অবিশ্বাস্য নয় সত্যি। সরকারী খরচে মাসিক মোটা অংকের ভাতাসহ প্রায় সাড়ে আট হাজার তরুণ-তরুণীকে ১৯ টি বিষয়ে ফ্রি প্রশিক্ষণ দিবে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের Skills for Employment Investment Program (SEIP) প্রকল্পের আওতায় বেসিস এ প্রশিক্ষণ দেবে।
বেসিস এর সভাপতি তানভির টি আহমেদ এই প্রতিবেদককে জানান, এ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বেকারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে।
যখন আমাদের আইসিটি শিল্পে বর্তমানের চেয়ে বেশি চাহিদা বেড়ে যাবে তখন এর আসন সংখ্যাও বাড়ানো হবে বলে তিনি জানান।
সদ্য সাবেক সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির জানান এই প্রকল্প বর্তমান আইসিটি শিল্পে যে চাহিদা আছে সে চাহিদা পুরোপুরি না মেটাতে পারলেও এ প্রশিক্ষনে বেশ কয়েকটি ভেন্ডর সার্টিফিকেটের ব্যাবস্থা করা হয়েছে যা ফ্রিল্যানসিং করার ক্ষেত্রে বেশ কাজে দিবে।
আর সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে আমরা বিনা মূল্যে ও মাসিক ভাতাসহ শিক্ষার্থীদের একটি বিশেষ গুণগত মান সম্পন্ন প্রশিক্ষণ দিতে পারছি বেকারদের জন্য যা বেশ সহায়তা করবে তাদের ক্যারিয়ার গড়ার ক্ষেত্রে বলে তিনি মনে করছেন।
এই প্রশিক্ষণ শেষে অবশ্যই শিক্ষার্থীদের চাকুরী পেতে বেশ সহায়তা করবে বলেও তিনি জানান।
বেসিস এর প্রশিক্ষণ উইং বেসিস ই্ন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি এন্ড ম্যনেজম্যান্ট (বিআটিএম) এর প্রধান কর্মকর্তা (সিইও) তালুকদার মোহাম্মদ শাব্বির জানান, এই প্রশিক্ষণের সাথে চাকরীর সুযোগও থাকছে। আমরা এই প্রশিক্ষণের আংশগ্রহনকারীদের বায়োডাটা আমাদের সকল সদস্য প্রতিষ্ঠানের কাছে পাঠিয়ে দেই যার ফলে আংশগ্রহনকারীদের চাকরী পাওয়ার সুযোগ অনেক।
পূর্বের যারা প্রশিক্ষাণার্থী ছিলেন সবাই চাকরীর সুযোগ পেয়েছেন বলেও তিনি জানান।
বেসিস-সিপ প্রজেক্ট ট্রান্স-৩ এর প্রধান সমন্বয়কারী ইন্জিনিয়ার মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান এই প্রতিবেদককে জনান এই প্রশিক্ষণে প্রায় আট হাজার আসন রয়েছে। এর মধ্যে তিনশ আসন রয়েছে শুধু আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সনদের (ভেন্ডর সার্টিফিকেশন) জন্য।
কোন কোন বিষয়ের উপর প্রশিক্ষণ হবে:
বেসিস-সিপ প্রজেক্ট ট্রান্স-৩ এর সমন্বয়কারী (প্রশিক্ষণ, নিয়ন্ত্রণ ও মূল্যায়ন) খালেদা মৌসুমী জানান, সর্বমোট ১৯টি বিষয়ের উপরে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। জানুয়ারী ২০২১ থেকে শুরু হয়েছে এ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম। চলবে ডিসেম্বর ২০২২ পর্যন্ত।
প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য
মৌসুমী আরও জানান, প্রশিক্ষণের মূল লক্ষ্য আইসিটি ক্ষাতে দেশের যুব সম্প্রদায়ের বড় একটা অংশকে কর্মক্ষম করে গড়ে তোলা। এর মধ্যে নারী কর্মী খাকবে ৩০ শতাংশ।
কারা পাবে
কারা পেতে পারেন এই প্রশিক্ষণ এই প্রশ্নের জবাবে খালেদা মৌসুমী এই প্রতিবেদককে জানান, প্রকল্পের মূল টার্গেট সমাজের অনগ্রসর যুব সম্প্রদায়। হতে পারে সে বেকার অথবা মিড-লেভেলের কর্মকর্তা, যারা প্রশিক্ষণ পেলে আরো দক্ষ হতে পারবে। যাদের কাজ করার মানসিকতা, শারীরিক শক্তি ও সামর্থ্য রয়েছে অথচ বেকার—এমন তরুণ-তরুণীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে গড়ে তোলা হবে। প্রকল্পের নিয়ম অনুসারে প্রশিক্ষণ শেষে চাকরি পেতে সহায়তা করা হচ্ছে। ভাতাসহ বিশেষ বৃত্তি পান দরিদ্র, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, নারী, প্রতিবন্ধীসহ সুবিধাবঞ্চিত প্রশিক্ষণার্থীরা। কমপক্ষে ৩০ শতাংশ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত।
খাত ও বিষয়
১৯টি বিষয়ে দেওয়া হচ্ছে প্রশিক্ষণ। ডিজাইনের বিষয়গুলো হলো গ্রাফিকস ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট, ২ডি ও ৩ডি এনিমেশন, সফট্ওয়্যার ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট ।
এই শিল্পকে আরও শক্তিশালী করার জন্য রাখা হয়েছে ডাটা এনালাইসিস, ইনফোরমেশন সিসটেম সিকিউরিটি, নেটওয়ার্কিং, সার্ভার ম্যানেজমেন্ট।
সফট্ওয়্যার ল্যাংগুয়েজের মধ্যে রয়েছে পাইথন, পিএইচপি ল্যারাভ্যাল ও ডট নেট।
এছাড়াও এই শিল্পকে আরও প্রচার ও প্রসারের জন্য আয়োজন আরও তিনটি কোর্স। এগুলো হলো- আইটি সেলস্, ই-কমার্স উদ্যোক্তা ও কাস্টমার কেয়ার সার্ভিস।
আরও বিস্তারি জানার জন্য এই লিংকে https://basis.org.bd/content/
আবেদনের যোগ্যতা
কোর্সের মেয়াদ সর্বনিম্ন এক মাস এবং সর্বোচ্চ তিন মাসের করা হয়েছে। বয়সসীমা ১৮ থেকে ৫০ বছর। ভর্তির যোগ্যতা লাগবে স্নাতক পাশ।
প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিস (বেসিস) এর প্রশিক্ষণ উইং (বেসিস ই্ন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি এন্ড ম্যনেজম্যান্ট) বিআটিএমসহ আরও ছয়টি প্রতিষ্ঠানকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এ প্রকল্পে। এগুলো হচ্ছে ইউ ওয়াই ল্যাব, পেনসিল বক্স, পন্ডিত, টেকনোবিডি, পিপলএনটেক্ ও লিডস্।
মিলবে ভাতা
প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়ার জন্য দেওয়া হবে ভাতা। প্রত্যেক প্রশিক্ষানার্থী প্রতিদিনের জর্ন পাবেন ১৫০ টাকা করে। এর জন্য কমপক্ষে ৮০ শতাংশ ক্লাসে উপস্থিত থাকতে হবে। মাসিক তিন হাজার টাকা হারে ভাতা দেওয়া হবে। কোর্সভেদে এক মাসের জন্য তিন হাজার, দুই মাসের জন্য ছয় হাজার, তিন মাস মেয়াদের জন্য ৯ হাজার টাকা ভাতা দেওয়া হবে। ঠিকঠাক প্রশিক্ষণ শেষ করা মোট ৭০ শতাংশ প্রশিক্ষণার্থীকে প্রশিক্ষণপ্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ করে দেওয়া হবে। এ ছাড়া যাঁরা ব্যবসা বা নিজেই কিছু করতে চান, তাঁদেরও সহায়তা করা হবে। খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষণ সনদ দেওয়া হবে। তাই শুধু দেশে নয়, বিদেশেও রয়েছে কাজের সুযোগ। এছাড়াও দক্ষতার মান উন্নয়নে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর তারা উচ্চতর পদে বেশি বেতনে চাকরি পাচ্ছে।
যোগাযোগ
প্রশিক্ষণের সব তথ্য পাওয়া যাবে প্রকল্প কার্যালয় থেকে। তবে বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণের জন্য যোগাযোগ করতে হবে সেইপ প্রকল্পের মনোনীত প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে।
ঠিকানা: বেসিস-সিপ প্রজেক্ট ট্রান্স-৩, বিডিবিএল ভবন (লেভেল-৩), ১২ কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন: 096-1234248 (Ext:223)
Leave a Reply