আমি বাংলা মা, বলছি অদৃশ্য রুদ্ধদ্বার হতে,
আমি মুক্ত হতে চাই আরো একবার,
শতরূপে বারে বার।
পঙ্কিলতার চক্র থেকে বাইরে,
সুন্দর শুভ্র সু-আচারের আলোতে নিতে চাই শুদ্ধ বাতাস।
কেউ দিতে পারো এনে মুক্তি আমার?
আরো একবার?
—কারাগার থেকে বলছি
…
পাহাড়ের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে সুনীলবাবুর কবিতা আওড়ে ‘আমি একটি পাহাড় কিনতে চাই’ বলে আমরা থেমে যেতে চাই না। আমরা পাহাড় হতে চাই। পাথরের পাহাড়ের মত সংযমী, সহনশীল, ধৈর্যশীল, আর শক্ত হতে চাই। যত ঝড়, আঘাত, দুঃখই আসুক রুখে দিয়ে বেড়ে উঠতে চাই । নিত্যকার সব কষ্ট, হতাশা, কমতি ও টানাপোড়েনের গল্পগুলো পরিশ্রম আর উদ্ভাবন দিয়ে বিকিয়ে দিয়ে বাঁধার পাহাড়গুলোকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে, প্রাণখুলে হাসতে চাই, মনভরে বাঁচতে চাই। আমিও স্বপ্ন দেখি, একদিন সবাই এ দেশটাকে নিয়ে ভাববে, যার যার জায়গা থেকে নিজেদের ছোট ছোট সৌন্দর্যগুলোকে উপলব্ধি করেই ভালোবাসবে । ভালোবাসা ফুরিয়ে যাবার আগেই প্রাণভরে ভালোবাসতে হয় । চালভাঙা বৃষ্টির শেষের রোদের মতন, দুঃখ ফুরিয়ে স্বস্তি আসুক সবার জীবনে।
—এসেছে পথে আঁধার নেমে, তাই বলে কি রয়েছি থেমে!
…
৫০তম বছরে পা রাখতে যাওয়া বাংলাদেশকে বয়সের ভারে নুইয়ে পড়া সেই অবহেলিত বৃদ্ধার সাথে তুলনা করব, নাকি কোনো শিশুর সাথে, অযত্নে যার শারীরিক-মানসিক উন্নতির কোন দেখা মিলছে না। অন্য কোনো জাতি হলে হয়তো এতদিনে আশা ছেড়েই দিত। কিন্তু আমরা কি না বাঙালি। আর বাঙালি সবচেয়ে বড় কবি বলে গিয়েছেন, “মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ।” তাই আমরাও দেশ এবং দেশের জনগণের ওপর থেকে কখনোই আস্থা হারাই না।
—দেশপ্রেম জাগাতে
…
স্বপ্ন দেখি একদিন দেশে ফিরে যাবো। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ফুচকা খাবো। ছুটির দিনে সবার সাথে বসে ইলিশ ভাজা আর ভাত খাবো। স্বপ্ন দেখি শীতের ভোরে গ্রামের বাড়িতে পুকুর পাড়ে বসে ধোঁয়া ওঠা এক কাপ গুঁড়ের চা খাবো। আর সবচাইতে বড় স্বপ্ন সারাক্ষণ বাংলায় কথা বলবো। বিলেতে সেই মামার দোকান নেই বলেই হয়তো চা, কফি আর ভালো লাগে না।
আমি সেই ছোট্ট শিশু গড়তে চাই যে পড়ে গিয়েও নিজের দায়িত্ব ভুলে যায়নি, উঠে গিয়ে ঠিক জায়গা মতো ময়লা ফেলেছে। আমি আমার জায়গা থেকে নিজেকে কাজে লাগাতে চাই। আমি শুধু বাঙ্গালী না বাংলার প্রেমী হয়ে থাকতে চাই। কারণ-
“বাংলা আমার তৃষ্ণার জল
তৃপ্ত শেষ চুমুক
আমি একবার দেখি, বার বার দেখি, দেখি বাংলার মুখ…”
সবাই বলে যুদ্ধ, স্বাধীনতার জন্যে দেশে খুব বড়ো যুদ্ধ হয়েছিল। আমি বোকাসোকা গ্রামের মেয়ে, গ্রামের বউ। আমি তো যুদ্ধ বুঝিনি, স্বাধীনতা বুঝিনি, স্বামী সংসার সন্তান নাতি নাতনি নিয়ে জীবন কাটাতে চাইতাম। আমার স্বামী সন্তানকে আমি যুদ্ধে হারিয়েছি, দেশের স্বাধীনতা পেয়েছি কিন্তু সবার কাছে কি প্রাপ্য সম্মান ভালোবাসা পেয়েছি?
“মা, সময় হলো। এসো।”, বাবুর কণ্ঠে ব্যাকুলতা।
বাবুর হাতটা ধরলাম। আমার অতি আকাঙ্ক্ষিত সন্তানেররূপে মৃত্যু এসে আমার দরজায় কড়া নাড়ছে, এই হাত আমাকে ধরতেই হবে। প্রার্থনা শুধু একটাই, যতদিন আমার কন্যাসম পুত্রবধূ পৃথিবীতে থাকবে, যেন ভালোভাবে থাকতে পারে। সম্মান ভালোবাসায় বাঁচতে পারে।
—শেষ বেলায়
…
স্বাধীনতার ৫০ বছর পর পেছন ফিরে তাকালে অনেক অর্জন আমাদের আশান্বিত করে কিন্তু তৃপ্ত হবার সুযোগ নেই। আবার হতাশ হওয়ারও সুযোগ নেই। ভালো-মন্দ মিলিয়ে আমার এই দেশ। এদেশের হাজারো সমস্যা আছে, তবুও এদেশ আমার। এদেশকে আমি ত্যাগ করতে পারবো না-
‘আমরা চিরদিনই হাসিমুখে মরতে জানি�তোমার ভয় নাই, মা, আমরা প্রতিবাদ করতে জানি।’
—তবুও এ-দেশ আমার
….
নিজের জন্মভূমির মাটি নিয়ে আমার বাবা খুব সুন্দর একটি কথা বলেন। তিনি শেরপুরের আঞ্চলিক টানে বলেন, ” নিজের মাটিতে থাইহে মাটি খামচা, কোপা কেউ কিচ্ছু বলবো না। কিন্তু ভিন দেশের মাটিতে পা টাই ছোঁয়াইতে পারবি না।”
—দিন বদলের হাওয়া : আমাদের মডার্ন জেনারেশন
…
আমাদের গ্রামের পাশের গ্রামের বাজারে রাজু নামে এক মানসিক রোগী আছে। আমরা একসাথে কৈশোরকালে যাত্রা-পালা করতাম। সে তাদের গ্রামের এক হিন্দু মেয়েকে ভালোবাসতো। যুদ্ধচলাকালীন মিলিটারিরা রাজুকে ধরে নিয়ে অনেক টর্চার করে সেই হিন্দু পরিবারের খোঁজ দিতে। কারণ মেয়ের বাবা ছিলো পুরোহিত। কখনো কিছু হবে না জানা স্বত্ত্বেও রাজু মেয়েটাকে ভালোবাসতো। ভালোবাসাতো এমনিই কিন্তু শেষমেষ রাজু তার আঙ্গুলে ঢুকানো পিনের যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে মেয়েটার আশ্রয়স্থলের কথা বলে দেয়। তিনদিন পর ছাড়া পেলে সে ছুটে সেই আশ্রয়স্থলে যায় এবং নিজ চোখে তার ভালোবাসার নারীকে ধর্ষিত-নগ্ন ও তিনদিনের পুরোনো মৃতলাশের স্বরূপ দেখতে পায়। এরপর থেকে ৫০ বছরে সে পুরোপুরি সুস্থ হয়নি। মানসিক ভারসাম্যহীন। তবে এসবের জন্য কিন্তু সে দেশকে দোষী মনে করে না। নিজেকে দোষী মনে করে।
—তিক্ত দেশপ্রেম
…
একটা সময় জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রতি এই অনীহার জন্য চরম মূল্য দিতে হবে। কোভিড-১৯ এর সময় আমরা টের পেয়েছি তা। ভ্যাকসিনের জন্য পুরা বিশ্ব তাকিয়েছিলাম বিজ্ঞানীদের দিকে। ওই সময় twitter এ নিউজ আসে স্প্যানিশ এক জীববিজ্ঞানীর মন্তব্য-“You give the footballer 1 million euros a month and a biological researcher 1,800 euros per month, and you are now looking for a coronavirus treatment. Go to Cristiano Ronaldo or Messi and they will get you a cure.” যদিও এই নিউজ মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়, কিন্তু বাস্তবতার সাথে মিলে যায়। সত্যিকার অর্থেই বিজ্ঞানীদের মানসিক ও শারীরিক পরিশ্রম এবং সভ্যতায় তাদের অবদানের তুলনায় তাদের বেতন নগণ্য । অথচ অন্যান্যক্ষেত্রে কর্মরতরা শতগুণ বেশি বেতন ও সুবিধা ভোগ করছে। এ-ধরনের বৈষম্য বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ কমাতে পারে এবং আবার চলে আসতে পারে তেরোশ শতাব্দীর মত বিজ্ঞানের বন্ধ্যা যুগ।
—অবহেলা, অনীহা আর পিছিয়ে পড়ার চক্র
…
যে স্ফূলিঙ্গ এ প্রজন্মের মধ্যে লুকায়িত আছে তাকে আগুনের ঝান্ডা বানাবার শিক্ষা প্রদানের পূর্বে তা বইবার শক্তি অর্জনে গুরুত্বারোপের সময় আজ। এভাবেই আমাদের জীবনের সব should, must গুলোকে can, will ও did এ রূপান্তর করা সম্ভব। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের সুবর্ণজয়ন্তীতে আমি এই রূপান্তরের সোনার স্বপ্নই দেখি। সোনার স্বপ্নের সাধ পৃথিবীতে কবে আর ঝরে?
—অসময়ের কথা, সময়ের দাবী
…
কেবল গাইলে আর শুনলে বাংলা সোনার হয়ে যায় না, কাজে-কর্মে প্রমাণ করতে হয় । সোনার বাংলা মানে জুলুমমুক্ত বাংলা । তারুণ্যের সোনার বাংলা গড়তে হলে বাংলাদেশকে করতে হবে জুলুমমুক্ত । যে বাংলায় কোনো পিতাকে সন্তানের মুখে খাবার তুলে না দিতে পারার লজ্জায় গলায় ফাঁস নিতে হবে না । জয়- জুলুমমুক্ত বাংলা বাংলার জয় ।
—সোনার বাংলা মানে জুলুমমুক্ত বাংলা
…
একটু শান্ত হোন । ভাবেন; আপনার দেশকে নিয়ে । এমন দেশ যেখানে মরুভূমি নেই, পরিচর্যা ছাড়াই গাছে ফল ধরে, পাহাড়েও পিকনিক করা যায় । আরো কত মায়া ছড়িয়ে আছে পরতে পরতে । অথচ, স্বস্তি খুঁজতেই আমরা দিশেহারা । অস্থিরতা সবার মাঝেই । কিন্তু কিসের, জানি না ।
এত না জানার মাঝেও কি আমরা কম বুঝি! আমরা যে যাই বুঝি না কেন সবার ধারণা সে সঠিক তার জায়গায় । তবে সত্য হলো, ভুল সিদ্ধান্ত বলে কিছু নেই । কারণ আপাতঃ আপনি যা ভাবছেন তা সঠিক বা ভুল প্রমাণিত হবে পরবর্তীতে । হয়তো এই পরিসংখ্যান অনাগত দিনের ভুল-শুদ্ধির পরিমাপ করে দেবে ।
—বাঙালির পরিসংখ্যান
…
৬৫জন তরুণ-তরুণী এভাবেই চমৎকারভাবে ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশকে নিয়ে তাদের স্বপ্ন আর অনুভবের কথামালা । আশা করি, ভিন্নধর্মী এই বইটি আপনাকে নতুন কিছু জানার-বোঝার-পাঠের-অনুভবের আনন্দ দেবে ।
#২০৮ পৃষ্ঠা
#বইয়ের গায়ের মূল্য-৪০০টাকা (বইমেলায় ২৫% ছাড়ে পাবেন)
#প্রি-অর্ডারে_৩০% ছাড়ে ১০ মার্চ পর্যন্ত পাবেন । প্রি অর্ডার করতে
#বিশ্বসাহিত্য ভবন প্রকাশনীর ইনবক্সে/ আমার ইনবক্সে জানাতে পারেন । ফোন করতে পারেন 01914796977 এই নম্বরে ।
পাশে থাকুন । হ্যাপি রিডিং, হ্যাপি ড্রিমিং ।
জিনাতুননেছা জিনাত
০৪ মার্চ, ২০২২
Leave a Reply