1. banglamailnews72@gmail.com : banglamailnews : Zakir Khan
মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:১৪ অপরাহ্ন

# মায়ার সংসার ### কামরুন নাহার মিশু।

  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২১
  • ২৮১ বার
ব্যাগ গুছিয়ে নিয়েছি রাতেই। আমি আজ পালাব। অনেক দূরে। তবে কতদূর সেটা বলতে পারব না। কারণ গন্তব্য জানা নেই। শুধু ভোরের আলো ফোটার জন্য অপেক্ষা করছি। মাথার উপর কত বিশাল আকাশ, পায়ের নিচে কত শত মৃত্তিকা কোনো এক জায়গায় একটা ঠাঁই করে নেবোই।
ভালো লাগে না এই ঘর, সংসার, চেনা পরিবেশ কোনো কিছুই । আমি আসলে জীবন থেকে পালিয়ে যাচ্ছি। অনেক আগেই যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ঐ যে মায়া! নিজের হাতে গড়া সংসারের মায়া ছাড়তে পারিনি।
ফোট ফোট লাল সাদা মেশানো রংয়ের মুরগিটা ডিম পেড়েছে। ঠিক মতো ডিমে তা না দিতে পারলে তো ছানা হবে না। তাহলে তো তার কাপালও আমার মতো!
মুরগির ছানার অপেক্ষায় একবার এমনি করে ব্যাগ গুছিয়েও যাওয়া হয়নি। আজ আর কোনো মোহ মায়া আমাকে আটকাতে পারবে না।
আমি শায়লা। হতভাগী শায়লা। যে বিয়ের আঠারো বছরেও স্বামীকে বাবা ডাক শোনানোর মতো যোগ্য হতে পারিনি।
আর আমি! আমি তো মা হয়েছি। হয়তো কোনো সন্তান গর্ভে ধারন করতে পারিনি। বোনের ছেলের মা, ভাইয়ের মেয়ের মা, ভাসুরের ছেলের মা, ননদের ছেলের মা।
নিজের সন্তানের মতো করেই ওদের আদর করেছি,যত্ন করেছি, আলগে রেখেছি। কখনো কখনো শাসনও করেছি। সেজন্য মাতৃত্বের হাহাকার আমার নেই।
সব সন্তানের মা হয়ে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতে চেয়েছি। কারণ শুধু আমি একা নই। যুগযুগ ধরে বহু নিঃসন্তান দম্পতি পৃথিবীতে আছে, ছিল, থাকবে। কারণ সন্তান সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত এক নেয়ামত। এই নেয়ামত, তিনি যাকে খুশি দেবেন, যাকে খুশি দেবেন না। তাতে তো আমার কোনো হাত নেই।
অথচ পুরুষের নিজের সন্তান চাই। নিজের ঔরষজাত সন্তান। সেজন্য বিয়ের দুই বছর পর যখন জানতে পারলেন, পিতৃত্বের স্বাদ গ্রহন করতে না পারার ব্যর্থতা আমার, তখনই বদলে গেলেন। এমন বদলে গেলেন, যে বাকি ষোলো বছর আমি তার কুলই স্পর্শ করতে পারিনি।
আমি শিকড়বিহীন পরগাছার মতো করে মাটি আঁকড়ে একটা সম্পর্কের মিথ্যা পরিচয় বহন করে এতদিন পড়ে ছিলাম।
আজ আর নয়। সকালের আলো ফুটলে আজ ঘরে নতুন বউ আসবে। অন্যের চোখের বালি হয়ে, শুধু মায়ায় জড়িয়ে আর পড়ে থাকতে ইচ্ছে করছে না।
যে লোকটা সতেরো বছরের আমাকে বিয়ে করে ঘরে এনেছিল, সবার অমতে। নাবালিকা আমাকে মা কলেজের গন্ডি পার না করে বিয়ে দিবেন না। অথচ সে আমাকে বিয়ে করার জন্য মায়ের সব শর্ত মেনেছিল। নিজের বিয়ে করা স্ত্রীকে কাছে পেয়েও কখনো ছুঁয়ে দেয়নি আঠারো বছর পূর্ন না হওয়ার জন্য।
শুধুমাত্র সন্তানের জন্য রাতারাতি সেই মানুষটাই অচেনা হয়ে গেলেন।
যাকে পাওয়ার জন্য কত আয়োজন করেছেন,তাকে পেয়েও আর সে আয়োজনের উপলক্ষ্য মনে করতে পারেননি।
তার মানে পুরুষরা সংসার গঠন করে, কাছে আসে, বিয়ে করে সব কেবল বংশবৃদ্ধি করার জন্য। তাদের ভালোবাসাটাসা বলতে কিছু নেই। সব ফেইক।
নিজের সাজানো ঘর, বাড়ি, সংসার রেখে বাইরে পড়ে থাকা, ঠিকমতো ঘরে না অাসা,অল্প তে রেগে যাওয়ার কারণ ছিল নিজের একটা সন্তান না থাকা। যেটা আমি দিতে পারিনি। আমার নিজের পছন্দের মানুষ বাউন্ডুলে হয়ে ঘুরে বেড়াক বাইরে বাইরে সেটাও চাইনি। তাই একদিন বুকে পাথর চাপা দিয়ে ঘটকের সাথে আলাপ করেছি, বিয়ের পাত্রীর জন্য।
নিজের স্বামীর বিয়ের জন্য পাত্রী। সহজভাবে বলতে গেলে নিজে পছন্দ করে নিজের জন্য সতীন নিয়ে এলাম।
ঘটককে চুড়ান্ত কথা দেয়ার আগে মুখোমুখি হলাম তার।
” আপনার সাথে জরুরী একটা কথা বলার আছে।”
“বল!”
” আমি আপনাকে সন্তানের বাবা ডাক শোনার স্বাদ দিতে চাই।”
তিনি তাচ্ছিল্যর হাসি হেসে বললেন
” সব ক্ষমতা সবার থাকে না।”
” থাকবে কী করে? সৃষ্টিকর্তা না দিলে!”
” তাহলে কি বলতে এসেছ?”
” আমি আপনাকে বিয়ে করাতে চাই।”
“কেন?”
” সন্তান ছাড়া একটা সংসার কেমন যেন ফলবিহীন বৃক্ষের মতো মনে হয়।”
দীর্ষশ্বাস ছেড়ে দিয়ে তিনি বললেন
” অনেকসময় সে বৃক্ষকেও মানুষ অকারণে বছরের পর বছর লালন করে, যত্ন করে।”
” তার মানে কী! ফলহীন বৃক্ষ কেটে ফেলে উচিত।”
“না, কাটবে কেন? বৃক্ষ ফল না দিতে পারলেও কাঠ দেয়, ছায়া দেয়। ফলের প্রয়োজন বেশি হলে নতুন গাছে লাগানো উচিত।”
আসলে আমার কেন যেন মনে হয়েছিল, এই বয়সে সে হয়তো আমার তাকে বিয়ে করানোর উদ্দ্যোগটাকে পাগলামী মনে করবে।
কারণ আমার মৃত ননশের একমাত্র ছেলে আমাদের কাছেই থাকে। আমাকে মামীমনি ডাকে। আমিও তাকে সন্তানের মতো স্নেহ করি। তাকে মামা ডাকলেও, বাবার মতোই শ্রদ্ধা করে।
পছন্দ করে বিয়ে করা স্ত্রী আছে, সন্তানতুল্য ভাগনে আছে। মধ্য বয়সে সন্তানের জন্য সে লোক আবার বিয়ে করতে চাইবেন না, আমার কেন যেন সন্দেহ হয়েছিল। অথচ আমার সন্দেহকে ভুল প্রমাণীত করে সে বলার আগেই বিয়ের জন্য রাজি হয়ে গেলেন। তার মানে কী? আমি এতদিন তার ঘাড়ে জোর করে চেপে বসে ছিলাম?
আমার আর বুঝতে অসুবিধা হয়নি, নতুন ফলবান বৃক্ষ বলতে তিনি কি বোঝাতে চেয়েছেন।
দিনেদিনে ঘটকের সাথে কথা বলে অবিবাহিত গরীর ঘরের সুন্দরী মেয়ের সাথে তার ব্যবস্থা করে দিলাম। এবং বিয়েও করিয়ে দিলাম।
আজ রাত তিনি নতুন বউয়ের সাথে নতুন শ্বশুর বাড়ি আছেন।
কাল সকালে যে কোনো সময় তিনি নতুন বউ নিয়ে ফিরে আসবেন। তাকে বিয়ে করার সময়ও শর্ত দেয়া হয়েছে। বছর ঘুরতেই তাকে সন্তানের মা হতে হবে।
সে সন্তানের মা হতে পারুক আর না পারুক। তাদের সাজানো সাংসারে আমি চোখের বালি হয়ে থাকতে চাই না।
সন্তান জন্ম দিতে না পেরে সংসারে অযোগ্য হয়ে পড়ে থাকা আমার ভালো লাগছে না।
দুইখানা শাড়ি, ব্লাউজ আর বিয়ের সময় একসাথে তোলা ফ্রেমে আটকানো ছবিটা ব্যাগে নিয়ে লুকিয়ে চলে এলাম বড় রাস্তার মোড়ে,পিছনে ফেলে রেখে আঠারো বছরের মায়ার সংসার। যার পুরোটাই মিথ্যা মায়ায় জড়ানো ছিল।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..