাঝে এমন ঘটনা ঘটতে দিতে হয়, তা হলে বাচ্চাদের Creativity বাড়ে বা দেখা যায়।
এ জাতীয় আরো খবর..
Leave a Reply