রাজশাহীর সাথে সম্পর্কের শুরু সেই ১০ বছর আগে! নিজেদের পাসিং আউট প্যারেডের পর থেকে একাধিকবার রাজশাহীর সারদায় যাওয়া হয়েছে পাসিং আউট প্যারেডে ধারাভাষ্যের কাজে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে ধারাভাষ্য দিতে পারার বিষয়টি খুব মর্যাদাপূর্ণ মনে হয় নিজের কাছে।
আজ অবশ্য এই বিষয়ের অবতারণা করতে চাই না, বলতে চাই এক ভিন্ন রাজশাহীর গল্প! বিগত সময়ে রাজশাহীর প্রতি আমার এতটা মুগ্ধতা কখনোই আসেনি, এবার নানাবিধ কারণে রাজশাহী মুগ্ধতায় আচ্ছন্ন হয়ে আছি! রাজশাহীতে রাজবাড়ী, প্রাচীন মসজিদ, মন্দিরসহ নানাবিধ ঐতিহ্যবাহী স্থান ও স্থাপনা রয়েছে সেই প্রসঙ্গেও যাচ্ছি না! রেশম নগরী, পুকুর নগরী তাও বিবেচনায় আনতে চাচ্ছি না! রাজশাহীর অন্যান্য যে বিষয় মুগ্ধতার রেশ বাড়িয়েছে তাই নিয়ে এই লেখা!
রাজশাহীতে মুগ্ধতার প্রথম কারণটি হলো এর নানাপ্রান্তে ছড়িয়ে, ছিটিয়ে থাকা রাস্তাঘাট! দিনে রাস্তার সবুজ সৌন্দর্য চোখে ধরা দিলেও, রাতে রাজশাহীর শহর থেকে যেদিকেই যাবেন, দেখবেন অদ্ভুত সুন্দর আলোকসজ্জায় সজ্জিত চারিপাশের রাস্তাঘাট! আলোকসজ্জা বাদ দিয়ে বিবেচনায় নিলে দেখবেন রাস্তার বিভাজকের মাঝে নানাবিধ সুন্দর গাছ রোপন করে রাখা! সুশৃঙ্খল রাস্তা আর সবুজের সমারোহে আপনার মনে হতে থাকবে আপনি বোধহয় চিরচেনা বাংলাদেশে নয় বরং ইউরোপ বা অন্যকোথাও চলে এসেছেন! ইউনেস্কো সবুজের নগরী হিসেবে স্বীকৃতি এমনিতেই দেয়নি রাজশাহীকে সেটি এই সফরে পরিস্কারভাবে প্রতীয়মান!
সবচেয়ে বিস্ময়ের বিষয় শহর এবং এর বাইরে যেখানেই দোকানপাট দেখবেন, কোথাও একটু ময়লা খুঁজে পাবেন না! প্রায় প্রতিটি দোকানের সামনে কম, বেশি ময়লা রাখার বিন দেখতে পেয়েছি অথবা পরিচ্ছন্ন পেয়েছি! এরকম অদ্ভুত পরিচ্ছন্নতা অন্য কোনো শহরে আমার নজরে আসেনি এখন পর্যন্ত! সারাক্ষণই কোথাও না কোথাও সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের উপস্থিতি টের পেয়েছি! তাঁদের অবদান এবং সভ্য নাগরিকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই রাজশাহীকে হয়তো পরিস্কার নগরীর তকমা পাওয়ার জোর দাবীদার হিসেবে উপস্থাপন করছে!
বলা হয়ে থাকে, একটি এলাকার মানুষ কেমন তা বুঝতে অসহায় প্রাণীদের প্রতি তার নাগরিকদের আচরণ কেমন সেটি বুঝতে হয়! যেহেতু প্রাণী নিয়ে কিঞ্চিৎ কাজ করি, রাজশাহী আমাকে এক্ষেত্রেও মুগ্ধ করেছে! আমি রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায় রাস্তায় থাকা কুকুর, বিড়াল কারো পেটই অপূর্ণ দেখিনি। রাস্তায় কুকুর, বিড়াল দিব্যি তাদের ছানা নিয়ে খেলে চলেছে কেউ বিন্দু পরিমাণ বিরক্ত করছে না! অদ্ভুত ভাল লাগায় মন ছেয়ে গেছে।
রাজশাহীর কালাই রুটি ও বেগুন ভর্তা ছাপিয়ে এখন হাইপ চলছে সাদা ভাতের সাথে হাঁসের মাংসের! পবা উপজেলার মড়মড়িয়া বাজার নামে এক জায়গায় তালুকদার বাড়ি, কুটুম বাড়ি ও বিয়াই বাড়ি নামক ৩ টি ছোট্ট রেস্তোরাঁয় প্রতিদিন প্রায় লক্ষাধিক টাকার হাঁসের মাংসের বেঁচাকেনা হয় বলে জানা যায়! তালুকদার বাড়ির রাজহাঁস ও পাতিহাঁসের স্বাদ আস্বাদন করে আমি সন্তুষ্ট! এছাড়া তালাইমারী মোড়েই রয়েছে হাস পাগল রেস্তোরাঁ! হাঁসের মাংসের স্বাদ পেতেও রাজশাহীতে একটা ঢু মারাই যায়! এছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বিভিন্ন শীতের পিঠা, বর্ণালীর চা, পিৎজা টংয়ের পিৎজার কথা আলাদা করে নাইবা বললাম!
রাজশাহীর এই পরিচ্ছন্ন রুপ এবং একইসাথে অভিনব ও সৃজনশীল উপস্থাপনের জন্য রাজশাহীর সম্মানিত মেয়র মহোদয়কে প্রাণঢালা অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা না জানালে লেখাটি পূর্ণতা পায় না! অভিনন্দন সম্মানিত মেয়র মহোদয়! স্থানীয়দের তাঁর প্রতি মুগ্ধতা থেকে বুঝা যায় তিনি রাজশাহী নগরীকে আরও বিভিন্ন নামেই সামনে সুনামের সাথে পরিচিত করাবেন! রাজশাহীর প্রতি এই মুগ্ধতা অটুট থাকুক…. সমৃদ্ধ হোক আমাদের বাংলা..!
Leave a Reply