1. banglamailnews72@gmail.com : banglamailnews : Zakir Khan
শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১১:১৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
# আহারে # খোরশেদ ।। সমাজে নতুন অপরাধী চক্র তৈরী হচ্ছে কিন্তু ভবিষ‍্যতে এদের রক্ষা করবে কে??।। – – – আশিক ফারুকী “অতঃপর” __ সালমা আক্তার বীরাঙ্গনা নই আমি মুক্তিযোদ্ধা – – – শাহনাজ পারভীন মিতা জলপাই রঙের স্বাধীনতা – – – আরিফুল হাসান প্লাস্টিকের উৎপাদন বন্ধ করতে হবে – উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ান হাসান – – – স্বাধীন আজম –   টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধি, স্বপ্নমায়া – – – – মাহজাবীন আহমেদ বুড়ি মরে গেল – – – মোঃ আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমাম প্রযুক্তির দুনিয়ায় শিক্ষার্থীদের এখন উন্নত জীবন গড়ার দারুণ সময়:– ————–টিপু সুলতান লেখক ও সমাজ চিন্তক ডায়াবেটিস নিয়ে সচেতনতাই পারে ডায়াবেটিস রোগ নির্নয় ও রোগের চিকিৎসা এবং সঠিক ব্যবস্থাপনা – – – ডা: সাদিয়া আফরিন 

# ছোট গল্প # দেরিতে অবতরণ ### কাওসারী

  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২১
  • ২৯১ বার
বিমানবন্দরে বসে আছি। আমেরিকার জার্নিটা একদম ভালো লাগে না। কিন্তু বছরে এক দুই বার যেতে হয় মেয়েদের জন্য। ওরা অপেক্ষায় বসে থাকে মায়ের জন্য। কখন মা আসবে। লম্বা দূরত্ব, পথ ফুরাতে চায় না। বর চলে যাবার পর থেকে যতবার গেছি, এই দীর্ঘ যাত্রায় কাওকে না কাওকে সাথী হিসেবে পেয়েছিলাম। তাই, প্রতিবারের মতো এবারও এদিক ওদিকে তাকাচ্ছি, যদি কাউকে পাই। কিন্তু এবার আর তেমন কাওকে চোখে পড়ল না। একটু চাপা কষ্ট নিয়ে সিটে গিয়ে বসলাম। পুরো পথটা একাই পাড়ি দিতে হবে মনে হল। যাইহোক, মনে মনে সেই প্রস্তুতি নিয়ে নিলাম।
কিছুক্ষনের মধ্যেই প্লেন ছাড়বে।
বর চলে যাবার পর একাকিত্ব কিছুটা আমাকে পেয়ে বসেছে। যদিও উনি খুব স্বল্পভাষী ছিলেন। কথা তেমন বলতেন না। তাই আমি নিজেই আমার একটা জগৎ তৈরি করে নিয়েছিলাম।
তারপরও বাসায় যতটা সময় থাকি, নানা কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করি। গান শুনি, বই পড়ি, মাঝে মাঝে স্কুল, ইউনিভার্সিটির বন্ধুদের সাথে ঘুরে বেড়াই। যতদিন বেঁচে থাকব, সুস্থ থাকাটাই হবে মূখ্য বিষয়।
বর হঠাৎ করেই হার্ট অ্যাটাক এ মারা গেছে গত বছর, বয়স তেমন হয়নি। মেয়েদের একটু তাড়াতাড়িই উনি বিয়ে দিয়েছিলেন। বিয়ের পর ওরা সূদুর আমেরিকাতেই পাড়ি জমায়। বর খুব গুরুগম্ভীর প্রকৃতির ছিল। কথা কম বলত। আর আমি ছিলাম তার উল্টো। মানুষ ছাড়া হাপিয়ে উঠি। ও তেমন পছন্দ না করলেও মাঝে মাঝে আমি একাই বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেই। সারাদিন বাসায় দুটো মানুষ কিন্তু তেমন কথা নেই। আমি দশটা কথা বললে উনি একটার উত্তর দিতেন। আমার ওসব ভালো লাগত না। মাঝে মাঝে খুব খারাপ লাগত। তখনই বেড়িয়ে পড়তাম, বন্ধুদের সাথে কিছুটা সময় বেড়িয়ে আসতাম। বিয়ের পর অনেক চেষ্টা করেও তাকে একটার বেশি দুটো কথা বলাতে পারিনি।
তারপরও পুরো বাসা জুড়ে তার নিরব অস্তিত্ব কোনভাবেই অস্বীকার করার উপায় নেই। কথা কম বললেও বাসায় একজনের উপস্হিতি খুব দরকার। কথা তেমন না বললেও পাশে ছিল, এটাই অনেক বড় পাওয়া ছিল। বর চলে যাবার পর কিছু দিন সব কিছু থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিলাম। এতে করে খুব অসুস্থ হয়ে পড়ি। আবার সবার সাথে যোগাযোগ শুরু করি। একাকিত্বের মতো কষ্টের আর কিছু নেই।
এবার সময়ের একটু আগেই যাচ্ছি। মেয়েগুলো অস্থির হয়ে পড়েছে। আমেরিকাতে শুধু মেয়েগুলোর জন্য যাই, ওদের বাচ্চাদের সাথে খুব ভাল সময় কাটে। সময়ের আগেই যেন জীবনের সব চাওয়া পাওয়াগুলো ফুরিয়ে গেল। মেয়েরা চায়, একবারেই ওদের কাছে চলে যাই কিন্তু আগেই বলেছি আমার আমেরিকাতে ভালো লাগে না।
ভাবনার বেড়াজালে নিজেকে হারিয়ে ফেললাম। স্কুলের বন্ধুদের কথা খুব মনে পড়ে। এক স্কুল থেকেই এস এস সি শেষ করেছি তাই স্কুল বন্ধু মানেই অন্য কিছু। অনেক ভালো লাগা এর সাথে জড়িয়ে আছে। বিশেষ করে একজনের কথা প্রায়ই খুব মনে পড়ে।
ওর নাম ছিল অমিত। খুব ভাল বন্ধু ছিল আমার। তেমনি অমিতও আমাকে খুব পছন্দ করত। আমরা আমাদের সব কিছু শেয়ার করতাম, প্রতিদিন স্কুল ছুটির পর আমরা কথা বলতাম। দিনের সবকিছু দুইজন দুইজনকে বলতাম। এমন কোন কথা ছিল না যে, আমাদের অজানা ছিল। দুইজনের মাঝে খুব সুন্দর একটা সম্পর্কের ছিল। কিন্তু শুরুতেই সেই সম্পর্কের বীজ নষ্ট হয়ে গেল। মা একটু বুঝতে পেরে আমাকে অনেক বকেছিলেন। অমিতের বাবা ওর মাকে ডির্ভোস দিয়ে আবার বিয়ে করেছিল। মা বিষয়টা জানত। তাই মায়ের কড়া আদেশ, আমি যেন কোনভাবেই ওর সাথে যোগাযোগ না রাখি। মনের কষ্ট মনেই চেপে রেখে ফিরে গেলাম তাদের জগতে। স্কুলে দেখা হত কিন্তু কথা হত না। অমিত কথা বলার চেষ্টা করত আমিই নিজেকে গুটিয়ে রাখতাম। কিন্তু মনে মনে ভালোবাসার জায়গায় কখন যে ওকে বসিয়ে ফেলেছিলাম বুঝতে পারিনি। রাতে বালিশে মুখ রেখে কত কেঁদেছি, শুধু আল্লাহ জানেন। আর কোন সম্পর্কের মাঝে কোন দিন জড়াইনি। বাবা-মায়ের পছন্দমতোই আমার বিয়ে হয়। কিন্তু একদিনের জন্যও অমিতকে ভুলতে পারিনি। চেষ্টা করেছি সংসারের দায়িত্বগুলো সুন্দরভাবে পালন করতে। বরের মন জুগিয়ে চলতে। কিন্তু কোথাও যেন একটা শূন্যতা আমাকে সব সময় তাড়া করে ফিরত। ইদানিং খুব ওর কথা মনে পড়ে। এস এস সির পরে আর তেমন যোগাযোগ হয়নি। ভিন্ন ভিন্ন কলেজে ভর্তির কারণে আর দেখাও হয়নি। তবে জানতাম, এইচ এস সির পরে অমিত বুয়েটে ভর্তি হয়। আমি চলে যাই ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে। ওর পর আর যোগাযোগ হয়নি।
ইতিমধ্যেই প্লেন চলতে শুরু করে। কখন যে পাশে একজন বসেছে, টের পাইনি। বুঝতে পেরে নিজেকে একটু সরিয়ে নিলাম। খুব বিরক্ত লাগছিল, পুরো পথটা এই ভদ্রলোকের সাথে যেতে হবে। মনে মনে একটু রাগ হল।
হঠাৎ হাতে হাত লেগে যাওয়াতে দুঃখিত বলে দুইজন দুজনের দিকে তাকিয়ে রইলাম। খুব পরিচিত।
” তুমি রুবা না”
আরে অমিত, ওর চেহারা অনেক বদলে গেছে।
” তুমি, অমিত? কেমন আছ, অনেক বদলে গেছ।”
“তুমি কিন্তু একদম আগের মতই আছো। কোথায় আছো? আমেরিকাতে থাকো?
” আমি বাংলাদেশে থাকি, আমার মেয়েরা ওখানে থাকে। বছরে একবার যাই।” বলে একটু থামলাম।
কি অদ্ভুত, বিমানে বসে ওর কথাই ভাবছিলাম, আর এতগুলো বছর পর ওর সাথে আবার দেখা। ভাবিনি এভাবে দেখা হবে।
“তুমি কি একাই যাচ্ছ? তোমার বর??”
অমিতের দিকে একটু তাকালাম। কতগুলো বছর পর। কিন্তু মনে হচ্ছে, এই তো সেদিন।
” কি ভাবছো, তোমার বর?? “
” ও গত বছর মারা গেছে “
” আমি দুঃখিত।”
ওর চেহারার মাঝে অনুশোচনা দেখতে পেলাম। অনেকক্ষন চুপ রইলাম দু’জন।
” তুমি কি আমেরিকাতে থাকো?? “
“হা, আমি আমেরিকাতেই থাকি আজ অনেক বছর।”
” তোমার ওয়াইফ?”
“ও গাড়ি দূর্ঘটনায় মারা গেছে আজ ১০ বছর। আমারও একটি মেয়ে। বিয়ে দিয়ে দিয়েছি।”
” বিয়ে করনি কেন?”
” জানি না”
একদম চুপ আমরা , হঠাৎ করেই নিরবতা।
বিমানের খাবার চলে এসেছে। আমি তেমন কিছু খেলাম না। অমিত বেশ জোর করেই আমাকে কিছু খেতে বলল। একটু জুস খেলাম।
“এখনও তুমি খুব হিসেব করে খাও, তাই তো এখনো সেই আগের মতই সুন্দর আছ। একটুও বদলাওনি।”
উত্তর দিলাম না।
” কিছু বলছো না যে?? কতদিন থাকবে এবার?”
” যতদিন ভালো লাগবে”
“ঢাকায় একা একা খারাপ লাগে না? তুমি তো একা থাকতে পার না?”
” এখন তো একাই আছি। খারাপ লাগে কিন্তু কি করব। আমেরিকাতে আমার ভালো লাগে না। মেয়েদের জন্যই যাই। যে ক’দিন ভালো লাগে থাকি।”
অনেক কথার ভীড়ে দু’জন হারিয়ে গেলাম। সেই ৩৫ বছর আগে ফিরে গেলাম আমরা। মাঝখানে এতকিছু, সব ভুলে গেলাম।
দীর্ঘ যাত্রাপথে কখন যে এতগুলো ঘন্টা পার হয়ে গেল, টের পেলাম না। ওর সাথে এতগুলো বছরের দূরত্ব ভুলে গেলাম। কিছুক্ষনের মাঝেই আমরা পৌঁছে যাব।
বেশ লাগলো অনেক গুলো বছর পর। অনেক কথা বললাম দু’জনে।
“তোমার সাথে এভাবে দেখা হবে, ভাবিনি। এত ভালো লাগছে, আমি বোঝাতে পারব না। আর কি কোন দিন দেখা হবে??
আমার উত্তর, ” দেখা হয়ে তো কষ্ট বেড়ে গেল, না দেখা হলেই ভালো হত, বেশ তো ছিলাম”
” এভাবে বলছো কেন, আমার কিন্তু খুব ভাল লেগেছে।”
আমি চুপ করে রইলাম।
প্লেন অল্প কিছুক্ষনের মাঝেই ল্যান্ড করবে। আসলেই খারাপ লাগছে। কেন দেখা হল।
আমার হাতে অমিত হাত রাখল, একটু অপ্রস্তুত হলাম।
” আমরা কি আবারও একইপথে হাঁটতে পারিনা??”
হাতটা সরিয়ে নিলাম। চোখের পানি আর ধরে রাখতে পারলাম না। কেঁদে ওঠলাম। অমিত আবারও আমার হাতটা ধরল।
” আমি আর পারছি না, একাকিত্বের মাঝে আমি ডুবে গেছি”
অমিত আমার হাতটা ধরে রাখল শক্ত করে। প্লেন থেকে সবাই নেমে পড়ল। আমি আর অমিত একদম শেষে নামলাম কিন্তু অমিত আমার হাতটা খুব শক্ত করেই ধরে রেখে প্লেন থেকে নামলো।
মনে হল আমি আমার নিদিষ্ট গন্তব্যে র্পৌঁছে গেছি।
কারো কারো জীবনে এমন অনেক ঘটনা ঘটে,যার জন্য হয়ত কেও প্রস্তুত থাকে না। কিন্তু এটাও বাস্তবতার বাইরে নয়।।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..