পদ্মা সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু হলে বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি ও ভোলা থেকে ঢাকায় যেতে সময় কমে যাবে প্রায় দেড় থেকে ২ ঘণ্টা। আর যাত্রীসেবার মানও বাড়বে কয়েকগুন।
কারণ হিসেবে পরিবহন মালিক ও চালকেরা বলেন, মাওয়া ফেরি ও সরু সড়কপথের কারণে এ অঞ্চলে বিলাসবহুল পরিবহন সংযোজন যারা এতদিন করতে পারেননি, তারা পদ্মাসেতু চালু হলেই বিনিয়োগ করবেন। আর এ বিনিয়োগকে সফল করে তুলতে এর পেছনে বিশেষ ভূমিকা রাখবে দক্ষিণাঞ্চলের পর্যটন শিল্প।
বাসচালক জাকির হোসেন বাংলানিউজকে, সমুদ্রসৈকত দেখতে ১২ থেকে ১৩ ঘণ্টা ব্যয় করে কষ্ট হলেও এখন মানুষ কক্সবাজার যাচ্ছেন। কিন্তু পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে পটুয়াখালীর কুয়াকাটার সমুদ্র সৈকতে ঢাকা থেকে যেতে সময় লাগবে মাত্র ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা। অর্থাৎ কক্সবাজারের থেকে অর্ধেকেরও কম সময় লাগবে কুয়াকাটায় আসতে। আবার বরিশাল, পিরোজপুর ও ঝালকাঠির ভাসমান বাজার অর্থাৎ ফ্লোটিং মার্কেট কিংবা শাপলার বিল দেখতে ঢাকা থেকে আসতে তেমন একটা সময়ের প্রয়োজন হবে না।
বরিশাল-মাওয়া রুটের বেসরকারি পরিবহনের বাসচালক মো. মাসুদ জানান, বরিশাল কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে ৫ থেকে ৬ স্থানের নির্ধারিত কাউন্টারে থেমে যাত্রীদের নিয়ে নির্ধারিত ৩ ঘন্টা ১০ মিনিটে কাওরাকান্দি (শরিয়তপুর প্রান্ত) যাচ্ছেন তারা। এরপর ওই বাসের যাত্রীকে আরও প্রায় আধঘণ্টা স্পিডবোটে অন্যথায় প্রায় ১ ঘণ্টা লঞ্চে চেপে ওপারে (মাওয়া) যেতে হচ্ছে। সেখান থেকে প্রায় দেড়ঘণ্টার বাস যাত্রায় ঢাকার সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড, যাত্রাবাড়ী কিংবা বাবুবাজারে পৌঁছাতে পারছেন যাত্রীরা। আর সময় লাগছে ৬ ঘণ্টা মতো। কিন্তু বরিশাল থেকে মাওয়া হয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে সরাসরি যাওয়া বাসগুলো আড়াই ঘণ্টার মধ্যে আর মাইক্রোবাসগুলো ২ থেকে সোয়া ২ ঘণ্টার মধ্যেই কাওরাকান্দি পৌঁছাচ্ছে। প্রাইভেট গাড়ির ক্ষেত্রে ২ থেকে সোয়া ২ ঘণ্টা লাগছে। এরপর ফেরি ও জোয়ার-ভাটা ভেদে মাওয়া প্রান্তে যেতে কখনও দেড়ঘণ্টা, আবার কখনও ২ঘণ্টা লাগছে। এরপর ১ ঘণ্টার সময়ের মধ্যে যাত্রাবাড়ী কিংবা সায়েদাবাদে পৌঁছে যাচ্ছে ওইসব গাড়ি।
তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে পদ্মা সেতু হয়ে গেলে সরাসরি বরিশাল থেকে ঢাকা যেতে (ঘণ্টায় ৬০কিলোমিটার) সময় লাগবে মাত্র ৩ থেকে সাড়ে ৩ ঘণ্টা। কারণ ৬ কিলোমিটারের পদ্মা সেতু পার থেকে মাত্র ১০ থেকে ১২ মিনিট লাগবে, যা এখন ফেরিতে লাগাচ্ছে দেড় থেকে ২ ঘণ্টা।
বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার দে বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে দক্ষিণাঞ্চলবাসীর প্রত্যাশা অনেক। এ সেতু হলে দক্ষিণাঞ্চলে খুব সহজেই বিলাসবহুল আসা-যাওয়া করতে পারবে। ফলে পদ্মা সেতু চালু হলে সড়কপথেও যাত্রীদের সেবার মান বাড়বে। সেই সঙ্গে বাস মালিক বা প্রতিষ্ঠানও এ অঞ্চলের জন্য নতুন করে বিনিয়োগ করবে।
এখন অনেক মালিক রয়েছেন যারা শুধু মাওয়া ও দৌলতদিয়ার ফেরির কারণে বরিশালে বিলাসবহুল গাড়ি নামাতে পারছেন না। কিন্তু পদ্মা সেতু হলে বরিশালের সঙ্গে সড়ক পথের যোগাযোগে ফেরি থাকছে না। ফলে পদ্মা সেতু হলে পরিবহন ব্যবসায় নতুনত্ব আসবে দক্ষিণাঞ্চলকে ঘিরে।
এছাড়া সড়কপথে যাতায়াতে সময়ও অনেক কম লাগবে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, এক্সপ্রেসওয়ে অর্থাৎ ভাঙ্গা গোলচত্বর থেকে কাঁঠালাড়ী ফেরিঘাটের দুরত্ব প্রায় ৩০ কিলোমিটার, যা বর্তমানে যেতে সময় লাগছে মাত্র ২০ মিনিট। আর বরিশালে থেকে পদ্মা সেতু হয়ে সায়েদাবাস বাস টার্মিনাল পর্যন্ত প্রায় ১৭৮ কিলোমিটার পথ যেতে ৩ ঘণ্টার বেশি সময় লাগবে না। সেক্ষেত্রে বর্তমান সময়ের চেয়ে কমপক্ষে ২ ঘণ্টা কম লাগবে। আর এতো অল্প সময়ে ঢাকায় যাওয়া-আসা করা সম্ভব হবে স্বপ্নের ওই সেতুর কারণে।
তবে যাত্রীসেবার মান পুরোপুরি বাড়াতে হলে ভাঙ্গার পর থেকে বরিশাল ও পটুয়াখালী হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্পের কাজ দ্রুত শুরু করার দাবি পরিবহন চালক-শ্রমিকদের। এতে যাত্রা আরও নিরাপদ হবে বলেও মনে করেন তারা।
Leave a Reply