গত কয়েক দিন ধরে ঢাকা উত্তর সিটির হিট অফিসার বুশরা আফরিনের ইন্টারভিউ নিয়ে নানা ধরনের ট্রল দেখে একটু খোঁজ নিলাম তিনি নিয়োগ পাওয়ার পর আসলেই কিছু করেছেন কিনা, নগরবাসীর জন্য।
খোঁজ নিয়ে জানলাম, ঢাকা উত্তর সিটির অনুন্নত এবং ১৫টি বস্তি এলাকায় গত ১ বছরে পাঁচ হাজারের বেশি বৃক্ষরোপন করেছেন, এবং গাছের চারাগুলো পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য বস্তিবাসীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।
সে স্থানগুলো জনবহুল এবং জনগুরুত্বপূর্ণ, সে সব স্থানে মানুষকে দাবদাহে গরমের তীব্রতা থেকে স্বস্তি দিতে অস্থায়ী কুলিং মিশিন স্থাপন করেছেন। যেগুলো বিভিন্ন স্থানে পর্যায়ক্রমে শিফট করে পানি ছিটাচ্ছে। বেশ কিছু বস্তি এলাকায় সচেতনতা বাড়াতে ‘হিট অ্যাওয়ারনেস ক্যাম্পেইন’ করেছেন এবং বেশ কয়েকটি ক্যাম্পেইন চলমান আছে। যেখানে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে কিভাবে অতিরিক্ত দাবদাহে নিজে এবং পরিবারকে সুরক্ষিত রাখবেন। এছাড়া নগরে দুইটি সবুজ বনায়নের করার সব কিছু পরিকল্পনা চুড়ান্ত করেছেন। একটি কল্যাণপুর আরেকটি বনানীতে। যা একই সঙ্গে শীতলীকরণ, বায়ুদূষণ রোধ এবং মাটির গুণাগুণ বৃদ্ধি করবে। আরও কিছু পরিকল্পনা তিনি গ্রহণ করেছেন কিন্তু আমলাতন্ত্রের কারণে অনেক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে দেরি হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
এবার বলেন তো, তাকে নিয়ে কেন আপনারা ট্রল করছেন? তাকে সেক্সুয়াল এবিউজিং কেন করছেন তার পুরাতন বোল্ড ছবিগুলো শেয়ার করে?
আপনারা কী মনে করেন, তিনি একদিনেই শীতল আবহাওয়া তৈরি করে ফেলবেন, তাপমাত্রা কমিয়ে ফেলবেন?
তা না হলে, এই সিম্পল জিনিসটা কেন বুঝেন না, তাপমাত্রা কমানো কারো পক্ষে সম্ভব না৷ আপনি বড়জোর তাপমাত্রা বাড়ার পেছনের কারণ নিয়ে কাজ করতে পারেন। যেগুলোতে প্রপারলি কাজ করলে তাপমাত্রা স্থিতিশীল থাকবে, বসবাসে মানুষের জন্য সহনশীল অবস্থা তৈরি হবে। যেমন, নগর সবুজায়ন করা, পর্যাপ্ত স্পেস রাখা জনবসতি এলাকায়। সর্বোপরি জনসচেতনতা তৈরি করতে কাজ করা।
তিনি তো এগুলোই করে যাচ্ছেন, তারপরও কেন তাকে নিয়ে মানুষের এত উন্মাদনা, আমার বুঝে আসে না।
ইন্টারভিউতে তার অতিরিক্ত ইংরেজি বলা নিয়ে প্রচুর সমালোচনা হচ্ছে। হ্যা, তার এত ইংরেজি শব্দ বলা আমার কাছেও দৃষ্টিকটু লেগেছে। কিন্তু স্বাভাবিকভাবে চিন্তা করে দেখেন তো, আমরা আট-দশ মিনিট কথা বলতে কতগুলো ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করি, আর তিনি তো পড়ালেখা করেছেন বিদেশে। সবখানে ইংরেজি বলতে হয়েছে। তারপরও আমি আমি বলছি, তার উচিত ইন্টারভিউতে ইংরেজি শব্দ যত কম বলা যায় তত ভালো।
আর তিনি যে পরামর্শগুলো দিয়েছেন সেগুলো কী অহেতুক যে তাকে নিয়ে প্রচুর ট্রল করতে হবে? উনি বলেছেন, আমরা বাসা থেকে বের হতে চাইলে একটা ওয়াটরপট নিতে পারি, ব্যগে একটি টুপি রাখতে পারি। একটা ফ্যান রাখতে পারি। গুলিস্তানসহ ঢাকার নানান স্থানে ১২০/১৫০ টাকায় ছোট ছোট অনেক মিনি পকেট ফ্যান পাওয়া যায় যেগুলো চার্জার ব্যাটারি বা ছোট মোটরে চলে। এটা জেনে বুঝেও আপনারা ট্রল করতাছেন, উনি ফ্যান নিয়ে বাসা থেকে বের হতে বলছেন। যেন তিনি সিলিংফ্যানের কথা মিন করেছেন!
আপনারা যারা ঢাকার বাইরে থাকেন তারা হয়ত জানবেন না, যারা ঢাকায় থাকেন তারা একটু অনেস্টলি বলেন তো, ঢাকার দুই সিটির মধ্যে কোন সিটিতে গাছপালা, ফাঁকাস্থান বেশি এবং বসবাসের জন্য অপেক্ষাকৃত উন্নত অন্যটা থেকে?
আমি শতভাগ নিশ্চিত করে বলতে পারি, ঢাকা উত্তর সিটির মানুষজন আমাদের দক্ষিণ সিটির চেয়ে অনেক ভালোভাবে বসবাস করতাছে। প্রচুর গাছপালা আছে, পর্যপ্ত ফাঁকাস্থান আছে উত্তর সিটিতে; যা দক্ষিণে নাই।
গতবছর এই সময় দুই সিটির মেয়রই রাস্তার মাঝখানে বর্ডার লাইন তৈরি, ফুটওভার তৈরি এবং নগরীর সৌন্দর্য বাড়াতে সকল গাছ কাঁটা শুরু করেছিল, তখন কত আন্দোলন হলো, কিন্তু দেখেন তারপরও কেউ দক্ষিণ সিটির মেয়র তাপসকে থামাতে পারেনি, ধানমন্ডি সাত মসজিদ রোডের একটা গাছও রাখেনি। অপরদিকে উত্তর সিটিতে গাছ কাটা ঠেকাতে পেরেছেন বুশরা আফরিন। পরবর্তীতে মেয়র গাছগুলো রেখেই বর্ডারলাইন, ফুটওভার তৈরির পরিকল্পনা সাজিয়েছে।
কাজের গঠনমূলক আলোচনা-সমালোচনা আমরা করব, কিন্তু তাই বলে একটা নারীকে নিয়ে অহেতুক ট্রল, সেক্সুয়াল এবিউজিং করা কোনভাবেই কাম্য নয়।
Leave a Reply