প্রতি বছর গড়ে সোয়া ৩৩ কোটির বেশি পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করে সরকার। এ পরিমাণ বই বিশ্বের কোনো উন্নত রাষ্ট্রও শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করতে পারেনি। এজন্য বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের রোল মডেল।
জানা গেছে, ২০০৯ সালের আগে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে পড়ুয়া সব শিক্ষার্থী নতুন বই থেকে বঞ্চিত হতো। সাধারণত দুই-তিনটি নতুন বইয়ের সঙ্গে পুরনো বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া হতো। সব বই পেতে মার্চ পর্যন্ত সময় গড়িয়ে যেতো। ফলে শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ায় পিছিয়ে পড়তো।
এখন সময় বদলে গেছে। বছরের প্রথম দিন সব শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই তুলে দেয়ায় পড়ালেখায় গতি ফিরেছে। নতুন বই ও উপবৃত্তি দেয়ায় শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার কমে এসেছে। প্রাথমিকে প্রায় শতভাগ শিশুকে স্কুলে পাঠাচ্ছেন অভিভাবকরা। প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে জেন্ডার সমতা নিশ্চিত হয়েছে। প্রতিবছর বিনামূল্যের বিপুল বই ছাপাতে দেশীয় মুদ্রণ শিল্পও মহীরুহ আকার ধারণ করেছে। হাজার হাজার মানুষের নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে।
দেশের স্বাধীনতার ৫০ বছরে অন্যতম বৃহৎ অর্জন কোটি কোটি শিক্ষার্থীর মধ্যে বিনামূল্যে বই বিতরণ। ২০১০ শিক্ষাবর্ষ থেকে সব শিক্ষার্থীকে নতুন বই দেয়া শুরু হয়। প্রতি বছর গড়ে প্রায় সাড়ে চার কোটি শিক্ষার্থীদের মাঝে সোয়া ৩৩ কোটির বেশি পাঠ্যবই বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। গত ১২ বছরে এর ব্যতিক্রম হয়নি। ২০২০ সালে করোনা মহামারিতে সারাবিশ্ব যখন ঝুঁকির মুখে তখন সব শঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়ে ২০২১ শিক্ষাবর্ষে বছরের প্রথম দিনেই শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেয়া হয়েছে। এটি বিশ্বের কোনো উন্নত দেশ করতে পারেনি। এটি একটি বিশ্ব রেকর্ড।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্র জানায়, ২০১০ শিক্ষাবর্ষ থেকে ২০২১ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত মোট ১২ বছরে ৩৬৫ কোটি ৮৪ লাখ ৪৫ হাজার ৭৮১টি বিনামূল্যের বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ চলতি ২০২১ শিক্ষাবর্ষে প্রাক-প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত চার কোটি ১৬ লাখ ৫৫ হাজার ২২৬ জন শিক্ষার্থীকে ৩৪ কোটি ৩৬ লাখ ৬২ হাজার ৪১২টি বিনামূল্যের বই দেয়া হয়েছে।
সরকার ২০১৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে পাঁচটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিশুদের মাঝে তাদের নিজেদের ভাষায় বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ শুরু করেছে। চাকমা, মারমা, সাদ্রী, গারো ও ত্রিপুরা এ পাঁচ ভাষার শিশুদের জন্য প্রাক-প্রাথমিক স্তরে তাদের মাতৃভাষায় বই ছাপানো হয়। এছাড়া দৃষ্টি-প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদেরও বিনামূল্যে ব্রেইল বই দেয়া হচ্ছে।
শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বই বিতরণের বিষয়ে প্রায়ই বলেন, বাংলাদেশে যে সংখ্যক বই বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়, সেগুলো একটার সঙ্গে আরেকটা জোড়া লাগালে সারা পৃথিবী প্রদক্ষিণ করা যাবে।
এ জাতীয় আরো খবর..
Leave a Reply